শেষের পঙক্তি পর্ব-১০+১১

0
455

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
“ধরো, সোনালি রঙা প্রজাপতির ডানায়,
আজ তোমার নাম উৎসর্গ করলাম।
রাগ করবে কি? বলো না?
ওই যে! নীল রঙা শখের প্রজাপতি পাই নি বলে?”
[তিথী]

ধরণীর বুকে যখন আঁধারকে ছাঁপিয়ে অস্ফুট আলো সবে আবছা ফুটতে শুরু করেছে সাথে আছে কিছু নাম অজানা বিহঙ্গের কলরব তখন তূর তার একান্ত ডায়েরীটিতে কিছু ছন্দ লিপিবদ্ধ করে। দীর্ঘসময় ঘুমিয়ে কাটানোর ফলশ্রুতিতে ফজরের আজানের আগেই ঘুম ভেঙে গেছে তার। ঘুম থেকে উঠার কয়েক মিনিটের মধ্যে আজান হলে তূর নামাজ পড়ে তার ডেস্কে পড়ে থাকা ধূলো পরে যাওয়া ডাইরীটি নিয়ে ব্যালকনিতে বসে। ডায়েরীটিতে মাত্র কয়েকটা পাতায় কিছু ছন্দ লেখা। সবটাই একজনকে উৎসর্গ করে। এখন সদ্য পরিস্ফুটিত আলোতে নিজের কিয়ৎক্ষণ আগের লেখা ছন্দটা কয়েকবার আউরালো। তারপর কি যেনো ভেবে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। তূরের বাবা-মায়ের রুম খোলা। উনারা নামাজ পড়ছেন। তূর রান্নাঘরে গিয়ে নিজে চায়ের পানি বসালো। চার বছর আগে যেমন করে চা বানাতো তেমন করার প্রচেষ্টা মাত্র। পানিতে আদা, এলাচি, লবঙ্গ, দারুচিনি দিয়ে কিছুক্ষণ ফুটিয়ে নেওয়ার পর যখন সবগুলো মশলার কারণে পানিতে একটা রঙ চলে আসলো তখন হালকা চা-পাতি দিলো। ৩০ সেকেন্ড হওয়ার সাথে সাথে নামিয়ে নিয়ে কাপে ছেঁকে ঢেলে পরিমান মতো লেবু ও চিনি মিক্স করলো। বাবা-মা এর ডায়েবেটিস বলে তাদের চা-তে মধু দিয়েছে চিনির পরিবর্তে। চাচা-চাচি ও ছোট দুই বোনের জন্য চা নিয়ে ওদের ঘরে টোকা দিয়ে দিয়ে আসলো। নাফিহা উঠে নি আর নীরার পরীক্ষা বলে উঠে পড়তেছিল। তারপর নিজের জন্য নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেলো। বহুদিন পর নিজের হাতে চা বানানো নিয়ে ভয়ে ছিল যে তিতা না হয়! কিন্তু না। সব ঠিকই আছে।

_________
মিহাল আছে চিল মুডে। সকাল সকাল ফুরফুরে মেজাজে নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। কাল রাতে তাইজুল ফোন করে বলেছিল যে তানজিনার ফোন নাম্বার বন্ধ ও ফেসবুক ডিএক্টিভ।

