শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-০৭

0
255

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে :লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৭

এলোমেলো বাদামি কেশ পিঠের উপরে লুটিয়ে আছে। চোখ জোড়া রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে মেয়েটার। শ্রাবণ কয়েক সেকেন্ড চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,

> একটিবার খোঁজ নিতে পারতি। আমি কি তোর সঙ্গে কোনো অন্যায় করেছি? কেনো এমন করলি? আঙ্কেল আন্টি তোর খবর আমাকে বলতে চাইনি অথচ কতবার খোঁজ নেবার চেষ্টা করেছি। সমস্যা কি তোর? হঠাৎ এসে জানতে চাইছিস আমি বিয়ে করেছি কিনা।

শ্রাবণ রেগে আছে কিন্তু আপাতত মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সামনে বসে আছে কুহেলী।ওর ছোটবেলার বন্ধু। এক সঙ্গে স্কুল কলেজ পযর্ন্ত পড়েছিলো। মেয়েটা ঢাকা মেডিকেলে তৃতীয় সেমিস্টারে থাকা অবস্থায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল। যদিও কারণ ছিল আপাতত সেসব বলতে চাইছে না। শ্রাবণ পূণরায় বললো,

> কি সমস্যা? কথা বল। কান্নাকাটি করলে কি সবটা ঠিক হয়ে যাবে? কোথায় ছিলি বলবি?

কুহেলী নাক টেনে বলল,

> শ্রাবণ তুই পারলি আমাকে ঠকাতে? আমি শুধুমাত্র তোর কথা ভেবে বিদেশের মাটিতে পড়ে ছিলাম। তুই জানিস না,আমি ডাক্তার হয়ে শুধুমাত্র তোর জন্য ফিরে এসেছি। কেনো এমন করলি তুই? আমি একটা ভুল করেছিলাম কিন্তু তুই তো অন্যদের মতো না। সামাজের তোয়াক্কা করিস না। শুনেছি বাচ্চাসহ একটা মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছিস, তাহলে আমাকে কেনো না? আমার অপরাধ কি ক্ষমার অযোগ্য ছিল? আঙ্কেলতো চেয়েছিলো তোর আর আমার বিয়েটা হোক। শ্রাবণ ভীষণ ভালোবাসি তোকে। প্লিজ ফিরিয়ে দিস না। এতোদিন প্রচুর কষ্ট পেয়েছি আর দিসনা। ম*রে যাব আমি।

কুহেলী কথা বলতে করতে কাঁদছে। পরনে কালো জিন্স আর লাল রঙের টিশার্ট। মেয়েটা দেখতে বরাবর সুন্দর কিন্তু ওর কিছু কাজ অন্যরকম। শ্রাবণের চোখ জ্বলছে। চাপা কণ্ঠে হুঙ্কার ছাড়লো,

> বে*হুদা কথাবার্তা বলছি না। আমাকে তোর এতোটাই যদি বিয়ে করা সখ ছিল তাহলে পালিয়ে গিয়েছিলি কেনো? অহেতুক আমার মাথা খারাপ করবি না। তোর সম্পর্কে জানতে আমার কিছু বাকী নেই। বন্ধু হিসেবে আমি চেয়েছিলাম তোর পাশে থাকতে কিন্তু তুই কি করলি? এখন বলছিস আমাকে বিয়ে করবি,অদ্ভুত কথাবার্তা। আমার কি টাকায় গা কামড়াই? একটা বউয়ের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে পারছি না আবার তোকে বিয়ে করে ম*র*বো আমি? চুলোচুলি আমার পছন্দ না। শোন ঝামেলা করবি না। তোকে খোঁজ করেছি তোকে ভালোবেসে না বন্ধু হিসেবে।

> আমাকে ভুলভাল বোঝাতে আসবি না শ্রাবণ। আমি ভালো করে জানি তোর এমন বিগড়ে যাওয়া পেছনে কারণ শুধুমাত্র আমি। তোর স্বপ্ন টিভি চ্যানেল বা রিপোর্টারের মতো ফালতু বিষয় ছিল না। আমি কি বলতে চাইছি আশাকরি বুঝতে পারছিস।

