শত ডানার প্রজাপতি পর্ব-৪৯ এবং অন্তিম পর্ব

0
7378

শত_ ডানার_ প্রজাপতি

#urme prema (sajiana monir )

পার্ট :৪৯ (অন্তিম পর্ব )

সময় চলমান স্রোতের ন্যায় । নিজ গতিতে চলে । আস্তে আস্তে ডেলিভারির সময় ঘনিয়ে আসছে । ডাক্টার আন্টি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সিজার করতে হবে । সিজার ছাড়া সম্ভব না ।মা আর বাচ্চা দুজনেরই প্রানের ঝুঁকি রয়েছে । যতদিন যাচ্ছে টেনশন আর ভয় বাড়ছে ।

আজ আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর বাস্তবতার মুখোমুখি হবো ।মনে একরাশ ভয় জমেছে । সুন্দর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে ভয় কেন ?
কারণ মা হওয়া চারটে খানি কথা না । একজন মহিলার জীবনে সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত হলো মা হওয়া । সেই সাথে সবচেয়ে ভয়াবহ মুহূর্তটাও সন্তান জন্ম দেওয়া । যদি তা সিজারিয়ান হয় তাহলে তো ঝুঁকি আর অনিশ্চয়তা তো রয়েছেই ।সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যও অনেক সাহসের প্রয়োজন । এতো বড় একটা অপরেশন ভয় বুকটা চাপ ধরে আছে । তাই মায়ের রুমে মায়ের ছবির সামনে দাড়িয়ে আছি ।এই মানুষের ছবিই যথেষ্ট আমার মনে সাহসের জন্য । উনার প্রতিচ্ছবিই আমার মনোবল বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত !
ঠোঁটে কি সুন্দর হাসি ঝুলে আছে । চোখে মুখে তেজ । প্রত্যেকটা মেয়ের জন্য উনি আইকন । উনার জীবনী থেকে নতুন ভাবে বাঁচার কারণ খুঁজে পাওয়া যায় । জানিনা জীবন কি মোর নিবে কিন্তু যদি বেঁচে ফিরতে পারি তাহলে মায়ের পথেই চলবো । বেস্ট মা হবো নিজের পরিচয় গড়ে তুলবো ।হঠাৎ অনুভব করি কেউ আমার কাঁধে হাত রেখেছে । আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি অগ্নি । চোখে মুখে ভয় আর টেনশনের ছাপ ।অগ্নি হাল্কা আওয়াজে বলে ,

– “আমাদের বের হওয়ার সময় হয়েছে ”

আমি মাথা হ্যা বোধক নাড়াই । অগ্নি আমার গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ,

– “কিছু হবে না । আল্লাহ্‌ র কৃপায় দেখবে সব ঠিক হবে ।”

আমি ভিতু ভিতু গলায় বলি,

– ” আমার খুব ভয় করছে ।”

-” ভয় পেওনা ,সব ভালো হবে । তুমি একটু সাহস রেখো । ”

আমি হ্যা বোধক মাথা নাড়ালাম । অগ্নি আমার কপালে ঠোঁট ছুঁয়িয়ে দেয় । সব ফাইল সবকিছু রেডি করে হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হই । পুরোটা সময় অগ্নির বুকে মাথা রেখে এসেছি । অগ্নির আমাকে সান্ত্বনা দিলেও সে নিজেই আমাকে নিয়ে আরো বেশি ভয় আর চিন্তায় রয়েছে ।

হসপিটালে পৌছানোর পর আমাকে অপারেশন বেডে নেয়া হয়। আমার শরীর ভয়ে কাঁপছে । অগ্নির দিকে অশ্রু ভরা চোখে তাকিয়ে আছি অগ্নিও চোখে ও জল চিকচিক করছে । কিছুক্ষণ পর দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় ।
আমাকে আইভি ফ্লুইড দেয়া হয় ক্যানুলার মাধ্যমে। তারপর তাকে অ্যানাসথেসিয়া করা হয়।ডাক্টার আমার সাথে কথা বলছে । আমাকে সাহস দিচ্ছে । কিছুক্ষণ পর আমার পেট পরিষ্কার করা হয় । এর কি হচ্ছে আমি কিছু বুঝতে পারিনা ।বেশ খানিক সময় পর একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসে । এই কান্নার শব্দটা মধুর শব্দের মত আমার কানে বাজে । হৃদয়ের গহীন থেকে এক তীব্র সুখের অনুভূতি হয় । আমার চোখে থেকে কয়েক ফোঁটা জল বেরিয়ে আসে । অদ্ভুত এক অনুভূতি । আমার ঠোঁটে হাসি চোখে জল ।নার্স বাচ্চা কোলে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন ,”অভিনন্দন কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন ”
আস্তে আস্তে আমার চোখ বুজে আসে । কিন্তু তখনো ঠোঁটে হাসি বিদ্যমান !