তূর আজকেও যেতে পারে নি তানজিনার ভার্সিটিতে কারণ তূরের মামারা আজকে সবাই তূরদের বাড়িতে নিমন্ত্রিত। গতকালকেই নাকি তূরের মা তাদের নিমন্ত্রণ করেছিল। তূরকে বেরোতে দিলো না। মামাতো ভাই-বোনদের সাথে কেটে গেলো সারাদিন আড্ডাতে। এদিকে তানজিনার খবর তো তূর জানে না। বরং আজকে গেলে ফিরে আসতে হতো। রাতের বেলা তূরের আমেরিকার এক প্রফেসর তূরকে মেইল করেছে যে তূর মাস্টার্সে কবে ভর্তি হবে? আর তূরের জন্য রিসার্চের একটা ভালো পার্টটাইম রিসার্চ করার ওয়ে পেয়েছে যা অনেকটা জবের মতোই কারণ স্যালারি থাকবে। মাস্টার্সের পর সেটা ভালো ভাবে কন্টিনিউ করতে পারবে।
তূর উনার কাছ থেকে দুই-তিন মাসের সময় নিয়েছে। এই প্রফেসর তূরকে নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করেন। ধর্মে খ্রিষ্টান হলেও তিনি তূরকে মুসলিম বলে হে’য় করে নি। তূরের বলাতে প্রফেসর বুঝতে পারে যে এতো বছর পর পরিবারের কাছে গেছে তাই একটু দেরি তো হবেই।

পরেরদিন,,
তূর বাসা থেকে বের হওয়ার জন্য তৈরি হলে ওর মা এসে বাধ সাধেন। তিনি বলেন,

–দেশে এসেছিস সবে সপ্তাহ পেরোলো কিন্তু তোর বাড়িতে থাকা যেনো দায়! আজকে আবার কই যাচ্ছিস? বন্ধুদের সাথে কি প্রতিদিন দেখা করা লাগে?

তূর ওর মাকে তো বলতেও পারছে না যে তানজিনার সাথে দেখা করতে যাবে। তূর বলে,
–একটু যাবো মা। জলদি চলে আসবো।

তূরের মা নাকচ স্বরে বলেন,
–না। আজ বৃহঃপতিবার। কাল শুক্রবার। কাল তো বের হবি এটা শিউর। তাই আজ বের হবি না। না মানে না। সারাদিন বাইরে টইটই করলে অসুস্থ তো হবিই।

তূর বোঝালো ওর মাকে কিন্তু তিনি নারাজ। তূর ভাবলো, তানজিনার তো শুক্রবার ও শনিবার ভার্সিটি বন্ধ তাই আবার রবিবারেই যেতে হবে। হতাশ নিঃশ্বাস ফেললো। তূর ফেসবুকে তানজিনাকে সার্চ করে না পেয়ে ভ্রুঁ কুঁচকালো। হঠাৎ করে কি ফেসবুক থেকে উধাও হবে নাকি! তাছাড়া তানজিনা ফেসবুক ছেড়ে দেওয়ার পাত্রি না। ওর প্রতিদিন স্টোরিতে বা পোস্টে অনেকগুলা ছবি দিতেই হয় নিজের। তাহলে কি ব্লক করলো? তূর আপনমনে প্রশ্নে জর্জরিত হয়ে ইরাকে ফেসবুকে নক করলো। ইনায়াকে করতে তার ইচ্ছে হয় নি। ইরার থেকে জানতে পারে তানজিনা পরশু থেকে মোবাইল ও ফেসবুক বন্ধ করে রেখেছে আর ভার্সিটিতেও নাকি কাল থেকে আসে না।
তূর এবার ওর মায়ের কাজে খুশিই হলো। নাহলে যে তাকে গিয়ে ফিরে আসতে হতো। ইরাকে তূর বলেছে যেনো তানজিনা ভার্সিটিতে আসলে ওকে চুপিসারে জানায় আর এটা তানজিনা যেনো না জানতে পারে। ইরা রাজি হয়।

তূরও এদিকে লক্ষ্য করছে তানজিনা ফেসবুক এক্টিভ করে কি-না। তাহলে সে একটা সুন্দর পোস্ট দিবে যা তানজিনাকে খোঁচানোর মতো।

_________
রবিবার,,
তানজিনা আজ ভার্সিটিতে আসতে বাধ্য হয়েছে। তার ওই ব্যাপারটা তো ভার্সিটিতে তিনজন ছাড়া কেউ জানে না তাই সে এবার ফেসবুকও ওপেন করেছে। তূর সকালে তানজিনার ফেসবুক খোলা দেখে সাথে সাথে পোস্ট করে,

“যদি কখনো জানতে পারো? তোমার দীর্ঘদিনের ভালোবাসার মানুষটা তোমাকে মনে মনে খুব করে চায় কিন্তু কিছু কারণবশত সে তোমাকে কস্ট দিয়ে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। তখন কি করবে? সেই মানুষটা যদি এখনো অন্যকারও নামে স্বাক্ষরিত না? চেষ্টা করবে না-কি? তার শেষ পঙক্তি হওয়ার?”

