শ্রাবণ কিংবা ফাগুন একটুখানি বর্ষণ পর্ব-০২

0
471

#শ্রাবণ_কিংবা_ফাগুন_একটুখানি_বর্ষণ
প্রভা আফরিন
[২]

শ্রাবণের ছন্নছাড়া প্রকৃতি তপ্ততা খসিয়ে নরম হয়ে উঠছে। আকাশের গায়ে লেগেছে মেঘের মিলনমেলা। তার ছোঁয়া বোধহয় টুকটুকির মনেও খানিক লেগেছে। দিনের দ্বিতীয় বাজে ঘটনায় তার গমরঙা মুখখানা থম থম করছে। একজন পুরুষ তাকে এভাবে উপেক্ষা করে চলে গেল? সে এতটাই অগ্রাহ্য করার পাত্রী? নিশীথের হঠাৎ আসা এবং অপমানিত প্রস্থান টুকটুকির মুখে মেদুর ছায়াপাত করেছে। রিতা আন্টি মিশুক ও গল্পপাগল একজন মানুষ। আর উনার ইঞ্জিনিয়ার ছেলে এমন সহবত জ্ঞানহীন? টুকটুকির শিরায় শিরায় সুক্ষ্ম এক বি’ষের য’ন্ত্রণা আলোড়িত হয়।

রিতা আন্টি বিধবা মহিলা। বছরদুই আগে তাদের বাড়ির পাশের ফাঁকা পড়ে থাকা বাড়িটা প্রবাসী দম্পতির কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। মেরামত করে থাকতেও শুরু করেছেন। টুকটুকি গল্পগুজব পছন্দ করা মেয়ে। তারওপর নতুন প্রতিবেশী পেয়ে বেশ আগ্রহের সাথেই মিশেছিল। মহিলা একা বাড়িতে কাজের লোক নিয়ে থাকেন বলে গল্প করার মানুষ পেয়ে টুকটুকিকে সহজেই আপন করে নিয়েছিলেন। সেখানে নিত্য যাতায়াতেই টুকটুকি জানতে পারে রিতা আন্টির এক মেয়ে ও এক ছেলে আছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে আরো তিন বছর আগে। আর ছেলে হলো বুয়েট পাশ ইঞ্জিনিয়ার। চট্টগ্রামে চাকরি করে। চেষ্টা করছে ঢাকায় ভালো জব পেলে চলে আসার। যুতসই হচ্ছে না। আন্টির মেয়ে নিতুর সাথে টুকটুকির সখ্যতা ঘটলেও আশ্চর্যের বিষয় হলো গত দুবছরে টুকটুকি নিশীথের মুখোমুখি হয়নি। তাদের কখনো দেখাও হয়নি। নিশীথ নাকি ছুটিছাটা খুবই কম পায়। আর বাড়ি এলেও রুম ছেড়ে বেরোয় না। খুবই ঘরকুনো ধরনের। টুকটুকি শুধু ছবিতে দেখেছে লোকটাকে। অনুভবের মতো দেখা মাত্রই চোখে গেঁথে যাওয়ার মতো সুন্দর না হলেও চার্মিং একটা ব্যাপার আছে যা অগ্রাহ্যও করা যায় না। অজানা মানুষটাকে টুকটুকির বেশ ভালোই লেগেছিল। মনে মনে খানিক ইচ্ছেও পোষণ করেছে একদিন আলাপ করবে। রিতা আন্টির বাড়িটা বড়ো ও ফাঁকা হওয়ায় উনার ভাইজির বিয়ের আয়োজনটা তাদের বাড়ি থেকেই করা হয়েছে। সেই বিয়েতে প্রথম সাক্ষাৎ এই আলাপের নমুনা? কথা তো দূরে থাক তাকালও না। টুকটুকি গোমড়া মুখে অনুভবকে বলে,
“আমায় দেখতে কেমন লাগছেরে, শিকু?”

