শৈবলিনী পর্ব-১৪+১৫

0
438

#শৈবলিনী—১৪
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★গিয়াসের অজ্ঞান হওয়ার হ্যাট্রিক শেষ ইতিমধ্যে । আপাতত স্যালাইন গোলানো পানি খাচ্ছে সে। বিস্মিত, অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে দেখছে নূরকে। ওর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, নূর সত্যি সত্যিই শাড়ি পরে ওর সামনে বসে আছে। এই অষ্টম আশ্চর্যও দেখা নসিব হবে তা জানা ছিলোনা বেচারার। শিখা পাশ থেকে শুধু হেঁসে যাচ্ছে গিয়াসের অবস্থা দেখে। আর নূর হচ্ছে বিরক্ত। মানে একেতো এই শাড়িতে নিজেকে কেমন অসহ্য লাগছে, তারওপর সবাই কেমন অদ্ভুত নজরে তাকাচ্ছে ওরদিকে। যেন ও কোনো সার্কাসের জোকার। ইচ্ছেতো করছে ঘুষি মেরে সবগুলোর চোখের মনি বের করে ফেলতে। সবাইকে রাগ দেখাতে না পারলেও আপাতত বলির পাঠা বানালো গিয়াসকে। দাঁত কিড়মিড় করে গিয়াসের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
–ওই গ্যাসের বাচ্চা গ্যাস, এমন আবালের দাদা মদনলালের মতো বিহেব করছিস কেন? জন্মের পর কী আইজকা প্রথম মেয়ে মানুষ দেখলী?

গিয়াস বোতল থেকে এক ঢোক স্যালাইন খেয়ে নিয়ে বলল,
–মেয়ে মানুষ তো দেখেছি। তবে পুরুষ থেকে রাতারাতি মেয়ে মানুষে কনভার্ট হতে এই প্রথম দেখলাম। ইয়ার এতবড় শক দেওয়ার আগে একটু আগাম সতর্কসংকেত তো দিবি। আমার ছোট্ট কোমল পরাণডা এহোনি ফাইটা গেলে, আমার মারে দাদি বানানোর খুশি কে দিতো? বংশের বাতি জ্বালাতো কে ?

–ফালতু কথা বন্ধ না করলে তোর বংশের বাতি এখুনি চিরতরে নিভাই দিমুনে আমি।

–না না তার কী দরকার। এই দেখ আমি চুপ করলাম। এরপর আমার উপর গ্রে,নে,ট হামলা হলেও আমি চু পর্যন্ত করবোনা।

বিকাল চারটার পর ফাংশনের মেইন আকর্ষণ কালচারাল প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেল। স্টেজের সামনে এসে লোকজনের বৃহত্তম ভীড় জমছে। নূরের এসব ভিড়ভাড় একদমই পছন্দ না। তাই সে একপাশে বটগাছের নিচে বসে রইলো। নূর না যাওয়ায় শিখা আর গিয়াসও ওখানেই বসে আছে। এখান থেকে অবশ্য স্টেজের সবকিছু দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর প্রধান অতিথি সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যকে ডাকা হলো অনুষ্ঠানে। আদিত্যর নাম শুনে নূর ভ্রু কুঁচকে তাকালো স্টেজের দিকে।সাদার ওপর কালো রঙের গ্রামীণ চেকের কোর্ট প্যান্ট পরিহিত এক সুদর্শন যুবক হেঁটে এলো মঞ্চে। হাসিমুখে হাত নেড়ে তার উচ্ছ্বসিত ফ্যানদের অভিবাদন জানাচ্ছে। এরপর মাইক হাতে নিয়ে দুই লাইনের স্পিচও দিলো একটু। তার মুখের হাসিটা একটুও নড়চড় হলোনা। লোকটা হাসলে খারাপ লাগে না। দেখতেও খুব একটা খারাপ না। আই মিন ওই চাইলে মোটামুটির থেকে একটু বেশিই সুন্দর বলা যায়। এই এক মিনিট! কী ভাবছিস তুই নূর! মাথা হালকা ঝাকিয়ে নূর নিজেকে ফিরিয়ে আনলো ঘোর থেকে।মাথা সত্যিই গেছে আমার,কীসব আবোল তাবোল ভাবছিলাম! কিন্তু এই লোকটা কোথাথেকে আসলো? উনি যে আজকের প্রধান অতিথি তাতো কেউ বললো না আমাকে। শিখার বাচ্চা ইচ্ছে করেই নিশ্চয় আমাকে জানাইনি।

স্পিচ শেষে মঞ্চের সামনে রাখা প্রধান অতিথির চেয়ারে গিয়ে বসলো আদিত্য। জিদান আর আবিরও এসে তার পাশে বসলো। আদিত্যর নজর খুঁজছে নূরকে। মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে না। ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এদিক ওদিক খুঁজে যাচ্ছে নজর। হঠাৎ নজর গেল দূরের ওই বটগাছটার নিচে। ওইতো ঘাসের উপর কী সুন্দর বসে আছে সে। বাদাম খাচ্ছে আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। আর এখানে আমি ছটফট করে মরছি সেই খেয়াল তার একটুও নেই। এতো কেন নিষ্ঠুর মেয়েটা? এখান থেকে ফট করে ওঠাও যাচ্ছে না। আবার এখানে বসেও থাকতে ইচ্ছে করছেনা আদিত্যর। ইচ্ছে হচ্ছে নূরকে নিয়ে দূরে নির্জন কোথাও গিয়ে মেয়েটাকে সামনে বসিয়ে মন ভরে দেখতে। কোনো নদীর কিনারে পাশাপাশি বসে থাকতে। নূর ওর মাথাটা এলিয়ে দিবে আদিত্যর কাঁধে। সুখময় আবেশে ভাসবে আদিত্য। জানা নেই সেই মুহুর্ত টা কবে আসবে। এই দূরত্ব আর ভালো লাগে না আদিত্যর। কবে একটু মেয়েটার রহম হবে এই অধমের ওপর?

স্টেজে পারফরম্যান্স চলছে। খুব একটা মনোরঞ্জন হচ্ছে না আবিরের। কেমন সব বোরিং টাইপের পারফরম্যান্সে হচ্ছে। ইন্টারেস্টিং কিছু খোঁজার আশায় এদিক ওদিক চোখ বোলালো সে। দেখি কোথাও কোনো বিউটি দেখা যায় নাকি। আজকেতো রমনীদের মেলা জমেছে। এই মেলা থেকে আবির খালি হাতে গেলে জাতি মেনে নিবেনা। আর জাতির কাছে গ্রহনযোগ্য হতে আমাকে আমার গুরুদায়িত্ব পালন করতেই হবে। চারিদিকে নজর বুলিয়ে একটা সিলেক্ট করলো আবির। এটার ওপর আগে ট্রাই করা যাক। আবির আস্তে করে উঠে গিয়ে আল্ট্রা মডার্ন একটা মেয়ের পাশে গিয়ে বসলো। চার্মিং লুক দিয়ে বলল,
–হেলোওও মিস বিউটি, মাই নেম ইজ আবির। নামতো শুনাহি হোগা। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনার বাবা কী ব,ম ফ্যাক্টরিতে কাজ করে?

