শেষ পাতায় তুমি পর্ব-০৯

0
3615

#শেষ_পাতায়_তুমি(Revenge Story)
#ফাবিহা_নওশীন

|পর্ব-৯|

মেহের ফায়াজের বাবার রুমে দরজার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
ফায়াজের বাবা ভেতরে থেকে ডাকায় মেহের গুটিগুটি পায়ে ভেতরে গেল।

মেহের আঙুলের সাথে আঙুল ঘষছে। ফায়াজের বাবা মেহেরকে বসতে বলল। মেহেরের খুব নার্ভাস লাগছে। সাথে ভয়টাও আষ্টেপৃষ্টে চেপে ধরেছে।

ফায়াজের বাবা মেহেরের নার্ভাসনেস বুঝতে পেরে বলল,
“বি ইজি, আমি তোমার বাবার মতো। তোমার বয়সী আমার একটা মেয়ে আছে। ফাইজার কথা নিশ্চয়ই শুনে থাকবে ফায়াজের কাছে। মেয়েটা আমার দূরে থাকে খুব মিস করি ওকে।”

মেহের চোখ তুলে তাকাল ফায়াজের বাবার দিকে। মেয়েকে কতটা মিস করছেন চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে। কিন্তু ফাইজা থাকে কোথায় কিছুই জানে না। মেহের জিজ্ঞেস করতে চেয়েও থেমে গেল।
মেয়ের কথা ভেবে এতটা ইমোশনাল হয়ে গেছে। তাছাড়া প্রথম বার কথা হচ্ছে তাই যতটুকু জিজ্ঞেস করেছে ততটুকুই উত্তর দেওয়া উচিত।

মেহের স্বাভাবিক হয়ে বসল। তারপর আলতো হেসে বলল,
“জি, বলুন।”

ফায়াজের বাবা মেহেরের হাসির দিকে চেয়ে আছে। এই হাসি কৃত্রিম কি না বুঝার চেষ্টা করছে।

“ফায়াজের সাথে তোমার বিয়ে হয়েছে?”
মেহের উনার এহেন প্রশ্নে চমকে গেল৷ উত্তর দিবে কি থ হয়ে রইল।

ফায়াজের বাবা বিষয়টি বুঝে নিয়ে বলল,
“জানি খুব অকওয়ার্ড ফিল করছ। আমার এমন প্রশ্ন করা উচিত হয় নি। কিন্তু কি করব বলো, ছেলেকে তো চিনি। আর তাছাড়া তোমার আর ওর বিহেভিয়ার আমার খুব অদ্ভুত লেগেছে। তাই জিজ্ঞেস করলাম। কোনো সমস্যা হলে আমাকে বলতে পারো নির্ভয়ে আমি তোমাকে হেল্প করব।”

ফায়াজের বাবা উত্তরের আশায় মেহেরের দিকে চেয়ে আছে।
মেহের কিছুটা দ্বিধা দন্ড নিয়ে বলল,
“জি, আমাদের কাজি অফিসে বিয়ে হয়েছে।”

ফায়াজের বাবা স্বস্থির নিশ্বাস নিয়ে বলল,
“কতদিন ধরে চিনো ওকে?”

মেহের ভেবে চিনতে বলল,
“দু- মাসের মতো হবে।”

ফায়াজের বাবা বিস্ময় নিয়ে বলল,
“এত অল্প সময়ের চেনা-জানা তাতে বিয়ে করে নিলে?”

মেহের এবার কি উত্তর দিবে খোজে পাচ্ছে না। তারপর আমতা আমতা করে সংকোচ নিয়ে বলল,
“আসলে প্রথম দেখায় আমাদের ভালোলাগা হয়ে গিয়েছিল। তারপর প্রেম। আর তারমধ্যে হুট করেই উনি বিয়ের কথা বললেন। আপনি তো জানেন আপনার ছেলেকে যখন যেটা বলে সেটাই করে। নিজের চাওয়াটা আদায় করে নেয়।”

“এটাই তো ভয়ের কারণ রে মা। তোমার বাবা-মা এভাবে বিয়ে দিতে রাজী হলো?”

