শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-০৫

0
300

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৫

হাসপাতালে পৌঁছনোর পরপরই জ্ঞান ফিরেছে আলোর। শ্রাবণ ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছে। তখন ব্যাথা অনুভব না হলেও এখন প্রচণ্ড যন্ত্রণা করছে। আলো চোখ বন্ধ করে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। শ্রাবণ বারবার মেয়েটার লাল হয়ে যাওয়া মুখের দিকে চেয়ে নিজের রা*গ নিয়ন্ত্রণ করছে। ইচ্ছে করছে ভা*ঙচুর করতে। ক্লিনিকের মালিকের পুত্রবধূ আহত তাই সকলে বেশ দৌড়াদৌড়ি করছে। রাহিন থানায় ডিজি করে হাসপাতালে ফিরে এসেছে। ইকবাল মাহমুদ খবর শুনে দৌঁড়ে এসেছেন। ডান বাহুর মাং*স বেশ কিছুটা কে*টেছে। কপাল ভালো হাড় পযর্ন্ত পৌঁছাতে পারেনি। ইকবাল মাহমুদ বেশ যত্ন করে আলোর হাতে সেলাই করছেন। পাশে ছেলের দিকে চেয়ে উনি শান্ত আছেন। আর যাইহোক ছেলেটা এখনো ত্যাড়ামি করে চলে যায়নি এটাই শান্তি। আলো যন্ত্রণায় কাতর তবুও এক চোখ খুঁলে শ্রাবণের দিকে চেয়ে বলল,

> আপনাদের চ্যানেলের জন্য আমার কাছে একটা চমৎকার ফুটেজ আছে। পাবলিক করে দিন প্লিজ। ম*রে যাওয়ার আগে একটু শান্তিতে চোখ বন্ধ করি।

আলোর কথা শুনে শ্রাবণের কপালে ভাজ পড়লো। হাতে সামান্য আটটা সেলাই পড়লে মানুষ মা*রা যায় ওর জানা ছিল না। মেয়েটা ভয়ে ভুলভাল বকছে তাই ধমক দিলো,

> কথা বললে এখানে টেপ আছে না? মুখ আটকে দিব বেয়া*দব। কোচিং শেষ হয়েছে ছয়টার সময় অথচ বাড়ি ফিরছো আটার দিকে। দুই ঘন্টা কোথায় ছিলে? পড়াশোনার নামে বাইরে হাওয়া খেতে যাওয়া না? বাড়িতে চলো সব বের করবো ফা*জিল মেয়ে।

আলো ধমক শুনে ভয়ে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে থাকলো। এই লোকটা ধমক ছাড়া কিছু পারেনা। অহেতুক কথা বলে লাভ নেই। সারাদিন প্রায় ইশাকে দেখা হয়নি। ভীষণ মনে পড়ছে। ইতিমধ্যে সেলাই দেওয়া শেষ। ইকবাল মাহমুদ আলোকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে বললেন,

> এখন ঘুমের প্রয়োজন। অতিরিক্ত ভয় আর আতঙ্ক থেকে জ্ঞাত হারিয়েছিল। ক্ষতস্থান তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। বিশেষ অসুবিধা হবে না।
আলোকে কেবিনে রেখে সকলে বাইরে বের হলো। শ্রাবণ ওকে রেখে রাহিনের সঙ্গে কথা বলছিলো হঠাৎ আলোর বলা কথাগুলো ভেবে তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর ব্যাগ চেক করে ফোন বের করলো। ফোনে লক দেওয়া নেই। শ্রাবণ ভিডিও অন করে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। একবার ঘুমন্ত আলোর মুখের দিকে চেয়ে বলল,

> মেয়েটা ইচ্ছে করলে পূর্বে দৌড়ে পালাতে পারতো। উদ্ভট বুদ্ধি নিয়ে চলে এই মেয়ে।

রাহিন পাশ থেকে বলল,

> ডিজি করেছি পুলিশ সকালে আসবে। ওরা পালিয়েছে। তাছাড়া পুলিশ প্রমাণ চাইছে। কি করবি?
শ্রাবণ ভিডিও দেখিয়ে বলল,

