সম্পর্কের অধিকার পর্ব-২২+২৩+২৪+ বোনাস পর্ব

0
478

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব২২

রিয়ন রুমে এসে ইন্দুকে ফ্লোরে দেখে তার মেজাজ তো একদম হাই। রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে এক হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে। মাথা ঝুঁকে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে দেখে ইন্দু ঘুমে বিভোর।
রিয়ন তার বিন্দুকে ফ্লোরে দেখে এতোটাই চটে আছে যে, ইন্দু যদি ঘুমন্ত অবস্থায় না থাকতো তাহলে এ মেয়ের কপালে যে শনি ছিলো সেটা নিশ্চিত।
রিয়ন তার বিন্দুকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিতে দিতে বলে, এই মেয়েটার কি প্রবলেম আমি বুঝিনা! যতোবার বলি ফ্লোরে ঘুমাবেনা, ও ততোবারই ফ্লোরে ঘুমাবে।

ইন্দুকে বিছানায় শুইয়ে দিতেই পাশ ফিরে গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে পরে। রিয়ন তার বিন্দুকে এভাবে দেখে একটু মুচকি হেসে বলে, এই রিয়ন আহনাফ রুপন যে, কারও প্রেমে এতোটা ডুবে যাবে সেটা কখনো ভাবতেই পারিনি। বিন্দুতে এভাবে হারাবো সেটা ভাবিনি। অবস্থান টা ছোট্ট বাট সবকিছুর শুরু ঐ বিন্দুতেই। ভালোবাসি বিন্দু, তোমায় সত্যি খুব ভালোবাসি বিন্দু।
রিয়নের ভালোবাসা আর আবেগ মাখা কথাগুলে ইন্দুর অজানাই থেকে গেলো। রিয়নের আবেগ জড়ানো কথাগুলো জানতেও পারলোনা তার বিন্দু।

ভোরে ঘুম ভেঙে গেছে ইন্দুর। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে আর ভাবছে সে তো ফ্লোরে ঘুমিয়েছিলো কিন্তু বেডে আসলো কি করে! ঘুমের ঘোরে তো হাঁটার অভ্যাস ও নেই! তবে কি রিয়ন বাবু তুলে এনেছে বেডে? যদি তাই হয় তাহলে তো কোলে তুলে নিয়ে এসেছে। রিয়ন যে ইন্দুকে কোলে তুলে নিয়ে এসেছে সেটা ভেবে ইন্দু একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে রিয়নের দিকে তাকায়।
রিয়ন হাত দুটো ভাঁজ করে ঘুমাচ্ছে। ইন্দু বলছে অভিমান করে থাকবেন অথচ দুরে থাকতে দেবেননা! এখনো কথা বলবেন না আমার সাথে? আমিও দেখি কতোদিন আমার সাথে কথা না বলে থাকেন।

ইন্দু উঠে ফ্রেশ হয়ে এসে রিয়নকে ডেকে তুলে দুজনেই নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ পড়ে রিয়ন আবার ঘুমিয়ে পরে। ইন্দু সবাইকে চা কফি দিয়ে তার ভালো মায়ের সাথে নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত। কিছু সময় পরে রিয়নের মম( ইন্দুর ভালো মা) বলে, ইন্দু দেখতো রিয়ন উঠেছে কি না, ওকে কফিটা দিয়ে আয়। ইন্দু দাঁত বের করে হেসে বলে ঠিক আছে ভালো মা, তোমায় টেনশন করতে হবে না। আমি কফি করে নিয়ে যাচ্ছি তোমার ছেলের জন্য। এই বলে ইন্দু রিয়নের জন্য কফি নিয়ে উপরে চলে যায়।

