শহর জুড়ে আলোর মেলা পর্ব-০৬

0
296

#শহর_জুড়ে_আলোর_মেলা
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:৬

ইশাকে নিয়ে বসে আছে আলো। পাশে শাশুড়ি লিমা বেগম আর ননদ তুলি আছে। হাসপাতাল থেকে বাবা মায়ের সঙ্গে শশুর বাড়িতে এসে উঠেছে। বীণা চেয়েছিল ওকে সঙ্গে নিয়ে যেতে কিন্তু পারেনি। বিপদ কোনদিক থেকে আসে বলা কঠিন। শত্রুপক্ষ ভীষণ ভয়ংকর। পাগলা কু*ত্তা*র ন্যায় ঘুরছে। শহরের মেয়র কয়েকবার শ্রাবণের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেয়েছিল কিন্তু ও ফোন তোলেনি। এই মূহুর্তে ফোন রিসিভ করলে মাথা গরম হয়ে উঠবে তখন কি বলতে কি বলবে। আলো মিছিলের ওখানে একবার যেতে চেয়েছিল শেষপর্যন্ত যাওয়া হয়নি। শরীর ঠিক নেই। কা*টা যায়গা ইনফেকশন হলে সমস্যা হবে। ইশাকে নিয়ে বিশেষ অসুবিধা হয়নি। আলোর শাশুড়ি লিমা বাচ্চা সামলাতে বেশ পারদর্শী। বহুকাল আগে বাচ্চারা সব বড় হয়ে গেছে এতোদিন পর একটা বাচ্চা পেয়ে উনি ভীষণ খুশি। সারাদিন ভদ্রমহিলা ইশাকে নিয়েই থাকেন। আলো ইশার কপালে চুমু দিয়ে বলল,

> আম্মা আপনাদের কষ্ট দিতেছি কিছু মনে করবেন না। এই উপকার আমি আজীবন মনে রাখবো।ইশা আমার বুবুর খুব আদরের ছিল। বাচ্চাটার দিকে চেয়ে কত কষ্ট সহ্য করেছে ঠিক নেই। ভেবেছিল ইশার কথা ভেবে হয়তো দুলাভাই ভালো হয়ে যাবেন কিন্তু তেমন কিছু হলোনা। ওই বাড়িতে ঠিকঠাক খাওয়া পাইনি বুবু। কতবার বলেছিলাম আগে থেকে চলে আসতে। আসলো ঠিকই কিন্তু সবটা শেষ করে।

আলোর চোখে পানি। একটা রাত ঘুমের মধ্যে পার করেছে। এর মধ্যে কতবার নীরাকে যে স্বপ্নে দেখেছে ঠিক নেই। এক সঙ্গে স্কুলে যাওয়া,বাদাম নিয়ে কাড়াকাড়ি সবটা কেমন জীবন্ত ছিল। ইশা ওর মুখের দিকে চেয়ে হাসছে। মেয়েটা এতোটা কিউট দেখলেই কোলে নিতে মন চাই অথচ হাবিব একটিবার মেয়ের মুখের দিকে চেয়ে ভালো হতে পারলোনা। মেয়ে মানে আস্ত একটা জান্নাত অথচ নীরার শাশুড়ি মেয়ে হবে জেনে ওর খাবারের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। বলেছিল মেয়ের মায়ের কিসের এতো আদর? লিমা বেগম এগিয়ে বসলেন। আলোর কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিজের কাছে নিয়ে বললেন,

> নীরা মায়ের সঙ্গে যা হয়েছে ভীষণ খারাপ হয়েছে কিন্তু ইশাকে নিয়ে একটুও ভেবোনা। বাড়িতে একটা বাচ্চা থাকলে দিনটা যে কিভাবে যায় বলে বোঝাতে পারবো না। শহরের চার দেয়ালের মধ্যে থাকি কোনো কাজকর্ম নেই। বাচ্চাটাকে পেয়ে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। তুমি অযথা চিন্তা করছো। তুমি নিজে এখনো বাচ্চা। ঠিকঠাক আগে বড় হয়ে উঠো তখন বাচ্চা সামলাতে আসবে। ইশার দায়িত্ব আমার। আমাকে মা ভাবোনা তুমি তাইনা?

