শিশিরে ভেজা আলতা পর্ব-৮+৯

0
358

ধারাবাহিক গল্প
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
পর্ব-৮

ধান ক্ষেতের আইলে বসে পশ্চিম আকাশে সূর্য হেলার অভূতপূর্ব দৃশ্যখানি খুব মনযোগে দেখলো শিশির। পাশে বসে থাকা তিন বন্ধু বুট আর বাদাম খাওয়ায় মন দিয়েছিলো কিন্তু শিশিরের নিষ্পলক দৃষ্টি তাদের মনযোগ ভঙ্গের কারণ হলো। প্রথমে মুখ খুলল তপু।

‘এত মনযোগে কি দেখিস?’

শিশির কিছু বলল না জবাবে। সে বসা থেকে উঠে বাড়ির পথে রওয়ানা দিলো। বন্ধুরা অবাক হলেও কোন প্রশ্নের আগ্রহ দেখালো না। বাড়ি ফিরে শিশির নিজের ফোনে তারিখ দেখলো। এটা তার নতুন স্মার্ট ফোন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কিনেছিলো একটা বাটন ফোন। দু বছর ভালোই চলল কিন্তু এবার ঢাকা চলে যাবে। প্রতি মাসে আসা হবে না হয়তো কিন্তু মা পাগল হয়ে যাবে তাকে একদিন না দেখলে। সেজন্যই বাবা মোটামুটি রকমের টাকা খরচ করে একসাথে দুইটা ফোন কিনলো। একটা তার অন্যটা বাড়িতে মায়ের কাছে থাকবে। আলতা আর শিউলিকে শিখিয়ে দিয়েছে ইন্টারনেট কানেকশন, মেগাবাইট কেনা সবটা । বাড়িতে শরত ভাইয়ের আগে থেকেই স্মার্টফোন ছিলো তাই শিউলি আর আলতা দুটোই মোটামুটি জানে ইন্টারনেট ব্যবহার তবে এবার শিশির সবটা শিখিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে, দুজনের একজনও যেন ফোন নিয়ে পড়ে না থাকে। পড়াশোনা একটুও খারাপ হলে সে বাড়ি এসে দুটোর পিঠের চামড়া তুলে ফেলবে। ঢাকা যাওয়ার এখনো পাঁচ দিন বাকি। কাল মা মামা বাড়ি যাবে মামাতো বোন সাহেরার বিয়ে উপলক্ষে। মামী দাওয়াতে বাড়ির দুই মেয়ে শিউলি আর আলতাকেও নিতে বলেছেন। শিশির ঠিক করেছে সে বিয়েতে যাবে না আর না আলতাকে যেতে দেবে। কেন এমনটা ভেবেছে সে নিজেও জানে না শুধু মন হঠাৎ এমনটাই আবদার করলো। নিজের ঘরে বসে আলতা নখে নেইল পলিশ লাগাচ্ছিলো তখনই শিশির চিৎকার করে ডাকলো, ‘আলতা একটু শুনে যা তো।’

আলতা শুনেও শুনলো না। কাল সকালেই তারা বিয়েতে যাবে। এখনই নেইল পলিশ লাগিয়ে চুলে তেল দিবে। শিউলি আপা বলে চুল ধোয়ার আগের দিন তেল দিলে ভালো হয়। আলতাও এসব করবে ভাবছিলো কিন্তু তার ভাবনা সুদূরপ্রসারী নয়। সব শিশিরের নাগালেই। আলতার সাড়া না পেয়ে সে নিজেই এসেছে আলতার ঘরে এলো। অনেকগুলো বছরে পড়ার ঘরটা নকশির হলেও পাশাপাশি আরো একটা ঘর করেছে টিন দিয়ে। বাড়ির কারোই মতবিরোধ হয়নি এ নিয়ে। নকশির এখন লাগোয়া দুইটা ঘর। একটাতে খাওয়া, আর অন্যটাতে পড়ালেখা আর ঘুম। ঘরে আসবাব বলতে চৌকি, পড়ার টেবিল আর কাঠের একটা কাপড় রাখার বড় বাক্সও আছে। নকশি এখন বাড়ি নেই এই ফাঁকেই আলতা নিজের এই রুপচর্চা চালাচ্ছিলো। শিশির ঝড়ের গতিতে তাদের ঘরে এলো।

‘তোকে ডাকছিলাম কানে শুনিস না।’

হঠাৎ শিশিরের আগমনে ভড়কে গেল আলতা। সে কোনমতে জবাব দিলো, ‘শুনতে পাইনি।’

অস্পষ্ট আর কম্পিত শোনালো তার কণ্ঠ।

শিশির রেগে এক হাত তুলে বলল, ‘শুনতে পাসনি নাকি ইচ্ছে করেই জবাব দিসনি?’
থাপ্পড় মারার জন্য হাত তুললেও মারলো না। কেন যেন আজ নিজের আচরণ নিজের কাছেই খারাপ লাগলো তার। কিছু বলতে এসে কোন কথা না বলেই সে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। আলতা তো যারপরনাই অবাক শিশির ভাই তাকে মারেনি! এও কি সম্ভব!

