শেষের পঙক্তি পর্ব-৮+৯

0
460

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৮
–কি করবো আমি? চার বছর আগে যখন আমার ম’রণদশা হয়েছিল তখন কোথায় ছিল তার এতো ভালোবাসা! তখন তো একটাবারের জন্যও যোগাযোগ করে নি। অর্করা মিহালকে কতোবার ফোন করেছিল কিন্তু একটাবারও সে ধরে নি। এখন কী আবার সে আমার মানসিক স্থিতি নষ্ট করতে এসেছে?

জারিন তূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
–নিজে জানার চেষ্টা কর। একদম নিজ থেকে। মিহালকেও জিজ্ঞেসা করবি না। তবে কারণটা আমার থেকে তোর ভালো জানার কথা।

তূরকে রেখে জারিন ওয়াশরুমে চলে যায় বাহিরে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে। তূর চুপ করে কিছুক্ষণ বসে থেকে ভাবে,
“কারণটা আমার জানা! কিন্তু কিভাবে? কি সেই কারণ?”

মালনীছড়া চা-বাগানে ঘোরাফেরা শেষে ওরা ঢাকার উদ্দেশ্যে বাসে উঠলো। তূর চা বাগানে ঘোরার পুরোটা সময় মিহালকে নজরবন্দি করে রেখেছিল। এতে করে দুই জোড়া চোখের দৃষ্টির মিলন ঘটেছে বারংবার।

ঢাকা পৌঁছাতে পৌঁছাতে রাত দশটা বেজে গেছে। বাসস্টপে নামার পর ছেলেরা মেয়েদের পৌঁছে দিবে তারপর নিজেরা ফিরবে। মিহাল ও তূরের বাড়ি যেহেতু একই দিকে তাই মিহাল তূরের সাথে যাবে। পাশাপাশি বসে দুজনেই চুপ করে আছে। কারও মুখে রাও নেই। নিস্তব্ধ নীরবতায় পথের সমাপ্তি ঘটে। যার যার গন্তব্যে সে সে চলে যায়।

পরেরদিন,,
সকালের নাস্তার পর তূরের বাবা তূরকে ডাক দেয়। তূর গিয়ে ওর বাবার কাছে বসে। তূরের বাবা সিরিয়াস হয়ে বলে,

–তোমার সিদ্ধান্ত জানাও আমাদের। আমেরিকা থেকে মাস্টার্সের আগে কেনো আসলে? তাছাড়া তোমার বাকি জীবন ওখানেই কাটবে।

তূর ওর বাবার কথার মানে বুঝতে না পেরে বলে,
–তোমার শেষের কথাটা বুঝলাম না। আমি এখানে এসেছি এরপর মাস ছয়েক পর চলে যাবো তারপর দুই-তিন বছর পর চলে আসবো।

তূরের বাবা বলেন,
–তোমার জাহিন ভাইয়ার বন্ধুর তোমাকে পছন্দ হয়েছে আর তাছাড়া তুমি জাহিনের বন্ধু রাফসানকে চেনো। তোমার তিন ব্যাচ সিনিয়র সে। জাহিনদের বাড়িতে তার আনাগোনা রয়েছে। রাফসানের বাবা-মাও তোমাকে পছন্দ করেছে। আমরা আমেরিকা যেতাম সেটার জন্যই।

