#শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ১৫
অগ্নি আভরিনের দিকে বার বার তেড়ে যাচ্ছে । তাকে মারার জন্য । কেবিনের সবাই তাকে ধরে বেঁধে রাখতে পারছে না । আশে পাশের মানুষজন ভিড় করেছে । আমার উঠে যাবার মত অবস্থা নেই । হাতে স্যালাইন চলছে । আমি বার বার চেঁচিয়ে অগ্নিকে থামতে বলছি কিন্তু কে শুনে কার কথা । ছোট মামী আভরীনের গাঁ ডাকা দিকে সামনে দাড়িয়ে আছে । অগ্নি চেঁচিয়ে বলছে ,
– “ওর সাহস কি করে হয় হুর কে এসব বলার ? ওর জিহ্বা আমি টেনে ছিড়বো ! ”
ছোট মামী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললেন ,
– “তোমার বউ রাতবেরাতে ছেলেদের সাথে ডলাডলি করবে আমার মেয়ে বললেই দোষ ?
আভরিন ভুল কি বলেছে ? ”
অগ্নি ধমকের স্বরে বললেন ,
-“ভুল কি বলেছে মানে ? হুরের সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে আমি ভুলে যাবো আপনি আমার কিছু হন ।
আপনি আপনার মেয়ের কু কৃতীর সম্পর্কে সব জানেন । আপনার মেয়ে রাস্তার পতিতা থেকে নিচে নেমে গেছে ।
আপনার মেয়ে কাল রাতে হুরকে পানিতে ধাক্কা দিয়েছে । আমি ছাদ থেকে নিজ চোখে সবটা দেখেছি । আমি যখন দেখি ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে । আমি উপর থেকে চিৎকার করে আভরিনকে থামতে বলেছি কিন্তু আপনার সাইকো মেয়ের কানে পৌছায়নি ।”
অগ্নির কথা শুনে আমি স্থব্দ হয়ে যাই । তার মানে উনি কাল ছাদ থেকে সবটা দেখেছে ? অগ্নি আভরিনের দিকে রক্তচক্ষু তে তাকিয়ে আঙুল নাড়িয়ে বললেন ,
– “তোর সাহস কি করে হয় আমার বউয়ের উপর হাত দেওয়ার ? আবার এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছিস ? আমার বউ কি তোর মত রাস্তার পতিতা ? তুই কি ভেবেছিস হুরকে মেরে ফেললেই আমি তোকে মেনে নিবো ! তুই তা ভাবলি কি করে ? দুনিয়ার শেষ মেয়ে হলেও তো আমি তোকে মেনে নিবো না । ক্যারেক্টারলেস মেয়ে একটা ।
আভরিন ন্যাকা কান্না করতে করতে বললেন ,
– “আমার মাঝে কিসের কমতি আছে ? আমি কি সুন্দর ,শিক্ষিত ,স্মার্ট না?
আমার বাবার অনেক টাকা আছে । এই মেয়ের রুপ ছাড়া আর কি আছে ? ”
অগ্নি আভরিনের কথায় আরো বেশি রেগে যায় ।
– “তুই নিজের তুলনা কি করে হুরের সাথে করিস ?তোর এখনো এতো সাহস কি করে হয় এইসব কিছু বলার ?