জ্ঞান ফেরার পর দেখি ,অগ্নি আমার পাশে বসে আমার একহাত জড়িয়ে ধরে আছে । অগ্নির চোখ থেকে অনবরত পানি ঝোরছে। আমি পিটপিট চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসি দেওয়ার চেষ্টা করি । অগ্নি আমার চুলে হাত বুলিয়ে বলে ,

– ” এখন কেমন লাগছে ? ”

আমি চোখের ঝাপটা ফেলে উত্তর দেই যার অর্থ ভালো । অগ্নির চোখ থেকে একফোঁটা পানি আমার হাতে পড়ে ।অগ্নিরকে উদ্দেশ্য করে অভিমানী স্বরে বলি ,

– ” আপনাকে এতো বড় উপহার দিলাম । আর আপনি কান্না করছেন ? কেন আপনি কি খুশি হননি ? ”

অগ্নি হাতে চুমু খেয়ে । চোখের পানি নিয়েই মুচকি হেসে বলে ,

– ” পাগলি ,এই জল খুশির ।
তুমি আমাকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ উপহার দিয়েছো । বাবা হওয়াটার অনুভূতি হওয়াটা যে এতো সুন্দর ,এতো সুখের অনুভূতি হয় তা আমার জানা ছিলোনা । তুমি আমাকে সেই সুখের সাথে পরিচয় করিয়েছো ।
বলো তোমার কি চাই ? আমি দুনিয়ার সব সুখ তোমার সামনে বিছিয়ে দিবো । ”

আমি একহাতে অগ্নির হাতের উপর আলতো স্পর্শ করে বলি ,

– “আমি সারাজীবন আপনার আর আমাদের মেয়ের সাথে বাঁচতে চাই । ”

অগ্নি আমার উত্তরে মুচকি হেসে আমার কাছে এসে আমার মুখে অনবরত চুমু দেয় । কিছুক্ষণ পর আপু আমাদের বাবু কে কোলে করে কেবিনে ডুকে । আপুর পিছনে বাকি সবাই ।সবাইকে দেখে আমি উঠে বসার চেষ্টা করলে অগ্নি আমাকে ধরে উঠে বসায় ।
আপু আমার কোলে বাবুকে দিয়েই আমার চোখ থেকে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরে ।বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ছোট ছোট হাত ছোট ছোট আঙুল । চকচক চাহনি । একদম মায়ের মত সেই চাহনি ।
আমি চোখ বুজে আলতো করে বাবুর কপালে চুমু দিয়ে বলি ,

– ” তুই আমার আদ্রিতা ! মা ছেড়ে যাবার পর আমার জীবনে মায়ের অপূর্ণতা ছিলো । আজ সেই অভাবটাও তুই পূর্ন করে দিলি । আজ সঠিক অর্থে আমার জীবনের সকল চাওয়া পূর্নতা পেলো ।তোকে বুকে নিয়ে আমার সেই স্পর্শের অনুভব হচ্ছে । ”

অগ্নির দিকে তাকিয়ে দেখি ,অগ্নি গাঢ় চোখে আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে ।এই চাহনি তে সুখ , প্রাপ্তি ,খুশি স্পষ্ট !

এক এক করে সবার সাথে কথা বলি । কিছুক্ষণ পর আমাদের দুজনকে রুমে একা রেখে বাকি সবাই বেরিয়ে যায় । বাবু তখনো আমার কোলে । এতো দেখার পর ও কোন ভাবেই চোখের তৃপ্তি মিটছেনা । অগ্নি আমাদের দুজনের দিকে আগের দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে ।ঠোঁটে ঝুলন্ত হাসি !

