শেষ থেকে শুরু ২ পর্ব-১০

0
445

#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১০
#নন্দিনী_চৌধুরী

১৮.
মুগ্ধ দাঁড়িয়ে আছে মেহেরের রুমের সামনে কেন জানি ভিতরে যেতে পারছেনা। মুগ্ধ এভাবে দাঁড়িয়ে কিছু ভাবছে তখন মেহের রুমের ভেতর থেকে বললো,
মেহেরঃভিতরে আয় বাহিরে আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবি?
মেহেরের কথায় চমকে যায় মুগ্ধ দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরলো সে। মেহের বোনকে দেখে হাসিঁমাখা মুখে বললো,
মেহেরঃভাইয়ের রুমে আসতে কি এতো ভাবা লাগে নাকি রে?
মেহেরের কথায় মুগ্ধ কি বলবে বুঝে উঠতে পারছেনা,তাও আমতা আমতা করে বলে,
মুগ্ধঃ না মানে,,, তুমি কিভাবে জানলা ভাইয়া আমি বাহিরে দাঁড়ানো?
মেহেরঃআমি বারান্দা দিয়ে দেখেছি যে তুই এসেছিস। আর গার্ড আমাকে কল করে বলেছে যে তুই আসছিস। আমি জানি তুই সরাসরি তো আমার রুমে আসবিনা। ভাই হয়ে বোনের সব কিছু যদি না জানি তাহলে কি হয় বল। যদিও অনেক কিছু থেকে তোকে রক্ষা করতে পারিনাই। এটা আমার অনেক বড় ব্যার্থতা। তবে সামনে আগামীতে তোকে সেফ রাখার দায়িত্ব আমার।
মুগ্ধ এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা। হামলে পরে ভাইয়ের বুকে। অজরে চিৎকার করে কান্না করে ভাইকে বলে,
মুগ্ধঃ আমাকে ক্ষমা করে দেও ভাইয়া। আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি। কি করবো বলো তুমি যাওয়ার পর থেকে জীবনটা একদম বিষিয়ে গেছিলো। রোজ চাচির অত্যাচার সয্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছিলাম। জানিনা চাচির সাথে আমার কিসের শত্রুতা সে আমাকে মানতে পারেনা। তবে আমি তাদের সবাইকে অনেক ভালোবাসি। চাচার কথায় আরিশকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাই। চেয়েছিলাম তুমি আসলে বিয়ে করবো কিন্তু সেই তোমার কোনো খবর ছিলোনা তখন। তাই তুমি ছাড়াই বিয়েটা করে নিলাম। ভাবলাম এবার হয়তো সুখের দিন আসবে আমার,কিন্তু না সেই ২বছর পার হতে না হতেই আরিশ ও আমাকে ছেড়ে দিলো আমারই চোখের সামনে আমারই চাচাতো বোনকে….. সায়মা ছোট থেকে আমাকে দেখতে পারেনা। একদম চাচির মতো হয়েছে ও। সেই সায়মা আমার সংসার কেড়ে নিলো। আমার অক্ষমতাকে কেন্দ্র করে আমার সব কেড়ে নিলো। আমি একদক শেষ হয়ে গেলাম ভাইয়া। পাড়া প্রতিবেশি আত্মিয় সজন সবাই আমাকে বাজা বন্ধ্যা ডিভোর্সি বলে অপমান করে। এমন কাউকে দরকার ছিলো যে এই সময়টা আমার পাশে আমার মাথায় হাত রেখে বলতো আমি আছিতো পাশে ভয় নেই। কিন্তু কেউ ছিলোনা। তুমিও ছিলেনা ভাইয়া। তাই তোমাকে এখন এভাবে আসতে দেখে এক চাপা অভিমান কাজ করছিলো। কিন্তু বিশ্বাস করো ভাইয়া তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা একটুও কমেনি।
বোনের এতো কষ্ট এতো হাহাকার শুনে মেহেরের চোখেও পানি চলে এসেছে। বোনটা তার কতটা কষ্টে ছিলো তার কোনো আন্দাজ করতে পারবেনা মেহের। মেহের বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
মেহেরঃআমাকে তুই মাফ করে দিস। তুই এতো কিছু সয্য করেছিস যা আমার কল্পনার বাহিরে। আমার অবর্তমানে তোকে যে এতোটা টর্চার সয্য করতে হবে আমি ভাবতে পারিনি। মামা আমাকে যদি তোর বিয়ের কথাটা বলতো তবে আমি এই বিয়ে হতে দিতাম না। কিন্তু মামা কেন এমন করলো সেটা জানিনা তবে জেনে যাবো খুব শীঘ্রই। তোকে যারা এতোটা কষ্ট দিয়েছে তাদের জীবন আমি জাহান্নাম বানিয়ে দিবো আমি তোকে কথা দিলাম। তোর পা ধরে ক্ষমা চাইবে ওই আরিশ তুই দেখে নিস।
মেহের মনে মনে আরো বলতে লাগলো,
তুই যদি জানতে পারিস ওই সালমা খান কেন এমন করেছে তাহলে তুই যে সেটা সয্য করতে পারবিনা। তাই এখন তোকে কিছু আমি জানাবোনা। আর সায়মা তার ব্যবস্থাও আমি করবো অনেক তাড়াতাড়ি।
মেহের বোনকে শান্ত করে বলে,
মেহেরঃচড়ুইপাখি যা আগে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি তোকে খাইয়ে দেবো যা।
মেহের সার্ভেন্টকে ডেকে মুগ্ধকে নিয়ে যেতে বলে ওর রুমে আর ওর যা যা প্রয়োজন সব গুছিয়ে দিতে বলে। মুগ্ধ চলে যেতে মেহের একজনকে কল দেয়,
মেহেরঃহ্যা শোনো আরিশদের কম্পানির সব ডিটেইলস আমার কালকের ভেতরে চাই আর ওর সব সম্পত্তির ডিটেইলস ও। হ্যা আগামীকালের ভেতরে সেগুলা আমার টেবিলে দেখতে চাই। আর হে এতোদিন সালমা খানের একাউন্টে যত টাকা যেতো আজ থেকে আর তা যাবেনা। এতোদিন মুগ্ধ ছিলো বলে ওদের টাকা দিতাম এখন আর না। আমার বোনকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। ওই একাউন্ড ফ্রিজ করে দেও।

