শেষ থেকে শুরু ২ পর্ব-১১

0
420

#শেষ_থেকে_শুরু_২
#পর্ব_১১
#নন্দিনী_চৌধুরী

২০.
দেখতে দেখতে মাস চলে গেলো অনেক গুলো। আজ প্রায় ৬মাস হলো মুগ্ধ প্রাপ্তির দেখাশুনার কাজ করছে। এই ৬মাসে সাদাফ মুগ্ধ অনেক ঝগড়া খুনসুটি করেছে তার সবটাই ছিলো প্রাপ্তিকে ঘিরে। সাদাফের মা তা দেখে আর হাঁসে আর ভাবে ইসসস যদি আজ সাদাফ মুগ্ধ প্রাপ্তি একটা পরিবার হতো। সাদাফের ইদানিং মুগ্ধকে খারাপ লাগেনা অনেকটা ভালোই লাগে। কোথাও এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে তার মুগ্ধের জন্য। এই ৬মাসে সাদাফ মুগ্ধকে যত দেখছে ততটাই অবাক হয়। একটা মেয়ে কত কষ্ট মনে চেপে রেখে খুশি থাকার অভিনয় করে যাচ্ছে রোজ। সাদাফের অচেতন মন কোথাও বলে,
“হয়ে যা ওর খুশির কারণ। ফিরিয়ে আন ওর সত্যি হাঁসিটা। ওকে নিয়ে শুরু কর আবার নতুন একটা জীবন। হয়ে যা ওর শেষ থেকে শুরু।”
নিজের মনের কথায় সায় দিতে পারেনা সাদাফ কেন জানি। এসব ভাবলেই প্রিয়ার কথাও মনে আসে। একটা সময় তো সে প্রিয়াকে ভালোবাসতো আর এখনো বাসে। তাই মুগ্ধকে নিয়ে এসব চিন্তা করা উচিত নয় বলেই তার মনে হয়।
সাদাফের এসবের চিন্তার মাঝে ওর মা আসে ওর রুমে। সাদাফের মা রুমে এসে সাদাফকে বলে,
সাদাফের মা: সাদাফ!
মায়ের কন্ঠে ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে সাদাফ। মাকে দেখে সাদাফ বলে,

সাদাফ:হ্যাঁ মা বলো।
সাদাফের মা:তোর সাথে কিছু কথা আছে আমার।
সাদাফ:বলো।
সাদাফের মা সোফায় বসে সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে,
সাদাফের মা: দেখ সাদাফ মানুষের জীবনে অনেক কিছুই ঘটে। অনেক কাঙ্ক্ষিত অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক কিছু ঘটে। তাই বলে কিন্তু জীবন থেমে যায়না। অনেক কিছু মানিয়ে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে হয়। মানছি তুই প্রিয়াকে অনেক ভালোবাসিস, কিন্তু একবার ভেবে দেখ তুই একা কি পারবি প্রাপ্তিকে মানুষ করতে। আজ প্রাপ্তি ছোট কাল সে বড় হবে সবার মা দেখার পর সে যখন তোকে প্রশ্ন করবে, “বাবা আমার মা কোথায়?” তখন তুই কি উত্তর দিবি ওকে। মানছি তোর ভয় যদি নতুন কেউ এসে ওকে অবহেলা করে, কিন্তু বাবা সবাই এক হয়না। মনে রাখিস সব আপন আপন হয়,সব পর পর নয়। এমনো হতে পারে নতুন কেউ এসে প্রাপ্তিকে তার মায়ের মতো আগলে নিলো। দেখ বা জীবনে কেউ সারা জীবন বাঁঁচবেনা। তুই আমি সবাই মারা যাবো। তাই তোকে বলছি বাবা জীবনকে আরেকবার সুযোগ দে। আবার নতুন ভাবে শুরু কর সবটা। দেখিস আমার মন বলে তোর নতুন শুরু অনেক সুখময় হবে তোর জন্য।
সাদাফ:মা তুমি আসলে কি বলতে চাইছো?
মাদাফের মা: আমি চাইছিলাম তুই মুগ্ধকে বিয়ে কর। প্রাপ্তির সাথে মুগ্ধের সম্পর্ক কতটা সুন্দর।
সাদাফ:মা! তুমি কি বলছো তুমি ভেবে দেখছো? মুগ্ধের আগে পরের কিছু তুমি জানোনা। মুগ্ধের স্বামী তার সাথে প্রতারণা করেছে কারন মুগ্ধ মা হতে পারবেনা বলে। মুগ্ধ এই ধাক্কাটা এখনো ভালো করে সামলে উঠতে পারেনি। আর তুমি যেটা চাইছো সেটা সম্ভব নয়।
সাদাফের মা: কেনো সম্ভব নয়। যে মুগ্ধকে ঠকালো তার দেখা উচিত মুগ্ধ খারাপ না ভালোই আছে। আর সেই ভালোটা কেন তোর সাথে থাকতে পারবেনা।
সাদাফ:মা প্লিজ। তুমি এসব কথা রাখো মুগ্ধ আসলো বলে এখনি। এসব কথা কোনোদিন ওর সামনে বলবেনা মা।
সাদাফের মা হতাশ হয়ে চলে আসে ছেলের রুম থেকে।

