শেষ পাতায় তুমি পর্ব-১০+১১

0
4276

#শেষ_পাতায়_তুমি (Revenge Story)
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-১০|

মেহের আজ খুব খুশী। কতদিন পরে বাড়িতে যাবে। বাবা-মাকে দেখবে। মাহি আপুর বিয়েতে থাকতে পারবে। খুশিতে চোখ মুখ জ্বলজ্বল করছে। ফায়াজ বিরক্তি নিয়ে মেহেরকে কিছুক্ষণ দেখল। তারপর গাড়ির গ্লাস খুলে বাইরে দেখছে। মেহেরের এত খুশী নেকামি মনে হচ্ছে।

বাড়ির সামনে গাড়ি থামতেই মেহেরের হাত-পা কাঁপছে। দুরুদুরু বুকে মেইনডোরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। পুরো বাড়ি সাজানো। দেখেই মনে হচ্ছে বিয়ে বাড়ি।

মেহের দরজার সামনে যেতেই মা-কে দেখতে পেল। তারপর “মা” বলে ডাকল। মেহেরের মা মেহেরের কন্ঠ পেয়ে কাজ রেখে ঘুরে তাকাল। মেহেরকে দেখে তার শুকনো কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল। কতদিন ধরে মেহেরের কন্ঠে মা ডাক শুনে না। একজন মা-ই জানে মা ডাকের সুখ কি। তার চোখে পানি চিকচিক করছে। মেহের উচ্ছ্বাসিত হয়ে দৌড়ে এসে মাকে জড়িয়ে ধরল। মেহেরের মা কাঁদছে। মেহেরের মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করছে। মেহেরও কাঁদছে। ফায়াজ চুপচাপ দাঁড়িয়ে মা-মেয়ের মিলন দেখছে। একজন সন্তান আর তার মায়ের সম্পর্ক কতটা সুন্দর হতে পারে সেটা ফায়াজের জানা নেই। ৮বছর বয়স থেকে একাই বড় হয়েছে। না পেয়েছে আদর আর না পেয়েছে শাসন।

মেহেরের মা ওর কপালে অজস্র চুমু খেয়ে বলল,
“বোকা মেয়ে কাঁদছিস কেন? মাহি দেখলে রাগ করবে ভিষণ।”

মেহেরের নাকে নাক ফুল দেখে গালে হাত দিয়ে বলল,
“বাহ! কত সুন্দর লাগছে তোকে। আমার ছোট্ট মেয়েটা কত বড় হয়ে গেছে।”

তিনি মেয়েকে দেখে চোখ জুড়িয়ে নিতেই চোখ পড়ল ফায়াজের দিকে। তারপর লজ্জিত মুখে একটু এগিয়ে বলল,
“মেয়েকে পেয়ে মেয়ের জামাইয়ের কথা ভুলেই গেছি। কিছু মনে করো না। তুমি এসো বাবা।”

বাবা ডাকটা শুনে ফায়াজের অদ্ভুৎ ফিলিং হচ্ছে। মাথা নিচু করে বলল,
“জি।”

মেহের ওদের কথার মাঝেই বলল,
“আপু কই? আপুকে দেখছি না যে।”

মেহেরের মা মেহেরের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
“আপুকে দেখার অনেক সময় পাবি। জামাইকে ঘরে নিয়ে যা। আমি নাস্তা পাঠাচ্ছি।”

মেহের তাই করল। ফায়াজকে নিজের রুমে নিয়ে গেল।

বিকেলের পর থেকেই পুরো বাড়িতে মানুষের সমাগম। পুরো বাড়ি বাহারি আলোকসজ্জায় চকচক করছে। মাহিরের হাতে মেহেদী দেওয়া হচ্ছে। মেহের পাশে বসে আছে পুরো দিন-দুনিয়া ভুলে। মাহি জোরাজুরি করে মেহেরকেও মেহেদী দেওয়াতে বসিয়েছে। মেহের নিজেও দু’হাত ভর্তি মেহেদী দিয়েছে।
ফায়াজের একা একা বিরক্ত লাগছে। তাই রুম থেকে বের হয়ে এদিক সেদিক হাঁটছে।

যে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে তাকে মেহের হটাৎ করে বলল,
“আপুর মেহেদীতে তূর্জ ভাইয়ার নামের অক্ষর দিয়ে দিন। “T” লিখে দিলেই হবে।”

মাহি লাজুক হাসি দিল। মাহির হাতে তূর্জের নামের প্রথম অক্ষর T লিখে মেহেরকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমিও তো বিবাহিত। হাব্বির নাম বলো লিখে দিচ্ছি।”

মেহের হাত সরিয়ে নিয়ে বলল,
“আমার হাতে আর কিছু লিখবো না। যেমন আছে তেমনই ভালো।”

ফায়াজের ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে নি। মেহের মাহির হাতে তূর্জের নাম দিতে বলে নিজের হাতে নিজের স্বামীর নাম লিখবে না। এর মানে ফায়াজকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হচ্ছে। ফায়াজ সব মেনে নিলেও নিজেকে তুচ্ছ বলে যে প্রকাশ করে তাকে মেনে নিতে পারে না। ফায়াজ অন্যকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে, অপমান করবে, পাত্তা দিবে না কিন্তু ওকে কেউ পাত্তা দিবে না এটা হতে পারে না।
মেহেরের তখনও হুট করে ফায়াজের কথা মনে পড়ল। ফায়াজ নামে কেউ আছে সেটাই তো ভুলে বসেছে। নিজের মতো করে সবার সাথে মেতে আছে। ফায়াজ কোথায় আছে, কি করছে জানা জরুরী৷ ফায়াজের উপর নজর রাখতে হবে। ফায়াজকে বিশ্বাস নেই কি করে ফেলে কখন। মেহেরের ফায়াজের ভাব-ভঙ্গি ভালো লাগছে না। মেহের উঠে দাড়াল।

মেহেরকে দাড়াতে দেখে মাহি বলল,
“কোথায় যাচ্ছিস?”