অনুভব এক ভ্রু উঁচু করে টুকটুকিকে পরখ করে নেয়। এরপর বলল,
“একদমই ভালো না। মনে হচ্ছে ডোবা থেকে উঠে বিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেছিস। ইয়াক!”
“সিরিয়াসলি বল না।”
টুকটুকির মুখ করুণ দেখায়। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে ও একটু বেশি সংবেদনশীল। অনুভব বুঝতে পেরে বলল,
“আরে মজা করেছি। সুন্দরই তো লাগছে।”
“প্রথমবার দেখলে চোখে লাগার মতো সুন্দর?”
“হঠাৎ এই প্রশ্ন? তুই তো জীবনেও নন্দিনীর মতো সৌন্দর্য নিয়ে মাথা ঘামাস না। তাহলে আজ?”
“ওই নিশীথ আমাকে উপেক্ষা করে চলে গেল দেখলি না। সামান্য হাই হ্যালো পর্যন্ত বলল না। আমি কী আসলেই উপেক্ষা করার মতো দেখতে?”
অনুভব ভ্রু উঁচু করে ওকে পরখ করে হেসে ফেলল।
“এমন ছোটোখাটো বিষয়ে আপসেট হচ্ছিস কেন? ওই ছেলে তো বিশেষ কেউ না যে এত ভাবতে হবে। বাতাসে অন্যরকম গন্ধ পাচ্ছি যে?”
টুকটুকি নিজেকে সামলে নেয়। বলল,
“কোনো গন্ধ নেই। জাস্ট ইগনোর করায় একটু ইগোতে লেগেছে।”
“শিওর?”
“হুম। অথবা আমিই বোধহয় বেশি বেশি ভাবছি। আজকের দিনটাই আমার জন্য ভালো না।”

দিগন্ত ও নন্দিনী গেছে খাবারের দিকটা দেখতে। কনে পার্লার থেকে ফেরেনি বলে স্টেজ ফাঁকা। চারিদিকে ছোটাছুটি বেড়েছে। পাত্রপক্ষ এলো বোধহয়। অনুভব একটা চেয়ার টেনে স্টেজের পাশে বসিয়ে দিল টুকটুকিকে। হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে ওর পায়ের গোড়ালি পরখ করতে নিলে টুকটুকি ব্যথায় গুঙিয়ে উঠল,
“আরে শিকু, পা-কে একেবারে যমের দুয়ারে পাঠাবি নাকি?”
অনুভব বলল আইসপ্যাক লাগাতে পারলে আরাম পেতিস। বিয়ে বাড়িতে তা কই পাই? তুই বরং হাঁটাচলা করিস না। এখানেই বসে থাক। আরাম লাগবে।”
“আর তুই কী করবি? ওই দুইজন তো খাবারের পেছনে ছুটেছে।”

অনুভব কলার ঝাকিয়ে চোখ টিপল। বলল,
“দেখ দোস্ত, নীল জামা পরা মেয়েটা বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছে। ডেট একটা জুটলেও জুটতে পারে।”
টুকটুকি সামনে তাকায়। অল্পবয়সী গোলগাল একটি মেয়ে ঘুরেফিরে দেখছে অনুভবকে। অনুভবও দৃষ্টি ফেরত দিতে ভুলছে না। টুকটুকি দীর্ঘশ্বাস ফেলে কপাল চাপড়ায়। স্বগতোক্তি করে বলে,
“হায় কপাল! একজন এসেছে এক্সের বিয়ে খেতে, আরেকজন সেই বিয়েতে ফ্লার্ট করার মেয়ে খুঁজছে। এদিকে আমি বিয়েতে আসতে নিয়েই পায়ের চৌদ্দটা বাজিয়েছি। ওদিকে খানিক বাদে ইকরিকে দেখে বরেরও চৌদ্দ দুগুণে আঠাস বাজবে।”
পরের কথাটা টুকটুকি মনে মনে বলল, “আর এই বিয়েতেই এক লোক জীবনে প্রথমবার অকারণে, কোনোরকম সৌজন্যবোধ ছাড়াই উপেক্ষা করে চলে গেল!”
টুকটুকি পুনরায় শব্দ করে বলল,
“হয় এই বিয়েটা একটা কুফা নয়তো বিয়েটা হচ্ছেই এক কুফামার্কা দিনে।”