> এটা আমাদের চ্যানেল থেকে আপলোড কর। তারপর বাকীটা আমি দেখে নিব।

শ্রাবণ একে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হলো। মেজাজ চড়ে আছে। কয়েকজনকে ফোন করে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলো।
*****
পাখির কিচিরমিচির শব্দে আলোর ঘুম ভাঙলো। শহরের ব্যস্ত পরিবেশে পাখির ডাক ভাবা যায়না। আলো চোখ খুঁলে জানালার দিকে চাইলো। ওদিকে ছোট একটা মেহেগুনি বাগান। হঠাৎ কারো ডাকে ওর ধ্যান ভাঙলো। একজন মহিলা ওর পাশে বসে আছে। আলো চেনার চেষ্টা করে উত্তেজিত হয়ে বলল,

> রেবার আম্মু না আপনি? আন্টি আপনি কখন এসেছেন? বলবেন না এসেছে? অদ্ভুত তো।

আলো কয়েকটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে উঠার চেষ্টা করলো। ভদ্রমহিলা ওকে সাহায্য করলো উঠতে। আলো বালিশে হেলান দিয়ে বসলো। কপালের ডান দিকে চিনচিন করে যন্ত্রণা করছে। সামান্য জ্বর আছে।শরীর জুড়ে চাপা ব্যাথা। হঠাৎ দৌঁড়ানোর জন্য ব্যাথা হয়েছে। আলো পূণরায় বলল,

> আন্টি কেমন আছেন? বাড়িতে অসুবিধার জন্য আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। দুঃখিত আন্টি।

ভদ্রমহিলা ওড়নার আচলে চোখ মুছে বলল,

> মা উত্তেজিত হচ্ছো কেনো? আমি সবটা শুনেছি। একটা কথা বলতে এসেছিলাম। তোমার আঙ্কেল বাইরে অপেক্ষা করছে। শুনো মা, আমাদের মেয়েটার কপালে যা ছিল হয়েছে। নতুন করে আমি আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক সেটা চাইছি না। তুমি আর ঝামেলা করোনা। ওরা ভীষণ খারাপ মানুষ। অনেক পাওয়ার আছে। টাকার জোরে বেঁচে যাবে তারপর আবার তোমার ক্ষতি করতে আসবে। তারথেকে তুমি কোর্টে মিথ্যা সাক্ষী দাও। আমার অনুরোধটা রাখো প্লিজ।

আলো হতবাক চোখে ভদ্রমহিলার দিকে চেয়ে আছে। একজন মা কিভাবে এরকম কথা বলতে পারে? সন্তানের হ*ত্যা*রকারীর শাস্তি না দিয়ে তাকে বাঁচাতে অনুরোধ করছে। কিন্তু কেনো? আলো উত্তেজিত হয়ে বলল,

> আন্টি কি বলছেন আপনি? গতকাল ওরা আমাকে হু*মকি দিতে এসেছিল কিন্তু আমি একটুও ভয় পাচ্ছি না। তাছাড়া ওদেরকে ছেড়ে দিলে আবারও নতুন করে কারো ক্ষতি করতে আসবে। ক্ষমা করবেন আমি পারবো না। রেবা আমার জুনিয়র ছিল।ভীষণ স্নেহ করতাম। আমি পারবোনা ওর সঙ্গে অন্যায় করতে। আপনি এই অনুরোধটা করবেন না।

আলোর পরিস্কার কথা। ভদ্রমহিলা বোঝানোর জন্য চাপা কণ্ঠে বলল,

> ওরা বিশ লক্ষ দিতে চেয়েছে। তোমার সঙ্গে যা হয়েছে ওটা নিছক দুর্ঘটনা। জাষ্ট ভয় দেখাতে এসেছিল কিন্তু তুমি রাগিয়ে দিয়েছো। তাই ওরকম করে ফেলেছে। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। তুমি রাজি থাকলে আজকের মধ্যে ক্যাশ দিয়ে যাবে। মেয়েতো ম*রেই গেছে। কখনও আর ফিরে আসবে না। তাই ঝামেলা না করে টাকার বিনিময়ে আপোস করে নিয়েছি। এখন তুমি রাজি হলে ঝামেলা শেষ। যেখানে আমি নিজে রাজি হয়েছি সেখানে তোমার কথা বলা উচিত না। বুঝেছো?