মেহের কল কেটে নিচে চলে আসলো। মুগ্ধ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে দেখে মেহের খাবার নিয়ে বসে আছে। মুগ্ধ গিয়ে মেহেরের সামনে বসলো। মেহের হেঁসে ফোন এগিয়ে দিলো মুগ্ধের দিকে। মুগ্ধ গেম খেলা শুরু করলো আর মেহের তার চড়ুইপাখিকে খাবার খাইয়ে দিতে লাগলো।
ছোট বেলায় এভাবেই খাইয়ে দিতো মুগ্ধকে মেহের। মুগ্ধ খেলায় বিজি থাকতো আর মেহের ওকে খাইয়ে দিতো। খাওয়া শেষে মুগ্ধ মেহেরকে একটা চুমু দিতো আর মেহের বোনকে একটা চোকলেট দিতো। আজকেও তাই করলো খাওয়া শেষে মুগ্ধ মেহেরকে চুমু দিলো কপালে আর মেহের একটা চোকলেট দিলো মুগ্ধকে।
মেহেরঃএখন গিয়ে শুয়ে পর যা।
মুগ্ধ মাথা নেড়ে চলে গেলো শুতে রুমে। মুগ্ধ যাওয়ার পর মেহের ওর রুমে চলে আসে। তারপর সেও শুয়ে পরে বিছানায়।