পরেরদিন সকাল হতেই শিফা হৈ চৈ ফেলে দিয়েছে বাড়িতে। কখনো আলতাকে ডেকে বলছে জলদি গোসল কর, তৈরি হ, স্কুলে ছুটি নিয়ে প্রথম ক্লাসের পরেই চলে আসবি। শিউলিকে বলছে তিনদিন কলেজ কামাই করতে হবে। তাড়াতাড়ি সাজ শেষ করবি তুই সবসময় দেরি করিস।

শিশির ঘুমাচ্ছিলো তখনো। মায়ের গলার এত উচ্ছ্বসিত আর জোরালো স্বর শুনে তার খারাপ লাগলো। কি করে মাকে বলবে সে আজ যাবে না মামাবাড়ি। কিন্তু সেখানে গিয়ে তার পোষাবে না। অন্তত মামাতো বড় দুই ভাইয়ের জন্য । দুইটাই ছাত্রলীগের নেতা টাইপ মানুষ। মামা বাড়ি নিয়মিত না গেলেও কলেজ পাড়ার সব খবর সে জানে। ভাইরা তাকেও প্রায়ই বলে দলে ঢুকে যা, সবাই তোকে ভয় করবে। শিশির জানে ভাইয়ারা মূলত তার রাগ আর কঠোরতা সম্পর্কে জানে বলে এভাবে টানে। তাদের ধারণা সে খুব দম্ভ নিয়ে রাজনৈতিক ব্যপার দেখবে। কিন্তু সত্যিটা হলো শিশির রাজনীতিটা পছন্দই করে না। মায়ের চেঁচামেচিতে বেশিক্ষণ বিছানায় থাকা গেল না। মাকে বলাও গেল না সে বিয়েতে যেতে চায় না। শুধু বলল তিনদিন পর সে ঢাকায় যাবে। এখন যদি তিনদিন মামার বাড়ি কাটিয়ে আসে তাহলে কি করে হবে! তার তো গোছগাছ বাকি অনেক৷ শিফা বললেন, ‘ধুর ওই নিয়ে ভাবিস না। সব গোছগাছ তো বাড়ি এসে রাতেই করে ফেলবো।’

নিরস্ত হলো শিশির। মাকে আর কিছু না বলে মুখ হাত ধুতে গেল। সকাল এগারোটার মধ্যে রওনা হলো শিফা, শিশির, শিউলি আর আলতা। জার্নি বেশি দূরের নয় পয়তাল্লিশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেল তারা। কতগুলো বছর পর বাপের বাড়িতে পা রাখতেই চোখ ভিজে গেল শিফার। তিন ভাইয়ের বউ আর বড় দু বোন এসে তাকে দেখেই সেকি আহ্লাদ। সবার ছোট সে অথচ সবার থেকেই দূরে দূরে। বাবার পছন্দে আহসানুল্লাহর সাথে বিয়ে হয়েছিলো তার। নইলে ভাইয়েরা তাকে গ্রামের দিকে বিয়ে কিছুতেই দিতেন না। শিশিরকে দেখেও সবাই খুশি হলো খুব৷ ভদ্রতা দেখিয়ে শিশির সবার সাথেই কম বেশি কুশলাদি বিনিময় করে বসে রইলো তার সবচেয়ে ছোট মামাতো ভাইয়ের ঘরে। তার সমবয়সীই মামাতো ভাই জামান। জামানের ঘরে গিয়ে বসতেই তার কানে এলো, ‘ওটা তো শিউলি কিন্তু তার সাথে আরেকটা মেয়ে এলো না! কে রে মেয়েটা?’

