#শৈবলিনী—-১৬
#লেখিক-মেহরুমা নূর
★ত্রিশ দিনের মধ্যে এক সপ্তাহ এরই মাঝে কেটে গেছে। আদিত্যর প্রয়াস অব্যাহত আছে। সেটা হয়তো মৃ,ত্যু,কা,ল অবধি থাকবে। তার প্রচেষ্টার প্রভাব নূরের উপর কতটা পড়ছে সে ব্যাপারে অজ্ঞাত আদিত্য। জানে না নূরের মনে সে কিঞ্চিৎ পরিমাণ স্থানও ক্রয় করতে পেরেছে কিনা। ওই লৌহের ন্যায় দৃঢ় কঠিন হৃদগৃহে চুল পরিমাণ অনুভূতির দোলা দিতে পেরেছে কিনা। ওই স্বচ্ছ চোখের কোনে নিজের প্রতিচ্ছবি আঁকতে পেরেছে কিনা। জানা নেই তার ব্যস্ত জীবনের কর্মব্যস্ততার মাঝে হঠাৎ করেই আদিত্যর খেয়াল এসে সামান্য হলেও বাঁধা দেয় কিনা।সেই খেয়াল তার গোলাপি ঠোঁটের হাসির কারণ হতে পেরেছে কিনা জানা আদিত্যর। তবে একটা উপরিভাগের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে সে। আজকাল নূরের কথার মাঝে আগের তুলনায় একটু নমনীয়তা দেখা যায়। প্রথমের মতো অতটা তাতান কন্ঠে আর কথা বলে না। আদিত্যর আশার প্রদীপ প্রজ্বলিত করার জন্য এতটুকুই বা কম কিসে।
“এখন নাহয় শুধু প্রতিক্ষার অনলে হৃদয় করছ দীপ্ত,
অনুরাগের ভারী বর্ষণে একদিন তুমিই এই হৃদজমিন করবে সিক্ত।”
নূরের দেওয়া রুমালটা মুখের উপর চাদরের মতো মেলে দিয়ে নিজের খেয়ালে ডুবে আছে আদিত্য। আজ ছুটির দিন হওয়ায় নূরের সাথে সাক্ষাৎ হয়নি তার। তাইতো তার বড্ড পীড়া হচ্ছে। এই প্রথম যেন ছুটির দিন থাকায় তার খেদ হচ্ছে। এই ছুটির দিন নামক বেহুদা জিনিস কে তৈরি করলো তার উপর যতো রাগ হচ্ছে। ভাবনার মাঝেই মায়ের কন্ঠ শুনতে পেল আদিত্য।
–কিরে আদি, এতবেলা অব্দি শুয়ে আছিস কেন? শরীরের খারাপ হয়নি তো?
রুমে ঢুকতে ঢুকতে বিছানায় শুয়ে থাকা ছেলের উদ্দেশ্যে বললো রেহনুমা। মায়ের গলা পেয়ে আদিত্য তড়িঘড়ি করে রুমালটা মুখের উপর থেকে সরিয়ে দ্রুত বালিশের নিচে লুকিয়ে ফেললো। হকচকিয়ে উঠে বসে বলল,
–না না মা,আমি ঠিক আছি। ওই এমনি একটু শুয়ে ছিলাম।
রেহনুমা ছেলের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে স্নেহময় কন্ঠে বলল,
–ভোরবেলা উঠে জগিং করা ছেলেটা আজ হঠাৎ আলসে হয়ে গেল কীভাবে হ্যাঁ ? ঘটনা কী বলতো?
আদিত্য মায়ের কোলে মাথা রেখে আদুরে গলায় বলল,
–ঘটনা কিছুই না মা। তোমার ছেলের আজ একটু মায়ের আদর পেতে ইচ্ছে হয়েছে তাই।
রেহনুমা মায়াময় হাসলো। আদিত্যর মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,
–আচ্ছা তাই! তা আমি কী আমার ছেলেকে আদর করিনা? আরে তুই তো আমার সত্যিকারের রাজপুত্র। মা হওয়ার সুখ প্রথম তোকে দিয়েইতো পেয়েছি। মায়ের আদর আহ্লাদ তো সবচেয়ে বেশি তুইই পেয়েছিস।
–আরও পেতে চাই। এই দিক দিয়ে আমি খুব হিংসুটে। কারো সাথে কম্প্রোমাইজ করতে পারবোনা।
রেহনুমা মাথা নেড়ে হেঁসে বলল,
–পাগল..। আচ্ছা শোন, ছুটির দিন বসে না থেকে বাইরে গিয়ে একটু ঘুরেফিরে আয়। এক কাজ কর,সামাইরাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে আয়।
দুধের ভেতর একফোঁটা লেবুর রস পরে যেমন দুধ ফেটে যায় তেমনি রেহনুমার কথা শুনে আদিত্যর ফুরফুরে মেজাজটা তিক্ত হয়ে গেল। আদিত্য উঠে বসে মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,
–মা তুমি ভালো করেই জানো তোমার কোনো কথা আমি ফেলিনা। তবে এবার তুমি যেটা চাচ্ছ সেটা সম্ভব না। আমি জানি তুমি সামাইরাকে নিয়ে কী ভাবছ। কিন্তু আমি তা করতে পারবোনা। মা এটা আমার সারাজীবনের ব্যাপার। তাই হুট করেই যাকে খুশি তাকে বিয়ে করা যায় না। আর এমনিতেও সামাইরাকে আমার পছন্দ না। আমার জীবনসঙ্গিনী হিসেবে তো কখনোই না। তাই প্লিজ তুমি তোমার মাথা থেকে এই খেয়াল ঝেরে ফেলো।
–কেন বাবা? মেয়েটাতো খারাপ না। দেখতে-শুনতে, আচার-আচরণে,বংশ পরিচয়ে সবদিক থেকেই ভালো। আর তোদের দুজনকে একসাথে মানায়ও ভালো।
–মা শুধু ভালো দেখাটাই সবকিছু না। আসল হলো মনের মিল। দুজনের মাঝে ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং। আর সামাইরা এসবের ধারে কাছেও না। আমিতো এই মুভির পর ওর সাথে প্রফেশনাল কোনো রিলেশন রাখতে চাইনা। পার্সোনাল তো অনেক দূরের কথা। প্লিজ মা, আমার কথা টা বোঝার চেষ্টা করো। এই মুহুর্তে এইসব বিয়ে শাদির চিন্তা আপাতত বাদ দাও। সময় হলে আমি নিজেই তোমাদের বলবো। আমাকে প্লিজ প্রেসারাইজ করোনা।
রেহনুমা বিচক্ষণ মহিলা। তিনি ছেলেকে আর ঘাঁটালেন না। পরবর্তীতে বুঝে শুনে পদক্ষেপ নিবেন তিনি। নাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে। মাকে নিয়ে ছেলের উপর কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক তা কখনো চান না। তাই রেহনুমা মুচকি হেঁসে বললেন।
–আচ্ছা ঠিক আছে। তুই যা চাস তাই হবে।
আদিত্য খুশি মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
–থ্যাংক ইউ মা,ইউ আর দ্য বেস্ট।
তখনই আহানা আর আদ্র আদিত্যর রুমে ঢুকলো। আহানা ঢুকতে ঢুকতে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
–বাহ্ বাহ্ কেয়া বাত,কেয়া বাত। মা ছেলের এই ভালুপাসা দেখে আমারতো নাকে পানি চলে আসলো। বলি আমরা কী কচু গাছের সাথে গলায় দ,ড়ি দিয়া ঝুলে পড়বো? এই অবহেলিত জীবন রেখে আর কী লাভ?