শ্রাবণ বিরক্ত হচ্ছে। মেজাজ বেশিক্ষণ ঠিক রাখতে পারবে কি সন্দেহ আছে। ড্রয়িং রুমে ওদের কথা চলছে। মধ্য রাত হলেও শহরে এটা কোনো বিষয় না।ইসহাক চৌধুরী কুহেলীর বাবা,ভদ্রলোক প্রাক্তন আর্মি অফিসার। ওদের কথার মধ্যে ভদ্রলোক জাদরেল গোফ নাড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে তরতর করে নিচে নেমে আসলেন। উনার মিসেস পেছনে আছেন। উপরে দাঁড়িয়ে উনি সবটাই শুনেছেন তাই কুহেলীর পাশে বসতে বসতে বললেন,

> দেখো বাবা যা হয়েছে সেসব এখন বলে ঝামেলা বাড়িয়ে কাজ নেই। মেয়েটা তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে। আমি চাইছিলাম তোমাদের চার হাত এক করে দিতে। মেয়েটা বড্ড একরোখা। তুমি বললে,তোমার বাড়িতে আছে ওই মেয়েটাকে উপযুক্ত পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমার অসুবিধা নেই। আমার একমাত্র আদরের মেয়ে চেয়েছে আমি না করেছি এমনটা হয়নি। তুমি সবটা জানো।

শ্রাবণের গরম লাগছে। ঠান্ডার মধ্যেও কেমন অসহ্য অনুভব হচ্ছে তাই শার্টের বোতাম একটা খুঁলে দিয়ে বলল,

> আপনার এবং আপনার মেয়ের দুজনের কথা সবটাই আমার জানা আছে আঙ্কেল। আপনি হচ্ছে মিটকে শ*য়*তান আর আপনার মেয়ে তার ডাবল শ*য়তা*ন। একজন আইনের লোক হয়ে আইন মানেন না কিসের বা*লে*র আর্মি অফিসার ছিলেন আপনি? ভালোবাসা দেখাচ্ছেন আমি কি আমার বাপের চৌদ্দ নাম্বার ছেলে? আমি ছেলে হয়ে কখনো কোনো মেয়ের সঙ্গে লুতুপুতু করে বেডরুমে যেতে পারিনি অথচ আপনার মেয়ে ঠিকই চলে গেছে। মানলাম ভালোবাসা থেকে এহেন কাজটা করেছে। ওকে কতবার বুঝিয়েছি নীড় ওকে বিয়ে করতে রাজি আছে। বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চাইছে অথচ ও আমাকে বললো যা করেছে সবটা ভুল থেকে হয়েছে। ও নীড়কে না আমাকে ভালোবাসে। মানে কি ভাই? এটাতো চরিত্রের সমস্যা। আমি বারবার যোগাযোগ করতে চেয়েছি শুধুমাত্র ওর বাচ্চাটার জন্য। ওর পাপের শাস্তি বাচ্চাটাকে কেনো দিবে সেটাই বোঝাতে। এখন আইছেন বাপ বেটি মিলে আমার ঘাড়ে উঠতে?

শ্রাবণ রাগে ফুলছে। এমনিতেই ওর কথাবার্তা হয়না। বেপরোয়া ভাব আছে। সোসাইটির খুব কম মানুষ আছে যার সঙ্গে ওর ঝামেলা হয়নি। সহজে কেউ শ্রাবণকে ঘাটাতে আসে না। ইসহাক সাহেবের কপালে ভাজ পড়েছে। শ্রাবণ বরাবর এমন ত্যাড়া কিন্তু বাবার সামনে মেয়েকে নিয়ে এমন মন্তব্য কে করে? উনি মানতে পারলেন না। প্রতিবাদ করলেন,

