শানুর সংসার পর্ব-০৫

0
208

#শানুর_সংসার (৫) (১৮+)

আকাশী রঙের পাতলা ম্যাক্সি পরে আসিফের গায়ে আলতো করে হাত রাখে শানু। আজ সে স্বামী সোহাগের আশা নিয়ে জেগে আছে।

এই ম্যাক্সিটা শানু কিনেছে গত শুক্রবার নিউমার্কেট থেকে। বেশ পুরনো এক দোকানের নাম ‘নিউইয়র্ক ড্রিমস’। গলির ভেতরে খাজানা নিয়ে বসে ছিলো। অন্তরবাসের নানান পসরা সহ রাত পোষাকের ছড়াছড়ি। শানুর ততক্ষণে বগলের নিচে কাপড়ের বোঁচকা জমেছে। এক হাতে ফ্রুটো খেতে খেতে শানু এমনি ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। দোকানটায় ঢুকলো মিশুর জন্য। মেয়ে বড় হচ্ছে। ইদানীং, মিশু কেমন ঝুঁকে হাঁটে। শানু জানে, বড় হতে নিলে মনে আনন্দের সাথে ভয় ভর করে। মিশু এখন ভয় পায়। শরীর নিয়ে ভয়। এই ভয় কাটাতে ভালো অন্তর্বাস দরকার। শক্ত শরীর নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। মিশুর পছন্দ হালকা গোলাপী। শানু ঐ রঙের কয়েকটা অন্তর্বাস কিনে ফেলে। আলেয়া আক্তারের জন্য কেনে একটা টুকটুকে লাল রঙের ভেতর জামা। কাশিফের বিয়েতে তাকে একটা লাল জর্জেটের শাড়ি দিয়ে ছিলো। শানুর একদম ভালো লাগেনি। ওটা কেটে সে আলেয়া আক্তারের জন্য বোরখা আর মিশুর জন্য কামিজ বানিয়েছে। মিশুর কামিজটা ‘বান্টি বাবলী’ স্টইলের। নিচে কাতান কাপড়ের পাইপিং। মিশুর খুব পছন্দ হয়েছে কামিজ। আর আলেয়া আক্তার বোরখা হাতে নিয়ে থম মেরে বসে ছিলেন। শানু জানতে চাইলো, ‘আম্মা, পছন্দ হয় নাই? আলেয়া আক্তার উত্তর দিলেন, ‘হইছে, এটা আমি কোথায় পরে যাবো। তোমার কুলখানিতে?’ শানু হাসতে হাসতে বিছানায় বসে পরেছিলো। আলেয়া আক্তার অবশ্য বোরখা ফিরিয়ে না দিয়ে আলমারিতে যত্ন করে নেপথালিন দিয়ে তুলে রেখেছেন। মাঝে মাঝে রোদে দেন। নেড়ে দেখে গালে লাগিয়ে আবার আলমারি বন্দী করেন। শানু ভাবলো, লাল ব্রেসিয়ার দিয়ে শাশুড়ীর সাথে মজা করা যাবে।

দোকানদার বুড়ো মানুষ। শানুকে ‘মা’ ডেকে জিনিষপত্র বিক্রি করছে। শানুর খুব ভালো লাগছে। কিছু কিছু ব্রা-পেন্টির দোকানদার থাকে আস্ত বদমায়েশের বাচ্চা। পথচারী মহিলাদের দেখলেই ডাকে, ‘আপা ভিতরের আসল জিনিষ নিয়া যান। কম দামে ছাইড়া দিমু’। কিছু আছে আরো খারাপ। কাস্টমারকে সাইজ জিজ্ঞেস করে বুকের দিকে তাকিয়ে থাকে। কাস্টমার সাইজ বললে বলে, ‘আপা, আমি বিশ বছর এই সব হাতাই। দেখলেই বুঝি, কার শেপ কেমন। আপনের শেপ বলে যে সাইজ কইলেন, ঐটা না। কম বেশি আছে৷’ শানু ওসব দোকানে কেনাকাটা করে না। এই দোকানটা ভালো লেগেছে। শানু ঠিক করলো, এখান থেকে বেশী করে কিনে রাখবে। বুড়ো চাচা শানুকে বেছে কম দামে এই ম্যাক্সি দিলেন। আসিফের পছন্দ নীলের মাঝে যে কোন শেড। শানু খুশী মনে ম্যাক্সি নিয়ে বাসায় ফিরে ছিলো। তারপর থেকে দিন গুনছে, কবে ম্যাক্সি পরে আসিফকে চমকে দেবে।

