শ্রাবণ দিনের প্রেম পর্ব-০১

0
251

#শ্রাবণ_দিনের_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
সূচনা পর্ব

আপনি কি ভেবেছেন মিস্টার অভ্র! চার বছর প্রেম করে, বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাকে ছুড়ে ফেলে দিবেন?এরজন্য বুঝি আপনার’ আমার শরীর ছোঁয়ার এতো তাড়া ছিলো!

‘তোমার বাজে কথা শোনার মত সময় আমার নেই আলিশা।
‘তবে এতো সহজ না আমাকে ছেড়ে দেওয়া! আমি হলাম আঠার মত। লাগলে উঠতে চাইনা। আর উঠলে চামড়া সহ নিয়ে আসি।
‘দেখি তুমি কি করতে পারো।
‘অভ্র আকাশের পাণে তাকাও। আজও বৃষ্টি ভেজা দিন, সেদিনও বৃষ্টি ভেজা দিন ছিলো। এমনি এক ঘন কালো মেঘে ঢাকা দিনে তোমার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিলো। বুঝতে পারছো তার মানে কি? তারমানে হলো আপনি আমার জীবনে ওই কালো মেঘের মত। তবে আমি কিন্তু মেঘ, বৃষ্টি ঝড়ের পরে যো রোদ উঠে ঠিক তার মত। একদম আপনাকে ঝলসে দেবো নিজের উষ্ণতায়।
‘ইউ নো না। আমি কে দ্যা গ্রেট আহিয়ান আনান অভ্র। সো দেখি তোমার মত পাতি খরগোশ আমার মত সিংহের সাথে কি করতে পারে!
‘তবে আপনিও ভুলে যাচ্ছেন আমি কে! আলিশা আঞ্জুম। এতোদিন আমার কোমল নরম মানবীকে দেখেছেন। এখন থেকে আমার রণমুর্তি দেখবেন। আর আপনি সিংহ হলে আমি সিংহি। টক্করে টক্কর হবে। ওই যে প্রবাদের মত, ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়।

‘আমি অপেক্ষায় থাকবো তোমার একশান দেখার।

‘এই যে আকাশটা কিছুক্ষণ আগে কেমন রোদে ঝলমল করছিলো, কিন্তু হুট করে মেঘে ঢেকে মধ্য দুপুরকে কেমন সন্ধ্যায় পরিনত করেছে! ঠিক আপনার জীবনে আমি এমন অন্ধকার করবো। আপনি মেঘ শেষে বৃষ্টি চাইবেন, কিন্তু বৃষ্টি আসবে না। কারনটা কি জানেন, বৃষ্টির পরে আকাশ আরো সুন্দর হয়ে যায়। তাই আপনার জীবনে কখনো বৃষ্টিই আসবে না। গুড বায় মিস্টার অভ্র আনান।

‘ঝুম বৃষ্টির মধ্যে এলোমেলো পায়ে হেঁটে চলেছে আলিশা। বৃষ্টির সাথে চোখের জল মিলেমিশে একাকার। রাগে নিজের মাথার চুল নিজের ছিড়তে ইচ্ছে করছে। কিছু দূর যেয়ে মাঝ রাস্তায় বসে চিৎকার করে কান্না শুরু করে দিলো। মেইন রোডে বসে পাগলের মত কান্না করছে আলিশা। হুট করে মনে হলো তার শরীরে আর বৃষ্টি পরছে না। তাকিয়ে দেখে একজন লোক ছাতা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আলিশা উঠে দাঁড়ালো চোখের পানি মুছে বলে,এই সাহস তো কম না আপনার, আমার মাথার উপর ছাতা ধরেন!
‘আসলে ম্যাম আমি ভাবলাম কোন পাগল রাস্তায় অবহেলিত হয়ে ভিজচ্ছে, তাই সাহায্য করতে এসেছিলাম।
‘আমাকে আপনার পাগল মনে হয়! আপনি পাগল আপনার চৌদ্দ গুষ্টি পাগল৷

