শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট :৪২
আজ পহেলা বৈশাখ ।সকাল থেকে ভাইয়া ভাবী বিকেলের অনুষ্ঠানের জন্য তোড়জোড় করছে । চেহারায় কিছুটা চিন্তার ছাপ । কিছু একটা নিয়ে খুব চিন্তিত । দুপুরে বিশাল খাওয়া দাওয়ার আয়োজন হলো । প্রত্যেকটা খাবার আইটেম ভাবী নিজ হাতে তৈরি করেছেন ।সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া শেষ করি । দুপুরের খাওয়ার পর ভাবী আমার রুমে আসে ।ভাবী কে দেখে আমি বিছানায় হেলান দিয়ে বসি ।ভাবী আমার সামনে এসে বসে বললেন ,
– “এখনো তৈরি হও নি! এইতো কিছুক্ষণ পরই বিকেল নামবে । ”
– “আমি আর কি তৈরি হবো ভাবী । শুধু ড্রেসটা চেঞ্জ করবো । ”
– “আজ পহেলা বৈশাখ নতুন বছরের সূচনা আজ অনন্ত একটু সাজগোজ করো । চাঁদের মত মুখটা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে আছে। ”
– “ভাবী যার জীবনটাই রংহীন ,তার জন্য কিসের বৈশাখ কিসের বসন্ত ? আমার জীবনের প্রতিটা রং তো সেদিনই ফ্যাকাসে হয়ে গেছে যেদিন জেনেছি যাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করেছি সে আমার সাথে বেঈমানি করেছে । ”
– “হুর ,অগ্নিকে একটা সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো । একবার তার মুখ থেকে সবটা শুনে নিতে ! ”
আমি তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলি,
– “সুযোগ ? কিসের সুযোগ দিতাম ভাবী ? যেখানে সত্যিটা আমার চোখের সামনে সচ্ছ পানির মত । ভাবী তুমি যদি ভেবে থাকো আমি সুপ্তির কথায় বিশ্বাস করে উনাকে ছেড়েছি । তাহলে তা ভুল !
আমি সেই প্রথম থেকেই অগ্নির আর অরন্য নিয়ে সন্দেহ ছিলো । আমি যতবার অগ্নির কাছে যেতাম অরন্যকে অনুভব করতাম । কিন্তু বার বার নিজের মনকে এই বলে সান্ত্বনা দিতাম যে ,আমি ভুল । ভাবী আমি নিশ্চয় অগ্নিকে সুযোগ দিতাম । নিজের দিক উপস্থাপনের করার একটা সুযোগ দিতাম ।যদি না জানতাম অগ্নিই অরন্য !
ভাবী তুমি জানো না আমি অরন্য নামটাকে কতটা ঘৃণা করি । আমি কতটা পুড়েছি, কি ভাবে নিজের দিন পার করেছি , তা কেবল আমি জানি ।একটা সময় ছিলো আমি এই নামটাতে পাগল ছিলাম । এতোটা যে মুহূর্তেই নিজের দুনিয়াদারি সব কিছু উজাড় করে দিতে পারতাম । কাউকে জেনে শুনে ভালোবাসায় এতোটা পাগলামো থাকে না ,যতটা কাউকে না দেখে ,না জেনে ভালোবাসায় থাকে । আমি তার জন্য উম্মত ছিলাম । কিন্তু সে আমার সাথে কি করেছে ধোকা দিয়েছে । আমার এতো স্বপ্ন ভালোবাসা ঘর মুহূর্তেই চুরমার করে দিয়েছে । তারপর ও আমাকে তাকে সুযোগ দিতে বলো ? কি করে দিবো বলো ? তুমি আমার জায়গায় থাকলে পারতে !
ভাবী সুপ্তি অগ্নির প্রথম ভালোবাসা যা অগ্নি বিয়ের দিনই আমাকে জানিয়ে দিয়েছিলো । সেখানে আমি কি করে তাকে সুযোগ দিতাম । যা আমি জানি অগ্নি নিজে আমাকে বলেছে সেখানে তাকে মুখ থেকে দ্বিতীয় বার শুনার কোনো মানে হয় ? আর আমার সাথে যা ছিলো তা খানিকে মোহ । আমি তার কাছে পুতুল আমার মন নিয়ে সে খেলতে পছন্দ করে । তাই আবারো তাই করলো । যদি সে জানতো তার সন্তান আমার গর্ভে আছে নিশ্চিত আমাকে নিজের কাছে আটকাতো । কি তা শুধু নিজের সন্তানের জন্য না হয় আমার উপর দয়া করে । যা আমি চাই না ।আবারো উনার প্রতারণার শিকার হতে চাই না । ভুল একবার করলে তা ভুল মানা যায় । কিন্তু বার বার একই ভুল করা মূর্খতা !