হুরের পায়ের নখের যোগ্যতা ও তোর নেই ।সারাজীবন সকাল বিকেল হুরের পা ধোয়া পানি খেলেও তার মত হতে পারবিনা ।
আমি কাল রাত থেকে নিজের রাগ জিদ কে চেপে ধরে চুপ ছিলাম । শুধু হুরে জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় । আমার এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে তোকে কুচিকুচি করে কেটে কুকুর কে খাওয়াতে । ”
অগ্নির মুখে বার বার বউ ডাক শুনে মনে এক অন্য অনুভূতি শিহরণ করছিলো ।প্রত্যেকটা ডাক বুকে যেয়ে লাগছে ।
আমি ভেবেছিলাম হয়তো অগ্নি আমাকে ভুল বুঝবে । আমার জন্য যে অগ্নি এমন স্টেপ নিবে সত্য আমি ভাবতে পারছিলাম না ।
ছোট মামা অগ্নির কাছে এসে তার সামনে হাত জোর করে দুঃখী গলায় বললেন,
– “আভরিন যা করেছে তার জন্য আমি সত্যি খুব লজ্জিত । বাবা এবারের মত আভরিন কে ক্ষমা করে দেও । তুমি তো জানোই ও ছোট থেকে কত জেদি। এবারের মত ওকে ক্ষমা করে দেও । ”
অগ্নি রাগে ফুসতে ফুসতে বললেন ,
– “এই আপনাদের এই আস্কারার জন্যই ও এতো বেড়েছে । স্যরি টু স্যা মামা আপনারা আপনাদের মেয়েকে মানুষ করতে পারেনি । আস্ত অমানুষ হয়েছে । আর আভরিন তুই আমার থেকে আর আমার বউ থেকে একশো হাত দূরে থাকবি । তোর জন্য লাস্ট ওয়ার্নিং । ”
নানুজান সব শুনে বুকে হাত দিয়ে বসে আছে ।আভরিনের এমন কাজ নানুজানকে খুব লজ্জায় ফেলে দিয়েছে । বাড়ির সবাই অগ্নির রাগের সামনে মাথা নত করে চুপ হয়ে আছে । অগ্নির রাগ সম্পর্কে ছোট বড় সবার বেশ ভালো ধারনা আছে । অগ্নি সবাই কে জানিয়ে দেয় আমরা আর ঐ বাড়িতে ফিরছে না । হসপিটাল থেকেই ঢাকার জন্য রওনা হবে । তা শুনে নানুজান কান্না শুরু করে দেয় । সবাই অগ্নিকে বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু অগ্নি শুনতে নারাজ । ইয়াশা আপু খুব করে রিকোয়েস্ট করছে কিন্তু কে শুনে কার কথা । অগ্নি নিজে সিদ্ধান্তে অটল ।
এক এক করে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যায় । আপু আর অগ্নি আমার পাশে বসে । এখনো রাগে ফসফস করছে ।
পরিস্থীতি খুব বাজে মোর নিচ্ছে দেখে আমি অগ্নিকে বললাম,
– “শুনুন না প্লিজ এমন করবেন না । কাল যা হয়েছে তা তো আভরিন করেছে এতে বাকি সবার দোষ কোথায় । প্লিজ এমন জিদ করবেন না । ”
উনি ঝাঁঝালো গলায় বললেন,
– “যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো ? ”
– “আমার কিছু হয়নি তো । এই দেখেন আমি একদম ঠি ক আছি । কিছুক্ষণ পর দৌড়াতে পারবো । ”
– “আমার সাথে ফাইজলামি করছো ? তোমার মনে হচ্ছে আমি মজা করার মত মুডে আছি ? ”
আমি মাথা দু পাশে দুলিয়ে উত্তর দিলাম ,
– “না না একদম না । আপনি তো সবসময়ের মত একদম সিরিয়াস মুডে আছেন । আমি কি স্বাদে আপনার নাম রাক্ষসরাজ দিয়েছি ? ”
উনি আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালেন । আমি ছোট ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বললাম ,
– “ডোন্ট মাইন্ড আমি তো এমনিতেই মজা করছিলাম । আচ্ছা এসব ছাড়ুন শুনুন আমার কথা । ”
উনি আমার দিকে গোমরা মুখ করে তাকিয়ে আছে । আমি সেদিকে খুব একটা তেক্কার না করে আদুরে গলায় বলি ,