“আপু একটু আসছি। কিছুক্ষণ পরেই চলে আসব।”

মেহের দ্রুত নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল।
রুমে ঢুকতেই মেহের খুক খুক করে কাশতে শুরু করল। ফায়াজ রুমের মধ্যে বসে সিগারেট খাচ্ছে। সে ধোঁয়ায় চারদিক ধোয়াশায় পরিণত হয়েছে।
ফায়াজ মেহেরের কাশির শব্দ শুনে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মেহেরের সামনে গিয়ে মেহেরের মুখের উপর ধোঁয়া ছাড়তেই মেহের মুখ সরিয়ে নিল। হাতে মেহেদী তাই মুখ চেপে ধরতে পারছে না।

মেহের ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,
“কি করছেন এ-সব?”

ফায়াজ দু’হাতে তালি দিয়ে বলল,
“বাহ! বাড়িতে এসে দেখছি গলার জোর বেড়ে গেছে। ধমকে কথা বলছ?”

ফায়াজ মেহেরের দু’হাত তুলে মেহেদী দেখে বলল,
“খুব বাজে লাগছে। এগুলো তুলে ফেল।”
বলেই ফায়াজ এক হাতের সাথে আরেক হাত মিশিয়ে দিল। মেহের হা করে চোখ বড়বড় করে চেয়ে আছে। পুরো মেহেদী লেটকে গেছে। মেহেরের খুব কান্না পাচ্ছে। ফায়াজ বাকা হাসল।

মেহের কাদো কাদো হয়ে বলল,
“এমন কেন করলেন? আপনি সব সময় এমন কেন করেন?”

ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে এক হাত পেছনে পিঠের সাথে চেপে ধরে। মেহেরের হটাৎ লাগায় “উহ” করে উঠে। তারপর চুপ হয়ে যায়। বাড়িতে অনেক মানুষ আছে কেউ যদি ফায়াজের ব্যবহার জানতে পারে তবে পুরো বাড়িতে রটিয়ে দেবে। তাই মেহের চুপ করে আছে।
“আমার সাথে জোর গলায় কথা বলছ? আমি এ বাড়িতে কেন এসেছি? আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে খেতে? তার বিয়েতে হৈ-হুল্লোড় করতে? উহু,,। আমি কেন এসেছি সেটা তুমি নিজেও জানো না।”

মেহের ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে বিস্ময় নিয়ে। ফায়াজ চাইছে টা কি কিছুই বুঝতে পারছে না।
মেহের কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে তখনই ফায়াজ মেহেরের পিঠে রাখা হাত দিয়ে পিঠে ধাক্কা দিয়ে মেহেরকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। মেহের চোখ বড়বড় করে কিছু বলতে গেলে ফায়াজ মিনমিন করে বলল,
“পেছনে তোমার আপু। আমি যেমন বলছি তেমন প্রিটেন্ট করো।”

মেহের থেমে গেল। ফায়াজ মেহেরের গালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করছে। মেহের চোখ মুখ কুচকে রেখেছে। ফায়াজ মেহেরের গালে কিস করার ভঙ্গিতে মুখ এগিয়ে নিল কিন্তু কিছুই করে নি। তবে পেছনে থেকে তার বিপরীত মনে হবে। মাহি দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল। মাহি মেহেরকে ডাকতে এসেছিল কিন্তু এমন কিছু দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তবে মাহির এটা ভেবে চিন্তা হচ্ছে ফায়াজ মেহেরকে ভালোবাসে তো? না ভালোবাসা ছাড়াই মেহেরের সাথে…? আর ভাবতে পারছে না।

ফায়াজ মাহির চলে যাওয়া দেখে মেহেরকে ছিটকে সরিয়ে দেয়। তারপর রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় গেল। ফায়াজ মাহিকে জেলাস করার জন্য এ-সব করেছে কিন্তু মাহি বিন্দুমাত্র জেলাস হয় নি। কারণ মাহির ফায়াজের প্রতি কোনো ফিলিংস নেই। ও চায় মেহের ভালো থাকুক।

মেহের স্তব্ধ হয়ে আছে। ওর ভিষণ কান্না পাচ্ছে। স্বামী তার প্রেমিকাকে দেখানোর জন্য স্ত্রীকে কাছে টেনে নিচ্ছে পরবর্তীতে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছে এটা একটা মেয়ের জন্য কতটা অপমানের সেটা শুধু ওই মেয়েটাই জানে। মেহেরের এই প্রথম নিজেকে ছোট লাগছে। ফায়াজকে বিয়ে করতেও এতটা খারাপ লাগে নি।

.

