শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-০৪

0
301

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৪

ঘটঘট আওয়াজ করে মাথার উপরে ফ্যান চলছে। দূর থেকে আযানের সুর ভেসে আসছে। টেবিলের উপরে রাখা মোমবাতির আলো অনেক আগে নিভে পানি। গোলাপের পাপড়ি সারা ফ্লর জুড়ে এলোমেলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সোফায় ঘুমিয়ে আছে শ্রাবণ। গায়ের চাদরের অর্ধেক ফ্লরে গড়াগড়ি করছে। অনেক রাতে কক্ষে ফিরে এসে বিছানা পযর্ন্ত যেতে মন সাড়া দেয়নি। মা মেয়ে মশাড়ির মধ্যে হাত পা ছুড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে সেখানে গিয়ে বিরক্ত করার মানে হয়না। তাছাড়া এইটুকু বাচ্চা যদি ভুল করে পিঠের নিচে চাপা পড়ে তখন দুঃখের শেষ থাকবে না। এটা সেটা ভেবে শেষপর্যন্ত সোফায় ঘুমাতে হলো। অভ্যাস নেই তবুও কিন্তু করার নেই। আলো হামি ছেড়ে উঠে বসলো। আবছা আলোতে আশেপাশে তাঁকিয়ে গতকাল রাতের কথা ভেবে ঢোক গিললো। ইশা ঘুমে অচেতন। মেয়েটা ভীষণ শান্ত। রাতে একটুও বিরক্ত করে না। ক্ষুধা পেলে নড়াচড়া করে। ফিটার পাশে রাখা থাকে,খাওয়ানো হলে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে। আলো বিছানা থেকে নেমে সোফার দিকে চেয়ে ভ্রু কুচকে ফেললো। রাতে লোকটা কখন ফিরেছে ওর জানা নেই। বখাটে হলে কি হবে কিছু গুণ বেশ ভালো। আলো খুশি হলো। ফ্রেস হয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলো। জায়গাটা বেশ সুন্দর। পাশে বেলি ফুলের টবের সঙ্গে গোলাপের কিছু গাছ আছে। আলোর গায়ে গতকাল রাতের শাড়িটা এখনো চেঞ্জ করা হয়নি।কুচকে গেছে কিছুটা। আলো দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বোনের মুখটা ভীষণ মনে পড়ছে। এই পাঁচ দিনে কতকিছু ঘটে গেলো সেসব হিসাব মিলাতে গিয়ে আলোর চোখ লেগে আসলো। ঘুম ভাঙলো ইশার কান্নার আওয়াজ শুনে। আলো দ্রুত চোখ খুলে চমকে উঠলো। ওর মুখের সম্মুখে শ্রাবণ দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ের পর এই প্রথম সামনা সামনি দুজনের দেখা। আলো ভড়কে গেলো। শ্রাবণ ওর পা হতে মাথা অবধি ভালো করে স্ক্যান করছে। ইশা ওর কোলের মধ্যে শার্টের বোতাম হাতের মুঠোয় নিয়ে মুখে নেবার চেষ্টা করছে। আলো মিনমিন করে বলল,

> সরি চোখ লেগে এসেছিল। আপনি ওকে দিন।

শ্রাবণ দিলো না বরং সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল,

> এই বাচ্চার মা তুমি? তোমার বয়স কত? এইটুকু বয়সে প্রেমের ভুত ঘাড়ে চেপেছিলো কিভাবে শুনি? যাইহোক তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো হাসপাতালে যেতে হবে। লেট করা আমার পছন্দ না। দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হবে।