–নাতো,কেন?

–তা না হলে আপনার মতো এমন এ্যাটম ব,ম কীভাবে প্রডিউস করলো?সত্যি বলছি দিনের আলোতেও সবার মাঝে আপনি চাঁদের মতো ঝকমক করছিলেন। আমারতো চোখ ঝলছে যাচ্ছিলো একটুর জন্য। এখন এই অবলা হৃদয়ের কী হবে? যে আপনার রুপে ঘায়েল হয়ে আইসিউর রুগী হয়ে গেছে।

আবিরের ফ্ল্যাটিং বিদ্যার প্রভাব পড়ছে মেয়েটার উপর। তার আহ্লাদী হাসি দেখে বোঝা যাচ্ছে তা। আজকের জন্য কাজ হয়ে গেছে ভেবে খুশি হলো আবির। ঠিক তখনই পেছন থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ বলে উঠলো।
–একই চিপ ডায়লগ আর কতজনের ওপর মারবেন? কিছুতো নতুন ট্রাই করুন। একই সীন বারবার দেখালে পাবলিক বোর হয়ে চলে যাবে।

পেছন দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারলো কন্ঠটা কার। আর বুঝতে পেরেই বাঁকা হাসলো আবির। মাথা তুলে আহানাকে একবার দেখে নিলো। তারপর পাশে থাকা মেয়েটির সামনে বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে তর্জনী আঙুলের মাথায় চেপে ধরে চোখ কুঁচকে বলল,
–এক মিনিট বিউটিফুল, আমি এখুনি আসছি হ্যাঁ!
আবির দাঁড়িয়ে আহানার সামনে এগিয়ে এসে বলল,
–ডায়লগ নতুন পুরানে কিছু যায় আসে না।দেখতে হবে ডায়লগ ডেলিভারির আন্দাজ টা কেমন। একটা ট্যালেন্টেট ব্যাক্তিই পারে পুরান জিনিসকে ঘষেমেজে নতুন আঙ্গিকে পরিবেশন করতে। কথায় আছে না, ওয়া,ইন যতো পুরাণ হবে তার স্বাদ ততো বেশি হবে।এনিওয়ে তুই এসব বুঝবিনা। বাচ্চাদের এসব ব্যাপারে নাক গলাতে নেই। তা এখানে কী করছিস? ভাইয়ের ইনভাইটে ফ্রী খাবার খেতে এসেছিস?

আহানা চোখ মুখ গরম করে করে বলল,
–সবাইকে কী নিজের মতো আখাইয়া ভেবেছেন! এই ফাংশনে আমাদের কলেজও ইনভাইটেশন পেয়েছে। তাই আমও আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে এসেছি।

আবির আহানার মুখের দিকে ঝুঁকে দুষ্টু স্বরে বলল,
–ফ্রেন্ডস না, বয়ফ্রেন্ডস! তা বয়ফ্রেন্ডের জন্যই বুঝি এমন জোকার সেজেছিস! সত্যি করে বল, কোনো যাত্রাদল জয়েন করিসনিতো? আই সোয়্যার তোরে দেখতে এক্কেরে যাত্রাপালার জরিনা বানু লাগছে।
বলেই পেটে হাত দিয়ে হো হো করে হাসতে লাগলো আবির। আহানা রাগে কড়মড় করে বলল,
–আমাকে যাত্রাপালার জরিনার মতো লাগলে, আপনার ওই মেকাপ নির্ভরশীল গার্লফ্রেন্ডদের কী বলবেন? যারা সকাল সন্ধ্যা ভাতের বদলে মেকাপ খায়।

আবিরের চেহারার মনোভাব হঠাৎ পাল্টে গেল। চোখ মুখ কঠিন করে রাগান্বিত কন্ঠে বলল,
–জাস্ট শাট আপ। খবরদার! নিজেকে কখনো ওদের সাথে তুলনা করেছিস তো।

কিছুটা চমকে উঠলো আহানা। আবির কথাটা কোন ক্ষেত্রে বললো? সেকি আমাকে ওই মেয়েদের উর্ধ্বে রাখলো,নাকি ওই মেয়েগুলোকে আমার উর্ধ্বে রাখলো? আহানার চাহুনি বুঝতে পেরে আবির সঙ্গে সঙ্গে মুখের মনোভাব আবারও আগের মতো করে বলল,
–আরে কোথায় তুই জরিনা বানু, আর কোথায় ওই হট হট ক্যাটরিনা, দীপিকাদের মতো মেয়েগুলো। তাদের সাথে তোর তুলনা করাও তাদের জন্য বিরাট অপমান। আর আমি থাকতে আমার গার্লফ্রেন্ডদের কখনো এতো নিম্নশ্রেণীর অপমান হতে দিবোনা।

রাগে দুঃখে নিজের চুলই টেনে ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে আহানার। যা,আরও যা এই বদ লোকটার সামনে।যা খুশি করছিলো, আমার যাওয়ার কী দরকার ছিল! এখন হলোতো! দিলোতো ইচ্ছেমতো অপমান করে। একটা লোক এতটা খারাপ কীভাবে হতে পারে? বাজে লোক একটা ছিহহ্…
শেষের ছিহ টা একটু জোরেই বললো আহানা। আবির সেটা শুনতে পেয়েই হাত মুষ্টি করে বুকের বাম পাশে ঠেকিয়ে বলে উঠলো,
–উফফ…কী শান্তি পাইলাম। আরেকবার একটু এভাবে বলনা ছিহহ্। সত্যি বলছি কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। তুই কী তোর ছিহ-এর ভেতর বরফ আর পুদিনা পাতা মেশাস? এতো পরাণ জুরানো ছিহহ্ কীভাবে তৈরি করিস? আমার হট হট গার্লফ্রেন্ডদের ঠোঁটের দামি দামি ব্রান্ডের লিপস্টিক খেয়েও এতো আত্মতৃপ্তি হয়না, যতোটা তোর এই ঘৃণামিশ্রিত ছিহহ্ শুনে হয়।

আবিরের উক্তি শুনে আহানার চোখের ঘৃণার মাত্রা তীব্র হলো। তীব্র ঘৃণার সহিত আবারও সে বলতে বাধ্য হলো।
–ছিহহ্…আপনার সাথে কথা বলার চেয়ে রাস্তার একটা কু,কু,রে,র সাথে কথা বলাও সম্মানজনক।

–উফ,উফ…ব্যাস কর এখন আন্নি। একদিনে এতো খুশি নিতে পারছিনা। বুস্টার ডোজ হয়ে গেছে। আবার কখনো পরান জুরাইতে আসবো তোর কাছে। এখন যাই আমার আজকের গার্লফ্রেন্ড ওয়েট করছে। আর হ্যাঁ, আদিকে বলে দিস আমি বাসায় চলে গেছি। এখানকার চেয়ে চারগুণ বেশি এন্টারটেইনমেন্ট নিতে যাচ্ছি আমি। এক্সুয়ালি, না বলতে হবে না। আমি নিজেই আদিকে ম্যাসেজ করে দিবো।
বলেই আবির আবারও সেই মেয়েটার কাছে গেল।মেয়েটাকে কিছু বলে মেয়েটার হাত ধরে আহানার সামনে দিয়ে নিজের গাড়ির দিকে এগুলো। রাগ আর কষ্ট দুটোরই সংমিশ্রণে আহানা বিড়বিড় করে বলল,
–আই হেট ইউ আবির ভাই। আই জাস্ট হেট ইউ। এন্ড আই হেট ইউ মাই হোল লাইফ।

