শ্রাবণ কিংবা ফাগুন একটুখানি বর্ষণ পর্ব-০৪

0
357

#শ্রাবণ_কিংবা_ফাগুন_একটুখানি_বর্ষণ
প্রভা আফরিন
[৪]

এবারের বর্ষা প্রকৃতি মাতাতে একটু দেরিতেই যেন এসেছে। মেঘেদের ছুটোছুটি, বৃষ্টির ঘনঘটা, বাতাসের শীতলতা কিংবা দেহে কম্পন তোলা বজ্রপাত একযোগে বরন করল শ্রাবণরানীকে। বিকেল হতে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল। সন্ধ্যায় সেই ফোঁটা দানবাকৃতির হয়ে ঝমঝম শব্দ তুলল। গাছগাছালির গায়ে সৃষ্টি করল স্পন্দন। মাটির দেহে বইতে থাকে ঘোলাটে স্রোতধারা। নিশীথ বারান্দায় মেলে রাখা কাপড় তুলতে এসে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। নিশীথ ঘরকুনো মানুষ। কর্মক্ষেত্রের বাইরে পৃথিবীটা নিজের ভেতরেই সীমাবদ্ধ করে রাখতে পছন্দ করে। বন্ধুবান্ধবদের আড্ডা এখন ঠিক জমে না। সকলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে। অনেকে দেশে নেই। নিশীথের ইউএস পাড়ি দেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও মায়ের মুখ চেয়ে সেই ইচ্ছেকে দমাতে হয়েছে। এমনিতেই সে দেশে থেকেও রয়েছে দূর শহরে। এ নিয়ে মায়ের বিস্তর অভিমান। তবুও সপ্তাহ বাদে মাকে দেখে যাওয়া যায়। একটু আদর পাওয়া যায়। ভালো থাকতে এবং ভালো রাখতে এটুকুই কম কীসে? তবে নিশীথ প্রাণপণে চেষ্টা করছে ঢাকায় চলে আসার। জার্মান ভিত্তিক একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কথাবার্তা চলছে। ভাগ্য সহায় থাকলে এবার হয়েও যেতে পারে।
কিন্তু এই বৃষ্টিঝরা, রঙওঠা, প্রাচীন গন্ধে মোড়ানো দেয়ালঘেরা বারান্দায় তার মনে ভিন্ন সুর বাজছে। নিশীথ কলেজ লাইফ থেকে তুখোর বিতার্কিক ছিল। বিতর্ক করেছে বাংলাদেশ টেলিভিশনেও। কুড়িয়েছে অজস্র সম্মাননা। সেসব এখন তার কাচ্ছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। দুপুরে এক মেয়ের সাথে তর্ক বাধিয়ে সে জীবনে প্রথমবার ভ্যাবাচেকা খেয়ে এসেছে! এমন অদ্ভুত মেয়ে সে আগে দেখেনি। চেনে না জানে না হুট করেই তাকে অসামাজিক, অ’হং’কারী, নাক উঁচু আখ্যা দিয়ে বসে আছে। আবার বলে কিনা অ’সভ্য! নিশীথের মতো ভদ্র ছেলে জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়ের কাছে এমন সম্বোধন পেল। তাও কিনা কোনোরূপ দো’ষ ছাড়াই। শুনে তখন মাথাটা একটু গরম হয়েছিল বটে। টুকটুকিকে তা’রছ্যা’ড়া মনে হয়েছে। তবে শেষে নন্দিনী যা বলেছে তা একেবারে ফেলে দিতে পারছে না। মেয়েটাকে নিশীথের ভালো লাগেনি। স্বভাবে ঔ’দ্ধ’ত্য আছে। তাচ্ছিল্য খেলা করে চোখের তারায়। জিভে লাগাম নেই। আবার এই স্বভাবের জন্যই মেয়েটার কথা একেবারে অগ্রাহ্য করা যায় না।
সিয়াম নিশীথের খুব একটা ক্লোজ ফ্রেন্ড নয়। চাকরি সূত্রে পরিচয় হয়েছিল বছর দুই আগে। ছেলেটাকে সে ভালোই জানত। তাই খালাতো বোনের সাথে বিয়ের কথা চলছে শুনে সম্মতই হয়েছিল। কিন্তু সেদিন বিয়ের আসরে নন্দিনী যখন রসিকতার নামে হেয়ালি করে বসে, সিয়াম ধরা পড়ার ভয়ে নিশীথের কাছে জানায় নন্দিনী তার এক্স। মেয়েটা ভালো না বলে সম্পর্কটা টেকেনি। বিয়েতে যেন ঝামেলা না করে সেই মর্মে অনুরোধ করে নিশীথের কাছে৷ নিশীথের তখন সবটুকু রাগ গিয়ে পড়ে টুকটুকির ওপর। মায়ের থেকে শুনেছিল দাওয়াতের বিষয়টা। তারওপর বাড়ি ফেরার সময় মেয়েটার মুখে নিজের সম্পর্কে বাজে কথা শুনে রাগ হয়েছিল বৈকি। কিন্তু শেষটা এমন অপমানজনক হবে কে জানত?