আলোর কান্না দ্বিগুণ হলো। পৃথিবীতে কত রঙের,কত ঢঙের মানুষের যে বসবাস। মেয়েরা মায়ের জাত অথচ কিছু মায়েদের ব্যবহার এতো জঘন্য কেনো? সামনে বসে থাকা মাকে আলো কাছে পৃথিবীর সেরা মায়েদের মধ্যে একজন মনে হচ্ছে। কোনো অহংকার নেই।হয়তো এই ভরসাতে ইকবাল মাহমুদ ওকে এই বাড়ির বউ করতে ভাবতে হয়নি। আলো মাথা নাড়িয়ে বলল,

> আম্মা আপনি আজীবন এমনিই থাকবেন তো? আমার ভাগ্য এতোটা ভালো হবে কখনও ভাবিনি। একজন মা পেয়েছি আমি তার অমর্যাদা কখনও করবো না। আপনি শুধু মাথা উপরে আপনার স্নেহের হাতটা রাখবেন। আমি ভাবতাম পৃথিবীর সব শাশুড়িরা বুঝি অত্যাচারী হয়।

আলোর কথা শুনে লীমা বেগম হাসলেন। মেয়েটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে দেখে চোখ রাঙিয়ে বললেন,
> কান্না থামাবে? পৃথিবীর সবাই যদি খারাপ হতো তবে কি আমরা এভাবে মিলেমিশে বসবাস করতে পারতাম? আমার শাশুড়ি মা ছিলেন ভীষণ ভালো মানুষ অথচ আমার দাদি শাশুড়ি ছিলেন রাগী অহংকারী টাইপের মহিলা। একবার কি হয়েছে শুনো, আমি বছর খানিকটা হয়েছে এই বাড়ির বউ হয়ে এসেছি। একদিন ওয়াশ রুমে গিয়ে দাদিমা পড়ে গিয়ে কোমর ভেঙে গেলো। সেই সময় আমার শাশুড়ি মা উনার খুব সেবাযত্ন করেছিল। কাছাকাছি ছিলো। উনি বুঝতে পারলেন এই বউমা ছাড়া উনার কোনো ছেলের বউ উনাকে বিশেষ পছন্দ করেনা। সেই থেকে উনি যে ভালো হলেন তারপর আর ভাবতে হয়নি। অবশেষে পরিবারের শান্তি ফিরলো। নয়তো আমাদের সঙ্গেও খুব খারাপ ব্যবহার করতেন। যৌথ পরিবার ছিল। তোমার চাচা শশুর আছে তিনজন। আমরা সকলে তখন আমাদের পুরাতন বাড়িতে থাকতাম। সব ঠিক হলে আমরা ওখানে ঘুরতে যাব। হঠাৎ বিয়ে তাই ওরা আসতে পারেনি

