শেষ সূচনা পর্ব-০২

0
663

#শেষ_সূচনা
পর্বঃ০২
লেখকঃ আরিফুর রহমান মিনহাজ

তখন দ্বিপ্রহর পার হয়ে গেছে। কোন কিছুর শব্দে হঠাৎ যন্ত্রের মতো চোখ দু’টো খুলে গেল। তন্দ্রাবিষ্ট চোখে লক্ষ্য করলাম, কাঁচের ধূসর রঙের দরজার পেছনে একটা নারী অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে। হাতে রিভলবার। কোন নড়চড় নেই। পেশাদার ভঙ্গিতে রিভলবার হাতে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। রিভলবারের নল তাক করা আমার দিকে। আক্রমণাত্মক বিড়ালকে দেখে ছিঁচকে ইঁদুর যেমন গা ঢাকা দিয়ে করে পালায়, ঠিক তেমন করে নিজের চোখের সম্মুখে বিপদের হাতছানিতে আমার চোখ থেকে ঘুম শশব্যস্ত হয়ে পালিয়ে গেল। তড়িৎ ওঠে বসে ডিম লাইটের মৃদু আলোতে আঁতিপাঁতি করে লাইসেন্স করা পিস্তলটি খুঁজতে লাগলাম। কয়েক সেকেন্ড হাতড়ানোর পর পেয়ে গেলাম। নিশানা তাক করতে যাব ঠিক সেই সময় গুলি ছুঁড়ল ছায়ামূর্তিটি। বিচক্ষণতার সঙ্গে তাৎক্ষণিক ডিগবাজি দিয়ে দূরে সরে গেলাম। দুর্বার গতিতে বুলেট এসে বিঁধল তোশকে৷ ফুরফুর করে তোশকের উপহত তুলোগুলো বাতাস কেটে উঠতে শুরু করল। অন্যসময় হলে বিমুগ্ধ হয়ে এই দৃশ্য মনের ভিতর যতন করে রেখে দিতাম। কিন্তু এখন সেই সময় না। পূনরায় ডাইভ দিয়ে ক্ষিপ্রগতিতে পিস্তল তুলে নিলাম। সেই অবয়বীকে আরেকবার বুলেট ছোঁড়ার সুযোগ না দিয়ে ঠাঁ ঠাঁ করে পরপর দুটো গুলি শূন্যে ভাসিয়ে দিলাম। নির্ধূম ঘর পোড়া বারুদের গন্ধে ভরে গেল পলকে। দরজার অস্বচ্ছ কাঁচ ফুটো করে পরমুহূর্তে একটা চাপা আর্তনাদ ভেসে এসে আমার কর্ণকুহরে সুরের রিনিঝিনি মাদলের সৃষ্টি করল। অন্যসময় হলেও এই মাতমের সুর মোহগ্রস্ত হয়ে শুনতাম। কিন্তু এখন নয়। আরো কয়েক সেকেন্ড অবয়বটাকে দেখা গেল। তারপর দিল ভোঁ দৌড়। দরজা খুলে আমিও ছুটলাম পিছুপিছু। আমার ধারণা সম্পূর্ণ গর্হিত ও নিরংশু। এই মেয়ে সেই মেয়েটা নয়। ভিন্ন কেউ আমার জীবনের লীলা সাঙ্গ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। মেয়েটা প্রথমে গেট খুলে যেতে চাইল।তালাবদ্ধ গেট খুলতে ব্যর্থ হয়ে প্রাচীর টপকে যাবার উদ্যেগ নিতে নিতে আমার গতিবিধি লক্ষ্য করতে একবার পেছনে ফিরে তাকাল।আমি ততক্ষণে তার নাগালের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। দুইহাত দেয়ালের উপরিভাগে ভর করে লাফ দিয়ে অর্ধেকটা বিপদমুক্ত হয়ে গেল মেয়েটা। ঠিক তখনি পিছন থেকে এসে ঝাঁপ দিয়ে একটা পা পাকড়ে ফেললাম আমি। প্রবল বিস্ময়ে,ভয়ে,আতঙ্কে মেয়েটা স্তম্ভিত হয়ে গেল। দৌড়ানোর ফলে হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানিটা তখন জায়গা বদল করে নিগূঢ় ত্রাসের ধকধক শব্দে রূপান্তর ঘটলো। মুখে ক্রূর হাসি দিয়ে উচ্চস্বরে বললাম,