আদ্রিতার উপস্থিতি আমাদের জীবনে খুশির বাহার নিয়ে এসেছে । আমাদের দুনিয়া আদ্রিতাকে ঘিরে । যে অগ্নি বাচ্চা কন্সিভ করায় আমার উপর রুষ্ট ছিলো ,সে এখন সারাদিন মেয়েকে নিজের বুকে জড়িয়ে রাখে । এক মুহূর্তের জন্য চোখের আড়াল হতে দেয় না । আমি বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখে নিজের চোখ জুড়াই । সঠিক অর্থে জীবন বোধহয় এটাকেই বলে । যতবার অগ্নি আর আদ্রিতার দিকে তাকাই ততবার আমার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠে । আমার মনে হলো এই বুঝি আমার জীবনের সব কষ্টের অবসান হয়েছে । কিন্তু বাস্তবতা ছিলো অন্যকিছু । আমি ভুলেই গিয়েছিলাম আমার জীবন অভিশাপ্ত । এই জীবনে সুখ নামক সোনার হরিণ নেই ।আদ্রিতা জন্মের পনের দিনের মাথায় গভীর রাতে আমার খুব জ্বর হয় । চোখ খুলে রাখতে পারছিনা । অগ্নি জ্বর মেপে দেখে একশত পাঁচ ডিগ্রি জ্ব্রর । তার উপর সিজারের সেলাইয়ের সেই জায়গায় প্রচন্ড রকম ব্যথা হচ্ছে ।যদিও আগের থেকেই ব্যথা ছিলো কিন্তু এখন ব্যথা ক্রোমশ বাড়ছে ।
বিছানায় মরার মত অচেতন হয়ে পড়ে আছি । অগ্নি আমার এই অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে পড়ে । দ্রুত হসপিটালে এডমিড করে । আমার পুরোপুরি ভাবে জ্ঞান ফিরে দুদিন পর । এই দুদিন কোনো কিছুরই আমার খেয়াল নেই । অচেতন ছিলাম । জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করি । শরীরে কোনো শক্তি অবশিষ্ট নেই । পেটে অসহনীয় ব্যথা । পেটের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার পেটের সেলাই ছোটানো । নার্সরা ড্রেসিং করছে । অগ্নি অসহায় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । অগ্নিকে কিছু জিগ্যেস করলে অগ্নি চোখে জল নিয়ে কেবিন থেকে চলে যায় । আমি উত্তেজিত হয়ে পড়ি । আমাকে উত্তেজিত হতে দেখে নার্সরা কোনো রকম শান্ত করে । আমি শান্ত হয়ে উনাদের জিগ্যেস করতেই জানতে পারি ।
আমার সিজারিয়ানের সময় পর্দা সেলাইয়ের মাঝে একটা ভুলবশত করা হয়নি । আর আদ্রিতা গর্ভে থাকা কালিন সময় হ্ঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়ায় ডায়বেটিস হয় ,যার কারণে ভিতরের গাঁ শুকায়নি ইনফেকশন হয়ে পচন ধরে গেছে । অবস্থা খুব বেশি ক্রিটিকাল । কিছু বলা যাচ্ছেনা ।
সবশুনে আমি থম মেরে আছি । ডক্টরদের সামান্য ভুলের জন্য আমার জীবনে মৃত্যুর পথে । আমি অনুভূতিশূন্য হয়ে গেছি । এমটাই কি আমার সাথে হওয়ার ছিলো !
আমার মেয়ের ভাগ্যে কি আমার মত হবে । মাতৃহীন সারাজীবন কাটাতে হবে ?
এই মুহূর্তে আমার মেয়েটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে । কত স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম আদৌ কি তা পূর্ন হবে !
নার্সরা যাওয়ার সময় বলে দেই আমার বাড়ির লোকেদের ভিতরে পাঠাতে । কিছুক্ষণ পর আপু আদ্রিতা কে কোলে করে ভিতরে আসে । আমার একদম পাশ ঘেষে বসে ।আপুর চোখ ফুলে লাল হয়ে আছে । নিশ্চিত কান্না করেছে । আমি নিজেকে খুব শক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছি । আমি শক্ত গলাই বলি,

– “আপু আদ্রি কে একটু আমার কাছে আনো ”

আপু আদ্রিকে আমার কাছে আনতেই আমি অনবরত আদ্রির সারামুখে চুমু দিতে লাগি ।চুমু দিতে দিতে একসময় কান্না করে দেই । আপুও আর নিজেকে আটকাতে পারেনা । আমার সাথে সাথে কান্না করে দেয় ।আপু আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে ,

– “বোন তুই কান্না করিস না । ডক্টর বলেছে তুই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবি । ”

আমি আদ্রির দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলি ,

– “আপু কেন মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছো! আমি জানি আমি বাঁচবো না । আমার সময় ঘনিয়ে আসছে । কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে আমার মেয়েটার জন্য আমার মেয়েটার ভাগ্যে আমার মত হবে । মা ছাড়া জীবন কতোটা যন্ত্রনাদায়ক হয় আমি তা জানি ।কতো স্বপ্ন ছিলো অগ্নির সাথে আদ্রির সাথে বাঁচবো কিন্তু দেখ হলো কি ! কেন এমনটা শুধু আমার সাথেই হয় ? আমার ভাগ্যেটা এমন কেন বলতে পারো ? জীবনে সব পেয়ের পর হারিয়ে যায় । ”

আমি অনবরত কান্না করছি । কোনো ভাবেই শান্ত থাকতে পারছিনা । আদ্রিতা খাবারের জন্য কান্না করছে । আমি নিজের মেয়েকে খাওয়াতে পর্যন্ত পারছিনা। বুকে জড়িয়ে ধরতে পারছিনা। কতো টা অভাগী মা আমি !
আপু আমাকে শান্ত করে আদ্রিকে খাওয়াতে বাহিরে নিয়ে যায় । আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি । আলো ছায়ার অদ্ভুত খেলা দেখছি ।এমন কেন আমার জীবন ? যদি কোনো কিছুর সুখ আমার জীবনে নাই থাকে তাহলে খানিকের জন্য দিয়ে পরে ছিনিয়ে কেন নেয় !