শানু আজ কাজ শেষে গা ধুয়ে জামা বদলে দু-পাশে কলাবেনী করলো। আসিফ বিয়ের পরপর শানুকে বিছানায় কিশোরী রূপে চাইতো। শানুরই বা বয়স কত তখন। সতের পুরো হয়ে আঠারোয় পা দিতে না দিতে বিয়ে। দুই বছরের মাথায় রাজু কোলে হাত পা নেড়ে ঘুমোয়। বয়সটা শানুর বাড়লেও মনে সেই কিশোরী রয়ে যাওয়া মেয়েটি বাধ্য হয়েই যেন ঘরকন্নায় ডুবেছে৷ আসিফের গা ঘেষে এসে বসে শানু। আসিফ খেলা দেখছে। মেসির গোলে তার চোখে মুখে উল্লাস দেখা যায়। শানু বসতেই আসিফের মুখ শক্ত হয়ে ওঠে। স্বামীর গায়ে হাত রেখে শানু আসিফের জামার বোতাম খোঁটে।
‘একটা কথা বলতাম। ‘
‘বলো। আসিফের স্বরে স্পষ্ট বিরক্তি। শানুর দিকে তাকাবার চেয়ে খেলা দেখা জরুরী।
‘তুমি সিনেমা দেখতে গিয়ে ছিলে? আমাকে নাওনি কেনো? ‘

আসিফ চট করে টিভি বন্ধ করে। সিনেমা দেখতে গিয়েছে, এটা শানুর জানবার কথা নয়। তাছাড়া, শানু জানে সিনেমা দেখতে আসিফ যেতে পছন্দ করে না। তাই, শানুর এমন প্রশ্ন করার কারন আসিফ বুঝতে পারে না।

‘কোথায় সিনেমা দেখতে গেলাম। আবোল তাবোল বকো না।’
‘তুমি মিথ্যে বলছো। আমি তোমার জামার পকেটে সিনেমার টিকেট পেয়েছি।’

আসিফ ঢোক গেলে। ঐ ভুলটা হয়ে গেছে। ধ্যাৎ, টিকেটটা ভেবে ছিলো, গাড়িতে উঠে ফেলে দেবে। আর মনে নেই। বাসায় এসেও ফেলে দিলে হতো।

