শ্রাবণ দিনের প্রেম পর্ব-০৬

0
128

#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -৬
‘যাকে ভালোবেসেছি তাকেই বিয়ে করতে হবে!এমন তো কোন নিয়ম নেই! আমি তো হাজার বছর পরেও বলতে পারবো হ্যা এই মানুষটাকে আমি ভালোবাসতাম। ঠিক তখন ভেতর থেকে আওয়াজ আসবে, এখনো তো বাসিস। তখন আমি অন্যকারো,
সে অন্যকারো কিন্তু আমার ভালোবাসাটা একান্ত আমার। তবুও ফিরবো না।তবুও ফেরাবো না। কিছু ভালোবাসায় দূরত্ব থাকাই শ্রেয়।

অভ্র নিজের নিউজ ফিডে সদ্য আলিশার পোস্ট দেখে, কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। খুব স্বান্ত মেজাজে একটা কমেন্ট করলো, ভুল থেকে যদি ভালো কিছু হয়! তবে সেরকম ভুল ক্ষমা করে জীবনটাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে নেয়া ভালো। হারিয়ে ফেলার আগেই ফিরিয়ে নিতে হয়।

‘রাত বাজে একটা, আলিশা অভ্রের কমেন্ট দেখে, সাথে সাথে পোস্ট ডিলিট করে দিলো।
‘অভ্র হেসে বলে, তোমাকে আমার কাছে ফিরতেই হবে। আমি এতোটাও লুজার না। দেখি তুমি কতটুকু উড়তে পারো! অভ্র ছাড়া আলিশার অন্যকোন খাঁচা নেই।

সবাই ঘুমিয়ে আছে, রাতের গভীরতা সাথে নিস্তব্ধতা বাড়ছে। একাকিত্ব, আর দুঃখগুলো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে, রাতের গভীরতা তারাই মাপতে পারে যারা রাতে ঘুমের পরিবর্তে বিরহ বয়ে বেড়ায়। জানালার পর্দা সরিয়ে গ্রিলে মাথা দিয়ে দূর আকাশের পানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অতীত কিছু স্মৃতি ভেসে উঠলো আলিশার চোখে, অভ্র আলিশা দু’জনেই দিনের বেলায় ব্যাস্ত পড়ালেখা শেষ করে তাদের কথা বলা শুরু হতো বারোটার পরে, বেশিরভাগ সময় আলিশা ঘুমিয়ে পরত।ওপাশ থেকে অভ্র টেক্সটের পরে টেক্সট করে যেতো এপাশ থেকে কোন উত্তর নেই। ঠিক এমন হলো আরেকদিন ও। সেদিন অভ্র বলেছিল, যাইহোক আজ ঘুমাবে না। আলিশা চেষ্টা করেও ব্যার্থ। পরের দিন সকাল বেলা যখন মেডিক্যালে পৌঁছালো অভ্র আলিশার সাথে রেগে একটু দূরত্ব বাড়িয়ে নিলো। আলিশা দৌঁড়ে অভ্রের সামনে যেয়ে বলে,,, তুমি রাগটা কার সাথে করবে! আমার সাথে নাকি ঘুমের সাথে?
‘আমার কোন রাগ নেই।
‘এই কথার মধ্যেই তো এক আকাশ রাগ, অভিমান,অভিযোগ লুকিয়ে আছে।
‘এটা আর নতুন কি! আমাকে রেখে একজন ঠিক ঘুমিয়ে পরে।
‘বিশ্বাস করো আমি ঘুমের এক সেকেন্ড আগেও জানিনা আমি ঘুমিয়ে পরবো। কিন্তু জানো ঘুম ভাঙার পর আমার কতটা কষ্ট হয়!নিজের প্রতি রাগ হয়।
‘এখন আমি কি করতে পারি!
‘আমি বলবো না আর এমন হবে না, কারণ আমার প্রতি আমার বিশ্বাস থাকলেও ঘুমের প্রতি নেই। তাই মাঝে, মাঝে আমি ঘুমিয়ে পরলে, রাগ না করে তুমিও ঘুমিয়ে পরবা।
‘কেউ কি বুঝে, সে চলে যাওয়ার পর আর চোখের পাতায় ঘুম ধরা দেয় না!