> মানছি আমার মেয়ের চরিত্রের ত্রুটি আছে যতদূর শুনেছি তুমি যেই মেয়েটিকে বিয়ে করেছো তার একটা বাচ্চা আছে। অবিহিত মেয়ের বাচ্চা আছে সেতো তবে আমার মেয়ের মতোই।

শ্রাবণ ওষ্ঠ কামড়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে তাচ্ছিল্যপূর্ণ হেসে উত্তর দিলো,

> মেয়েকে বুঝিয়ে বলবেন তানা আমার স্ত্রীর সঙ্গে তুলনা করতে আসছেন। কথায় বলে বাপ যেমন তার ছা পাও তেমন। আমার স্ত্রীর একটা মেয়ে আছে আর আমি সেই মেয়ের বাপ ঠিক আছে? আপনার যা ইচ্ছা হয় ভেবে নিন তবে সিউর থাকুন আপনার এই অকর্মা মেয়েকে আমি কিছুতেই বিয়ে করছি না। আমার বাপের বিশাল কোটিপতি নেই যে আপনার মেয়েকে আহ্লাদ করে গলাই ঝুলিয়ে ফেলবো। খুব ফ্রেশ মাইন্ড নিয়ে পুরাতন বন্ধুর খোঁজ নিতে এসেছিলাম। একা পেয়ে যেই ব্যবহারটা আপনারা বাপ মেয়ে মিলে করলেন? আজীবন মনে থাকবে। দ্বিতীয়বার এখানে আসার মতো ভুল আমি করছি না।

কুহেলী অবাক চোখে শ্রাবণের দিকে চেয়ে ছিলো। এখানে আর আসবে না শুনে চুপচাপ থাকতে পারলোনা। কেঁদে উঠে বলল,

> আমরা কেমন ব্যবহার করেছি শ্রাবণ? যা অপমান করার ছিল সবটাই তুই করেছিস। আমি শুধুমাত্র ভালোবাসি তাই তোকে অনুরোধ করতে ডেকেছি। তোর বিয়ের খবর শুনে আমি আমেরিকা থেকে সন্ধ্যায় বাংলাদেশ এসেছি আর তুই এমন করছিস? আমার সামনে ফিউচার আছে। আমি ইচ্ছা করলে তোর বাবার ক্লিনিকের দায়িত্ব নিতে পারবো কিন্তু ওই মেয়েটাকি পারবে? সেকি আমার থেকেও সুন্দরী?

> তোকে আসতে কি আমি অনুরোধ করেছিলাম? আর তোর ফিউচার ধুয়ে কি আমি পানি খাবো? ছ্যাঁচড়ামি করবি না আমার পছন্দ না। দেশে ছেলের অভাব যে আমার পেছনে হাত ধুয়ে পড়েছিস? আমার স্ত্রী সম্পর্কে একটা শব্দও তুই উচ্চারণ করবি না। আমার পছন্দ না অপবিত্র মুখে আলোর নাম উচ্চারণ হোক। আমার ঘরে যে আছে সে আমার অর্ধাঙ্গী। ভালো হোক অথবা খারাপ সে আমার বুঝ,তোদের না। সারাদিন নানারকম প্যারা ভেবেছিলাম রাতে বাচ্চাটাকে নিয়ে ঘুমাবো তোর জন্য সব শেষ। আমারও দোষ কমনা। ঢং করে দৌঁড়ে এসেছি। জন্মের শিক্ষা হয়েছে। আমার মুখ ভালো না তুই ভালো করে জানিস। আবারও যদি আমাকে নক করিস তবে সত্যি উল্টোপাল্টা গালিগালাজ করবো তখন সহ্য করতে পারবি না। ঝামেলা আমার পছন্দ না। বখাটে হিসেবে ভালো নামডাক আছে। বিরক্ত করলে হাত আর মুখ দুটোই চলে। আমি আসছি।