আমি জানিনা আমার ভবিষ্যৎ কি হবে । এমনো হতে পারে ডেলিভারির সময় আমার মৃত্যু হতে পারে । কিন্তু যাই হোক না কেন আমি আমার সন্তানের উপর ঐ লোকের ছায়া পড়তে দিবো না ।”
ভাবী আমার হাতের উপর হাত রেখে বলে ,
– “হুর ,এমন করে বলছো কেন ! ডেলিভারির সময় মৃত্যু হবে কেন ? ”
– “ভাবী বলা তো যায় না । কি থেকে কি হয়ে যায় ! ”
– “এসব ভেবো না । সব ভালো হবে দেখো । ”
– “তোমার কথাই যেন ঠিক হয় ”
– “আচ্ছা এসব কথা ছাড়ো । তুমি আজ শাড়ী পড়বে । আমি আজ নিজ হাতে তোমাকে সাজাবো । ”
– “ভাবী তার কি দরকার আছে ! এখন আর সাজগোজ ভালো লাগে না । ”
– “উফফ! চুপ করো তো । দিনদিন একদম বুড়িদের মত হয়ে যাচ্ছো । আমি বলেছি আমি সাজিয়ে দিবো মানে আমি সাজিয়ে দিবো । ”
– ” ওহহ ! ভাবী ,তোমার জিদের সাথে কি আজ পর্যন্ত পেরেছি ? যে এখন পারবো ! ”
ভাবী খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে । পড়নে লাল সাদা জামদানি শাড়ী । চুলগুলো কার্ল করে ছাড়া । হাল্কা মেকআপ । কানে ভারী দুল । আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে আছি । এই দুমাসে নিজেকে একদম হারিয়েই গিয়ে ছিলাম । আমার মধ্যে এই আমিটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম । ভাবী কানের পিছনে কালো টিকা লাগিয়ে দিয়ে বললেন,
– ” মাশাল্লা ! কারো নজর যেন না লাগে । ”
আমি উত্তরে মুচকি হাসি ।কিছুক্ষণের মাঝেই বাড়ি থেকে রওনা হই ।ভাইয়া ড্রাইভ করছে । ভাবী ভাইয়ার পাশে । আর আমি আর তানিন পিছনের সিটে বসে আছি । তানিন আমার গাঁয়ে মাথা ঠেকিয়ে ফোনে গেম খেলছে । আমি বাহিরের তাকিয়ে আছি ।সিলেটে দুমাস ধরে এসেছি এখনো ঘুরে দেখার সুযোগ হয়নি । মূলত বলতে গেলে ইচ্ছে করেই বের হইনি । মনে অশান্তি থাকলে কোনো কিছুই ভালো লাগেনা । এসব ভাবতে ভাবতেই অনুষ্ঠানে পৌছাই । গাড়ি থেকে নামতেই দেখি শতশত মানুষের ভিড়। সবাই খুব সুন্দর সাজগোজ করা ।আশেপাশে অনেক কাপোল রয়েছে । হাতে হাত ধরে হাঁটছে । কি সুন্দর লাগছে । আমি মুচকি হেসে তানিন কে নিয়ে আশেপাশে স্টল গুলো ঘুরেঘুরে দেখছি । ভাইয়া আর ভাবী কে একান্ত কিছু সময় কাটানোর জন্য স্পেস দিয়েছি । তানিন এটা ঐটা নিয়ে উদ্ভট প্রশ্ন করে যাচ্ছে । আমি তানিনের কথায় কোনো ভাবেই নিজের হাসি আটকাতে পারছিনা । শব্দ করে হাসছি । তানিন বায়না ধরে রেশমি জিলাপি খাবে । আমি তানিন কে নিয়ে জিলাপির স্টলে যাই । কিন্তু হ্ঠাৎ মনে হলো কে জানো আমার পিছু নিচ্ছে ।ভ্রু কুঁচকে এদিকে ওদিকে তাকাই কিন্তু কেউ নেই । মনে ভুল ভেবে তানিনের দিকে তাকাই । কিন্তু বার বার একই অনুভূতি হচ্ছে যেন কেউ আমাকে ফলো করছে ।কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে ভাইয়া ভাবী কে আসতে ফোন দেই । কেমন জানো অস্বস্তি লাগছে । আকাশটাও মেঘে কালো হয়ে আছে । ভাইয়া ভাবী আসতেই ভাইয়া বলি আমি গাড়ি বসতে চাই । এখানে এতো ভিড়ের মাঝে ভালো লাগছে না । ভাইয়া গাড়ির চাবি আমার কাছে দেয় । আমি পার্কিং এরিয়ার দিকে পা বাড়াই । ঝড়ো হাওয়া ছেড়েছে । মনে হচ্ছে কাল বৈশাখী ঝড় হবে !
আমি গাড়ির সামনে আসতেই কেউ পিছন থেকে আমার চোখ বেঁধে দেয় । আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার হাত বেঁধে ফেলে আমাকে গাড়ি তে উঠায় । আমি চিৎকার চেঁচামেচি করছি কিন্তু আমার কথা লোকটার কানে ডুকছে না । কোনো সাড়াশব্দ করছেনা । আমি বারবার জিগ্যেস কেন আমার সাথে এমন করছে ? কি চাই তার ? কিন্তু কোনো উত্তর নেই । আমি কোনো প্রকার জবাব না পেয়ে হেল্প ! হেল্প।! বলে চিৎকার করতে লাগি । অবশেষে লোকটা আমার বাঁচার শেষ রাস্তা বন্ধ করে দেয় । আমার মুখ আটকে দেয় । আমি আঁচ করতে পারছিলাম লোকটা আমার পাশেই বসে আছে ।
আমাকে কোথাও বসিয়ে রেখেছে । মনে হচ্ছে কোনো বিছানা । আমার চোখ ,হাত ,মুখ এখনো বাঁধা । কানে শব্দ আসছে । লোকটা আমার দিকে বোধহয় এগিয়ে আসছে ।কিছুক্ষণ পর আমার গালে কারো স্পর্শ পেলাম । আমার গালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করছে । এই স্পর্শটা আমার অপরিচীত না । খুবই পরিচীত । আমার চোখ মুখ খুলে দেয় । সামনের লোকটাকে দেখে আমি স্থব্দ হয়ে গেলাম । মাথা চক্কর মারে ।মুখ থেকে অফুটন্ত স্বরে বেরিয়ে আসে “অগ্নি ” !