মেহের, ফায়াজ মেহেরের পরিবারের সাথে বসে ডিনার করছে। মেহেরের খাওয়ার ইচ্ছে নেই কিন্তু বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য এসেছে। মেহেরের বাবা নিজের মতো খাচ্ছে গম্ভীরমুখে। মেহেরের দিকে একবারও তাকায় নি। তাই ও মায়ের দিকে অসহায় ভাবে তাকাচ্ছে বারবার।

মেহেরের মা কিছু একটা ইশারা করতেই মেহের বলল,
“বাবা!”

মেহেরের বাবা গম্ভীরমুখে বলল,
“মাহি তোমার আর তূর্জের অনুরোধ রাখতে ওকে আমি এ বাড়িতে এলাও করেছি। বিয়ে মিটে গেলে যেন চলে যায়।”
কথাগুলো বলেই তিনি উঠে চলে গেলেন। মেহের কেঁদে দিল বাবার কথা শুনে।

মাহি মেহেরের হাত ধরে বলল,
“মেহু পাখি, কাঁদছিস কেন বোকা মেয়ে? কোনটা মনের কথা আর কোনটা অভিমানের কথা সেটা তুই কবে বুঝবি? বাবা অভিমান করে কথাগুলো বলেছে সিরিয়াসলি নয়। বাবা তোকে ক্ষমা করেছে বলেই আসতে বলেছে।”

মেহের মাহির হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি সব বুঝি। আমাকে বাচ্চা মনে করো না। যা বুঝাবে তাই বুঝব?”

তারপর চেয়ার টেনে খাবার রেখে উঠে দুমদুম করে হেটে চলে গেল।
মাহি ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে বলল,
“এই মেয়ের যত রাগ সব আমাকে দেখানোর জন্য। সবার রাগ আমার উপর ঝাড়ার অভ্যাস গেল না।”

ফায়াজের এই ফ্যামিলি মেলোড্রামা একদম সহ্য হচ্ছে না। বিরক্ত লাগছে। মেহের চলে গেছে আর ও বসে বসে খাবে সেটা ভালো দেখায় না। তাই অগত্যা উঠে দাড়াল। আর তখনই মেহেরের মা বলল,
“আরে তুমি কোথায় যাচ্ছো?”

ফায়াজ উত্তর দিল,
“মেহের এভাবে চলে গেল..।”

“আরে, ওর কথা বাদ দেও। তুমি বসো। মেয়েটা নরম হলেও খুব অভিমানী। কিছুক্ষণ পরে আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমি খাও।”

ফায়াজ আবারও বসে পড়ল। চোখ গেল মাহির দিকে। ফায়াজের মাথায় মাহিকে বিরক্ত করার ভূত চাপল। ফায়াজ টেবিলের নিচ দিয়ে মাহির পায়ে নিজের পায়ের নখ দিয়ে খুচা মারল। মাহি আচমকা আক্রমণে চমকে গিয়ে আওয়াজ করতে গিয়ে থেমে গেল। তারপর ফায়াজের দিকে তাকিয়ে পা আস্তে আস্তে সরিয়ে নিল। ফায়াজ মিটমিট করে হাসছে৷ মাহির শরীর জ্বলে যাচ্ছে। মাহি দ্রুত খাবার শেষ করে চলে গেল। ফায়াজও খাবার শেষ করে মাহির পেছনে পেছনে গেল।

মাহি ফায়াজকে খেয়াল করে নি। রুমে ঢুকে কারো শব্দ পেয়ে পেছনে তাকাতেই ফায়াজকে দেখে চমকে গেল।
তারপর তোতলাতে তোতলাতে বলল,
“তুউউউ….মি? তুমি এএএ…খানে?”

ফায়াজ ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে মাহির বিছানায় বসে বলল,
“তুমিও দেখছি মেহেরের মতো বোকা। আমি এত সহজে তোমাকে ছেড়ে দেব? ভাবলে কি করে?”

“মানে? কি বলতে চাও?”

ফায়াজ মাহির রুম দেখতে দেখতে বলল,
“বলতে তো চাই অনেক কিছুই। সব শুনতে গেলে রাত পাড় হয়ে যাবে।”

মাহি ভয় পেয়ে বলল,
“প্লিজ চলে যাও। বাড়ি ভর্তি মানুষ। কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।”

ফায়াজ উঠে দাড়িয়ে মাহির দিকে আগাতে আগাতে বলল,
“সো?”

মাহি ভয়ে পেছাতে লাগল। ওর খুব ভয় করছে। ফায়াজ বাড়িতে কোন তামাশা শুরু করে কে জানে।
মাহি বলল,
“ফায়াজ স্টপ। আমি তোমার স্ত্রীর বড় বোন ভুলে যেও না। ওখানেই দাঁড়িয়ে যাও।”

ফায়াজ থেমে গিয়ে আলতো হেসে বলল,
“সম্পর্ক ঘুরতে কতক্ষণ। এই ধরো তোমার বিয়েটা ভেঙে গেল।”

মাহি আতংকিত হয়ে বলল,
“ভেঙে গেল মানে?”