—- আমার থেকে নিস্তার পেতে পারো এক শর্তে। তুমি চলে যাবে ;কিন্তু আমার হাতে তোমার পেন্ট রয়ে যাবে। কেমন হবে?
এতোক্ষণ মেয়েটা নিস্তার পাবার নিমিত্তে পা ছুড়াছুঁড়ি করছিল। আমার এই ওড়ম্বা প্রস্তাবে সে নিরাশ হয়ে দমে গেল। ফুঁস করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে দিলো। নিজের প্রশংসা না করে পারলাম না। মাঝে মাঝে আত্মস্তুতি করা দোষের কিছু না। পরাজয়ের এই বিশীর্ণ নিশ্বাসের সুর চিনতে আমার বেগ পেতে হলনা। সেই পা ধরেই হেঁচকা টানে দূরে ছুঁড়ে মারলাম মেয়েটাকে। হাওয়ায় ভাসা শিমুল তুলোর মতো সে কয়েক নেনো সেকেন্ড শূন্যে ভেসে ছোট উঠানে ভাঁজ করে রাখা কিছু কাটাছাঁটা গাছের ডালের উপর গিয়ে পড়লো। ঝপঝপ করে শব্দ হল,সঙ্গে ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো মেয়েটা। ঘরের ভেতরে কেউ শোনার কথাও নয়। কারণ বাড়ির প্রত্যেকটা রুম সাউন্ড প্রুফ। সদর্পে এগিয়ে গেলাম। টেনে তুলে বসিয়ে দুইহাত পেছনে মুছড়িয়ে একমুঠোই ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম,
—- হু আর ইউ? কেন মারতে চাও আমাকে?
বলা শেষে হাত দু’টো আরেকটু মোচড় দিলাম। দু-চোখ বিস্ফারিত করে বড়বড় নিশ্বাস নিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো মেয়েটি। জবাব বেরুলো না।
বুঝলাম এভাবে কাজ হবেনা। ভিন্ন ব্যবস্থা নিতে হবে। হাত দুটো ওভাবেই ধরে রেখে অন্যহাতে সাপের ন্যায় পেট পেঁচিয়ে ধরে নিজ আয়ত্তে তুলে নিলাম তাকে। এরপর ওভাবেই ধীরে ধীরে নিচতলার হল ঘরের দিকে গেলাম। হল ঘরের দরজা আটকানো ছিল তবে তালা দেয়া ছিলনা। পা দিয়ে ঠেলে দরজাটা খুললাম।
এরপর ধপাস করে মেঝেতে ফেলে দিলাম মেয়েটাকে। ডানহাতে সুইচবোর্ডে চাপ দিয়ে লাইট জ্বালালাম। মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
—- ফের পালাবার চেষ্টা করেছিস তো মরেছিস। মাইন্ড ইট।
বশীভূত মেয়ের মতো আমার আজ্ঞাবহ মেনে নিরুত্তরে মেঝেতে পড়ে রইল সে। আমি এগিয়ে গিয়ে হল ঘরের এফোঁড়-ওফোঁড় তন্নতন্ন খুঁজে একটা মোটা,শক্তপোক্ত লাইলনের দড়ি আবিষ্কার করলাম। এরপর দড়ি দিয়ে চেয়ারের সঙ্গে পিছমোড়া বেঁধে বসালাম তাকে। একটা চেয়ার টেনে আমিও বসলাম। অনেক্ক্ষণ নীরবে কাটলো। কোন প্রশ্ন করলাম না। ভাবতে লাগলাম, পৃথিবীর সকল মানুষের সাথে আত্মিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পরও কে আমার অকল্যাণ চাইতে পারে? কে চাইবে যে আমি পৃথিবীর নিষ্ঠুর মায়া ত্যাগ করি? মা-বাবা তো থেকেও মৃত। জীবন্মৃত। তাদের অগাধ টাকা-পয়সার ভাণ্ডার হতে একটা শূন্য বাড়ি আমাকে দিয়ে তাঁরা দেশদেশান্তরে ব্যবসায়িক কাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে? আজকের রাতেই-বা কেন দু্র্বিপাকে পড়ে সব মেয়ের জাত এসে আমার কাছে জড়ে হচ্ছে? মেয়ে দিয়ে ফেক্টরি খুলব নাকি আমি?