নিশীথ ফোন করল সিয়ামের কাছে। সিয়াম ফোন ধরল বিরক্ত স্বরে। বোঝা গেল নবদম্পতি বৃষ্টিদিনের আবেগী আবহাওয়ায় প্রণয়ে মত্ত ছিল। ব্যাঘাত ঘটায় কণ্ঠস্বরে উত্তাপের আঁচ লেগেছে। বলল,
“এ সময় কী দরকার?”
“তোর ব্রেকাপের কারণটা আরেকবার জানতে ইচ্ছে হলো। সেদিন তো ভালো করে শোনাই হলো না।” নিশীথের কণ্ঠস্বর শক্ত। সিয়াম ঘাবড়ায় না। বিরক্ত স্বরে বলল,
“তা তো আগেই বলেছি। ওই মেয়ে একটা ছেলেধরা। ছেলেদের মন নিয়ে ছিনিমিনি খেলাই ওর একমাত্র কাজ। আমি নিজের মনকে ছিনিমিনি খেলতে দিইনি। তাই ব্রেকাপ। এখন এসব কথা উঠছে কেন?”
“জানতে পারলাম তুই নাকি গার্লফ্রেন্ড-এর স্বাস্থ্য নিয়ে ভীষণ সচেতন? শুকনো দেহে হাড্ডির স্পর্শ বেশি বলে মাংসল হতে বলিস?”
“ওয়েট ওয়েট, তোকে এসব কে বলেছে? তুইও কী ওই নন্দিনীর ছিনিমিনি খেলার ফাঁ’দে পা দিয়েছিস?”
“উহুম, ওর কথায় বিশ্বাস করেছি।”
“দোস্ত আমি এখন বিবাহিত। তোর বোন আমার বউ। নিপা কাছেই আছে। এসব শুনে ফেললে দুঃখ পাবে। তুই কী বোনের দুঃখের কারণ হতে চাইছিস?”

নিশীথ অবাক না হয়ে পারে না। যে বিয়ের দিন অবধি মিনমিনে স্বরে কাকুতিমিনতি করেছে আর আজ কণ্ঠে কি দাপট! অথচ এর জন্য সে এক মেয়ের সাথে ঝগড়া পর্যন্ত করে ফেলেছে! নিশীথের মেজাজ চিড়চিড় করে ওঠে।
“নিপাকে পুজি করে ইমোশনাল ব্ল্যা’ক’মেইল করতে চাইছিস? আমার মায়ের বংশকে তুই এখনো চিনিসইনি। যদি ঘূনাক্ষরেও তোর লা’ম্প’ট্য সম্পর্কে টের পায় তবে তোর ক্যারিয়ার নিয়ে ছিনিমিনি নয়, সোজা এক্কাদোক্কা খেলে দেবে। মেয়রের ভাগ্নীর জামাই হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করার আগে জেনে নিস মেয়র তোকে পায়ের তলায় পি’ষেও ফেলতে পারে। শা’লা!”
“দোস্ত, আমি না, তুই আমার শা’লা।” সিয়ামের কণ্ঠ ভেজা শোনায়। নিশীথ ধমকে ওঠে,
“রাখ তোর সম্পর্ক। সময় থাকতে ভালো হয়ে যা। যদি তোর কাজে নিপা কষ্ট পায়, শুধু তোর না, সঙ্গে তোর চৌদ্দ গুষ্টির খবর আছে।”