এমন সময়ই রুমে অগ্নির উপস্থিতি টের পাই । তাকিয়ে দেখি অগ্নি একপা একপা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে । এই দুদিনে নিজের কি অবস্থা করেছে । চোখের নিচে মোটা করে কালো দাগ পড়েছে । দেখে মনে হচ্ছে চোখে কালি লেপ্টিয়ে রেখেছে । চেহারা মলিন । উষ্কখুষ্ক এলোমেলো চুল ।দেখে মনে হচ্ছে যুদ্ধে হেরে যাওয়া এক পরাজীত সৈনিক !
উনি আমার অগ্নিই না এই যে এক অন্য অগ্নি !
অগ্নি আমার খুব কাছে এসে আমার গালে ঠোঁট ছোঁয়ায় ।টুলে বসে নিচু হয়ে আমার বালিশে মাথা রাখে । অগ্নির ভারী নিশ্বাস আমার গালে পড়ছে । আমি চোখ বন্ধ করে নেই । চোখের কোন গড়িয়ে পানি পরে । অগ্নি তখনো চুপচাপ । আমি চোখে বন্ধ করে ভারী স্বরে বলি ,

– “অগ্নি আপনি আমার জীবনে অমূল্য রত্ন । আপনাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসি তা হয়তো কোন শব্দ বা বাক্যে প্রকাশ করা সম্ভব না ।ভালোবাসা কি আপনার থেকেই শিখেছি !
আপনি মানুন আর না মানুন আমি জানি আমার হাতে সময় খুব কম । আমার শরীরের কন্ডিশন খুব খারাপ । যে কোন সময় অঘটন ঘটতে পারে । এটাই এখন সবচেয়ে তিক্ত সত্য । আমি আমার মৃত্যুর পূর্বে কিছু ইচ্ছে আপনার কাছে বলতে চাই পূর্ন করবেন কি ? ”

অগ্নি চুপ উনার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ,আমি অগ্নির দিকে ঘাড় বেঁকিয়ে তাকাই । অগ্নি আমার দিকে ভাবলেশহীন চোখে তাকিয়ে আছে । এই চোখে অজস্র যন্ত্রণা । আমার কথা গুলো অগ্নির বুকে সুঁই এর মত বিঁধচ্ছে তা আমি জানি । অগ্নির এই দৃষ্টি আমাকে আঙুল দেখিয়ে বলছে “হুর তুমি বড়ই নিষ্ঠুর ”
আমি নিজেকে একটু শক্ত করে বলি ,

– “কি রাখবেন না আমার শেষ ইচ্ছে ? ”

এবার অগ্নি অশ্রুতে টলটল করা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হ্যা বোধক মাথা নাড়ায় । আমি ছোট্ট একটা নিশ্বাস নিয়ে বললাম ,

– “আমি চাই আমার মৃত্যুর পর আপনি ভেঙে পড়বেন না ,নিজেকে শক্ত রাখবেন। আমাদের আদ্রিকে সামলাবেন । তাকে বাবা মা উভয়ের আদর দিবেন । কখনো যেন তাকে আমার ভাগ্যের মত কষ্ট বইতে না হয় !
দুই , “শত ডানার প্রজাপতি ” এই ডাইরিটায় আমার সব অপূর্ন ইচ্ছে স্বপ্ন বন্ধি আছে । যা পূর্ন হয়নি ।আমার সেই প্রত্যেকটা ইচ্ছে স্বপ্ন আপনি আদ্রিকে নিয়ে পূর্ন করবেন । এতেই আমার আত্মা শান্তি পাবে ।
এই ডাইরি তে আমাদের সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ সবটা লিপিবদ্ধ আছে ,আমি চাই আদ্রি যখন বড় হবে তার বাবা মায়ের সম্পর্কের গভীরতা জানুক । এটা আদ্রির মায়ের তরফ থেকে তার জন্য শেষ উপহার !
আর আমার সর্বশেষ ইচ্ছে ,আমি শেষ বারের মত মামা মামী নিশিত উৎস ভাইয়া ,টিয়া আপু সবাইকে দেখতে চাই ”