আবির সানগ্লাস চোখে দিতে দিতে মনে মনে আওড়ালো, দ্যাটস হোয়াট আই ওয়ান্ট আন্নি।
__

বিকালের আলোকে ঢেকে দিতে সন্ধ্যার আঁধার নেমে এসেছে চারিদিকে। আদিত্যর আর মোটেও ভালো লাগছে না এখানে বসে থাকতে। ইচ্ছে হচ্ছে ছুটে যেতে নূরের কাছে। অন্ধকার হওয়ায় এদিকটায় লোকজন তেমন দেখছেনা। আদিত্য সুযোগ বুঝে আস্তে করে সিট ছেড়ে উঠে গেল। এগিয়ে গেল নূরের দিকে। নূরের ধ্যান ছিলো স্টেজের পারফরম্যান্সের দিকে। আদিত্য আসছে তা দেখতে পাইনি সে। গিয়াসের গলা শুঁকিয়েছে বলে সে উঠে গেল কোল্ড ড্রিংকস কিনে আনতে। শিখা নূরের পাশেই বসে ছিলো। আদিত্য ধীর পায়ে এসে শিখার পাশে দাঁড়াল। শিখা আদিত্যকে দেখতে পেয়ে তারজন্য সুবিধা করে দিতে নিজে নিঃশব্দে নূরের পাশ থেকে উঠে গেল। যাওয়ার সময় বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে অল দ্য বেস্ট ইশারা করে গেল। আদিত্য মুচকি হেঁসে নূরের পাশে শিখার জায়গায় গিয়ে বসলো। নূর এসবের কিছুই জানলো না। সে জানে তারপাশে এখনো শিখাই বসে আছে। আর সেই ভরসা অনুযায়ীই নূর স্টেজের পারফরম্যান্স দেখতে দেখতে শিখা মনে করে আদিত্যর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। হাজার ভোল্টের তীব্র শক লাগলো আদিত্যর। শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা শীতল বাতাস বয়ে গেল যেন। তার একটু আগের দিবাস্বপ্নটা যে,এভাবে সত্যি হবে তা ভাবতেই পারেনি সে। হৃদপিন্ডটাও শীতল হয়ে জমেগেল মুহুর্তেই। নূরের মাথা তার কাঁধে, নূরের চুলের মনমাতানো ঘ্রাণ এসে লাগছে আদিত্যর নাকে,কাঁধে অনুভব করছে নূরের নিঃশ্বাসের আনাগোনা। ইশশ, কতনা সুখময় মুহুর্ত। সময় যেন আজ এখানেই থেমে যায়। আদিত্যর চাওয়া অবাধ্য হচ্ছে। মন চাচ্ছে এক হাতে নূরকে জড়িয়ে নিতে খুব নিবিড় ভাবে।

আদিত্যর ঘোর কাটলো নূরের কথায়। নূর স্টেজের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,
–ইয়ার আমার শাড়িটা না কোমড় থেকে বারবার খুলে যাচ্ছে। চলনা বাড়ি যাই। নাহলে যেকোনো সময় পুরো শাড়িই খুলে যেতে পারে

নূরের কথা শুনে আদিত্যর কাশি উঠে গেল হঠাৎ। কাশির শব্দ শুনে চমকে গিয়ে মাথা তুলে আদিত্যের দিকে তাকালো নূর। আদিত্যকে দেখে ভড়কে গিয়ে সে বলল,
–আপনি!! আপনি এখানে কী করছেন?

–কী আবার করবো? আমিতো ভদ্র ছেলের মতো বসেই ছিলাম।

–আহারে, আইছে আমার ভদ্রের টাংকি। আপনার মতো ভদ্র ঘরে ঘরে হওয়া শুরু করলে দুনিয়াটা আর চলবো না,থাইম্মা থাকবো।

–থ্যাংক ইউ ফর ইউর কমপ্লিমেন্ট।

–শিখাকেও পটিয়ে নিজের দলে নিয়ে নিয়েছেন তাইনা? ওই শিখার তো খবর আছে আজকে।

–আচ্ছা আচ্ছা কইরো খবর। এখন একটু শান্ত হও। সবসময় এতো গরম তাওয়ার তেতে ওঠার দরকার নেই। একটুতো শান্ত মেয়ের মতো চুপটি করেও থাকলে কী খুব ক্ষতি হয়ে যাবে? শুধু পাঁচ মিনিটের জন্য একটু বসোনা আমার পাশে। কথা দিচ্ছি পাঁচ মিনিট পরেই চলে যাবো আমি।

আদিত্যের এই ক্ষুদ্র চাওয়াটা কেন যেন নূর ফেলতে পারলোনা। মায়াবী কন্ঠের ওই নিবেদন নূরকে যেন মানা করতেই দিলোনা। বসে রইলো চুপচাপ নূর। আদিত্য মন ভরে দেখতে লাগলো তার হৃদয়েশ্বরীকে। নূর আদিত্যর দিকে না তাকিয়েও বুঝতে পারলো আদিত্যের নজর ওর মাঝেই আবদ্ধ। নূরের কেমন অস্বস্তি লাগছিলো এভাবে। তাই পরিবেশ একটু স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠলো।
— মেয়েদের পারফরম্যান্স টা অনেক ভালো ছিলো তাইনা?

আদিত্য বুঝতে পারলো নূর ওর মাইন্ড ডাইভার্ট করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এই মাইন্ড তো আজকে অব্যাহতিতে চলে গেছে সেটা কে বলবে নূরকে। এই মহীয়সী রমনীকে দেখে যে তার সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। মনে জাগছে অবাধ্য চাওয়া। আদিত্য কিছু একটা ভেবে বলল,
–উহুম, আমার কাছেতো ছেলেদের পারফরম্যান্স টাই বেশি লাগলো। আসলে ছেলেদের ব্যাপারটাই আলাদা। মেয়েরা ছেলেদের সাথে পারবেইনা কখনো।

কথাটা ইগোতে লাগলো নূরের। সে আদিত্যের উক্তির বিরোধিতা করে বলল,
–মোটেও না। এই সস্তা ধারণা থেকে বেড়িয়ে আসুন। দুনিয়াতে এমন কোনো কাজ নেই যা ছেলেরা করতে পারে আর মেয়েরা করতে পারেনা। বরং মেয়েরাই ছেলেদের থেকে অনেক গুণ বেশি পারদর্শী। যেকোনো চ্যালেঞ্জ নিতে পারে এবং তাতে সফলও হয়।

–আই ডোন্ট বিলিভ অল দিস। এই এসব শুধু কথার কথা। কাজের বেলায় সব টাই টাই ফিস। কথার কথা, আমি এখনই যেটা করতে পারবো সেটা তুমি করতে পারবেনা। আই চ্যালেঞ্জ।

–অবশ্যই পারবো। নূর পারে না এমন কোনো কাজ নেই। বলুন কী কাজ?