আদ্র বলে উঠলো।
–এই আন্নি দেখ আজকে মরবিনা কিন্তু একদম।আজ আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে পার্টি আছে। তোর মরার জন্য আমার পার্টি ক্যান্সেল করতে পারবোনা। তুই বরং কাল সকাল দশটায় মরিস। ওইসময় একদম ফ্রী আছি আমি। ব্রেকফাস্ট করে তারপর নাহয় মরার প্রক্রিয়া শুরু করিস।খালি পেটে মরা ধরা দেখলে আমার আবার বমি আসে।
আহানা ক্ষেপে গিয়ে আদ্রর দিকে ছুটে আসতে আসতে বলল,
–আমি মরার আগে তোরে ভুত বানাবো আমি দাঁড়া।
আদ্র দৌড়ে ঘরের চারিদিকে ঘুরতে লাগলো। ওদের কান্ড দেখে আদিত্য হাসতে লাগলো।
__
গ্যারেজের কাজ শেষ করে রাত আটটার দিকে বাসায় ফিরলো নূর। ঘরে প্রবেশ করেই দেখলো লতিকা বেগম কেমন চিন্তিত মুখ করে বসে আছে। পাশেই অমালিয়াও শুকনো মুখে বসে আছে। নূর এগিয়ে গিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
–কী হয়েছে মা? এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?
লতিকা বেগম আতঙ্কিত কন্ঠে বললেন,
–নূর মা,ভালো হয়েছে তুই এসেছিস। দেখনা মিছরিটা কই গেছে এখনো বাড়ি ফেরেনি।বিকালে কোচিং এর জন্য গেল এখনো ফেরেনি। রোজতো ছয়টার আগেই চলে আসে। আজ এতো বেলা হয়ে গেল তবুও আসছেনা।
–কি বলো! ওর কোচিং টিচারকে ফোন করেছিলে?
অমালিয়া বলল,
–হ্যাঁ আমি ফোন করছিলাম। স্যার বলল,কোচিং তো সময়মতোই শেষ হয়ে গেছে। আর চিনিও ওখান থেকে বেড়িয়ে গেছে।
–আশেপাশে দেখেছিস? হয়তো খেলাধুলা করছে কোথাও।
–দেখেছি। আশেপাশে কোথাও নেই। ভাইয়াও খুঁজতে গেছে।
নূরও এবার ভয় পেয়ে গেল। সময়কাল অতি কঠিন। কোনো বিপদে পড়লোনাতো ওর ছোট্ট বোনটা! নূর ওর মাকে আস্বাদন দিয়ে বলল,
–মা চিন্তা করোনা তুমি। চিনির কিছু হবেনা। আমি এখুনি খুঁজতে যাচ্ছি ওকে। ওকে ঠিকঠাক খুঁজে বের করে নিয়ে আসবো আমি।
নূর সময় নষ্ট না করে দ্রুত বেড়িয়ে গেল মিছরিকে খুঁজতে। দৌড়ে দৌড়ে সকল চেনাজানা জায়গায় খুঁজতে লাগলো ওকে। এক ঘন্টা ধরে খুঁজেও কোথাও পেলনা ওকে। বুক কাঁপছে ওর। মাকে কী জবাব দিবে ও। বোনটার খেয়াল রাখতে পারলমনা আমি। এখন কী করবো? ক্লান্ত,হতাশ আর ব্যাথিতো মনে বাড়ি ফিরলো নূর। এতক্ষণে ইভানও ফিরে এসেছে। সেও খুঁজে পায়নি মিছরিকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো লতিকা বেগম। নূর ভাবলো এবার পুলিশে খবর দিতেই হবে। তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ভাবনা অনুযায়ী নূর পুলিশ স্টেশনের উদ্দেশ্যে বের হতে নিলো। তখনই হঠাৎ দরজার দিকে তাকাতেই চমকে গেল নূরসহ বাকি সবাই। দরজা দিয়ে মিছরি প্রবেশ করলো। তাকে দেখে যতটা না খুশি হলো নূর তারচেয়ে বেশী বিস্মিত হলো মিছরির হাত ধরে থাকা আদিত্যকে দেখে। যদিও আদিত্য মাস্ক পড়ে আছে তবুও চিনতে সময় লাগলোনা নূরের। তার এই মাস্ক যে নূরের ভালো করেই চেনা।
মিছরিকে দেখেই ছুটে গেল লতিকা বেগম। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন তিনি। ইভান আর অমালিয়াও স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল। নূর এগিয়ে গিয়ে আদিত্যর দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
–আপনি? আপনি কি করছেন আমার বোনের সাথে? বলুন কি করেছেন আপনি ওর সাথে?
আদিত্য কিছু বলবে তার সুযোগ দিচ্ছেনা নূর। একের পর এক জেরা করেই যাচ্ছে। মিছরি তখন নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
–আরে আপু, এই ভাইয়াই তো আজকে আমাকে সাহায্য করে বাড়ি নিয়ে এসেছে।
মিছরির কথায় এবার একটু থতমত খেয়ে গেল নূর।ইভান এগিয়ে এসে বলল,
–সাহায্য করেছে মানে? আর তুই ছিলি কোথায়? তোকে খুঁজে না পেয়ে আমাদের সবার কী অবস্থা হয়েছিল জানিস!
