শত ডানার প্রজাপতি পর্ব-০৯

0
4559

#শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট : ৯

অগ্নি আমার খুব কাছে । দুজনের মাঝে খুব একটা দূরত্ব নেই । এতটা কাছে যে একে অপরের নিশ্বাস গুনতে পারবো । আমি মাথা নত করে উনার সামনে দাড়িয়ে ।আড়চোখ দিকে তাকাতেই দেখতে পাই উনার গভীরতর দৃষ্টি আমার দিকে । এই চাহনির কি নাম দিবো ? মুগ্ধ নয়নের চাহনি নাকি নেশাপ্রবণ মাতাল চাহনি ? আমার তা জানা নেই । আমি শুধু জানি এই গভীর চোখে তাকিয়ে সারাজীবন অনায়াসে পাড় করা যাবে । শত কাল ডুবে থাকা যাবে ।
হ্ঠাৎই উনি আমার কমোড়ে হাত রেখে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে । উনার স্পর্শ আর এতটা কাছে আসায় আমার বুক ধরফর করছে । বিদুৎ গতিবেগে দৌড়াচ্ছে । আমি মাথা তুলে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার এক গালে নিজের হাত রাখে । আস্তে আস্তে আমার মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে আনতে লাগে । আমার করুন চোখজোড়া আবেশে বন্ধ হয়ে আসে ।নিজের থেকে কোন প্রকার বাঁধা দিলাম না ।উনার গরম নিশ্বাস আমার মুখে পড়ছে । যেহেতু মন থেকে নিজেকে উনার সঁপে দিতে শুরুই করেছি তাহলে হোকনা এই নিকটত্ব তাতে ক্ষতি কি ?
আমি চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু সামনের দিক থেকে কোন প্রকার প্রতিক্রিয়া নেই । ভারী নিশ্বাসটা আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে । হুট করে আমার কমোড় ছেড়ে দেয় । আমি ঝোঁক সামাল দিতে না পেরে চোখ খুলে উনার দিকে তাকাই । উনি আমার থেকে বেশ দূরে অন্যদিক মুখ দিয়ে দাড়িয়ে আছে ।চোখে মুখে কেমন জানো অপরাধবোধের ছাপ । আচ্ছা উনি কি আমার কাছে আসায় অপরাধবোধ করছে ? কিন্তু কেন? আমি তো উনার স্ত্রী আমার উপর তো উনার অধিকার আছে !
উনি অন্যদিকে মুখ করেই দাড়িয়ে আমার দিকে ডায়রীটা এগিয়ে দেয় । অগ্নি ধীর গলায় বললেন,

– “স্যরি ,আ আ’ম সো স্যরি ! ”

আমি ভাবলেশহীন ভাবে উনার হাত থেকে ডাইরি টা নিতেই । উনি ওয়াশরুমের দিকে বড় বড় পা ফেলে চলে যায় ।আমার চোখের কোনে অশ্রুকণা ভিড় করে । অসহায় ভাবে উনার যাওয়ার দিকে শুধু তাকিয়ে আছি । আমার সাথেই কেন এমন হয় ? জীবনের ছোট বড় প্রত্যেকটা জিনিস পেতে হলে কেন এতো কঠিন পরিস্থিতীর মোকাবেলা করতে হয় ? কেন আর সবার জীবনের মত আমার জীবন হয় না? কেন সহজলভ্য হয় না ?
মনের শত অভিযোগ নিয়ে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেই । কিছুক্ষনের মাঝেই নিদ্রা ভর করে। গভীর নিদ্রায় তলিয়ে যাই ।

______________________

সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি অগ্নি আমার দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে । চোখে মুখে অজস্র মায়া ভীর করছে । চুল গুলো কপাল ছুঁয়ে আছে । অসম্ভব সুন্দর লাগছে । একটু ছুঁয়ে দেখবো কি ? যদি ঘুম থেকে জেগে যায়? উমম্মম,তাতে কি কোনো না কোনো বাহানা করে কাটিয়ে দিবো । নিজের ইচ্ছে গুলো এভাবে দমিয়ে রাখতে নেই । তা ছাড়া উনি তো আর পরপুরুষ না । আমার স্বামীই ।
খুব সাবধানে উনার কাছে যেয়ে উনার দিকে কিছুটা ঝুঁকে খুব গভীর ভাবে উনাকে পর্যবেক্ষন করি । আহ! কি মায়া এই মুখখানায় । কপাল থেকে চুল সড়িয়ে দিতেই উনি আমার কমোড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ।আস্তে করে উনার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দেই ।
বেশ কিছুক্ষণ উনার চুলে বিলি কেটে । খুব সাবধানতা অবলম্বন করে নিজেকে উনার থেকে ছাড়িয়ে নেই ।
ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতেই মা কে দেখতে পাই মা সোফায় বসে কিছু পেপারস চেক করছে ।আমি মাকে দেখে উচ্ছ্বাস প্রবল স্বরে বললাম,