তূর অতোটা অবাক হলো না। তূর এই সন্দেহের কারণেই দেশে চলে এসেছে। তূরের খালা-খালুর সাথে একদিন তূরের খালোতো ভাই জাহিনকে ও তার স্ত্রীকে তূর রাফসান ও তার ব্যাপারে কথা বলতে খানিকটা শুনেছিল। তারপর থেকেই তূর দেশে আসার তোড়জোড় জোড়ালো ভাবে করতে থাকে। রাফসান ছেলেটা ভালো কিন্তু তূরের মন তাকে চায় না। তূর তাকে ভাইয়ের ও বন্ধুর নজরে দেখে। দেশে ফেরার আগে তূরের সাথে রাফসান অনেক যোগাযোগ করতো। খালার কথা শুনে খানিকটা সন্দেহ ছিল তা আরও গাড়ো হয় রাফসানের অপ্রয়োজনে যোগাযোগে। তূর স্বভাবত খুব কাছের বন্ধুদের ছাড়া কারও সাথে আগবাড়িয়ে কথা বলতে যায় না আর না অপ্রয়োজনে যোগাযোগ করে। রাফসানকে তূর বন্ধু ও ভাইয়ের নজরে দেখলেও নিজের জীবনের সবচেয়ে দুর্বিষহ স্মৃতি গুলো জানায় নি। যাকে নিজের অতীত বলতে ইচ্ছে হয় নি তার সাথে বিনা সম্পর্কে অযথা যোগাযোগ অর্থহীন।

তূর ওর বাবাকে শান্ত স্বরে বলে,
–বিয়েতে যেহেতু আমি একটা লিড ক্যারেক্টার তাহলে এতে আমার মতামতের গুরুত্ব থাকা উচিত। আমাকে ছাড়াই শুধুমাত্র রাফসান ভাইয়ার পছন্দের উপর ভিত্তি করে বিয়ে ঠিক করলেই কি হলো নাকি! রাফসান ভাইয়া ভালো ছেলে তবে আমার পছন্দ না। ঠিক এই কারণে আমি দেশে ফিরে এসেছি। তার প্রতিদিনকার অহেতুক যোগাযোগ আমাকে বিরক্তিতে তিক্ত করতো। আমি তাকে খানিকটাও পছন্দ করি না। হতে পারে সে সুদর্শন! কিন্তু আমার কাছে তাকে ভালো লাগে না। এরপর আশা করি এই ব্যাপারে তোমরা আর কথা বাড়াবে না। এই বিয়ের কথা এখানেই সমাপ্ত হোক। তুমি পারলে খালামনিদের ও রাফসান ভাইয়াদের ফ্যামিলিকে জানিয়ে দাও আমার মত নেই বিয়েতে। আমি নিজের মনের বাহিরে এতো যন্ত্রনা পাওয়ার পরেও চলতে পারি না। আমার মতে,
নিজে ভুল করে শাস্তি পেলে সেটা আমার একান্ত ব্যার্থতা কিন্তু অন্যের ভুলের মাশুল দিতে রাজি না। নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা যায় কিন্তু অন্যের ভুল গুলো কাঁটার মতো বিঁধে।

তূর চলে যায় নিজের রুমে। তূরের বাবা গম্ভীর হয়ে সেখানে বসে আছেন। কিয়ৎক্ষণ পর তিনি তূরের মাকে ডাক দিয়ে বলেন,

–আমাদের মেয়ে নিজের অতীত ছাড়তে পারে নি। হাজার মাইল দূরে গেলেও সে যদি নিজ থেকে ভুলতে না চায় তাহলে আল্লাহ্ ব্যাতিত কারও সাধ্য নেই অতীত ভুলানোর। সে নিজেকে সংযত করেছে ঠিক কিন্তু এখনও সেই আগের স্থানেই আছে।

তূরের মা তূরের বাবার হাত ধরে আশঙ্কিত হয়ে বলে,
–ওর কি আবার ওরকম খারাপ অবস্থা হবে? খুব ভয় হচ্ছে আমার।

তূরের বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
–আমাদের মেয়ে অতীত মেনে নিয়েছে কিন্তু অতীতকে বদলানোর আশা রাখে অন্তহীন। ওর ভীতি কেটে গেছে তবে ভবিষ্যতে কি হবে দেখার বিষয়। তার রাগ যে বড্ড ভয়ংকর!