– “শুনুন না প্লিজ ! ”
– “হুম বলেন ,কি শুনাবেন ! ”
– “আমরা ইয়াশা আপুর বিয়ে পর ঢাকায় ফিরবো । প্লিজ না করতে পারবেন না । আপু সহ সবাই কত আশা নিয়ে আছে । যদি আমরা ঢাকায় ফিরে যাই তবে বিয়ে আনন্দটাই মাটি হয়ে যাবে । প্লিজ আপনি এমন কিছু করবেন না । প্লিজজ্জ!!! ”
কথা শেষ করে আমি ঠোঁট উল্টিয়ে উনার দিকে চাতক পাখির মত তাকিয়ে আছি । উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায় । আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই । নাচতে ইচ্ছে করছে যদি তা এই মুহূর্তে সম্ভব না ।আমি জানি উনি আমার কথা ফেলতে পারবে না । কারণ উনার অন্তর আত্মা তার অনুমতি তাকে দিবে না । না মানে এদমই দিবে না । এতো দিনে উনার সাথে থেকে এতোটুকু তো উনাকে চিনেছি ।
শত হোক আমিও তো আমার রাক্ষসরাজের হুররানী ।
_____________________________
আমি বেডে গাঁ হ্যালিয়ে বসে আছি । আপু আমার পাশে বসে আছে ।আপুর ডাকেতে আমি চোখ খুলি । আপু আমার হাত নিজের হাতে নিয়ে বললেন ,
– “হুর একটা কথা বলবো ? ”
– “আপু অনুমতির কি আছে ? যাস্ট বলে ফেলো । ”
– “কাল আমার মনের অনেক বড় এক বোজ হালকা হয়েছে । তোর বিয়ের পরের দিন যেদিন আমরা বাড়িতে যাই আপুর সাথে তোর সেদিন ঝামেলা হওয়ায় জানতে পারি মা তোকে বিয়েতে ব্লাকমেইল করে বাধ্য করেছে । নিজেকে ভিতরে ভিতরে খুব অপরাধী মনে হয়েছিলো । আমার জন্য তোর জীবন নষ্ট হয়েছে । কিন্তু কালকের পর বুকের সব বোজ হালকা হয়েছে । মনে হচ্ছে যা হয়েছে ভালো হয়েছে । তুই এক পারফেক্ট লাইফপার্টনার পেয়েছিস । যে তোকে খুব ভালোবাসে আর সম্মান করে । কাল আমরা কেউ জানতাম না তুই পুকুকে পরেছিস অগ্নি ভাইয়ার চিৎকার চেঁচামেচি তে আমরা বাহিরে বেরিয়ে এসেছে । এসে দেখি অগ্নি ভাইয়া পাগলের মত তোকে ডেকে যাচ্ছে ।বিলাপ করছে । নিজের কোলে করে হসপিটাল পর্যন্ত নিয়ে আসে । এক সেকেন্ডের জন্যও নিজের থেকে তোকে আলাদা করে না । গাড়িতেও তোকে কোলে নিয়ে ছিলো । হসপিটালে সারারাত একপায়ে এই ভেজা কাপড়ে কেবিনের সামনে দাড়িয়ে ছিলো । জ্ঞান ফিরার আগ পর্যন্ত ছটফট করছিলো । বার বার ডাক্টারকে বার বার শুধু একটা কথা বলে যাচ্ছিলো ‘আমার হুরের জ্ঞান ফিরবে কখন ? আমার হুর ঠি ক আছে তো ? ‘ ”
আপুর কথা শুনে আমি স্থব্দ হয়ে বসে আছি । আপুকে কি বলবো বুঝতে পারছি না । আমার কি বলা উচিত আপুকে ? চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরে । আর তা কষ্টের না ! তা পরম আনন্দের ।
(জানি পার্টটা ছোট হয়েছে । ছোট বলিয়া লজ্জা দিবেন না । অনেকককক ব্যস্ততার মাঝে লিখেছি । নেক্সট পার্ট বড় করে দিবো )
চলবে …….❤️
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট : ১৬
পিটপিট চোখে সামনে তাকিয়ে আছি । এই মুহূর্তে বেডের থেকে উঠে হেঁটে গাড়ি পর্যন্ত যাওয়াটা আমার কাছে যুদ্ধ সমান । শরীরে সামান্যতম শক্তি নেই ।অগ্নি ডাক্টারের সাথে কথা বলতে ডাক্টারের চেম্বারে গিয়েছে ।