–আরে ভাইয়া, আজ কোচিং থেকে ফেরার সময় হঠাৎ রাস্তায় অনেক গুলো কুকুর তাড়া করে আমাকে। আমি ভয় পেয়ে একটা গাছের ডালে উঠে বসে ছিলাম। কুকুর গুলোও গাছের নিচ থেকে যাচ্ছিল না। তাই আমিও নামতে পারছিলাম না। রাত হয়ে যাওয়ায় ভয়ও লাগছিলো অনেক। ভয়ে কাঁদছিলাম আমি। তখন এই ভাইয়া ওখানে গাড়ি থামিয়ে এদিক ওদিক কী জেন খুঁজছিল। আমার কান্নার শব্দ পেয়ে উপরে তাকিয়ে আমাকে দেখতে পায়। আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি ওখানে কী করছি। তখন আমি ভাইয়াকে সব বললাম। তারপর ভাইয়া কুকুরগুলোকে তাড়িয়ে আমাকে গাছ থেকে নামতে সাহায্য করলো। তারপর আমাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমার বাড়ি পর্যন্ত এলো।
মিছরির কথা শুনে নূর মনে মনে অনেক লজ্জিত হলো। লোকটা তার বোনকে সাহায্য করেছে আর ও কী না কী বলে যাচ্ছিলো। ইভান নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
–কিন্তু আপু,তুমি এভাবে কেন বলছিলে? তুমি কী উনাকে আগে থেকে চেন? কে উনি?
সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে আদিত্য এবার নিজের মাস্ক আর টুপি খুললো। নূর আর লতিকা বাদে বাকিরা ইয়া বড়ো বড়ো চোখ আর কুয়ার মতো মুখ করে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে রইলো। পাঁচ সেকেন্ডের মাথায় অমালিয়া দিলো বিশাল এক চিৎকার,
–আআআআ….ও…..মাই…… গড। আই কান্ট বিলিভ দিস। দ্য সুপারস্টার সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য আমাদের বাড়িতে! আমি কী স্বপ্ন দেখছি! উফফ..অজ্ঞান হয়ে যাবো আমি।
মিছরিও বিস্ময় ভরা কন্ঠে বলল,
–আরে ভাইয়া আপনিতো সত্যিই সেই টিভির নায়কটা।
লতিকা বেগম কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলল,
–তুমি যেই হও বাবা,আমার মেয়েটাকে বাঁচিয়ে তুমি যে উপকার করলে তার ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবোনা।
আদিত্য মুচকি হেঁসে বলল,
–কিছু ঋণ থাকা ভালো আন্টি। বলাতো যায়না কখন দরকার পরে। তখন নাহয় চেয়ে নিবো।
আদিত্যর এই উক্তির মর্ম বাকিরা বুঝতে না পারলেও নূর ঠিকই বুঝতে পারলো। আদিত্যকে ভেতরে এসে বসতে বললো সবাই। মিছরি আদিত্যের হাত ধরে সোফায় নিয়ে বসালো। বাকিরাও এসে বসলো। অমালিয়া তো এখনো হা হয়ে শুধু তাকিয়েই আছে আদিত্যের দিকে। ইভান আবার বলল,
–আপু তুমি বললে নাতো আদিত্যকে কীভাবে চেনো তুমি?
আদিত্য বলে উঠলো,
–আমি বলছি, তারপর আদিত্য সবাইকে নূরের ওর সাথে কাজ করার বিষয় টা বললো।
অমালিয়া তখন বলল,
–আপু তুমি আদিত্যর সাথে কাজ করো এতবড় একটা কথা আমাদের বলনি কেন?
–কেন? এটাতে এতো হাঁক ছেড়ে বলার কী আছে? সাধারণ কাজের মতোই এটাও একটা কাজ মাত্র যারজন্য আমি টাকা পাবো। তো এতে বিশ্ব জয়ের মতো সবাইকে বলে বেড়ানোর কী আছে? এনিওয়ে আমি রুমে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে। গ্যারেজ থেকে এসে মিছরির নিখোঁজ হওয়ার কারণে আর ফ্রেশই হতে পারিনি। আর মা,সবাই দৌড়াদৌড়ি করে টায়ার্ড হয়ে গেছে। পারলে একটু চা করে দাও সবার জন্য।
বলেই নিজের রুমের দিকে এগুলো নূর।আদিত্য মনে মনে হাসলো। চা খাওয়াবে সেটাও সরাসরি বলবেনা মেয়েটা। সবার উছিলা দিয়ে বলে গেল। ইভান আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
–আপুর কথায় কিছু মনে করবেন না। আসলে আমার আপুটা উপরে উপরেই এমন। কিন্তু তার মনটা সাগরের চেয়েও উদার। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে সব দায়দায়িত্বর বোঝা সামলাতে গিয়ে আর দুনিয়ার কঠিন রুপের সাথে লড়তে গিয়ে আপু এমন কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে। তবে তার মতো দয়াময়ী কেউ হবেনা। আমাদের জন্য সে হাসিমুখে নিজের জানও দিয়ে দিতে পারবে।
আদিত্য মনোযোগ সহকারে শুনলো ইভানের কথা। নূরের প্রতি তার মনে ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ দুটোই আরও বৃদ্ধি পেল। নূর সত্যিই এক শৈবলিনী। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবার সাথে মিশে গেল আদিত্য।বিশেষ করে মিছরির সাথে। ভীষণ কিউট মেয়েটা।মিছরিরও খুব ভাব হয়ে গেল আদিত্যের সাথে। অমালিয়া আদিত্যর সাথে ছবি তুলতে চাইলে আদিত্য বলল,
–ছবি তুলতে পারো তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করোনা প্লিজ। আর আমার এখানে আসার কথাও যেন কেউ না জানে। তাহলে শুধু শুধু নিউজ বানিয়ে দিবে।
শর্ত মেনে অমালিয়া ইচ্ছেমতো অনেকগুলো ছবি তুলে নিল আদিত্যের সাথে। মিছরিও তুললো অনেকগুলো। লতিকা বেগম ততক্ষণে চা নাস্তা নিয়ে এলো। সন্ধ্যার নাস্তার জন্য সবজি পাকোড়া বানিয়েছিলেন তিনি। সেটাই দিলেন আদিত্যকে। তৈলাক্ত খাবার আদিত্য তেমন খায়না। তবুও ভদ্রতার খাতিরে একটা পাকোড়া হাতে নিয়ে মুখে দিতে যাবে তখনই পাশের রুম থেকে নূর বেড়িয়ে এলো।তাকে দেখেই থমকে গেল আদিত্য। সদ্য গোসল বেড়িয়ে আসা রমনীর, মাথার চুলে পেঁচানো তোয়ালেটা কাঁধের একপাশে ফেলা । অন্যপাশের কিছু ভেজা চুল বেড়িয়ে আছে। বাসার ক্যাজুয়াল পোশাকে হেঁটে আসছে সে এদিকে। তাঁর এমন মোহময় স্নিগ্ধ রুপে যে কেউ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাকি বুঝতে পারছে ওই নারী! বুঝতে পারছে তার মোহনীতায় দ্রবীভূত হচ্ছে কেউ! হৃদপিণ্ডে তুমুল আলোড়ন তুলছে! গলা শুঁকিয়ে আসছে আদিত্যর। মুখের সামনে ধরে থাকা পাকোড়াটা হাত ফসকে পড়ে গেল গরম চায়ের কাপে। চায়ের কিছু ছিটা এসে লাগলো আদিত্যর প্যান্টে। তখন বেচারার ঘোর কাটলো। সবার সামনে একটু ইতস্তত হয়ে গেল সে। অমালিয়া টিস্যু এগিয়ে দিলো মুছতে। আদিত্য আরচোখে একবার নূরের দিকে তাকিয়ে টিস্যু দিয়ে মুছলো প্যান্ট। অথচ এসবকিছু থেকে বেখবর নূর। সে স্বাভাবিক ভাবেই এসে সোফায় বসে চায়ের কাপ হাতে নিলো। লতিকা বেগম আদিত্যের জন্য আরেকটা চায়ের কাপ নিয়ে এলো। নূরকে দেখতে দেখতে সেও চায়ের স্বাদ নিলো।
