শ্রাবণ দিনের প্রেম পর্ব-০৫

0
128

#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৫

মনির সাহেব, সেলিনা বেগম একে অপরের দিকেে তাকিয়ে আছেন।
মানাফ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলে,কি দেখছো!
বলো কি কথা আর হবে না!
‘মনির সাহেব হেসে বলেন, তোর বিয়ের কথা৷ আগে তোর মা সারাক্ষণ তোর বিয়ে বিয়ে করে পাগল করে দিত আজকের পর থেকে তো সে কথা আর হবে না।
‘কিন্তু আমার৷ মনে হচ্ছে তুমি অন্যকোন কথা বলছো। সেটা বলতে চাইছো না!
‘সেলিনা বেগম বলেন, তোর বিয়ের কথা ছাড়া আর কি কথা আছে! বলছিলাম হুমায়রার বিয়েটাও দিয়ে দেয়ার কথা।
‘কি বলো ও পড়ছে পড়ুক। সময় হলে দিয়ে দেবো।

‘হুমায়রা বলে,তোমরা আমাকে বলো তো, কোন মেয়েকে দেখতে যাবে!
‘কেন তুই জানিস না।সেলিনা বেগম আর কিছু বলার আগেই মানাফ বলে, তোর জন্য সারপ্রাইজ। গেলেই দেখতে পারবি।
‘মা তুমি থেমে গেলে কেন! বলো তো। আমি জানিনা।
‘না আম্মু একদম বলবা না। কালকে বিকেলেই জানতে পারবি।
‘দূর আর জানা। কত ইচ্ছে ছিলো সুহানা।
‘হুমায়রা সেসব কথা বাদ দাও।মনির সাহেব গম্ভীর কন্ঠে বলেন, কথাটা। নতুন কিছু হচ্ছে সেটা নিয়ে ভাবো।
‘সুহানার কি খবর! ওর বিয়ে হয়েছে? (মানাফ)
‘তুমি নিজের চিন্তা করো সুহানার খবর তোমার রাখতে হবে না। এ বাড়িতে কেউ আমার পরিবারের কাউকে নিয়ে কোন কথা বলুক আমি চাইনা।
‘কি হয়েছে আম্মু এভাবে বলছো কেন!
‘খেতে বসেছ খাবার খাও খাবারের সময় এতো কথা বলার কি আছে!


আলিশা এসে ফ্রেশ হয়ে কাজিনদের সাথে বসেছে, মিম, ঈশান, শাফিন, ফিদা। সবাই মিলে গভীর চিন্তায়। শাফিন বললো,তুই কি চাস সেটা বল!
‘আমি বিয়ে করতে চাইছিনা।
‘তোর আর অভ্রের ভালোবাসাটা কেমন ছিলো! আইমিন টাইপ পাস নাকি সিরিয়াস?
‘আমাকে দেখে তোমার টাইম পাস করার মত মেয়ে মনে হয়?
‘রেগে যাচ্ছিস কেন। তাহলে অভ্রকে ফোন কর আর ওকে মানাফের আগে আসতে বল।
‘না ওকে আর আমার লাইফে চাই না। যা শেষ হয়েছে সেটা শুরু করার প্রশ্নই উঠে না।
‘তাহলে আর কি করবি ভালো মেয়ের মত বিয়ে করে নে।
‘তুমি বড় হইছো বাতাসে বুঝলা, তোমার মাথায় হাড়ি ভর্তি গোবর। কই বিয়ে ভাঙার বুদ্ধি দিবা তা-না উল্টো ফাউল কথা বলো।
‘ঈশান বলল, সমাধান আমার কাছে আছে, এক কাজ কর, ওই ছেলে তো তোর পরিচিত, তুই ওকে বল বিয়ে ভেঙে দিতে!
‘সেটাই ঠিক হবে।
মিম বললো,সেসব কিছু করতে হবে না। দেখতে আসতে চাইছে আসুক,আসার পরে তোদের যখন আলাদা কথা বলতে দেবে, তখন ঝেড়ে দিবি ইচ্ছে মত।
আলিশা বলল,সব বাদ একটা জিনিস খেয়াল করেছো, ফিদা সেই কখন থেকে গভীর মনযোগ দিয়ে কিছু ভাবছে! আলিশা ফিদার হাতে চিমটি দিয়ে বলে, কিরে ক্যাপ্টেন প্রেমে ট্রেমে পরলি নাকি!
ফিদা বেখেয়ালি ভাবে বলে, হুম।
‘সবাই একসাথে বলে, মানে!
‘ফিদা মালে মানে কিছু না। কোন প্রেম ট্রেম নেই৷ তোদের তালে পরে ভুল ভাল বলে ফেলছি।
‘তুই যাই বলিস এটা আমরা বিশ্বাস করবো না সত্যিটা বল!
‘সত্যিটা হলো, আমি নতুন লেকচারারের প্রেমে পড়েছি। শফিক আহসান তার নাম। নামের মতই কিউট দেখতে। ক্লাস কি করবো! তাকে দেখেই সময় পার হয়ে যায়!