“এই ধরো ভেঙে গেল। যেতেও তো পারে তাই না? কথার কথা বললাম আর কি।”

মাহি কিছুটা জোরে বলল,
“কি চাও তুমি? মেহেরের জীবনটা ধ্বংস করে শান্তি হয় নি? আমি তোমাকে বলেছিলাম মেহেরকে এসবে জড়াবে না। তার বদলে তুমি যা বলবে তাই করব কিন্তু তুমি শুনো নি তাই এখন তুমি আর এ-সব করতে পারো।”

ফায়াজ বাকা হেসে বলল,
“কি পারি আর পারি না সেটা সময়ই বলে দিবে।”

ফায়াজ মাহির রুম থেকে বের হয়ে গেল। মেহেরের রুমের দিকে আগাতে আগাতে বলছে,
“আজকের রাতের ঘুম কেড়ে নিলাম মাহিরা। সারারাত ভাবো আমি কি চাইছি। কি করব। আর আমি রিলেক্স মুডে ঘুমাই।” (হাই তুলতে তুলতে)

ফায়াজ রুমে গিয়ে দেখে মেহের ঘুমিয়ে আছে। মেহের আসলে জেগে আছে। ঘুমের ভান করে আছে। মেহের মাহির রুমে ফায়াজ আর মাহির সব কথা শুনেছে।
অপর দিকে মাহি সারারাত ছটফট করছে। ঘুম আসছে না। বারবার ঘুরেফিরে একি টেনশন মাথায় জেকে বসছে।

.

সকাল সকাল মেহের মাহির রুমে গিয়ে উপস্থিত।
মাহি চুপ করে বসে আছে। মেহের পাশে গিয়ে বসে বলল,
“আমার আসাটা হয়তো উচিত হয় নি।”

মাহি ওর কথা শুনে বলল,
“উচিত হয় নি? কি বলছিস? কি হয়েছে?”

মেহের দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তাহলে ফায়াজ কিছু করতে পারতো না।”

মাহি মেহেরের দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বলল,
“ওর যা করার ও করবেই। দূর থেকে হলেও করতো। ওর জন্য তোকে দূরে রাখব কেন? জানি না ও কি করতে চাইছে।”

মেহের মন খারাপ করে বলল,
“আমিও বুঝতে পারছি না। ও কি আমাদের ভয় দেখাচ্ছে?”

মাহির ওর পয়েন্টটা ভালো লাগল। তাই বলল,
“হতেও পারে। আবার নাও হতে পারে। বুঝতে পারছি না। তবে ওর সাথে তোর থাকা উচিত হচ্ছে না।”

মেহের মাথা নিচু করে মিনমিন করে বলল,
“তোমার বিয়েটা যদি ঠিকঠাক হয়ে যায়। সব ঠিক থাকে তবে আমি চলে আসব। তখন আর ভয়ের কিছু থাকবে না। ওর সাথে আমি থাকতে চাই না।”

মাহি প্রশ্ন করল,
“ভয়? তুই আজো বললি না কেন ফায়াজকে বিয়ে করেছিস। আজ বল।”

মেহের এড়িয়ে গেল।
“আপু নাস্তা করে নেও। তারপর একটু রেস্ট নেও৷ হলুদে অনেক রাত জাগতে হবে।”

মেহের চলে এলো মাহির রুম থেকে।

.

মাহিকে হলুদের জন্য সাজানো হচ্ছে। মেহের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মাহি আয়নায় মেহেরকে দেখে ইশারায় ডাকল। মেহের মাহির সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই মাহি সাজ থামিয়ে দিয়ে বলল,
“কিরে তুই এখনো রেডি হোস নি? সকাল থেকে একি জামা পড়ে ঘুরছিস কেন? শাড়িটা নিয়ে চলে আয়। এখানে রেডি হ।”

মেহের চোখ বন্ধ করে তারপর আবার খোলে বলল,
“আপু আমার কিছুই ভালো লাগছে না। আমি সাজগোছ করতে চাইছি না। জোর করো না। ভালো লাগছে না।”

মাহি মেহেরকে দেখল কিছুক্ষণ তারপর বলল,
“মানুষ কি বলবে? বাড়িতে কত মেহমান আসবে। তুই এভাবে থাকবি?”

“আমি ড্রেসটা চেঞ্জ করে নেব। তাহলেই হবে। আমি যাচ্ছি।”

মেহের লাল রঙের একটা ড্রেস পড়ে চুলগুলো আচঁড়ে নিচে আসছে। ওর চোখ মুখ শুকনো। মাহির জন্য শুধু অনুষ্ঠানে এসেছে নয়তো আসতো না। মেহের নিচে নেমে ফায়াজকে দেখল। ফায়াজ লেমন কালার পাঞ্জাবী পড়েছে। সিল্কি চুলগুলো কপালের উপর আছড়ে পড়েছে। পাঞ্জাবীর বুকের দুটো বোতাম খোলা। হাতাগুলো গুছানো। হাতে ঘড়ি। কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। মেহেরের মনে হচ্ছে না এই ছেলেটা এত ভয়ংকর। মনে হচ্ছে এই ছেলেটা পৃথিবীর সবচেয়ে স্বচ্ছ, শুদ্ধতম মানুষ।

চলছে…!

#শেষ_পাতায়_তুমি(Revenge story)
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-১১|

মেহের স্টেজের সামনে যেতেই এক প্রতিবেশী মেহেরকে দেখে বলল,
“একি তোমার বোনের হলুদ আর তুমি এই সাজে?”