পোস্টে অনেক রিয়াক্ট কমেন্ট আসছে। তূরের বিদেশি বন্ধুরাও পোস্টের ইংলিশ ট্রান্সলেট পড়ে কমেন্ট করছে কিন্তু তূর তো তানজিনার রি’য়াকশনের অপেক্ষাতে আছে। তানজিনা কি দেখবে না? হুট করে মেসেঞ্জারে রাফসানের মেসেজ আসে। রাফসান যেহেতু বাঙ্গালি বংশোদ্ভূত তাই বাংলা তার জানা। রাফসান লিখেছে,

“তুমি কি তোমার অতীতে ফিরে যাচ্ছো? জাহিন তো বলেছিল তুমি ভালোবাসার ধোঁ’কা’র স্বিকার হয়ে সব পেছোনে ফেলে আমেরিকায় এসেছিলে আর সেই মানুষটাকে দেখতেও চাও না আর নামও শুনতে চাও না।”

তূর মেসেজটা দেখে ভ্রঁ কুঁচকালো। তূর মেসেজটা দেখে নিজে নিজেই বলে,
–লাইক সিরিয়াসলি! জাহিন ভাইয়া রাফসান ভাইয়াকে এসব বলেছে? কিন্তু খালামনিরা কেউই তো আসল ঘটনা জানে না। বাবা ওদের শুধু ভালোবেসে কস্ট পেয়ে মিহালের সামনে পরতে চাই না বলে দেশ ছাড়ছি এমনটাই বলেছে যাতে কথা না বাড়ে। বাবা মিথ্যে বলে নি কিন্তু ওরা কথার অন্য মানে বের করে নিয়েছে। মানুষকে একটা বললে যে তারা দুইটা বুঝে তার প্রমান আমার রিলেটিভরা। এজন্যই বাবা ওদের সবটা বলতে চায় নি। সব বললে হয় তো আমার ক্যারেক্টার নিয়েও কথা উঠতো!

তূর রিপ্লাই করে,
“নো। নট এট অল। সে আমাকে ধোঁ’কা দেয় নি। সে শুধু তার ফিলিংস লুকিয়ে গেছিলো আমার থেকে কোনো কারণে। এখন সেটার একটু একটু করে আমার সামনে দৃশ্যমান হচ্ছে। আর তুমি ভুল ভাবছো ভাইয়া।”

তূর রাফসানকে তুমি করে বলে এটার কারণও রাফসান। রাফসান তূরকে রিকুয়েস্ট করেছে যাতে ফ্রেন্ড মনে করে “তুমি” বলে ডাকে। রাফসান তূরের রিপ্লাই দেখে আবার মেসেজ করে,

“তুমি কি তাকে চাও? এজন্যই কি বাংলাদেশে ফিরে গেছো?”

তূর সরাসরি ভাবে মেসেজ করে,
“হ্যাঁ। তাকে মন থেকে মুছতে চাই নি কিন্তু তার সামনে পরতে চাই নি বলে আমেরিকায় গিয়েছিলাম। আমি তখন তাকে সামনে দেখলে কস্ট সহ্য করতে পারতাম না কিন্তু এখন আমি অনেকটা স্টেবল তাই তার জন্য শেষ আশা নিয়ে ফিরে এসেছি।”

রাফসান মেসেজে লাইক রিয়াক্ট দিয়ে আর কোনো মেসেজ করে না। তূর এবার ভাবলো ইরাকে মেসেজ করে জানবে। করলোও। ইরা ক্লাসে থাকায় এক ঘন্টা পর সিন করে রিপ্লাই করে,

