শ্রাবন মেঘের বর্ষন পর্ব-০৪

0
371

#শ্রাবন_মেঘের_বর্ষন🍁
#লেখনীতে:#তানজিল_মীম
#পর্ব:০৪

—–“তিহান ভাইয়া গাড়ি থামান….

“উওেজিত কন্ঠে কথাটা বলে উঠলাম আমি তিহান ভাইয়াকে’!!আর আমার কথা শুনে তিহান রাএী দুজনেই অবাক হয়ে বললো আমায়ঃ

——“কেনো?

——“আপনি গাড়ি থামান ভাইয়া তারপর বলছি…

“আমার কথা শুনে তিহান ভাইয়াও ব্রেক কষলো’!!আমাদের গাড়িটা থামলো একটা বড় ব্রিজের ওপর’!!আর ব্রিজের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে ফুচকাওয়ালা তার ফুচকা নিয়ে’!!গাড়ি থামতেই রাএী উওেজিত কন্ঠে বললোঃ

——-“এখন বল…

——“আরে ওই দেখ ফুচকা,চল খাই…

“আমার কথা শুনে রাএী তিহান ভাইয়া দুজনেই অবাক হয়ে বললোঃ

——“এর জন্য এত উওেজিত কন্ঠে কথা বলে আমরা তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম…

——-“সরি ভাইয়া,রাএী চল..

——“হুম চল…

“তারপর আমি আর রাএী নেমে পরলাম গাড়ি থেকে’!!অবশ্য যাওয়ার আগে বলেছিলাম তিহান ভাইয়াকে আমাদের সাথে যাবে কিনা’!কিন্তু উনি ছাফ না করে দিয়েছে’!!আমরাও আর জোর করলাম না…

“আমি আর রাএী দৌড়ে চলে গেলাম ফুচকাওয়ালার কাছে’!!উওেজিত কন্ঠে বলে উঠলাম আমিঃ

——-“মামা ঝাল ঝাল দু -প্লেট ফুচকা দিন….

“দোকানদারও আমাদের কথা শুনে ফুচকা বানাতে শুরু করল’!!আর আমরা অতি-আগ্রহে দাঁড়িয়ে আছি ওগুলো খাওয়ার জন্য…

||

“এদিকে তিহান নাফিয়া আর রাএী কান্ড দেখে কি করবে বুঝতে পারছে না’!!সে বুঝতে পারছে না এই মেয়েরা ফুচকার ভিতর কি পেয়েছে? পরক্ষণেই প্রশ্নটা মাথার ভিতর দমিয়ে রেখেই তিহান তার মোবাইল টিপতে লাগলো’!!এই মুহূর্তে নাফিয়াদের ফুচকা খাওয়া নিয়ে তার কোনো ইন্টারেস্ট নেই’!!

“কিছুক্ষন পর….

“একরাশ বিরক্ত নিয়ে বসে আছে তিহান’!!কারন রাএী নাফিয়া কেউ এখনো আসছে না’!!কি করছে কে জানে?এই মুহূর্তে তার মনে হচ্ছে তখন গাড়ি না থামালেই ভালো হতো!

“সহ্যের সীমা পেরিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো তিহান’!!গাড়ি থেকে বের হতেই অবাক তিহান’!!কারন রাএী আর নাফিয়া ব্রিজের রেলিং ধরে সূর্য যে প্রান্ত থেকে ডুবে যাচ্ছে সেদিকে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে’!!তিহান অবাক হয়ে পা বাড়ালো ওদের দিকে’!!তিহান কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ

——-“তোরা এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি করছিস আর তোদের জন্য আমি…

“তিহানের কন্ঠ শুনে রাএী বলে উঠলঃ

——“হুস ভাইয়া থামো না তুমিও চোখ বন্ধ করে নেও….

——-“আশ্চর্য চোখ বন্ধ করবো কেন?