মেহের ওদিকে তাকাল। পাড়ার দু-তিন জন আন্টিরা গল্প করছে তাদেরই একজন মেহেরকে কথাটা বলেছে।

মেহের শুকনো মুখে বলল,
“আসলে আন্টি আমার শরীর ভালো লাগছে না। তাই রেস্ট করছিলাম। আপু বারবার বলছিল তাই এসেছি।”

তিনি মেহেরকে ভালো করে পরখ করে বলল,
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার শরীর খারাপ। কি হয়েছে? প্রেগন্যান্ট নাকি? চোখ-মুখ তো তেমনই লাগছে।”

মেহের উনার কথা শুনে থ হয়ে আছে। মুখে কোনো র নেই। বলে কি। প্রেগন্যান্ট!

আরেকজন বলল,
“বিয়ে হয়েছে মাত্র এক মাস হবে। এরি মধ্যে প্রেগন্যান্ট?”

পাশের জন্য মুখ টিপে হেসে বলল,
“বিয়ে হয়েছে এক মাস কিন্তু সম্পর্ক তো আগে থেকেই ছিল। পুরো মহল্লা জানে মেহের হুট করে নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে নিয়েছে। প্রেগন্যান্ট হতে বিয়ের প্রয়োজন হয় না। বুঝেছেন ভাবি ডিজিটাল যুগে সব ডিজিটাল।”

অন্যরাও সমান তালে মুখ চেপে হাসছে।
মেহের আর সহ্য করতে পারল না। তাই বলল,
“মেহের নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করেছে ঠিকই কিন্তু চরিত্র আপনাদের চিন্তাভাবনার মতো নীচ না। যেদিন মেহের প্রেগন্যান্ট হবে সেদিন পুরো মহল্লায় মিষ্টি বিলিয়ে জানিয়ে আসবে।”

.

ফায়াজকে স্টেজের দিকে এগুতে দেখে মাহির ভয়ে কলিজা কেঁপে উঠছে। বারবার মনে কু ডাকছে। ফায়াজ উল্টো পাল্টা কিছু না করে বসে। ফায়াজ হাসিমুখে মাহির সামনে গিয়ে বসে। তারপর হাত দিয়ে হলুদ তুলতে তুলতে বলল,
“হলুদটা ভালো করে উপভোগ করো কেমন? চেহারায় একদম টেনশন ভাবটা আনবে না। ভালো লাগছে না।”

মাহি ফায়াজের দিকেই তাকিয়ে আছে। ফায়াজের ঠোঁটের কোনের রহস্যময় হাসিটা ভালো ঠেকছে না।
ফায়াজ হলুদ মাহির গালে ছুইয়ে দিল।
মাহির সেদিকে খেয়াল নেই। আতংকিত চোখে ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।
ফায়াজ আবারও মুচকি হেসে উঠে চলে গেল। মাহি তখনও ফায়াজের দিকে চেয়ে আছে।

ফায়াজ মেহেরকে খোঁজছে। ফায়াজ একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে আর সবার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। সবার একি কথা জামাই একা কেন? মেহের কই?
ফায়াজ তো নিজেও জানে না মেহের কই। তাই মেহেরের নাম্বারে ডায়েল করল। কিন্তু ফোন তুলছে না। ফায়াজ মেহেরকে আশেপাশে মুটামুটি খোঁজে রুমে খুজতে গেল। রুমের দরজা খোলে দেখে পুরো রুম অন্ধকার। বিয়ে বাড়িতে এমন অন্ধকার ঘর। ফায়াজ লাইটের সুইচ দিতেই মেহেরের চোখে হটাৎ আলোর আঁচ লাগায় চোখ খুলল। মেহের দ্রুত চোখের পানি মুছে নিল। দরজার দিকে চোখ যেতেই ফায়াজকে দেখল। তারপর আবার চোখ সরিয়ে নিল।

ফায়াজ মেহেরের সামনে এসে বলল,
“তুমি এখানে কি করছ? আমি একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছি। নানা জনে নানা কথা বলছে। চলো আমার সাথে।”

মেহের ফায়াজের কথা শুনে অবাক না হয়ে পারল না।
“অন্যের কথায় আপনার কিছু আসে যায়?”

ফায়াজ মেহেরের দিকে বিরক্তি নিয়ে বলল,
“আমি মানুষের প্রশ্নের ভীড়ে থাকতে পারছি না।”

মেহের বিরবির করে বলল,
“তাহলে আমার মতো ঘরবন্দী হয়ে থাকুন।”

তারপর জোরে বলল,
“আমার শরীর ভালো লাগছে না। আমি যেতে পারব না। আপনার ইচ্ছে হলে যান।”

মেহের শুয়ে পড়ে চাদর গায়ে জড়িয়ে নিল। ফায়াজের রাগ দেখে কে। ফায়াজ কিছুক্ষণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর মেহেরকে খেকিয়ে বলল,
“মেহের উঠো বলছি। অনুষ্ঠানে চলো।”
ফায়াজ মেহেরের হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরালো।

মেহের উঠে বসে ছলছল চোখে হাত জোড় করে বলল,
“আমার ভালো লাগছে না। আজকের মতো একা ছেড়ে দিন। আমি হাত জোড় করছি।”