শ্রাবণ যেভাবে এসেছিল হুকুম করে সেভাবে ফিরে গেলো। দমকা হাওয়ার মতো লোকটার আসা যাওয়া। আলো হতাশ হলো। এই লোক ওর সম্পর্কে কতকিছু ভেবে ফেলেছে আল্লাহ জানেন। আলো নিজে থেকে বলেছিল ইশা কখনও জানবে না ও আলোর মেয়ে না। তাই কখনও কাউকে এই বিষয়ে বিস্তারিত না বলতে। এখন বেশ করে ফেঁসে গিয়ে বুঝতে পারলো কাজটা ঠিক হয়নি। অবিবাহিত একটা মেয়ের বাচ্চা আছে জানলে সমাজের মানুষ কতকিছু ভেবে নেয়। আলো ভেতরে এসে শ্রাবণকে পেলো না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে নেমে আসলো। শ্রাবণ সোফায় বসে আছে। ইশা ওর মায়ের কাছে। বাচ্চাটাকে এরা অযত্ন করছে না এইটুকু ভেবে আলোর বেশ ভালো লাগলো। নাস্তা শেষে ওরা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হলো।
******
শ্রাবণদের বাসা আবাসিক এলাকার মধ্যে। আশেপাশে ভদ্রলোকদের বসবাস। শ্রাবণ ত্যাড়া মানুষ। প্রায় এটা ওটা নিয়ে লোকদের সঙ্গে ঝগড়া ঝামেলা লেগে থাকে। বিয়ের খবরটা গতকাল রাতের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু কাজের মহিলা আছে। ওরা নিজেদের মতো করে কথাটা ছড়িয়েছে। সেই থেকে লোকজন আসছে আলোকে দেখতে। হাসপাতাল থেকে ফিরতেই একঘর মানুষের সামনে আলোকে বসতে হলো। শ্রাবণ ওকে দরজাতে নামিয়ে দিয়ে রাহিনের সঙ্গে কথা বলতে বাইরে থেকে গেছে। আলোকে কয়েকজন মহিলা তীক্ষ্ণ নজরে দেখছে। একজন বলেই ফেললো,

> এখনকার সুন্দরী মেয়েদের বাইরে পাঠিয়েও শান্তি নেই।এরা বাবা মায়ের মুখে চুনকালি দিতে উস্তাদ। কি যে অবস্থা সমাজের। মা তোমার নামটা যেনো কি?

আলো ভ্রু কুচকে চাইলো। ওকে বাজে ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলা হচ্ছে। মেজাজ খারাপ হলো। তবুও দাঁত চেপে বলল,
” আলো”
> আগে পিছে কিছু নেই? কোন বংশ তোমাদের?
উত্তর এলো দরজা থেকে। শ্রাবণ ফোনের দিকে চেয়ে কথা বলছে,

> বংশ দিয়ে কি করবেন আন্টি? বিয়েতো হয়ে গেছে। ইন্টারভিউ নিয়ে লাভের লাভ কিছু হবে না। গতকাল থেকে বউয়ের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানো হয়নি। আপনি বরং পরে সবটা জেনে নিয়েন। আপাতত ওকে ছেড়ে দিন। আমার প্রচুর কথা আছে। মিসেস ইসরাত শিশির আলো কক্ষে আসুন। কথা আছে।

শ্রাবণ আদেশ করে উপরে চলে গেলো।আলো চমকে উঠলো নিজের পুরো নাম শুনে। উপস্থিত মহিলাদের কোনো কথা ওর কান অবধি যাচ্ছে না। শ্রাবণ যে ওর পুরো পরিচয় জেনে গেছে। কি হবে ভেবেই অস্থির লাগছে। পাশ থেকে শাশুড়ি মায়ের নির্দেশ পেয়ে গুটিগুটি পায়ে দরজা পযর্ন্ত এসে হাত বাড়ানোর আগেই শ্রাবণ ঝড়ের গতিতে ওর হাতটা টেনে ভেতরে নিয়ে নিলো। ওকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে সোফায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসে পড়লো। আলোর মুখের দিকে চেয়ে বলল,

> মিথ্যা কেনো বলেছো? সত্যি করে বলো ইশা কার মেয়ে?

আলো ঢোক গিলে বলল,

> মিথ্যা বলার কি আছে? ও আমার মেয়ে। জন্ম না দিলে কি মা হওয়া যায় না? মেয়েরা মায়ের জাত।

শ্রাবণ ক্ষুব্ধ হলো। হাত মুঠো করে বলল,

> কথাটা আমাকে আগে বলা যেতো না? বাবা আর তুমি মিলে আমাকে ঠকিয়েছো। এখন বুদ্ধি দিয়ে আমাকে ঘায়েল করতে এসেছো মেয়ে? সেবারের কথা ভুলিনি। একটা সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে আমার পুরো টিমকে নাস্তানাবুদ করেছিলে। এবার কি হবে?

শ্রাবণ বেশ সিরিয়াস। আলো ওর চোখের দিকে চেয়ে বলল,
> তো মিস্টার শ্রাবণ মাহমুদ,কিভাবে আমি আপনাকে মিথ্যা বলেছি শুনি? আমি কি নিজের মুখে বলেছি ও আমার নিজের পেটের বাচ্চা? বাবা নিজেও এমন কিছু বলেনি। শুধু বলেছে একজন অসহায় মা মেয়ের দায়িত্ব নিতে হবে। এর থেকে আপনি নিজের মতো ভেবে নিয়েছেন। একজন রিপোর্টারের এমন ভুল কিভাবে হতে পারে? এইভাবে আপনাদের চ্যানেলে সত্যি খবর প্রকাশ করেন?