–পারবেনা তুমি, হেরে যাবে। তাই থাক।

–পারবোই আমি।

–সো ইটস চ্যালেঞ্জ?

–ইটস আ চ্যালেঞ্জ।

–আরেকবার ভেবে নাও। পরে কিন্তু মানা করতে পারবেনা। তাহলে প্রমান হবে তুমি ভীতু।

–সেটার প্রয়োজন পড়বেনা।নূর কখনো চ্যালেঞ্জ নিয়ে পিছুপা হয়না। আমি প্রমাণ করে দিবো ছেলেরা যা পারে তা মেয়েরাও পারে।

আদিত্য একটু নড়েচড়ে বসে বলল,
–ঠিক আছে দেখা যাক। আমি এই মুহূর্তে তোমাকে চুমু খেতে পারবো। কিন্তু তুমি পারবেনা। বলো পারবে?

আদিত্যর কথায় থতমত খেয়ে গেল নূর। ওর আগেই ভাবা উচিত এই লোকটার মাথায় নিশ্চয় কোনো কুবুদ্ধি চলছিলো। এইজন্যই তো ঝোঁকের বশে কোনো কিছু বলতে নেই। লুইচ্চা ব্যাটা কথার জালে ফাঁসিয়ে আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু নূরকে বোকা বানানো এতো সহজ না।নূর কপাল কুঁচকে বলল,
–কী আবোল তাবোল বলছেন এসব? আপনাকে আগেই বলেছি আমার সাথে এসব লুচুগিরি দেখাতে আসবেন না একদম।

–ওমা,এখানে লুচুগিরির কী হলো? এটাতো ক্যাপাবিলিটির কথা হচ্ছে। আমি তোমাকে এখন চুমু দিতে পারবো। কিন্তু তোমার সেই ক্যাপাবিলিটি নেই। তুমি পারবেনা করতে। আমি আগেই বলেছিলাম ছেলেরা যা পারে মেয়েরা তা কখনো পারে না। মেয়েরা কমজোর হয়।

–আপনার এসব কৌশল আমার সাথে চলবেনা। আপনাকে কোনো কিছু প্রমাণ করার আমার কোনো দরকার নেই। আর না মেয়েদের পাওয়ার দেখানোর জন্য আপনাকে চুমু টুমু খেতে যাবো।

–আসল কথা বলো পারবেনা। আঙ্গুর ফল খেতে না পারলে টকই লাগে। এখন চ্যালেঞ্জে হেরে গেছ তাই এসব বাহানা দিয়ে পার পেতে চাও। আসলে মেয়েরা এমনই কোনো কিছু যখন পারবেনা তখন, অযথা তর্ক করে নিজেকে সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করবে। এটাই পারে খালি করতে। চ্যালেঞ্জে হেরে গেছ কিন্তু তা মানবেনা। মেনে নাও, মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় দূর্বল। ছেলেরা যা পারে মেয়েরা কখনোই তা পারবেনা। গার্লস আর লুজার……

আর বলতে পারলোনা আদিত্য। গালে নূরের কোমল ওষ্ঠদ্বয়ের স্পর্শ পেতেই থমকে গেল সে। স্থির হয়ে জমে গেল হৃদপিণ্ড। সেতো শুধুই মজা নিচ্ছিল নূরর। তবে নূর এমন বিস্ফোরণ ঘটাবে কে জানতো। শরীরের প্রতিটা লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেল আদিত্যের। ওর প্রিয়তমার প্রথম ছোঁয়া। ভাবতেই অন্তর জমিনে সুখের মহাপ্রলয় এলো যেন। ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নূরের পানে। তখন আদিত্যর বারবার মেয়েদের নিয়ে খোঁচা মারা কথাগুলোই নূরের অনেক বেশিই রাগ হচ্ছিলো। শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পেরে ফট করে আদিত্যর গালে চুমু দিয়েই বলে উঠলো।
–নিন, আই কমপ্লিট মাই চ্যালেঞ্জ।
জোসের মাথার তখন ফট করে চুমু দিয়ে দিলেও এখন আদিত্য ওর দিকে যখন তাকালো তখন হুঁশ এলো নূরের। চরম অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গেল সে।জড়তা ঘিরে ধরলো চারিদিক থেকে। আদিত্যর দিকে তাকাতে পারছেনা। আর এক মুহুর্তও এখানে থাকা যাবে না। এক ঝটকায় উঠে দাঁড়িয়ে সোজা হাঁটা ধরলো নূর। পেছন থেকে ডাকলো আদিত্য।
–নূর।

থেমে গেল নূর। তবে পেছনে ঘুরলো না। আদিত্য বলল,
–রাত হয়ে গেছে নূর। একা যাওয়া ঠিক হবে না। চলো আমি পৌঁছে দিচ্ছি তোমাকে।

এই লোকের সাথে এক গাড়িতে! নো ওয়ে। নূর পেছনে না তাকিয়েই বলল,
–প্রয়োজন নেই। একা চলার অভ্যাস আছে আমার। কোনো বদভ্যাস করতে চাইনা।

বলেই দ্রুত পায়ে চলে গেল নূর। ফোঁৎ করে নিঃশ্বাস ছাড়ল আদিত্য। মেয়েটা এতো জিদ্দি কেন? নূরের দেওয়া চুমুর কথা মনে হতেই হাতটা আপনাআপনি পৌঁছে গেল গালে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে সুখময় এক হাসি হাসলো সে। দূর থেকে এতক্ষণ দেখছিলো আহানা। এখানে আসার পর থেকেই সে খেয়াল করছে তার ভাই বারবার ঘুরে ফিরে ওই মেয়েটার দিকেই তাকাচ্ছিলো। এমনিতেও কয়দিন ধরে খেয়াল করছিলো ওর ভাইয়ের মাঝে কেমন অন্যরকম একটা ভাব দেখা যায়। সন্দেহ তো আগে থেকেই ছিলো তবে আজ কনফার্ম হয়ে গেল। তো শ্রদ্ধেয় ভ্রাতাশ্রী প্রেমে পড়েছে। ওয়াও, এটাতো ব্রেকিং নিউজ পেয়ে গেলাম। বড়সড় একটা দান মারা যাবে ভাইয়ার কাছ থেকে। যাক ভলোই হয়েছে। ওই সামাইরা পে,ত্নী থেকে তো রেহাই পেল। আর এই মেয়েটাও ভালোই মনে হচ্ছে। ভাইয়াকে কতো খুশি দেখাচ্ছে। ভাইয়ার খুশি যেন এভাবেই কায়েম থাকে।

নূর তাড়াহুড়ো করে গেটের কাছে আসতেই হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা খেল। সামনে তাকিয়ে দেখলো অবনী। অবনী বলে উঠলো।
–আরে নূর, তুমি ঠিক আছ? এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছো?