“তানজিনা ও আমরা দুপুর ৩টা পর্যন্ত ভার্সিটিতে থাকবো। আর তারপর বের হবো।”

তূর জানে আইডিকার্ড পাস ছাড়া সে ঢুকতে পারবে না তাই তিনটার সময় সে ইরাকে এসে ভিতরে নিয়ে যেতে বললো। আর তানজিনার সাথে, ইনায়া ও ইরার সাথে দেখাও হয়ে যাবে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১
–কেমন আছো তানজিনা?
তূর হাসি মুখে প্রশ্ন করলো তানজিনাকে। ভার্সিটির বাহিরে একটা কফিশপে তূর, তানজিনা, ইনায়া ও ইরা বসে আছে। বিকেল ৩ টার কিছুটা বেশি বাজে। তানজিনা সন্দিহান দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,

–ভালো। তুমি কেমন আছো?

তূর আলতো হেসে ঘার নাড়ালো। তানজিনা তূরের দিকে একই নজরে চেয়ে আছে। ইনায়া এবার জিজ্ঞাসা করলো,
–দেশে কবে আসলি তুই?

তূর হাসি মুখে জবাব দেয়,
–সপ্তাহ খানেক হলো। তুই জানতি না? কেন ইরা তো জানতো। তাইজুল মেবি জানিয়েছে ওকে। আমরা তাইজুলদের সাথে সিলেট ট্যুরও করে আসলাম।

ইনায়া ইরার দিকে তাকায়। ইরা তা দেখে ডোন্ট কেয়ার মুডে বলে,
–তানজিনা তো তূরকে পছন্দ করে না। চার বছর আগে তো তূরকে অনেক কিছু বলেছিল আর তুই কিন্তু সেদিন তানজিনার পক্ষেই ছিলি। তাই তোদের জানাই নি। এতে আমাকে কি জবাবদিহি করতে হবে?

তানজিনা ভ্রঁ কুঁচকে বলে,
–ওহো! আমাদের জানাতে প্রবলেম! তাহলে আজকে তূরকে এখানে আনার মানে কি? তুই কি আমাদের সাথে ডাবল গেম খেলছিস?

ইরা তানজিনার সামনে নিজের মোবাইল এগিয়ে দেয় তারপর মেসেঞ্জারে তূরের ইনবক্সে ঢুকে দেখায় কি কি কথা হয়েছিল। তারপর ইরা বলে,
–আমাকে তূরই বলেছো তোর সাথে মিট করবে। দ্যাটস অল।

তূর ওদের এরকম বাকবিতণ্ডা দেখে বলে,
–ইরা আগে জানতো না আমি কবে এসেছি। কালকেই জেনেছে হয়তো। আমিই তাইজুলদের মানা করেছি যাতে তোমাদের না জানায়। এসব নিয়ে এতো প্যানিক হওয়ার কি আছে?

ইনায়া ফেসবুক স্ক্রল করছিল তখন তূরের পোস্টটা সামনে পরলে ইনায়া ভ্রঁ কুঁচকে পোস্টটা পড়ে তারপর তূরের দিকে তাকায় দেখে তূর হাসি মুখে চেয়ে আছে। আজকে যেনো তূরের মুখ থেকে হাসি সরছেই না। ইনায়া তূরকে প্রশ্ন করে,

–নতুন কারো মায়ায় জড়িয়েছিস? এতো ইমোশোন ওয়ালা পোস্ট!

তূর বাঁকা হাসে। এটাই তো চেয়েছিল। তূর হেসে উত্তর দেয়,
–আমার হৃদয়ের পরিসীমা অতোটাও দীর্ঘ নয় যে একাধিক মানুষকে জায়গা দিবো! একজনের মায়া কাটাতে পারলাম না দূরত্ব বাড়িয়েও আবার অন্যজন!

ইনায়া তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
–সময় নষ্ট ছাড়া কিছুই না। সবটা জেনেও এসব করে কি লাভ?