অচপল চোখে একবার মেয়েটার আপাদমস্তক দর্শন করলাম। সুতনু দেহের মাথা থেকে পা পর্যন্ত মিসমিশে কালো রঙের আঁটসাঁট পোশাক। ধস্তাধস্তি আর দৌড়াদৌড়ির ফলে শরীরে উঁচু নিচু অঙ্গ ভেসে উঠে বিশ্রী দেখাচ্ছে। মাথার চুল ঝুঁটি করে পেছনে বাঁধা। উজ্জ্বল-শ্যাম বর্ণের মুখটা বারংবার আঘাতে শুষ্ক ও শীর্ণ। চোখের নিচে একটুখানি কেটে গেছে। উজ্জ্বল আলোর বিচ্ছুরণে সেই রক্ত চিকচিক করে চোখের মনিতে প্রতিবিম্বের মতো প্রতিফলিত হচ্ছে । বাঁ হাতের মাংসপেশিতে গুলি লেগে সেখান থেকে অনর্গল রক্ত বেরুচ্ছে। পাতিলের মতো কালো পোশাকে রক্ত জবজব করছে। কালো পোশাকে রক্তের মজ্জাগত অনুপস্থিত গাঢ়তা আমার অন্তরদেশে বিন্দুবিসর্গ পরিমাণ রেখাপাত করতে পারেনি। মায়া হচ্ছে না। বদলে ধীরে ধীরে রাগটা বেড়ে মহিরুহুর আকার ধারণ করছে। প্রচণ্ড রাগের আস্ফালনে চেয়ার থেকে ওঠে দাঁড়ালাম। ক্রোধবশত চেয়ার দিয়ে আঘাত করতে যাব সেই সময়ই মেয়েটা মুখ ফিরিয়ে কাতর কণ্ঠে চিৎকার করল,
— নাআআআ… পায়ে পড়ি আপনার! মারবেন না!
আমি দমে গেলাম। কি নিদারুণ আর্ত কণ্ঠস্বর! এমন মেয়ে মানুষ মারতে পারে? ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই কাঁপা গলায় বলল,
—- মারবেন না..মারবেন না… পেটে মারবেন না। আমি প্রেগন্যান্ট।

শুনে প্রথমে বিস্ময়-বিহ্বল, পরে সংশয় এবং সর্বশেষ পূর্ববর্তী আঘাতের কথা স্মরণ করে দু’চোখ আমার জলে পূর্ণ হয়ে গেল। উহঃ আবেগ! উঃ ইমোশন! এই জাহানে আবেগ-ভাবাবেগ ই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর,খতরনাক! যে-ই এই আবেগের কুৎসিত অনল ছোঁবে সে-ই অনন্তকাল ধিকিধিকি জ্বলবে। মনকে বুঝালাম, এ মিথ্যা, সব মিথ্যা। তবুও এই অপরিচিতা দুর্বৃত্তের কথায় আমি নিভে গেলাম। একদম নিভে গেলাম। এখন শুধু মনের অন্তরিক্ষজুড়ে কৃষ্ণ ধোঁয়ার কুণ্ডলীর ছড়াছড়ি। চেয়ারটা ফেলে দিলাম ধীরে ধীরে। বাঁকা হেসে বললাম,
—- একটা অনাগত জীবন সঙ্গে করে অন্য একটা জীবন নিতে এসেছ? মেয়ে, তোমার সাহস প্রশংসাযোগ্য। বলো কি চাও আমার কাছে? কে পাঠিয়েছে তোমাকে। বলে ঘুরে দাঁড়ালাম আমি।

মেয়েটা একটু স্থির হলো। বলল,

—– আমার স্বামী অসুস্থ। এক্সিডেন্ট হয়ে হাসপাতালে অনেকদিন ধরে। টাকা দরকার। এজন্যই আমি এই কাজ করছি।
আমি একটা হাত শূন্য ছুঁড়ে কথাটা উড়িয়ে দেবার ভঙ্গিতে বললাম,
—– সেই গল্প,উপন্যাসের কাহিনী। এসব আমি একসময় পড়েছি অনেক। পারলে নতুন কিছু বলো।… আমি বিশ্বাস করব কিভাবে যে তোমার স্বামী অসুস্থ? বাঁচার জন্য তুমিতো মিথ্যাও বলতে পার!
—- আমি মিথ্যা বলছি না। আপনি চাইলে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন!- অকপট নির্লিপ্ত জবাব মেয়েটার।

—- তোমাকে কে পাঠিয়েছে? নাম কী তোমার?