________

“তার চোখের পূর্ণিমাতে,
কাটে এক আঁধার অমানিশা।”
_____তিথী

দিনশেষে যখন পশ্চিম আকাশে লালাভ রক্তিম আভা ছড়িয়ে দিবাকর যখন অস্তমিত হয় তখন চন্দ্রমা তার মহিমাতে ফিরে আসে আঁধার অম্বরে। সূর্যের উপস্থিতি চাঁদের মূল্য পৃথিবীর আকাশে মূল্যহীন করে। আকাশের লক্ষ কোটি তারার মাঝে গোল থালার মতো চাঁদ তার বিশেষত্ব ছড়াচ্ছে। তূর মিহালের ব্যাপারটাতে ভাবছে। তূর কাল একবার তানজিনার সামনা সামনি হবে। অনেক কিছু কৌশলে ক্লিয়ার হতে হবে। ধোঁয়াশার মধ্যে থেকে নিজের মানসিক স্থিতির ক্ষ’তি করবে না।
হঠাৎ নাফিহা এসে তূরকে বলে,

–আপু চলো। আমরা আজকে ফুচকা কম্পিটিশন করবো। কাকা অনেকগুলা ফুচকা এনেছে। ২০ টা করে ফুচকা প্রতিজনকে দেওয়া হবে। আমি, তুমি ও নীরাপু। কে আগে শেষ করে জেতে সেটা দেখবো।

তূর দেখলো নাফিহার চোখে উচ্ছাস। তূর হাসি মুখে যায় নাফিহার সাথে। ফুচকা গুলো বড্ড লোভনীয়। টপাটপ মুখে পু’ড়েও প্রথম হতে পারে নি তূর। হয়েছে তৃতীয়! প্রথম তো নাফিহা।

মিহাল এদিকে কালকে তানজিনার ইউনিভার্সিটির শিক্ষকের সাথে দেখা করবে। তাইজুল ইরার মাধ্যমে তানজিনার প্রফেসরের নাম্বার যোগাড় করেছে। কাল বিকেলে অফিস শেষ হবার পর মিহাল দেখা করতে যাবে একটা কফিশপে। সাথে তানজিনাকে পছন্দ করে ওই দুইটা ছেলেকেও।

_____
অরুন আলোয় বিভাসিত নভোলোক। বিকেলের প্রথম প্রহর এখন। বিকেল ৪ টা বাজে প্রায়। কফিশপে মুখোমুখি চারজন। কারও কারও মুখে বিরক্তির ছাঁপ। তা দেখা স্বত্বেও মিহাল গলা ঝেড়ে বলে,

–আমি মিহাল। মোঃ মিহাল মুনতাসির। আপনাদের কাছে আরেকটা পরিচয় হলো, আমি তানজিনার উডবি হাসবেন্ড!

উপস্থিত সকলে শেষের বাক্যটায় যেনো বজ্রাহত হলো। অবিশ্বাস ও সন্দেহের দৃষ্টি তাদের। তানজিনার ব্যাচমেটটা বলে,

–আমাদের এসব মিথ্যা বলে বিভ্রান্ত করার মানে কি? আর আমাদের তিনজনকে একত্রে ডাকার মানে কি?

মিহাল চেয়ারের সাথে গা এলিয়ে দেয় তারপর শার্টের কলার এলিয়ে বলে,
–সব কেনোর জবাব তো পাবেন। একটু অপেক্ষা করুন।

এই বলে মিহাল কাউকে ফোন করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
মিহাল যাকে ফোন করে সেই ব্যাক্তিটা মিহালের মা। মিহালের মা ফোন রিসিভ করলে মিহাল সালাম দিয়ে তারপর বলে,
–আম্মু, তানজিনাকে একটু বলতে পারবে যাতে সে আমাকে একটু ফোন করে। আসলে আমার কাছে তানজিনার নাম্বার নেই। আগের সিম কার্ড সিলেট যাওয়ার আগে ফেলে দিয়েছিলাম। তুমি তাকে বলো যেনো আমাকে ফোন করে। তুমি নিশ্চয়ই এতক্ষণে তানজিনাকে আমার নাম্বার দিয়েছোই!

