সমাপ্তিতে সূচনা পর্ব-০১

0
487

#সমাপ্তিতে_সূচনা
#১ম পর্ব
লেখা:- নুসরাত জাহান মিষ্টি

সন্ধ্যা হয়ে গেল, গর্ভবতী স্ত্রী এখনো বাড়ির বাহিরে। ব্যপারটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারলো না শান্ত। অনেক কষ্টের পর শান্ত বাবা ডাক শুনতে যাচ্ছে, এই অবস্থা নীলির কোন ভুল তার বাবা হওয়ার স্বপ্নটা ভেঙে দিক তা চাচ্ছে না।

নীলিকে বাড়িতে না পেয়ে ফোন দিলো শান্ত। শান্ত ফোন দেওয়ার সাথে সাথে নীলি ফোনটি রিসিভ করলো। নীলি ফোন কানে ধরে বললো,“ হ্যাঁ শান্ত বলো।”

“ তুমি কোথায় নীলি? সন্ধ্যা হয়ে গেছে, এখনো বাড়ির বাহিরে কি করছো?”

“ আমি বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি। এসে কথা বলছি।”

নীলি ফোন কেটে দিলো। শান্ত নীলির অপেক্ষায় বসে রইলো।

কিছুটা সময় পর নীলি বাড়ি এলো। ঘরে ডুকতে ডুকতে নীলি বললো,“ স্কুলে জরুরি কাজ পড়ে গেছে, তাই আসতে দেড়ি হলো।”

শান্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,“ তুমি কি চাইছো নীলি?”

“ আমি কি চাইবো?”

“ আমাদের বাচ্চাটা পৃথিবী আলো দেখুক, এটা তুমি চাইছো না?”

“ তুমি এসব কি বলছো শান্ত? পা/গ/ল হয়ে গেছো?”

“ না। আমি ঠিক আছি। ঠিক আছি বলেই আমাদের বাচ্চার চিন্তা করছি। তুমি জানো কতটা কষ্টের পর আমরা বাবা-মা হতে যাচ্ছি, এই মূহুর্তে তোমার কোন ভুল আমার বাচ্চার ক্ষতির কারণ হোক সেটা আমি চাইছি না।”

“ আরে এখানে বাচ্চার ক্ষতি হওয়ার বিষয় আসছে কেন?”

“ আসছে। কারণ আমাদের গ্রামে সবাই বলতো, গর্ভকালীন সময়ে সন্ধ্যার পর বাহিরে থাকতে নেই।এতে সন্তানের ক্ষতি হয়। তুমি হয়তো বলবে, আমি একজন শিক্ষিত ছেলে হয়ে এসব কি বলছি? কেন বলছি? আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি। বিয়ের এত বছর পর বাচ্চা আসছে আমাদের, আমি তার কোন ক্ষতি মেনে নিতে পারবো না।”

“ তুমি কি চাইছো শান্ত?”

“ আমি চাইছি তুমি চাকরিটা ছেড়ে দাও।”

“ কী?”

“ হ্যাঁ। আমি চাই বাচ্চা হওয়া অব্দি তুমি ঘরে থাকো, আমি তোমাদের জন্য আলাদা লোক রাখবো। সে তোমার দেখাশোনা করবে।”

নীলি শান্তকে জড়িয়ে ধরলো। আস্তে করে বললো,“ আমি বুঝতে পারছি, বাবুকে নিয়ে তুমি খুব ভয় পাচ্ছো। তাকে হারিয়ে ফেলার ভয় পাচ্ছো, তাই তোমার মাথায় এখন উল্টাপাল্টা কথা ঘুরছে। দেখো কিচ্ছু হবে না। আমাদের বাবু খুব ভালোভাবে পৃথিবীতে আসবে। এত ভয় পাচ্ছো কেন?”

“ তুমি আমার দিকটা বুঝতে পারছো না নীলি।”

“ পারছি। বুঝতে পারছি বলেই বলছি, আমাদের বাবুর কিছু হবে না।”

“ যদি তোমার কিছু হয়?”