অগ্নির দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝোরছে । আমি অগ্নির এই কান্না দেখে হাউমাউ করে কান্না করে দেই । অগ্নিও আমার সাথে কান্না করছে । আর বুকে জড়িয়ে নিতেও পারছে না পেট কাটা । আমার হাত জড়িয়ে ধরে অগ্নিও হাউমাউ করে কাঁদছে । আমি কান্নার মাঝেই অফুটন্ত স্বরে বলি ,

– “অগ্নি আমি বাঁচতে চাই ,আপনার সাথে আদ্রির সাথে বাঁচতে চাই । ”

মৃত্যু ভয় কতোটা কঠিন জিনিস আমি সেই সময় বুঝেছি । পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী সেই ব্যক্তি যে ব্যক্তি সুস্থ এবং যার পরিবার তার সাথে আছে । টাকা অর্থ সম্পদ খানিকে মোহ !
জিবন কতোটা মূল্যবান তা অসুস্থ হলে বোঝা যায় ।সেদিন হারে হারে টের পেয়েছিলাম !
ভালোবাসার মানুষ গুলোকে ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে করেই আমি হাজার দফা মরছিলাম । প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করেছি !

_____________

অগ্নি আর পড়তে পাড়লো না । বুকের বাঁ পাশে চিনচিন করে ব্যথা করছে । ওহ কি অসহ্য যন্ত্রণা । চোখটাও ভরে এসেছে । এই চারবছরে কতো বার এই ডাইরিটা পড়েছে প্রত্যেকবারই একই রকম ভাবে বুকটা চিনচিন করে উঠে । চোখের কোনে জমানো অশ্রুটা মুছে অগ্নি দীর্ঘতর নিশ্বাস ছাড়ে । এমন সময়ই রুম থেকে আদ্রিতার কান্নার আওয়াজ অগ্নির কানে ভেসে আসে । অগ্নি ছুটে রুমে যেয়ে দেখে আদ্রিতার ঘুম ভেঙেছে । বিছানায় বসে বাবাই বাবাই বলে কান্নার করছে । অগ্নি মেয়ের কাছে যেয়ে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে ,

– ” এই তো বাবাই ,মাম্মাম তুমি কান্না করছো কেন ? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো কি ? ”

আদ্রিতা টলটল চোখে তাকিয়ে হ্যা বোধক মাথা নাড়ায় । অগ্নি মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে ,

– “কিছু হবে না ,এই তো বাবাই তোমার কাছেই আছি । ”

আদ্রিতা বাবার বুকে মাথা রেখে আহ্লাদী গলায় বলে ,

– “বাবাই ,মাম্মামের গল্প বলোনা । মাম্মামের গল্প শুনলে সব ভয় ভেনিশ হয়ে যায় ।
বাবাই মাম্মাম দেখতে কেমন ? ”

অগ্নি মেয়ের মাথায় চুমু খেয়ে মুচকি হেসে বলে,

– “তোমার মাম্মাম একদম পরীদের মত । যখন প্রথমবার তোমার মাম্মাকে দেখি মনে হচ্ছিলো পরীদের দুনিয়া থেকে এসেছে । এতোটা সুন্দর তোমার মাম্মাম । একদম আমার এই প্রিন্সেসের মত ! ”

আদ্রিতা বাবার মুখে নিজের প্রশংসা শুনে খুশিতে লাফিয়ে উঠে । কিছু একটা ভেবে আমার বলে ,

– “বাবাই ,কাল আমার বার্থডে আমরা মাম্মামের কাছে যাবো তো ? ”

অগ্নি আদ্রিতার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলে ,

– “অবশ্যই ,প্রিন্সেস ! ”

আদ্রিতা বাবার বুকে মাথা রেখে মায়ের গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যায় । আদ্রিতা ঘুমাতেই অগ্নি বিছানায় শুয়িয়ে দেয় । মেয়ের মুখের দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে থাকে অগ্নি । একদম মায়ের অবিকল ।হুরের মত চোখ মুখ ঠোঁট হাসি । পুরো মায়ের কপি । মায়ের মতই দুষ্টু !