মিহালের মা বলে,
–তোমাকে আমি নাম্বার বলছি, তুমি নাহয় ফোন করো।

মিহাল বলে,
–প্রয়োজনটা তানজিনার তাই তাকেই বলো। রাখি।

মিহাল ফোন রাখার পর উপস্থিত তিনজনের উদ্দেশ্যে হেসে বলে,
–ভাবছেন নিশ্চয়ই যেই তানজিনার কথা বললাম সেটা অন্যকেউও হতে পারে! হ্যাঁ, হতেই পারে। পৃথিবীতে এই নামটা তো তানজিনার একার না! তবে কিছুক্ষণ পর তানজিনা ফোন করলে ভয়েস শুনে নাহয় নিশ্চিত হবেন।

এবার তানজিনার ভার্সিটির প্রফেসর আরিফ আহমেদ মৌনতা ভঙ্গ করে বলেন,

–আপনি একজেক্টলি কি বোঝাতে চাচ্ছেন? ক্লিয়ার করে বলেন।

মিহাল প্রতিউত্তর করলো না। তানজিনার ফোনের অপেক্ষা করলো। কয়েকমিনিটের পর তানজিনা ফোন করলো। মিহাল লাউডে ফোন রিসিভ করে রাখলো। তানজিনা প্রথমেই বলে,

–কি এমন জরুরী কথা যে এত তলব? নাকি আমাকে মিস করছো? করতেই পারো। হবু বউ যদি সুন্দরী হয় তবে বারবার মনে পরবেই!

কথাটা বলে তানজিনা জোড়ালো হাসলো। হাসির শব্দ কিছুটা হলেও ফোনের মাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। মিহাল বাদে বাকি তিনজন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছে। তানজিনা যেখানে সবসময় নিজেকে কোনো কমিটমেন্টে নেই বলে দাবি করে সেখানে সে একজনের হবু স্ত্রী!

মিহাল তানজিনাকে ভাবশূন্য ভঙ্গিমায় বলে,
–তুমি সত্যি খুব সুন্দর। তাই তো তোমার পেছোনে মৌচাকের মৌমাছিরা ঘোরাফেরা করে যেনো তারা মধুর অন্বেষণে এসেছে! এখন তুমিই বলো, ভবিষ্যতে পারিবারিক ভাবে বাধ্য হয়ে এই মধুকে আমায় গলায় ঝুলাতে হবে তো আমি কেনো সেই মধুকে উন্মুক্ত রাখবো? মানে যদি মধু বিষাক্ত হয়ে যায়! তাই আজ কিছু ব্যাবস্থা করতে তোমাকে এতো জরুরী তলব।

তানজিনা ফোনের অপরপাশে দমে যায়। মিহাল কি তাকে কম্পলিমেন্ট দিচ্ছে না-কি ইনসাল্ট করছে তা তার বুঝে আসছে না। আর কি ব্যাবস্থা করছে তাও বুঝতে পারছে না। তানজিনা সন্দিহান হয়ে বলে,

–হোয়াট ডু ইউ মিন?

মিহাল রম্যতার স্বরে বলে,
–ভিডিও কলে আসো। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে। তুমি খুব খুশি হবে সারপ্রাইজ দেখে বিলিভ মি!

তানজিনার কপালে ভাঁজ পরলো। হুট করে কারও এতো বদল! ঠিক হজম হচ্ছে না। তানজিনা সন্দেহের বশে কথা ঘোরাতে বলে,
–আমি ব্যাস্ত আছি। পরে কথা বলি।

মিহাল দ্রুত বলে,
–আ আ না। কয়েকদিন পর যেখানে তুমি আমার স্ত্রী হবে, সেখানে তুমি আমাকে বিশ্বাসই করো না! তাহলে সারাজীবন কিভাবে বিশ্বাস করবে? আমি তো আমাদের ভালোর জন্যই সব করছি। সরি। তোমার হয়তো আমাকে পছন্দ না! কি আর করা!