মেজো মামীর কন্ঠে প্রশ্নটা শুনতেই সচকিত হয়ে গেল শিশির। মামী আলতার কথা জানতে চাইছে। শিফা হেসে বলল, ‘আলতা, আমার ননদের মেয়ে।’

‘ওই যে আহসানুল্লাহ ভাইয়ের কোন ফুপাতো না মামাতো বোন তোদের বাড়ি থাকে বলেছিলো বড় ভাবী।’

‘হ্যাঁ।’

শিফা তার ভাবীকেও সত্যটা বলেনি। জানে না শিশির, শরত আর শিউলিও৷ সবাই তাই জানে যা আহসানুল্লাহ গ্রামবাসীদের বলেছিলো। শিশিরের মেজো মামী আলতাকে আরো কিছুক্ষণ দেখে বলল, ‘মেয়ে তো অনেক সুন্দরী শিফা। বাড়িতে তোদের বড় বড় ছেলে আছে৷ নজর রাখিস কিন্তু নইলে বিপদে পড়বি।’

মেজো মামীর কথায় তীক্ষ্ণ একটা খোঁচা ছিলো তা বুঝতে পেরেই মেজাজ খারাপ হলো শিশিরের। কিন্তু মেজো মামীর চেয়ে বেশি বিঁধলো বড় মামী কথাটা।

‘হ্যা রে শিফা মেয়েটার কি বয়স সত্যিই খুব কম! না বলছিলাম কি আমার জাহিদের সাথে কিন্তু মানাবে ভালো৷ তার জন্য তো মেয়ে খুঁজছি কবে থেকে কিন্তু ছেলের এক কথা বউ অনেক সুন্দরী আর বোকা বোকা টাইপ লাগবে।’

শিশিরের পক্ষে আর বসা সম্ভব হলো না। মাথার তালুর সাথে পায়ের তলাও গরম হয়ে গেল তার। ঘর থেকে বেরিয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘ আমার কিছু কাজ আছে আমি বাড়ি যাবো আম্মা।’

তার এমন কথাতেই শিফা বুঝে গেল কিছু একটা অপছন্দ হচ্ছে শিশিরের। সে কথা থামিয়ে ছেলের সামনে গেলেন৷ তার কিছু লাগবে কিনা বা কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে শিশির চেঁচিয়ে উঠে, ‘কিসের আলোচনা শুরু করছেন আপনি? আলতা আপনার মেয়ে? আর তার বয়স কতটুকু! জাহিদ ভাইয়ের বয়স ত্রিশের কাছে আর আলতার কত জানেন না? এইসব ফালতু আলাপ হবে বলেই শিউলি, আলতাকে আনতে বারণ করেছিলাম।’

শিফা ভড়কে গেল, ‘কখন বারণ করলি?’

শিশিরের তখন মনে পড়লো সে তো বারণ করেনি। মনে মনে ঠিক করেছিলো আলতাকে আসতে দিবে না কিন্তু সে কথা তো সে কাউকে বলেইনি। রাগে কি তার হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়ে গেল! আর কোন কথা না বাড়িয়ে সে বাড়ি থেকে বের হলো৷

সারাদিন আলতা আর শিউলি শিফার সাথে সাথেই রইলো। বিকেলের দিকে বাড়ির মেয়েরা প্রায় শিফার সকল ভাতিজি, ভাগ্নি সবাই পার্লারে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই শিউলিকেও ডাকলো। শিউলি আগেই জেনেছে শহরের মেয়েরা সবাই অনুষ্ঠানে পার্লারেই সাজে সেও সাজবে বলে শরতের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে এসেছে। শিফার কাছে অনুমতি চেয়ে সেও নিজের শাড়ি বের করছিলো যাবে বলে৷ তখন দেখলো আলতাও তার নিজের ব্যাগ থেকে নীল রঙা একটা জামদানি বের করছে।

‘তুই এই শাড়ি পরবি আলতা?’

‘হ্যাঁ আপা।’ শিউলির প্রশ্নের জবাব দিয়ে আলতা এবার পাটে পাটে পেটিকোট, ব্লাউজও বের করলো। শিউলি নিজের শাড়ি বের করা থামিয়ে নীল শাড়িটা হাতে নিয়ে ভালো করে দেখলো।

‘এটা তো কাকির শাড়ি!’

‘হ্যাঁ, আমার আম্মার তো ভালো কোন শাড়ি নাই দামী। আর যা আছে সেগুলাও এত বড় অনুষ্ঠানে পরলে হয়তো ভালো লাগবে না।’

শিউলির রাগ হলো খুব। কাকীর তো আরো কয়েকটা ভালো শাড়ি আছে সে জানে। তবুও কেন মনে করে নিয়ে এলো না! কিন্তু এখন তো এই শাড়িই লাগবে তার। সে শাড়িটা হাতে রেখেই বলল, ‘তুই ছোট মানুষ এই শাড়ি সামলাতে পারবি না আমি পরবো এটা। দেখি মিলিয়ে আর কি কি এনেছিস?’