—- আমার নাম মেহেনাজ। একটা গ্যাং পাঠিয়েছে আমাকে।
মনে মনে বললাম, মেহেনাজ! বাহ! কি মিল আমাদের। আমি মিনহাজ! আর এ মেহেনাজ! একটা অক্ষরের এদিক ওদিক ছাড়া বাকীসব মিল। আগের জন্মে ভাইবোন ছিলাম বোধহয়। মুখে বললাম,
—- আচ্ছা, গ্যাং! কেন পাঠিয়েছে? আমাকে মারার জন্য?
—- আপনাকে মারার জন্য না। আপনার সঙ্গে যে মেয়েটি আছে তাকে।
—– মেয়ে? আমার সঙ্গে তো কোন মেয়ে নেই…
—– নেই? কয়েক ঘন্টা আগেই যাকে আপনি বাসায় নিয়ে এলেন সে-ই তো!
—- তাহলে আমার রুমে এলে কেন? সব ঠিকঠাক বলো নাহয় চরম খারাপ হবে।
—- আমি ঠিকঠাক-ই বলছি। আমি মনে করেছি… মনে করেছি… মেয়েটা আপনার সাথেই ঘুমিয়েছে। এজন্যই আপনার রুমে গিয়েছিলাম।

—— কি বিশ্রী ভাবনা! আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু মেয়েটাকে মারতে চাও কেন? অল্প ঝুঁকে বললাম আমি।

—– আপনি যাকে আশ্রয় দিয়েছেন সেও একটা গ্যাং এর সঙ্গে যুক্ত। আমাদের কিছু কুকর্ম সম্পর্কে সে জানে। আমাদের ভয় দেখিয়েছে মিডিয়াকে বলে দিবে বলে৷ এজন্যই…. পানি দিবেন একটু?
—– আপনাদের পিপাসাও পায়! ও… ভুলে গিয়েছিলাম। ভেতরে অমানুষের রূপ ধরলেও আপনারাও মানুষ। বলতে বলতে একটা হাফ লিটারের পানির বোতল তার মলিন ঠোঁটে ঠেকালাম। দীর্ঘদিনের উপোস-ক্লান্ত জংলী বাঘ নতুন শিকার পেয়ে যেমন করে উৎফুল্ল হয়ে ওটে; নিজের শ্রান্ত শরীরের ধার ধারেনা, ঠিক তেমন করে আমার শ্লেষাত্মক তিরস্কার গায়ে না মেখে সে ঢকঢক করে পুরো বোতল পানি উদরসাৎ করে দিল। পান শেষে হাঁ করে মুখ দিয়ে একটা নিশ্বাস ফেলল সে। সরু দুই ঠোঁটের পাশ বেয়ে বেসামাল জল নিদাঘসমেত গড়িয়ে পড়ল। ক্রমে ডানে বাঁয়ে ফিরে দুই কাঁধের জামার অংশতে উছলে পড়া পানি মুছে নিল সে। আমি বললাম,
—- এখন কী করা যায় তোমাকে?
মেয়েটা মেঝের উপর চোস্ত দৃষ্টি রেখে বলল,
—- আপনি যা করেন,আমি তাই মেনে নিব।
তার মুখের ভঙ্গিমা দেখে মনে হলো ব্যাপারটা নিতান্তই নস্যাৎ! আমি মেরে ফেললেও সে নির্বাক হয়ে চুপচাপ দেখে যাবে। সবক্ষেত্রে নির্ভীকতা দেখানো বোকামি। পস্তাতে হয়! অস্ফুটে বললাম,
—তাহলে এখানেই আটকে থাকুন কিছুদিন।