গল্প করতে করতে আলোর মন ভালো হয়ে গেলো। শ্রাবণের দুই বোন। তুলি ছোট, ঢাকা মেডিকেলের দ্বিতীয় সেমিস্টারে পড়াশোনা করছে। ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। স্বপ্ন বাবার মতো ডাক্তার হয়ে ব ক্লিনিকের দায়িত্ব নেওয়া। বড় বোন সেতু, স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে থাকে। দশ বছরের একটা ছেলে আছে। তুলি বাড়িতে না থাকলে লিমা বেগমের একাকী থাকতে হয়। ছেলেকে অনেক অনুরোধ করেছিলেন বিয়ে করার জন্য কিন্তু রাজি না হওয়াতে আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। শেষমেশ বিয়েটা হয়েছে এতেই উনি খুশি। গোছানো পরিবার শুধু শ্রাবণটা একটু এলোমেলো। মেধাবী ছাত্র ছিলো, ইকবাল সাহেব ভেবেছিলেন ছেলেটা বুঝি মানুষ হবে। ডাক্তার হয়ে উনার স্বপ্ন পূরণ করবে কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। ছেলে বড় হয়েছে ঠিকই তবে উনার মনের মতো না। শেষ আশা ছোট মেয়েটাকে নিয়ে। লোকে বলে ছেলেরা বাবার হাতের লাঠি হয়।যামানা অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন মেয়েরাও ইচ্ছা করলে বাবার ভরসার স্থান হয়ে উঠতে পারে। আলো এই পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে টুকটাক ধারণা পেয়েছে। শ্রাবণ হাসপাতাল থেকে বাইরে গেছে। সেইযে কার মুখ ভে*ঙে দিতে চেয়ে বের হলো তারপর থেকে লাপাত্তা। ছাত্র সমাবেশে ঝামেলা চলছে। তুলি ফোনে লাইভ দেখছে। বিচার পেতে আজকাল অনশন ধর্মঘট করা লাগে। জানা নেই এর শেষ কোথায়
*****
সংসদ সদস্য আনিসুর ফারাবির অফিসের গোপন কক্ষে শ্রাবণের ডাক পড়েছে। নির্জন কক্ষের সোফায় পায়ের উপরে পা তুলে বসে আছে ভদ্রলোক। শ্রাবণ দরজা থেকে অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে সালাম দিয়ে পাশাপাশি বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলো কক্ষে তৃতীয় পক্ষ না থাকলেও চোখ ঠিকই আছে। ওপাশের কক্ষে কয়েকজন আছে যাদের ফিসফাস আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। শ্রাবণ মাথা নিচু করে হাসলো। চোখ বন্ধ করে দম নিয়ে ভনিতা ছাড়া বলল,

> কেনো ডেকেছেন? কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
আনিসুর সাহেব বিনিময়ে অমায়িক হাসলেন। নেতাদের মুখের হাসি আর মুখের ভাষা ভীষণ মিষ্টি হয়। সাধারণ মানুষকে টুপি পরানোর জন্য সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ফোনটা হাতের মুঠোয় ঘুরিয়ে বললেন,

> শুনেছি তোমরা টিভি চ্যানেলের ভীষণ স্বপ্ন, কি যেন নাম দিয়েছো চ্যানেলের? লাইসেন্সের কি অবস্থা? আমি কি সাহায্য করবো? আমার শহরের একটা ছেলের স্বপ্ন পূরণ করতে যদি আমি সামান্য পরিমাণ সাহায্য করতে পারি সেটা আমার জন্য অনেক পাওয়া।

শ্রাবণ ফ্লরের সঙ্গে জুতার আগ্রভাগ দ্বারা ঘনঘন আঘাত করিলো। লোকটার যেচে পড়ে সাহায্য করতে চাওয়ার আকুলতা শুনে ওষ্ঠ কামড়ে নিজেকে শান্ত করলো। আল্লাহ এইটুকু মস্তিষ্ক কেনো যে হঠাৎ হঠাৎ গরম করে দেন খুব আফসোস হয়। কথাটা ভেবে উত্তর দিলো,

> প্রয়োজন হলে নিশ্চয়ই আপনাকে বলবো। আপনি সোজাসুজি মূল কথায় আসুন। কেনো ডেকেছেন,নিশ্চয়ই আমার চ্যানেলের জন্য না?

শ্রাবণের কথা শুনে ভদ্রলোকের মুখটা কালো হয়ে গেলো। বাচ্চাদের ধৈর্যের বড্ড অভাব। যদিও শ্রাবণের দৈহিক গঠন বাচ্চাদের কাতারে পড়ে না। কিছু একটা ভেবে বললেন,

> নতুন বিয়ে করেছ দাওয়াত পেলাম না। ইদ্রিস জানতো না আলো তোমার স্ত্রী। আরে বাবা বিয়ে শাদীর কাজকাম একটু অনুষ্ঠান না করলে হয়? তোমার বাবা নামকরা ডাক্তার মানুষ। এতোবড় ক্লিনিক আছে তার ছেলে লুকিয়ে বিয়ে করছে সত্যি মানা যায়না। যাইহোক যেটা বলতে চাইছিলাম আসলে ইদ্রিস খারাপ ছেলে না। কয়েকজনের পাল্লায় পড়ে একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে। আমার মনে হয় তোমার এটা নিয়ে ঝামেলা করা উচিত না। ইদ্রিস বা তুমি কেউ আমার পর না নিজের লোক। তুমি আলোকে বুঝিয়ে বলো। যেখানে ওর বাবা মা রাজি সেখানে ওর এমন ত্যাড়ামি করা উচিত না। বাইরে ঝামেলা হচ্ছে প্রশাসন ক্ষেপে আছে। তাছাড়া ভিডিওটা পাবলিক করেছো ওটা ডিলিট করো। তোমরা জিডি তুলে নিলে সমস্যা হবে না।