সকাল সকাল আদ্রিতাকে নিয়ে অগ্নি বেরিয়েছে । কিছুক্ষণ পর কবর স্থানের সামনে গাড়ি থামে । অগ্নি মেয়ের হাত ধরে সামনের দিকে নিয়ে যায় । আদ্রিতা বাবার সাথে যাচ্ছে ঠিক কিন্তু কোথায় যাচ্ছে তা তার জানা নেই । ছোট্ট মস্তিষ্কে কিছু ডুকছে না । তাই আদ্রিতা বাধ্য হয়ে প্রশ্ন করেই বসে ,

– “বাবাই আমরা এখানে এসেছি কেন ? এটা কোথায় ”

– “প্রিন্সেস এখানে দাদুনের কবর জিয়ারত করতে এসেছি । আজ তোমার জন্য অনেক বড় দিন তাই দাদুনের ব্লেসিং নিতে এসেছি । ”

আদ্রিতা এদিকে ওদিকে খোঁজাখুঁজি করে বলে ,

– “বাবা দাদুন কোথায় ? আমাদের সাথে থাকে না কেন ?

অগ্নি মেয়েকে একটা কবর দেখিয়ে বলে ,

– “ওই সেখানে দাদুন ঘুমিয়ে আছে । তুমি বড় আম্মুর সাথে থাকো আমি ভিতর যাই । কেমন ? ”

আদ্রিতা তার বাবার কথা মত হিয়ার সাথে বাহিরে দাড়ায় । অগ্নি ,আদিল আর আবির ভিতরে যেয়ে কবর জিয়ারত করে ।

____________

এয়ারপোর্ট এর সামনে অধীর কৌতূহল নিয়ে দাড়িয়ে আছে অগ্নি ,আদ্রিতা । আদ্রিতা বার বার ঘড়ি দেখছে । ইসস ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে কখন এখনো তার মাম্মাম বের হচ্ছেনা কেন ? উফফ কখন তার মাম্মাম বের হবে । কখন তাকে দেখবে ?
অগ্নির ও মেয়ের মত একই অবস্থা বার বার ঘড়ি দেখে চলছে আর সামনের দিকে তাকাচ্ছে । হ্ঠাৎ ই সামনের দিকে তাকিয়ে আদ্রিতার চোখ আটকে যায় । রয়েল ব্লু কালারের গ্রাউন পড়া একটা পরী আসছে । কি সুন্দর দেখতে একদম তার মতো । আদ্রিতা ছবিতে মাম্মামকে দেখেছিলো ।তবে এটাই কি তার মাম্মাম ? হুম এটাই তার মাম্মার । তার বাবা বলেছে তার মাম্মাম একদম পরীদের মত । আদ্রিতা ছুটে যায় সামনের দিকে । অগ্নি আদ্রিতার যাওয়ার দিক লক্ষ করে তাকিয়ে থমকে যায় । সময় যেন এখানেই থেমে গেছে । এই তো সামনে তার পরীজান দাড়িয়ে আছে । পুরো একবছর এক সাপ্তাহ পর দেখছে । অগ্নির বুক থেকে শান্তির এক শ্বাস বেরিয়ে আসে । অগ্নি থম মেরে দাড়িয়ে আছে । সামনের দৃশ্য দেখে চোখ ঝুড়াচ্ছে । অগ্নির পুরো পৃথিবী তার সামনে । আহ! কি মধুর দৃশ্য !
হুর মেয়েকে বুকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে । চোখ থেকে পানি ঝোড়ছে । আজ একবছর এক সাপ্তাহ পর মেয়েকে দেখছে । কত বড় হয়ে গেছে মেয়েটা । আদ্রিতার হয়তো তার মায়ের মুখ মনে ও নেই । হুর আদ্রিতার ছোট ছোট হাতে চুমু খেয়ে বলেন ,

– “মিস ইউ মাম্মাম ,মিস ইউ আ লট ”

আদ্রিতা নিজের ছোট ছোট হাতে মায়ের মুখে হাত বুলিয়ে আধো আধো গলায় বলে ,

– “মাম্মাম তুমি সত্যি সত্যি বাবাই এর বলা পরীদের মত সুন্দর ! কি সুন্দ্রর ।

হুর মেয়েকে আবার জড়িয়ে ধরে অগ্নির দিকে তাকায় । অগ্নি লাগামহীন চাহনি তে হুরকে দেখছে । দুজনের দৃষ্টি বিনিময় হতেই হুর লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে ।

আদ্রিতা আমার বলে ,

– মাম্মাম জানো আমিও তোমাকে এতোগুলো মিস করেছি ।আমাকে আর রেখে যাবেননা ,হুম! ”

– “হুম ,প্রিন্সেস আর কখনো তোমাকে রেখে যাবো না। এখন থেকে আমরা সবাই একসাথে থাকবো । ”