– “শুভ সকাল মা । ”

মা আমাকে দেখেই মুচকি হেসে বললেন,

– “শুভ সকাল । এত সকাল সকাল উঠলি যে ?মাত্রই তো সাতটা বাজে । ”

– “মা আসলে সকালে সকাল ঘুম থেকে উঠে অভ্যাস । তাই তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেছে । ”

মা আমার গালে হাত রেখে বললেন ,

– “আমার লক্ষী মা । ”

আমি চুপচাপ করে বসে আছি । মা কাজ করছে । মা কাজ পেপারস গুলো গুছাতে গুছাতে বললেন,

– “ক্লাসে যাচ্ছিস কখন থেকে ? ”

আমি মায়ের কথায় থতমত খেয়ে গেলাম । কি বলবো? খুঁজে পাচ্ছি না ।আমি আমতা আমতা করে উত্তর দেই ,

– “মা আ আসলে ইয়ে মানে ..”

আর বলতে পারছিনা আমি চুপ করে গেলাম । আমি ভেবেছি বিয়ের পর হয়তো পড়াশোনা করার অনুমতি পাবো না তাই এই সব নিয়ে আর ভাবিনি ।
মা পেপারস গুলো টেবিলে রেখে আমার দিকে তাকিয়ে ছোট নিশ্বাস ছেড়ে বললেন,

– “কি ভেবেছিস বিয়ে হয়েছে বলেই পড়াশোনা বন্ধ করে দিবি ? না না আমার বাড়িতে এসব ফাঁকিবাজি একদম চলবে না।বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে তুই নিজের স্টাডি কন্ট্রিনিউ করবি । ”

আমি মাথা নত করে বসে রইলাম । মা আবার বললেন ,

– “আমি বা অগ্নি কেউই কখনো তোর পড়াশুনায় বাঁধা হবো না।তুই নিজের পরিচয় গড়ে তুলবি । নিজের যোগ্যতা নিজে অর্জন করে নিবি ।আজ থেকেই পড়াশুনা স্টার্ড কর। অগ্নি নিয়ে যাবে আবার অগ্নি সাথে করে নিয়ে আসবে কেমন ? ”

আমি মায়ের প্রত্যেকটা কথা খুব মন দিয়ে শুনছিলাম । শুধু ‘হ্যা ‘ বোধক মাথা নাড়ালাম । মায়ের প্রত্যেকটা কথা আমার মনে সাহস বাড়িয়ে দিচ্ছিলো ।চোখ টল টল করলেও মন আত্নবিশ্বাসে বেশ শক্ত হয়েছে । মা কে কখনো দেখিনি । কিন্তু শাশুড়ির মাঝে নিজের মায়ের প্রতিচ্ছবি পেয়েছি । মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি ।

মা অগ্নির জন্য আমার হাতে চা ধরিয়ে দেয় । আমি বাধ্য মেয়ের মত তা নিয়ে রুমে যাই । রুমে ডুকতেই দেখি অগ্নির ঘুম ভেঙেছে ।আমি চা উনার হাতে দিয়ে মাথা নত করে আছি । মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে । উনি রাতের ব্যাপারটা নিয়ে এখনো রেগে নেই তো ? যদি আর কখনো কথা না বলে ?
উনার আওয়াজে আমি ভাবনা জগত থেকে ফিরি । উনি বেশ মন দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন ,

– “তুমি চা আনতে গেলে কেন ? এসব কাজের জন্য বাড়িতে লোক আছে ! ”

কথা গুলো সহজ ভাবে শুনা গেলেও এতটা সহজ ভাবে অগ্নি বলেনি । অগ্নির চেহারায় তা স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে । অগ্নি চাইছে আমাকে নিজের থেকে দূরে রাখতে ।কিন্তু আমি এতো সহজে হাল ছেড়ে দেওয়ার মেয়ে না । আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো । আমার কাছে এখনো পুরো বছর রয়েছে । এই সম্পর্কটা টিকানো জন্য সবধরনের চেষ্টা করে যাবো । যে ভাবেই হোক উনার মনে আমার জায়গা করে নিবো । এই কন্ট্রাক্ট মেরেজকে আর পাঁচটা সম্পর্কের মত স্বাভাবিক সম্পর্কের মত গড়ে তুলবো । অগ্নির কথার উত্তরে বললাম,