নন্দিনী ও দিগন্ত এলো দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে। বোঝাই যাচ্ছে একদফা খাওয়ার পর্ব সেড়েও এসেছে। টুকটুকি অভিমানী হয়ে বলল,
“আমি তোদের দাওয়াতে আনলাম আর তোরা আমাকে ফেলে খাওয়া-দাওয়া সেড়ে ফেললি? তুই কী রাক্ষস রে হালুম?”
দিগন্ত ঢেকুর তুলে আয়েশ করে পাশে বসল। বলল,
“পেট ভরে খাইনি। তোদের সাথে খাব বলে জায়গা অর্ধেক ফাঁকা রেখেছি। আসলে ইকরি এত জোর করল যে ফেরাতে পারলাম না।”
নন্দিনী মুখ ঝামটা দিল,
“ফ’ই’ন্নির পোলা, আমি কখন জোর করছি তোরে? নিজেই না কইলি, আমি একলা খাইলে নাকি ব্যাপারটা ভালা দেখায় না। মাইনষে ছোঁচা ভাবতে পারে। বন্ধুর বদনাম রুখতে আমারে সঙ্গ দিছোস। কস নাই?”

দিগন্ত নন্দিনীর এই গা-লিটা ভীষণ অপছন্দ করে। শোনা মাত্রই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে,
“ইকরির বাচ্চা, ভরা বিয়ে বাড়িতে এইসব অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করবি না।”
“আরে মামা চেতোস ক্যা? এইটা হইতাছে আমার ঝুলির সবচেয়ে সুশীল গা-লি। বাপের টেকা থাকলেই বুঝি তোরে বড়োলোকের পোলা কওন লাগব?”
দিগন্ত ক্ষেপে কিছু বলতে যাচ্ছিল। অনুভবের উচ্ছ্বসিত উপস্থিতি তাতে ভাটা ফেলল। অনুভব দাঁত কেলিয়ে বলল,
“দোস্ত, কাম তো হয়ে গেছে।”
“কী হইছে?”
“ওই যে নীল নীল নীলাঞ্জনা, যদিও চোখদুটো মার্বেলের মতো। অনুভূতি খেলে না। তার সোশ্যাল একাউন্ট পেয়ে গেছি। একটু ফ্লার্ট করতেই গলে পানি। সামনের সপ্তাহে ডেট ফাইনাল। এবার যদি কিছু হয়।”

অনুভবের কথায় ওরা তিনজন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। এরপর একসাথে কপাল চাপড়াল। অনুভব বলল,
“কী হলো দোস্ত? তোরা আমার আনন্দে খুশি না?”
নন্দিনী হতাশ শ্বাস ফেলে অনুভবের কাঁধে হাত রেখে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“ওই যে কইলা মাইয়ার চোখে অনুভূতি খেলে না। তোমার ডেট ফ্লপ হওয়ার জন্য ওই একটা কারণই যথেষ্ট। তুমি তো বন্ধু নিখুঁত মাইয়া চাও।”

অনুভব মৌন রইল। সে মানুষটা ভীষণ চুজি এবং খুঁতখুঁতে। ভার্সিটি লাইফের শুরু থেকেই তার প্রেমের প্রতি তীব্র ঝোক। অথচ ফাইনাল ইয়ারে পদার্পণ করেও মনের মতো মেয়ে তার কপালে জোটেনি। এমন নয় যে কাউকে পছন্দ হয়নি। পছন্দ হয়। একটা দুইটা ডেটও হয়। কিন্তু খুঁতখুঁতে স্বভাবের জন্য রিলেশনশিপে জড়ানো অবধি এগোতে পারে না। অনুভবের মতে প্রেম হলো মনের অন্দরমহলের সবচেয়ে সুন্দরতম আরাধ্য বিষয়। আর সেই প্রেমের স্বাদ সম্পূর্ণ রূপে প্রাপ্তিলাভ করতে হলে একজন নিষ্ঠাবতী প্রেমিকা দরকার। যা সে তেইশ বছরের জীবনে হারিকেন দিয়ে খুঁজেও পায়নি। প্রত্যেকের মাঝে কোনো না কোনো দোষ বা ত্রুটি সে খেয়াল করে। অতঃপর সেখানেই যাত্রা স্থগিত। অথচ এই অনুভবের কপালেই তিনটে আজব কিসিমের বিশাল বিশাল ত্রুটিপূর্ণ বন্ধু জুটেছে। এবং হয়ে উঠেছে আত্মার অবিচ্ছেদ্য অংশ। মানবজীবনে কিছু বিষয় অত হিসেব করে হয় না। হয়না কোনো নিয়মের অন্তর্ভুক্ত। খাটে না যুক্তির প্রাধান্য, মানে না শাসন-বারন। তবুও হৃদয়ের অত্যন্ত নিকটে রয়। তাদের বন্ধুত্বটাও সেরকমই। কীভাবে যেন মনের অলক্ষ্যে হয়ে গেছে।