তানজিনা দোটানায় পরে গেলো। মিহালকে কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না। হুট করে ব্যাবহার এতো বদলে যাওয়া অবিশ্বাসেরই। তানজিনা সম্মতি দিয়ে হোয়াটসএপে ভিডিও কল দেয়। মিহাল রিসিভ করে হাসি দিয়ে বলে,

–ইউ লুকিং বিউটিফুল! আমি ভাবতেও পারছি না কতোটা সুন্দর লাগছে তোমাকে! আমার দেওয়া সারপ্রাইজটা তোমার রূপ আরও বাড়িয়ে দিবেে। তো রেডি তুমি? সারপ্রাইজের জন্য?

তানজিনা মেকি হাসে। মিহাল এবার নিজের জায়গা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সেলফি নেওয়ার মতো করে ফোন উপরে তুলে বাকি তিনজনকে ক্যামেরাতে ক্যাপচার করে উচ্ছাসের সাথে বলে,

–সারপ্রাইজ! মিট উইথ দেম। এটা প্রফেসর আরিফ। এটা নাহিদ ভাই (তানজিনার সিনিয়র যে তানজিনাকে পছন্দ করে)। এটা রাকিব (তানজিনার ব্যাচমেট)। আর গাইজ, মিট উইথ মাই ফিয়ন্সে মিস তানজিনা মেহবিন। কেমন লাগলো আমার সারপ্রাইজ?

তানজিনা শ’কড হয়ে পাথরের মত স্টিল হয়ে বসে আছে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। আর মিহালের সাথে উপস্থিত তিনজনও এবার মিহালের ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। হুঁশ হবার পর তানজিনা ভিডিও কল ডিসকানেক্ট করে দেয়। তা দেখে মিহাল হাসতে হাসতে কোনোমতে সিটে বসে। তারপরেও তার হাসি থামছে না। পানি খেয়ে তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

–লজ্জা পেয়েছে মনে হয়। একটু লাজুক তো! কিছু মনে করবেন না। আমাদের বিয়ের সময় তানজিনাকে ভালো করে দেখবেন নাহয়!

তিন জনের মুখে কথা নেই। একটা মেয়ে এতোদিন ধরে ওদের ইমোশনের সাথে খেলেছে। যদিও তানজিনা ওদের কারও সাথে রিলেশনে ছিলো না কিন্তু কাউকে ফিল করানো যে পছন্দ করে আর মিথ্যে আশা দেওয়া আর নিজের এনগেইজড হওয়ার সত্য লুকিয়ে দিনের পর দিন কারও ইমোশনকে ফ্লা’র্টিং ভেবে সেটার সাথে সাথে নিজেও ফ্লা’র্ট করা ও ইঙ্গিত করাটাও এক ধরনের হ্যা’রা’সমেন্ট। কেউ পছন্দ করে জেনেও তার ইমোশনকে স্বিকৃতি না দেও তো সেটার ফায়দা লুটাও উচিত নয়।

রাকিব লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
–তানজিনা যে এমন টাইপ ফ্লা’র্টি তা আপনি আমাদের জানালেন। তার কারণ কি?

নাহিদ রাকিবের কথার সাথে বলে,
–হয়তো উনি তানজিনাকে খুব ভালোবাসেন তাই তানজিনাকে এসব করতে ইরডাইরেক্টলি নিষেধ করছেন।

মিহাল ওদের দুজনের প্রশ্ন ও জবাবে তাচ্ছিল্য হাসে। প্রফেসর আরিফ তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে এতক্ষণ মিহালকে পর্যবেক্ষণ করছিল। এবার সে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,

–আপনি তানজিনাকে ঘৃণা করেন তাই না? এক প্রকার সহ্য হয় না তানজিনাকে?