–আমি ঠিক আছি। আসলে রাত হয়ে আসছে তো তাই বাসায় ফিরে যাচ্ছিলাম।

–ও আচ্ছা। চলো আমি তোমাকে আমার গাড়িতে ড্রপ করে দিচ্ছি।

–না না তার দরকার নেই আমি চলে যাবো।

–ইউ শিওর?

–হ্যাঁ হ্যাঁ।

–বাইদা ওয়ে তোমাকে শাড়িতে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে।

নূর সৌজন্যমূলক হাসলো। অবনী এবার একটু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,
–আচ্ছা শুনো, তোমাকে একটা জরুরি কথা বলার দরকার ছিলো। বাবাকে বলে সেদিনের সেই বদমাইশ গুলোকে অ্যারেস্ট করিয়েছি। তবে ওদের বস,কোনো মাফিয়া গ্যাঙের লিডার। সে আমাদের ফোন করে থ্রেট দিচ্ছে। যদিও আমরা দমে যায়নি। কিন্তু তারা তোমার কথাও জানে। তাই তুমি একটু সাবধানে চলাচল করো। ওরা যেকোনো সময় তোমারও ক্ষতি করতে পারে। তাই একটু সাবধান থেক।

–আরে তুমি চিন্তা করোনা। এসবের অভ্যাস আছে আমার। আমার কিছু করতে পারবেনা। তুমি নিশ্চিন্তে থাকো। ঠিক আছে আমি আসি এখন।

–ঠিক আছে।

নূর গেট পেরিয়ে বাইরে এসে হেঁটে যেতে লাগলো বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত। দূর থেকে যে তাকে কয়েকজন ফলো করছে তা জানলো না নূর। একজন দলের লিডারকে দেখিয়ে বলল,
–ভাই,ওইযে ওই মেয়েটা আসছে। ওই মেরেছিলো আমাদের পোলাপান গুলোকে।

–ঠিক আছে চল। আজ এর বাহাদুরির পুরস্কার টা দিতে হবে।

লোকগুলো নূরকে ফলো করতে লাগলো। একটু ফাঁকা জায়গা দেখতে পেয়েই দ্রুত এগিয়ে গেল নূরের দিকে। হাঁটতে হাঁটতেই নূরের মনে হলো কেউ ওকে ফলো করছে। নূর আস্তে করে ব্যাগের ভেতর থেকে স্ক্রু-ড্রাইভার টা হাতে নিলো। সেট উঁচু করে দ্রুত গতিতে পেছনে ফিরে তাকাতেই…

চলবে…..

#শৈবলিনী—১৫
#লেখিকা-মেহরুমা নূর

★হাতে স্ক্রু-ড্রাইভার ধরে আগন্তুকের উপর তাক করার উদ্দেশ্যে পেছনে ঘুরে তাকাতেই, আদিত্য চোখ বড়সড় করে তড়িঘড়ি করে নিজের মুখের মাস্ক খুলে বলে উঠলো।
–আরে আরে কী করছ? বিনা অপরাধেই মারবে নাকি?তাছাড়া মরাকে আর মারবেই বা কী! আমিতো অনেক আগেই তোমাতে মরে গেছি। মৃ,ত ব্যক্তিকে মেরে কী মজা পাবে?

নূর ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। হাত নামিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
–আপনি! আপনি এখানে কী করছেন? পিছু নিয়েছেন কেন আমার?

–পিছু? এখন কী একজন স্বাধীন সচেতন নাগরিক তার স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকারি রাস্তায় চলতেও পারবেনা? তাকে পিছু করার অপবাদ বহন করতে হবে? মানবতা আজ কোথায়?
অত্যন্ত আপসোসের সহিত বললো আদিত্য। নূর হালকা বিরক্তির স্বরে বলল,
–আপনি আবার শুরু করেছেন?

–শুরু করতে দিলে কই এখনো। এনিওয়ে, তুমি আমার সাথে যেতে রাজি হলেনা সেটা তোমার চয়েজ। তবে আমাকে আমার মতো যেতে তো তুমি মানা করতে পারবেনা। আর আজ আমার হিমু হতে মন চেয়েছে। রাতের রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন পথিক হতে ইচ্ছে হচ্ছে।

–ফাইন, ডু হোয়াটএভার ইউ ওয়ান্ট।

নূর কাঁধের হ্যান্ডব্যাগটা ঠিক করে নিয়ে আবারও চলতে শুরু করলো। আদিত্য নিজের মুখে আবারও মাস্ক পড়ে আর মাথায় ক্যাপ পড়ে সেও নূরের কদমের সাথে তাল মিলিয়ে এগুলো। নূর একটু দ্রুতই পা ফেলছে আদিত্যকে পিছে ফেলতে। তবে আদিত্যর লম্বা লম্বা কদমের সাথে পেরে উঠছেনা। না পেরে অগত্যা স্বাভাবিক ভাবেই আবার হাঁটতে লাগলো। রাস্তার সোডিয়াম আলোয় নূরকে দেখতে আরও ভালো লাগছে আদিত্যর। বাতাসে সামনের চুলগুলো উড়ছে তার। আর সে বারবার বিরক্ত হয়ে সেই চুল কানের পেছনে গুঁজে দিচ্ছে। শাড়ি পড়ার অভিজ্ঞতা যে নেই তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এটা বয়ে বেড়ানোই তার কাছে ভীষণ কষ্টদায়ক হয়ে গেছে। আদিত্য মুচকি হেঁসে নূরের পাশে হাঁটতে হাঁটতে গুনগুন করে গাইতে লাগলো,
♬এই পথ যদি না শেষ হয়
♬ তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?
♬ যদি পৃথিবীটা স্বপ্নের দেশ হয়
♬ তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?

নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আদিত্যের পানে। আদিত্য জোরপূর্বক হেসে বলল,
–ইটস ওকে,তুমি না বললেও চলবে। কোনো জোরাজুরি নেই।

হাঁটতে হাঁটতে একসময় বাসস্ট্যান্ডে চলে এলো নূর। নূরের সাথে আদিত্যও দাঁড়িয়ে গেল। বিআরটিসির বাস আসলে নূর তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লো তাতে। আদিত্যও দৌড়ে উঠে পড়লো নূরের পিছে। বাসে প্রচুর ভীড়। বসার সীট নেই কোথাও। ভীড় ঠেলে কোনরকমে মাঝখানে গিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রইলো নূর। আদিত্যর লোকাল বাসের অভিজ্ঞতা নেই। তার অবস্থা বেহাল। সে ঠেলেঠুলে কোনরকমে নূরের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।এতো লোকের গাদাগাদিতে অসহ্য গরম লাগছে, তারওপর আবার লোকজনের ঘামের বিশ্রী দুর্গন্ধ। পেট উল্টে আসছে আদিত্যর। বিরবির করে বলল,
–দেশের জনসংখ্যা যে প্রবল হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তার প্রমাণ পেয়ে গেলাম। বাপরে!