——-“আরে করোই না তাহলেই বুঝতে পারবে,আর শোনো চোখ বন্ধ করে জোরে এক নিশ্বাস নিবে…

“সময়টা ঠিক সন্ধ্যা হওয়ার আগ মূহুর্ত’!!চারিদিকে পুরো পরিবেশটাই লালচে বর্ন ধারণ করেছে’!!কৌতুহলী তিহান তার চোখ বন্ধ করে নিল’!!সাথে বুক ভরা নিশ্বাস নিলো সে’!!সাথে সাথে ভেসে আসলো তার কানে ব্রিজের নিচে থাকা নদীর পানির শব্দ,সাথে অনুভব করছে শীতল মেশানো ঠান্ডা বাতাস বিষয়টা খারাপ না,তিহানের যত রাগ আর ক্লান্ত ভাব ছিল সব চলে গেছে’!!ভালো লাগছে খুব….

“বেশকিছুক্ষন পর…..

_______________________

——-“ভাইয়া,ভাইয়া চোখ খোলো বাড়ি যাবে না…

“বেশকিছুক্ষন যাবৎ রাএী ডেকে চলেছে তিহানকে’!!কিন্তু তিহান প্রকৃতিকে ফিল করতে এতটাই ব্যস্ত যে তাকে কেউ ডাকছে তা তার কান পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না’!!কিছুটা হতভাগ হয়ে রাএী তিহানের হাত টেনে বলে উঠলঃ

——-“ওই ভাইয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমিয়ে পরলে নাকি….

“আচমকা টান অনুভব করাতে লাফ মেরে উঠলো তিহান’!!উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল সেঃ

——-“কি হয়েছে কি হয়েছে?

——-“কিছু হয় নি বাড়ি যাবে না…

——-“হুম যাবো তো…

——-“তাইলে চলো তাড়াতাড়ি নাফিয়াকেও তো ওদের বাসায় ড্রপ করে দিতে হবে…

——-“হুম চল আসলে…

——-“কিছু বলতে হবে না বুঝতে পেরেছি চলো এখন…

——-“হুম….

“তারপর রাএী,নাফিয়া আর তিহান তিনজন একসাথে গিয়ে বসে পরলো গাড়িতে’!!সবাই বসতেই তিহান গাড়ি চালাতে শুরু করল…

“হর্ঠাৎই তিহান বলে উঠলঃ

——-“এটা কোথা থেকে শিখলি তুই রাএী…..

“তিহানের আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে বললো রাএীঃ

——–“কোনটা ভাইয়া….

——-“ওই যে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে থাকার বিষয়টা….

——-“ওহ ওইটা ওটা তো আমি বলি নি…

——-“তাইলে তুই জানলি কিভাবে….

——-“ওটা তো নাফিয়া বলেছিল….

“সাথে সাথে লুকিং গ্লাসে তাকালো তিহান নাফিয়ার দিকে’!!চোখাচোখি হলো দুজনের’!!তিহান কৌতুহলী প্রশ্ন করলো নাফিয়াকেঃ

——“ড্রামা কুইন কিভাবে জানলো?

——-“সেটা তো তোমার ড্রামা কুইনই জানে…

“রাএীর কথা শুনে চোখ গরম করে তাকালো তিহান রাএীর দিকে’!!সাথে সাথে রাএী বুঝে ফেলেছে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে সে’!!তাই কাঁপা কাঁপা গলায় বললো রাএীঃ

——“না মানে সেটা তো নাফিয়াই ভালো জানে….

——“আসলে এটা জানার মতো কিছু নেই, আমি মাঝে মাঝেই এমনটা করি তাই রাএীকেও বলেছিলাম এটা করতে এর বেশি কিছু নয়…..

“তারপর আর কোনো কথা হয় নি গাড়িতে’!!কুটকুটে নীরবতায় চলে গেল যে যার বাড়িতে….

||

“রাত_২ঃ০০টা…..

“চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে একজন!যার চোখের সামনে বার বার ভেসে আসছে একটা মেয়ের চোখ বন্ধ দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য’!!সাথে ফিল হচ্ছে তার প্রকৃতির মুগ্ধ করা সৌন্দর্য’!!কিছুটা ভালোলাগা আর এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে বসলো সে’!!মোবাইলটা হাতে নিয়ে ওয়ালপেপারে থাকা একটা মেয়ের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল সেঃ

——-“এটা কিন্তু ঠিক না মায়াবিনী তুমি তো এখন ঘুমের ভিতরও জ্বালাচ্ছো আমায়’,এটা কিন্তু একদমই ঠিক হচ্ছে না!এর মাসুল কিন্তু তোমায় দিতে হবে দিতেই হবে আনমনে মুচকি হাসলো সে’!!বিছানা ছেড়ে সোজা বেলকনিতে চলে গেল সে’!!আজকে আকাশটা বড্ড সুন্দর মনে হচ্ছে তার!তার চেয়েও বেশি সুন্দর লেগেছিল আজকে তার মায়াবিনীকে লাল রঙে রাঙিত হয়ে…

“গভীর নয়নে আকাশের পানে তাকালো সে’!!আজ রাতে আর ঘুম আসবে না তার…

_____________________

—–“ওই আপি ঘুম থেকে উঠছিস না কেন ওঠ তাড়াতাড়ি ভার্সিটি যাবি না নাকি….

“সক্কাল সক্কাল ছোট ভাইয়ের ডাকাডাকিতে ঘুম ভাঙল আমার’!!কিছুটা বিরক্তিতা নিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ

—–“ওই রুহানের বাচ্চা সকাল সকাল হয়েছে কি তোর…

—–“আরে আপু আর কত ঘুমাবে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখো কয়টা বাজে…

—–“যে কয়টা বাজার বাজুক আজকে লেট করে ভার্সিটি যাবো…

—–“রাএী আপু ফোন করেছিল তোমায় তাড়াতাড়ি ভার্সিটি যেতে বলেছে সে…

—–“বলে বলুক তুই যা তো এখন…(ধমক দিয়ে)

—–“ঠিক আছে ভালো মতো বললাম শুনলে না তো একটু পর আবার রাএী আপু ফোন করবে তোমায়….

——“রাএীরে আমি দেখে নিবো তুই যা….

“রুহানও আর কথা না বারিয়ে চলে গেল’!!কারন সে জানে এখন নাফিয়াকে ডেকে কোনো লাভ নেই….

“কিছুক্ষণ পর…..

—–“আয়না চলে দরজা খুলে ওই ক্রিং ক্রিং বাজেরে এই মনের টেলিফোন…

“এমন অদ্ভুত গানে ফোনটা বেজে উঠলো আমার’!!অবশ্য গানটা আমি দিয়েছিলাম’!!একরাশ বিরক্ত নিয়ে ফোনটা তুলে বলে উঠলাম আমিঃ

—–“ওই সাতচুন্নি সকাল সকাল জ্বালাচ্ছিস কেন?

——“ওই তুই কোথায় আছিস….

——“আছি তোর শশুর বাড়ি….

——-“ওহ মাই গড তাই নাকি…

——-“মজা নিচ্ছিস আমার সাথে…(রেগে)

——-“আরে দোস্ত রেগে যাচ্ছিস কেন তাড়াতাড়ি আয় না ভার্সিটি তোরে ছাড়া ভালো লাগছে না….

——-“আমি যামু না গেলেই তোর ভাই অকারণে অপমান করবে…

——“এসব কি বলছিস তুই….

——“ঠিকই বলছি…

——“দোস্ত আমার ভাবি হইতে চাইলে তাড়াতাড়ি ভার্সিটি আয়….

——-“আমি এহন ঘুমামু দু ঘন্টা পর আসছি…

“বলেই ঠাস করে ফোনটা কেটে দিলাম আমি’!!

“এদিকে রাএী হ্যালো হ্যালো বলতে বলতেই থেমে গেল’!!রাএী অবাক হয়ে বললোঃ

——-“মেয়েটার হলো কি, ও কি সত্যি চায় না আমার ভাবি হতে,আশ্চর্য তো….😳😳

__________________________________________

______________________

“ভার্সিটির গাছ তলায় বসে আছে রাএী হতাশ সে’!!সে সত্যি ভাবতে পারছে না নাফিয়া ভাবি বলার পরও আসবে না ভার্সিটি’!!এমন সময় পিঠে থাপ্পড় মারলো কেউ’!!এক মিনিটের জন্য হলেও রাএী খুশি হয়ে বললোঃ

——-“আমি জানতাম তুই আসবি….