আমার শরীরে কাঁপুনি উঠে গেছে । আমি কোনো ভাবেই নিজেকে শান্ত করতে পারছিনা । আমি রাগ ভয় সব মিলিয়ে থতমত গলায় বলি,
– “কেন এসেছেন আপনি ! কি চান আপনি । আমাকে ছেড়ে দেন । আমি এখনি বাসায় যেতে চাই । আ….আমি আপনার চেহারাও দেখতে চাইনা ।বাসায় যাবো ….
আমি এসব কিছু বলতে বলতে কাঁপা পায়ে বিছানা থেকে পা নামাই । কিন্তু উঠে দাড়ানোর আগেই অগ্নি আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে বসিয়ে দেয় ।আমার মুখ শক্ত করে চেপে ধরে । থমথম আওয়াজে বলে ,
– “হুসসসস, একটা কথাও না !”
আমি চুপ করে হাত পা গুটিয়ে বসি । আমার চোখ অগ্নির চোখে । আমার আজ এই চোখ দেখে ঘৃণার চেয়ে বেশি ভয় করছে । প্রচন্ড ভয় । এই অগ্নিকে আমি কোনো দিন দেখি নি । এই এক অন্য অগ্নি,যে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করবে না । আমার চোখ থেকে ভয়ে পানি ঝোড়ছে ।আমি আস্তে আস্তে পিছনে বিছানার সাথে মিশে যাচ্ছি ।
চলবে….❤️
#শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট :৪৩
বাহিরে ঝড় উঠেছে । প্রবল বেগে বৃষ্টি হচ্ছে । রুমের ভিতর থমথমে পরিবেশ । অগ্নি এখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি নত দৃষ্টি তে ঘৃণার স্বরে বলি,
– ” আমার হাত ছাড়ুন ,আমি বাড়ি যাবো । ”
আমার কথায় অগ্নি গুরুত্ব না দিয়ে।গাল চেপে মুখ উঁচু করে বললেন ,
– “কি শাস্তি দেব তোমায় ? এই দুমাস ছয় দিন আমার কিভাবে কেটেছে তোমার কোনো আইডিয়া আছে ?
প্রত্যেকটা নিশ্বাসে আমি তিলেতিলে মরেছি । মরন যন্ত্রনায় ভুগেছি । তোমার এই নিষ্পাপ চেহারার পেছনে যে এমন নিষ্ঠুর একটা রুপ আছে আমার জানা ছিলো না । ”
– ” আচ্ছা তাই? আমি নিষ্ঠুর ? আর আপনি ? আপনি কি দুধের ধোয়া তুলসী পাতা !
আপনি একটা প্রতারক । আমার সাথে বারবার প্রতারণা করেছেন । বিশ্বাসঘাতক ! ”
অগ্নির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে তাকিয়ে প্রত্যেকটা কথা বললাম । অগ্নি আমার গাল স্লাইড করতে করতে বলে,
– “এই ঘৃনার দৃষ্টি তে আমার দিকে তাকিও না । তোমার এই দৃষ্টি আমার বুকে ছুড়ির মত আঘাত করে । আমার বুক প্রতিটা সেকেন্ড রক্তাক্ত হচ্ছে ! ”
– “আমার আপনার স্পর্শ আমাকে প্রতিটা সেকেন্ড নরকের আগুনের মত জ্বালাচ্ছে । ”
আমার কথায় অগ্নি ক্ষেপে যায় । আমার হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে । দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
– ” আমার স্পর্শ তোমাকে নরকের আগুনের মত পোড়াচ্ছে ? আর তুমি যে আমাকে এতোটা দিন আমাকে দুনিয়ায় নরক দেখিয়ে দিয়েছো ! তা কিছুনা ? বিনা দোষে আমাকে দিনের পর দিন শাস্তি দিয়েছো । আরে প্রতারক আমি না ! তুমি আর তোমার বান্ধবী । তোমরা দুজন মিলে আমার জীবন ছেলেখেলা বানিয়ে দিয়েছো । ”
আমি তাচ্ছিল্যর হাসি হেসে বলি ,
– “আপনার জীবন ছেলেখেলা কেন হবে ? এখন তো আপনার ভালো থাকার কথা ।নিজের ভালোবাসা কে খুঁজে পেয়েছেন ,আপনাদের ভালোবাসার চিহ্ন দুনিয়াতে আসছে । আর কি প্রয়োজন ? ”
– ” এই মেয়ে তুমি কি বুঝো না কিছু ? আমার কি প্রয়োজন তা কি তোমার জানা নেই ? তো শুনো আমার তোমাকে প্রয়োজন । ”
– “আর কতো ছলনা করবেন ? সত্যিটা আমি জানি আপনি অরন্য !
কেন আমার সাথে এসব করলেন ? কেন আমার জীবন এভাবে নষ্ট করলেন? আমি যদি আপনার যোগ্যই না হই তাহলে পরবর্তিতে কেন কাছে টেনে নিলেন ? ”
অগ্নি আমার দিকে কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে বললেন,
– “কিছুক্ষনের মধ্যেই তোমার সব উত্তর ,তুমি পাবে ”
অগ্নি নিজের কথা শেষ করে কাউকে ফোন দিয়ে ভিতরে আসতে বলে । আমি ভ্রু কুঁচকে অগ্নির দিকে তাকিয়ে আছি । কি করতে চায় অগ্নি ?