নূরের মনে মনে ভীষণ হাসি পাচ্ছে আদিত্যের অবস্থা দেখে। এসেছিলো হিমু সাজতে। এইটুকুতেই হাল বেহাল হয়ে গেছে। আদিত্য খেয়াল করলো নূরের অপর পাশে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। কেমন তাকিয়ে আছে নূরের দিকে। ইচ্ছে করে ঘেঁষে দাড়াচ্ছে নূরের সাথে। পায়ের রক্ত তড়াক করে মাথায় উঠে গেল আদিত্যের। শক্ত হলো দাঁতের মাড়ি। তবে আপাতত নিজেকে একটু নিয়ন্ত্রণ করে নিলো সে। এখানে আউট অফ কন্ট্রোল হওয়া যাবে না। আদিত্য আরেকটু এগিয়ে গিয়ে এক হাত নূরের পেছনে দিকে দিয়ে আর সামনে আরেক হাত রেখে দাঁড়িয়ে রইলো, যাতে নূরকে কেউ টাচ করতে না পারে। নূর বিষয় টা খেয়াল করলো। তবে কিছু বললোনা। নিজের অজান্তেই যেন একটা অদৃশ্য ভালো লাগা কাজ করলো। আদিত্য নূরকে কোথাও বসানোর ব্যবস্থা করতে চাইলো।পাশের সিটে একটা ভুড়িওয়ালা লোক বসে আছে। আদিত্য পাঁচশ টাকার একটা নোট বের লোকটাকে ইশারা করলো উঠে যেতে। উঠে গেলে সে এই নোটটা পাবে। লোভে প্রলোভিত হয়ে লোকটাও ফট করে উঠে গেল। সবই হলো নূরের অগোচরে। লোকটা উঠতেই আদিত্য নূরকে বললো ওই সিটে বসতে। নূরও বিনাবাক্য ব্যয়ে বসে পড়লো ওখানে। আদিত্য নূরের সিটে এক হাত আর সামনের সীটে আরেক হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। নূর আরচোখে দেখলো আদিত্যকে। ঘেমে বেচারার শার্টটা ভীজে গায়ের সাথে লেপ্টে গেছে। কপাল বেয়ে ঘামের বন্যা নামছে। মায়া নামক কিছু অনুভূতি হলো নূরের। হ্যান্ডব্যাগ থেকে রুমাল বের করে আদিত্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
–ঘাম মুছে নিন।

আদিত্য চমকিত নয়নে তাকালো নূরের পানে। স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কতক্ষণ। নূর আজ প্রথম আদিত্যর হিতের কথা ভাবছে। অতি সামান্য হলেও এটা আদিত্যর জন্য অনেক কিছু। আদিত্য রুমালটা নিলো। নূরের রুমাল এটা, এটাতে নূরের শরীরের ঘ্রাণ মিশে আছে। আদিত্য রুমালটা শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো। নূর সেটা দেখে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–কী হলো মুছলেন না? ভয় নেই পরিস্কার আছে।

আদিত্য মুচকি হেঁসে বলল,
–তোমার দেওয়া প্রথম কোনো জিনিস এটা। এতো স্পেশাল জিনিসটাকে আমার এই সামান্য ঘাম মুছে নষ্ট করবো নাকি?

–ঠিক আছে তাহলে আমার রুমাল ফিরিয়ে দিন।

–ওটার কথাতো ভুলে যাও। চাইলে ওটার বদলে অন্যকিছু নাও। কিন্তু ওটা পাবে না।

–অন্যকিছু চাইনা আমার। আমাকে আমার রুমাল ফিরিয়ে দিন ব্যাস।

–আরে এতো কিপ্টে কেন তুমি? একটা রুমালের মায়াই ছাড়তে পারছনা! মনে করো কোনো অসহায় ব্যাক্তিকে দান করে দিয়েছ তুমি। এর বদলে দোয়া পাবে।

আবারও হাসি পেল নূরের। নূর মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিঃশব্দে হাসলো। একটু পর নূরের পাশের প্যাসেঞ্জার টা উঠে নেমে গেল। নূর জানালার কাছের সীটে বসে আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
–চাইলে বসতে পারেন।

আদিত্য মুচকি হেঁসে বসলো নূরের পাশে। এখন একটু জানালা দিয়ে বাতাস লাগছে। কন্ডাকটর ভাড়া নিতে এসে বলল,
–কোথায় নামবেন?

আদিত্য একটু ভেবে বলল,
–কোন পর্যন্ত যাবে গাড়ি?

–মতিঝিল পর্যন্ত।

–তাহলে সেই পর্যন্তই যাবো।

–ঠিক আছে, ৬০ ট্যাহা দেন।

আদিত্য মানিব্যাগ থেকে একটা এক হাজার টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিলে কন্ডাকটর বলে উঠলো।
–এইডা কী দেন স্যার। ভাংটি দেন।

–ভাংটি তো নেই। আচ্ছা কার্ড চলবে?ক্রেডিট কার্ড,ডেবিট কার্ড?

–কী মশকারি করেন স্যার! ট্যাহা দেন নাইলে নাইমা যান।

–আচ্ছা, ভাংটি দিতে হবেনা। পুরোটাই রাখো।

কন্ডাকটর এবার সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–জালি ট্যাহা আইনা আমারে ধরাই দিতে চাইতাছেন তাইনা! এইসব ধান্দাবাজি আমার লগে চলবো না। ভালোই ভালোই ট্যাহা বের করেন নাইলে অহনি নাইমা যান।

বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল আদিত্য। নূরের সামনে ইজ্জতের হালুয়া রুটি হয়ে যাচ্ছে বেচারার। আর আদিত্যের বেহাল দশা দেখে দম ফাটানো হাসি বহুত কষ্টে আঁটকে রাখছে নূর। শেষমেশ অবস্থা সামাল দিতে নূর বলে উঠলো।
–মামা, উনার ভাড়া আমি দিয়ে দিচ্ছি।
নূর দুজনের ভাড়া দিয়ে মামলা মিটকুট করলো। আদিত্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলল,
–থ্যাংক ইউ নূর।

–থ্যাংক ইউ-এর লুচি বানিয়ে খান আপনি। আমাকে আমার টাকা কাল দিয়ে দিবেন। আমি এখানে দানশালা খুলে রাখিনি।

–হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই। তোমার এতবড় ঋণের বোঝা নিয়ে মরেও শান্তি পাবোনা। দেখা যাবে কবর থেকেও টেনে তুলে বলবে,আমার টাকা না দিলে কবরে থাকতে দিবোনা।

–হ্যাঁ এমনটাই করবো আমি।

মাথা নেড়ে হাসলো আদিত্য।কিছুক্ষণ পর একটা মোটা ভুড়িওয়ালা লোক এসে দাঁড়াল আদিত্যর সীটের কাছে। খালি সীট না পাওয়ায় হাত উঁচু করে হাতল ধরে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। যার দরুন লোকটার ব,গ,লে,র ঘামের বিশ্রী তীব্র দুর্গন্ধ এসে লাগলো আদিত্যর নাকে। নাড়িভুড়ি বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম বেচারার। আদিত্য নাক চেপে ধরে ওর পকেট থেকে একটা ছোট্ট মিনি পারফিউম এর শিশি বের করে লোকটার বগলের দিকে স্প্রে করে দিলো।গন্ধে চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
–এই লোকের কাছে ওর বউ কেমন করে শোয় কে জানে! এর শরীরের দূর্গন্ধে তো এর ঘরে তেলাপোকাও ঢুকতে সাহস পাবেনা।