শ্রাবণ যেভাবে এসেছিল সেভাবেই বেরিয়ে গেলো। মেজাজ চরম খারাপ। আজ দুইদিন পর বাড়িতে ফিরে ভেবেছিল ঘুমাবে অথচ সব গুড়েবালি। কুহেলী কান্নাকাটি করছে প্রচুর। ইসহাক সাহেব থম মেরে বসে আছে। মেয়ের জন্য এতোটা অপমানিত হতে হবে ভাবতে পারছেন না। কুহেলী নীড় নামের একটা ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। সম্পর্কটা বেশ গভীর হয়ে উঠে। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হওয়ার দরুন শাসন বারনের তোয়াক্কা করতে হয়নি। ওদের সম্পর্ক যখন মাঝামাঝি তখন হঠাৎ ইসহাক সাহেব শ্রাবণের বাবার সঙ্গে আলাপ করে ওদের বিয়ে ঠিক করেন। ততদিনে কুহেলী মা হতে চলেছে। শ্রাবণের প্রতি ওর আগে থেকে নজর ছিল কিন্তু পাত্তা না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিল। হঠাৎ আশার আলো দেখে বাচ্চা এবোর্ট করতে উঠেপড়ে লাগে আর নীড়ের সঙ্গে ব্রেকআপ করে ফেলে। শ্রাবণ জানতো না। পরে একদিন নীড় ওর সঙ্গে যোগাযোগ করে সবটা বলে। শ্রাবণ চেয়েছিল ওদের বিয়েটা দিতে কিন্তু কুহেলী জিদ করে দেশ ছাড়ে। যোগাযোগ বন্ধ করে। শ্রাবণের সঙ্গে ওর কোনো ঝামেলা ছিল না। বরং ওরা ভালো বন্ধু ছিল।

ইসহাক সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন,

> শ্রাবণের আশা ছেড়ে দাও। আমার পছন্দসই ছেলেকে বিয়ে করো সুখে থাকবে। বে*য়া*দব ছেলে আমার পছন্দ না। ইকবালের মতো ভালো মানুষের ঘরে এহেন ছেলে ভাবতে পারছি না।

কুহেলী হতাশ হলো। কিভাবে শ্রাবণকে পাবে ভাবতে পারছে না। সবটা কঠিন হয়ে উঠেছে। অনেক আগে বাংলাদেশ ফিরে আসা উচিত ছিল। প্রশ্ন জাগলো,আচ্ছা তখনও কি শ্রাবণ কোনো অজুহাত দেখাতো?
*******
ইশা তুলির সঙ্গে ওর কক্ষে আছে। আলো শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে চা খেতে বসেছে। শ্রাবণ গতকাল রাতে বাইরে বের হয়েছিল আর ফিরে আসেনি। যদিও লিমা বেগমের কাছে ফোন করে বলেছে বিষয় কাজে রাহিনের সঙ্গে বাইরে আছে। সকালে ফিরবে। আলোর এতে কোনো অসুবিধা নেই। আলো চায়ের কাপে চুমুক দিতেই কলিং বেল বেজে উঠলো। কাজের মেয়ে ইলু গিয়ে দরজা খুঁলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে হুড়মুড় করে কয়েকজন লোক ভেতরে প্রবেশ করলো। আলো উঠে দাঁড়ালো। হাবিবের মা, মামি,ননদ আর চাচাতো ভাই এসেছে। আলো উঠে গিয়ে বলল,

> এখানে কি প্রয়োজন আপনাদের?

হাবিবের মা ছলছল চোখে বললেন,

> আমার হাবিব মেয়ের জন্য খুব কান্নাকাটি করছে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমরা ইশাকে নিতে এসেছি।

আলো চমকালোনা বরং হাসলো। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে বলল,