ইন্দু রুমে গিয়ে দেখে রিয়ন এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। ইন্দু কফি মগটা নিয়ে সেন্টার টেবিলে রাখতেই মাথায় একটু দুষ্টু বুদ্ধি খেলে যায় তার মাথায়। ইন্দু একটা বাঁকা হাসি দিয়ে রিয়নের পাশে বসে। তারপর মাথাটা রিয়নের দিকে ঝুঁকিয়ে ধিরে ধিরে রিয়নের হাতের একটা আঙুল টেনে কফিতে ডুবিয়ে দেয়।
ঘুমের মধ্যে গরম কফিতে আঙুল ডুবলে ছ্যাকা লাগাটা তো স্বাভাবিক বিষয়। আর ঘুমের মধ্যে ছ্যাকা খেলে তো চিল্লিয়ে ওঠাটা আরও স্বাভাবিক একটা বিষয়। রিয়নের বেলায় ও ঠিক তাই হলো।

কিন্তু ইন্দুর বেলায় হলো উল্টোটা। রিয়নের এমন অবস্থা দেখে ইন্দুর হাসিতে ফেটে পরার কথা। কিন্তু সেটা না করে ইন্দু দুই হাত কোমরে রেখে চোখ, মুখ কুঁচকে রেগে রিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। ইন্দুর এভাবে তাকানো দেখে রিয়ন তো ফিক করে হেসে ফেলে।

রিয়নকে হাসতে দেখে ইন্দু আরও রেগে রিয়নের দিকে তেড়ে গিয়ে দু হাতে রিয়নের মাথার চুল টানতে গিয়ে ও হাত ফিরিয়ে আনে। ইন্দুর এমন অবস্থা দেখে রিয়ন আরও শব্দ করে হেঁসে ওঠে।

ফ্ল্যাশব্যাক-

রিয়ন ঘুম থেকে চোখ মেলতেই দেখতে পেলো ইন্দু কফি নিয়ে রুমে ঢুকছে। তাই রিয়ন ইচ্ছে করে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান করে থাকে। কারণ রিয়ন ভাবছে দেখি, আমি ঘুমিয়ে থাকলে আমার বিন্দু কি করে।রুমে ঢুকে ইন্দু যখন রিয়নের দিকে ঝুঁকে গরম কফিতে আঙুল ডুবোয় তখনই রিয়ন চিল্লিয়ে ধড়ফড়িয়ে উঠতে গিয়ে ইন্দুর কপাল রিয়নের কপালে লেগে স্কুলের ঘন্টার মতো ঢং করে বেজে ওঠে। ব্যাস হয়ে গেলো! ইন্দু রেগে গেলো।

ইন্দু তো আহ! বলে নিজের কপালে হাত বুলোতে থাকে। রিয়ন ই বা বাদ যাবে কেনো! রিয়ন ও উহ! বলে কপালে হাত দিতে যাবে তখনি কফির মগে রিয়নের হাত লেগে যায়। তার পর আর কি! যা হবার তাই হলো! কফি পড়লো ইন্দুর শাড়িতে আর ইন্দুও রেগে আগুন। বাকিটা তো আপনারা জানেন।

রিয়নঃ তা বিন্দু সোনা, ভালোই তো হলো সকাল সকাল তোমার কপাল আর আমার কপাল মিলে গেলো। চলো দুজন একসাথে ফ্রেশ হয়ে আসি। রিয়নের কথা শুনে ইন্দুর যেন মনে হলো আগুনে ঘি ঢালছে রিয়ন।

ইন্দুঃ বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে রিয়নের দিকে ছুঁড়ে মারে। রাগে গজ গজ করতে করতে ওয়ার্ডরোব থেকে শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে।

ইন্দু নিচে চলে যেতেই রিয়ন অট্টহাসিতে ফেটে পরে। কিছুক্ষণ পরে রিয়ন ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে। সবাই বসে নাস্তা করছে। রিয়ন আর ইন্দুর ভাব দেখে দাদু বুঝতে পেরেছে এ দুজনতো কিছু একটা গড়বড় করেছে। ইন্দু খাবার সার্ভ করছে দাদুর কাছে যেতেই দাদু চুপি চুপি জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে রে দাদুভাই?
দাদুর কথা শুনে ইন্দু কিছু বলবে তার আগেই দাদুর পাশের চেয়ার থেকে রিয়ন দাদুর দিকে মুখ এগিয়ে ফিসফিস করে বলে, ও কি বলবে দাদু? ও কিছু বলতে পারবেনা। তার থেকে ভালো হবে খাওয়া শেষ করে আমিই তোমায় বুঝিয়ে বলবো। এখন জলদি খেয়ে নাও তো দাদু।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু মুখটা বাকিয়ে রিয়নের সামনে থেকে সরে যায়। ইন্দুর এভাবে চলে যাওয়া দেখে দাদু চশমার উপর দিয়ে চোখ দুটো টানা টানা করে তাকায়।