আমি মনে আসমান সমান শক্তি নিয়ে সামনের দিকে একপা আগাই । দ্বিতীয় পা ফেলার আগেই মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেই । এমন সময়ই কেউ আমার কমোড় জরিয়ে ধরে । নিজের বুকে আশ্রয় দেয় ।তার শরীরের মিষ্টি ঘ্রাণ আমার খুব পরিচীত । চোখ বন্ধ করে বলতে পারছি এটা অগ্নি । আমার মাথায় কিছুসময় হাত বুলিয়ে হুট করে আমাকে নিজের কোলে তুলে নেয় । আমিও গুটিসুটি মেরে উনার বুকের মাঝে মিশে যাই । হাল্কা মাথা তুলে উনার দিকে আদো আদো চোখে তাকাই । উনি আমার দিকে গম্ভির ভাবে তাকিয়ে । সামনের দিকে বড় বড় পা ফেলতে ফেলতে গম্ভির কন্ঠে বললেন ,
– “এত তাড়া কিসের ? একটু কি আমার আসার অপেক্ষা করা যায়নি ? আমি তো বলেছিলাম এখানে অপেক্ষা করতে । ”
আমি আদো আদো গলায় উত্তর দেই ,
– “ভাবলাম আমি নিজেই চেষ্টা করি। আর কতবার আপনাকে বিরক্ত করবো ! ”
উনি আমার দিকে সরু চোখে তাকিয়ে বললেন ,
– “আমি কি একবারও বলেছি আমি বিরক্ত ? ”
আমি কাচুমচু মুখ করে বলি,
– “তা মুখে বলতে হয় নাকি ? বুঝে নিতে হয় । তাছাড়া আমি আবার সবার মন কথা বুঝতে পারি । ”
– “এতো ভাবতে তো আপনাকে বলিনি । এখন যদি একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতো ? ”
– “তো কি আর হতো ? বড়জোর মরেই যেতাম ! এর থেকে বেশি আর কি হতো । ”
উনার কাছে আমার কথাটা যেন খুব তিক্ত লেগেছে । আমার দিকে রাগী চোখে তাকায় । আমিও আর কথা বাড়াইনা ।অগ্নি থেকে রাক্ষসরাজ হতে সময় লাগবে না ।
বেশি রাগীয়ে দিলে এখন আছাড় মেরে ব্যাঙ বানিয়ে ফেলবে । যা আমি কিছুতেই হতে চাইনা । একদম হতে চাইনা !
বেড থেকে গাড়ি পর্যন্ত আনা অব্দি পুরোটা সময় আমাকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছিলো । এমনকি লিফটেও । আশেপাশের মানুষজন সবাই হা হয়ে তাকিয়ে ছিলো । কানাকানি করছিলো । আমি লজ্জায় শেষ । কিন্তু উনি ? উনি এমন স্বাভাবিক ছিলো যে কিছুই হয়নি । গাড়িতে এনে আমাকে নিজের পাশের সিটে বসিয়ে সিটটা পিছনের দিকে হ্যালিয়ে দেয় । আপু বেশ কয়েকবার বলেছিলো আপুর সাথে পিছনে বসতে কিন্তু উনি শুনতে নারাজ । গাড়ি ড্রাইভিং এর সময় বেশ কয়েকবার আমার দিকে আড়চোখে তাকায় । আমিও তাকাই । একসময় আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ হয়ে আসে । ঘুমের দেশে তলিয়ে যাই ।
_______________________
বাড়িতে আসতেই জানতে পারি আভরিনকে তার নানুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে । আমরা যতদিন এখানে আছি আভরিন সেখানেই থাকবে । সাথে ছোট মামীও গিয়েছে।উনারা ঐ জায়গা থেকেই ইয়াশা আপুর বিয়ের সব ফাংশন এ্যাটান্ট করবে ।
বাড়ি তে আসতেই সবাই আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে । একএক করে সবাই দেখা করে যায় । আমার হালচাল জিগ্যেস করে । নানুজান তো আভরিনের এসব কু কান্ডতে খুব দুঃখী । বার বার কান্না করে দিচ্ছিলেন ।
বিকেল পর্যন্ত সবাই আমার কাছেই ছিলো । বেলা ডুবার আগে যার যার রুমে চলে যায় । হিয়া আপুও নিজের রুমে রেস্ট নিতে গেছে । কাল থেকে আপুর উপর তো আর ধকল কম যায়নি । আমি মুখ বাকিয়ে বসে আছি । খুব বোরিং লাগছে । অগ্নিও রুমে নেই উনি থাকলে না হয় উনার সাথে একটু ঝগড়া করা যেত । বিরক্তিকর !