মেহের চুপ করে আছে। চোখে পানি জমেছে। ভেতরটা ভেঙে যাচ্ছে।তারপর ধরা গলায় বলল,
“আমরা কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করেছি। বাবা-মা আমাদের মেনে নেয় নি। আমার বাবা খুব রাগী মানুষ। তিনি কিছুতেই বিয়েটা মেনে নিবেন না।”

ফায়াজের বাবা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন,
“তোমার বাবার নাম?”

“জি, আরমান মাহফুজ। তিনি ব্যবসায়ী। আমরা দুই বোন। আমি ছোট।”

“তুমি কিসে পড়?”

“অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে।”

ফায়াজের বাবা আলতো হেসে বলল,
“তুমি তো দেখছি ফাইজার চেয়েও ছোট। তোমার এ বাড়িতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো? ফায়াজ তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছে তো?”

মেহের দ্রুত বলল,
“জি, সব ঠিক আছে। আমার এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”

ফায়াজের বাবা মেহেরের মাথায় হাত দিয়ে বলল,
“দোয়া করি সব সময় দুজন একে অপরের সঙ্গে ভালো থাকো। চলো এখন ডিনার করে নেই।”

মেহের মাথা নাড়িয়ে শায় দিল। মেহের মনে মনে ভাবছে ফায়াজ শয়তানের হাড়গিলার বাবা কত ভালো। কত সুন্দর করে কথা বলে। ভেবেছিলাম নিশ্চয়ই খুব কর্কশ কন্ঠে কথা বলবে, কথায় কথায় ধমকাবে। কিন্তু না তিনি অতি মাত্রায় ভদ্র। ফায়াজ এমন কেন হয়েছে আল্লাহ মালুম।

ডিনার শেষে মেহের নিজের ঘরে যায়। ফায়াজ এখনো বাসায় ফিরে নি। মেহেরের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। মাহিকে ফোন করে কথা বলবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ মেহের দ্রুত মাহির নাম্বারে ফোন করে। গত দুদিন ধরে কোনো কথা হয় নি।

রিং হতেই মাহি ফোন রিসিভ করল।
রিসিভ করেই বলল,
“মেহের,, কেমন আছিস? তোর সাথে আর কথাই বলতে পারি নি। আমি নিজেও কল করি নি। যদি ফায়াজ রিসিভ করে। তোর সাথে যদি আবার মিসবিহেভ করে তাই। তুই কেন দিস নি?”

“আপু তেমন সুযোগ পাই নি। জানো আপু আজ সকালে ফায়াজের বাবা এসেছেন।”

মাহি অতি আগ্রহ নিয়ে বলল,
“তারপর,,,!”

মেহের উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“উনি খুব ভালো। অমায়িক ব্যবহার তার। কত সুন্দর করে কথা বলে। আমার খোজ খবর নিলেন। ফায়াজের মতো বদের হাড্ডি না।”

মাহি অবাক হয়ে বলল,
“তাই না কি? আমি তো ভেবেছিলাম কি না কি বলছে। তাহলে তার যত্ন নিস। বাবার মতো সম্মান করবি।”

“হ্যা, তাই করব। তোমার বিয়ের কি খবর? কেনাকাটা কমপ্লিট? বিয়ের জন্য কি ড্রেস নিয়েছ?”

মাহি চুপ করে আছে। যার আনন্দ- উৎসব করার কথা ছিল সে-ই নেই। দূর থেকে জিজ্ঞেস করছে কি ড্রেস পড়বে বিয়েতে।

ফায়াজ মেহেরের পেছনে থেকে বলল,
“প্রাণের প্রিয় বোনের সঙ্গে কথা হচ্ছে বুঝি?”

মেহের ফায়াজের কন্ঠ শুনে চমকে গেল। তারপর দ্রুত ফোন পেছনে রেখে ফায়াজের দিকে ঘুরল। চোখে মুখে ভয় স্পষ্ট। মাহি ওপাশ থেকে কান পেতে রেখেছে৷
ফায়াজ মেহেরের কিছুটা কাছে গিয়ে বলল,
“এতো প্রাণের বোন তোমার। তুমি নাকি ওর কলিজার টুকরা। আর তোমাকে ছাড়া কত আনন্দ নিয়ে বিয়ের পীড়িতে বসছে। তার আনন্দে তোমার কোনো স্থান নেই। অথচ এই বোনের বিয়ের জন্যই কিছু না ভেবে আমাকে বিয়ে করে নিলে। আর ও তোমাকে ছাড়া বিয়ে করছে। ইউ আর নট ইনভাইটেড।”