রুপকঃ রিয়নের পাশের সিট থেকে রুপক ফিসফিস করে বলে, শুধু দাদুকে বললে হবেনা আমাকেও বলতে হবে। আমিও শুনতে চাই।

ওদের কথ শুনে রাই শব্দ করে বলে ওঠে আমাকে না বললে তোমাদের কাউকে শুনতে দিবোনা।

রাইকে এভাবে বলতে দেখে রুপক দুই হাত একসাথে করে বলে, বইন তোকে আগে শোনার চান্স দেওয়া হবে তবু, এইবার তুই থাম!

রিয়নের মমঃ কি হলো খাওয়া বাদ দিয়ে কিসের এতো গল্প শুনি? আগে নাস্তা শেষ করো তারপর বসে যতো খুশি গল্প করো।
রিয়নের মমের কথা শুনে সবাই খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
নাস্তা করে সবাই সোফায় বসে পরে রিয়নের গল্প শোনার জন্য। সবাই গল্প করছে। ইন্দু আর রিয়নের মম নাস্তা করছে।

সোফায় বসা সবাই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে। সাথে রিয়নও হাঁসছে। সবাইকে এভাবে হাসতে দেখে রিয়নের মম সবাইকে একবার দেখে নেয়। তারপর ইন্দুর দিকে তাকায়। ইন্দুর কোন দিকে নজর নেই। একমনে খেয়ে চলেছে। রিয়নের মম বুঝতে পেরেছে সবাই যে কারণে হাসছে ইন্দুর তা অজানা নয়। তাই ইন্দুর কোন রিএকশন নেই এ ব্যাপারে।

রিয়নের মম কৌতুহলী দৃষ্টিতে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে ইন্দু?
ইন্দু মাথা তুলে তার ভালোমাকে বলে কোথায় কি হয়েছে ভালো মা?

রিয়নের মমঃ ইন্দু! আমি খুব ভালো করে জানি তুই সবকিছু জানিস। তাই পাল্টা প্রশ্ন করা বাদ দে। ঠিকঠাক জবাব দে।
ইন্দুঃ ইনোসেন্ট মুখ করে ভালো মা কে বলে, তুমি শুনলে তো তুমিও ওদের মতোই হাসবে।

রিয়নের মমঃ ওকে হাসবোনা এবার তো বল।
ইন্দুঃ সকালের ঘটনা তার ভালো মা কে বললো।
তার ভালোমা শব্দ করে না হাসলেও মুখ টিপে হাসছে।
ইন্দুও হাঁসি হাঁসি মুখে ভালোমাকে বলে, তোমার ছেলে যে সবার সাথে এতোটা হাসিখুশি আছে, এটা দেখে খুব ভালো লাগছে।
তবে তোমার ছেলেকে আমি ছেড়ে দিবোনা। ঠিক সময়মতো হিসাব টা বুঝে নিবো।

রিয়নের মমঃ হাসতে হাসতে বলে, আমিও চাইনা তুই আমার ছেলেটাকে কখনো ছেড়ে দিস। কখনো ছাড়বিনা একদম না।
ইন্দু আর রিয়নের মম দুজনেই হাসতে থাকে।

আজ ফ্রাইডে তাই সবাই বাসায়। লাঞ্চের আগমুহূর্ত পর্যন্ত হৈচৈ আড্ডাতে কেটে গেছে। লাঞ্চ করে সবাই যার যার রুমে চলে যায়। এখন রেস্টের প্রয়োজন। ইন্দু নিজের রুমে না গিয়ে রাইয়ের রুমে যায়। দুজন গল্প করে একসাথে ঘুমিয়ে পরে।