আজ বোধহয় ভাগ্য একটু বেশিই সদয় হচ্ছে আদিত্যের ওপর। সারাদিন নূরকে না দেখে অস্থির লাগছিলো আদিত্যর। সন্ধ্যা হতে হতে সেটা অসহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছিল। তাইতো গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে সে নূরকে দেখার উদ্দেশ্যে। নূরের বাড়ি থেকে অনেক টা দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে খোঁজার চেষ্টা করে নূরকে কোথাও দেখতে পায় কিনা। কিন্তু কে জানতো তার ছোটবোনের উছিলায় সে সোজা নূরের বাড়ির ভেতরে আসতে পারবে। আর এসে নূরের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে। আর বোনাস হিসাবে নূরের এই মোহনীয় সৌন্দর্য দেখতে পাবে। অপূর্ব মায়াবতীকে দেখে তৃষ্ণার্ত হৃদয় সিক্ত করতে পারবে।
আরও কিছুক্ষণ কথাবার্তার পর আদিত্য এবার উঠতে চাইলো। যদিও তার মোটেও ইচ্ছে হচ্ছে না এখান থেকে যেতে। ইচ্ছে হচ্ছে সারারাত এভাবেই নূরের সাথে বসে গল্প করতে। কিন্তু সেটাতো আর এখন সম্ভব না। সেই অধিকার তার এখনো হয়নি। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সে যাওয়ার জন্য সবার উদ্দেশ্য বলল,
–এখন তাহলে আসি আমি। আপনাদের সাথে পরিচিত হয়ে অনেক ভালো লাগলো আমার। মন চাইলে মাঝে মধ্যে এসে আপনার হাতের চা খেয়ে যাবো আন্টি।
–হ্যাঁ হ্যাঁ বাবা অবশ্যই এসো। আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করুক।
আদিত্য বেরুতে নিলেই হঠাৎ নূর বলে উঠলো।
–চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসছি আমি। মহল্লার লোকজন আপনাকে চিনতে পারলে ঝামেলা হতে পারে।
আদিত্য অনেকটাই অবাক হলো। নূর নিজে থেকে ওর সাথে আসতে চাচ্ছে! ভাগ্য বুঝি সত্যিই আজ মেহেরবান হচ্ছে। নূর মাথার তোয়ালেটা খুলে চুলগুলো হাত খোঁপা করে নিয়ে আদিত্যর সাথে এগুলো। দুজন পাশাপাশি হাঁটছে। আদিত্য বারবার তাকাচ্ছে শুধু নূরের পানে। নূর আস্তে করে বলে উঠলো।
–সরি,তখন ওভাবে বলাটা আমার ঠিক হয়নি। আসলে চিনির জন্য চিন্তা হচ্ছিল তাই ওইসব বলে দিয়েছিলাম।
–ইটস ওকে,আই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড। আমারও ছোট ভাইবোন আছে। ওরা আমার জান। ওদের কিছু হলে আমিও হয়তো এমনই করতাম।
হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির কাছে চলে এলো ওরা। আদিত্য কেমন খুসমুস করছে। নূরের সাথে তার আরও কিছুক্ষণ এভাবে একাকী সময় কাটাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু নূরকে বললে কী আর সে মানবে! অগত্যা আদিত্য গাড়ির লক খুলতে নিলেই নূর পেছন থেকে বলে উঠলো।
–শুনুন…
আদিত্য তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে বলল,
–হুম?হ্যাঁ হ্যাঁ বলো,কিছু বলতে চাও তুমি?
নূর একবার আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। নূর আদিত্যর দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
–হ্যাঁ কিছু কথা বলতে চাই।
আদিত্য অতি আগ্রহের সহিত বলল,
–বলনা।
–আপনাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলাম আপনি ততটাও খারাপ না। তাই আপনার ভালোর জন্য কিছু কথা বলতে চাই। দেখুন এতদিন চ্যালেঞ্জের জন্য আপনাকে যাই বলিনা কেন ওসব শুধুই কথার কথা। সত্যি বলতে আমার জীবনে এসব প্রেম ভালোবাসার কোনো জায়গা নেই। এসব ক্যাচাল আমার জন্য না। আমার জীবনের লক্ষ্য আলাদা। অনেক দায়িত্ব পালন করতে হবে আমায়। এসবের মাঝে অন্য কিছুর জন্য বিন্দুমাত্র সময় আর আগ্রহ কোনোটাই নেই আমার। এমনিতেও আমাদের দুনিয়া আলাদা। যা কখনো এক হবার নয়। তাই বলছি আমার পিছে অযথা সময় নষ্ট করেন না। পরে কষ্ট পাবেন। আপনি চাইলে আমার চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে পেয়ে যাবেন।তাই প্লিজ এসব চিন্তা ভাবনা ছেড়ে দিন। এতেই আপনার ভালো হবে।আর আমারও।
স্মিথ হাসলো আদিত্য।বুকের ওপর হাত ভাজ করে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে নূরের মুখপানে তাকিয়ে বলল,
–যাক, আমার ভালোর কথাতো অন্তত ভাবলে তুমি। এটাই আমার মঞ্জিলের আরও একধাপ কাছে নিয়ে গেল। আর তোমার চেয়ে ভালো মেয়ের কথা বলছিলে না? আচ্ছা ধরো এমন কাউকে পেয়ে গেলাম। কিন্তু তাকে আমি ভালোবাসা কীভাবে দিবো? তুমিতো আসল জিনিসটাই চুরি করে নিয়ে গেছ। রাতদুপুরে ডাকাতি দিয়ে আমার হৃদপিণ্ডটা তো ছিনিয়ে নিয়ে গেছ। এখন অন্য কাউকে কীভাবে ভালোবাসবো তাহলে? বলো পারবে ফিরিয়ে দিতে? দিতে পারলে বলো। নাহলে আর অন্য কাউকে খোঁজার কথা বলবেনা। তোমাকে পাওয়া না পাওয়া সেটা হয়তো তোমার হাতে। তবে তোমার জন্য অপেক্ষা করাটা একান্তই আমার নিজস্ব অধিকার। সেখানে কাউকে আমি অনধিকার চর্চা করতে দিবোনা। কারোর হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করবোনা। এমনকি তোমাকেও না। মাই অপেক্ষা ইজ মাই অপেক্ষা, নন অফ ইউর অপেক্ষা।
শেষের কথাটা মজা করে বললো আদিত্য। নূর উপহাসমূলক মাথা নাড়ল।তারপর বলল,
–আচ্ছা আপনার কী আত্মসম্মানে লাগে না? এইযে এতো জনপ্রিয় একটা অভিনেতা হয়ে সামান্য একটা মেয়ের পেছনে ঘুরছেন। আর মেয়েটা আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না এতে করে কী আত্মসম্মানের হানি হচ্ছে না আপনার?