‘ওটা আমার টিকেট না। নজরুল ভাই ভাংতি টাকা দিয়ে ছিলেন। টাকার সাথে এসেছে। ‘ আসিফ শানুকে কাছে টানে।
‘ও, তাই বলো। আমার খুব মন খারাপ হয়েছে। তুমি সিনেমা দেখতে পছন্দ করো না। অথচ, নিজে দেখতে গেলে। তাই, জানতে চাইলাম। ‘
‘তোমাকে একদিন নিয়ে যাবো। ‘ আসিফ শানুর পিঠে হাত বোলায়। মেয়ে ছেলের এই এক দোষ। পুরুষ মানুষের সব কথা জানতে হবে। তারা কোথায় কখন কি করছে, না শুনতে পারলে পেটের ভাত হজম হয় না। শানু এমনিতে খুব ভালো। আসিফ যেমন চায়, তেমন। কিন্তু, ঘরের বউয়ের দাবী নিয়ে দুটো প্রশ্ন করলে উত্তর দিতেই হয়। শানু বাতি নিভিয়ে এসে আসিফকে চুমু খায়। আসিফের মুখ তেতো লাগে। শানুর প্রতি সে আগ্রহ হারিয়েছে, মিশুর জন্মের পর। সারাদিন বাচ্চা, সংসার এর কাজ করে বিছানায় শানু শুতে আসলে ওর শরীর থেকে দুধ এবং ঘামের বোটকা গন্ধ বের হত। আসিফ ডাকলেও শানু সাড়া দিতো না। মরার মতো নাক ডাকতো। একমাত্র, মিশু কাঁদলে উঠে বসে দুধ খাইয়ে আবার ঘুম। আসিফ পরদিন জুতো পরতে গিয়ে পালিশ করা চকচকে জুতো পায়ে গলালেও রাতে অন্য পায়ে মোজা না পরাতে পারার দুঃখ ভুলতে পারতো না। শানু শরীর নিয়েও অসচেতন। দুই বাচ্চার মা হয়ে অন্যেরা যেখানে শরীর শুকিয়ে ফিগার সুন্দর করে রাখে, শানুর তেমন কোন চেষ্টা নেই।

‘তুমি আকাশী রঙ পছন্দ করো দেখে এ রঙের ম্যাক্সি কিনলাম’।
‘হুম।’ আসিফ অভ্যস্ত হাতে শানুর ম্যাক্সি তোলে। অপছন্দনীয় খাবারে রুচি আসে না। একই পদ দীর্ঘদিন খেতে অরুচি হয়। আসিফের তেমন শানুর শরীরে ভক্তি লাগে না। বিবাহিতা বউ বলে, ক’মাসে একবার সম্পর্ক চালিয়ে নেবার জন্যে শুতে হয়। নইলে, শানু সন্দেহ করতে পারে। ঋতুমতী স্ত্রীর শারিরীক চাহিদাকে দূরে ঠেলে রাখা অসম্ভব। শানু সবসময় চায় না। আসিফের ডাকের অপেক্ষা করে। নিজ থেকে এলে, আসিফ তাকে না ফেরায়,না আদরে আহ্লাদে টুকরো টুকরো করে ভেঙে দিয়ে আবার জুড়তে বসে। শানু আসিফকে প্রচন্ড আবেগে আঁকড়ে নিয়ে ঘণঘণ চুমু খায়। আসিফের মাথা টেনে নামিয়ে আনে বুকের ওপর। চেপে ধরে স্তনের বোঁটায়। আসিফ সেখানে নাক মুখ ঘষে কেবল। শানুর শরীর যত জাগে, আসিফ ততই উত্তেজনা হারায়। একটা সময় পরে আসিফের স্খলন ঘটে সময়ের অনেক আগে। শানুর বুকের ওপর লুটিয়ে থাকা ক্লান্ত আসিফের নাক ডাকার আওয়াজের নিচে শানুর অপ্রাপ্তির বোবা কান্না ঢাকা পরে যায়। আসিফের কিসের এত তাড়া ছিলো? যেন শানুকে কোন রকমে স্বীকৃতি দিয়েই খালাস। কিছু সময় পর, শানুর আবার স্বামীর প্রতি তীব্র মমতা জাগে। হয়ত, অফিসে কাজের অনেক চাপ ছিলো। শরীরে কুলোয়নি। পুরুষ লোক বাহির সামলায় বলেই তো মেয়েরা ঘরে শান্তিতে সংসার পাততে পারে। সামান্য বিষয় শানু টেনে লম্না করতে চায় না। দোষ তো শানুর, সে কেনো আসিফের অনুমতি চাইলো না। আসিফ এবার বালিশে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। শানু পানি এনে আসিফের পা মুছিয়ে দেয়। ভেজা পায়ে আসিফের ঘুম ভালো হয় যে। শানু আবার ভাবতে বসে। শানুর যেমন বয়স বেড়েছে, আসিফ ও বুড়ো হয়েছে। আসিফ শানুর চেয়ে বারো বছরের বড়। তার মানে, পঞ্চাশের ঘরে আর কদিন পরেই পা রাখবে আসিফ। শানু মনে মনে খুব হাসে। বড়টা তার বুড়ো হয়ে গেলো বুঝি।