__________________________
সুপ্তি আমার সামনে বসে আছে । সুপ্তিকে দেখে পুরো গাঁ ঘিনঘিন করে উঠে অগ্নির দিকে আমি রাগী দৃষ্টি তে তাকাই । কি চায় এই লোক? আমি এমনিতেই কম কষ্টে ছিলাম ? নতুন করে কেন কষ্ট দিতে চায় । সুপ্তি আমার কাছে এসে আমার হাতের উপর হাত রেখে বলে,
– “কেমন আছিস হুর ? ”
আমি ঝাটকা মেরে হাত সরিয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেই । সুপ্তি আবার বলে ,
– “হুর আমি জানি তুই আমাকে ঘৃণা করিস । আমি যা করেছি তার জন্য এটা স্বাভাবিক । আমি …
অগ্নি সুপ্তিকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বললেন ,
– “এসব কথা বন্ধ করো । যা বলতে এসেছো তা বলো । ”
সুপ্তি মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন ,
– “হুর আমার সাথে অগ্নির কোনো দিন কোনো সম্পর্ক ছিলো না । না অগ্নি আমাকে কোনদিন ভালোবেসেছে । অগ্নি প্রথম থেকেই তোকে ভালোবেসেছে । সেই প্রথম থেকে এখন পর্যন্ত অগ্নি শুধু তোকে চেয়েছে । তোদের মাঝে আমি চলে এসেছি । তুই যখন অগ্নির কথা বলতি তখন অগ্নির তোর প্রতি কেয়ার ভালোবাসা দেখে আমি আকৃষ্ট হয়ে যাই । আমি আইডিতে তোর আর অগ্নির টেক্সট দেখে অগ্নিকে দেখার ইচ্ছা জাগে । তাই আইডি থেকে অগ্নির নাম্বার নেই সেই নাম্বারের মাধ্যমে আমার এক ফ্রেন্ড কে দিয়ে অগ্নির পরিচয় বের করি । অগ্নির পরিচয় পার্সোনালিটি দেখে আমি অগ্নির প্রতি দুর্বল হয়ে পরি । মনে মনে অগ্নিকে পাওয়ার জিদ ধরে বসি ।
সেদিন পহেলা বৈশাখে অগ্নি তোর সাথে দেখা করতে এসেছিলো ।কিন্তু তোর আগেই আমি সেই জায়গায় পৌছাই । অগ্নিকে বলি আমিই তার পরীজান । অগ্নি বিশ্বাস করতে বাধ্য ছিলো কারণ আইডির প্রোফাইল পিক আমার হাতের ছিলো ।
নতুন এক মিথ্যা বানোয়াট কাহিনী বলি যে ,আমার বান্ধুবীদের সাথে আমার ঝামেলা হয়েছে । আর ঐ আইডি আর ঐ নাম্বার আমার বান্ধবীর । সেই বান্ধবীর যদি অগ্নির সাথে আমার সম্পর্ক আছে তা জানে তাহলে আমার বাড়ি তে বলবে আর বাড়ি তে খুব ঝামেলা হবে । অগ্নি আমার কথা মত “অগ্নিধ্য অরন্য” আইডি ডিএক্টিভ করে দেয় । আর সিমও চেঞ্জ করে ফেলে ।আমি আমাদের কমন ডিজেবল করে ফেলি । তারপর জানতে পারি তুই খুব অসুস্থ । যখন তোর সাথে দেখা করতে আসি দেখি তুই অগ্নিকে পাবার জন্য তখনো ছটফট করছিস । তাই আননোন নাম্বার থেকে তোকে মেসেজ করি । তুই অগ্নিকে ভুল বুঝে আস্তে আস্তে সরে আসিস । ”
আমি সুপ্তির কথায় স্থব্দ হয়ে আছি । মানুষ এতো ক্রিমিনাল মাইন্ডের কি করে হতে পারে ? ও মানুষ নাকি অমানুষ । আমি নিজেকে সামলিয়ে নেই । আজ আমি পুরো ঘটনা জানবো । আমাকে শক্ত হতে হবে । সব জানতে হবে । আমি চোখে পানি মুখে বড় এক নিশ্বাস নিয়ে বলি ,
– “যদি তাই হয় ,তাহলে কেন বিয়ে আগে বাড়ি ছেড়ে পালালি ? সব তো তোর মন মত হচ্ছিলো । তাহলে কেন সব ছেড়ে গেলি ? ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ।বলতে শুরু করলেন ,
– ” অগ্নির পরীজান তো সেজেছিলাম কিন্তু তা হতে পারিনি । আমি অগ্নির সাথে কথা বলার সময় বারবার ধরা পরে যাচ্ছিলাম । কোনো ভাবেই তার সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলাম না । দিন দিন অগ্নির সন্দেহ বাড়ছিলো । আর আমাদের মধ্যে প্রব্লেম বাড়ছিলো । অগ্নি পরিবর্তন লক্ষ করতে পারছিলো । আমি কোনো না কোনো মিথ্যা বাহানা বলে কাটাতাম । কিন্তু মিথ্যা বেশি দুর যায় না । আস্তে আস্তে অগ্নির প্রতি আমার অনিহা এসে যায় । বিরক্ত হচ্ছিলাম । এরই মাঝে ইন্টার এক্সাম শেষ হয় । আমি একটা ট্যুর থেকে চিটাগাং শহরে যাই । সেখানে পরিচয় হয় রাদিপ চৌধুরীর সাথে ।