শর্তনামা পর্ব-০৪

0
201

#শর্তনামা
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৪

বিয়ের পর দিনই যে বউয়ের নামে বিচার আসবে একথা যেন ইতিহাসে বিরল তাও কি না নতুন বউ একজনের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। ওয়াসিফ মুখ ভার করে বসে আছে তার সামনেই মুখ খিঁচে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নিশা। আরো কয়েকজন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নিশার সাথে। তাদের বাবা-মা আছে ওয়াসিফের সাথে। এত সব গার্ডিয়ানের মধ্যে ওয়াসিফ ই একজন যে কি না বউয়ের সাফাই গাইতে এসেছে। ভার্সিটির নিশার ডিপার্টমেন্টের হেড এসে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। উপর মহল থেকে চাপ এসেছে তার। সকলের উদ্দেশ্য বলা শুরু করলেন,

— দেখুন নিজেদের সন্তানদের দিকে খেয়াল রাখুন। ছাত্র রাজনীতি করবে করুক তাতে মানা নেই তাই বলে অন্য ভার্সিটির ছাত্রদের পিটাবে এটা কেমন কথা। আমাদের ভার্সিটির নাম জড়িয়ে আছে এর সাথে। পরবর্তীতে এমন কিছু হলে আপনাদের ছেলে মেয়েদের বহিষ্কার করা হবে।

নিজের কথা বলে রুম ত্যাগ করলেন ডিপার্টমেন্টের হেড। সবাই নিজেদের বাবা-মার সাথে বেরিয়ে গেল। ওয়াসিফ এখনও ঠাই বসে। হুট করেই দাঁড়িয়ে গেল ও। হাত চেপে ধরলো নিশার। পরক্ষণেই আঠালো ভেজা কিছু অনুভব হতেই তাকালো ধরে রাখা হাতের দিকে। এতক্ষণের ধরে রাখা সব রাগই যেন উবে গেল ওর। অস্থির হয়ে উঠলো ওয়াসিফ। আলতো করে জড়িয়ে ধরে বেরিয়ে গেল ভার্সিটি থেকে। পাশের ডিসপেনসারিতে নিয়ে হাতে ব্যান্ডেজ করিয়ে দিলো। একটা রিকশা ডেকে তাতে চড়ে বসলো ওয়াসিফ নিশা। সারা রাস্তায় ও ওয়াসিফ একটা টু শব্দ করলো না। নিশার মনটা নিমিষেই বিষিয়ে উঠলো। এই ওয়াসিফ কথা কেন বলছে না। কয়েকবার চেষ্টা করলো কথা বলার কিন্তু আফসোস কিছুই বললো না ওয়াসিফ। বাসায় এসেও গটগট পায়ে রুমে ডুকলো। পিছু পিছু নিশাও ডুকতে নিলো। ওমনি শাশুড়ী আটকে নিলো। গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

— ওয়াস কি তোমাকে আনতে গিয়েছিলো?

নিশা স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো,

— জ্বি।

–তুমি কি জানো এটা ওর অফিস টাইম? অফিস বাদ দিয়ে তোমাকে আনা নেয়া করলে তো আর বস টাকা দিবে না।

কন্ঠে তেজ নিয়ে কথাগুলো বলে চলে গেলেন ভদ্র মহিলা। নিশা ভাবশালীন ভাবে রুমে ডুকলো। ওয়াসিফ গোসল করে বেরিয়ে এসেছে ততক্ষণে। নিশা পাশে গিয়ে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু ওকে সুযোগ দিলো না ওয়াসিফ। এতেই রেগে গেল নিশা। তেজী কন্ঠে বললো,

— এক দিনেই শেষ ধৈর্য? বাকি দিন আর থাকতে হবে না আজই চলে যাব। শর্তনামা সাইন করলেই হয় না পালন করতে জানতে হয়।

বলেই ব্যাগ হাতে তুলে নিলো পুনরায়। বেরিয়ে যেতে নিলেই ডেকে উঠলো ওয়াসিফ,

— নিশু।

না আদর করে ডাকে নি ওয়াসিফ। ডেকেছে কিছুটা তেজী কন্ঠে। নিশা ঘুরে দাঁড়িয়ে গেল। ওয়াসিফ ওর দিকে এগিয়ে এলো। দু বাহু শক্ত করে ধরে বললো,

— আমাকে অধৈর্য করা এত সহজ না। যতক্ষণ না আমি নিজে অধৈর্য হচ্ছি ততক্ষণ কেউ আমাকে অধৈর্য করতে পারবে না। আর রইলো আপনার শর্তনামা ওটা থাকা না থাকা আমার কাছে ম্যাটার করে না। আমি যদি এখন ঐ শর্তনামা অস্বীকার করি তাহলে কি করবে? ছেড়ে চলে যাবে?

