#শুধু_তুমি_আমার
#পর্ব_২২
#Fariba_Ahmed
মেঘ বলে উঠে,
–আপনি তো এসএন সেজে গিয়েছিলেন।যদি রাহুল এই কাজ করে তাহলে সে এরকম কেন করবে?আপনার সাথে কি ওর কোনো শত্রুতা আছে?
–আছে মেঘ।তাই রাহুল আমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে।আমার ধারণা ওই লোকটা রাহুলই ছিলো।
ইয়ান বললো,
–শালিকা তুমি এটা জেনে গেছো যে শুভ্রই এসএন আর এটা জানো না যে শুভ্রই মিস্টার আর….
–ইয়ান কি হচ্ছে এসব?কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো আর তুই কি বলছিস।মেঘ যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
–কিন্তু?
–কোনো কিন্তু নয়।রাত হয়ে গিয়েছে।অনেক ধকলও গেছে।তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
–ঠিক আছে।
মেঘ মনে মনে ভাবতে থাকে,
–জিজু আমাকে কি বলতে চেয়েছিলো?আর মিস্টার শুভ্র বাঁধা কেন দিলেন?কি এমন কথা যা আমি জানি না।তার মানে শুভ্রের এসএন এর পরিচয় ছাড়াও আরো অন্য কোনো পরিচয় আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে মেঘ বাথরুমে চলে যায়।মেঘ চলে যেতেই শুভ্র ইয়ানকে বলে,
–ইয়ান কি বলতে যাচ্ছিলি তুই?
–কিন্তু শুভ্র এটা তো ও জানবেই।আজ বললে কি হতো?
–অনেক কিছু,তুই বুঝবি না।
–তুই যাতে আর্ট কম্পিটিশনে আর্ট করতে না পারিস এজন্যই রাহুল তোর উপর অ্যাটাক করলো।দেখেছিস ডান হাতটা খুব খারাপভাবে আঘাত করেছে।এখন কি হবে?
–ডোন্ট ওরি ইয়ান।রাহুল খান নিজেও জানে না ও কি করেছে।আর্ট কম্পিটিশনের দিন আরাফ খান আর রাহুল খানের শেষ দিন হবে।ওদের আসল রূপ আমি সবার সামনে নিয়ে আসবো।
–আর একদিন পরই তো আর্ট কম্পিটিশন।একদিনে তো তোর হাত ভালো হবে না।
–এটা নিয়ে চিন্তা করিস না।আমি সব সামলে নিবো।আমার মায়াবিনীর জন্য আমাকে পারতেই হবে।তোকে যে কাজটা করতে বলেছিলাম তা কতদূর?
–অনেকটাই হয়েছে।আর একদিনের মধ্যে বাকি কাজও হয়ে যাবে।আরাফ খান আর রাহুল খান জানেও না তাদের জন্য কি অপেক্ষা করছে।এই রাহুলকে আমি ছাড়বো না।ওর শেষ দেখেই ছাড়বো।
–না ইয়ান।এখন কিছু করিস না।যা করার আমি করবো।এক ঢিলে দুই পাখি মারবো।
–ঠিক আছে।তুই রেস্ট নে।
–আচ্ছা।
ইয়ান চলে যায়।
একটু পর মেঘ সাওয়ার নিয়ে বের হয়।বের হয়ে দেখে শুভ্র শুয়ে আছে।শুভ্রকে আর না ডেকে মেঘ নিচে চলে যায় খাবার আনতে।নিচে গিয়ে দেখে নার্সটা সোফায় বসে আছে।মেঘকে নার্সটা বলে শুভ্রের রুমটা দেখিয়ে দিতে।মেঘ দেখিয়ে দেয়।একটু পর মেঘ খাবার নিয়ে ঘরে যায়।কিন্তু ঘরে গিয়ে যা দেখে তা দেখে মেঘ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।নার্স শুভ্রের খুব কাছাকাছি বসে আসে।দুজনে হেসে হেসে কথা বলছে।মেঘ খাবার নিয়ে শুভ্রকে খাইয়ে দিতে নিলে নার্সটা বাঁধা দেয়।খাবারের প্লেট মেঘের হাত থেকে নিয়ে যায়।
–কি হলো আপনি প্লেটটা নিয়ে নিলেন কেন?