আলোর হাসি পাচ্ছে। পৃথিবীতে টাকার বিনিময়ে সন্তানের লা*শ বিক্রি হচ্ছে। টাকার কি মহিমা? একজন জঘণ্য ধ*র্ষক খু*নি টাকা দিয়ে আইনের চোখ বন্ধ করে দিচ্ছে। কথা না শুনলে আবারও নতুন একটা হ*ত্যা। এদের কাছে জীবনের দাম কোথায়?সভ্য মানুষ কিভাবে অ*সভ্যের মতো আচরণ করতে পারে ওর জানা নেই। আলো মাথা নিচু করে বলল,

> আমার টাকার কোনো প্রয়োজন নেই আন্টি। আমি কিছুতেই মিথ্যা বলতে পারবো না। ওরা আমার চোখের সামনে রেবার লা*শ গাড়ি থেকে ছু*ড়ে দিয়েছিল আমি দেখেছি। সত্যি বলে যদি আমার মৃ*ত্যু হয় তবুও বলবো। আপনি আসুন আমার মাথায় যন্ত্রণা করছে।

আলো কথা শেষ করতে পারলনা রেবার বাবা ভেতরে প্রবেশ করলো। ভদ্রলোক বেসরকারি ব্যাংকে জব করেন। লোকটা বলল,

> দেখো মা ঝামেলা করোনা। যেখানে আমি নিজে আমার মেয়ের কেস তুলে নিচ্ছি সেখানে তোমার কি সমস্যা? টাকা দিচ্ছে নিয়ে চুপ থাকো। তোমার বাবাকে সাহায্য করতে পারবে। ভদ্রলোক কতটা কষ্ট আছে।

> আমার বাবা আর যাইহোক আপনার মতো সন্তানের লা*শ বিক্রি করে খাওয়ার মতো মন মানুষিকতা রাখে না। আপনারা যদি এসব বলতে আসেন তাহলে চলে জান। আমার কথা বলতে ইচ্ছা করছে না।

শ্রাবণ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। গতকাল রাতের ভিডিওটা ইতিমধ্যে ভাইরাল। মানুষের ফোনে ফোনে পৌঁছে গেছে। মহিলা কলেজের সামনে দশটার পরে ছাত্রছাত্রীরা মিছিলের আর রাস্তা অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে । ওরা আবারও খে*পে উঠেছে। বাংলাদেশের আইনে যেখানে বলা হয়েছে উপযুক্ত প্রমাণ সাক্ষী থাকলে নারী নির্যাতনকারী ধ*র্ষকদের বিচার সঙ্গে সঙ্গে সম্পূর্ণ হবে সেখানে আট মাস পেরিয়ে গেছে তবুও কেসের শুনানি হলো না। চুড়ান্ত চার্চশির্ট পযর্ন্ত এখনো থানা থেকে কোর্ট অবধি পৌঁছাতে পারেনি। দেশেরের আইনের উপরে এই জন্য মানুষের আস্থা কম। বাইরে ঝামেলা হচ্ছে আর এই দুজন এসেছে মেয়ের খু*নিদের সাহায্য করতে। পৃথিবীর ইতিহাসে এটা বিরল কিছু না। অনেকেই আছে ভাবেন মৃ*ত্যু আল্লাহ চেয়েছিল তাই হয়েছে। আমরা টাকার বিনিময়ে আপোষ করে ঝামেলা মুক্ত করি কিন্তু এইটা ভাবেনা অপরাধীকে সুযোগ দিলে এমন অপরাধ সমাজে অহরহ হবে। শ্রাবণ চুপ থাকতে পারলোনা। সোজাসুজি এসে ভদ্রলোকের কলার ধরে বলল,

> অ*মা*নুষ,জা*নো*য়ারের বাচ্চা তুই বাবা হওয়ার যো*গ্য না। ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েটাকে ক*বরে রেখে এসে শান্তিতে তোর ঘুম হয় কিভাবে? নাকি তুই চাইতি মেয়েটা পৃথিবীতে না থাকুক? বাড়িতে কুকুর পাললেও মায়া লাগে আর নিজের মেয়ের জন্য তোর মনে মায়া নেই কেন? তুই এসেছিস অ*পরা*ধীর জন্য সুপারিশ করতে?