‘কিন্তু শিউলি আপা এটা তো আমি পরবো। আমার অনেক পছন্দ।’

‘তর্ক করিস নাতো আলতা। আমার ব্যাগ থেকে আমারটা নিয়ে পরিস আমি পার্লারে যাচ্ছি কাকির ভাগ্নির সাথে।’ কথা শেষ করেই শিউলি প্রায় ছোঁ মেরে শাড়ি, চুড়ি আর ব্লাউজ নিয়ে নিলো৷ তার স্বাস্থ্য বেশি কাকির ব্লাউজ ঠিক লাগবে। আলতা অযথাই পরতো তার তো ব্লাউজও ফিট হতো না। শিউলি চলে যেতেই মন খারাপ করে বসে রইলো আলতা। ভাবীদের সাথে বসে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করতে করতে শিফা ভুলেই গেছে মেয়ে দুটো কোথায় বসে আছে। শিশির কোথা থেকে ফিরে এসে মায়ের সামনে এসে খাওয়ার জন্য কিছু চাইতেই শিফার মনে পড়লো শিউলি পার্লারে যাবে বলেছিলো। সে তড়াক করে বসা থেকে উঠে আগে নিজের ঘরে গেল যে ঘরটাতে তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। তার সাথেই থাকবে শিউলি আর আলতাও। শিশির থাকবে ছোট মামাতো ভাইয়ের ঘরেই। শিফা তার ভাবীকে বলল শিশিরকে কিছু খেতে দিতে৷ নিজে ঘরে গেল মেয়েদের দেখতে।

‘কিরে, তুই এভাবে বসে আছিস কেন? শিউলি কই?’

মামীর কন্ঠ শুনতেই আলতা ফুঁপিয়ে উঠলো।

‘ওমা! কি হয়েছে কাঁদছিস কেন তুই?’ শিফা প্রশ্ন করতে করতে শিশিরও এসে এ ঘরে ঢুকলো।

‘কি হয়েছে ওর কাঁদছে কেন?’

‘তাইতো বুঝতে পারছি নারে।’

‘ মুখে কিছু বলবি না ফুপিয়েই যাবি!’

ধমকে উঠলো শিশির।

‘শিউলি আপা শাড়ি নিয়ে গেছে আমার। আমি আনছি ওইটা মামির থেকে।’

কান্না গলাতেই বলল আলতা। শিফা বুঝতে পেরে বলল, ‘আচ্ছা থাক, মন খারাপ করিস না তো। আমার আরো দুইটা শাড়ি আনছি সেখান থেকে পর।’

শিশিরও বলল, ‘অত কান্নার কি আছে। শাড়ি না পরলেইবা কি? জামা পরে থাকবি অত রঙঢঙের দরকার কি! ওই পেত্নী শাড়ি নিয়া কই গেছে?’

‘পার্লারে গেছে।’

শিশির আর কোন কথা বলল না। শিফা সন্ধ্যের পর নিজেই আলতাকে শাড়ি পরিয়ে দিলো একটা লেভেন্ডার রঙের জামদানি। শাড়িটা অনেক দামী আর তা শিফার বড় বোনের। সে নিজেই চেয়ে নিয়েছে আপার কাছ থেকে৷ ব্লাউজ ফিট হয় না বলে তার ভাবীর সেলাই মেশিন দিয়ে একটু চাপিয়েও দিলো৷ আলতার চুল কিছুটা ঢেউ খেলানো কোঁকড়া মতন৷ শিফা তাই ঘাড়ের পেছনে একটা খোঁপা করে শিশিরকে পাঠালো ফুলের মালার জন্য । বিয়ে বাড়ি ফুলের কমতি নেই তবুও শিফা বলল গাজরা বা বেলীর মালা এনে দিতে৷ শিশির গাজরা পেয়েও তা নিলো না অনেক খুঁজে বেলীর মালা নিয়ে এলো। শিফা সেই মালা পেঁচিয়ে দিলো একটা আলতার খোঁপায় আর দুটো হাতে চুড়ির মত। মালা ছিলো চারটা তাই একটা মালা শিফা নিজেও খোঁপায় জড়ালো। আলতাকে সে নিজের মতো করেই কাজল আর লিপস্টিকে সাজিয়ে দিলো। শহুরের মেকাপের না কোন ফাউন্ডেশন, না ব্লাশার শুধু কাজল আর লিপস্টিকেই যেন আলতা হয়ে উঠলো অপ্সরী। এ জগতের বাইরের কোন রুপকথার রাজ্যের রুপমোহিনী হয়ে নেমে এসেছে এ ধরায়। চোখ ধাঁধানো রুপ আলতার আজ যেন রং তুলির ছোঁয়ায় নজর কাড়ছে সকলের। আলতাকে নিয়ে ঘর থেকে বের হতেই বাড়ির প্রায় সকলেই হতভম্ব হয়ে গেল। আলতার গায়ের রঙ এমনিতেই সকলের নজর কাড়ে। মেয়েটা একটু হাসলেও তার গালে লালিমা স্পষ্ট হয়। আর আজ যেন কাজলের টানে চোখের পত্রপল্লবে মেঘ নেমে এসেছে৷ ঘাড়ের পেছনে খোঁপার বেলী ফুলের রাজ্য আর ওষ্ঠ,, অধরে বর্ষণের তেজ। সত্যি বলতে আলতাকে সাজাতে গিয়ে শিফা নিজেও চমকে উঠছিলো। চোখের সামনে বড় হওয়া ছোট্ট আলতা কবে যে কিশোরী হয়ে উঠেছে সে খেয়ালই করেনি। নকশিও কি খেয়াল করেনি তার মেয়েকে! এতদূরে ছেড়ে দিলো তার সাথে। যদি কারো নজর লেগে যায়! তার মনের শঙ্কা সত্যি হয়ে গেছে অনেক আগেই কিন্তু যার দ্বারা হয়েছে সে তো নিজেই সে খবর জানে না। শিশির আলতাকে কখনো বোনের মত স্নেহ করেনি করেছে নিজের সম্দের মতোই হেফাজত, যত্ন আর শাষন। তার অবচেতন মন সর্বদা তটস্থ থাকে আলতার ব্যপারে এর কারণও তার কাছে স্পষ্ট নয়।