‘আমাকে আর একটু কম ভালোবাসবা! এতো ভালোবাসলে, আমার ভিতর ভয় তৈরি হয়।
‘কিসের ভয়!
‘তোমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়!
‘অভ্র আলিশার কপালে আলত চুমু এঁকে দিয়ে বলে, আমি আছি ভয় পেতে হবে না।

আলিশা চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে বলে, তুমি এই আছো অভ্র! আমি তোমাকে চাই না একটুও না। তোমাকে পেলে আমি নিজে হেরে যাবো নিজের কাছে! কাঁদতে, কাঁদতে শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়ে পরলো, আলিশা।

সকাল বেলা সবার হৈচৈ শুনে পিটপিট করে চোখ খুলে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে বারোটা ছাড়িয়েছে।
নাহার বেগম, এসে বলছেন, তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হয়ে নে ওনাদের আসার সময় হয়ে যাচ্ছে।
আলিশা চোখ ডলতে ডলতে বলে, এই দুপুর বেলা কে আসে আম্মু!
‘তোর এতো কিছু,বুঝতে হবে না তাড়াতাড়ি রেডিহ ওনারা এখানে এসে দুপুরের খাবার খাবেন। তাড়াতাড়ি কর। আর হ্যা ওই যে শাড়ী গয়না রেখে গেছি রেডি হবি সুন্দর করে।

‘কি শুরু করলা আম্মু! আমার কি বিয়ে যে শাড়ী গহনা পরে রেডি হবো! বেশি যদি বারাবাড়ি করো তাহলে আমি কিন্তু ছেলে পক্ষের সামনে যাবোই না।
‘এতো কথা আমি শুনতে চাই না যা বলছি তাই করবে। তাড়াতাড়ি রেডি হও৷

নাহার বেগম চলে যেতেই, আলিশা বলে, বিয়েই করবো না আবার শাড়ী পরে সঙ সেজে যাবো!আলিশা উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো।

ডাইনিং রুমে এসে নাস্তা নিয়ে নাস্তা করছে।মিম এসে বলল তাড়াতাড়ি নাস্তা শেষ করে রুমে চল, ছেলের মা, আর বোন চলে এসেছে। ছেলে আর ছেলের বাবা জু’মার নামাজ পড়ে আসবে।
‘আলিশা নাস্তার প্লেট নিয়ে রুমে চলে আসলো।রুমে এসে বলে,এরা এমন খেত কেন সেটা বল!কে মেয়ে দেখতে এসে মেহমানদের মত দুপুরের খাবার খায়!
‘বাদ দে যেমন ইচ্ছে হোক তাতে তোর কি! বিয়ে তো আর করছিস না। এখন তাড়াতাড়ি শাড়ী পরে নে।
‘মাথা খারাপ নাকি, আমি পড়বো শাড়ী!
‘হু তুই পড়বি কথ কম বল। যা বলছি তা কর।
‘ডিম একদম বড় গিরি দেখাতে আসবি না। তুই মাত্র এক বছরের বড় আমার।
‘আলু তাড়াতাড়ি শাড়ি পরে নে। তারপর এদিকে শোন কানে কানে।
‘ওয়াও দারুণ আইডিয়া। ঠিকাছে এক্ষুনি রেডি হচ্ছি।
‘আলিশা ঝটপট রেডি হয়ে নিলো। আয়নায় নিজেই নিজেকে দেখে বলে, হায় আলিশা তুমহে কোয়ী হক নেহি বানতাহে তুম ইতনা খুব সূরত দিখো!