শ্রাবণের ইচ্ছা করলো এই মূহুর্তে এই লোকটার নাক বরাবর জোরে একটা ঘু*সি বসিয়ে দিতে। জনপ্রতিনিধি হয়ে কিভাবে স*ন্ত্রা*সা পালতে হয় একে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। শ্রাবণ লোকটার চোখে চোখ রেখে বলল,

> আপনি দুদিন আগে যোগাযোগ করলে হয়তো কিছু করতে পারতাম। আসলে আলোর বয়ান আর প্রমাণপত্র সবটা কোর্টে জমা দেওয়া হয়ে গেছে। ইদ্রিস নিজের ক*ব*র নিজে খুঁড়েছে। যেখানে আলোকে আ*ক্র*মণ করেছিল ওখানে সিসি ক্যামেরা আছে। ইদ্রিস নিজের মুখে সবটা স্বীকার করেছে যেটা ইতিমধ্যে ভাইরাল। আপনি নারী নির্যাতনের নতুন আইনটা হয়তো ভুলে গিয়েছেন। ওটা কার্যকর শুরু হয়েছে। হাইকোর্ট পযর্ন্ত কেস গড়ানোর সুযোগ নেই। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ইতিমধ্যে পুলিশ হন্যে হয়ে খোঁজ করছে। সামনে পেলে ঝামেলা করলে নিশ্চিত ফা*য়ার নয়তো ফাঁ*সি। নতুন করে কোনো বিচার বা শুনির প্রয়োজন হবে না। আসলে পাপ গোড়া থেকে উপড়ে না ফেললে সমাজের জন্য এসব কিট হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আপনি ভদ্রলোক মানুষ। আমাদের এলাকার সম্মানিত এমপি মহাদয়। আমার মনে হয় এসব কাজে আপনার না জড়ানোই ভালো। আমাদের চ্যানেলে আপনার নামে একটা প্রতিবেদন তৈরী করবো ভাবছিলাম। নতুন রাস্তাটার জন্য ভীষণ উপকৃত হয়েছি।

শ্রাবণের মুখে তির্যক হাসি। ইচ্ছে করে ভদ্রলোকের নামে বেশ কিছু সুনাম করতে হলো। সব সময় মাথা গরম করলে কাজের চাইতে অকাজ বেশি হবে। শ্রাবণের কথার পরিবর্তে লোকটা আর তেমন কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে পারলোনা। শুধু বলল,

> ইদ্রিস আমার দলের ছেলে একটা ভুলের জন্য ফেঁসে গেলো। কি আর করা। যাইহোক শ্রাবণ কিছু মনে করোনা। আমি যে তোমাকে ডেকেছি এটা গোপন রেখো। ইদ্রিস খুব অনুরোধ করছিলো বিধায় তোমাকে ডেকেছি। তুমি সত্যি বলেছো এসব লোকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা উচিত হবে না।

> জ্বী আঙ্কেল তাহলে আজ আসি?

শ্রাবণ অপেক্ষা করলোনা। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসলো। শার্টের বোতামে ক্যামেরা লুকিয়ে রাখা ছিল সবটা ভিডিও হয়েছে কিন্তু এটা আপাতত গোপন থাকবে। রাহিন পার্টি অফিসের নিচে ছিল শ্রাবণকে নামতে দেখে ও দৌড়ে আসলো। ফিসফিস করে বলল,
> কি বললো?

শ্রাবণ গাড়িতে উঠতে উঠতে উত্তর দিলো,
> সুপারিশ করতে ডেকেছিল। ইদ্রিসের বিরুদ্ধে থাকা প্রমাণ লুকিয়ে ফেলতে অনুরোধ করেছে। আচ্ছা রেবা হ*ত্যা*র প্রধান আসামী সুবির কি আনিসুর সাহেবের কোনো আত্মীয়? খবর নিতে বলেছিলাম নিয়েছিস?