> কিন্তু আন্টি আপনার ছেলের নামে যে নারী নি*র্যাতন আর হ*ত্যা*র জন্য মামলা করা হয়েছে ওইটা জানেন না? আপনার ছেলে কোন হাসপাতালে আছে বললে সুবিধা হতো। পুলিশ দুদিন ধরে খোঁজ করছে অথচ লাপাত্তা। আমার বুবুকে মে*রে শান্তি হয়নি আবার এসেছেন আমার ইশার দিকে নজর দিতে? ছেলেকে উস্কা*নি দিয়ে পুত্রবধূ হ*ত্যা করেছেন সবটা ক্ষমা পেয়ে যাবেন? আপনার মেয়ে যে সারা বছর শশুর বাড়িতে না গিয়ে বাপের বাড়িতে পড়ে থেকে ভাইয়ের বউদের নিয়ে কুটিলতা করে ঝগড়া লাগাতে উস্তাদ সেসবের সাজা হবে না? জানেন ভেবেছিলাম ক্ষমা করে দিবো কিন্তু শ্রাবণ সাহেব নাকি মানতে রাজি হয়নি। উনার ধারণা আপনারা ইশাকে নিতে আসবেন তাই আগে থেকে ব্যবস্থা নিয়েছেন। সবটাই কপাল। মা আপনার ফোন থেকে থানায় একটা ফোন করুনতো। ওদেরকে তাড়াতাড়ি আসতে বলবেন।

আলো বেশ সিরিয়াস। লীমা বেগম সত্যি সত্যি ফোন বের করে কল করলো তবে থানার নাম্বারে না শ্রাবণকে। ফোন রিসিভ হলো না কারণ শ্রাবণ ইতিমধ্যে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। আলোর শেষে কথাগুলো ওর কান অবধি পৌঁছে গেছে। শ্রাবণ এগিয়ে এসে সোফায় বসতে বসতে বলল,

> আমি জানতাম তাইতো আগে থেকে ব্যবস্থা করে রেখেছি। ইশার বর্তমান অভিভাবক আমার শশুর শাশুড়ি। আমি ওদের অনুমতি নিয়ে ইশাকে দত্তক নিয়েছি। পেপার পত্র যা লাগবে বলবেন। আর আপনাদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাড়িতে নোটিশ যায়নি?

হাবিবের মা কেঁদে ফেললো। ভয়ে মুখটা চুপসে গেছে। মেয়ের বুদ্ধিতে আজ ইশাকে নিয়ে আসতে হয়েছে বিধান মেয়ের দিকে কটমট দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,

> বাবা ও সবটা মিথ্যা বলছে । বিশ্বাস করো বউমাকে আমি মেয়ের মতো ভালোবাসতাম। হাবিবের সঙ্গে ঝামেলা করে যে মেয়েটা চলে আসবে বুঝতে পারিনি।

শ্রাবণ বিরক্ত হলো। সারারাত জেগে ছিল। এখন ঘুমাতে হবে। বাড়িতে এসে অশান্তি হবে বুঝতে পারেনি। জানলে আসতো না।

> আন্টি বাড়িতে চলে জান। যা হওয়ার ছিল হয়েছে। অহেতুক আমার মেয়েকে নিয়ে ঝামেলা করবেন না। এই যে বারবার আমার বাড়িতে আসছেন আশেপাশের মানুষ শুনছে। মেয়াটা বড় হলে ওর উপরে প্রভাব পড়বে। আমাকে পর ভাববে যা আমি চাইছি না। আপনারা আসুন। আপনাদের মুখটা যতদিন বন্ধ থাকবে ততদিন আমিও চুপচাপ থাকবো। সবটা আপনাদের উপরে নির্ভর করছে। আমি আসছি। মা ওদেরকে নাস্তা দিতে হবে না। অহেতুক সময় নষ্ট হচ্ছে। আন্টি গেলাম তবে। ঘুম পাচ্ছে।