হুমায়রা আর দিশা বেগম এসেছেন বেশ অনেক সময় হলো। তাদের সামনে নানা রকমের নাস্তা। হুমায়রা বোর হচ্ছিলো।মিম সবে মাত্র এসেছে অতিথি দেখতে, হুমায়রা কে দেখে বলে হুমু তুই!
‘মিম আপি তুমি এখানে!
‘আমার বাসা আমি থাকবো না। আয় উঠে আয় এদিকে।
হুমায়রা মিমের সাথে মিমের রুমে এসে, আলিশাকে দেখে বলে, তুই এমন বউ সেজেছিস কেন?
‘মিমি বলে, তোমার বেস্টি তোমার ভাবি হতে চলেছে৷
‘কিহহহহহ
‘আলিশা বলে, তারমানে তোর ভাই! এটা বলে উঠে এসে বলে, তুই তাকে আটকাতে পারলিনা পেত্নী।
‘চুপ যা আমি কি জানতাম নাকি তোকে দেখতে আসবে। ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম সে বলে, সারপ্রাইজ।
‘এবার বিয়ে ভাঙার দ্বায়িত্ব তোর।
‘এটা কোন ব্যাপার হলো, ভাইয়াকে তোর রিলেশনের কথা বললেই হবে!
‘কিন্তু এখন তো আমাদের দুলহান সিঙ্গেল। মিমের কথা শুনে, হুমায়রা বলে, তাহলে বিয়ে হয়ে যাক সমস্যা কি!
‘একদম বাজে কথা বলবি না বিয়ে করবো না এখন৷
‘তা করবি কেন!ডাক্তার অভ্রের সাথে ব্রেকআপ হওয়ার শোক পালন করবি।
‘হুম তাই করব!ভালোবাসা তো আর সহজ না। ইচ্ছে হলো বাসলাম ইচ্ছে হলে ছেড়ে দিলাম। মানুষটাকে ছেড়েছি ভালোবাসা না৷ তার স্মৃতিগুলো আমার সাথে আছে৷ এক সময় এই মানুষটাকে কল্পনা করেই ঘুমোতে যেতাম। তাকে কল্পনা করেই স্বপ্ন সাজাতাম। এতো সহজ সেসব ভুলে যাও!
‘ভুলতে চাইলেও ভোলা যায় না কিছু,স্মৃতির ছায়া হয়ে ঘুরে বেড়ায় পিছু!
‘কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। আবেগ দিয়ে তো সামনে এগোতে পারবি না৷
‘আমিও জানি সেটা। কিন্তু আমার সময় লাগবে নিজেকে গুছিয়ে নিতে।
‘আচ্ছা আজকের দিনটা ভালো ভাবে কেটে যাক ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলবো আমি৷
‘এরমধ্যেই নাহার বেগম এসে বলেন, হুমু তুমি আলিশাকে সাথে করে নিয়ে এসো, ওনারা আগে ওকে দেখবে তারপর খাওয়া দাওয়া করবে৷
‘জ্বি আন্টি আমরা আসছি৷
✨ঈশান অভ্রকে কল করে সবটা বলে দেয়৷ অভ্র রেডি হয়ে বলে, এটা তুমি ঠিক করলে না আলিশা আঞ্জুম। আমি থাকতে তুমি অন্যকারো কি ভাবে হও সেটা দেখি! আর এর শাস্তি ও তোমাকে পেতে হবে৷ তুমি কিভাবে রাজি হলে অন্য আরেকজনের বউ হতে! এই তোমার ভালোবাসা! যেটা তুমি দু’দিনে ভুলে গেলে! আমার ভুল বুঝতে পেরে আমি সেটা শুধরে নিতে চেয়েছি৷ কিন্তু তুমি সেটা করতে দিলে না। ভালো রুপ দেখছো কিন্তু এই আহিয়ান আনান অভ্র-র ঘৃনা আর ভয়ংকর রুপ দেখোনি!
#চলবে