– “কেন আমি নিয়ে আসলে কি সমস্যা ? এগুলো তো বাড়ির বউদের দায়িত্ব । ”

আমার কথায় তিনি কোন উত্তর দিলেন না । চা খাওয়াতে মন দিলেন ।
ব্রেকফাস্ট করার সময় মা টেবিলেই ঘোষনা দিলেন আমি আজ থেকে আবার ভার্সিটিতে যাবো । আর অগ্নি নিয়ে যাবে আর সাথে করে নিয়ে আসবে । অগ্নি কথাটা শুনে খুব স্বাভাবিক ছিলেন । তার চেহারায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না । উত্তরেও কিছু বললো না। বিয়ের ব্যপারটা নিয়ে মায়ের সাথে বিয়ের আগে উনার বেশ ঝামেলা হয়েছে । সেই থেকে মায়ের সাথে কোন সম্পর্ক নেই উনার । উনি নিজের থেকেই মায়ের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন । মা তা নিয়ে খুব কষ্ট পেলেও তা মুখে প্রকাশ করেন না। মনে এক আশা নিয়ে আছে হয়তো কোনদিন অগ্নি মায়ের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারনটা বুঝবে ।

কিছুক্ষণ পর রেডি হয়ে অগ্নির সাথে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম ।পুরোটা পথ দুজনের মাঝে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করেছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে উনাকে দেখে গেছি। কেন জানো না চাইতেও উনার দিকে চোখ চলে যায় । তা কি শুধুই চোখের নেশা ? নাকি অন্যকোন অনুভূতির টান ? কেন জানো উনার দিকে তাকালে মনে হয় উনি আমার কত চেনা ! কত কাছের একজন !
কিন্তু তা কেন ? আমি কি উনার মায়ায় পড়েছি ? নাকি উনার প্রেমের নেশায় জড়িয়ে যাচ্ছি ?
উফফ এ কেমন অসয্য অনুভূতি ! এই অনুভূতি আমার জন্য অপরিচীত নয় । ঠি ক একই অনুভূতি হতো যখন আমি তার সাথে কথা বলতাম । তবে কি আমি সত্যিই তাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি । এটা কি ভালোবাসার প্রথম ধাপ ?
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ গাড়িটা থেমে যায় । তাকিয়ে দেখি ভার্সিটির সামনে চলে এসেছি । যেই অগ্নিকে বিদায় দিয়ে নামতে যাবো সেইসময় উনি আমার হাত ধরে আটকায় । আমি প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি তে উনার দিকে তাকাই । উনি আমার হাত ধরেই গম্ভির কন্ঠে বললেন ,

– “হুর আমাদের বিয়েটা একটা কন্ট্রাক্ট । এক বছর পর আমরা দুজন যার যার মত আলাদা হয়ে যাবো । আমি চাইনা এই একবছরে জন্য তুমি তোমার নামের সাথে আমার নাম জুড়ো ।কারণ একবছর পর যখন আমরা আলাদা হয়ে যাবো তখন আমাকে কেউ কিছু না বললেও তোমার উপর সবাই আঙুল তুলবে তোমার জীবনে একটা দাগ লেগে যাবে । যা আমি চাইনা !
তাই ভার্সিটি তে আমাদের বিয়ের ব্যাপারটা না জানানোই ভালো । আমি কি বুঝতে চাইছি বুঝতে পারছো তো হুর ? ”

আমার ভিতরটা মুহূর্তেই ভেঙে চুরে চুরমার হয়ে গেল । খুব কান্না আসছে । উনারকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে । কেন আপনি আমাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবেন না ? কেন? কেন বিয়ের এই পবিত্র বন্ধনকে কন্ট্রাক্ট মেরেজের নাম দিয়েছেন ? কেন ?
কিন্তু মুখে ,ধীর গলায় বললাম ,

– “আপনি যা বলবেন তাই হবে আমি ভার্সিটির কাউকে আমাদের সম্পর্কের কথাটা জানাবো না । ”