নিশীথ ফোন কা’টল। সীমাবদ্ধ দুনিয়ায় চলতে চলতে সে ভুলেই বসেছিল এ জগতে ছলনা বাতাসের চেয়েও নিঃশব্দে ঘোরে। কাছের মানুষকেও অচেনা করে দেয়। মাথা ঠান্ডা করতে নিশীথের হুট করে ভিজতে ইচ্ছে হলো। যেমন ভাবা তেমনই কাজ। লম্বা লম্বা পা ফেলে উঠে গেল ছাদে। লোহার দরজা খুলতেই দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির ছাট এসে লাগল গায়ে৷ নিশীথের শরীরে শিহরণ খেলে। শুকনো কাপড় ভিজে লেগে যায় দেহের সঙ্গে। দিনান্তের প্রান্ত ঘেঁষে গড়ানো ধারা মিটিয়ে দেয় সকল গ্লানি। নিশীথ চোখ মেলে তাকায়। গাছগাছালির ফাঁক গলে সামনের বাড়ির ছাদটা আবছা দেখা যায়। কেউ একজন বৃষ্টির আলিঙ্গনে দুহাত মেলে ময়ূরের মতো নাচছে।
_______________

গতরাতের একটানা বৃষ্টিতে প্রকৃতি সিক্ত। সূর্যের তাপ আজ ম্লান। ভেজা পিচঢালা পথ পেরিয়ে একটি ছয়তলা ভবনের সামনে এসে দাঁড়ায় প্রিয়া। গন্তব্য এই বিল্ডিংয়ের থার্ড ফ্লোরে। প্রিয়া একটু জড়োসড়ো হয়ে পা বাড়ায় ভেতরে। লিফটে করে পৌঁছে যায় থার্ড ফ্লোরে। বেরিয়ে যত সামনে এগোয় খেয়াল করে অদ্ভুত জড়তা তাকে গ্রাস করে ফেলছে। কান্না চাপে গলায়। কলিং বেলে চাপ দিতে গিয়ে হাত কেঁপে উঠল। একবার ভাবল ফিরে যায়, পরক্ষণেই নিজেকে দমায়। লম্বা শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে। এরপর কলিংবেল চাপে। দরজা খুলতে সেকেন্ড ত্রিশ সময় লাগল। পরিচিত মুখটাই দেখতে পেল সে। অন্তরা মিষ্টি হেসে বলল,
“তুমি এসেছো?”
প্রিয়া এ ধরনের কথায় বিরক্তবোধ করে সর্বদা। চোখের সামনে একজনকে দেখেও জিজ্ঞেস করে এসেছে কিনা! তবে এখন তার বিরক্তির ধার কেউ ধারবে না। তাকেই অন্যের বিরক্তি সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। বলল,
“এলাম।”
“ভেতরে এসো।”

বোঝা গেল অন্তরা খুবই ব্যস্ত। ভেতরে আসতে বলেই ছুট দিয়ে কোথাও চলে গেল। প্রিয়া আড়ষ্টভাবে চারিদিকে তাকায়। তিন কামড়ার বিশাল ফ্ল্যাট। দেয়ালে দেয়ালে আধুনিকতার ছোঁয়া। প্রিয়ার মনটা হঠাৎ ভার হয়ে আসে। অন্তরা চুল বাধতে বাধতে ফিরে এসে বলল,
“এ বাড়িতে সংকোচ কোরো না। তুমি ভালো ফ্যামিলির জেনেই আমার ছেলেকে তোমার জিম্মায় রাখতে চেয়েছি। ও বেশি জ্বা’লাতন করে না। শুধু একটু টাইমলি খাইয়ে দেবে। চোখে চোখে রাখবে। তুমিও হাত-পা ছড়িয়ে থাকতে পারবে। এসো তোমাকে সব বুঝিয়ে দিয়ে যাই। আজ থেকে কাজে লাগতে পারবে?”
“পারব।”
“খুব উপকার হলো।”