আলতাকে দেখে শিশিরের মামা বাড়ির প্রায় সকলেই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে দেখছিলো। বড় মামী তো বলেই ফেলল, ‘শিফা তুই তোর ননদের সাথে কথা বল জাহিদের জন্য আমি এই মেয়েকেই রাখবো।কি সুন্দর একেবারে পরীর মত রুপ।’

শিশির মাত্রই পাঞ্জাবীটা গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছিলো। মামীর কথা শুনে তার পা সেখানেই থমকে গেল।

চলবে
(ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমা করবেন)

ধারাবাহিক গল্প
#শিশিরে_ভেজা_আলতা
#ফারহানা_আক্তার_রুপকথা
পর্ব-৯

গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে একতলা বাড়ির ছাঁদটিতে। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান হব কনভেনশন হলে৷ শিশিরের মামা আর মামাতো ভাইদের কতশত রাজনৈতিক কাছের লোক আসবেন বিয়েতে তাই টাকা পয়সার বন্যা বইয়ে দিচ্ছে এভাবে। কনেকে পার্লার থেকে নিয়ে আসতেই রাত প্রায় নয়টা বাজলো। অনুষ্ঠান শুরু হলো তারও পর। শিশির সন্ধ্যে থেকে চুপচাপ বসেছিলো ছাদে। মেহমান আসার আগেই মামাতো ভাইরা আর তাদের বন্ধুরা এসে গান বাজনা হৈ হুল্লোড় লাগিয়েছে। বিকেলে যেটুকু’বা মন লেগেছিলো এই বাড়িতে সন্ধ্যের পর তাও দুঃসহ লাগছে। আর আলতা অসভ্যটাকে সে কতবার বলেছে ছাঁদে আসবি না কথাই শুনছে না। একটু পরপর ধেই ধেই করে আসছে, যাচ্ছে। শিশিরের চোখে পড়েছে তার মেজো মামার ছেলে তৌহিদকে। আলতা যেমন নাচতে নাচতে উপরে আসছে তেমনই নেচে নেচে তৌহিদ ভাইয়ের নজরও আলতার ওপর ঘুরছে। মেজাজের শেষ দশা তাতেই হলো৷ না চাইতেও এবার শিশিরের দৃষ্টি আলতাকে খেয়াল রাখছে৷ আলতা যেদিকে তাকেও সেদিকে যেতে হচ্ছে। কারণটা অবশ্য তৌহিদ ভাইয়ের চরিত্র। বাড়িতে জাহিদ ভাই আর বাকিরা যেমনই হোক সরাসরি কোন মেয়ের দিক হাত বাড়াবে না কিন্তু তৌহিদ ভাইয়ের যেসব স্ক্যান্ডাল সে শুনেছে তাতে আলতা, শিউলি কিংবা অন্য কোন সুন্দরী মেয়েই নিরাপদ নয় তার সামনে। আর আলতাকে নিয়ে তৌহিদ ভাইয়ের দৃষ্টি তো স্পষ্ট লোলুপ। নিজের বাড়ি বলে যে একদম সংযত থাকবে তার কি গ্যারান্টি! অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পরই সবাই মুরুব্বীরাও সবাই ছাদে চলে এসেছে। তাতেই কিছুটা স্বস্তি পেল শিশির। আলতাকে ডেকে এবার ধমকে বলল মায়ের কাছ ছাড়া না হতে। কিন্তু শিউলি তো একগাদা মেয়ের ভীড়ে। তাকেও ডাকলো বার কয়েক কিন্তু সে বের হলো না সেখান থেকে। বোঝাই যাচ্ছে এখানকার চাকচিক্য তাকো সম্মোহিত করে রেখেছে। বেশি জোরাজোরি না করে শুধু সাবধান করলো মেয়েদের আলাদা যেন না ঘুরে কোথাও অথবা মায়ের কাছে যেন যায়।