সাত সকালে উঠে পরোটা করে শানু। সাথে আলু দিয়ে ভাজা ডিমের ঝোল। আলেয়া আক্তারের জন্য চিড়া ভেজায়। আম দিয়ে খাবেন। এক কাপ চায়ে টোস্ট চুবিয়ে খেয়ে নেয় শানু।

‘স্কুল যাবি না মিশু? এত কামাই দিলে পরীক্ষায় খারাপ করবি। ‘

শানু মেয়ের জানালার পর্দা সরায়। আসিফ খেয়ে দেয়ে অফিসে গেছে। আলেয়া আক্তার দোকানের কাগজ পত্র দেখবেন বলে বেরিয়েছেন। শানু আজ যায়নি। রেহানা ভাবীর বোন কয়টা সন্দেশের বায়না করেছে। বানিয়ে দিলে টাকা পাওয়া যাবে। শানু মিশুর জন্যে একটা দামী জামা দেখেছে৷ আসিফ অত টাকা দেবে না। বাকিটা শানু ভরে কিনবে। মেয়েকে টুকটুকে পরী লাগবে ভেবে শানু মিশুর টিফিন বাক্স তৈরী করে। রাজু কলেজ যাবার জন্যে মায়ের কাছে বিদায় নিতে আসে।

‘কক্সবাজারে আমি যাব মা। বাবাকে বলে দিও।’
‘তোর বাবার কথা অমান্য করিস না, রাজু। দেখ, বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলে তোর বাবা এত নিষেধ করবে না।’
‘বাবা সব সময় নিষেধ করে। আমি কমার্সে পড়তে চাইলাম। বাবার জন্য সাইন্সে পড়ছি।’

শানু ছেলের উঁচিয়ে রাখা চুল হাতে টেনে নামিয়ে দেয়। শার্টের তুলে রাখা কলার ভাঁজ করে।

‘ভালো করে শার্ট ইন কর। এমন স্টাইল শাহরুখ খান করে। তুই কি নায়ক?’

রাজু মাকে জড়িয়ে ধরে। তার মা টা অতিরিক্ত ভালো। অনেক খানি সহজ মানুষ। বাবার সাথে ঠিক যায় না। বাবার কপাল ভালো, এত নরম একটা বউ জুটেছে। তার বন্ধুদের মায়েরা ছেলেদের এমন সাজে দেখলে জুতোপেটা করতো। শানুর স্বভাব অন্যরকম। সে ভদ্রভাবে বুঝিয়ে বলতে চায়।

‘মা, এক দিনের ট্রিপে গেলে বাবা যদি রাগ করে করুক। আমাকে বলো তো তুমি কি চাও?’

শানুর চোখে আনন্দ খেলে যায়। তাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে, ‘শানু তুমি কি চাও’? সে খুব খুশী হয়। আজকাল, সে কি চায় এটা জানতে কেউ চায় না। সবাই কেবল তাদের নিজের বাসনা শানুকে জানিয়ে যায়।

‘আমি চাই, তুই যা। কিন্তু, তোর বাবা…
‘বাস, হয়েছে। তুমি চাও, আমি যাবো। কিন্তু, টাকা ম্যানেজ করতে হবে।’