ফায়াজ কিছুক্ষণ মেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর মেহেরের হাত ছেড়ে দিল। কেন যেন মায়া হলো খুব।মেহের হাত ছাড়া পেয়ে নিজের চোখের পানি লুকানোর জন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।

ফায়াজ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে ফ্রেশ হতে চলে গেল। কিছুক্ষণ পরে মেহের অনুভব করল ফায়াজ ওর পাশে এসে শুয়েছে। এর মানে ফায়াজ আর নিচে যায় নি। মেহের আবারও চোখ বন্ধ করে নিল। ফায়াজ আধশোয়া হয়ে ফোন টিপছে। মেহেরকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইছে কিন্তু পারছে না।

অবশেষে শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করেই ফেলল,
“তোমার কি হয়েছে? কাঁদছো কেন? কেউ কিছু বলেছে?”

মেহের ফায়াজের কথা শুনে চোখ মেলল। কিন্তু ফায়াজের মুখ থেকে এমন কথা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফায়াজ ওর কান্নার কারণ জানতে চাইছে। ওর কান্না করা না করায় ফায়াজের কি।

ফায়াজ উত্তর না পেয়ে কিছুটা জোর দিয়ে বলল,
“কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি তোমাকে।”

মেহের না ঘুরেই মৃদু সুরে বলল,
“আমি আপনাকে বলতে বাধ্য নই।”

ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে আবারো চটে গেল। ওর হাত ধরে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“ভালো ভাবে বললে দেখছি একদম দাম দেও না। তুমি আমাকে বলতে বাধ্য।”

মেহের উঠে বসে বলল,
“আচ্ছা, তাহলে শুনুন। আমার চেহারা দেখে পাড়ার লোকের মনে হচ্ছে আমি প্রেগন্যান্ট। কিন্তু আমার তো মাত্র ১মাস হয়েছে বিয়ের। তাতে কি? এখন ডিজিটাল যুগ৷ বিয়ে ছাড়াও প্রেগন্যান্ট হয়ে যায় মেয়েরা। একটা প্রেমিক থাকলেই হলো। আর আমার তো আপনার সাথে দীর্ঘদিন প্রেম ছিল তাই না?”

ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে হা করে চেয়ে আছে ওর দিকে। কি উদ্ভট কথা বলছে।

মেহের আবারও কেঁদে দিল।
“আমার দোষটা কোথায় বলুন তো? আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে? কি করেছি আমি? রোজ রোজ কেন আমাকে চোখের পানি ফেলতে হবে?”

ফায়াজ মাথা নিচু করে নিল। কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা। নীরবতা কাটিয়ে ফায়াজ মেহেরের হাত ধরে বলল,
“চলো, কে বলেছে তাকে দেখতে চাই।”

মেহের ভয় পেয়ে হাত সরিয়ে নিল। কাকে কি বলেছে এখন মনে পড়ল। ফায়াজের সাথে মনের দুঃখ প্রকাশ করছে। কাল, পাত্র, স্থান কোনোটাই যে মানে না। এতটাই ইমোশনাল হয়ে পড়েছিল যে সবটা বলে ফেলেছে।

ফায়াজের মনে হচ্ছে মেহেরকে কষ্ট দেওয়ার কিংবা বাজে কথা বলার অধিকার কারো নেই। ও নিজে যা ইচ্ছে করবে তাতে কি। যদিও ও জানে মেহের এই ব্যবহার ডিজার্ভ করে না। কিন্তু মাহিকে কষ্ট দিতে এবং মেহেরের মনোভাব অনুযায়ী ফায়াজকে মানুষ না ভাবার জন্য মেহেরের সাথে এমন ব্যবহার করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কিন্তু অন্য কেউ ওর সাথে এমন ব্যবহার করতে পারে না।

মেহের ভয়টা দমিয়ে বলল,
“আপনি কি করবেন? তাদেরকে মারবেন? এটাই তো পারবেন। তাতে কি হবে? উনাদের বলা কথা ফেরত নিতে পারবে?”

ফায়াজ বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল,
“আমি নিজেই খোঁজে নিতে পারব। এটা আমার এক চুটকির কাজ।”

মেহের ব্যতিব্যস্ত হয়ে ফায়াজের হাত চেপে ধরে বলল,
“প্লিজ এমন কিছু করবেন না। বাড়ি ভর্তি মানুষ। আপনি উল্টো পালটা রিয়েক্ট করলে সবাই ছিহ ছিহ করবে। আমার অপমান হবে। বাইরের মানুষের সামনে আমাকে আর অপমান করবেন না প্লিজ।” (নিচু গলায় চোখ নামিয়ে)

ফায়াজ নিজের হাতের দিকে চেয়ে আছে। মেহের খুব শক্ত করে ধরে আছে। এই মেয়ের গায়ে এত শক্তি এলো কোথাথেকে সেটাই বোধগম্য হচ্ছে না।

ফায়াজ বলল,
“ঠিক আছে।”

মেহের ফায়াজের দিকে তাকাল। আজ ফায়াজ এত ভালো হয়ে গেল যে সব কথা রাখছে।
ফায়াজ হাতের দিকে ইশারা করতেই
মেহের দ্রুত ওর হাত ছেড়ে দিল। তারপর দ্রুত অন্য দিকে ঘুরে গেল।

.