> ভদ্রলোকের স্ত্রীর মামাতো ভাই। সুবিরের বাবার কয়েকটা স্বর্ণের শোরুম আছে। বেশ মালদার পার্টি। শহরে পাঁচটা বাড়ি আছে।বিদেশ সফর নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।

> চোরা*চালা*ন করে নাকি?

> জানিনা সময় লাগবে তথ্য জানতে। এই কেসের সঙ্গে জড়িত প্রায় আসামী খুব ক্ষমতাবান। ওরা টাকা দেখে ভয় পাচ্ছে না। দু’হাতে খরচ করছে। আলোকে কিনতে পারলে কেস খতম হতে সময় লাগতো না।
শ্রাবণ উত্তর দিলোনা। সঠিক বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। পাঁচজন আসামীর সবগুলো ভদ্র পরিবারের অথচ এতোটা নীত এদের আচরণ।
****
আলো ইশাকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছিলো এমন সময় ভেতরে প্রবেশ করলো শ্রাবণ। ক্লান্ত শরীর, ঘামে শার্ট গায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। সামনের চুল কপালের উপরে নাচানাচি করছে। শ্রাবণ জুতা খুঁলে সোফায় বসে পড়লো। আলো উঠে এসে পানির গ্লাস এগিয়ে দিয়ে জিঞ্জাসা করলো,

> ওদিকে সব ঠিক আছে? আন্টির সঙ্গে আর কথা হয়েছে?
শ্রাবণ বিরক্ত হলো। কপালের ঘাম মুছে বলল,

> এখন বলতে ইচ্ছা করছে না। যখন ইচ্ছা করবে তখন বলবো। বিরক্ত করোনা।

আলো ঠক করে গ্লাস নামিয়ে রেখে ইশার কাছে ফিরে আসলো। শ্রাবণ পাত্তা দিলোনা। ওয়াশরুমে ঢুকলো। বের হলো আধা ঘন্টা পর। তখনও ইশা জেগে। শ্রাবণ বিছানায় গিয়ে ইশাকে তুলে নিয়ে বলল,
> বাচ্চাদের কিভাবে ঘুম পাড়াতে হয় সেটাতো জানোনা আবার আসছো মা হতে।

আলো গোলগোল চোখে শুধু দেখলো। শ্রাবণ ওকে কোলে নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে বসলো। কয়েক মিনিটের মধ্যে মেয়েটা ঘুমিয়ে অচেতন। শ্রাবণ ওকে নিয়ে বিছানায় ফিরে এসে বলল,

> তুমি মা হওয়ার যোগ্য না হলেও আমি বাবা হওয়ার যোগ্য।
আলো ভ্রু কুচচে বলল,

> এতোদিন বিয়ে শাদি না করে বসে ছিলেন কেনো?তাহলে ফুটবল টিম তৈরী করতে পারতেন।

শ্রাবণ অন্যমনা হয়ে উঠলো। বিয়ে সংসার করবো বললে কি করা যায়? হঠাৎ ফোনের শব্দে ওর ধ্যান ভাঙলো। অচেনা নাম্বার তাই সালাম দিতেই প্রশ্ন আসলো,

> শ্রাবণ তুই বিয়ে করেছিস? দেখা করবি প্লিজ?

শ্রাবণ অস্থির হয়ে উঠলো। ওপাশে যে ছিল তার সঙ্গে পাঁচ বছর কথা হলো। মেয়েটা এখন কেমন আছে জানার জন্য পাগল পাগল লাগছে। তাই উত্তর দিলো,

> কোথায় তুই? আমি এখুনি আসছি জাষ্ট ঠিকানা বল। এতোদিন পর অবশেষে আমার কথা মনে পড়লো? কি কপাল আমার।
শ্রাবণ তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো। কক্ষে আলোর অস্তিত্ব হয়তো ভুলে গিয়েছে। আলোর মন খারাপ হলো। অচেনা মেয়েটার প্রতি অজান্তেই ভীষণ রাগ হলো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মেয়েটা কে হয় শ্রাবণের?

চলবে