“ আমারও কিছু হবে না। আমি এবং বাবু আমাদের শান্তর ভালোবাসা রেখে কিভাবে হারিয়ে যাবো বলো? ভয় পেয়ো না। আমরা সুস্থ আছি এবং থাকবো।”

“ তুমি আমাকে যতই বোঝাও, তবুও বলবো চাকরিটা ছেড়ে দাও। আমি যথেষ্ট ভালো কাজ করি, তাই তোমার চাকরি করার কোন প্রয়োজন নেই।”

“ শান্ত এবার পা/গ/লা/মি করছো তুমি। এটা আমার স্বপ্ন। তুমি সবটা জানো, তারপরও?”

“ দেখো আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার পক্ষে এটা মানা সম্ভব নয়। আমি চাইছি না তুমি চাকরি করো। তাই কাল থেকে আর স্কুলে যাবে না।”

“ শান্ত….।”

নীলিকে থামিয়ে দিয়ে শান্ত বললো,“ আমি আমার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি।”

শান্ত চলে গেল। নীলি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,“ যে ভালোবাসা স্বপ্নকে ভেঙে দেয় তাকে কেমন ভালোবাসা বলে?”

_____
সাহানা বেগম রান্নাঘরে রান্না করছিলেন। তখন তার ফোনটি বেজে উঠলো। সাহানা বেগম তার স্বামীর উদ্দেশ্য বললেন,“ কি গো শুনছো? ফোনটা বাজছে একটু ধরো না।”

ভিতর থেকে তার স্বামী জবাব দিলেন,“ আমি উপহার দেখছি, তুমি ধরো।”

সাহানা বেগম বিরক্ত হয়ে হাতের কাজ রেখে ফোন রিসিভ করতে চলে গেলেন। ফোনটি রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলতে ওপাশ থেকে বললো,“ আপনার মেয়ে সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে পড়ে গেছে, আপনি যদি একটু নিচে এসে তাকে নিতেন।”

“ মানে? আমার মেয়ের কি হয়েছে?”

“ পা ভেঙে গেছে বোধহয়। একটু তাড়াতাড়ি আসুন।”

মেয়ের খবর শুনে সাহানা বেগম তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলেন। তাড়াহুড়োতে তার স্বামীকে বলার কথা মাথায় আসলো না। সাহানা বেগম নিচে গিয়ে মেয়ে বা অন্য কাউকে দেখতে পেলেন না। সাহানা বেগম একটু এগিয়ে গিয়ে গেটের দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করলেন,“ রিমু কোথায়?”

“ রিমু সকালে স্কুল গেল, কই তারপর তো ফেরেনি।”

“ কি?”

দারোয়ান আরো কিছু বলছিলো, সাহানা বেগম কানে না দিয়ে রিমুর স্কুল শিক্ষককে ফোন দিলেন। শিক্ষকের থেকে নিশ্চিত হলেন, রিমু এখনো স্কুলে। তবে সাহানা বেগমকে ফোন কে করলো? এবং কেন?
সাহানা বেগম এসব ভাবতে ভাবতে নিজের ফ্লাটে চলে এলেন।

সাহানা বেগম আনমনে ফ্লাটে প্রবেশ করলেন। এইমাত্র তার সাথে কি হলো, ব্যপারটি তার বোধগম্য হলো না।
সাহানা বেগম তার সাথে ঘটা ঘটনাটি বলার জন্য তাদের শোবার ঘরে স্বামীর কাছে গেলেন।
শোবার ঘরে প্রবেশ করে সাহানা বেগম চিৎকার দিয়ে উঠলেন।
*
পুলিশ রাব্বি সাহেবের মৃ/ত/দে/হ নিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সাহানা বেগম কান্না করছে। সাহানা বেগম এখনো মেনে নিতে পারছেন না, তার স্বামী বেঁচে নেই। ফ্লাট থেকে নিচে গেলেন, উপরে আসলেন এতটুকু সময়ের মধ্যে তার স্বামীকে কেউ মে/রে দিয়ে চলে গেল।