মেহের মন খারাপ করে নিচু গলায় বলল,
“বাবা আমাকে এলাও করবে না তাই।”

ফায়াজ আরেকটু জোরে বলল যাতে মাহি ভালো করে শুনতে পায়।
“আচ্ছা ও চাইলে কি পারতো না? ওর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এমন সময় যদি কোনো আবদার করতো তাহলে তোমার বাবা মেনে নিতেন না? আসলে তোমার আপুর ইচ্ছেটাই নেই মেহের। তুমি বোকা তো তাই বুঝো না। তোমার বোন কি জিনিস আমি জানি। যাইহোক এ নিয়ে দুঃখ করো না।”
ফায়াজ ঘুরে বাকা হেসে ওয়াশরুমে গেল। তারপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“জায়গামতো ঢিল ছুড়েছি। এখন শুধু অপেক্ষা।”

মাহি ফোন কেটে দিল। তারপর কিছু একটা ভেবে তূর্জকে ফোন করল।

.

মেহের আজ ভার্সিটিতে গিয়েছে। তবে চুপচাপ ক্লাস করেছে। কোথাও ঘুরাঘুরি করে নি। ফায়াজ বলে দিয়েছে ক্লাস রেখে এদিক সেদিক ঘুরতে দেখলে ঠ্যাং কেটে বাড়িতে বসিয়ে রাখবে।
ক্লাস শেষ করে সোজা বাড়িতে। মেহের ফ্রেশ হয়ে শ্বশুর বাবার রুমে গেল। তিনি ঘরে নেই। হয়তো বাড়িতে ফিরে নি। মেহের পুরো বাড়িতে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। বাড়ির কোনার এক রুমে বড় একটা ফ্রেম বাধানো ছবি দেখতে পেল। একজন মহিলা আরেকজন পুরুষ। তাদের দুজনের কোলে দুটো বাচ্চা। একটা ছেলে, একটা মেয়ে। মেয়েটা ছোট ছেলেটা বড়। মেহের চট করেই বুঝে গেল বাচ্চা দুটো ফাইজা আর ফায়াজ। আর এই মহিলাই মেহেরের শ্বাশুড়ি। মেহের ফায়াজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তিনিও খুব সুন্দর। কিন্তু তিনি কোথায় আছেন এখন? আর ফাইয়া? এই ফ্যামিলির একটা ঘাপলা আছে কিন্তু কি সেটা বুঝতে পারছে না।

.

“ফাইজা, উঠ। ক্লাস পাবি না এত লেট করে গেলে। সব মিস হয়ে যাবে।তাড়াতাড়ি উঠ।”

“উফফ, মম! আজকে আমার ক্লাস নেই। আজ হলিডে। তবুও তোমার না জ্বালালে হচ্ছে না।”
ফাইয়া বিরক্তি নিয়ে চোখ মুখ কুচকে বলল।

ফাইজার মম ফাইজার পাশে মন খারাপ করে বসে আছে। ফাইজা ঘুমঘুম চোখে উঠে বসে বলল,
“তোমার আবার কি হলো? এই সকাল সকাল মুড অফ কেন?”

ফাইজার মম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“ফায়াজ কত বড় হয়ে গেছে। বিয়ে করে ফেলেছে অথচ মমকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে নি।”

ফাইজা মমের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
“মন খারাপ করো না। তুমি তো জানোই ভাইয়া এমনই। আর পাপাকেও কিছু জানায় নি। পাপা বাড়িতে গিয়ে জেনেছে। সবার আগে আমাকেই বলেছে।”

ফাইজার মম মনে মনে ভাবছে ফায়াজ কেমন হয়ে গেছে। বিয়ের কথা বাবা-মাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে নি।

“না জানি কেমন মেয়ে ধরে নিয়ে এসেছে।”

” নো মম, ভাইয়া মেয়ে নয় মোম তুলে এনেছে। মোমের মতো নরম আর সদ্য শিমুল ফুল থেকে বের হওয়া তুলোর মতো। অনেক মিষ্টি একটা মেয়ে। জানি না ভাইয়া এমন মেয়ে কোথায় পেল। কেন এই মেয়ে ভাইয়াকে বিয়ে করল। সত্যি বলতে ভাইয়া মেহের ভাবির মতো মেয়ে ডিজার্ভ করে না। নিজের ভাই বলে সাপোর্ট করব না।”

ফাইজার কথা শুনে তিনি মনে মনে ভিষণ খুশি হলেন। ছেলেটা যদি এইবার একটু শোধরায়। মেহেরই একমাত্র ভরসা।

.