আমি আবার নতুন করে তার মোহে পরে যাই । তার প্রেমে পড়ি । তাকেও আমার প্রতি দুর্বল করি । আমি জানতাম রাদিপ বিবাহিত কিন্তু তারপর ও নিজের আবেগ সামলাতে পারি না । একটা সম্পর্কে জড়িয়ে যাই । ঢাকায় ফিরার পরও রাদিপের সাথে আমার যোগাযোগ চলে । কোনো এক কাজে রাদিপ ঢাকায় আসে আর তখন আমাদের ঘনিষ্ট সম্পর্কে গড়ে উঠে । তার কিছুদিন পর হ্ঠাৎ রাদিপ আমার সাথে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দেয় । আমি যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে রাদিপ আমাকে ইগনোর করে । আমি এসবে রেগে রাদিপের স্ত্রী কে সব জানাই । যা জানার পর রাদিপের স্ত্রী আত্মহত্যা করে । যার পর রাদিপ আমার উপর আরো ক্ষেপে যায় । আমার সাথে পুরোপুরি ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে । আমিও রাদিপের উপর রেগে অগ্নির সাথে সম্পর্কে আবার জড়াই । অগ্নিকে আমাদের বাড়ীতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে বলি । অগ্নির জিদের কারনে সবাই রাজি থাকলেও আদ্রিতা আন্টি আমাকে পছন্দ করতো না । আমার সাথে খুব কড়া আচরণ করতো । হ্ঠাৎ বিয়ের সাপ্তাহ আগে আমি জানতে পারি আমি প্রেগন্যান্ট । আর ততদিনে খুব দেরী হয়ে গিয়েছে । অগ্নি বা আদ্রিতা আন্টি কেউ কখনো এই বাচ্চা কে মেনে নিবেনা ।আমি কোনো উপায় পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে চিটাগাং রাদিপের কাছে চলে যাই । রাদিপ ও এই বাচ্চা মেনে নেয় না ।আমি রাদিপকে মিডিয়ার ভয় দেখালে । রাদিপ মানসম্মানের ভয়ে আমাকে আটকিয়ে রাখে । আমি রাদিপের বন্ধী হয়ে থেকে যাই ।সময় কাটে কিন্তু রাদিপের অত্যাচার বাড়ে । আমার সাথে জানোয়ারের মত ব্যবহার করে । আমি একদিন সুযোগে পালিয়ে আসি । ঢাকায় বাবা মায়ের কাছে যাই তারা আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয় । কোনো উপায় না পেয়ে অগ্নির কাছে সাহায্যর জন্য আসি । অগ্নির অফিসে দেখা করার জন্য যখন যাই তখন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাই । অগ্নি আমাকে হসপিটালে এডমিট করে । আমি হসপিটালে জানতে পারি অগ্নি সব সত্য জানতে পেরেছে । আমি অগ্নির থেকে ক্ষমা ভিক্ষা চাই পা ধরে কান্নাকাটি করি । অগ্নি থেকে জানতে পারি ,অগ্নি এখনো তোকে জানায়নি যে অগ্নিই অরন্য ।কারণ তুই অগ্নিকে বিশ্বাস করবি না । তাই আমি অগ্নির বলি যে আমি তোকে সব সত্যি বলবো ।অগ্নি আমার উপর দয়া করে আমাকে বনানীর তার ফ্লাটে থাকতে দেয় ।অগ্নি আমার উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি । যার জন্য সে চিটাগাং যাচাইয়ের জন্য যাচ্ছিলো । আমি তা জানতাম । সেদিন আমার মনে নতুন এক লোভের জন্ম নেয় । আমি নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য আরো একবার নিজের চাল চালি । কেয়ারটেকার কে টাকা দিয়ে তোকে ফোন দেওয়াই ।হসপিটালের পেপারস গুলোতে টাকা প্রে করে অগ্নি শুধু সাইন করেছিলো । কিন্তু আমি স্বামীর নামের জায়গায় অগ্নির নাম দেই । তুই যখন আসিস তোকে সব মিথ্যা বলি । ”
এতটুকু বলেই সুপ্তি থামে । আমার চোখ থেকে তখন শুধু পানি ঝড়ছে । মানুষ এতোটা স্বার্থপর হয় কি করে । কি করে এতোটা জঘন্য হয় ?
আমি অগ্নির দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছিনা । কি ভাবে তাকাবো ? আমি যে নিকৃষ্ট কাজ করেছি ।তাকে বিনা দোষে এতোটা দিন শাস্তি দিয়েছি । অগ্নিও তো আমার মত প্রতারণার শিকার হয়েছে । অগ্নির দিকে আর চোখে তাকিয়ে দেখি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে ।
সুপ্তির প্রতি রাগ ঘৃণা তে আমার হাত পা কাঁপছে । আমি মাথা নিচু করে কান্না করছি । দরজায় খুলার শব্দ কানে আসতেই আমি মাথা তুলে তাকাই । দরজার দিকে তাকিয়ে থম মেরে যাই । দরজায় দাড়ানো লোকটা অন্যকেউ না । আরশির বাবা । কিন্তু আরশির বাবা এখানে কি করছে ?