–প্রথমত, নিজেকে সামান্য মেয়ে বলার জন্য তোমাকে এবারের মতো মাফ করলাম। তবে দ্বিতীয় বার এই কথা বলার স্পর্ধাও করবেনা।আই সোয়্যার নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবোনা। এখন আসি আত্মসম্মানের কথায়। একটা কথা বলতো তোমাকে যদি কেউ নিঃশ্বাসের বদলে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস অফার করে তখন তুমি কোনটা সিলেক্ট করবে? নিশ্চয় নিঃশ্বাসই সিলেক্ট করবে। কারণ মানুষ জীবিতই না থাকলে অন্যসব জিনিস দিয়ে কী করবে? আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। তুমিহীনা এ জীবন শুধুই জীবন্ত লা,শ। যাতে শুধু দৈহিক বস্তু তো থাকবে তবে কোনো প্রাণ থাকবেনা। আর মৃ,ত ব্যাক্তির জন্য কী আত্মসম্মান আর কী অন্যকিছু। আর তাছাড়া এখানে আত্মসম্মানের হানির কী আছে? তুমিতো প্রথম থেকেই তোমার পয়েন্ট ক্লিয়ার করে দিয়েছ। আমি সবটা জেনেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আত্মসম্মানের হানি তখন হতো যখন তুমি আমাকে আশা দিয়ে তারপর ঘোরাতে। বা আমাকে আশা দিয়ে অন্য কারোর সাথে সম্পর্ক করতে তখনও যদি আমি তোমার পিছে পড়ে থাকতাম তাহলে সেটা আত্মসম্মানের হানি হতো।জাস্ট বিকজ আমি জনপ্রিয় ব্যাক্তি হয়ে কোনো মেয়ের পেছনে ঘোরাটা আত্মসম্মানহীন কাজ? তবে কী সাধারণ কোনো ব্যাক্তি হলে তখন জাস্টিফাই হতো? এটা ভাবা সত্যিই বোকামি। তাই এখানে আত্মসম্মানের কোনো কথা আসছে না। ভালোবাসা হলো এক পবিত্র অনুভূতি। এরসাথে কোনোকিছুরই কম্পেয়ার চলে না। আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর তোমার ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা আজীবন করে যাবো। সফল হতে পারলে তো সর্বসুখী হবো। নাহলে ভাববো আমার প্রচেষ্টাতেই হয়তো কোনো কমতি ছিল। তবুও ভালোবাসবো অনন্ত কাল।
নূরের ভেতর কেমন নড়েচড়ে উঠলো সব। স্নায়ুকোষ গুলো ঝিনঝিন করছে। অন্তর্দেশে কোথাও মৃদু পীড়াদায়ক অনুভব হচ্ছে। আর ওই চোখে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা নূর। নজর সরিয়ে নিয়ে বলল,
–আমার বোঝানোর দরকার ছিল তাই বললাম। এখন আপনি না বুঝতে চাইলে আমার কিছু করার নেই। ঠিক আছে, বায়।
নূর উল্টো ঘুরে চলে যেতে নিলো। প্রতিবারের মতো আদিত্য পেছন থেকে ডাকলো,
–নূর।
নূর দাঁড়িয়ে গেল তবে পেছনে ফিরলো না। আদিত্য কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর নূর বলে উঠলো।
–কিছু বলবেন?
–না। এমনি ডাকলাম। যাও এখন।
নূর কী মনে করে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো। সেটা দেখেই অমায়িক হাসলো আদিত্য। তারপর গাড়িতে বসে স্টার্ট দিয়ে চলে গেল সে। নূর দাঁড়িয়ে ভাবনায় ডুবে রইলো।
চলবে…..
#শৈবলিনী—১৭
#লেখিকা-মেহরুমা নূর
★বিরোক্তিতে ছেয়ে যাচ্ছে নূর। বিরক্তির কারণ শিখার এই অভিজাত শপিং মলে নূরকে নিয়ে আসা। এক প্রকার জোর করে টেনেই নিয়ে এসেছে নূরকে। আজ নাকি ওর মা বাবার বিবাহ বার্ষিকী। সেই উপলক্ষে তাদের জন্য গিফট কিনতে এসেছে। সাথে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে নূরকেও ঠেলে নিয়ে এসেছে। নূর ভেবে পাচ্ছে না ওর এখানে কী কাজ আছে। এসব অভিজাত শপিং মলে কেনাকাটা করার না ওর অভিজ্ঞতা আছে না প্রয়োজন। আর না এইসব জিনিসপত্র কেনার কোনো আগামাথা বোঝে ও। নিজের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা বলতে ওই রাস্তার পাশের মার্কেট থেকে দুইশো টাকার লেগিস, তিনশ টাকার কুর্তি আর দেড়শ টাকার জুতা ব্যাস শেষ। খুব হলে মাঝে মধ্যে ওর মা নিজেই গজ কাপড়ের পাজামা কামিজ বানিয়ে দেয়, এতটুকুই। এরবেশি নূরের না প্রয়োজন আছে না ইচ্ছে। কোনো আপসোসও নেই এটা নিয়ে। শরীরকে ঢাকার জন্য যতটুকু দরকার এতটুকু পোশাক হলেই হলো। কী দরকার অযথা টাকা নষ্ট করে দামি দামি পোশাক পড়ার।তাতে কী শরীরের ইমিউনিটি বাড়বে? মানুষের এই অদরকারী ব্যায়বহুলতা নূরের বোধগম্য হয়না। তাইতো সে এসব ক্যাচাল থেকে দূরে থাকে। এমনিতেও এসব জায়গায় আসলে লোকজন কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। যেন আমি ভিনগ্রহের কোনো এলিয়েন। আসলে দোষ এদের নয়। দোষ এদের মনমানসিকতার। এরা পোশাক আশাকের পরিধানের ওপর ভিত্তি করে মানুষকে জাজ করে। তাইতো এদের ধারণায় আমার মতো মানুষ এই জায়গায় বেমানান। যদিও কে কী ভাবলো তাতে নূরের বিন্দুমাত্র যায় আসে না। তবুও এসব কিছু থেকে দূরে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করে সে। কিন্তু এই শিখার জোরাজুরিতে পেরে ওঠেনি আজ। না আসলে দেখা যেত মন খারাপ করে বসে থাকতো। তাই অগত্যা আসতে হলো ওকে।
গিয়াস নূরের বিরক্তি ভরা চেহারা দেখে বলল,
–কীরে মামা! এমনে পোকা ধরা বেগুনের মতো মুখ বানায় রাখছস ক্যান? মাথায় কলেরা হইছে নি?