সকাল সকাল মেহের শাওয়ার নিয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে বেড়িয়ে গেছে। আজকে খুব সুন্দর করে সাজবে। ফকিন্নি সেজে থাকবে না। আর ফায়াজের আনা শাড়ি, লেহেঙ্গা পড়বেও না। অনুকে নিয়ে প্রথমে শপিংয়ে যাবে। কেনাকাটা করে অনুদের বাড়িতে গিয়ে রেডি হবে। পার্লারে আগেই কথা বলে রেখেছে অনু। নিজেদের বাড়িতে এত মানুষের ভীড় ভালো লাগছে না। তাই মেহের অনুর সাথেই রেডি হবে।
যেই কথা সেই কাজ।

১৫মিনিট যাবত মেহের আয়নায় নিজেকে দেখছে। নিজের প্রেমে নিজেই পড়ে যাচ্ছে। চোখ সরছে না। আগে সব সময় আপুর কাছেই সাজতো। সাজগোছ নিয়ে বড্ড ছেলেমানুষী করতো তাই কখনো পার্লারে সাজে নি। আজ কিছুটা রাগ করেই পার্লারে সেজেছে।

অনু এসে মেহেরকে ধাক্কা মেরে বলল,
“কিরে নিজেই নিজের থেকে চোখ সরাতে পারছিস না, অনুষ্ঠানে আসা ছেলেদের কি হবে? সব ফিদা হয়ে যাবে।”

মেহের আপসোসের সুরে বলল,
“আর ফিদা, আমি বিবাহিত ভুলে গেছিস?”

অনু মন খারাপ করে বলল,
“তুই যে বিবাহিত মহিলা সেটা তো ভুলেই গেছি। যাক গে জামাইয়ে ফিট খাওয়াবি। ফায়াজ ভাইয়ের ধপাস করে পড়ে যাওয়া চাই।”

মেহের মনে মনে দীর্ঘশ্বাস লুকাল।

মেহের অনুর সাথে হাসতে হাসতে দরজা দিয়ে ঢুকছে। আর হাত নাড়িয়ে, চোখ বড়বড় করে কি যেন বলছে। অনুরও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। ফায়াজ দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপ ছিল। হাসির খিলখিল শব্দে সেদিকে চোখ যেতেই এক ধ্যানে মেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরকে আজ চেনাই যাচ্ছে না। একদম অন্যরকম লাগছে। এই প্রথম শাড়ি পড়ে গর্জিয়াছ সাজে দেখছে। মুগ্ধ হয়ে মেহেরকে দেখছে।
মেহের সোজাসুজি মাহির কাছে চলে গেল। সকাল থেকে মাহির সাথে দেখা হয় নি। মাহিকে বউ সাজে কেমন লাগছে তা দেখার জন্য মেহের উদগ্রীব হয়ে আছে। মাহির সাথে সেল্ফিও তুলতে হবে।

মাহির কাছে গিয়ে মেহেরের চোখ কপালে। মাহি লেহেঙ্গা আর গয়না পড়েছে ঠিকই কিন্তু কোনো সাজ নেই। মুখ ভার করে বসে আছে। তবে এটুকুই না মাহির ডান গালে লালচে কি যেন দেখা যাচ্ছে।
মেহের মাহির কাছে গিয়ে বলল,
“আপু!! তোমার এই হাল কেন?”

মাহি কাদো কাদো ফেস করে বলল,
“সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি গালে কি জানি হয়েছে। খুব চুলকাচ্ছে আর জ্বলছে।তারপর আন্টিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই৷ ডাক্তার দেখে বলল এলার্জি জনিত কারণে রেশ হয়েছে। মুখে সাবান-স্নো যেন না দেই। তাহলে আরো খারাপ হয়ে যাবে। তারপর উনাকে যখন বিয়ের কথা বলি তখনও উনি বলেন মেকাপ একদমই ইউজ করা যাবে না। তারপর আমার কান্নাকাটি দেখে কে। বিয়ে করব সাজ ছাড়া? তূর্জের সাথে কত প্ল্যান করেছি। কত ভাবে পিক তোলার প্ল্যান ছিল আমাদের। কিন্তু কিছুই হবে না। নর্মাল ভাবে কেউ বিয়ে করে?”
মাহি আবার কাদো কাদো ফেস করল।

মেহের মাহির কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেল। কখন কি হলো কিছুই তো জানে না। সেই সকালে বের হয়ে গেছে।

“তুমি আমাকে কিছু জানাও নি কেন?”

মাহি বলল,
“তোকে আপসেট করতে চাই নি। জানি তো তুই শপিংয়ে গিয়েছিস।(মেহেরের দিকে ভালো করে চোখ পড়তেই) আরে মেহু পাখি তোকে কত সুন্দর লাগছে। মাই গড। তোকে এত্ত কিউট লাগছে কি বলব। আমার বোনটা কত সুন্দর। তোকে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে তোরই বিয়ে।”

মেহের বোনের প্রসংশা শুনে কিছুটা লজ্জা পেলেও মন খারাপ করে বলল,
“কিন্তু এটা কি হলো আপু?”