‘থাপ্পড় দিয়ে তোর প্রেম বের করে দেবো। তোর বয়স হয়েছে প্রেম করার। ঈশানের কথা শুনে আলিশা বলে, বাহহহহ ভাই বাহহহ নিজের বেলায় ষোল আনা পরের বেলায় এক আনাও না। তোর হৃদা যেনো কোন ক্লাসে পড়ে!
‘আলু সেসব কথা বাদ এখন তোর বিয়ের কথা বল। সেটা কি করা যায়।

‘এখন তো চুপ থাকতে বলবি-ই নিজে অন্যের বোনের সাথে প্রেম করবে সেটা কমন। আর তোর বোন প্রেম করলে জ্বলে যায় মন৷
‘শাফিন বলে আরে ইয়ার তোর থামবি। আমি তোদের বড় ভুলে গেছিস৷
‘মিম বলে তুমি বড় তুমিই এই প্রেমের উদ্বোধন করেছো। এবার সমালাও সবার প্রেম।

রাইমা ফুপি এসে বলে,তোদের প্রেমের আলাপ বন্ধ হলে সব ক’টা খেতে আয়। এক একটা দামড়া হয়ে গেছে এখন নিজেদের ভালো বুঝে না! প্রেম করে বিয়ে করতে হবে! কেন আমরা প্রেম করিনি, আমাদের কি বিয়ে হয়নি! নাকি মন মত জামাই পাইনি!
‘মা কি শুরু করলে তুমি যাও আমি ওদেরকে নিয়ে আসছি৷
‘শাফিন তোর জন্য সব ক’টা নষ্ট হয়েছে। তুই ভালো হলে ওরাও ভালো হতো৷ সব নষ্টের মূল তুই!

‘বড় হয়েছি এটাই সবচেয়ে বড় ভুল।
‘এবার চুপচাপ ওদের নিয়ে খেতে আয়। মূল যেমন হবে শাখা তো তেমনই হবে। ফুপি চলে যেতেই সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো৷ প্রত্যেক বার এটাই হয়। যে ভুল কেুক বকা লাস্টে গিয়ে শাফিনের মাথায় উঠে।


ডাক্তার আরাফাত আনানের, একমাত্র আহিয়ান আনান অভ্র।
অভ্র নিজের বাবার মুখোমুখি বসে আছে। একটু দূরেই দিশা বেগম দাঁড়িয়ে আছে৷ দু’বাপ, বেটার মেজাজ খুবই ঠান্ডা তাই ভয়ে তার হাত, পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ডাক্তার আরফাত স্বান্ত স্বরে বললেন,মেয়েটি কে?
‘বাবা এডভোকেট লিয়াকত হোসাইন। নাম তো শুনেছো! তার মেয়ে আলিশা। আমাদের মেডিক্যাল কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী।
‘তা কতদিন ধরে এসব চলছে?