মিহাল এবার হেসে জবাব দেয়,
–ঘৃণা না। কারণ ঘৃণার ব্যাক্তিকেও একসময় প্রিয়র জায়গায় রাখতে হয় অতীতে। কিন্তু তানজিনা কখনো প্রিয়র জায়গায় ছিলই না আর না আছে। তবে প্রচণ্ড তিক্ত ওর প্রতি কারণ ওর স্বভাব ও চালচলন সবটা আমাকে অসহ্য পরিমান বিরক্ত করে। আজ থেকে ওর মেন্টাল ট*র্চা’র শুরু। যাতে আমাকে সয়ং নিজে সে বন্ধনমুক্ত করতে বাধ্য হয়। আর যদি বন্ধনমুক্ত না করে তবে আমি সারাজীবন এমনটাই করে যাবো। আর তানজিনা যেখানে সামান্যতে অভিযোগ করে বসে আমার মায়ের কাছে সেখানে সে আমার করা কাজগুলোতে অতিষ্ঠ হতে বাধ্য হবে। আর হ্যাঁ, তানজিনার আপনাদের তিনজনের যার সাথেই রিলেশন থাকুক বা না থাকুক তাতে আমার বিন্দুমাত্র কিছু যায় আসে না। টোপ হিসেবে ব্যাবহার করা মাত্র। চলি। ভালো থাকবেন। আল্লাহ্ হাফেজ।

মিহাল ওদের তিনজনকে রেখেই চলে যায়। ওরাও নিজেদের মতো চলে যায়।

________

এদিকে তূর সকালে ঘুম থেকে উঠার পর থেকে অসহনীয় মা’থা ব্যাথা, ঘার ও পিঠ ব্যাথাতে বিছানা থেকে উঠতেই পারছে না। সকাল ও দুপুর মিলিয়ে চারটা ৫০০ মিগ্রা এর না’পা খেয়েছে তাও ব্যাথা না কমাতে বিকেলে ই’বু’প্র’ফেন পে’ইনকি’লা’র একটা খেয়েছে তারপর আসরের ওয়াক্ত হতেই নামাজ পড়ে ঘুম দিয়েছে। সন্ধ্যার আজান হবার কিছুক্ষণ পর মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে তূরের। তূরের মা বলে,

–সব ধ’কল একসাথে নিতে হবে তার। এখন ভুগো। কার কস্ট হচ্ছে এখন? আমার না তোমার? একটুও কথা শুনে না। লং জার্নির পরেরদিনই তার ঘুরতে যেতে হবে দূরের পথে। এক-দুই দিন পর গেলে কি ম’হা’ভা’র’ত অশুদ্ধ হয়ে যাবে? এই উঠ। মাগরিবের নামাজের সময় থাকে অল্প আর সে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে। উঠ নামাজ পড়।

তূর কপাল কুঁচকে কপালে হাত রেখে উঠে বসলো। ব্যাথা কমেছে তবে কপালের ডান পাশে হালকা ব্যাথা আছে। সচরাচর পে’ই’নকি’লা’র তূরের খাওয়া পছন্দ না কারণ এটা হ্যাবিট হয়ে গেলে মারাত্নক ক্ষ’তি’ক’র। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য, বমি বমি ভাব, অলসতা, চুলকানি ও র‍্যাশ, ঝিমুনি সহ সাধারন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে আর আসক্তি হয়ে গেলে পুরুষদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের কম মাত্রা ও মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোনের কম মাত্রা হয়। আরও অনেক এমনকি কিডনিতেও সমস্যা দেখা দেয়।

তূর ফ্রেশ হয়ে অজু করে নামাজ পড়ে আবার ঘুম দেয়। সে সাথে একটা কম পাওয়ারের ঘুমের ঔষুধও খেয়েছিল। এরপর রাত ১১ টার দিকে ওর মা আবার এসে চিল্লিয়ে ওকে ঘুম থেকে তুলে রাতের খাবার খাইয়ে ও নামাজ পড়ে ঘুমাতে বলেন। তূর তাই করে। আগামিকাল তানজিনার ইউনিভার্সিটিতে যাব ঠিক করে যদি সুস্থ হয়ে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,