ফায়াজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে। আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে।
কিছুক্ষণ আগেই মেহেরের বাবা ফোন করে ফায়াজের বাবার সঙ্গে কথা বলেছেন। মাহির বিয়ের দাওয়াত দিয়েছেন। স-পরিবারে যেন বিয়ের সপ্তাহ খানেক আগেই চলে যান।
ও বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে মেহেরের খুশিতে চোখ থেকে ঘুম উধাও। তাই বিছানায় শুয়ে এপাশ-ওপাশ করছে। ঘুম না আসার আরেকটাও কারণ আছে আর সেটা হলো ফায়াজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে। মেহের সিগারেটের গন্ধ একদম সহ্য করতে পারে না। নাক চেপে ধরে রেখেছে।

ফায়াজ একা একাই বলছে,
“ফাইজার পর প্রথম কোনো মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি, তার প্রতি মুগ্ধ হয়েছি, তাকে ভালোবাসি বলেছি, ভরসা করেছি, সবকিছু শেয়ার করেছি, তার সাথে বাচতে চেয়েছি কিন্তু তার থেকে ধোঁকা ছাড়া কিছুই পাই নি। সে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। সব ঠিক থাকলে মাহির সাথে আমার বিয়ে হতো। আজ মাহির সাথে আমি থাকতাম কিন্তু তা হয়নি। ও অন্য একজনকে বিয়ে করছে। অন্য কাউকে ভালোবাসে। অন্য কারো সাথে ঘর করবে। আমিও অন্যজনের সাথে ঘর করছি। এমন একজন যাকে আমি ভালোবাসি না। যার দূর্বলতা নিয়ে প্রতিনিয়ত মজা করছি। প্রকৃতপক্ষে মজা করতে ভালো লাগে। পৈশাচিক আনন্দ পাই। এ-সব মাহির জন্য করছি। মাহির জন্য মেহেরকে নিয়ে খেলছি। মাহি তুমি কেন এমন করলে আমার সাথে? কেন এসেছিলে আমার জীবনে? আমার সাথে এটা না করলেও পারতে। ভালোই তো ছিলাম তুমিহীনা।”

ফায়াজের অস্থির লাগছে। এই অস্থিরতা কাটতেই হবে। নয়তো মরে যাবে। আর এই অস্থিরতা একটা জিনিসই কাটাতে পারে। ফায়াজ ঘরে এসে ওয়াইনের একটা বোতল খুলে চুমুক দিল।
মেহেরের নাকে হুট করেই বিশ্রী গন্ধ আসছে। মেহের চোখ খোলে পাশ ঘুরে দেখে ফায়াজ সোফায় বসে ড্রিংক করছে। মেহেরের পেট থেকে যেন সব দলা পাকিয়ে গলায় উঠে আসছে। মেহের মুখের উপর একটা কুশন দিয়ে চোখ বন্ধ করল।

.

ফায়াজ বিয়ে উপলক্ষে শপিং করে এনেছে মেহেরের জন্য। মেহের শাড়ি লেহেঙ্গা পেয়ে বেশ খুশি। আপুর বিয়েতে থাকতে পারবে। মজা করবে এ-সব ভেবেই খুশিতে লাফাতে ইচ্ছে করছে।
সেদিন মাহি ফায়াজের কথা শুনেই তূর্জকে ফোন করে মন খারাপ করে বলে বাবাকে যে-ভাবেই হোক যাতে রাজী করায় মেহেরের শ্বশুর বাড়ি নিমন্ত্রণ করতে। তূর্জেরও ভালো লাগছিল না। ওদের বিয়ে আর মেহের
থাকবে না তা কি হয়। তাই তূর্জ মাহির বাবাকে ফোন করে অনেক অনুনয় করে রাজী করায়। তিনি তূর্জের কথায় এক প্রকার বাধ্য হয়েই মেহেরের শ্বশুরকে ফোন করে। তিনি বিয়ের দিন যাবেন বলে কথা দিয়েছেন৷ ফায়াজ আর মেহের আগেই চলে যাবে।