শ্রাবণ পিছিয়ে আসলো। দুহাতে মাথার চুল টেনে বলল,
> ও মাই গড!আমি ভাবতেও পারিনি শেষপর্যন্ত তোমার সঙ্গে থাকতে হবে। মিথ্যাচার করে একদম ভালো সাজতে আসবে না। বাবা আর তুমি মিলে আমাকে ঠকিয়েছো। আমি ভেবেছিলাম একটা ঠকে যাওয়া অবলা মেয়েকে বিয়ে করে সমাজে দৃষ্টান্ত রাখবো। আমার সব স্বপ্ন শেষ।

>আপনি অদ্ভুত কথাবার্তা বলবেন না। আমার ঠেকা পড়েনি মিথ্যাচার করে আপনাকে বিয়ে করার। আপনার বাবা অনেক অনুরোধ করেছিলেন বিধায় রাজি হয়েছি। তাছাড়া আপনার কপাল ভালো আমি আপনাকে বিয়ে করে উদ্ধার করে দিয়েছি। এক নাম্বারের বখাটে। আর এখন কি অবলা সাজতে পর পুরুষের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক করে বাচ্চা নিয়ে আপনার কাছে আসতে হবে?

আলোর কথা শেষ হলো না শ্রাবণ ধমক দিলো। এই মেয়ের মুখে কিছু বাঁধে না। শ্রাবণ যদি বখাটে হয় তবে এই মেয়ে বখাটেদের উস্তাদ।

> চুপ করবে? বাবা নিশ্চয়ই আমার বিরুদ্ধে কোনো কুটিল পরিকল্পনা সাজিয়ে তোমাকে এই বাড়িতে এনেছে। শুনো একদম বউ বউ ভাব নিয়ে আমার আশেপাশে আসবে না। ব্যক্তিগত ভাবে আমি তোমার ব্যক্তিত্বকে পছন্দ করি কিন্তু বউ হিসেবে একটুও না। মাথা খারাপ করবে না। আমাকে পরিবর্তন করা তোমার কাজ না বুঝেছো?

শ্রাবণ উঠে পড়লো। আলোর চোখের দিকে তাঁকিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি হচ্ছে। এই মেয়েটা চোখ নামাচ্ছে না। আগুনের কাছে মোম থাকলে অঘটন ঘটার সম্ভাবনা প্রচুর। রাহিন হাবিবের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আলোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর তথ্য বের করে ফেলেছে। শ্রাবণ সবটা শোনার পর হতভম্ভ। রেবা মা*র্ডা*র কেসের প্রধান সাক্ষী আজ নিজের বাড়িতে ভাবা যায় না। রাহিন বাইরে অপেক্ষা করছিলো শ্রাবণকে দেখে উত্তেজিত হয়ে বলল,

> কথা বলেছিস ওর সঙ্গে? খুব সরি ভাই। না জেনে কারো বিষয়ে মন্তব্য করতে নেই। আমার চরম শিক্ষা হলো। ভাবি পুরোই আগুন। কত রকমের চাপ আর হুমকি শুনেও পিছিয়ে আসেনি ভাব একবার? নামে মতোই ব্যক্তিত্ব।

শ্রাবণ বিরক্ত হচ্ছে রাহিনের উপরে। মেজাজ গরম হয়ে আছে। আশেপাশের প্রতিবেশীরা আলোকে নিয়ে নিজেদের মতো গল্প সাজিয়ে এখানে ওখানে গসিপ করছে। বিষয়টা দৃষ্টিকটু অথচ আলোর হেলদোল নেই। শ্রাবণ চোখ বন্ধ করে পূণরায় খুঁলে বলল,
> আলোকে নিয়ে আর একটা কথাও বলিস না। ওরা বাপ মেয়ে মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়*য*ন্ত্র করেছে।আমি সহজে মানছিনা। ভাবতে পারছিস আমাদের টিমের কি হাল করেছিলো?

> আমাদের দোষ ছিল। কিছু রিপোর্টার ইচ্ছে করে আজেবাজে কথা বলে ওকে রাগানোর চেষ্টা করছিলো। জানিস তো ছাত্র সমাজ ক্ষে*পণা*স্ত্রের মতো?ওরা খেপলে সামলানো কঠিন।

> তুই চুপ থাক। নিজের ভাগ্যের উপরে আফসোস হচ্ছে। শোন আজ থেকে আমি বাড়িতে কম কম আসবো। বাবা ফোন করলে বলবি আমাদের অনেক কাজ আছে বাড়িতে যেতে পারছি না। বুঝেছিস?