১৯.
~পরেরদিন~
মুগ্ধ সকালে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে রান্না ঘরে আসে। নাস্তা যদিও সার্ভেন্ট যদিও নাস্তা বানায় কিন্তু মুগ্ধ আজকে নাস্তা বানাবে। যেহুতু ঠান্ডা বাহিরে অনেক তাই মুগ্ধ খিচুড়ি বর্তা বানালো। খাবার টেবিলে সার্ভ করে ভাইয়ের জন্য কফি নিয়ে রুমে গেলো। মেহের শাওয়ার নিচ্ছে। মুগ্ধ কফি রেখে নিজের রুমে এসে রেডি হলো। মেহের শাওয়ার নিয়ে এসে টেবিলে কফি দেখে খুশি হলো। কফি খেয়ে রেডি হয়ে নিচে আসলো মেহের। মুগ্ধ রেডি হয়ে নিচে আসলো। মেহের এখনো মুগ্ধকে খাইয়ে দিলো। খাওয়াতে খাওয়াতে বললো,
মেহেরঃতুই কি এখনো ওই বেবিকেয়ার জবটা করবি?
মুগ্ধঃহ্যা ভাইয়া। আমি চাইলেও জবটা ছাড়তে পারবোনা। কারন এক মায়ায় বাঁধা পরে গেছি আমি। জানো ভাইয়া বাচ্চাটা যখন আমার কাছে থাকে তখন অনেক শান্তি পাই মনে। তাই আমি জবটা ছাড়বোনা।
মেহেরঃআচ্ছা কার বাচ্চা দেখা শুনা করছিস?
মুগ্ধঃসাদমান হাসান সাদাফ। তার মেয়ে প্রাপ্তিকে দেখা শুনা করি।
সাদাফের নাম শুনে চমকে যায় মেহের। তার বোন সাদাফের মেয়েকে দেখা শুনা করে জেনে অবাক হলো মেহের। মুগ্ধকে খাইয়ে নিজে খেয়ে একসাথে বেরিয়ে পরে ওরা। মুগ্ধকে ক্লাসে দিয়ে মেহের অফিসে চলে আসে।

এদিকে_
সালমা খানের মেজাজ খুব খারাপ। মুগ্ধ মেহেরের কাছে চলে গেছে তাই মেহের তার একাউন্ট ফ্রিজ করে দিয়েছে। সালমা খানের অনেক রাগ লাগছে তাই।
সালমা খানঃ সেদিন ওদের সাথে সাথে ওই মুগ্ধকেও মেরে দিলে ভালো হতো। তারপর মেহেরের একটা ব্যবস্থা করাই যেতো। এখন তো আমার গলায় কাঁটার মতো আটকে আছে এই দুই ভাই বোন। না পারছি বের করতে না পারছি গিলতে। এদিকে সায়মাটা কই আছে কে জানে। অনেকদিন ধরে কথা হচ্ছেনা।

সায়মা আর আরিশ ঘুরতে এসেছে চট্টগ্রাম। মুলতো হানিমুনে এসেছে তারা। সায়মাতে আরিশ এতোটাই মজে আছে এখন আর মুগ্ধের কথা মাথায় আসেনা তার।