নূর কটমটে চোখে তাকালো গিয়াসের দিকে। তা দেখে গিয়াস মেকি হেসে বলল,
–হে হে, এমনে তাকাস ক্যা? পরাণডা হাতে চইল্লা আসে তো। পরাণ ছাড়া পরাণ প্রিয়ারে পরাণ ভরা ভালোবাসা দিমু কেমনে?
— গ্যাসের বাচ্চা, তোর পরাণ কিতাব বন্ধ না করলে এখুনি তোর পরাণের পাকোড়া বানিয়ে তোকেই খাওয়াবো আমি।
–সাথে চিলি সস দিস, খাইতে টেস্টি লাগবো। আরে চিল করনা মেরি মা। এতো রাগোস ক্যা?সবসময় এতো লোহার মতো শক্ত না থেকে একটু স্পঞ্জ মিষ্টির মতো সফটও তো হতে পারিস। দেখ কতসুন্দর জায়গায় আইসস। শপিং মলে আসলে নাকি মাইয়াগো মহারাণী মহারাণী ফিলিং হয়। আর তুই কেমন মাইয়া যে শপিং মলে আইসাও বিরক্ত হস।মাইয়ারা জানলে তোর এই ঘোর অপরাধের জন্য তোরে নারী জাতি থেকে বহিষ্কার করে দিবে। আমারতো তোর ভবিষ্যত জামাইর লাইগা বহুত মায়া হইতাছে। বেচারা জানেই না তার কপালে তোর মতো ডাইনোসরদের সরদারনী অপেক্ষা করছে। আহারে, বেচারাকে আমার তরফ থেকে হৃদয়ের অন্তরস্থল থেকে নিংড়ানো সহানুভূতি।
গিয়াসের বলা জামাইয়ের প্রসঙ্গ শুনে হঠাৎ করেই যেন আদিত্যর কথা মনে এসে গেল নূরের। সাথে সাথেই নিজের মনকেই রাম ধমক দিলো নূর। আজকাল বেশি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে মনটা। কিসব আলতো ফালতু খেয়াল টেনে আনে। সব এই গ্যাসের বাচ্চার জন্য হয়েছে। গিয়াস ওর মতো করে বলেই যাচ্ছে,
–ইয়ার আমার না খুব জানতে ইচ্ছে করে তুই বাসর রাতে কী করবি। আমারতো এখুনি ভিজ্যুয়াল আসছে, তুই তোর জামাইর কলার ধইরা কইতাছস “ওই জামাইয়ের বাচ্চা জামাই তোর সাহস কি করে হলো আমার গায়ে হাত দেওয়ার! আইজ তোর বাসরের শখ মিটাই দিমু আমি। ” বাসর রাতেই জামাই মারার ইতিহাস করার মতো মহান নারী হিসেবে পরিচিত হবি তুই।
নূর দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
–জামাইয়ের কথাতো জানি না। তয় কাল সকালে নিজের মৃ,ত্যু,র সংবাদ হতে না চাইলে এখুনি অফ যা। নাহলে জীবনের মনে অফ করে দিবো তোকে।
–না না এতো মেহনত করার দরকার নেই তোর। তুই বরং এখানে বসে থাক আমি একটু আমার গফের জন্য কিছু কিনে আনি। দেখি একখান চুমু নেওয়ার জন্য কোনো গিফট পাই কিনা।
বলেই উঠে গেল গিয়াস। শিখা সেই কখন থেকে এটা ওটা দেখে বেড়াচ্ছে। নূরের বিরক্ত লাগছিলো তাই সে কাউন্টারের সামনে সোফায় বসে অপেক্ষা করছে। তাড়াতাড়ি এসব শেষ হলে বাঁচে ও।
মায়ের সাথে শপিংয়ে এসেছে আহানা। রেহনুমা এসেছে বাসার কিছু কেনাকাটা করতে আর আহানা এসেছে নিজের জন্য কিছু নিতে। তাদেরকে দেখেই মলের ম্যানেজার নিজে এগিয়ে এলো। সুপারস্টার আদিত্যর মা বোন বলে কথা। আর তাছাড়া তারা এই মলের পরিচিত ভিআইপি কাস্টোমার। তাই তাদের সম্মানের সহিত ভেতরে নিয়ে এলো ম্যানেজার। স্টাফদের অর্ডার দিলো ঠান্ডা এনে দিতে। সোফায় বসিয়ে ঠান্ডা কোল্ড ড্রিংকস দেওয়া হলো তাদের। ওদের থেকে কিছুটা দূরেই নূর বসে ছিলো। এসব দেখে মনে মনে হাসলো সে।
আহানা ক্লোথ সেকশনে গিয়ে নতুন ডিজাইনার কিছু কালেকশন খুঁজতে লাগলো। লাইন করে হ্যাঙ্গারে ঝুলানো পোশাক গুলো দেখছিল সে। হঠাৎ ওপাশ থেকে কারোর পরিচিত কন্ঠ কানে এলো। আহানা হ্যাঙ্গার একটু সরিয়ে সামনে তাকালো। এবং যা ভেবেছিল তাই। সামনেই একজন সুন্দরী রমনীর হাত ধরে ফ্ল্যাট করছে আবির। সে বলছে,
–জানো তোমাকে না দেখলে আমি জানতামই পৃথিবীতে আসল সৌন্দর্য কী। সত্যিই বলছি তোমার সৌন্দর্যে কলিজা পুড়ে যাচ্ছে আমার। একটু ফায়ার ব্রিগেড হয়ে আগুন নিভিয়ে দাওনা। নাহলে যে মরে যাবো।
আবিরের কথায় মেয়েটা যেন গদগদ হয়ে একেবারে ফালুদা হয়ে গেল। মেজাজ বিগড়ে গেল আহানার। এখানেও এই লোক! অসহ্য। আবির দেখার আগেই ওখান থেকে সরে যেতে চাইলো আহানা। এই লোকের সামনেই পড়তে চায়না ও। কিন্তু বিধিবাম, তখনই রেহনুমা এসে আবিরকে দেখে ফেলে বলল,
–আরে আবির,তুমি এখানে!