এবার নিজের হাসির ফোয়ারা থামাতে সক্ষম হলোনা নূর। চেপে রাখা হাসিটা মুখের ভেতর ফুলতে ফুলতে একসময় ঠোঁটের বাঁধ ভেঙে বিস্ফোরিত হয়ে বেড়িয়েই এলো। আদিত্যর কাজ আর কথা শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো নূর। হাসতে হাসতে সামনের দিকে ঝুঁকে গেল সে। আর নূরের এই হাসির ঝংকারে মাতোয়ারা হলো আদিত্যের মনমঞ্জিল। মুহুর্তেই সব গরম সরিয়ে শীতল পবনে জুড়িয়ে দিলো আদিত্যর শরীর মন। নূরের মুখের হাসি হলো বৃষ্টির পড়ে ভেসে উঠা ওই সাতরঙা রংধনু, যে সৌন্দর্য শুধু অনুভব করা যায়। ভাষায় বয়ান করা যায় না।

নির্দিষ্ট স্থানে আসতেই নূর উঠে দাঁড়িয়ে নামার জন্য এগুলো। আদিত্যও আর বসে থাকবে কারজন্য। সেও তড়িঘড়ি করে নূরের পিছু পিছু নেমে গেল। নূর আর এখানে নামা নিয়ে এবার কিছু জিজ্ঞেস করলোনা। এতক্ষণে সে এতটুকু বুঝে গেছে, আদিত্য কেবল ওকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিতেই ওর সাথে সাথে এসেছে। তাই আর কোন কিছু না বলে চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। দুজন পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে একসময় থেমে গেল নূর।নূরের থেমে যাওয়া দেখে আদিত্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো। নূর পাশের বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
–আমার বাসায় চলে এসেছি।

আদিত্য একবার বাড়ির দিকে তাকিয়ে আবার নূরের দিকে ফিরে বলে উঠলো।
–ওহ, ওকে। বায় দেন। সি ইউ টুমরো।

নূর সৌজন্যমূলক ঠোঁট দুটো হালকা প্রসারিত করে বাসার গেটের দিকে এগুলো। দুই কদম যেতেই আদিত্য পেছন থেকে ডাক দিলো। নূর থেমে গিয়ে ফিরে তাকালো। আদিত্য মায়াময় কন্ঠে বলে উঠলো।
–থ্যাংক ইউ নূর।আজকের দিনটা এতো স্পেশাল করার জন্য। আজকের এই মুহুর্তগুলো সত্যিই খুব স্পেশাল ছিলো আমার জন্য। থ্যাংক ইউ সো মাচ।

নূর প্রতিত্তোরে কী বলবে ভেবে পেলনা। আজকাল যেন ওর শব্দগুলো মাঝে মধ্যে কেমন হাতড়িয়ে পাওয়া যায় না। অগত্যা গেট খুলে ভেতরে ঢুকে গেল সে। আদিত্য অনাবিল প্রশান্তি নিয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিক। তখনই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো আদিত্যর। রিসিভ করে কানে ধরে কিছু শুনলো। মুহুর্তেই চেহারার রঙ পাল্টে গেল তার। চোখ মুখ ভয়ংকর কঠিন করে বলল,
–আম কামিং।
__

অন্ধকার ঘরের ফ্লোরে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে কিছু লোক। নিজেদের ছাড়ানোর চেষ্টা করে ছটফট করছে আর চিল্লাচ্ছে। ওরা ভেবে পাচ্ছেনা কে বা কারা ওদের এভাবে ধরে এনে আঁটকে রেখেছে। ওরাতো তখন ওই নূর নামের মেয়েটাকে কি,ড,ন্যা,প করতে যাচ্ছিল। হঠাৎ ওদের সামনে কালো কোটপ্যান্ট পড়া কয়েকজন লোক এসে পথ আগলে দাঁড়াল। কোনকিছু না বলে গান পয়েন্টে রেখে ওদের গাড়িতে তুলে ধরে নিয়ে এলো এখানে । তারপর থেকেই এভাবে হাত পা বেঁধে ফেলে রেখেছে ওদের। কখন থেকে চিল্লাচিল্লি করছে কিন্তু কারোর কোনো সারাশব্দ নেই।

একটু পর দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাকালো সবাই। গটগট পায়ের শব্দ করে এগিয়ে আসছে কিছু লোক। এরইমাঝেই কেউ ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিলো। চোখের সামনে প্রতীয়মান হলো সেই লোকগুলো। সামনে পাঁচজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। চারজন হলো সেই কালো কোটপ্যান্ট পরিহিত লোকগুলো যারা ওদের ধরে এনেছে। আর এদের মাঝখানে একজন গান হাতে দাঁড়িয়ে আছে। লোকটাকে চিনতে সময় লাগলোনা ওদের। এটাযে সুপরিচিত মুখ, সুপারস্টার সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য। আদিত্যকে এভাবে এখানে দেখে অবাক আর ভীতিগ্রস্ত চোখে তাকিয়ে রইলো সবাই। বাঁধা লোকগুলোর মাঝে একজন বলে উঠলো।
–আরে আদিত্য! আপনি! তাহলে এখানে কী কোনো মুভির শুটিং চলছে? এইজন্য কী আমাদের আনা হয়েছে?

আদিত্য বাঁকা হেসে ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো ওদের দিকে। ওদের সামনে এসে, এক হাঁটু নিচে গেড়ে আরেক হাঁটু ভাজ করে বসলো। ভাজ করা হাঁটুর ওপর গান ধরে রাখা হাতটা রেখে লোকগুলোর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–ইয়েস,শুটিং-ই হবে। তবে মুভির শুটিং নয়।রিয়েল শুটিং। যার ডিরেক্টর আমি, আর চরিত্র হলো তোরা।

লোকগুলো ভয় পেয়ে বলল,
–কী বলছেন এসব? দেখুন ছেড়ে দিন আমাদের। আপনার ধারণা নেই আমরা কোন গ্যাং এর লোক। আমাদের কিছু করলে আপনার বংশ নির্বংশ হয়ে যাবে। কাউকে বাঁচাতে পারবেন না।

আদিত্য একবার ঘার ঘুড়িয়ে ওর লোকগুলোর দিকে তাকালো। তারপর ঘর কাঁপিয়ে একসাথে হেসে উঠলো সবাই। হাসি থামিয়ে বলল,
–তোর সেন্স অফ হিউমার পছন্দ হলো আমার। আপসোস আমার ফিল্মে কাজ করার চান্স হারিয়ে ফেললি।

ওদের মাঝে একজন ভয়ে ঢোক গিলে বলল,
–আ আআপনি তো নায়ক মানুষ। কতো ভালো লোক। তাহলে এসব কী? এটা কোন রুপ আপনার?