শানু হেসে আঁচলের খুট৷ থেকে দুইশ টাকা বের করে রাজুর হাতে দেয়।
‘এটা তোর বাবার টাকা। ‘
‘তুমি কোথায় পেলে’। রাজু অবাক হয়ে জানতে চায়। সংসার খরচ বাদে বাবা যে মায়ের হাতে আলাদা করে টাকা দেয় না, সে জানে
‘এই মনে কর খুচরা, ভাংতি জমিয়ে বড় নোট করে রেখে ছিলাম৷ ‘
‘থ্যাঙ্কিউ মা। তুমি বেস্ট মা ইন দা ওয়ার্ল্ড। ‘

রাজু বেরিয়ে গেলে শানু মিশুকে তৈরী করে স্কুলে পাঠায়। এখন সে বড় মগে এক কাপ মশলা চা বানিয়ে ‘অনামিকা ‘দেখবে। রাশি গোপীর সাথে খুব শয়তানী করেছে। বোনে বোনে যুদ্ধ ভালো না। তাই ঐ সিরিয়াল দেখা আপাতত বন্ধ। ‘অনামিকা’ সিরিয়ালে এক প্রেত ভালো মেয়েটার স্বামীকে কেড়ে নেবার পায়তারা করে। শানু মনে দুঃখ নিয়ে অনামিকা দেখে। সরল স্বামীরা দুষ্টু মেয়েদের ছলনায় এত সহজে ভুলে যায়!

বাসা থেকে এগিয়ে মিশু ভয়ে ভয়ে বুকের কাছে স্কুল ব্যাগ চেপে দোকান পার হয়। ভাগ্য ভালো, আজ রাজু তাকে নিতে আসবে বলেছে। রাস্তা পার হবার জন্য জেব্রা ক্রসিং এ দাঁড়ায় মিশু। চারপাশে অসংখ্য লোক। কেউ অফিসে ছুটছে, কারো হাত ভর্তি বাজার। মায়েরা দুই হাতে বাচ্চা নিয়ে গলায় ব্যাগ ঝুলিয়ে রিক্সা দরদামে ব্যস্ত। মিশু দুজন মহিলার মাঝখানে দাঁড়ায়। রাস্তা পার হবার সময় হঠাৎ নিতম্বে প্রবল চাপ অনুভব করে মিশু। প্রায় দৌড়ে রাস্তা পার হয় সে। তারপর ভীষণ ভয় নিয়ে পেছনে তাকায়। ঐ তো দোকানের সেদিনকার ছেলেটা রাস্তার ওপর রাখা বড় বড় গাছের ড্রামের গায়ে হেলান দিয়ে আছে। মিশুর সাথে চোখাচোখি হতে হাত দিয়ে বিশ্রী ইংগিত দেখালো। মিশুর চোখ বেয়ে কান্না এলো। এত মেয়ে থাকতে, তার সাথে এমন করছে কেনো ছেলেটা। মিশু স্কুলের ওড়না টানে। চাপানো ওড়নায় পাশ দিয়ে জেগে ওঠা বুক অনেকখানি বেড়িয়ে যায়। মিশু স্কুল ব্যাগ দিয়েই আবার বুক ঢাকে। তুমুল ভয় নিয়ে বারবার পেছনে তাকাতে তাকাতে রাস্তায় হাঁটে মিশু। ছেলেটা ওর পেছন পেছন আসছে। মিশু জোরে পা চালায়। মাথা ঘুরিয়ে দেখে, ছেলেটা হাঁটার গতি বাড়িয়েছে। মিশু আরেকটু ছোটে। বারবার পেছনে তাকাতে গিয়ে রাস্তার থাকা ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে পরে যায় মিশু।

‘ এতো অনেক খানি ছড়ে গেছে। তুমি সাবধানে চলবে না, মিশু? ‘

মিশু দেখে হাঁটুর কাছে পায়জামা ছিড়ে রক্ত ঝড়ছে। স্কুলের স্যার মিশুকে দেখতে পেয়ে থেমেছেন। মিশু উঠে দাঁড়িয়ে আবার হাঁটে।