২১.
~মেহেরর বাসায়~🌸
মেহেরের বাসায় আসছে আজকে রুহি। মুলত অফিসের কাজের জন্য আসতে হয়েছে। কারন মেহেরের সর্দি জ্বর এসেছে তাই অফিসে যেতে পারবেনা। রুহি বাসায় মেহেরের রুমে এসে দেখে মুগ্ধ মেহেরকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। রুহি দরজায় দাঁড়িয়ে ভাই বোনের ভালোবাসা দেখছে আর খুশি হচ্ছে। খাবার খেতে খেতে মেহেরের চোখ যায় দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা রুহির দিকে। রুহিকে দেখে মেহের বলে,
মেহের:আরে মিস রুহি আসুন ভিতরে আসুন।
রুহির মেহেরের কথা শুনে ভিতরে আসে। ভেতরে এসে মুগ্ধকে দেখে সালাম দেয়। মুগ্ধ সালামের উত্তর দেয়। রুহি মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো,
রুহি:স্যার আপনার শরীল এখন কেমন?
মেহের:আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি এখন। আজকে অফিসে যেতে চাইছিলাম কিন্তু এইযে আমার চড়ুইপাখি আজকে যেতে দিলোনা। বললো আজকেও বিশ্রাম নিতে।
রুহি:ভালো কথাইতো বলেছে মুগ্ধ। শরীলের জ্বর কমলো মাত্র আজকেও বিশ্রাম নিন আপনি।
মুগ্ধ:আচ্ছা আমি গেলাম। তোমরা থাকো। আমার ক্লাস আছে।
মেহের:আচ্ছা তুই যা আমি ড্রাইভার আর গার্ডকে বলে দিছি তোর সাথে যাওয়ার জন্য।
মুগ্ধ প্লেট হাতে নিয়ে চলে গেলো।
রুহি মেহেরের থেকে কিছুটা দুরত্ব রেখে বসলো। তারপর বললো,
রুহি:স্যার এই ফাইলগুলো একটু দেখে দিন। মেনেজার স্যার আজকে এগুলা সাবমিট করবেন।
মেহের:আচ্ছা দিন দেখে দিচ্ছি।
মেহের ফাইলগুলো নিয়ে দেখতে লাগলো। আর রুহি বসে রইলো। মেহের ফাইল দেখার মাঝে রুহিকে বললো,
মেহের:দুই কাপ কফি নিয়ে আসেন তো মিস রুহি। সার্ভেন্টকে বললেই সে বানিয়ে দেবে।
রুহি:আচ্ছা স্যার।
রুহি কিচেনে আসলো আর নিজেই কফি বানালো সার্ভেন্টদের বললোনা। কফি বানিয়ে নিয়ে আবার রুমে আসলো। একটা মগ মেহেরকে দিলো আরেকটা রুহি নিলো। কফি খেতে খেতে মেহের ফাইল দেখা শেষ করলো।
মেহের:নিন ফাইল সব ঠিক আছে।
রুহি ফাইল নিয়ে মেহেরকে বললো,
রুহি:স্যার একটা কথা বলি?
মেহের:হ্যা বলুন।
রুহি:স্যার আপনার বোনের কি বিয়ে হয়েছে?
মেহের:হ্যা হয়েছিলো। আমি যখন বাহিরে ছিলাম আমাকে না জানিয়ে আমার বোনকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। যার সাথে বিয়ে দিয়েছিলো সে আমার বোনের সাথে চিট করেছে। তাকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করেছে।
রুহি:ওহ আচ্ছা। তাহলে এখন কি ওকে আবার বিয়ে দেবেন?
মেহের:২য় বিয়ে করার ইচ্ছাটা সম্পুর্ন ওর ইচ্ছা। আমি ওকে ২য় বিয়ের জন্য জোর করবোনা। আমি চাই ও জীবনে প্রতিষ্ঠিত হক। আর আল্লাহ আমাকে কম দেয়নাই। আমি সারাজীবন আমার বোনকে বসিয়ে খাওয়াতে পারবো। আমি যদিও জানি যে ও বসে খাবেনা। ও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবে। আমি চাই এইযে এই সমাজ ওকে যে চোখে দেখে একদিন তারাই যেনো ওকে দেখে অবাক হয়। তবে আপনি কেন এই কথা জিজ্ঞেশ করলেন?
রুহি:না মানে আমি যখন এখানে আসছিলাম আপনাদের এলাকার কিছু মহিলাদের বলতে শুনছিলাম তাই আরকি।
মেহের:অহ তাদের কাজ এগুলা করা।
রুহি:আচ্ছা স্যার আজকে আমি আসি তাহলে।
মেহের:আচ্ছা।