বলে অন্তরা প্রিয়াকে বেডরুমে নিয়ে গেল। বিছানায় ঘুমিয়ে আছে পাঁচ মাসের একটি শিশু। প্রিয়ার কাজ তাকে টেককেয়ার করা। অন্তরা চাকরিজীবী। নয়টা-পাঁচটা জব করে। বাচ্চাকে এতদিন অন্তরার মা দেখে রেখেছিল। তিনি অসুস্থ হওয়ায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে চাকরিজীবী দম্পতিকে৷ অতঃপর পরিচিতের মারফতে এই ফুটফুটে মেয়েটিকে ভাগ্যক্রমে পেয়ে গেল। খুবই সরল স্বভাবের মেয়ে। সিসিটিভি ফুটেজও লাগানো আছে পুরো বাড়িতে। কাজেই ভয়ের কোনো কারণ নেই। অন্তরা বাচ্চার সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বলল,
“কোনোকিছু না বুঝলে মায়ের থেকে জেনে নিয়ো। মা তো অসুস্থ যদি ঘুমিয়ে থাকে তাহলে আমাকে ফোন কোরো। তাছাড়া অনু থাকলে তোমার ঝামেলা কম। বাচ্চাটা অনুর ন্যাওটা খুব। দক্ষিণের রুমটা অনুর। ইমারজেন্সি দরকারে ওকে ডাকবে যদি বাসায় থাকে, কেমন? আমি আসি। তোমার ওপর ভরসা করে গেলাম কিন্তু।”
অন্তরা যাওয়ার আগে প্রিয়ার দুই হাত চেপে ধরে ভরসার স্থানটা বুঝিয়ে দিয়ে গেল।

প্রিয়া দরজা আটকে দিতেই ভেতরের ঘর থেকে ডাক ভেসে এলো। জীর্ণ কণ্ঠ। প্রিয়া অনুমান করে নিল অন্তরা আপার মা ডাকছে। সত্যিই তাই। বৃদ্ধা মহিলা পা ভাজ করে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ছিলেন। প্রিয়া যেতেই তাকে আপাদমস্তক জহুরির চোখে দেখে জিজ্ঞেস করলেন,
“তুমিই সেই মেয়ে?”
“জি?” প্রিয়া বৃদ্ধার দৃষ্টির সামনে একটু সংকুচিত হয়ে যায়।
“আগে কোথায় কোথায় কাজ করেছো?”
“কোথাও না আন্টি।”
“মানে এটাই প্রথম?”
“জি।”
“হায় হায়! অন্তরা এমন আনকোরা মেয়ে ধরে এনেছে? এই মেয়ে তোমার বিয়ে হয়েছে?”
“জি না।”
“তাহলে বাচ্চার যত্নের তুমি কী বুঝবে? হায় কপাল!”
“জি, আমি পারব। আমার ছোটো বোনকে আমিই নিজের হাতে মানুষ করেছি।”
“অত জি জি করো কেন? জি হুজুরি করা চো’রের লক্ষণ। তারওপর কাজের লোকেদের মাঝে একটু চো’র চো’র ব্যাপার থাকে। এরা ছোটো থাকতেই হাত সাফাই শিখে যায়। এরপর বড়োলোকের বাড়িতে আসা-যাওয়া করতে করতে লোভের বশবর্তী হয়ে সেই সাফাই বিদ্যা কাজে লাগায়। তা তুমি বোনকে মানুষ করেছো কেন? মা নেই?”
প্রিয়া উত্তর দেওয়ার আগে তিনিই আবার বললেন,
“ওহহ তোমাদের মায়েরাও তো বাচ্চা নাড়ি থেকে আলাদা হওয়া মাত্রই তাকে ফেলে কাজে ছুটে যায়। আর বাচ্চা মাটিতে গড়াগড়ি করে বড়ো হয়।”
“জি না। আমার মা আপনার মতোই অসুস্থ মানুষ। হাটাচলা করতে পারে না।”
“ওহহ আচ্ছা। তাহলে সংসার কে চালিয়েছে?”
“আমার বাবা।”
“তোমার বাবাও আছে? আমি তো জানি এই জাতের সংসার বাচ্চা পেটে ঢোকা অবধিই টিকে থাকে। এরপর জামাই লাপাত্তা। সংসার টানে মায়েরা। এজন্যই দেখো না কাজের লোক বেশিরভাগ জামাই খেদানো বাচ্চাওয়ালা হয়। হা হা!”