শ্রাবণ নাক বরাবর ঘু*সি বসিয়ে দিবে সেই মূহুর্তে আলো এসে ওর হাতটা চেপে ধরলো। রাহিন বাইরে ছিল সেও দৌঁড়ে এসেছে। আলো হঠাৎ বিছানা ছাড়ার দরুন মাথা ঘুরছে কিন্তু এখন সেদিকে তাঁকানোর সময় নেই। আলো উত্তেজিত হয়ে বলল,

> আরে কি করছেন? ছেড়ে দিন। মুখে বলা যায় না? আপনি তো দেখি সত্যি সত্যি মহা বখাটে। ছাড়ুন বলছি।

শ্রাবণ ছাড়লো না বরং অকথ্য ভাষায় কিছু গা*লিগা*লাজ ছুড়ে দিয়ে ভদ্রলোকের কালার টেনে শার্টের বোতাম ছিঁ*ড়ে দিলো। আলো হতভম্ভ শ্রাবণের আচরণে। রাহিন আটকানোর চেষ্টার ত্রুটি রাখেনি কিন্তু ওর শক্তির কাছে পারছে না। টানাটানির মধ্যে আলোর হাতে বেশ জোরে আ*ঘাত লেগেছে। ব্যান্ডেজের উপর থেকে র*ক্ত দেখা যাচ্ছে। আলো ব্যা*থাতে মুখটা কুচকে ওদেরকে ছেড়ে দিয়ে ফ্লরে বসে পড়লো ঠিক তখনই শ্রাবণের হুশ হলো। রেবার মা নাক টেনে টেনে কাঁদছে। শ্রাবণ লোকটাকে ছেড়ে দিয়ে আলোকে ধরলো। ধমক দিয়ে বলল,

> তুমি উঠে এসেছো কেনো? ওকে ছা*ড়বো ভেবেছো? ওর কত দ*ম আছে সেটাই দেখবো। শ্রাবণ মাহমুদের বউকে টাকা দিয়ে কি*নতে এসেছে।

শ্রাবণ লোকটাকে ছেড়ে দিতেই রাহিন ওদেরকে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো। ভদ্রলোকের আগে থেকে জানা আছে ওর আচরণ সম্পর্কে। উনি জানতেন না শ্রাবণ বাইরে থেকে সবটা শুনছে। নয়তো এহেন বদ বুদ্ধি কখনও করতেন না। ওরা যেতেই আলো চোখ রাঙিয়ে বলল,

> এবার বুঝতে পারছি শশুর মশাই কেনো এই পিচকে শর্ত মেনে আমার ঘাড়ে ঝুলিয়ে দিয়েছেন। বাপরে বাপ আপনার মুখের ভাষা শুনলে ম*রা মানুষ জীবিত হয়ে দৌঁড় দিবে। বাবার বয়সী মানুষ,ছেলের সিঙ্গাপুর যাচ্ছে ওর ভবিষ্যতের চিন্তা করে এহেন প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। অপরাধীরা ভিকটিমের দুর্বলতার সুযোগ নিতে চাইছে এইটুকু বোঝার বুদ্ধি নেই আপনার?

আলো বকাবকি করছে। শ্রাবণ শুনেও শুনছে না। মনোযোগ দিয়ে আলোর হাতের ব্যান্ডেজ খুঁলছে। মনে হচ্ছে আপাতত এটাই পৃথিবীতে ওর প্রধান কাজ। পকেটে ফোন বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আলোর মাথা গরম হয়ে উঠলো। হাত টেনে নিয়ে বলল,
> ফোনটা ধরে আমাকে উদ্ধার করুন। এহেন ছেলেমানুষি বুদ্ধি নিয়ে আপনি টিভি চ্যানেলের জন্য লাইসেন্স পাবেন? একটুও ধৈর্য্য নেই। ভদ্রলোকের হয়তো টাকার সমস্যা আছে। ছেলে বাইরে যাচ্ছে। চাপে পড়ে এসব করছে।

আলোর কথা শেষ হলোনা শ্রাবণ মাথা তুলে চাইলো। কপালের ভাজে ভাজে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। নাকের ডগা লাল বর্ণ ধারণ করেছে। রাগ নিয়ন্ত্রণ করার যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে শেষমেশ মুখ খুঁললো,

> বলেছিলাম না একদম বউবউ ভাব নিয়ে আমার কাছে আসবে না? এইটুকু মেয়ে হয়ে আমাকে শাসন করতে এসেছো? ভদ্রলোকের টাকার অভাব তোমাকে কে বলেছে? ওর অভাব না বরং স্বভাব খারাপ। লোভে চোখ চকচক করছে। আর অপেক্ষা করো রামিম আর ইদ্রিসের কি হা*ল করি। গতকাল রাত থেকে পলা*তক। কোথায় পালাবে? একটা আলোকে মা*রতে এসেছিলো না? আজ শহর জুড়ে আলোর মেলা বসবে। কতজন আলোর মু*খ ওরা বন্ধ করবে? আমার চ্যানেলে ওদের ছবি প্রতি মিনিটে মিনিটে দেখাচ্ছে। দেখবো সমাজ পতিরা কিভাবে ক্ষমতা দিয়ে বেঁ*চে যায়।