রাহিন অবাক হলো। আলো মেয়েটার মুখ না দেখলেও কথা শুনেছে। মেয়েটা অন্য সকলের মতো না। প্রতিবাদী আর রেবা মা*র্ডা*রের পর থেকে কলেজের জনপ্রিয় মুখ। এর সাক্ষাৎকার নিতে কত রিপোর্টার ফিরে গেছে ঠিক নেই। আজেবাজে রিপোর্টারদের কাছে সাক্ষাৎকার দিবে না বলে মুখ খুঁলেনি। এই শ্রাবণের ভাব ভঙ্গি ওর ঠিকঠাক লাগছে না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আর যাইহোক ত্রুটিপূর্ণ মেয়েকে তো আর বিয়ে করতে হয়নি?
***
শ্রাবণ সত্যি সত্যি দুদিন বাড়িতে ফিরছে না। বিশেষ কাজে আটকে পড়েছে। যদিও ইচ্ছা করে না তবুও ইকবাল মাহমুদ ছেলের উপরে বিরক্ত। আলোর পড়াশোনা বন্ধ হয়নি। ইশাকে নিয়ে তেমন সমস্যা হচ্ছে না। এই বাড়ির প্রতিটা মানুষ ভীষণ ভালো। শাশুড়ি মায়ের কাছে ইশা দিব্যি আছে। তাই আজ থেকে কোচিং করতে শুরু করেছে। এডমিশন দিতে চাইছিল না ইকবাল সাহেব বুঝিয়েছেন। সময় আছে কাজে লাগানো উচিত। এভাবে ঘরে বসে থেকে স্বপ্ন পূরণ সম্ভব না। জীবনে বাঁধা আসবে তাইবলে থেমে যাওয়া উচিত না। মফস্বলের জেলা শহর,আলোর সবটা চেনাশোনা না হলেও মোটামুটি চিনে তাই বাসা থেকে একা এসেছে। পড়া শেষ করে বের হতে ছয়টা বেজে গেলো। ল্যাইব্রেরী হতে বই কিনতে আরও ঘন্টা খানিকটা পার হলো। হাঁটতে হাঁটতে আবাসিক এলাকার গলিতে পৌঁছাতে বেশ অন্ধকার অবস্থা। এই সময় রাস্তায় লোকজন কম থাকে। নামাজের সময়। আলো এক মনে হেঁটে চলেছে। হঠাৎ পেছন থেকে একটা বাইক এসে ওর পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়লো। আলো চমকে উঠে পিছিয়ে গেলো। উপরের দিকে চেয়ে সিউরে উঠলো সঙ্গে ভয়ে অন্তর কেঁপে উঠলো। সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের খুব পরিচিত মুখ ইদ্রিস হাসান দাঁড়িয়ে আছে। রেবা মা*র্ডা*রের দুই নাম্বার আসামি। আলো আশেপাশে তাঁকিয়ে কিছু একটা ভেবে হাতের মুঠোয় থাকা ফোনের ভিডিও রেকর্ডিং চালু করলো। নিজেকে খুব স্বাভাবিক রাখলো। ইদ্রিস সাহেব গাড়ি থেকে নেমে উচ্চ শব্দে হেসে উঠে বললেন,

> কি খবর আলো রাণীর? এক সপ্তাহ ধরে খোঁজ করছি কিন্তু লাপাত্তা। অবশেষে তোকে পেলাম। সামনের মাস থেকে কোর্টে সাক্ষী চলবে। দশ লক্ষ দিবো চুপচাপ সা*ক্ষী দিবি তুই কিছু দেখিসনি। মেয়ে মানুষ, কি প্রয়োজন পরের জন্য নিজের ক্ষতি করার? দশ লক্ষ টাকা নিয়ে নিজের মতো থাকবি। কেউ তোকে বিরক্ত করবে না। ঘুটঘুটে অন্ধকারের অতলে তোর শ*রী*রের চিহ্ন বিলীন হতে সময় লাগবে না আলো। প্রদীপের শিখার মতো দপ করে জ্বলে উঠে নিভে যাবি। তোর মতো আলোর খবর নিতে কে আসবে?