‘আসলে আমি পরিক্ষা করে দেখছিলাম আপনি আসলেই পাগল নাকি! দেখলেন ঠিক প্রমাণ করে দিলেন আপনি পাগল! না মানে একটা কথা তো জানাই আছে পাগল কে পাগল বললে ক্ষেপে যায়!
‘আমি পাগল তাইতো দাঁড়ান এবার পাগলামি দেখাচ্ছি। আলিশা মানাফের হাত থেকে ছাতাটা কেঁড়ে নিয়ে ফেলে দিলো।

‘আরেহহহ কি করলেন! আর ত্রিশ মিনিট পর আমার শো। আর আপনি আমাকে ভিজিয়ে দিলেন!
‘বেশ করেছি আমাকে পাগল বলা!

‘কি দুনিয়া আসলো বাবা, পাগলকে, পাগল বলাও যাবে না৷ আর হ্যা মরতে হলে সেভলী কোন জায়গায় গিয়ে মরুন। এই ধরেন কোন ব্রিজ থেকে লাফ দিন নয়তো ট্রেনে নিচে ঝাপিয়ে পরুণ,নয়তো বাসায় বসেও অনেক কিছু ট্রাই করতে পারেণ এই মাঝ রাস্তায় মরে শুধু শুধু ট্রাফিক বাড়িয়ে কি লাভ!

‘শুনে রাখুন আমার নাম আলিশা আঞ্জুম, আমি নিজে যতটুকু পুড়ি, তারচেয়ে শতগুণ পোড়াতে পাড়ি। আর এতো সুন্দর জীবন মরবো কেন!

‘তাহলে বাসায় চলে যান পাগল বেশে বৃষ্টিতে রাস্তায় কি? মানাফ নিজের কোর্টটা খুলে আলিশার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে,সাদা রং সুন্দর তবে বৃষ্টিতে তা ভয়ংকর সুন্দর।
‘আপনি তো ভারি অসভ্য।
‘বেশি কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে এসে বসুন৷
‘আপনার কি মনে হয়, আমি রাস্তার সস্তা মেয়ে! আপনি বলবেন আর আমি নাচতে নাচতে গাড়ীতে উঠে বসবো!
‘তা কেন মনে হবে! আমার কাছে তো আপনি একজন টিকটক সেলিব্রিটি।
‘একদম বাজে কথা বলবেন না৷ আমি সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ অসুস্থ প্রতিবন্ধী না।
‘মানাফ ছাতা তুলে এনে আলিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, একটু ধরুন আপনার প্রতিভা দেখাই৷

মানাফ নিজের মোবাইল থেকে একটা ভিডিও বের করে, আলিশার সামনে ধরলো।
যেখানে আলিশা নিম্ন গানের সাতে রিল ভিডিও করেছে।

‘হাতটা ধরেন না, ভাব নিয়েন না।
কেন চোখের ভাষা বুঝেন না!
জ্বালা দিয়েন না৷
দূরে যাইয়েন না,
মইরা গেলে আমায় খুঁইজা পাইবেননা।
ওরে কালাচান তোমার লাইগা মন করে আনচান।

‘এই তারমানে আপনি হ্যাকার! আমার মোবাইল হ্যাক করে এসব নিয়েছেন?
‘হোয়াট!
‘একদম নাটক করবেন না। আমাকে অবলা ভাবার ভুল তো স্বপ্নেও করবেন না৷ মেডিক্যাল দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট আমি। আপনাকে যদি চৌদ্দ শিকের ভাত না খাইয়েছি। তো আমার নাম…
‘ওয়েট ওয়েট নিজের এতো সুন্দর নাম পাল্টে রাখার হুমকি দেয়ার আগে দেখেনিন।হুমায়রা হাসান মেয়েটাকে চেনেন নাকি!
‘এতো আমার বন্ধু! বন্ধুর আইডি আপনি কোথায় পেলেন?