আদ্রিতা মায়ের কথায় খুশিতে লাফালাফি করতে থাকে ।খুশিতে সবাইকে এই সংবাদ জানায় । হুর অগ্নির দিকে দিকে এগিয়ে যাই । এই মানুষটাই হুরের জীননের সবচেয়ে বড় সম্বল । আজ সে বেঁচে আছে এই মানুষটার ভালোবাসার জোড়ে । চার বছর আগে মৃত্যু দুয়ার থেকে হুর ফিরে এসেছে । মেডিকেল সাইন্স এ তার এমন অবস্থায় বেঁচে ফিরা অনেকটা অলৌকিক ঘটনার মত ।
যেখানে সবাই আশা ছেড়ে দিয়েছিলো হুরে বাঁচার সেখানে অগ্নি হার মানে নি । বাহিরে বিভিন্ন দেশে ডক্টর দের কাছে হুরের মেডিকাল রিপোর্ট মেইল করেছে । সবরকম পন্থা অবলম্বন করেছে । দিন রাত হুরের সেবা করে তাকে সুস্থ করেছে । তিনমাস হসপিটালে থাকার পর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে । স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আরো তিন মাস লেগেছে । আর পুরোটা সময় অগ্নি তার ঢাল ছিলো । আল্লাহ্‌ অশেষ কৃপায় আর অগ্নির দোয়া ,সেবা তেই হুর আজ বেঁচে আছে ।এই যে আজ হুর ইন্টার্নশিপ শেষ করে দেখে ফিরছে এর পিছনেও অগ্নির অবদান । হুর ইন্টার্নশিপের জন্য বাহিরে যাওয়ার জন্য একদম রাজি ছিলো না । হুরের খুব শক্ত জবাব ছিলো সে অগ্নি আর আদ্রিতাকে ছেড়ে কোথাও যাবেনা । কিন্তু অগ্নির জোরাজোরি সাথে পেরে উঠে না । অগ্নির হুরকে নিজ যোগ্যতায় প্রতিষ্ঠিত দেখতে চায় । হুরকে শুধু সংসার জীবনে বেঁধে রাখতে চায়না । স্বাধীন সফল দেখতে চায় । হুর যাওয়ার পর আদ্রিতাকেও নিজেই সামলায় । কষ্ট হয়েছে হুর কে ছাড়া থাকতে কিন্তু হুরের সফলতার জন্য সব কিছু সহ্য করতে পারবে !
কে বলেছে শুধু মাত্র পুরুষের সাফলতার পিছনে নারীর অবদান থাকে ? নারীর সাফলতার পিছনেও পুরুষের অবদান থেকে । আর আজ যে হুর বেঁচে আছে এর পিছনে তার স্বামীর হাত রয়েছে । হুরের জীবনটাই অগ্নির দান !

বাড়ি ফিরার পর সবাই হুরকে ঘিরে আছে । অগ্নি হুরের কাছে ভিরার চান্স পাচ্ছে না । হুর কে দূর থেকে দেখছে । আদ্রিতা হুরের গলা জুলে বসে আছে । হুর সবার সাথে গল্প করছে । মাঝে মাঝে অগ্নির সাথে চোখাচোখি হচ্ছে ।আদ্রিতার বার্থডে তে তার ফ্রেন্ডসরা এসেছে । সবার সাথে হুরের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে । আর বুক ফুলিয়ে বলছে “দেখেছো আমার মা কত সুন্দর ! একদম ডিজনি প্রিন্সেসদের মত । ”
হুর মেয়ে কান্ড দেখে হেসে যাচ্ছে ।আদিল ও ছোট বোনের সাথে তাল মিলাচ্ছে ।
হুরের মামা মামী শেফা তানবীর নিশিত উৎস সবাই আজ এখানেই থাকবে ।নিশিত প্রেগন্যান্ট খুব শিঘ্রই মা হবে । শেফা আর তানবীরের তিন বছরের একটা মেয়ে আছে ।

গভীর রাত আদ্রিতা কিছুক্ষণ পূর্বেই ঘুমিয়েছে । মায়ের সাথে হাজারো গল্প করেছে । জমানো সব কথা আজ মায়ের সাথে বলেছে । এখন বুকে মুখ ডুবিয়ে ঘুমিয়ে আছে । অগ্নিও পাশেই ছিলো খানিক আগেই বারান্ধার দিকে গেছে । হুর আদ্রিতাকে বিছানায় শুয়িয়ে বারান্দার দিকে পা বাড়ায়।এই বারান্দায় হুর অগ্নির হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে আছে । হুর চোখ বন্ধ করে শান্তির নিশ্বাস নেয় । নিজের বাড়ির মত পৃথিবীর কোথাও শান্তি নেই ।
বারান্দার দরজায় দাড়িয়ে দেখে অগ্নি গভীর দৃষ্টি তে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ।হুর আলতো পায়ে অগ্নির কাছে যায় । পিছন থেকে অগ্নিকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে । অগ্নি হুরের হাত টেনে , সামনে আনে । হুরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলে ,

– ” এখন সময় হলো আমার কাছে আসার ? ”