‘বাবা আমি ওকে ভালোবাসি৷ আমাদের মত চলাচলি নেই। তোমাকে বললাম তুমি আমাকে তোমার ডিসিশন শোনাও।
‘মেয়ে আমার পছন্দ তবে শর্ত হলো, কোন রকম অভদ্র আচরণ আমি মানবো না৷ এ বাড়ির বউ হলে এবাড়ির রুলস ফলো করতে হবে।
‘এটা বাড়ি জেলখানা না। এখানে কিসের রুলস। আর হ্যা তোমার ক্যালকুলেশনে ভুল হচ্ছে। আলিশা যথেষ্ট ভদ্র মেয়ে। ওকে তোমার ভদ্রতা শেখাতে হবে না৷
‘কবে যেতে হবে আমাদের!
‘যতদ্রুত সম্ভব।
‘যাও মেনে নিলাম। তবে মনে রেখো মানিয়ে কিন্তু তোমাদের নিতে হবে।
‘তুমি ওকে আমার করে দাও বাকি সব আমি বুঝে নেবো।

‘ওকে তুমি রিলাক্স হও আমি তাড়াতাড়ি তোমার বিয়ের ব্যাবস্থা করবো।
‘অভ্র যাওয়ার আগে বলে গেলে, বিশ্বাস করলাম। আমি জানি আমার বাবা কথার খেলাফ করে না৷

অভ্র চলে যেতেই দিশা বেগম নিজের হ্যাসবেন্ডের দিকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিযে, বলে, এতো সহজে মেনে নিলে!
‘একমাত্র ছেলে হাত ছাড়া তো করা যাবে না। আর মেয়ের ফ্যামিলি ভালো সমস্যা তো নেই। আর দু’জনেই যেহেতু একি লাইনে দু’জনকে বুঝতে সুবিধা হবে।
‘দেখো ছেলের সাথে কোন মাইন্ড গেমস খেলো না। তুমি জানো তোমার ছেলে কেমন। একি রক্ত তোমাদের। তাই যা মুখে বলছো সেটাই করবে আশাকরি!
‘তুমি কি ভাবো আমি বাহিরে যেভাবে কেস সলভ করি। পরিবারে সেটাই করবো!না মাি ডিয়ার ওয়াইফ। এখানে যা করার মন থেকে করবো৷ চিন্তা করার কোন কারণ নেই। দু-একদিনের মধ্যেই মেয়েকে দেখে আংটিবদল করে রাখবো।
তারপর বিয়ের ডেট ফিক্সড করে বিয়ে। শুভকাজে দেরি না করাই ভালো। তুমি এতো চিন্তা করো না।
‘দিশা বেগম বললেন, মনে রেখো ছেলে কিন্তু আমাদের একটাই তাই ভেবে কাজ করবে!এমন কিছু করবে না, যাতে ছেলেটাকে হারাতে হয়!


মানাফ বারবার আলিশার ছবি খুটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। এরমধ্যেই হুমায়রা বলে আসবো!
‘আয় পেত্নী।
‘তুমি কোন মেয়েকে দেখে পাগল হয়ে গেলে! দেশে আসলা মাত্র কয়েকদিন আগে।
‘কালকে দেখলেই বুঝতে পারবি কোন মেয়ে।
‘ভাইয়া ভালো লাগা আর ভালোবাসা কিন্তু ভিন্ন জিনিস। কোন জিনিস দেখলেই ভালো লাগে কিন্তু ভালোবাসা তো সহজ না!
‘সেটা তোর থেকে আমি ভালো জানি৷ সর বুড়িদের মত জ্ঞান দিবি না।
‘একটা কথা মনে রেখো একটা ভুল ডিসিশন অনেকগুলো মানুষের জীবন এলোমেলো করে দিতে পারে। আর একটা সঠিক ডিসিশন সব এলোমেলো জিনিসকে গুছিয়ে নিতে পারে।
‘বড্ড বড় হয়ে গেছিস। আর তুই কাল দেখলেই বুঝতে পারবি, ভুল নাকি ঠিক?

#চলবে