আজ বাড়িতে আসুক এই লোক কথা বলবো না । একটুও কথা বলবো না । কি ভাবে নিজেকে ? আমি তার জন্য মরে যাচ্ছি ? উহু একদম না ।
সন্ধ্যা হয়েছে চারদিকে অন্ধ্যকার নেমেছে । আমি এখনো বেডে বসে । হঠাৎই দরজা খোলার শব্দ কানে আসে । সামনে তাকিয়ে দেখি অগ্নি এসেছে । আমি অভিমান করে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখি । উনি আমার সামনে এসে বসে আমি আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ফেলি ।
উনি কিছুক্ষণ আমার দিকে গম্ভির ভাবে তাকিয়ে বললেন ,
– “মুড অফ ? ”
আমি কোনো উত্তর দিলাম না । উনি আবার বললেন,
– “আমার উপর রেগে আছো ? ”
এবারো কিছু বললাম না । শুধু একবার আগুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চোখজোড়া বন্ধ করে নেই । আচমকা উনি আমার গাল চেপে উনার মুখের সামনে টেনে আনে । আমার চোখে চোখ রেখে নেশাপ্রবণ ভাবে তাকিয়ে মাতাল কন্ঠে বললেন ,
– “এই সুন্দরীইই ,খুব কি রেগে আছো ? ”
আমি উনার চোখে আর মাতাল করা কন্ঠে ডুবে যাচ্ছি । খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে ,না অগ্নি আমি কি আপনার সাথে রেগে থাকতে পারি ? আপনার সাথে কি রেগে থাকা যায় ? বলুন ? আপনার দু গাল ধরে শুধু টিপে দিতে ইচ্ছে করে । আপনার এই আদুরে কথা গুলোকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে । ইসসস এই কথা গুলো খেতে না জানি কতটা মিষ্টি হবে । হায়য়য়!!!
কিন্তু আমি তা কিছু বললাম না । নিজের মন কে সিন্দুকবন্ধি করে ।
উনার থেকে নিজের গাল ছাড়িয়ে গলা ঝেড়ে বললাম ,
– “আমি রাগ করলেই কি ? আর না করলেই কি? আপনার কি কিছু আসে যায় ?
আমি কি আপনার কিছু হই ? ”
উনি আবার আমার মুখ নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন ,
– “হুম আমার অনেক কিছু আসে যায় ।আমার সুন্দরী আমার সাথে রেগে থাকলে আমার কষ্ট হয় তো । খুব কষ্ট হয় । এই যে বুকের এই জায়গাটায় খুব পোড়ায় ! ”
আমি উনার দিকে সন্দেহের চোখে তাকাই । উনি কি ড্রাংক ? মনে তো হচ্ছে তাই ই । আমি সন্দিহান চোখে উনার দিকে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে উনার কাছে যেয়ে নাক উঁচু করে ঘ্রাণ শুনি ।
হুম যা সন্দেহ করেছি তাই ই । উনি ড্রাংক । আমি কি করে ভুলে যাই এই ব্যাটা যে কাবির সিং মেক্স প্রো ? হাউ ?
আমার বুঝা উচিত ছিলো যে সজ্ঞানে কোনো দিন আমার সাথে এত সুন্দর করে কথা বলবেনা । নিশ্চিত ড্রাংক হয়েই আমার কাছে আসবে ।
আমি বুঝিনা এই লোকের এতো কিসের জ্বালা ? আমি উনার কাছে থেকে সরে যাই ।
উনি আমাকে হুট করব কোলে তুলে নেয় । আমি উনার থেকে ছাড়া পাবার চেষ্টা করি কিন্তু বিশেষ কোনো কাজ হয় না । উনি আমাকে নিয়ে বারান্ধার দিকে পা বাড়ায় ।
______________________
উনি আমাকে জোর করে নিজের কোলে বসিয়ে রেখেছে । আমি নড়তে পারছিনা একদম । উনি আমার কমোড়ে হাত পেঁচিয়ে খুব শক্ত করে ধরে আছে । আমি উনার দিকে রাগী চোখে তাকাচ্ছি ।কিন্তু উনি আমার রাগকে কোনো তেক্কার দিচ্ছেনা । আমার কাধে নিজের থুতনি ঠেকিয়ে আছে । উনার খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার কাধে ঘষা লাগছে । আমি উনার থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছটফট করছি । উনি ধমকের স্বরে বললেন ,