–মেম আপনি বসুন।আমি স্যারকে খাইয়ে দিচ্ছি।
–আপনি কেন খাওয়াবেন?
–আমাকে তো এসবের জন্যই আনা হয়েছে।স্যারকে খাইয়ে দেওয়া,মেডিসিন ঠিক মতো খাওয়ানো,স্যারের যত্ন নেওয়া।
–আমি আছি আমি খাইয়ে দিতে পারবো।
–না মেম,আমি দিচ্ছি আপনি বসুন।
শুভ্রও নার্সের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
–ও তো ঠিক বলেছে।তুমি যাও,খেয়ে নাও।আমাকে ও খাইয়ে দেক।
শুভ্রের কথা শুনে রেগে যায় মেঘ।মনে মনে বলতে থাকে,
–সুন্দরী নার্স পেয়ে গলে গেছে।আমি উনার বিয়ে করা বউ।আমি উনাকে খাইয়ে দিতে চাইলাম আর উনি না করছেন।ঠিক আছে আমিও খাওয়াবো না।খাক এই নার্সের হাতে।যত মন চায় খেয়ে নেন।আমার কি?হুহ।
তারপর শুভ্রের দিকে তাকিয়ে ভেঙচি কেটে মেঘ চলে যায়।
এদিকে শুভ্র মনে মনে বলতে থাকে,
–ইশ কি করলাম।আমার মায়াবিনী আমাকে খাইয়ে দিতে চেয়েছিলো আর আমি উল্টো ওকে রাগিয়ে দিলাম।মায়াবিনী তো এখনো আমাকে মেনে নিতেই পারেনি।আমাকে চিনতেও পারেনি।নয়তো কখনো অন্য একটা মেয়ের হাতে খেতে দিতো না।
শুভ্রের একদম ইচ্ছা করছে না এই নার্সের হাতে খেতে।নার্স শুভ্রকে যখন খাওয়াতে যাবে তখন মেঘ হঠাৎ করে এসে প্লেট কেড়ে নিয়ে বলে,
–আপনি বাইরে যান।আমার জামাইকে আমি খাইয়ে দিতে পারবো।আপনি পরে আসুন।
–কিন্তু মেম,
–কোনো কিন্তু নয়।
তারপর নার্স চলে যায়।
মেঘ শুভ্রকে খাবার খাইয়ে দিতে থাকে।রাগে শুভ্রের সাথে একটা কথাও বলে না।শুভ্র তো মেঘের হাতে খাবার খেতে পেরে খুব খুশি।মেঘ শুভ্রকে খাইয়ে দিয়ে নিচে চলে যায়।নিজেও খাবার খেয়ে নেয়।নার্স এসে শুভ্রকে মেডিসিন দেয়।নিজে খাইয়ে দিতে চাইলে শুভ্র বাঁধা দেয়।নিজেই খেয়ে নেয় শুভ্র।
মেঘ ঘরে এসে দেখে শুভ্র বসে শুয়ে আছে।মেঘ লাইট নিভিয়ে দিয়ে শুভ্রের অপর পাশে শুয়ে পড়ে।ভোর রাতের দিকে কারো গোঙানির শব্দ পায় মেঘ।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে শুভ্র কেমন যেন কাঁপছে।মেঘ শুভ্রের কপালে হাত দিয়ে দেখে অনেক জ্বর এসেছে।মেঘ তাড়াতাড়ি করে পানি আর কাপড় নিয়ে আসে।শুভ্রের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।কম্বল দিয়ে ভালো করে শুভ্রের শরীর ঢেকে দেয়।অনেকক্ষণ জলপট্টি দেওয়ার পরেও শুভ্রের জ্বর কমছিলো না।মেঘ অনেক ভয় পেয়ে যায়।এতো রাতে কাকে ডাকবে।ইয়ানও বাসায় নেয়।কোনো একটা কাজে বাইরে গেছে।মেঘ একটা তোয়ালে ভিজিয়ে আনে।শুভ্রের শরীর মুছিয়ে দিলে জ্বরটা কমে যেতে পারে।কিন্তু এখন মেঘের খুব লজ্জা লাগছে।সে শুভ্রের শরীর কি করে মুছিয়ে দেবে।কিন্তু তাকে এটা করতে হবে।শুভ্রও তো জেগে নেই।মেঘ শুভ্রের শার্ট খুলে ভালো করে শরীরটা মুছিয়ে দিলো।শরীর মুছা শেষ হলে আবার জলপট্টি দিতে থাকে।শুভ্রের পাশে বসে থাকতে থাকতে মেঘ একসময় ঘুমিয়ে যায়।