শ্রাবণের চোখে মুখে আ*গুন ঝরছে। আলোর মুগ্ধ হয়ে চেয়ে আছে। মূহুর্তের মধ্যে হৃদয় প্রশান্তিতে ছেয়ে গেলো। একটুর জন্য ভেবেছিল রেবা হ*ত্যার সঠিক বিচার পাবেনা কিন্তু এখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। দুজনে চুপচাপ ছিল হঠাৎ রাহিন ভেতরে প্রবেশ করলো। থপ করে সোফায় বসে পড়ে বলল,

> কি খেল দেখালি ভাই,আমি পুরো শেষ। ভদ্রলোক বারবার হু*মকি দিতেছিলো থানায় তোর নামে মামলা করবে। আমি অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়িতে পাঠিয়েছি। যাইহোক ভাবির বাবা মা এসেছে বাইরে। ওরা আঙ্কেলের সঙ্গে কথা বলছে।

আলো মুখটা কালো হয়ে উঠলো। বীণা এসব পছন্দ করেনা। ফায়জুতো আরও নিষেধ করে। কলেজের ঘটনা নিয়ে প্রচুর অশান্তি করেছিলো। আবারও ঝামেলা হবে কে জানতো? শ্রাবণ ব্যান্ডেজ চেঞ্জ করে বলল,

> চুপচাপ বাড়িতে চলে যাবে। আজ থেকে বাইরে কোচিং করা বন্ধ। আমি একজনকে ঠিক করে দিবো, বাড়িতে গিয়ে পড়িয়ে আসবে। সমস্যা হবে না। যতদিন কে*স চলবে ততদিন তোমার ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ।

আলো চমকে উঠলো। বাড়িতে বসে থাকার মানে হয়? নিজের সহপাঠি ভাইবোনেরা রাস্তায় নেমেছে। রোদে পুড়ে মি*ছিলে অংশ নিচ্ছে সেখানে ও আয়েশ করে ঘরে বসে থাকবে কখনও না। আলো প্রতিবাদ করলো,

> আপনি বলেছেন না আমার মতো হাজারো আলো আজ রাস্তায় নামবে? তাহলে আমি কেনো ঘরে থাকবো? আলোরা নিভে যায়না। একটা আলো নিভে গেলে হাজারো আলো জ্বলে উঠবে। সুযোগ থাকলে নিশ্চয়ই আমি নিভে গিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করে যাবো।

শ্রাবণ থমকে গেলো। এই মেয়ের মৃ*ত্যুতে ভয় নেই কেনো? বুক ভার হয়ে আছে। ফিসফিস করে বলল,
> আমার ঘরে এটাই আলো। সেটা নিভে গেলে ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে উঠবে। আপাতত আমি সেটা চাইছি না। চুপচাপ বাবার সঙ্গে বাড়িতে যাবে। ইশা একা আছে। আম্মা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

শ্রাবণ ইচ্ছা করে ইশার নামটা বললো। রাহিন অবাক হয়ে চেয়ে আছে আলোর দিকে। মেয়েটা খুব সাধারণ কিন্তু কথাগুলো কি বললো? শ্রাবণ ব্যান্ডেজ ঠিকঠাক করে বিছানা থেকে নামতেই ফোন আসলো। রিসিভ করে ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেলো না তবে ও উত্তর দিলো,

> জাষ্ট মুখে কয়েকটা ঘু*সি দিবি যাতে থেত*লে যায়। ওর পাচে যাওয়া মুখ দিয়ে শুধু পচা পচা কথা বের হয়। আমার বমি আসে।

শ্রাবণের কথা শুনে আলো চোখ বড় বড় করে তাঁকিয়ে আছে। এই লোকের ভাষা কমনা আবার আরেকজনকে বলছে।যেখানে নিজের ভাষার ঠিক নেই সেখানে অন্যের মুখের শা*স্তি দিতে চাইছে।কেমন লাগে? আলোকে এভাবে তাঁকিয়ে থাকতে দেখে রাহিন দাঁত বের করে বলল,
> নতুন শুনছো তাই এমন লাগছে। চিন্তা নেই অভ্যাস হয়ে যাবে।
আলো সত্যি সত্যি হতাশ। এই খেপাটে লোকের সঙ্গে আজীবন কিভাবে থাকবে?

চলবে