রেহনুমার ডাকে সেদিক তাকালো আবির। চোখ গেল আহানার ওপরও। যথারীতি বাঁকা হাসলো সে। তারপর ওর সামনে থাকা মেয়েটাকে কিছু বলে এগিয়ে এলে ওদের কাছে। রেহনুমার উদ্দেশ্যে হাসিমুখে বলল,
–আরে আন্টি, মাই ফেবারিট লেডি। হাউ আর ইউ?
–ভালো। তা তুমি এখানে? শপিং করতে এসেছ নাকি?
–না না আন্টি, আসলে এই মলে আমার নতুন কালেকশনের প্রদর্শন করা হয়েছে। সেই জন্যই এসেছি।
–ওয়াও তাহলে তো ভালোই হলো। আহানাও নতুন কালেকশন দেখতে এসেছে। তুমি ওকে বরং নতুন কিছু ড্রেস দেখাও। আমি ততক্ষণে অন্য সেকশনে ঘুরে আসি।
আহানা মানা করতে চেয়েও পারলোনা। রেহনুমা মানবেনা তার কথা। আবির ঘাড় কাত করে আহানার দিকে তাকিয়ে বলল,
–সিওর আন্টি।
রেহনুমা চলে গেলে আবির আহানার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
–আসার আর সময় পেলিনা! এখুনি টপকাতে হলো তোর! আরেকটু হলেই কাজ হয়ে যাচ্ছিল। পুরো দশ মিনিট ধরে ফ্ল্যাট করার ফল পেতেই যাচ্ছিলাম তখুনি কাবাবে হাড্ডি হতে হলো তোকে? আরে অন্তত কিসিং সীনটাতো কমপ্লিট হতে দিতি। পুরো মেহনতে তিব্বত কদুর তেল ঢেলে দিলি।
আহানা রাগে কড়মড় করে বলল,
–মলটা আপনার একার না।আমার মন চাইছে এসেছি আপনার তাতে কী? দরকার নেই আপনার হেল্পের। আমি নিজেই দেখে নিবো।আপনি যান আপনার অসমাপ্ত মহান কাজ পূরণ করুন গিয়ে।
–হ্যাঁ যাতে আন্টির সামনে আমার ইমপ্রেশন খারাপ হয়ে যায় তাইনা? তোর ষড়যন্ত্র আমি বুঝিনা ভেবেছিস? কুফা হয়ে এসে আমার বানানো কাজতো বিগড়েই দিয়েছিস। এখন আবার আন্টির সামনে আমার ইম্প্রেশন খারাপ করার যে অসাধু কূটনীতি পরিকল্পনা করেছিস তা আমি সফল হতে দিবোনা। এখন তাড়াতাড়ি কর,যাতে আমি আমার অসমাপ্ত কাজ পূরণ করতে পারি। তোর কারণে উপস থাকতে পারবোনা আমি।
–ছিহহ্,ভাষার কী শ্রি। আপনি টায়ার্ড হন না এসব নোংরা কাজ করে করে? একই জিনিস আর কতো করবেন?
আবির করুন ভঙ্গিতে বলল,
–হুমম,টায়ার্ড তো অনেক হয়ে যাই।এতো এতো গার্লফ্রেন্ড গুলোকে একা হাতে মেইনটেইন করা তো চারটে খানি কথা নয়। ঘাম ছুটে যায় আমার। কিন্তু কী আর করার। পরিশ্রম তো করতেই হবে। কষ্ট ছাড়া কী কেষ্ট মেলেরে পাগলা। হার্ড ওয়ার্ক ইজ দ্য কি অফ সাকসেস। পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি বুঝেছিস। তোর মতো আলসের ঢেঁকি এসব বুঝবিনা।
আবির আহানাকে ডিজাইনার ড্রেস দেখাতে নিয়ে এলো। ড্রেস দেখিয়ে দায়সারা ভাবে বলল,
–নে কী দেখবি দেখ। বাই দা ওয়ে হঠাৎ ডিজাইনার ড্রেস এন অল।ঘটনা কী! ডেটিং ফেটিং শুরু করেছিস নাকি?
–একদম বাজে কথা বলবেন না। সবাইকে নিজের মতো ক্যারেক্টর লেস ভাববেন না। পরশুদিন আমার ফ্রেন্ড রিসার বার্থডে। সেই ফাংশনের জন্য ড্রেস নিতে এসেছি।
–হুমম,তো ডিজাইনার ড্রেস পড়ে পার্টিতে ক্যাটরিনা কাইফ হতে চাচ্ছিস। কিন্তু তাতে কী লাভ হবে? যাতোই ঘষামাজা কর, লাগবে তো তোকে জরিনা বানুই।
আবির একটা ড্রেস দেখিয়ে বলল,
–এইটা নে, তোর ওপর ভালো মানাবে। পুরো টিকটিকি লাগবে তোরে। দেয়ালে চিপকে গিয়ে মশা গুলো খেয়ে ফেলবি। ডিনারের ডিনারও হয়ে যাবে সাথে ফ্রীতে জনসেবাও হয়ে যাবে। দেখেছিস কী ফাটাফাটি আইডিয়া দিলাম! ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই। তুইতো জানিসই আমার উদার মন। বাহবা পছন্দ না আমার।
রাগে শরীর রিরি করছে আহানার। এতো খারাপ লোক হয় কী করে? ঘৃণায় চোখ মুখ বিতৃষ্ণায় ভরে উঠল। এতো সুন্দর মুডটা পুরো তছনছ করে দিলো লোকটা। ইচ্ছে তো হচ্ছে বুর্জ খলিফার ওপর থেকে এই জঘন্য লোকটাকে ছুড়ে মারতে।মায়ের জন্য ফেঁসে গেছে এখানে। আহানার এই ঘৃণায় ভরা চোখের দৃষ্টির অগ্নি দেখে হাসলো আবির। এটাই যেন তার অদম্য চাওয়া। অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আহানার একটা ড্রেসে নজর পরলো। পার্পল কালারের গাউন টা তার মনে ধরে গেল। আবির সেটা লক্ষ্য করে বলল,
–এই এই দেখ,ওই ড্রেসটা নিসনা একদম। তোর মতো টিকটিকির জন্য এই ড্রেস না। এসব গর্জিয়াছ ড্রেসতো আমার হটি নটি গার্লফ্রেন্ডদের জন্য। তাদের হট ফি,গা,রের সাথে এই ড্রেসটা একেবারে ভরা জোছনার আলোর মতো ঝিলিক মারবে। তুই খবরদার এই ড্রেসের দিকে নজরও দিবিনা।
স,য়,তা,নি হাসি ফুটে উঠল আহানার ঠোঁটের কোণে। এখন তো যা কিছু হয়ে যাক, সে এই ড্রেসটাই নিবে। দেখি কে ঠেকায় ওকে। আহানা সেলসম্যানের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওই ড্রেসটা প্যাক করে দিতে বললো। আবির এগিয়ে গিয়ে বলল,
–এই তোকে মানা করলাম না এটা নিতে!