এদিকে,,
রুহি মেহেরের কেবিনে বসে বসে গান গাচ্ছে,
আকাশেতে লক্ষ্য তারা চাঁদ কিন্তু একটারে হেইয়া। 😶
রুহি গান গাচ্ছে আর কফি বানাচ্ছে। মেহের কেবিনে ঢুকে এমন গান শুনে অবাক হয়ে রুহিকে বলে,
মেহেরঃকি সব গান গাচ্ছেন এগুলা।
আচমকা মেহেরের এমন কথায় চমকে যায় রুহি। গান থামিয়ে সামনে ফিরে বলে,
রুহিঃস.স্যার আপনি!
মেহেরঃহ্যা আমার কেবিনে আমি আসবোনাতো কে আসবে।
রুহিঃ না না আপনিই তো আসবেন। আসুন বসুন আমি কফি দিচ্ছি।
মেহের গিয়ে চেয়ারে বসলো।
রুহি এসে ওকে কফি দিলো। মেহের কফি নিয়ে খেতে লাগলো আর ল্যাপটপে কাজ করতে লাগলো। রুহির এখানে কাজ নেই দেখে নিজের কেবিনে চলে আসলো। নিজের কেবিনে এসে আবার গাইছে,
আকাশেতে লক্ষ্য তারা মেহের কিন্তু একটাইরে হেইয়্য্যা।
রুহি নিজে গান গেয়ে নিজেই হেঁসে ফেললো। তারপর কাজে মন দিলো।

.
.
.
.
.
.
~অন্যদিকে~
মুগ্ধ ক্লাস করে প্রাপ্তির জন্য কিছু জিনিশ কিনলো দরকারি। তারপর চলে আসলো সাসাফের বাসায়। বাসায় এসে দেখে সাদিয়া আসছে। সাদিয়াকে মুগ্ধ চেনে দেখেছে আগেও আর সাদিয়াও মুগ্ধকে চেনে। দুজনে দুজনের সাথে ভাব বিনিময় করে নিলো। তারপর মুগ্ধ প্রাপ্তির কাছে গেলো। প্রাপ্তিকে ঘুম থেকে তুলে ভালো করে ফ্রেশ করিয়ে খাইয়ে দিলো। তারপর প্রাপ্তিকে নিয়ে নিচে গিয়ে গল্প জুরে দিলো।

সারাদিন শেষে ক্লান্ত শরীরে সাসাফ বাসায় আসলো। বাসায় রুমে এসে মুগ্ধকে দেখে অবাক হলো সাদাফ। কারন মুগ্ধ একটা নীল কালারের শাড়ি পরে আছে। চুল গুলো খোলা। মুগ্ধ প্রাপ্তিকে নিয়ে খেলছে তাই সাদাফ এসেছে সেটা খেয়াল করেনি। সাদাফ কিছু সময়ের জন্য মুগ্ধকে নিজ অর্ধাঙ্গিনীরূপে ভেবে নিলো। কিন্তু প্রতিমূহূর্তে প্রিয়ার কথা মনে পরতেই সাদাফ নিজেকে শক্ত করলো। নাহ সে শুধু প্রিয়াকে ভালোবাসে। সে প্রিয়ার জায়গা কাউকে দেবেনা। সাদাফ রুমে এসে সোজা শাওয়ার নিতে গেলো। শাওয়ার নিয়ে এসে খেতে চলে গেলো। খেয়ে এসে মেয়েকে কোলে নিয়ে আদরে আদরে ভরিয়ে দিচ্ছে। সারাদিন কলিজারটুকরাটাকে কাছে পায়না যে। মুগ্ধ বাবা মেয়ের ভালোবাসা দেখছে দূর থেকে। মুগ্ধ সাদাফকে প্রশ্ন করলো,
মুগ্ধঃআপনি কিন্তু কালকে বললেননা আমার ভাইয়াকে কিভাবে চেনেন আপনি?
সাদাফ যেনো জানতো মুগ্ধ এমন একটা প্রশ্ন করবে তাই সাদাফ সাথে সাথে উত্তর দিলো,
সাদাফঃতোমার ভাইয়া আর আমি বিজনেস ডিল করি। তাই আমরা একে অপরকে চিনি।
মুগ্ধ সাদাফের কথা শুনে চমকে যায়। মানে তার ভাই আর সাদাফ আগে থেকেই পরিচিত।
মুগ্ধঃওহ! আচ্ছা আমি আসি আজকে তাহলে।
মুগ্ধ ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে আসে। আর সাদাফ মুগ্ধের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

#চলবে