‘লাইব্রেরীতে গিয়ে পা টা ড্রেসিং করে নাও, বাবা।’ স্যার মিশুকে বলে সামনে এগোন। মিশু আবার দেখে ছেলেটা কোথায়। মিশুকে পরে যেতে দেখে হয়তো চলে গেছে। মিশু দৌড়ে স্কুলে ঢুকে বাথরুমে গিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে। নিতম্বের জায়গাটা জ্বলছে। মিশু ওখানটা কয়েকবার পানি দিয়ে ধোয় আর কাঁদে। এত লজ্জা, এত অপমান তার কপালে এলো কিসের পাপে।

স্কুলের ক্লাসগুলো ঠিক মতো করতে পারে না মিশু। একটু পরপর ভয়ে কাঁপে। বান্ধবীরা মিশুর কাছে জানতে, চায় কি হয়েছে।

‘কিছু না। আমাকে ডায়রী দিস। আগামীকাল দিয়ে দেব’।

জাইনা মিশুর পাশে এসে বসে। মিশুর সাথে ছোটবেলা থেকে পড়ছে। মিশু কখনো ক্লাসে অমনোযোগী নয়। আজকে এমন করছে কেন, বেস্টফ্রেন্ড।

‘তোর কি হলো, বলবি?’
‘কিছু না। আমি কয়দিন স্কুলে আসব না।’
‘কোথাও বেড়াতে যাবি?’
‘না এমনি আসব না।’

মিশু দেখে স্কুল ছুটির সময় হয়ে গেছে। ব্যাগ গুছিয়ে জাইনাকে পাশ কাটিয়ে মিশু স্কুল গেটের সামনে আসে। রাজুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। জাইনা এগিয়ে এলো,

‘তোকে বাসায় নামিয়ে দেব? আমাকে নিতে গাড়ি এসেছে।’
‘পারবি? আন্টির দেরী হবে না?’
‘আম্মু অফিস যায়নি। বাসা থেকে অনলাইনে মিটিং এটেন করবে।’
‘তোর আম্মু কত স্মার্ট। ‘
‘হতেই হবে, আমার তো তোর মতো বাবা নেই।’

মিশুর বলতে ইচ্ছে করলো, বাবা থেকে লাভ হয় না। বাবারা মেয়েদের কথা শোনে না। মায়েদের কথা বাবারা পাত্তা দেয় না। মিশু তো বাচ্চা মেয়ে। জাইনার গাড়িতে উঠে মিশু নিরাপদ বোধ করে। স্কুলের আশপাশে ঐ ছেলেটাকে দেখেনি। বাসার কাছে এসে জাইনার গাড়ির ড্রাইভার গলির ভেতর ঢুকতে চাইলো না। মিশু বাসা থেকে একটু দূরে নেমে পরে। জাইনাকে বিদায় দিয়ে ব্যাগ নিয়ে হাঁটছে মিশু।

‘যৌবনেরি দায় নিয়া সখী যায় যমুনায়, ঢলঢল করি তারি অঙ্গ দোলে দোলে। কি যাইবানি যমুনায়? ‘

মিশু যত জোরে দৌড়ায়, তার পেছনে সাইকেলের টুং টাং শব্দের সাথে নোংরা গানের কলি ভাঁজা বাড়ে। নামাজের সময়, পাড়া নীরব। দোকানপাটের ঝাঁপ নামানো। মিশু অসহায়ের মতো কাঁদে। এবার প্রাণপণে দৌড়িয়ে মিশু বিল্ডিং এ ঢুকে গেট আটকে দেয়। ছেলেটা আজকে বাসা চিনে গেলো। সিড়ি গোড়ায় বসে মিশু ভয়ে, অপমানে কাঁদতে থাকে। হঠাৎ, গেট খোলার শব্দে মিশু কেঁপে ওঠে। আসিফ রক্তচক্ষু করে গেট খুলে ভেতরে ঢুকেছে।

(চলবে)