বেরিয়ে এলাম হল ঘর থেকে। বাইরে ভোরের আলো তখনো পুরোপুরি প্রস্ফুটিত হয়নি। কয়েক জায়গা থেকে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে আজানের সুমধুর কলতান ভেসে আসছে কানে। জাগরূক দেহটাকে অধিকতর চাঙা করার জন্য আজানের এই ধ্বনি যেন টনিক হিসেবে কাজ করে। ঘরে ঢুকে পড়লাম। বারান্দার পাশের রুমটা গেস্টদের জন্য বরাদ্দ। গত রাতের অচেনা হয়েও চেনা মেয়েটাকে আরেকবার দেখতে ইচ্ছে হলো। চেহারাটা মনে করতে পারছিনা। রাতে নেশার ঘোরে ছিলাম। এখন তো সজ্ঞানে আছি। দেখি তথ্যভাণ্ডার থেকে কিছু মেলে কিনা! অল্প সময়ে মনের পুঞ্জীভূত ইচ্ছেটাকে দমন করা গেলনা। কিন্তু এটাও মাথায় এলো না যে অসময়ে অনুমতি ভিন্ন কারো রুমে যাওয়া অনুচিত। এক্কেবারে অনুচিত। গেস্ট রুমের দরজা হালকা ফাঁক করে বিড়ালের মতো মাথাটা ঢুকিয়ে দিলাম ভিতরে। শরীর রয়ে গেল বাইরে। টম এন্ড জেরি কার্টুনের টম’র কথা মনে পড়ে গেল। সে এভাবেই চোরের মতো দৃকপাত করত অন্যের ঘরে। ঘরের লাইট জ্বালানো ছিল। মেয়েটা দরজার দিকে মুখ করে শুয়ে আছে। পুলকে চমকে উঠলাম আমি। পরক্ষণেই বুকের ভিতরে নিষ্প্রাণ হৃদপিণ্ডটা হঠাৎই ধকধক করে উদ্দাম রক্তচলাচলের সূচনা করল। আমার গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে হলো, হ্যাঁ চিনতে পেরেছি, চিনতে পেরেছি।
শুয়ে থাকা এই মানুষটার সঙ্গে একটা সময় আমার দহরম-মহরম ছিল। হৃদয়ের হৃদ্যতা ছিল। সে যে আমার হৃদয়ের মধুকালের একমাত্র উত্তরাধিকারী ছিল! হঠাৎ প্রলয়ঙ্কারী এক ঘূর্ণিতে চিরতরে হারিয়ে ফেলেছিলাম তাকে। অবলুপ্ত বিস্মৃত স্মৃতিগুলো হারানো রত্ন ফিরে পাবার উল্লাসে সাত-সকালে প্রস্ফুটিত পদ্মফুলের মতো চোখের পর্দায় ভেসে উঠলো।
………………………………………

সেদিন ছিল ইংরেজি ম্যামের ক্লাস। ক্লাস টেনে পড়া দুরন্ত স্বভাবের কিশোর ছিলাম আমি। এই ম্যাডামের ক্লাস আমার বরাবরই বিরক্তিকর লাগত। হাতির মতো স্থুল শরীরে ধীরে ধীরে হাঁটত আর ভীষণ রাশভারি টাইপের প্রাণী তিনি।। যাকে বলে ‘গজেন্দ্র-গামিনী’। তবুও প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। পিছুটানে। স্বর্ণা ছিল মেয়েটার নাম। সেদিন ক্লাসে বসে আনমনা হয়ে দুচোখ মেলে তাকিয়ে ছিলাম তার দিকে। ঠিক তখনি রাশভারী ম্যামটা ঝাঁজালো কণ্ঠে বলে উঠলো,
—- এই ছেলে! মিনহাজ না তোমার নাম? মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আছ কেন?
সেসময়ের ধূর্ত আমি মনের গুহ্য কথা স্বর্ণাকে জানানোর উপায়টা পেয়ে দ্রুত লুফে নিলাম। ফিচেল হেসে বললাম,
—- মেম!আমিতো মেয়েদের দিকে না। স্বর্ণার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। আপনি শুধু শুধু ‘মেয়েদের’ বলে আমার দোষ ভারী করছেন।

চলবে….