তূর মুচকি হেসে বলে,
–পোস্টটা আবার পড়। তারপরেই বুঝতে পারবি। এবার নতুন কাউকে কল্পনা না করে পুরাতনকেই কল্পনা করে পড়। তারপর তোর মস্তিষ্ক কিসের ইঙ্গিত দেয় বলিস কিন্তু।

ইনায়া সন্দিহান হয়ে আবাে পোস্টটা পড়ে। এবার সাথে তানজিনাও পড়ে। ইনায়া ও তানজিনা পোস্টটা পড়ে দুজন দুজনের দিকে বিভ্রান্ত হয়ে তাকায় তারপর তানজিনা তূরকে রূঢ়ভাবে বলে,

–কি বোঝাতে চাইছো? মিহাল তোমাকে ভালোবাসে নাকি কল্পনাতে তাকে নিয়ে আবারও অবাস্তব স্বপ্ন বুনছো? তোমার তো মানসিক সমস্যা হয়েছিল চার বছর আগে। সেটা কি ভালো হয় নি? আবার এসব পাগলামি করতে ফিরে এসেছো?

তূর নিঃশব্দে হাসে তারপর বলে,
–আমি নাহয় কল্পনাতে তাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনি কিন্তু সেও যে আমার জন্য স্বপ্ন সাঁজায়! সে তো সিলেটে আমার প্রতি তার হৃদয় অনুরুক্তি জাহির করেছে। তোমাকে তো ঠকাচ্ছে! তাই নয় কি?

তানজিনা অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। মিহালের পাঁচ দিন আগে করা কাজটা কি এইজন্য? মিহাল সবসময় এমন ইনসাল্ট করে কি এইজন্য? তানজিনা তূরকে জিজ্ঞাসা করে,
–কি বলেছে মিহাল?

তূর ফোনের দিকে তাকিয়ে ভাবলেশহীন ভাবে বলে,
–সেটা নাহয় মিহালকেই জিজ্ঞাসা করো। সেই সুন্দর করে বলতে পারবে। টাটা। এন্ড থ্যাংকস ফর দা ক্যাপেচিনো।

তূর উঠে চলে যায়। ওদিকে তানজিনা বিভ্রান্ত হয়ে বসে থাকে। তানজিনা সিদ্ধান্ত নেয় আজকে মিহালদের বাড়িতে গিয়ে মিহালকে জিজ্ঞাসা করবে। তূর তো দারুন মুডে আছে। তানজিনা বিভ্রান্ত আর তূর তো এটাই চায়।

তানজিনা সন্ধ্যার আগে মিহালদের বাড়িতে গেলো। মিহাল তখনও বাড়িতে ফেরে নি। তানজিনা মিহালের মায়ের সাথে আড্ডা দিয়ে মিহালের রুমে ঢুকলো। মিহাল কিছুক্ষণের মধ্যে আসলে নিজের রুমে তানজিনাকে দেখলে প্রচণ্ড রেগে যায় কিন্তু রাগ সামলে তানজিনাকে বিভ্রান্ত করতে শার্টের হাতার ভাজ করতে করতে বলে,

–আরে তানু বেপি! কেমন আছো? জানো? দুইদিন তোমাকে কত্তো মিস করেছি! এমন কেউ করে বলো? আমার কস্ট হয় না বুঝি?

তানজিনা অবাক হয়। তারপর তূরের কথা গুলো মাথায় আসলে তানজিনার বিভ্রান্তিকর লাগে। তানজিনাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিহাল বলে,

–শোনো, পরশু অফিসের কলিগরা পার্টি থ্রো করেছে। সেখানে তোমাকে নিয়ে যাবো। সবার সাথে পরিচয় করাতে হবে তো।

তানজিনা বলে উঠে,
–আমি কেনো?

মিহাল হেসে বলে,
–তুমি না আমাকে বিয়ে করবে? না চাইলেও তোমাকে নিতে হবে। চিন্তা করো না, ওখানে ফ্লার্ট করার মানুষের অভাব হবে না!