মেহেরকে এত খুশি দেখে ফায়াজের রাগ হচ্ছে প্রচুর। ফায়াজ মেহেরের কাছে গিয়ে কড়া গলায় বলল,
“নিজের বাড়িতে যাচ্ছো বলে খুশিতে পাংখা হয়ে যেও না। তোমাকে আমার সাথেই ফিরতে হবে মনে রেখো। আর হ্যা তোমার একটা ভুল কাজে তোমার বোনের বিয়ে ভেঙে যেতে পারে সেটা মাথায় রেখো।”(মেহেরের মাথায় আঙুল দিয়ে ছুইয়ে)

মেহেরের আজকাল ফায়াজকে আরো বেশি অসহ্য লাগে।
মেহের রাতেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিয়েছে। সকাল সকাল ওরা ও বাড়িতে চলে যাবে। ফায়াজের জিনিসপত্র গুছানো হয় নি। মেহের নিজ থেকে কিছু বলতে যায় নি। তারপর না নিজেই ধমক খেয়ে বসে। ফায়াজ ঢুলতে ঢুলতে ঘরে ঢুকে মেহেরের দিকে সরু চোখে তাকায়। মেহের ফায়াজের দিকে অবাক দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে আছে। ফায়াজের চোখগুলো এমন লাগছে কেন? আর এত ছোট ছোট কেন?

ফায়াজ ঢুলতে ঢুলতে মেহেরের কাছে এসে হাসিতে ফেটে পড়ে।
” মেহের! মেহের! দ্যা গ্রেট ফুল গার্ল। ইউ নো হাও ফুল ইউ আর!”

ফায়াজের কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। মেহের ফায়াজের কথার ধরণ আর গন্ধ শুকে বুঝতে পেরেছে ফায়াজ ড্রিংক করেছে আর হুশে নেই।

ফায়াজ মেহেরের চুলের কিছু অংশ আঙুলে পেচিয়ে বলল,
“বর্তমান দুনিয়ায় এমন বেকুব মেয়ে নেই। একদম নেই।”
মেহেরের রাগ হচ্ছে ফায়াজের কথা শুনে। কিন্তু মেহের উত্তর দিচ্ছে না। নেশার মধ্যে ডুবে আছে। একে কিছু বলে লাভ নেই। ও এখন নিজের মধ্যে নেই।

মেহের চুল টেনে ফায়াজের হাত থেকে নিয়ে নিল। তাতে ফায়াজ চটে গেল।
“তুমি আমার হাত থেকে চুল নিয়ে গেলে কেন?”

“কারণ কেউ আমার চুলে হাত দিলে আমার বিরক্ত লাগে। আপনি শুয়ে পড়ুন।”

ফায়াজ মেহেরের কথা শুনে ক্ষেপে গিয়ে মেহেরের সবগুলো চুল দু’হাতের মধ্যে নিয়ে শুকতে লাগল। মাতাল করা ঘ্রাণে ফায়াজ মাতোয়ারা। ফায়াজ মেহেরের চুলের গভীরে নাক ডোবাল। মেহের শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফায়াজ মেহেরের দু-কাধে হাত রেখে চুলে মুখ রেখেই বলল,
“মদের মতো নেশায় ভরা তোমার চুল। আমি আরো নেশাগ্রস্ত হতে চাই।”

মেহের কিছুক্ষণ পর পিঠে ভারী শরীর অনুভব করল। ফায়াজ ওর পিঠের উপর হুশ হারিয়েছে। গভীর নিন্দ্রায় ডুবে আছে।
মেহের ফায়াজকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল৷ এটুকুতেই মেহেরের সব শক্তি শেষ। এত ভারী দেহ উঠাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে মেহেরের। কোমড়ে দু-হাত দিয়ে দম নিচ্ছে।

চলবে…!