প্রিয়া চুপ রইল। অন্তরা আপার মা তাকে অপমান করছে কিনা নিশ্চিত না হলেও মহিলা যে বাচাল এ নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ রইল না। প্রিয়া স্বল্পভাষী। কাজেই বেশি কথা তার মুখ থেকে বের হলো না। অবশেষে বৃদ্ধা একঝুড়ি আলাপ খান্ত দিয়ে বললেন,
“যাইহোক, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। কথা যত কম বলবে ততই ভালো। আজকাল তো মেয়েরা কাজ করতে এসে এমন চোপা করে যেন আমরা নয় ওরাই আমাদের কাজ করে দয়া করে দিচ্ছে। আরো ভালো লেগেছে তুমি কামের বেটিদের মতো আঞ্চলিক টোনে কথা বলো না। নাহলে আমার নাতিও ওইসব টোন শিখে ফেলত।”

তখনই বাচ্চাটার কান্নার শব্দ কানে বিঁ’ধল। কারো কান্নার শব্দ এত মধুর হয় তা এই মাত্র প্রিয়া অনুধাবন করতে পারল। বৃদ্ধার কবল থেকে ছাড়া পেতেই সে পাখির মতো ফুড়ুৎ করে উড়ে গেল।

ছোটো পুতুলটাকে সামলানো প্রথম প্রথম প্রিয়ার কাছে সহজ মনে হলেও একটু সময় যেতে বুঝল আদতে তা সহজ নয়। বাচ্চা নতুন মুখ ও নতুন কোলে খাপ খাইয়ে নিতে না পেরে একটু পর পরই অস্থির হয়ে কেঁদে উঠছে। বাচ্চার ডায়পার বদলাতে গিয়ে পড়ল আরেক বিপদে। ডায়পার শেষ। নতুন কোনো প্যাকেট তোলা আছে কিনা প্রিয়াকে বলা হয়নি। সে অন্তরার মায়ের কাছে জানতে গিয়ে দেখল তিনি কড়া ডোজের মে’ডি’সিনের প্রভাবে নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। প্রিয়া অবশেষে অন্তরাকে কল দিল। অন্তরা কাজের চাপে ব্যস্ত। কোনোমতে বলল,
“ডায়পার শেষ আমার খেয়াল ছিল না। অনু তো বাড়িতেই আছে আজ। ওকে বলো বাইরে থেকে এনে দিতে।”
ফোন কে’টে গেল। প্রিয়া গেল সেই বন্ধ দরজার সামনে। ঠক ঠক শব্দ তুলল বেশ কয়েকবার। প্রায় পাঁচ মিনিট পর এক অতিশয় সুদর্শন যুবককে দরজা খুলতে দেখে প্রিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। যুবকের চোখে ঘুম, কপালে বিরক্তির গাঢ় রেখা। বলল,
“কী চাই?”
“অনু আপুকে ডেকে দিন না একটু। বাচ্চার ডায়পার কিনতে যেতে বলেছে অন্তরা আপা।”
যুবকের মুখের রঙ বদলে গেল। গমগমে স্বরে বলল,
“অন্তরা ভাবী পাঠিয়েছে তোমায়?”
“হ্যাঁ।”
“উনাকে গিয়ে বলো অনু ম’রে গেছে। এখন তার অন্তিম সংস্কার চলছে।”
ধরাম করে দরজা আটকে গেল। প্রিয়া যুবকটির কথা মতোই কাজ করল। অন্তরাকে পুনরায় ফোন দিয়ে বলল,
“আপা, একটা লোক দরজা খুলে বলল অনু আপু নাকি ম’রে গেছে। এখন অন্তিম সংস্কার চলছে।”
অন্তরা কপাল চাপড়ে বলল,
“অনু আপু হতে যাবে কেন মেয়ে? আরে ওই ছেলেই তো অনু, মানে অনুভব। আমার দেবর। আমি আদর করে অনু ডাকি।”
প্রিয়া থ বনে গেল। প্রত্যুত্তরে কী বলা উচিৎ বুঝে পেল না। বুঝল না দোষটা অন্তরার বলার ধরনে নাকি তার বোঝার। অন্তরা বলল,
“আচ্ছা তুমি বাবুর কাছে থাকো আমি ওর সঙ্গে কথা বলে নিচ্ছি।”

প্রিয়া ফোন কেটে ফিক করে হেসে ফেলল। সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল হলো অনুভব দরজায় দাঁড়িয়ে জ্বলজ্বলে চোখে তাকেই দেখছে। যেন এক হিং’স্র প্রাণী শি’কার দেখতে পেয়েছে। প্রিয়া চুপসে গেল। হাসিটা তখনও তার মনের দেয়ালে বা’রি খাচ্ছে।

চলবে…