আহানা এটিটিউট দেখিয়ে বলল,
–তো??? আমার পছন্দ হয়েছে আমি নিবো। আপনি কী বললেন না বললেন, আই কেয়ার আ ড্যাম।
বলেই চলে গেল আহানা। পেছন থেকে নিঃশব্দে হাসলো আবির। গাঁধিটা জানেই না এই ড্রেস আবির ওরজন্যই স্পেশালি ডিজাইন করেছে।
__
নূর বিরক্তির চরমে। এই শিখার এখনো আসার নাম নেই। আর পাঁচ মিনিট হলে ও উঠে চলে যাবে নির্ঘাত। অধৈর্য হয়ে এদিক ওদিক নজর বোলাচ্ছিল নূর। হঠাৎ কিছু চোখে পড়লো তার। মলের একটা সেলসম্যান কাস্টোমারকে পারফিউম দেখাচ্ছে। কাস্টোমার পারফিউমটা হাতে নিয়ে দেখতে গিয়ে ভুলবশত সেটা তার হাত থেকে পরে গিয়ে ভেঙে যায়। সাথে সাথে সুপারভাইজার সহ আরও কয়েকজন স্টাফ এগিয়ে আসে ওখানে। কীভাবে ভাঙলো জানতে চাইলে কাস্টোমার লোকটা ফট করে নিজের দোষটা বেচারা সেলসম্যানের উপর চাপিয়ে দিলো। সুপারভাইজার সেলসম্যানকে ইচ্ছেমতো বকাঝকা করতে লাগলো। সেলসম্যান বলছে সে ওই কাজ করেনি কাস্টোমার লোকটা করেছে। কিন্তু বেচারার কথা কেউ শুনছে না। বরং উল্টো কাস্টোমারকে দোষ দেওয়ার কারণে সুপারভাইজার তার গালে একটা চড় লাগিয়ে দিলো। যা মেজাজ বিগড়ে গেল নূরের। চোখের সামনে অন্যায় দেখে চুপ থাকতে পারলোনা সে। উঠে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল ওদের দিকে। ওখানে এসে সুপারভাইজারের উদ্দেশ্যে বলল,
–এইযে মিস্টার সুপারভাইজার, আপনি শুধু শুধু মারলেন কেন উনাকে? উনিতো ঠিকই বলেছে, পারফিউম এই কাস্টোমার ভেঙেছে, সেলসম্যান নয়।
কাস্টোমার লোকটা তেতে উঠে বলল,
–এই মেয়ে কী বলছ তুমি এসব? আমাকে কী তোমার মিথ্যেবাদী মনে হয়? তুমি জানো আমি কে? সুপারভাইজার সাহেব,কী হচ্ছে এসব? আপনাদের মলের স্ট্যান্ডার্ড কী দিনে দিনে কমে যাচ্ছে নাকি? আজকাল রাস্তাঘাটের ফকির মিসকিনরাও মলে চলে আসছে?
এবারতো মাথা পুরোই হাই ভোল্টেজ হয়ে গেল নূরের।তেড়ে গিয়ে খপ করে কাস্টোমার লোকটার কলার ধরে ঝাকিয়ে ক্ষিপ্ত স্বরে বলল,
–কাকে ফকির মিসকিন বলছিস তুই হ্যাঁ! তোর মতো অমানুষের চাইতে রাস্তার ফকির মিসকানরাও অনেক ভালো। টাকা আছে বলে কী মানুষকে মানুষ মনে হয়না তোদের? গরীব মানুষদের ওপর নিজের দোষ চাপিয়ে দিতে একটুও বাঁধে না তোদের তাইনা? আবার উল্টো দাপট দেখাচ্ছিস? তোর দাপটের পাপর ভাজা না বানিয়ে দিয়েছি তো আমার নামও নূর না।
বলেই পেট বরাবর এক ঘুষি মেরে দিলো নূর। অবস্থা বেগতিক দেখে স্টাফগুলো নূরকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। এরই মাঝে গিয়াস আর শিখাও চলে এসেছে। নূরকে দেখে তাদের মাথায় হাত। দ্রুত এসে ওরা নূরকে ঠেলে সরিয়ে আনলো। সুপারভাইজার বলল,
–প্লিজ ম্যাম মারামারি বন্ধ করুন। নাহলে আমরা পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।
নূরও প্রতিবাদী হয়ে বলল,
–হ্যাঁ হ্যাঁ ডাকুন পুলিশ। আর পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখান। তারপর দেখেন দোষ টা কার।
এবার কাস্টোমার লোকটা একটু দমে গেল। এমনিতেও মারখেয়ে তার অবস্থা কাহিল। তাই আর ঝামেলা না বাড়িয়ে নিজের দোষ স্বীকার করে নিলো সে। সেলসম্যান কৃতজ্ঞতা জানালো নূরকে। গিয়াস আর শিখা কোনরকমে নূরকে টেনে নিয়ে গেল ওখান থেকে। তবে কিছুটা দূরে সোফায় বসে সবকিছুই দেখলো রেহনুমা বেগম। ওদের কথা শুনতে না পেলেও মেয়েটার মারামারি দেখে সে অসন্তুষ্ট চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
–ছি ছি কেমন বখাটে মেয়েরে বাবা। যেখানে সেখানে অভদ্রের মতো মারামারি করে বেড়ায়। সো আনকালচারড গার্ল।
বিড়বিড় করে বললেও পাশ থেকে ঠিকই শুনতে পেল আহানা। সেও নূরের কান্ড দেখেছে। আর এই নূরই যে তার ভাইয়ের ভালোবাসা সেটাও চিনতে ভুল হয়নি তার। মনে মনে আপসোস হচ্ছে ভাইয়ের জন্য।প্রথমেই মায়ের মনে নূরের প্রতি যে নেতিবাচক প্রভাবটা পড়লো, নাজানি ভাইয়ের কপালে কী আছে। এখনতো উপরওয়ালাই সহাই ভাইয়ার।
চলবে…..