ভদ্রলোকের কথা শুনে আলো রিনঝিন শব্দে হেসে উঠলো। মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে উত্তর দিলো,

> শহর জুড়ে আলোর মেলা।একটা আলো নিভে গেলে আমার মতো হাজারো আলো জ্বলে উঠবে। পৃথিবীর সব অন্ধকার কেটে আলোয় আলোয় ভরে উঠবে। তোর মতো পা*পি*ষ্ঠ যারা পালানোর রাস্তা খুঁজে পাবি না। তাই আমার চিন্তা না করে নিজের চিন্তা কর। এই অন্ধকারের রাতে আলোর থেকে কিভাবে বাঁচবি? একটুখাটি আলোতে তোর শরীর ঠিকই ঝ*ল*সে যাবে।

আলো ভয় পাচ্ছে কিন্তু সমানে উত্তর দিয়ে গেলো। আশেপাশে খেয়াল করে দেখলো এদিকটা ফাঁকা। ইদ্রিসের পেছনে বসে আছে মহিলা কলেজের সভাপতির ছোট ভাই রামিম। লোকটার কোমরের দিকের শার্ট কিছুটা উঁচু হয়ে আছে। আলো পিছিয়ে আসার চেষ্টা করলো কিন্তু ততক্ষণে ইদ্রিস নেমে এসেছে। আলো কিছু বলার আগেই জোরে একটা থা*প্প*র পড়লো গালে। আলো ছিঁটকে পড়লো। কাঁধের ব্যাগটা ছুটে গেলো কিন্তু ও সেটা কুড়িয়ে নিলো। আলো সরতে সরতে ধা*রা*লো অ*স্ত্রের কোপ পড়লো সেখানে। সরে যাওয়ার দরুন পুরোপুরি লাগেনি। তবুও হাতের কিছুটা অংশ কে*টে গেছে। বোরখার নিচ থেকে র*ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আলো ব্যাথা পাচ্ছে না। আপাতত জীবন বাঁচাতে হবে। পায়ের জুতা ছুড়ে দিয়ে দৌঁড় দিলো। সাবধানে হাতের ফোনটা ব্যাগের মধ্যে রেখে দিলো। পেছনে দুজন পুরুষ দৌঁড়ে চলেছে। আলো দিশেহারা অবস্থা। ভেবে নিলো আজ বাঁ*চার কোনো সম্ভাবনা নেই। আলো দৌঁড়ে কিছুটা পথ আসার পর ওপাশ থেকে একজন ছুঁটে এসে ওকে ধরলো। ল্যামপোস্টের আলোতে মানুষটাকে চিনতে ওর অসুবিধা হলো না। মুখের সম্মুখে শ্রাবণকে পেয়ে আলো চোখ বন্ধ করলো। শ্রাবণ রাহিনের সঙ্গে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো হঠাৎ কারো দৌঁড়াদৌড়ির শব্দ পেয়ে ওরা এগিয়ে এসেছে। শ্রাবণ উত্তেজিত হয়ে উঠলো। আলোকে দুহাতে আগলে নিয়ে জিঞ্জাসা করলো,

> আলো ঠিক আছো? ওরা কে ছিল? আলো শুনতে পাচ্ছো?

আলোর হার্টবিট জোরে চলছে। বুকের মধ্যে ধুকপুক করছে। রাহিন ওদিকে কাউকে না পেয়ে ওদের কাছে দৌঁড়ে আসলো। আলো চোখ বন্ধ করার আগে শুধু বলল,
” ইদ্রিস ”
তারপর আর জ্ঞান নেই। রাস্তার উপরে শ্রাবণের হাতের উপরে অচেতন হয়ে পড়লো। শ্রাবণের হাত ওর পিঠের নিচে ছিল হঠাৎ তরল কিছু অনুভব করে সামনে আনতেই চমকে উঠলো। রাহিন চিৎকার করলো,
> শ্রাবণ ওকে হাসপাতালে নিতে হবে। অবস্থা ভালো না। প্রচুর র*ক্ত ঝরছে।

শ্রাবণ ঢোক গিললো। মাথা কাজ করছে না। বাম হাতের উপরে ওকে রেখে ডান হাতে আলোর নেকাবটা খুঁলে দিলো। মেয়েটার ঠোঁটের কোনে র*ক্ত জমে আছে। গালে থা*প্প*ড়ের চিহ্ন। শ্রাবণ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

> কু*ত্তা বা*চ্চার বেল হয়েছে জানতি না? আমি ওকে হাসপাতালে নিচ্ছি। আলোর জ্ঞান ফেরার আগে আমি ওকে থা*নায় দেখতে চাই। তুই ব্যবস্থা কর। নয়তো আজ রাতের মধ্যে ওকে খু*ন করে আমি নিজে জে*লে যাব।

চলবে