নকশি আজ একা আবার জয়তুনও একা। তাই জয়তুনই ডাকলো, ‘নকশি কাম শেষ কইরা আমার ঘরে আইয়া ঘুমা।’

‘আসতাছি ভাবী। একলা ঘুম আসবো না আপনার সাথেই ঘুমাবো’ বলেই নকশি স্কুলের কিছু কাজ গোছালো। আগামী সপ্তাহে পরীক্ষা শুরু হবে। এদিকে আলতাকে বারণ করার পরও বিয়েতে গেল। পড়াশোনাটা এখন আর আগের মত নেই। শিশিরটাও বড় পাগল কি দরকার ছিলো এমন উড়নচণ্ডী মেয়েকে বিজ্ঞান বিভাগে দেওয়ার! মাথা ভালো তার কিন্তু সে তো পড়েই না ঠিকঠাক। হাজারটা চিন্তা নিয়ে নকশি ঘর তালাবদ্ধ করে চলে গেল শরতদের ঘরে। রাত প্রায় দশটা বাজে আজ শরত কিংবা আহসানুল্লাহ কেউই আসেনি এখনো। নকশি আর জয়তুন খাটে বসলো। জয়তুনের ঘরে এ খাটটা নতুন। কিছুদিন আগেই শরত ভালো সেগুন কাঠ কিনে অর্ডার দিয়ে বানিয়েছে তার মায়ের জন্য। শিউলির জন্য আলাদা ঘর আছে কিন্তু নতুন খাট পেয়ে সে আর অন্য ঘরে ঘুমায় না। পাশাপাশি দুজন স্বামীহীনা নারী। একজনের বয়সে মধ্য পেরিয়ে যাচ্ছে আর অন্যজন সবে তার যৌবনের বয়সের ভারী বেলায়। অল্প বয়সে মেয়ের মা হওয়াতেই যেন সে নিজেকে সর্বদা একটু বয়স্ক প্রমাণ করতে চায়। আহসানুল্লাহর বন্ধু জহির এখনো পথ চেয়ে আছে নকশির। লোকটা তরুণ বয়সে প্রেমে পড়েনি। আর যখন প্রেমে পড়লো তো আর কোনদিকে মন দিতে পারলো না। জহিরের আপন বলতে বিধবা মা ছিলো সেও বছর পাঁচ হলো দুনিয়া ত্যাগ করেছে সন্তানের রঙিন জীবন না দেখেই। এ নিয়ে অবশ্য নকশির কিছু করার নেই। সে বারংবার বলেছে মেয়ে রেখে সে আর দ্বিতীয় বিয়ে করবে না। মেয়ের বাবা আর তার ভিটেও এখন মেয়ের কপালে জুটবে না। এই মেয়েকে কোন দরিয়ায় ফেলে সে নিজের নতুন সংসার সাজাবে! আর এখন তো মেয়েটা যথেষ্ট বড়ই হয়ে গেছে। এইতো সেদিনও একজন এসে খুব করে ধরলো মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। মেয়েটাও হয়েছে তার মত সুন্দরী। না বরং তার চেয়েও শতগুণ বেশি সুন্দর তাইতো এইটুকুনি মেয়ের পেছনে কতজনের সু আর কুদৃষ্টি তার ইয়ত্তা নেই। এতদিন তেমন ভয় লাগেনি মেয়ে নিয়ে আর তার কারণ হয়তো শিশির। কিন্তু যখনই মনে পড়ছে শিশির ঢাকা চলে যাবে আর দিন তিনেক পর। তখন! আলতা যে পরিমাণ বেয়াড়া, কখন কোথায় খেলতে যাবে, কার সাথে মিশবে কে জানে। তখন নজরে নজরে রাখাও তার পক্ষে সম্ভব হবে না। ভেবে ভেবেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। জয়তুন খেয়াল করতেই বলল, ‘কি হইছে রে নকশি। এমনে শ্বাস ছাড়লি ক্যা?’

‘ভাবী, আমার কেমন জানি ভয় লাগছে। আলতাকে নিয়ে চিন্তা বাড়ছে দিন দিন৷ এর আগে একদিন শাওনের সাথে মারামারি হলো শিশিরের মনে আছে?’