সাহানা বেগমকে শান্ত করার চেষ্টা করছে তার প্রতিবেশীরা। পুলিশ মৃ/ত/দে/হ ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাহানা বেগমের কাছে আসলেন। একজন অফিসার বললেন,“ আপনি একটু শান্ত হয়ে আমাদের সাহায্য করুন কেসটা সমাধানে। দেখুন যা ঘটেছে আমরা তা বদলাতে পারবো না। তবে আপনার সহযোগিতায় আমরা কেসটা সমাধান করতে পারি। অপরাধীকে শাস্তি দিতে পারি।”

সাহানা বেগম কোন-রকম শান্ত হয়ে বললেন,“ নিচ থেকে উপরে এসে শোবার ঘরে প্রবেশ করে ওর(স্বামীর) র/ক্তা/ক্ত মৃ/ত/দে/হ দেখতে পাই।”

সাহানা বেগম পুনরায় কান্না করে দিলেন। অফিসার সাহানা বেগমের ফোন চাইলেন, ফোন পাওয়ার পর সেখানে চেক করলেন। কিন্তু ফোনে স্কুল শিক্ষকের নাম্বারটি শেষ কলে থাকলেও, তার পূর্বে সাহানা বেগমের কাছে আসা কলটি নেই। অর্থাৎ ফোনে কোন অচেনা নাম্বার নেই।

অফিসার রহস্যময় দৃষ্টিতে সাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে রইলেন।
___
সকালে ঘুম থেকে উঠে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো নীলি। নীলিকে তৈরি হতে দেখে শান্ত বলে,“ তুমি আমার কথা শুনবে না?”

“ ছেলেমানুষী আবদার রাখা যায় না শান্ত।”

“ আমি তোমার স্বামী নীলি। তুমি আমার কথা অমান্য করে চাকরি করতে যাচ্ছো? আমাদের সন্তানেের কথা ভাবছো না?”

“ দেখো শান্ত, আমি সন্তানের কথা ভাবছি। তবে শুধু আমার গর্ভের নয়, সাথে সেই সন্তানদেরও যাদের আমি শিক্ষা দেই। আমার স্কুলের সকল ছাত্র -ছাত্রী আমার সন্তান। এক সন্তানের জন্য অন্য সন্তানদের ক্ষতি কিভাবে করবো আমি?”

“ তুমি না গেলে তাদের কোন ক্ষতি হবে না। তোমার স্থানে অন্যকেউ ঠিকই দখল করে নেবে।”

“ তাদের শূন্য স্থান ভরলেও আমার যে ভরবে না শান্ত। আমার হৃদয়ে তাদের জন্য যে স্থান আছে, সেটা কে ভরাবে?”

“ আমি কিছু জানি না। তুমি চাকরি করবে না মানে করবে না।”

“ ভয় পেয়ো না, তোমার পরকীয়া আমাকে তোমার থেকে দূরে করতে পারবে না। অনেক কষ্ট তোমায় পেয়েছি, কারো জন্য ছাড়ি কিভাবে?”

শান্ত চমকে উঠলো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,“ মানে?”

নীলি চোখের অশ্রু কোনমতে সামলে বললো,“ মানেটা তুমি জানো শান্ত। ভালোবাসা ভালো তবে বড়ো ভালোবাসা ভালো না।”

নীলি চলে গেল। শান্ত বিষ্ময় নিয়ে সেখানে বসে রইলো। শান্ত যে ভয় পাচ্ছিলো, সেটা নীলির সামনে প্রকাশ পেয়ে গেছে। তাহলে নীলি তাকে কিছু বললো না কেন? নিজের মধ্যে রাখছে কেন?
শান্তর ফোনে একটি মেসেজ আসলো। তাতে লেখা ছিলো,“ খুব তাড়াতাড়ি তোমার স্ত্রীর কাছে ছবিগুলো পাঠাবো।”

শান্ত মেসেজটি দেখে স্লান হেসে মনেমনে বললো,“ তার আর প্রয়োজন হবে না।”

*
চলবে,