চলবে ….❤️
শত_ ডানার_ প্রজাপতি
#urme prema (sajiana monir )
পার্ট :৪৪
দরজায় খুলার শব্দ কানে আসতেই আমি মাথা তুলে তাকাই । দরজার দিকে তাকিয়ে থম মেরে যাই । দরজায় দাড়ানো লোকটা অন্যকেউ না । আরশির বাবা । কিন্তু আরশির বাবা এখানে কি করছে ?
লোকটি ভিতরে এসে বসে । আমাদের দিকে অপরাধি দৃষ্টি তে তাকায় । আমি লোকটাকে প্রশ্ন করি ,
– “আপনি আরশির বাবা ,তাই না ? ”
লোকটি আমার কথায় চমকিয়ে ।বিষ্মিত স্বরে বলে,
– “হুম ,কিন্তু আপনি কি করে চিনেন ? ”
– “নিশিতের বিয়েতে আমার আরশির সাথে পরিচয় হয়েছে । কিন্তু আপনি এখানে ? মানে ঠিক বুঝতে পারলাম না । ”
লোকটি মাথানত করে বললেন ,
– “আমিই রাদিপ চৌধুরী । যার সাথে সুপ্তির সম্পর্ক ছিলো । আপনার জীবনের এতো ঝড়ঝাপটার জন্য কোথাও আমি দায়ী । প্রত্যক্ষ ভাবে না হলেও পরোক্ষ ভাবে আমি এসবের মাঝে কোথাও না কোথাও দায়ী । এতো পাপ করেছি যে ক্ষমা চাওয়ার মত মুখ আমার নেই । এই পাপের ফল আমি পাচ্ছি । আমার কুকার্যের জন্য আজ আমার সন্তান মা হারা হয়েছে । আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো সুপ্তির ফাঁদে পা দেওয়া । নিজের স্ত্রী থাকার শর্তেও পরক্রিয়ায় লিপ্ত হয়েছি । ভারী অন্যায় করেছি নিজের স্ত্রীর সাথে । যখন তা বুঝতে পারি তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে । সুপ্তি আমাকে ধমকি দেয় । এক সময় আমার সাথেচ না পেরে আমার স্ত্রী কে সবটা জানিয়ে দেয় । যা শুনে আমার স্ত্রী দিশা আত্মহত্যা করে ।সারাটা জীবন তিলেতিলে মরার সাজা আমাকে দিয়ে যায় । যতবার নিজের সন্তানের চেহারা আমি দেখি ততবার আমার সব পাপের কথা মনে করিয়ে দেয় । সুপ্তি কে কোনো দিন আমার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না ।তবুও অগ্নির কথায় আর সুপ্তির গর্ভে সন্তানের কথা চিন্তা করে ভেবেছিলাম মেনে নিবো কিন্তু তা আর সম্ভব না । যে মেয়ে নিজের উপকারীর উপকারের মূল্য দিতে পারেনা সে কি করে আমার সন্তানের মা হবে । এই মেয়ে কোনো ভালো মানুষ হবেনা । কোনো কিছু ডিজার্ভ করে না । এই মেয়ে স্বার্থপর আর খুবই হিংস্র । আমার আজ এখানে আসার কারণ আপনার আর অগ্নির মধ্যে সব ভুল বোঝাবুঝি ঠিক হোক ।সুপ্তির উপর একদম বিশ্বাস করা যায় না । এই মেয়ে খুব হিংস্র । যেকোনো সময় নিজের স্বার্থের জন্য পাল্টি নিতে পারে । মিথ্যা বলতে পারে । কাউকে খুন করতেও এই মেয়ে দ্বিধাবোধ করবেনা । ”
আমি রাদিপ চৌধুরীর প্রত্যেকটা কথায় মাথা নিচু করে চুপ করে শুনছি । সুপ্তি নিজের চোখের জল ফেলছে । অনুতাপ মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে । সুপ্তির দিকে ঘৃণাকর চোখে তাকিয়ে বললাম,
– “তুই এতোটা নিকৃষ্ট কি করে হতে পারিস ? ছিঃ এতো অন্যের জিনিসের প্রতি তোর লোভ ? এতোটা ?
কেন আমার জীবন এভাবে নষ্ট করলি ? কি এমন করেছি যার জন্য তুই এতো কিছু করলি । এতোদিন আমি অগ্নিকে দোষারোপ করেছি । বিনা দোষে তাকে শাস্তি দিয়েছি ।তুই যা দেখিয়েছিস তাই বিশ্বাস করেছি । কিন্তু সত্যি তো অন্যকিছুই ছিলো । তুই অনেক চেষ্টা করেছিস কিন্তু আমার থেকে আমার ভাগ্যে ছিনিয়ে নিতে পারিস নি । তোর শত চেষ্টার পর ও আমার একসাথে হয়েছি । ভাগ্যে আমাদের এক করেছে । সত্যি বলতে ভাগ্যের উপর কারো জোর চলে না । না তোর না আমার ।
তুই ঘৃণার যোগ্য । তুই কখনো ভালোবাসা ডিজার্ভ করিস না । তুই একটা বাচ্চা থেকে তার সন্তান কেরে নিয়েছিস । তোর জন্য একটা সংসার ভেঙেছে । অন্যটা ভাঙার রাস্তায় ছিলো । আমার সন্তান তার বাবা থেকে সারাজীবনের জন্য দূরে থাকতো । অগ্নি নিজের সন্তান হারাতো । আর আমি সারাজীবন একটা ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে অগ্নির সাথে অন্যায় করে যেতাম !