জয়তুন মুখটাকে ধারালো করে বলল, ‘মনে থাকবো না আবার। ওই হারামজাদা আমাগো শিশিররে কেমনে মারলো। বাপটা যেমন শয়তান তার ঘরে হইছেও আরেকটা শয়তান। লুইচ্চার ঘরের লুইচ্চা হইছে।’

নকশি চমকে গেল জয়তুনের রাগী মুখ দেখে৷ তার মনে হলো কোন কারণ আছে এই রাগের পেছনে। সে আলতাকে নিয়ে কিছু বলতে চাচ্ছিলো কিন্তু জয়তুনের কথা শুনে মনে প্রশ্ন জাগলো।

‘কি হইছে ভাবী? শাওনের আব্বার সাথে কোন ঝগড়া বিবাদ আছে?’

‘ঝগড়া বিবাদ ওই লুইচ্চার লগে? হারামির ঘরে একটা কুজাত ওইডা। তোর বড় ভাই মরার সময় আমি তো আরো জোয়ান আছিলাম। তুই যহন আইলি তহনও তো আমার বয়স ভারী না দেখছোছ।’

নকশি জবাব দিলো, ‘হ্যাঁ, তখন তো শরতই মাত্র আট কি নয় বছরের ছিলো। আপনার তো ভরা যৌবন।’

‘হ, তহনই ওই ইবলিশ শয়তান পিছে লাগছিলো। ঘরে বউ পোলাপান থুইয়া আমার ঘরে ঢুকার কত্তো চেষ্টা চালাইছে। শুধু আমার ধারের মুখের ডরে বেশি বাড়তে পারে নাই।’

জয়তুনের কথা শুনে তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই সমাজে স্বামী ছাড়া নারী ঢেকে না রাখা মিষ্টির মত। কোথা কোথা থেকে কেমন করে যে মাছি এসে বসতে চায় তার ঠিক নেই। নিজের মনের দুঃখ আর কি বলবে বুঝতে পারে না নকশি। এই পরিস্থিতিতে সেও কি কম পড়েছে! আগে যখন প্রাইমারি স্কুলে মাস্টারি করতো তখন সেখানকার হেড মাস্টারও কম কীর্তি করেনি তার সাথে। এরপর বাজারে মাংস কিনতো এক দোকান থেকে সে লোকটাও কত বাজে কাহিনি করেছে। চারপাশে শেয়াল, শকুনের কমতি ছিলো না তার এইটুকু বয়সে। এখন যত ভয় মেয়েটাকে নিয়ে। জয়তুন আর নকশির কথার মাঝেই শরত আর আহসানুল্লাহ বাড়ি ফিরলো। জয়তুনের ঘরেই খাবে আহসানুল্লাহ তাই শরত আর তার চাচাকে একসাথেই খাবার দিলো শরতের ঘরে। চাচা ভাতিজা খেতে খেতে কিছু আলাপ করছিলো তার মাঝেই জয়তুন কথা তুললেন, ‘আহসানুল্লাহ, একটা কথা কওয়ার ছিলো।’

‘বলেন ভাবী।’
শরত ভাতে তরকারি নিতে নিতে আঁড়চোখে তাকালো মায়ের দিকে। মনে মনে বলল, ‘এখন এসব বলো না আম্মা।’

মনের কথা মনে থাকতেই জয়তুন বললেন, ‘শরতের বিয়া করাইতে চাইতাছি। তুমি কি কও?’

‘কি বলেন ভাবী?’ মাত্র অনার্স পরীক্ষা শেষ হইছে ওর এখনো ঠিকঠাক ব্যবসাটা নিয়ে সফলতা দেখেনি। যা করছে তা কম না কিন্তু ঘরে শিউলি আছে তার ভবিষ্যৎ, বিয়ে শাদি ভেবে অন্তত আরো কিছু জমা হোক মানে টাকা পয়সা।’

জয়তুন দমে গেলেন আর শরত মনে মনে প্রচণ্ড খুশি হলো। তারও ভাবনা সে আগে কিছু জমাবে শিউলির জন্য । ধুমধামে বোনকে বিয়ে দিয়ে মায়ের জন্য পারমানেন্ট কিছু করে তবেই নিজপর সংসার। পরের মেয়ে এসে সংসার কেমন রাখবে তা আগেই বলা যায় না। জয়তুনের কথা ফুরিয়ে গেল।

‘আলতা কোথায় আম্মা?’