সকালে সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যাউ শুভ্রের।চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার কপালে ভিজা কাপড়।পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে মেঘ শুয়ে আছে।শুভ্র কিছুই বুঝতে পারছে না।তার মানে কি রাতে তার জ্বর এসেছিলো?মেঘ রাত জেগে তার সেবা করেছে।শুভ্র দেখলো মেঘের কপালে ছোট ছোট চুলগুলো পড়ে আছে।শুভ্র হাত দিয়ে কপালে পড়ে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিলো
কপালে হাতের ছোঁয়ায় ঘুম ভেঙে যায় মেঘের।নড়েচড়ে উঠে।শুভ্র তাড়াতাড়ি করে হাত সরিয়ে নেয়।মেঘ ঘুম থেকে উঠে দেখে শুভ্র জেগে গেছে।মেঘ শুভ্রের কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আর এখন নেই।কমে গেছে।
–কেমন আছেন আপনি এখন?রাতে তো অনেক জ্বর এসেছিলো।
–ভালো আছি এখন।তুমি আমার সেবা করেছো?
–তো আর কে করবে।আপনার ওই নার্স করবে?
–নাহ।আমি কখন এটা বললাম?
–না বলেননি।আপনি বসুন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
সারাদিন মেঘ শুভ্রের খেয়াল রেখেছে।নার্সটাকে শুভ্রের কাছে বেশি যেতে দেয়নি।মেঘের কেন জানি শুভ্রের কাছে নার্সটার যাওয়াটা পছন্দ হয় না।আজ রাতে আর শুভ্রের জ্বর আসেনি।সারাটা দিন মেঘ শুভ্রের অনেক যত্ন নিয়েছে।
পরের দিন সকালে____
শুভ্র এখন কিছুটা সুস্থ হয়েছে।মাথার ব্যান্ডেজটা এখনো আছে।মেঘ শুভ্রের জন্য খাবার আনতে নিচে গিয়েছে।খাবার নিয়ে এসে শুভ্রকে খাইয়ে দেয়।প্লেট রেখে ঘরে এসে দেখে শুভ্র শার্ট পড়ার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না।ডান হাতে ব্যাথার কারণে কোনো কাজ করতে পারে না।ইয়ান এসে চেঞ্জ করিয়ে দিয়ে যায়।শুভ্র মেঘকে দেখে বললো,
–ইয়ানকে ডেকে দাও।
–কিন্তু জিজু তো কি একটা কাজে বাইরে গেলো।
–ওওহ।
–আপনি কিছু না মনে করলে আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি।
–ঠিক আছে।
মেঘ শুভ্রকে শার্ট পড়িয়ে দেয়।মেঘের খুব লজ্জা লাগছিলো। শুভ্র শুধু মেঘের লজ্জা মাখা মুখটা দেখছিলো।
চলবে….