বলেই উনার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পরি । সেখানে থাকার মত ইচ্ছে বা শক্তি কোনোটাই আমার মাঝে নেই । একদমই নেই !
ঠিক উনার সামনে কেঁদে ভাসিয়ে দিতাম যা দেখে উনি ভাবতো আমি দুর্বল ।আমি অনাথ পরিবারহীন একটা অসহায় মেয়ে । একসময় হয়তো আমার উপর দয়া করে আমাকে মানতে বাধ্য হতো । কিন্তু আমার যে উনার দয়া চাইনা ! আমি চাই উনি আমাকে মন থেকে মেনে নেক । মন থেকে যেন নিজের স্ত্রীর মর্যাদা দেয় ।

________________________________

আমি কেনটিনে এক কোনায় গুটিসুটি মেরে মাথা নিচু করে বসে আছি । আর আমার ঠিক সামনা সামনি শেফা বসে আছে । আপাদত্ত আমার দিকে গোলগোল চোখ করে তাকিয়ে । আমি শেফার হাতের উপর হাত রেখে শুকনো ঢোক গিলে বললাম,

– “শুন না শেফা ,যা চলে গেছে তা নিয়ে রাগ করে বসে থাকলে কি চলবে ? বল? ”

হুট করে শেফা আমার হাত ঝাড়ি দিয়ে ফেলে চেঁচিয়ে বলল,

– “তুই তো আমার সাথে একদম কোনো কথাই বলবি না ! তুই বিয়ে করেছিস আর আমাকে এখন জানাচ্ছিস ? তুই কি আদো আমাকে বেস্টফ্রেন্ড মনে করিস ? ”

– “আমার পুরো কথাটা তো আগে শুন মেরি মা ! ”

– “একদম মা বলবি না । আমাকে কি দেখতে এমন মনে হয় নাকি ? ”

– “না না একদম না ! তুই তো নাইকা আমাদের নাইকা । ”

– “হুম তা ঠিক বলেছিস । ”

– “আচ্ছা এবার কথাটা শুন । বিয়েতে আমার একদম মত ছিলোনা । বিয়েটা আমার জন্য একপ্রকার বাদ্যতা ছিলো । পুরোপুরি ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হয়েছে । ছেলের বাড়ির দশ বারজন আর আমাদের বাড়ির লোকজনই ছিলো।তাই বলা হয়নি আর বিয়েতে আমার একদম কোনো প্রকার মত ছিলোনা । একটা ঘোরের মাঝে বিয়েটা হয়েছে । তাই তোকে বলাও হয়নি । ”

শেফা অবাক চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করে ,

– “ও মাই গড ! তার মানে বিয়েটা তোর মত ছাড়াই হয়েছে ? তোর হাসবেন্ড কেমন ? তার পরিবার কেমন? সবাই মন থেকে মেনে নিয়েছে তো? তোর উপর আবার কোনো প্রকার টর্চার তো করেনা ? সব ঠিকঠাক আছে তো হুর ? ”

শেফা কে তাড়াতাড়ি করে থামিয়ে বললাম ,

– “আস্তে আস্তে বুইন ! শ্বাস তো নে আগে । এত প্রশ্ন ? বাপ রে !! ”

শেফা চিন্তিত হয়ে বলল,

– “এত শ্বাস টাস নেওয়ার সময় আমার নেই।আমার খুব টেনশন হচ্ছে । খুবই ! ”

আমি মুচকি হেসে বলি ,

-“উনার পরিবারে সবাই খুব ভালো। সবাই আমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছে।মা তো বলেই দিয়েছে আমি উনার মেয়ে ।সবাই অনেক ভালো । আমাকে খুব ভালোবাসে । খুবইইই ভালোবাসে ! ”

– “আর তোর বর ? ”

আমি তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে উত্তর দেই ,

– “উনিও খুব ভালো । খুবই অনেস্ট লয়েল । অনেক হ্যান্ডসাম ।একদম চোখে লেগে থাকার মত সুদর্শন পুরুষ । শুধু …”

আমার মুখের কথা শেফা ছিনিয়ে নিয়ে কৌতূহলী কন্ঠে বলল,

– “শুধু কি ?? ”

– “শুধু । শুধু আমাকে মানতে পারেনি । তার অতীত অন্যকেউ যাকে সে এখনো খুব ভালোবাসে । সে আমাকে সাফ বলে দিয়েছে সে আমাকে মানতে পারবে না ।
তার জীবনে আমার কোনো জায়গা নেই ! ”

শেফা চিৎকার করে বলল,

– “কিইইই? তোকে মেনে নেয়নি ? মানে তোকে ? সে মানুষ নাকি পাথর ভাই ? তোর মত সুন্দরী অপ্সরী কে যদি স্ত্রী না মানে তাহলে সিউর তোর বর কানা ডাবল ব্যাটারি আমি বলি কি ত্রিপুল ব্যাটারি ।
মানে ভাই কি ভাবে পারে তোর মত একটা পুতুল কে ইগনোর করতে ? হাউ? ”