এদিকে ইন্দুর রিয়ন বাবু তো হেব্বি রেগে আছে। লাঞ্চের পর থেকে এখন অবধি তার বিন্দু রুমে আসেনি। রিয়ন পুরো রুম জুড়ে পায়চারী করছে আর মনে বুলি আওড়াচ্ছে, “এই মেয়েটা বড্ড উদাসী, বড্ড একরোখা, সুধরোবেনা কখনো।”
তবে এই একরোখা উদাসী মেয়েটাকেই তো আমি ভালোবাসি। বড্ড বেশি ভালোবাসি। সকালে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। ওকে নিয়ে এতোটা হাসাহাসি না করলেও পারতাম। বিন্দু কি রেগে আছে? তা না হলে আমার সামনে আসছেনা কেনো? কিন্তু ও আছেটা কোথায় দেখতে হবে। রিয়ন রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে এসে ডাইনিংয়ে তাকায় কিন্তু সেখানে ইন্দু নেই। তাহলে কোথায় আছে? রিয়ন এক পা দু পা করে রাইয়ের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। দরজা খোলা দেখে রুমে উঁকি দিতেই দেখলো রাই আর বিন্দু দুজন দুজনকে জরিয়ে শুয়ে আছে। রিয়ন সন্তর্পণে হেঁটে বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। দুজনকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে রিয়ন মিটমিট করে হেঁসে অস্পষ্ট স্বরে বলে দুইটাই পাগলি।তারপর একটা ছবি তুলে নেয় রিয়নের মুঠোফোনে। তারপর নিজের রুমে চলে আসে।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ইন্দু আর রাই বসে আছে তখন রাই বলে তা ভাইয়াকে জব্দ করারা কোনো নতুন প্ল্যান করেছো নাকি মিষ্টি ভাবি!
বিন্দু একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে প্ল্যান তো আছেই ননদিনী। তোমার ভাইকে কি কি ভাবে আমি জ্বালাই।

চলবে….

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৩

মাগরিবের নামাজ আদায় করে ইন্দু রুম থেকে বের হতে যাবে তখন পেছন থেকে রিয়ন ইন্দুর বাহু চেপে ধরে। ইন্দু ঘুরে রিয়নের দিকে তাকাতেই রিয়ন চোখমুখ শক্ত করে বললো, সারাদিন হৈ হৈ করে মন ভরেনি তাই না? এখন আবার যাচ্ছো আড্ডা দিতে হ্যা।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু স্তম্ভিত হয়ে যায়। নির্বাক হয়ে রিয়নের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি করবো তাহলে?

রিয়নঃ একটু রাগ দেখিয়ে বলে, কি করবে মানে? তুমি কি ভুলে গেছো, তুমি একজন স্টুডেন্ট? একজন স্টুডেন্টের কি করণীয় সেটা জানোনা? নাকি বিয়ে করে নিয়েছো বলে সব উদ্ধার করে দিয়েছো। আজকের পর থেকে পড়ার টাইমটাতে তোমায় যেন কোথাও আড্ডা দিতে না দেখি। আর বাসার কোনো কাজ তোমায় করতে হবে না। সার্ভেন্ট আছে কাজের জন্য। তুমি মন দিয়ে স্টাডি করো।

ইন্দু রিয়নের কথা শুনে মনে মনে রিয়নকে হাজারো কথা শোনাতে শোনাতে হঠাৎ তাঁর মাথায় একটা ফাঁকিবাজি বুদ্ধির উদয় হয়। তৎক্ষনাৎ রিয়নকে বলে আমার বইগুলো তো…

রিয়নঃ ইন্দুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বলে, আছে। তোমার সকল বইপত্র রিডিং রুমে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা আছে। ঐ রুমে তোমার সব ব্যবস্থা করা আছে। আঙুল দিয়ে রিয়নের রুমের পাশের রুমটা দেখিয়ে বলে কথাটা।

একচুয়েলি ওই রুমটা ফাঁকা ছিলো বলে ওখানে ইন্দুর পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইন্দু নিজের মুখটা বাংলার পাঁচ করে রিডিং রুমের দিকে পা বাড়াবে তখন রিয়ন বলে –