——–“তুই কি করে জানলি আমি আসছি (মিতু)

“নাফিয়ার জায়গায় মিতুর কন্ঠ শুনে ভরকে গেল রাএী’!!একটু হতাশ হয়ে বললো সেঃ

——–“ওহ তুই আমি ভাবছিলাম নাফিয়া…..

——-“ওহ, ও এখনো আসে নি….

——-“না যাগ গে বাদ দে তুই বল তুই নাকি তোর মামা বাড়ি গিয়েছিস তাহলে আসলি কেমনে এখন, কালকে তো শপিং যেতে পারলি না….

——–“আরে রাগ করছিস কেন আম্মু সকালেই চলে আসছে তাই তো আসছি…

——-“ওহ,

——–“আচ্ছা তুই বস আমি একটু আসছি….

——–“কোথায় যাচ্ছিস?

——–“আসছি এখনি…

“এই বলে চলে গেল মিতু’!!আর রাএী নিশ্চুপ ভাবে বসে রইলো গাছের শিকরের উপর….

.
.

——-“দোস্ত রাগ করছোস…

“আচমকা এমন কথা শুনে রাএী চমকে উঠলো’!!পিছন ঘুরে নাফিয়াকে দেখে খুশি হয়ে বললো সেঃ

——-“দোস্ত তুই আসছোস…

——-“তুই ডাকবি আর আমি আসবো না আর যাইহোক তোর ভাবি হওয়ার জন্য তো আসতেই হতো…😁

“নাফিয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে বললো রাএীঃ

——“তার মানে….

——-“কি মানে…

“পরক্ষণেই হেঁসে উঠলো রাএী’!!কি উল্টো পাল্টা ভাবছিলো এতক্ষণ’!!রাএীর হাসার কারনটা বুঝতে না পেরে নাফিয়া বলে উঠলঃ

——-“হাসছিস কেন?

——-“না কিছু না…

——-“তাইলে উঠ তিহান ভাইয়ারে একটু দেখে আসি….

——-“ভাইয়া এখনো আসে নি…

——-“ওমা কেন?

——–“তা তো জানি না আমায় নামিয়ে দিয়ে কোথাও একটা গেছে ভাইয়া হয়তো এখন চলেও এসেছে…

——-“তাইলে এত কনফিউশান করস কেন😒

——-“একটু মজা করছিলাম….

——-“😒😒😒

“এরই মধ্যে মিতুও চলে আসলো’!!তারপর তিনজন মিলে চললাম তিহান ভাইয়া কোথায় আছে তাকে দেখতে’!!দিনে একবার হলেও তাকে দেখতে হবে আমার’!!তাকে না দেখলে দিনটা ভালো যায় না আমার…..

_________

“তিনতলার সিঁড়ি উপর দিয়ে উঁকি মারছি আমি’!!কারন তিহান ভাইয়াকে ভার্সিটির কোথাও খুঁজে পেলাম না আমি’!!এর মানে নিশ্চয়ই ক্লাস করছে…

“আস্তে আস্তে চলে গেলাম আমি,মিতু আর রাএী তিহান ভাইয়ার ক্লাস রুমের সামনে’!!জানালা দিয়ে উঁকি মারতেই ক্লাসের ভিতরে থাকা স্যার বলে উঠলঃ

——-“ওই কে ওখানে?

“সাথে সাথে আমরা তিনজন ঘাবড়ে গেলাম’!!আমি চেঁচিয়ে বলে উঠলামঃ

——-“ওই দোস্তরা ভাগ স্যার দেখলে আস্ত রাখবে না আর…

“বলেই তিনজন একসাথে দিলাম দৌড়’!!হতভম্ব হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই পা পিছলে পড়ে যেতে নিলাম আমি’!!সাথে সাথে কেউ এসে ধরে ফেললো আমায়’!!আস্তে আস্তে চোখ খুলে মুখে মাস্ক সাথে চোখে ব্লাক সানগ্লাস পরিধিত একটা ছেলেকে দেখে চমকে উঠলাম আমি’……
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………..

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ’!!আর গল্প কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবে]

#TanjiL_Mim♥️