বরযাত্রী এসে গেছে। চারিদিকে হৈহৈ রৈরৈ। নন্দিনী ছাড়া বাকি তিনজনের মাঝে একটু চাঞ্চল্য খেলে গেল। কানের পাশে বয়ে যায় চিকন ঘামের রেখা। নন্দিনী নির্বিকার ভঙ্গিতে বলল,
“চিল ভন্ডুরা। আমার তো ছোটোকালের টুকপলান্তিস খেলার কথা মনে পড়তাছে। নিজের ইচ্ছায় লুকানো মানুষরে খুঁজতে হইত দেইক্ষা খেলাডা আমি মোটেও পছন্দ করতাম না। আজকাল ওই খেলাই আমার কাছে বহুত মজার। এহন একটু পলাইয়া থাকি। বউ নিয়া যখন স্টেজে বইব তহন গিয়া চমকায় দিমু।”

বলে নন্দিনী মাথায় ঘোমটা তুলে নিজেকে আড়াল করে বসল। বাকিরা মনে মনে উত্তেজিত, ভীত। বিয়ে বাড়িতে বিরাট কোনো ঝামেলা না বাধে। তারা একটু দূরে বসে আছে সহসাই চোখে পড়ার সম্ভাবনা নেই। ওদের চার বন্ধুর দলকে সিসিমপুরের মূল চরিত্রদের সঙ্গে নামাঙ্কিত করার মহান কারিগর টুকটুকি। জন্মগত নাম টুকটুকি হওয়ায় নিজের পছন্দের “১ ২ ৩ সিসিমপুর” এর চরিত্রদের নামানুসারে বাকি বন্ধুদের নামকরণ করেছে। দিগন্ত খেতে ভালোবাসে তাই তার নাম হালুম, অনুভব চালাক বলে শিয়ালের সঙ্গে মিলিয়ে শিকু। আর নন্দিনীর বৈশিষ্ট্য কারো সঙ্গেই মেলে না। কিন্তু অবশিষ্ট নাম ইকরি মিকরি থাকায় সেটাই তার কপালে জুটেছে। প্রথম প্রথম টুকটুকির দেওয়া আহ্লাদী নামগুলোকে সকলে একটু তাচ্ছিল্য করলেও ডাকতে ডাকতে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেল। ওদের বন্ধুত্বের সূচনা ঠিক কবে থেকে নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। প্রথমে বন্ধুত্ব হয়েছিল অনুভব ও টুকটুকির৷ ইন্টারমিডিয়েট লেভেলে তারা একই সঙ্গে সিটি কলেজে পড়াশোনা করেছে। নন্দিনী পড়াশোনা করে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে। অন্যদিকে দিগন্তের ব্যাগ্রাউন্ড নটরডেম কলেজ। নন্দিনী স্বভাবে অত্যাধিক দুষ্টু হওয়ায় ভার্সিটির ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে নিজেকে ডিপার্টমেন্ট-এর সিনিয়র দাবী করে দিগন্তকে র‍্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করে। ধরা পড়ে গেলে দুজনের মাঝে তুমুল ঝগড়া বাধে। সেই ঝগড়ায় মধ্যম দল হিসেবে আবির্ভাব হয়েছিল টুকটুকির। নাক ফোলানো দিগন্ত ও উড়নচণ্ডী, আনপ্রেডিক্টেবল স্বভাবের নন্দিনীকে কোনো কারণ ছাড়াই তার মনে ধরে গিয়েছিল। উভয়ের মাঝে মধ্যস্থতা করতে গিয়ে দুজনেরই বন্ধু হয়ে যায় টুকটুকি। তার সূত্রে অনুভব। দিগন্ত ও নন্দিনীর সম্পর্ক ছিল সাপে নেউলে। দিগন্তকে দেখলেই নন্দিনী হুট করে ভড়কে দিতে বলত,
“তোর প্যান্টের চেইন খোলা।”
পাবলিক প্লেসে দিগন্তকে অনেকবার বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে মেয়েটার জন্য। ওর কাঁদো কাঁদো মুখখানা দেখে নন্দিনী খিলখিল করে হেসেছে। তবে দিগন্ত কখনো নন্দিনীকে বিব্রত করতে পারেনি। মেয়েটার মাঝে মানব চরিত্রের দুর্বল স্বভাবগুলোর বড়োই ঘাটতি। একে-অপরের পেছনে লাগার অদম্য চেষ্টাই কখন যে তাদের বন্ধুতে পরিণত করেছে কেউই টের পায়নি। ফাইনাল ইয়ারের এসেও সেই বন্ধুত্ব ছুটে যায়নি। আর না গিয়েছে পেছনে লাগার স্বভাব।