‘আছে এইদিকেই।’

‘এইদিকটা কোনদিক?’ অধৈর্য্য হয়ে প্রশ্ন করে শিশির। তার উৎকন্ঠা টের পায় না শিফা সে স্টেজে থাকা তার ভাতিজির হলুদ দেখতে ব্যস্ত। মনে মনে রাগ হচ্ছে কিন্তু রাগ প্রকাশের আপাতত কোন জায়গা না পেয়ে সে উল্টোদিকে গেল। পুরো ছাঁদ তন্ন তন্ন করেও সে আলতাকে পেলো না। মাথাটা এত গরম হতো না যদি না একটু আগে তৌহিদ ভাইয়ের বলা কথাগুলো শুনতো। মাত্র মিনিট পাঁচেক আগেই সে চিলেকোঠার ঘরের দরজায় ছিলো ভীড় থেকে একটু সরে৷ শোরগোলের মাঝে কানে এলো কিছু কথা, ‘তৌহিদ মেয়েটা কে রে দোস্ত?’

‘কোন মেয়ে?’ তৌহিদ প্রশ্ন করতেই তার বন্ধু বলল, ‘ওই যে তোর ফুপুর সাথে সাথে ঘুরছে দেখলাম।’

‘খবরদার দোস্ত নজর দিস না। ওইটা আমার পাখি আমার হবু বউ। বাচ্চা বউ হবে ও আমার। আমি কালই বিয়ের প্রস্তাব দিবো ফুপুর কাছে।’

‘দোস্ত তুই বিয়ে এইটা কি সম্ভব! চিল করিস সাথে আমারেও দিস।’

‘দ্বিতীয়বার এই কথা উচ্চারণ করিস না আমার সামনে।’

‘কিন্তু তোর সাথে বিয়ে দিতে রাজী না হয়! মানে তোর ফুপু তো জানে তোর চরিত্র…. ‘

‘চুপ কর শালা… সব ব্যবস্থা আজই করবো। বিয়ে না দিয়ে যাবে কই। থাক তুই আমি আসছি…’ তৌহিদ কথাটা বলেই চিলেকোঠা থেকে বের হচ্ছিলো। তার পায়ের শব্দ শুনতেই শিশির সরে গেল সেখান থেকে আর আলতাকে খুঁজতে লাগলো। তার মাথা ভো ভো করছে। কয়েক সেকেন্ড এর জন্য মনে হলো কোন সিনেমার সংলাপ শুনলো সে। এত অধঃপতন এমন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তানদের হতে পারে তা ভাবতেই গা জ্বলে উঠলো। আব্বা হয়তো এ কারণেই নানা বাড়ির কাউকে পছন্দ করে না। শিশির অনেক খুঁজে আলতাকে ছাদে না পেয়ে নিচে গেল। মা যে ঘরে থাকবে সে ঘরের দরজা খোলা। অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আলতা তার শাড়ির কুঁচি ঠিক করছে। বা দিকে তাকাতেই দেখলো সিঁড়ি বেয়ে তৌহিদ ভাই এদিকেই আসছে। শিশির আর কোন খেয়াল না রেখেই ঝট করে সে ঘরে ঢুকলো। তার ধারণা সঠিক করে দিয়ে তৌহিদ ভাইও এসে সে ঘরের দরজায় দাঁড়ালো। তৎক্ষনাৎ আর কিছুই মাথায় এলো না শিশিরের সে দু হাতে আলতাকে টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে আচমকা তার ওষ্ঠে নিজ অধরে মিশিয়ে দিলো। তৌহিদ দরজার সম্মুখেই থমকে গেল। এত বড় ঝটকা তার জন্য সামাল দেওয়া একটু কষ্টের হলেও সে শিশিরকে দেখে সামলালো। আর যাইহোক ছোট ভাইয়ের প্রেমিকার দিকে নজর দেওয়ার মত লোক সে নয়। বড় ভাবী হলে অন্য কথা! মনে মনে এমনটা ভেবেই সে দরজা ছেড়ে সরে গেল। কিন্তু নবযৌবন প্রাপ্ত শিশির ভুলে গেল ক্ষণিকের জন্য পার্থিব সকল ভয়, ভাবনা, রাগ। অধরের এই চমকপ্রদ স্পর্শে হিতাহিতজ্ঞানশূন্য শিশিরের একটা হাত ধীর গতিতে উঠে এলো আলতার বক্ষপিঞ্জরের। ছটফটিয়ে আলতা ধাক্কা মেরে বসলো শিশিরকে। মাত্র কয়েক সেকেন্ড নাকি কয়েক মিনিট! নিস্তব্ধ এক তুফান লন্ডভন্ড করে দিলো শিশিরের মন আর আলতার কিশোরী মনকে। এক মুহুর্ত আর দেরি না করে বেরিয়ে গেল শিশির। ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়লো আলতা।

চলবে
(রিচেক করা হয়নি ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)