নিশার চোখ দিয়ে টুপ করে দুই ফোটা পানি পরলো। এই প্রথম মেয়েটার চোখের পানি দেখে অস্থির হয়ে গেল ওয়াসিফ। শক্ত হাতটা নরম করলো। বিচলিত কন্ঠে বললো,

— ব্যাথা পেয়েছো নিশু? আ’ম সরি। তাকও আমার দিকে।

টলমলে চোখে তাকালো নিশা। কিছু বলার আগেই টাইট করে জড়িয়ে ধরলো ওয়াসিফকে। ওয়াসিফ ও জড়িয়ে ধরলো প্রিয় স্ত্রীকে। মাথায় হাত বুলিয়ে অস্থির কন্ঠে বললো,

— নিশু জান প্লিজ স্টপ ক্রাইং। আমার ভালো লাগছে না নিশু। কান্না থামাও।

কান্নারত গলায় নিশা বলে উঠলো,

— আমি আপনাকে ছেঁড়ে যাওয়ার কথা কখনো ভাবি নি ওয়াসিফ। আমি আজ বাবাকেই কল দিতাম কিন্তু এতে মা পরে ঝামেলা করবে তাই আপনাকে কল করেছিলাম। আর কখনো আমার ঝামেলায় আপনাকে ডেকে বিরক্ত করবো না। অফিস টাইমে কলও করব না।

ওয়াসিফ থ হয়ে গেল। ও কি বললো আর নিশু কি বুঝলো? আস্তে করে চুমু খেল নিশার কপালে পরপরই গালে। চোখ গুলো মুছে দিয়ে আদর করে বললো,

— আমি তো জানতাম আমার নিশু তো স্মার্ট কিন্তু তুমি তো বোকা। আমার জীবনে তোমার প্রাধান্য অফিস থেকে অনেক বেশি। আর তোমার সব বিষয়েই আমাকে আগে বলবে। আর আজ যা করেছো তা যানো আর না শুনি।

— আমি রাজনীতি করবো ওয়াসিফ।

কথাটা যেন হজম করতে পারলো না ওয়াসিফ। শুকনো কাশি শুরু হয়ে গেল ওর৷ নিশা তারাতাড়ি পানি খাওয়ালো। ওয়াসিফ একটু থামলো। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বললো,

— তখন কি বল্লা?

— কি বললাম?

— তুমি রাজনীতি করবে?

— হ্যাঁ। জানেন আমার কত ইচ্ছা। এতদিন আম্মুর জন্য পারি নি কিন্তু এখন তো আপনি আছেন। আজ তো আমি ঐ ছেলের মাথা ফাটাতে চাই নি ভুলে লেগে গিয়েছিলো।

মুহূর্তেই ওয়াসিফের চোখের সামনে ভেসে উঠলো সাদা শাড়ী পড়ে খোপা করা নিশুর অবয়ব যে জনসমাগমে বক্তিতা দিচ্ছে। ভাবতেই ঘাবড়ে গেল ওয়াসিফ। বুঝানো স্বরে বললো,

— নিশু জান আমার তোমার সাওয়ার প্রয়োজন। গোসল করে আসো।

বলে নিজেই ওর ড্রেস বের করে দিলো। নিশাও কিছু না বলে গোসলে ডুকে পড়লো।

_______________

দুপুরে খেতে বসতেই বাঁধলো বিপত্তি। ওয়াসিফের মা বিরক্ত হয়ে নিশার দিকে তাকিয়ে বললো,

— ছোট বউমা। বিয়ের পর শাড়ী পড়তে হয়। তুমি আজ থেকে শাড়ী পড়বে বাসায়।

নিশাও কম কিসে। আহ্লাদী স্বরে বললো,

— তাহলে তো ওয়াসিফেরও পাঞ্জাবী পরে থাকা উচিত আম্মু।

ওয়াসিফ বেচারা গেল ফেঁসে। ওর মা এমনিতেই একটু রাগী। এরমধ্যে নিশা তার চেয়ে দ্বিগুণ তেজী। কোন মতে কথা কাটাতে ওয়াসিফ বলে উঠলো,

— আম্মু ক্ষুধা লেগেছে। খাবার দাও।

ওর মা একটু তাকিয়ে আবার খাবার বাড়তে মনযোগ দিলো। ওয়াসিফ নিশাকে ধীর কন্ঠে বললো,

— নিশু বসো।

নিশা বসতেই ওয়াসিফ ওকে এটা ওটা এগিয়ে দিলো। ওর দুই ভাবী হা হয়ে তাকিয়ে রইলো। মেজো জা বড় জনকে খোঁচা দিয়ে বললো,

— দেখলে আপা এই মেয়ে একদিনেই আম্মাকে হেনস্তা করে ছেড়েছে।

খাওয়া শেষ হতেই সবাই যে যার রুমে ডুকলো। নিশা ডুকতেই ওয়াসিফ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। কাঁধে ঠোঁট ডুবিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো,

— নাও আই ওয়ান্ট ইউ নিশু। মে আই?

নিশার গাল দুটো যেন ভার হয়ে এলো। ওয়াসিফ কি আর থেমে আছে। আদরে আদরে ভরিয়ে তুললো নিজের নিশুকে।

মায়ের কল আসতেই কিছুক্ষণ কথা বললো নিশা। নিশানের সাথে ও কথা হলো। পাশেই ওয়াসিফ ঘুমিয়ে আছে। নিশা উঠতে নিলেই কোমড় জড়িয়ে ধরলো ওয়াসিফ। পেটে মুখ গুজে দিতেই কেঁপে উঠলো নিশা। আঁকড়ে ধরলো ওয়াসিফের চুল। ঘনঘন শ্বাস ফেলে বললো,

— ছাড়ুন।

— উহু ঘুম হয় নি আমার। কাছে আসো নিশু।

ব্যাস এই ডাক কি আর নিশা উপেক্ষা করতে পারে?

চলবে।