তোর জীবনে কোনো দিন সুখ হবেনা তুই সারাজীবন জ্বলবি । এতো গুলোর মানুষের অভিশাপ তোর উপর । ”
সুপ্তি আমার কথায় হাউমাউ করে আমার কান্না করে আমার পা জড়িয়ে ধরে বলে,
– “আর অভিশাপ দিস না আমাকে । আমি এমনিতেই প্রত্যেকটা মুহূর্ত জ্বলছি । প্রত্যেকটা সেকেন্ড আগুনে পুড়ছি । এতোগুলো মানুষের অভিশাপ বৃথা যায়নি । আমি আমার পাপের শাস্তি পাচ্ছি । যেই সন্তানের ভবিষ্যৎ এর জন্য তোর সংসার ভাঙতে চেষ্টা করেছি । জন্ম দেওয়ার সময় সেই সন্তান হারিয়েছি । নিজের পরিবার হারিয়েছি । আজ আমি পথে পথে ঘুরি । এর চেয়ে বড় আর আমার জন্য কি শাস্তি হতে পারে ? আমি আমার সব ক্ষুয়েছি ।”
আমি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলি ,
– “সুপ্তি আমি তোর চেহারা ও দেখতে চাইনা । তুই এই মুহূর্তে আমার সামনের থেকে সরে যা । তোর মুখ দেখলেও আমার গাঁ ঘিনঘিন করে । তোর সাথে যা হয়েছে তা আল্লাহ্ র তরফ থেকে তোর শাস্তি ছিলো । তোর শাস্তি আমরা কেউ কি করে দিবো । তুই যা করেছিস তার শাস্তি উপরওয়ালা দিবে ।
মনে রাখিস পাপ বাপ কেও ছাড়ে না ! ”
সুপ্তি কিছুক্ষণ আমার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে থেকে হতাশ মুখ নিয়ে ফিরে যায় । পুরো রুম পিনপতন স্থব্দতা বিরাজ করছে ।রাদিপ চৌধুরী আমাদের দুজনের দিকে কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে বলেন,
– “আমার এখন যাওয়া উচিত ”
অগ্নি রাদিপের সাথে হাত মিলিয়ে বললেন,
– “ধন্যবাদ ! মি: রাদিপ চৌধুরী ,আমার একটা ফোন কলে চিটাগাং থেকে সিলেটে আসার জন্য । ”
– ” ধন্যবাদ কেন ! আমার তো আসারই ছিলো । আজ আপনাদের জীবনে যে পরিস্থিতি তে আছে তার সাথে কোথাও আমিও জড়িত আছি ।নিজের মনে বোজা কমানো জন্য হলেও আমার আসতে হতো । আশা করি আবার দেখা হবে ! ”
রাদিপ চৌধুরী দরজার কাছে যেতেই আমি পিছন থেকে ডাকি । রাদিপ চৌধুরী থেকে যায়। পিছন দিকে ফিরে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকায় । আমি দু কদম এগিয়ে বলি ,
– ” এসবের মাঝে আপনার ও অন্যায় ছিলো । আপনি আরশি আর আরশির মায়ের সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছেন । যা করেছেন যা তো আর সংশোধন করা যাবেনা ! কিন্তু আপনি চাইলে নিজের পাপের পাশ্চাত্য করতে পারেন । আরশির মায়ের সম্মান দিতে পারে এতে অন্তত তার আত্মা শান্তি পাবে ।
আমি কি বলতে চাইছি ,আপনি বুঝতে পেরেছেন কি মিঃ চৌধুরী ? ”
রাদিপ চৌধুরী মলিন হেসে বলে ,
– “জি মিসেস খাঁন ,আমি আমার পুরো জীবন দিশার স্মৃতি দিয়ে কাটিয়ে দিবো । আমার জীবনে অন্যকোন নারীর ছায়া থাকবে না।”
– “আর একটা কথা মিঃ চৌধুরী ! আরশি কে কখনো অবহেলা করবেন না । বাচ্চাটার ভালোবাসার প্রয়োজন ,স্নেহের প্রয়োজন । মেয়েটা বড়ই একা । দেখেবেন কখনো যেন কোনো কষ্ট না পায় ! ”
– “আমি খেয়াল রাখবো আরশিকে তার জীবনের সবটা খুশি দেওয়ার । এখন আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ আমার মেয়ের খুশি !
আর আপনাদের অনেক অভিনন্দন আপনার আগামী জীবনের জন্য । ”
রাদিপ চৌধুরী মুচকি হেসে বেরিয়ে যায় । অদ্ভুত এক রসহ্যময় চরিত্র লোকটার ।কিন্তু যেমন নি হোক না কেন লোকটা কথা গুলো খুবই সচ্ছল কাঁচের মত পরিষ্কার ।
_________________________
আমি চুপচাপ অগ্নির পিছনে দাড়িয়ে আছি । বাহিরে মুষলধারায় বৃষ্টি হচ্ছে । যা কাচের ভিতরের থেকে স্পর্শ দেখা যাচ্ছে । অগ্নির দৃষ্টি বাহিরের দিকে । আমি মাথা নত করে অগ্নির পিছনে দাড়িয়ে আছি কোথা থেকে কি ভাবে শুরু করবো বুঝতে পারছিনা । অন্যায় আমার । খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি । অগ্নির সামনে ক্ষমা চাওয়ার মত মুখ আমার নেই । ক্ষমা চাওয়াটা আমার অপরাধের সামনে তুচ্ছ । আমি কাঁপা কাঁপা হাত অগ্নির কাঁধে রাখতে অগ্নি সামনের দিকে তাকিয়ে শীতল গলায় বললেন,
– “হুর ,তোমাকে কোনো কিছু বলতে হবে । আমি তোমার উপর রেগে নেই । আমার কেবল নিজের উপর আফসোস হচ্ছে । আমার ভালোবাসার জোর এতোই কম ছিলো কি ? যে তুমি আমাকে একবার জিগ্যেস করাটাও উচিৎ মনে করোনি !