–গুড কুয়েশ্চন। তো এটা আমার সেই রুপ যেটা দেখতে কেউই ইচ্ছে পোষণ করবেনা। পর্দায় যেটা দেখায় সেটা আমার হিরো রুপ। আর এটা হলো আমার ভিলেন রুপ। আমার এই রুপ শুধু তারাই দেখতে পায় যারা আমার অপছন্দের তালিকায় চলে আসে। আর যারা আমার অপছন্দের তালিকায় চলে আসে তারা এনআইডি তালিকা থেকেও বাতিল হয়ে যায়। কারণ যারা আমার এই রুপ দেখতে পায় তারা আর দুনিয়ার কোনোকিছু দেখার যোগ্য থাকেনা। এখানকার আইনও আমি,উকিলও আমি আর জজও আমিই। এখানে শুধু আমার রায় চলে।

এবারে লোকগুলো সত্যি সত্যিই ভয়ে কাঁপতে লাগলো। ভয়ে ভয়ে বলল,
–কিন্তু ভাই আমরা করেছিটা কী সেটাতো বলবেন? আমাদের অপরাধ কী? আমরা তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি। আরে আমরা তো উল্টো অনেক বড়ো ফ্যান। তাহলে আমাদের কেন ধরে এনেছেন?

এবারে আদিত্যের চোখ মুখ আরও কঠিন হলো। দাবানল জ্বলে উঠলো তার দুই চোখে। সিংহের মতো থাবা মেরে প্রশ্ন করা লোকটার বুকের কাছের শার্ট চেপে ধরে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলল,
–কী করেছিস! তোরা সেই দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টা করেছিস যেটা করার কথা কেউ ভাবলেও তার জীবন রেখা মিটিয়ে দেবো আমি। তোরা আজ যে মেয়েটাকে তুলে নিতে গিয়েছিলি জানি সে কে? সে হলো নূর,আমার নূর এই আদিত্যের লাইফলাইন। আর তোরা ওর ক্ষতি করতে চেয়েছিলি!

লোকগুলো ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
–স সসরি ভাই,ভুল হয়ে গেছে আমাদের। আসলে ওই মাইয়া আমাদের গ্রুপের কিছু ছেলেকে মেরেছিল। আবার পুলিশেও ধরিয়ে দিয়েছে। তাই একটু শায়েস্তা করতে চেয়েছিলাম। তবে ভুল হয়ে গেছে আমাদের। আর কখনো এমন কাজ করবোনা। প্লিজ ছেড়ে দেন আমাদের।

–মেরেছিল, বেশ করেছিল। তোরা কী ভেবেছিস আমি কিছু জানি না! নূরের হাতের আঘাত দেখে আমার সেদিনই সন্দেহ হয়েছিল। আমি লোক লাগিয়ে খবর নিয়ে সব জানতে পেরেছি। তোদের ওই গুণধর ছেলেগুলো যে অন্যায় করতে গিয়েছিল তাতে তো ওদের আরও ভয়াবহ শাস্তি হওয়া উচিত। শুকুর কর আমার হাতে পরার আগে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ওদের । নাহলে ওদের এমন হাল করতাম যে, দুনিয়াতে আসার জন্যও আপসোস করতো ওরা। আর ওই বা,স্টা,র্ড,দের জন্য তোরা উল্টো আমার নূরকে আঘাত করতে চাইছিলি! ওকে ধরে নিয়ে যেতে পারলে যে কী করতিস তা আমার ভালো করেই জানা আছে। কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে সেটা কীভাবে হতে দিতাম। আমি সেদিন থেকেই লোক লাগিয়ে দিয়েছিলাম। নূরের ওপর সর্বদা নজর রাখার জন্য। আর আজ তোদের দেখতে পেয়েই আমাকে ফোন দিয়েছিলো। আর আমি তোদের ধরে নিয়ে আসতে বলেছি।

–ভু ভুল হয়ে গেছে ভাই। অনেক বড়ো ভুল। এবারের মতো মাফ করে দিন।

আদিত্য রহস্যময় হেঁসে বলল,
–আজ তোকে একটা গল্প বলি শোন। ছোটবেলা থেকে আমার একটা দুশমন ছিলো। দুশমনির তেমন কোনো গুরুতর কারণ ছিলো না। এমনিতেই ও আমাকে ছোটো করার চেষ্টায় লেগে থাকতো আর আমি ওকে। সাপ আর বেঁজি সম্পর্ক ছিলো আমাদের। বয়সের সাথে এই সম্পর্ক আরও বেশি ঘনিষ্ঠ হয়। ও সবসময় আমার ক্ষতি করার চেষ্টায় লেগে থাকতো। আর আমি ওকে পরাস্ত করার। আমাদের শত্রুতা ভালোই চলছিলো।একদিন কলেজে ওর অন্য কারোর সাথে লড়াই হয়ে গেল। সে আবার লোকজন নিয়ে ওকে মারতে এলো। কিন্তু বাঁধা দিলাম আমি। ওকে যারা যারা মারতে এসেছিল সবগুলোকে কুপোকাত করে দিলাম আমি। কেন জানিস? কারণ ওকে কেউ কিছু করলে আমাদের শত্রুতার কী হতো! আমার শত্রুকে দমন করার অধিকার শুধু আমার। সেটা অন্য কাউকে কীভাবে করতে দিতাম। তাহলে ভাব,আমি শত্রুতার জন্য যদি এতটা পজিসিভ হতে পারি তাহলে আমার ভালোবাসার জন্য কতটা পজিসিভ হতে পারি,কতটা উন্মাদ হতে পারি। এক্সুয়ালি তোরা চেষ্টা করলেও ভেবে পাবিনা। কারণ আমি নিজেই বলতে পারিনা ওই মেয়েটা আমার ঠিক কতটা জুড়ে আছে। শুধু জানি যতক্ষণ ও ঠিক থাকবে ততক্ষণই এই দেহে প্রাণের সঞ্চালন হবে। কেউ ওর ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তার দুনিয়া ধ্বংস করে দিবো আমি। তাদের জন্য কোনো মাফ নেই আমার কাছে। কোনো দয়া নেই। তোরা শুধু আমার নূরের না, এর আগেও অনেক নারীর জীবন নষ্ট করেছিস। অনেক নিষ্পাপের জান কেঁড়ে নিয়েছিস। তোদের মতো নর্দমার কীটদের শাস্তি দেওয়ার জন্যই আমার এই গ্যাং ।এখানে তোদের মতো ধরণীর আবর্জনাদের সাফ করা হয়। তবে তোদের পুরোপুরি মারবোনা। তোদের এমন হাল করবো যে,তোরা নিজেরাই নিজেদের মৃ,ত্যু,র জন্য ভিক্ষা চাইবি।

বলা শেষে উঠে দাঁড়াল আদিত্য। গান তাক করে সবকয়টার পায়ে আর হাতে গু,লি করলো। তারপর ওর লোকগুলোকে ইশারা করে বলল,
–বাকি কাজ ফটাফট সেরে ফেলো তোমরা।
বলেই বেড়িয়ে গেল আদিত্য।

চলবে…..