– “আমি কি তোমাকে কামড়াচ্ছি ? এভাবে ছটফট করছো কেন ? ”
– “আপনি ড্রিংক করে এসেছেন আমি এক মুহূর্তও আপনার সাথে থাকতে চাইনা । ছাড়ুন আমাকে ! ”
আমি নিজের হাত পা আবার ছুটাছুটি করতেই উনি জোরে এক ধমক দেয় । আমি ভয়ে চুপচাপ বিড়ালের মত বসে থাকি ।দুজনের মাঝে বেশ কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করে । উনিই আমার গালের সাথে নিজের গাল লাগিয়ে আদুরে গলায় বললেন,
– “আচ্ছা স্যরি । ”
আমি চুপ করে আছি । উনি আবার আগের মত একই ভাবে বললেন ,
– “স্যরি তোওও । এবার তো একটু হাসো ! ”
আমি এবারো চুপ । উনি উনার জেকেটের পকেট থেকে ferrero rocker এর একটা চকলেটের বক্স বের করে আমার সামনে রাখে । আমি নিতে নেই উনি সরিয়ে নিয়ে বললেন ,
– “এত সহজে দিচ্ছিনা । আগে হাসো তার পর দিবো । ”
আমি ঠোঁট বাকিয়ে একটা প্লাস্টিক হাসি দেই । উনি মুচকি হেসে আমার হাতে বক্সটা দেয় । আমি তাড়াতাড়ি করে বক্স খুলে একটা চকলেট নিয়ে মুখে পুড়ে দেই । যত যাই হোক চকলেটের জন্য সব ভুলতে রাজি । চকলেট আমার সবরকম মন খারাপের মেডিসিন ।আমি চোখ বন্ধ করে আবেশে খাচ্ছি ।
হঠাৎ চোখ খুলে দেখি উনি আমার দিকে গাঢ় চোখে তাকিয়ে । আমি কিছু জিগ্যেস করার আগে উনি বলতে লাগেন ,
– “স্যরি আমার জন্য তোমাকে কাল এতকিছু সয্য করতে হয়েছে ! ”
– “কি আর করার এখন বর এতো হ্যান্ডসাম হলে জীবনের রিস্ক তো একটু আকটু থাকেই । ”
– “আচ্ছা তাই বুঝি ? ভালোবাসা কি চেহারা বা সৌন্দর্য দেখে হয়? ”
আমি চকলেট খেতে উত্তর দেই ,
– “হয়তো ! কিন্তু তা সবার জন্য না । কিছু কিছু মানুষ সৌন্দর্য কে ভালোবাসে । ”
উনি উদাসীন ভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে বললেন ,
– “কই আমার তো এমন হলোনা ।আমি তো সুপ্তিকে না দেখে কিছু না জেনেই ভালোবেসেছি । ওর গান ,ওর সুর ,ঘন্টার পর ঘন্টা ওর সাথে ফোনে কথা বলাটাকে ভালোবেসেছি ।ওর আওয়াজ কে ভালোবেসেছি । ”
উনার কথায় মুখের চকলেট টাও তিতা বিষ লাগছে । খুব কি দরকার ছিলো এই মুহূর্তটায় সুপ্তির নাম নেওয়া ? ঐ যে বলে না জাতে মাতাল তালে ঠিক । আমাকে কোলে বসিয়ে সুপ্তির নাম জপছে । আমি জোর করে উনার কোল থেকে উঠে রুমে চলে আসি । রুমে বেডে বসে শ’খানেক উনাকে গালি দেই । বদ লোক আমাকে কোলে নিয়ে সুপ্তির নাম জপা হচ্ছে ? যাবো না আর এই বদ লোকের কাছে । হুহ !
কিন্তু উনার একটা কথা কিছুতেই মাথায় ডুকছে না । সুপ্তি আবার কবে থেকে গান শুরু করলো ।স্কুল লাইফ থেকেই ওর নাচের প্রতি ঝোপ বেশি ।সব সময় স্কুল কলেজে আমি গান গাইতাম । অকে গান গাইতে বললে বলতো । ওর গানের গলা খুবই বাজে ।
তাহলে অগ্নি ঐসব কি বললো? এগুলো কি নেশার ঘোরে বলেছে নাকি সত্যিই অন্যকিছু ?
চলবে …..❤️
প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন । 😊😊😊