তুমি রাগ জেদ অভিমান করে একবার আমার থেকে ফোন করে জানতে চাইতে । আমার থেকে জবাব চাইতে !
তা না করে আমাকে সোজা শাস্তি দিলে হুর ? আমার কি জানার অধিকার ছিলো না আমার সন্তান আসছে ! এতোটাই অযোগ্য মনে করো আমাকে ?
তোমার জীবনে কি আমার কোনো মূল্য নেই !
আমি রেগে নাই তোমার উপর । তা আমি পারবো না তুমি আমার জান । কিন্তু নিজের উপর খুব আফসোস হচ্ছে যে আমি এতোদিনে তোমার এতোটুকু বিশ্বাস অর্জন করতে পারিনি ! ”
অগ্নির কথায় বুক ভেঙে চূড়ে কান্না আসছে । নিজেকে কোনো ভাবেই আটকাতে পাছিনা । আমার অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে । আমি ছুটে গিয়ে অগ্নিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি । কান্নায় ভেঙে পড়ি । আমি খুব শক্ত করে অগ্নিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করছি । অগ্নি আমার দিকে পিছনে ফিরে আমার দুগালে নিজের হাত স্পর্শ করে । আমি তখনো চোখ বন্ধ করে কাঁদছি । অগ্নি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে নিজের বুকের মাঝে খুব শক্ত করে আবদ্ধ করে বলে ,
– “তোমাকে নিয়ে আমি করবো টা কি বলো তো সুন্দরী ? তোমাকে যতবার তাকাই একটা রাগী জেদি বাচ্চা মেয়েকে দেখতে পাই ,এই বাচ্চা মেয়েটা কি করে বাচ্চার মা হচ্ছে আমি তাই বুঝি না !
এভাবে কান্না করছো কেন ? আমি কি মরে গেছি ? ”
অগ্নির কথায় আমি আরো জোরে কান্না করতে লাগি । অগ্নি আমার চুলের ভাজে আঙুল ডুবিয়ে দিয়ে বলে,
– “হুসসস , কান্না করে না লক্ষিটি আমার । প্লিজ এভাবে কান্না করোনা আমার যে কষ্ট হচ্ছে খুব পরীজান । এতোদিন পর মিলনের তিথি এসেছে তুমি এখনো কান্না করবে ? ”
– “আমি আপনাকে খুব কষ্ট দিয়েছি ।অবিশ্বাস করেছি । আমি ভালোনা একদম ভালোনা । খুব বাজে ।
আমি আপনাকে শুধু কষ্ট দিয়েছি কখনো আপনার মত ভালোবাসতে পারিনি । আমাকে আপনি যা শাস্তি দিবেন আমি সব শাস্তি মেনে নিবো । ”
অগ্নি দুহাতে আমার গাল চেপে ধরে কপালে ঠোঁট ঠেকিয়ে বলে ,
– “উহু ,একদম না । আমার পরীজান খুব ভালো । শুধু মাঝে মাঝে একটু বোকামি করে । কিন্তু যেমনি হোক না কেন আমি আমার পরীজানকে খুব ভালোবাসি । খুবই ।
আর রইলো শাস্তির কথা তা তো অবশ্যই প্রাপ্য । ”
আমি বেডে বসে আছি অগ্নি আমার কোলে মাথা রেখে খুব নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে । ঘুমানোর আগে হাজারটা চুমু খেয়েছে পেটে।
পেটে মুখ দিয়ে বাবুর সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়েছে । শত পাগলামো কথা উনার । এই দুমাসে পুরো পাগল হয়ে গেছে আমার সাথে কোনো কথা নেই যত কথা উনার বেবির সাথেচ।
আজ সব সুখ পেয়ে গেছি । নতুন করে আমার জীবন্ত হয়েছি । এতোটা দিন শুধু শ্বাস নিচ্ছিলাম আজ আমার দেহে প্রাণ ফিরে এসেছে ।
অগ্নি গভীর ঘুম দিয়েছে যেন কতো কাল পর শান্তিতে ঘুমাচ্ছে । এই দুমাসে অগ্নির চেহারায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে।চোখের নিচে কালো দাগ । বোঝাই যাচ্ছে কতটা রাত নিদ্রাহীন কাটিয়েছে ।হাতে কাটা ছেড়া দাগগুলো বলে দিচ্ছে নিজেকে কতটা শাস্তি দিয়েছে । পাগলামোর সব সিমানা অতিক্রম করে । বিরহ ব্যথা হয়তো এটাকেই বলে । অগ্নির এমন হাল দেখে বুকটা চিড়ে যাচ্ছে । আজ আমার জন্যই অগ্নি এই দশা । হিরাকে কাঁচ ভেবে দূরে ঠেলে দিয়েছি ।নিজের মাঝে আজ প্রতিজ্ঞা করলাম কোনো দিন আর নিজের থেকে নিজের ভালোবাসার মানুষ কে দূরে যেতে দিবো না । নিজের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তার সাথে থাকবো ।
চলবে….❤️
প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । ভুল ত্রুটি ক্ষনার চোখে দেখবেন 😊😊😊।