– “সার্ট আপ শেফা ! তুই বেশি বলছিস । আর তা ছাড়া প্রেম তো আর রুপে হয়না রুহ থেকে হয় ।আত্নার সম্পর্ক কি আর রুপের মোহে কাবু হয় ? ”

– “এসব নেগেটিভ কথাবার্তা বাদ দে ! কোনো আত্না রূহের সম্পর্ক টম্পর্ক নাই । অকে ? যদি তাই হতো তাহলে তোর বরের অতীত উনার সাথেই থাকতো । তুই থাকতি না । বিধাতা তোর ভাগ্য তোর বরের সাথে জুড়ে দিয়েছে । নিশ্চিত বিধাতার কোনো খেল আছে । তুই অতীত টতীত নিয়ে এত ভাবতে যাবিনা । বুঝেছিস ? এখন সে তোর বর তোর উনার উপর সব অধিকার আর কত কাল হ্যাবলার মত নিজের সব বিসর্জন দিবি ? এবার একটু নিজের কথা ভাব । নিজের অধিকার বুঝে নে । নিজের স্বামী কে নিজের সাথে বেঁধে রাখ ! ”

আমি অসহায় চোখে শেফার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করি ,

– “কিন্তু তা কি করে করবো ? উনার তো আমার প্রতি কোনো প্রকার ফিলিংক্স ই নেই ? ”

শেফা আমার মাথায় চাটি মেরে বলল ,

– “আরে গাঁধা মাইয়া । কবে বড় হবি বলতো ? মানে সব বুঝিয়ে বলতে হবে নাকি ?
মেয়েদের প্রধান অস্র রুপ আর গুন । তুই তো রুপ গুন দুটোতেই ফাস্ট ক্লাস । নাম যেমন হুর দেখতেও মাশাল্লা একদম হুরপরী । যেই কোন ছেলে তোর প্রেমে পড়তে বাধ্য । আর তার উপর গুন তো আছেই । ভালো গান গাইতে পারিস ,রান্না করতে পারিস ,ক্লাস টপার আবার হাতের কাজেও পারদর্শী । তোর বর তো তোর গুনেই কাইত । তোর সাথে আর কে লাগতে আসবে ? বল বল ? ”

আমি শেফার কথা শুনে বড় একটা শ্বাস নিলাম । মনে বেশ খানিকটা সাহস জমেছে । সত্যিই তো আমার মাঝে তো কোন কমতি নেই ।আমি চাইলেই অগ্নির মন জয় করতে পারবো । তার ভালোবাসা অর্জন করতে পারবো ।
আমি যে ভাবেই হোক না কেন অর্জন করেই ছাড়বো !

______________________

ক্লাস শেষে শেফার সাথে মাঠে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম । এমন সময়ই আমার চোখ যায় পলিটিকাল সাইন্সের বিল্ডিং এর তিন তলায় । অগ্নি দাড়িয়ে আছে আর তা সাথে গাঁ ঘেষে দাড়িয়ে আছে শাকচুন্নি ,ডাইনি ,পেত্নী নিহা ।এই পেত্নী মটেও আমার অচেনা নয় ।ভার্সিটির প্রথম দিনই আমার সাথে ঝামেলা করেছিলো রেগিং নিয়ে । সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত নিহা কে দেখলে রাগে আমার গাঁ কিড়মিড় করে । আজ তো একদম খুব করতে ইচ্ছে করছে আমার বরের গাঁ ঘেষে দাড়ানো ? দাড়াও ছুটাচ্ছি তোমার লুচুগিরি । নিহা পেত্নী আজ যদি তোকে শিক্ষা না দিয়েছি ! তাহলে আমার নামও হামিয়া হুর না ।
এমন শিক্ষা দিবো যে অগ্নির নামও তুই ভুলে যাবি । বেটি লুচুর হাড্ডি ,তেঁতুল গাছের পেত্নী ,দৈত্যর বউ ,কটকটি ,ডাইনি ,নর্দমার ইয়াক যাতা!!!!

রেগে হাতে কফির মগটা নিয়ে বড় বড় পা ফেলে রওনা দিলাম পলিটিকাল সাইন্সের বিল্ডিং এর দিকে …

চলবে…..❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন।ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টি তে দেখবেন । 😊😊😊