রুহি চলে আসে মেহেরের বাসা থেকে।

.
.
.
.
.
.
.
.
সারা দিনরাত প্রাপ্তির খেয়াল রেখে মুগ্ধ এখন বাসায় ফিরছে। রাস্তায় দিয়ে হেঁটে আসছে মুগ্ধ। আজকের আবহাওয়া অনেক ঠান্ডা। কুয়াশা দিয়ে এখোনি সব ঢেকে যাচ্ছে। মুগ্ধ হাঁটছে আর ভাবছে সামনে কি করবে। অনার্স শেষ করে কোন দিকে যাবে। এসব ভাবার মাঝেই মুগ্ধের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো ভাড়ি কোনো বস্তুর বারি অনুভব করতে পারছে তার মাথায়। মুগ্ধ পিছনে ঘুরে দেখার আগেই সব ঝাপসা হয়ে আসে তার। খুব কষ্টে মুখ দিয়ে “ভাইয়া” শব্দটা করতেই মাটিতে লুটিয়ে পরে মুগ্ধ।

দেয়ালের মুগ্ধের ছবিটা হঠাৎ করেই পরে গেলো মাটিতে। মেহের বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে চমকে গেলো ছবিটার পরে যাওয়া দেখে। মেহেরের মনটা কেন জানি খচখচ করছে আজকে। মেহের ফোন নিয়ে মুগ্ধের নাম্বারে ডায়েল করছে কিন্তু ফোন বন্ধ আসছে। মেহেরের এখন চিন্তা লেগে গেলো। মেহের সোজা সাদাফের নাম্বারে ফোন লাগালো।
সাদাফ বসে আছে মেয়েকে নিয়ে এর মাঝে ফোন আসলো তার। সাদাফ ফোন হাতে নিয়ে দেখে মেহের ফোন করেছে। সাদাফ ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো,
সাদাফ:আসসালামু আলাইকুম।
মেহের:ওয়ালাইকুমুস সালাম।
সাদাফ:কি হয়েছে মেহের চিন্তিত লাগছে কেন তোমাকে?
মেহের:সাদাফ মুগ্ধ কি বেড়িয়েছে তোমাদের বাসা থেকে?
সাদাফ:হ্যাঁ মুগ্ধ চলে গেছে ২০মিনিট হয়েগেছে। কেনো কি হয়েছে?
মেহের:মুগ্ধ এখনো বাসায় আসেনি। ওর ফোন ও বন্ধ। ওর বাসায় আসতে এতো সময় লাগেনা কখোনো।
সাদাফ:কিহ!
মেহের:হ্যাঁ।
সাদাফ:তুমি তাহলে বাহিরে আসো আমিও আসতেছি ওকে খুঁজতে।
মেহের:আচ্ছা।
সাদাফ ফোন রেখে মায়ের কাছে প্রাপ্তিকে দিয়ে বেরিয়ে পরলো মুগ্ধকে খুঁজতে।

#চলবে🌸