শ্রাবণ কথা শেষ করে অপেক্ষা করলোনা। নিজের কক্ষের দিকে এগিয়ে গেলো। হাবিবের মা সবাইকে নিয়ে চুপচাপ বেরিয়ে গেলো। আলো প্রচুর ভয় পেয়েছে। ইশার উপরে হাবিবের অধিকার আছে। তাইতো বুদ্ধি করে আগে থেকে উকিল ধরে সবটা ঠিকঠাক করে রাখা। তবুও ঝামেলা একটা থেকে যায়। আলো শ্রাবণের প্রতি কৃতজ্ঞ। আলোকে পড়ানোর জন্য একটা ছেলেকে ঠিক করা হয়েছে। ও বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করছে। আন্দোলন আপাতত থেমে আছে। উপর মহল থেকে সময় চেয়ে নিয়েছে। আসামী ধরার জন্য চেষ্টা চলছে। আলো সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। বাসা থেকে যতটুকু পারছে সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে মহিলা সমিতির সভাপতি জেসমিন নাহার ওকে প্রস্তাব দিয়েছে উনাদের সংগঠনে অংশ নিতে। আলো ভেবে সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছিল। এইটুকু বয়সে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া ঠিক হবে না কিন্তু যেই ঝামেলায় ফেঁসেছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে ক্ষমতা আর আইনের সহায়তা বড্ড প্রয়োজন। আলো একদিন পর রাজি হয়েছে যেটা শ্রাবণের অজানা।

***
পড়ন্ত বিকেল ঘুমিয়ে ছিল শ্রাবণ হঠাৎ ফোনের শব্দে ওর ঘুম ভাঙলো। আলো ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রাবণ ঘুম ঘুম কণ্ঠে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,

> আমার ভাইয়ের লা*শ যেখানে পড়েছে বিশ্বাস কর তোর বউয়ের লা*শ ঠিক সেখানেই পড়বে। কতবার অনুরোধ করেছিলাম শুনলি না। এবার কথা না কাজে দেখাবো। বিশ্বাস কর আমার কলিজা পুড়ে যাচ্ছে। পুলিশ কু*ত্তার বা*চ্চাদের পঞ্চাশ লক্ষ দিতে চেয়েছি তবুও ছাড়েনি আমিও কাউকে ছাড়বো না।

শ্রাবণ বিস্ময়কর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। ইদ্রিসের ভাই লিয়াকত ফোন করেছে। কথাকথিত ব*ন্দুক যু*দ্ধে ইদ্রিস মা*রা গেছে। শহরের দক্ষিণে সিসি হাসপাতালে পাশে পরিত্যক্ত স্কুলের মাঠে লা*শ পড়ে আছে। শ্রাবণ ফোন রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ব্যালকনির দিকে এগিয়ে গেলো। আলো সামনে চেয়ে ছিল হঠাৎ শ্রাবণকে দেখে কপালে ভাজ ফেলে বলল,

> পাঁচ ঘন্টা একটানা ঘুমিয়েছেন। রাতে চুরি করতে গিয়েছিলেন যে দিনে ঘুমাচ্ছেন?

শ্রাবণ ভ্রু নাচিয়ে বলল,

> সোজাসুজি জিঞ্জাসা করতে অসুবিধা? ঘুরিয়ে পেচিয়ে জিঞ্জাসা করছো। মেয়ে মানুষ মানেই প্যাঁচানো বুদ্ধি। অবশ্য তোমার একটু বেশিই। শ্রাবণের হাওয়া লেগেছে বুঝতে হবে।

> একদম না। আপনার মাথার মতো আমার মাথা গরম থাকে না। আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে জানি। তাছাড়া আপনার যেই ভাষা। শুনলে ইন্নালিল্লা।

শ্রাবণ ওর কথা পাত্তা দিলোনা বরং ভাব নিয়ে বলল,
> আমি এমনিই সহ্য করে নাও। চেঞ্জ করার সুযোগ নেই।
কথাটা বলে শ্রাবণ চলে আসলো। আলো ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে আছে।একটাস মানুষ সব দিক থেকে উপযুক্ত হয়না। ভালো খারাপ সবটা নিয়েই মানুষ। আলো হাতের ফোনটা নেড়েচেড়ে রাখতে গিয়ে নিউজ দেখে থমকালো। চোখ বন্ধ করে ভাবলো এখনো চারজন বাকি।

চলবে