‘আপনার বন্ধু আমার বোন।
‘তা এটা ক’নাম্বার মিথ্যে কথা মিস্টার?
‘একদম সত্যি কথা তার ভাই আছে এটা জানেনা৷ কেমন বন্ধু আপনারা!
‘হ্যা জানি তার ভাই আছে আর এটাও জানি তার ভাই অস্ট্রেলিয়া থাকে পড়ালেখা করার সুবাদে। আবরার হাসান মানাফ তার নাম।
‘বাহহহহহ লেখিকা তো আমার সম্পর্কে ভালো খবর রাখে দেখছি!

‘সেই কখন থেকে বাজে কথা বলেই যাচ্ছেন, সমস্যা কি আপনারর! হুমায়রার ভাই তাই তো এক কাজ করেন হুমায়রাকে কল করুন। কথা শেষ হওয়ার আগেই, আলিশার ঢলে পরলো। মানাফ আলিশাকে আগলে নিয়ে, গাড়ীতে পেছনের সিটে বসিয়ে দিলো৷


আলিশার যখন জ্ঞান ফিরছে সে নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করে, নাহার বেগম আলিশার পাশেই বসে ছিলেন। আলিশার চোখ খুলতেই তিনি অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করেন, মা তোর কি হয়েছিল৷ তোর এই অবস্থা কি করে হলো?

‘আমাকে এখানে কে নিয়ে আসলো?
‘একটা গাড়ীতে করে কেউ তোকে এখানে পাঠিয়েছে, সাথে একটা কাগজে লিখা ছিলো অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভিজে তুই নাকি রাস্তায় জ্ঞান হারিয়ে পরে ছিলি৷

‘আলিশা বিষয়টা তার মায়ের সামনে ঘাটলো না। মনে মনে ভাবতে লাগলো, লোকটা কি সত্যি হুমায়রার ভাই!কিন্তু সে বাংলাদেশে কবে আসলো?

এসব ভাবনার মাঝেই আলিশার মোবাইলটা বেজে উঠলো, মাই লাইফ দিয়ে নাম্বারটা সেব করা। আলিশা নাহার বেগমেকে বলল,আম্মু একটু চিকেন স্যুপ করে নিয়ে আসো তো! প্রচন্ড ক্ষুদা পেয়েছে।
‘যাচ্ছি, আর শোন এই বিচার তোলা রইলো তোর বাবা একবার ফিরুক তখন তোকে মজা বোঝাবো।

‘নাহার বেগম চলে যেতেই আলিশা নিজের মোবাইল নিয়ে আগে, অভ্রর নাম্বার এডিট করে নাগীন দিয়ে সেভ করলো, তারপর কল ব্যাক করতেই, ওপাশ থেকে অভ্র হেসে বলে,তা শুনলাম ছ্যাকা খেয়ে রাস্তায় পরে ছিলে! এতোই ভালোবাসতে আমাকে? তাহলে পায়ে ধরে বলতে পারতে অভ্র প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিওনা। তাহলে ভেবে দেখতাম।

‘আলিশা অট্ট হাসি দিয়ে বলে,দিনের বেলা জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা বন্ধ করুন মিস্টার অভ্র আনান।আমি আলিশা আঞ্জুম। ভাঙ্গলেও মচকাই না৷ সো আপনার মত মানুষের ভালোবাসা তো দূরে থাক, ভালো কথাকেও ঘৃনা করি। আপনার মস্তিষ্কের নিউরনে একটা কথা গেঁথে নিন৷ আলিশা আপনাকে ঘৃনা করে। আর হ্যা ‘আপনার মত অভ্রকে যদি পুতুল নাচ না নাচিয়েছি তবে আমার নামও আলিশা আঞ্জুম না!

‘আমি অপেক্ষা থাকবো, দেখি কেমন নাচ নাচাতে পারো। আহিয়ান আনান অভ্রকে নাচানো এতো সহজ না। দ্যা গেম স্ট্রাট।

#চলবে
ভুলত্রুটি মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং 🥰