হুর অগ্নির দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে ,

– “কি করবো বলুন ? আপনার মেয়েই তো ছাড়ছিলো না । ”

– “তুমি পালাচ্ছিলে ,আর এখন আমার মেয়ের দোষ দেওয়া হচ্ছে ? ”

অগ্নি কথা বলতে বলতেই হুরকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে । ঘাড়ের কাছে মুখ ডুবিয়ে । বড় বড় নিশ্বাস টেনে নিতে নিতে বলে ,

– “বুঝলে সুন্দরী ? এতোটা বছরে কিছু পাল্টায়নি তুমি না আমাদের ভালোবাসা । আজও তোমার গাঁয়ের মিষ্টি ঘ্রাণ আমাকে পাগল দিশেহারা করে দেয় ।আজও আমি তোমার প্রেমেতে অন্ধ । দিন দিন তোমার সৌন্দর্য বাড়ছে আর আমাকে আরো বেশি পাগল করছে ! ”

হুর লজ্জায় মিলিয়ে যাচ্ছে । এখনো অগ্নির কাছে আসলে সেই প্রথম বারের মত অনুভূতি হয় । গাঁ ঠকঠক করে কাঁপে । অগ্নি হুরের থুতনি ধরে উঁচু করে বলে,

– “উফফ এই লজ্জা ! আমার মাথা ধরিয়ে দিলে সুন্দরী ।আর যে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না । ”

বলেই আর এক সেকেন্ড দেরি না করে হুরকে কোলে তুলে নেয় । রুমের দিকে পা বাড়ায় ।ভালোবাসার রং এ আবার দুজনে মিলিয়ে একাকার হয়ে যায় ।

________________

অনেকটা বছর পেরিয়ে গেছে । এই তো প্রকৃতি প্রখর শীতের প্রভাব ছাড়িয়ে বসন্তের দিকে পা বাড়িয়েছে।গাছে গাছে নতুন পাতা জন্মাচ্ছে । প্রকৃতি নতুন রুপে সাজচ্ছে । এদিকে আদ্রিতা ঘুমে মগ্ন । একদম মায়ের রুপ রং পেয়েছে । অসম্ভব সৌন্দর্যের অধিকারী । সূর্যের আলো চোখের উপর পড়তে ঘুম ভাঙে । নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে দেখে তার বালিশের কাছে রেপিং কাগজে মোড়ানো একটা বইয়ের মত কিছু । আদ্রিতা চমৎকার এক হাসি দিয়ে চট করে উঠে বসে । কেলেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখে ডেটটা মার্ক করা । আজ তো তার আঠারো তম জন্ম দিন । সে ভুলেই গিয়েছিলো । তাড়াতাড়ি করে রেপিং কাগজ ছাড়িয়ে দেখে । উপরে লিখা “শত ডানার প্রজাপতি “এটাতো তার মায়ের ডাইরি । যার প্রতি তার কৌতূহল সেই ছোট থেকে । সাথেই একটা ছোট চিরকুট ।

” শুভ জন্মদিন মাই প্রিন্সেস । আমি জানি তোমার খুব কৌতূহল এই ডাইরিটা নিয়ে । আমি বলেছিলাম এটা তোমার আঠারো তম জন্মদিনের গিফট ।আজ তুমি আঠারো তে পা দিয়েছো । এখন থেকে এটা তোমার আমানত । ”

আদ্রিতা পাশের টেবিলে বাবার দেওয়া গিফট ,দামী ঘড়িটা পেলো । খুশিতে পুরো বাড়িতে নেচে বেড়াচ্ছে । সবাইকে দেখাচ্ছে । কিন্তু তার বাবাই আর মাম্মাম কোথায় ? সে জানে এই সময় তারা কোথায় থাকতে পারে !
বাগানের কাছে যেতেই দেখে অগ্নি আর হুর বাগানের বেঞ্চে বসে আছে । অগ্নি খুব আদুরে হাতে হুরের বিনুনি তে ফুল গেঁথে দিচ্ছে । হুর লজ্জায় জর্জরীত হয়ে যাচ্ছে । আদ্রিতা তার বাবাই মাম্মামকে দূর থেকে দেখে চোখ জুড়াচ্ছে । আজ এতোটা বছর পরও তাদের মাঝে এতো প্রেম !
এমন যুগে এমন প্রেমিক যুগল পাওয়া সত্যি খুব দুর্লভ !
আদ্রিতার কাছে ভালোবাসার ব্যাখ্যা মানেই তার বাবাই আর মাম্মাম ।

সমাপ্ত ❤️

প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন । পুরো গল্প কেমন লেগেছে বলবেন ।। ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন 😊😊😊।