শোনো,লাইফে অনেকটা সময় পাবে অনেক সুযোগ পাবে এনজয় করার জন্য, তবে কেরিয়ার গড়ার সুযোগটা খুবই কম পাবে। তাই যেটুকু সুযোগ পাবে তার সদ্ব্যবহার করবে।

আমি চাইনা বিয়ের অজুহাতে তোমার কেরিয়ার টা নষ্ট হয়ে যাক। তোমার মেইন ফোকাস হোক তোমার কেরিয়ার। এই কথাগুলো যেন আমায় দ্বিতীয়বার বলতে না হয়। এবার যাও মন দিয়ে পড়াশোনাটা করো।

ইন্দু মাথাটা নেড়ে হ্যা জবাব দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রিয়নের কথাগুলো ইন্দুর কোমল হৃদয়টা নাড়া দিয়ে যায়।রিয়নের জন্য তার এমনিতেই একরাশ ভালোলাগা কাজ করে। তার উপর আজকের এই মোটিভেশনাল কথাবার্তায় ইন্দুর মনে রিয়নের জন্য আলাদা একটা স্পেস তৈরি হলো।

ইন্দু মন দিয়ে পড়াশোনা করছে। পড়াশোনার প্রতি ঝোঁকটা তার বরাবরই ছিলো। পড়ার সময়টাতে কোনো ফাঁকিঝুকি দেয়না ইন্দু।
রাত দশটা..
রাই এসে ইন্দুকে ডেকে গেছে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। ইন্দু নিচে গিয়ে দেখে সবার খাবার খাওয়া প্রায় শেষের দিকে। শুধু রাই, রিয়নের মম আর ইন্দু বাকি আছে।

রাই পড়তে বসেছিলো। একচুয়েলি ইচ্ছে করে পড়তে বসেনি। রিয়ন সুন্দর করে ঝাড়ি দিয়ে পড়তে বসিয়েছে। আর রিয়নের মম সবাইকে খাবার সার্ভ করছে। রাই আর ইন্দুর সাথে খাবে বলে এখনো খেতে বসেনি।

রাতের খাবার খেয়ে ইন্দু আবার রিডিং রুমে গিয়ে পড়তে বসেছে। কারণ রিয়ন খাবার খেয়ে উঠে আসতেই রাই আর ইন্দুকে কড়া গলায় বলেছে খাবার খেয়ে যেনো পড়তে বসে। এটাও বলেছে ১২ টার আগে না ঘুমাতে।

ইন্দু খুব মনোযোগের সাথে পড়ছে। এর মাঝে রিয়ন এসে দুবার দেখে গেছে। সেটা ইন্দু বুঝতে ও পারেনি। রাইয়ের খোঁজ ও নিয়েছে রিয়ন।

রাত ১২ টা রিয়ন ইন্দুর রিডিং রুমে এসে তো অবাক হয়ে যায়। ইন্দু পড়ার টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। রিয়ন মনে মনে ভাবছে এই বিন্দুটাও না! কি যে করে!
এভাবে কেউ ঘুমায়? ঘুম পেলে বেডে গিয়ে ঘুমালেই তো পারতো,তা না করে এখানেই ঘুমিয়ে পরেছে।
রিয়ন ইন্দুকে কোলে তুলে নিয়ে বিডে শুইয়ে দেয়।

রিয়ন ফ্রেশ হয়ে এসে ইন্দুকে দেখে তো হতবাক। বিছানায় এটা কে! এটা বিন্দু নাকি বাংলাদেশের মানচিত্র? পুরো বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।
রিয়ন ইন্দুকে ঠিকঠাক করে শুইয়ে দিয়ে নিজেও শান্তিতে শুয়ে পরে। তবে শান্তি টা রিয়নের বেশিক্ষণ স্থায়ী হলোনা। কারণ ইন্দু বিদ্যুতের গতিতে হাতপা ছোড়াছুড়ি করছে। একবার বাম হাতটা ধপাস করে রিয়নের বুকে ফেলছে তো আবার ডান হাতটা মুখের উপর ফেলছে। রিয়ন সাবধানে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে নিজে বিছানায় পিঠ দিতেই ইন্দু রিয়নের পায়ের উপর পা উঠিয়ে দেয়।
একের পর এক রিয়নকে জ্বালিয়ে মারছে ইন্দু।টিকতে না পেরে রিয়ন উঠে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ভাবছে এই বিন্দুর আবার কি হলো জ্বীনে টিনে ধরলো নাকি? এভাবে তো কখনো ঘুমায় না। তাহলে আজ কেনো এমন করছে?