কনের ফটোশুট হতে হতে রিতা আন্টি একবার টুকটুকিদের দেখে গেলেন। মলম দিয়ে গেলেন পায়ে মালিশ করার জন্য। সেটা টুকটুকিকে বেশ আরাম দিল। বর-কনে একসঙ্গে স্টেজে বসার পর নন্দিনী গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে। অঙ্গভঙ্গিতে বোঝায় সেই সময়টা এসেছে। টুকটুকি দুরু দুরু বুকে ওর পিছু নেয়। রিতা আন্টি সব জেনে গেলে তাকে ভুল বুঝবে কিনা সেই চিন্তা তাকে অস্থির করে দিচ্ছে। এদিকে স্টেজে গিয়ে দেখা গেল নিশীথ বসে আছে সিয়ামের পাশে। তাকে দেখা মাত্র টুকটুকির মুখ থমথম করে উঠল। অজানা এক রাগ ভর করল নাকের ডগায়।

নন্দিনী স্টেজে উঠে নিজের তামাবরন কাঁধটা আবারো মেলে ধরেছে। তাকে দেখেই সিয়ামের চক্ষু কোটর ছেড়ে বেরোতে চায়। যেন এক গভীর জলের মাছকে হুট করে তপ্ত বালিতে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। নন্দিনী চুল নাচিয়ে, অত্যন্ত লাস্যময়ী ভঙ্গিতে সিয়ামের সামনে গিয়ে অবাক হয়ে বলল,
“আরেহ সিয়াম যে! আমাকে দাওয়াত না দিয়েই বিয়ে করে ফেললে?”
নিপা ভ্রু কুচকে দেখছে কাঁধখোলা মেয়েটিকে। সিয়ামের দৃষ্টি এলোমেলো। নন্দিনী ও তার তিন বন্ধুকে একসঙ্গে বেচারা হজম করতে পারেনি। আমতা আমতা করে বলল,
“এসেছোই তো দেখছি।”
“একটা কথা জানতে এলাম।”
“ক…কী কথা?”
নন্দিনী একটু সময় নিয়ে সিয়ামকে সামলে উঠতে দিল। এরপর আঙুলে চুল প্যাচাতে প্যাচাতে রসাত্মক ঠোঁটে বলল,
“তোমার বুকে একটা নখের আঁচড় ছিল। দাগটা মিলিয়েছে?”
সিয়াম ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে। নিপা বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে একবার সিয়াম ও একবার নন্দিনীকে দেখে। এমনকি নন্দিনীর এমন বাক্য ওর বন্ধুদেরও নির্বাক করে দিল। একটু সাসপেন্স আটকে নন্দিনী নির্ভার সুরে বলল,
“ওহহ ডোন্ট বি প্যানিক গাইজ। ওইটা আমার পোষা বিলাইর নখের আঁচড় ছিল।”
টুকটুকি বুকে হাত রেখে চেপে রাখা নিশ্বাস ত্যাগ করে। ফিসফিস করে বলে,
“এই মেয়ে একদিন নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করাবে।”

চলবে…