মাহি বলল,
“কি আর করব? আমার কান্নাকাটির কথা শুনে তূর্জও চলে এসেছিল। তারপর আমাকে কত ভাবে শান্তনা দিয়ে গেল। আমরা অন্য দিন ফটোগ্রাফি করব। কি আর করা। এখানে না বসে থেকে যা বাইরে যা। দেখ গিয়ে বাকিরা কি করছে।”

মেহের অনুর সাথে চলে গেল। ফায়াজ এক কোনায় দাঁড়িয়ে বাকা হাসল।
মাহি ভাবছে আল্লাহ কি আমার পাপের শাস্তি দিলেন? মেহু পাখিও তো সাজ বিহীন আপসেট মনে বিয়ে করেছে। তাই কি আজ আমার বিয়েতেও আমার সাথে এমন হলো? আমি যেখানে সাজ বিহীন সেখানে মেহু পাখি আজ কত সুন্দর করে সেজেছে। হয়তো পাপের শাস্তি পাচ্ছি।

ফায়াজ মিটমিট করে হাসছে। হাসতে হাসতে ওখান থেকে চলে গেল।
~ফ্ল্যাশব্যাক~
গতকাল রাতে যখন ফায়াজ মাহিকে হলুদ দিচ্ছিলো তখন ফায়াজের হাতে গ্লাভস ছিল। ফায়াজ হলুদের সাথে মেডিসিন মিশিয়ে দিয়েছিল যা ৬ঘন্টার মধ্যে অ্যাকশন করবে। কিন্তু মাহি এতটাই আতংকে ছিল যে সেটা খেয়াল করে নি। ফায়াজও কথা দ্বারা মাহিকে ব্যস্ত রেখেছিল।

ফায়াজ সেসব ভেবেই হাসছে। মেহের মুখে আগামী ৪-৫দিন মুখে কোনো রূপচর্চার সামগ্রী ব্যবহার করতে পারবে না।

ফায়াজ বাইরে গিয়ে দেখে মেহের ফায়াজের বাবার সঙ্গে কথা বলছে। ওর বাবা এসেছে। মেহের ফায়াজের বাবাকে নিজের বাবা-মার সাথে কথা বলতে নিয়ে গেল।
মেহেরের বাবাও ভদ্রতার সহীত ফায়াজের বাবার সঙ্গে কথা বলল। তারপর ফায়াজের বাবা ফায়াজের কথা জিজ্ঞেস করল মেহেরকে কিন্তু ও কোনো উত্তর দিতে পারল না। কারণ মেহের তো ফায়াজের সাথে সকাল থেকে দেখাই করে নি।
তখনই ফায়াজ গিয়ে উপস্থিত। ফায়াজ মেহেরের দিকে হাসিমুখে একবার তাকিয়ে বলল,
“আমি এখানেই আছি। ঘুরে ফিরে দেখছিলাম সব।”

মেহের ফায়াজকে পর্যবেক্ষণ করল। ব্ল্যাক স্যুটে ওকে অনেক কিউট লাগছে। ফায়াজের চোখে চোখ পড়ার আগেই মেহের দ্রুত চোখ সরিয়ে নিল।
তারপর বলল,
“চলুন বাবা খেয়ে নিবেন৷ অনেকক্ষণ ধরে এসেছেন।”

মেহের ফায়াজের বাবাকে নিয়ে চলে গেল।

বরযাত্রী এসে পড়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিয়ে পড়ানো হবে। তূর্জকেও মাহির সাথে ভেতরে নিয়ে বসানো হয়েছে। মাহি এই চেহেরায় বাইরে আসবে না কারো সামনে। তাই একটা রুমে ওদের বিয়ে পড়ানো হচ্ছে। ফায়াজ মাহির আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর মাহিকে বিভিন্ন ইশারা করছে। মাহির পুরো দৃষ্টি ফায়াজের দিকে। ভয়ে মুখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। মনে হচ্ছে এই বুঝি ফায়াজ কিছু একটা করল। বিয়ে যে পড়ানো হচ্ছে সেদিকেও খেয়াল করতে পারছে না। হটাৎ করে মাহিকে কবুল বলতে বলা হলে মাহি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইল। কখন কি হয়েছে কিছুই জানে না। মাহি তারপর দ্রুত কবুল বলে দিল তারপর আবার ফায়াজের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ পরে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলল। কিন্তু কি হচ্ছে কিছুই ভালো করে মাহির বোধগম্য হলো না। বিয়ে হয়ে গেছে এটুকু বুঝতে পারল।

ফায়াজ সেখান থেকে গিয়ে বাগানে গিয়ে দাড়াল। তারপর মনে মনে বলছে,
“তোমার বিয়ে ভাঙার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই। আমি শুধু পুরোটা সময় তোমাকে ভয় ও আতংকে রাখতে চেয়েছি। সব সময় তটস্থ রাখতে চেয়েছি। তুমি যখনই বিয়ের কথা ভাববে তখনই এই ভয়ংকর স্মৃতি গুলো তোমার মনে পড়বে। আমি তোমার এই সুন্দর মুহুর্তগুলো নষ্ট করতে চেয়েছি আর আমি সাকসেস। তুমি বিয়ে নিয়ে কোনো ভালো মুহুর্ত মনে করতে পারবে না। যেমনটা আমি পারি নি।”

চলবে….!