তানজিনা শেষের কথাটা শুনে মুখ থমথমে হয়ে যায়। তানজিনা এবার জিজ্ঞাসা করে,
–তুমি নাকি সিলেট গিয়েছিলে তূরের সাথে?

মিহাল এবার চোখ ছোট ছোট করে তাকায়। তানজিনা বলে,
–তূর বললো, তুমি নাকি ওকে ভালোবাসো?

মিহাল মনে মনে অবাক হয় কিন্তু চায় না সেটা তানজিনা জানুক। তূর কি বুঝে গেছে? তানজিনার সাথে দেখা করে এগুলোই বললো কেন? মিহাল এবার তানজিনাকে বলে,

–আমার ভালোবাসা আমার কাছে। ঠিক যেমন তোমার ভালোবাসা তোমার কাছে! আর তোমাকে তো মা নিজের আদরের বলে পছন্দ করেছে। তুমি সেদিকেই খেয়াল রাখো। আমি কার সাথে কোথায় গেলাম না গেলাম এগুলো তোমার এখন না ভাবলেও চলবে। আর আমিও কিন্তু কেয়ার করি না তুমি হাজারটা নাকি লাখটা প্রেম করো না-কি করো না। তোমার তো ভাগ্য যে সবটা জেনেও তোমার পরিবারকে ও আমার পরিবারকে এখনও কিছু বলি নি। সো আমার পারসোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করবে না। আর হ্যাঁ, আই এম ইন লাভ উইথ মাই মেঘকন্যা তূর। খুব ভালোবাসি জানো? তোমার তো এই নষ্ট রূপটাই আছে কিন্তু নেই কোনো শুদ্ধ মন। তাই আমাকে ঘাটিয়ো না। নাউ গেট আউট! মাকে গিয়ে তোমার ন্যাকা কান্নাতে যা খুশি বলো। আমি তো জানি তোমাকে বিয়ে করতে হবে তো করবো নাহয়। পরে থাকবে মায়ের আদরের বউমা হয়ে!

তানজিনা হতভম্ব হয়ে গেল। তানজিনা তৎক্ষণাৎ মিহালের রুম থেকে বের হয়ে মিহালদের বাড়ি থেকেই চলে গেলো। মিহাল তাচ্ছিল্য হাসে তারপর নিজে নিজেই সগোউক্তি করে,

“একবার চলো শুধু পার্টিতে। তোমাকে কিভাবে ট্রিট করি দেখবে শুধু। তুমি যেতে না চাইলে মাকে দিয়ে রাজি করাবো। তুমি যেমন আমার মাকে দিয়ে আমাকে ব্ল্যা*কমে*ইল করো তেমনি আমিও করবো। তাও পার্টিতে তোমাকে যেতেই হবে।”

________
হঠাৎ কৃষ্ণাকায় অম্বরের বুক চিঁড়ে বাদলধারা নামলো। রাতের অন্ধকারে বৃষ্টি উপভোগ করার এক আলাদা অনুভূতি। শীতল হাওয়ায় শিহরিত দে’হ ও মন। তূর সফট মিউজিক মোবাইলে ছেড়ে ব্যালকনিতে বসে আছে। কারো উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হতে ইচ্ছে জেগেছে মনের। ইউটিউবে গান ছেড়ে রেখেছিল এখন গান পাল্টে বাজছে,

“দূরে দূরে মেঘ যাচ্ছে পুরে,
মন মেলল স্মৃতি দুডানা।(২)
জানিনা,
কেনো তা জানিনা!
জানিনা কেনো তা জানিনা।(৩)
জানিনা..”

মিহালও ফেসবুকে ঢুকে তূরের আইডিতে ঢুকে দেখলো সকালের পোস্টটা। পোস্টটা দেখে মিহাল নিঃশব্দে হেসে নিজের মাথায় নিজেই টোকা দিয়ে বলে,
–জেলাসিতে আমি সব ইনডাইরেক্টলি উগলে দিয়েছি আর এই মেয়েটা ধারণাও করে ফেলেছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,