রিয়ন বিছানায় শোয়নি বলে ইন্দু মিটমিট করে তাকিয়ে দেখে নিলো রিয়ন কি করছে। রিয়নকে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে ইন্দুর তো প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। কিন্তু এই মুহুর্তে হাসা যাবেনা। হাসলে তো সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে। অনেক কষ্টে হাসি চেপে চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভাবছে কেমন লাগে এখন রিয়ন বাবু? আমাকে মিথ্যা বলা? এখন কেমন লাগে? আমি নাকি কোলবালিশ ছুঁড়ে ফেলে আপনার বুকে জরিয়েছিলাম এখন কেমন লাগছে।

ফ্ল্যাশব্যাক-
রাত ১২ টা বাজতে ২ মিনিট বাঁকি। আর মাত্র ২ মিনিট পরে রিয়ন দেখতে আসবে ইন্দু ঠিকমতো পড়ছে কিনা? এটা ভেবেই ইন্দুর মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি উদয় হলো। ইচ্ছে করে পড়ার টেবিলটাতে মাথ রেখে ঘুমের ভাব ধরে থাকে ইন্দু। একচুয়েলি সে দেখতে চায় রিয়নের রিএকশনটা কেমন হয়। তার পরে কি হলো তা তো আপনারা জানেন।

ভোরে ইন্দুর ঘুম ভেঙে যেতেই তো চোখ কপালে..
রিয়ন ওকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে। ইন্দু রিয়নের থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই ঘুম ঘুম কন্ঠে রিয়ন বলে উমম বিন্দু পাখি! কি করছো কি! এতো ভোরে ডিসটার্ব করছো কোনো? সারারাত তো ঘুমোতে দাওনি এখনো ডিস্টার্ব করছো?

ইন্দুঃ নামাজের সময় হয়েছে উঠুন নামাজ পড়ে আবার ঘুমাবেন।

রিয়নঃ না পাখি তখন আর এতো আরামের ঘুম হবেনা। কারণ তখন তুমি থাকবেনা। আমি একটা ডিসিশন নিলাম জানোতো? এই তুমি আর আমি না এক বিছানায় এভাবে থাকবোনা।

ইন্দু তো খুশি মনে বলে সত্যি বলছেন?

রিয়নঃ হুম, সত্যি বলছি। এভাবে মাঝে কোলবালিশ দিয়ে না ঘুমিয়ে বরং তোমায় এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমোবো আমি।
তাতে আমার ঘুমটাও ভালো হবে। সাথে তোমার হাত পা ছোড়াছুড়িটাও বন্ধ হবে।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু লজ্জায় লাল হযে মাথা নিচু করতেই রিয়নের বুকে মাথা পরে ইন্দুর। রিয়ন হালকা করে ইন্দুর মাথয় ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়। ইন্দু জানতেও পারেনা।

নামাজ পড়ে ইন্দু কফি নিয়ে আসে রিয়নের জন্য। রিয়ন কফি নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। ইন্দু বাকিদের চা কফি দিয়ে রুমে এসে রিয়নের সব কিছু গুছিয়ে রাখে। কারণ রিয়ন আজ থেকে আবার অফিসে যাবে।

ইন্দু তার ভালোমায়ের সাথে নাস্তা তৈরী করছে সবার জন্য। রিয়ন কফি শেষ করে নিচে এসে ইন্দুকে নাস্তা তৈরি করতে দেখে একটু চটে যায়। সকাল সকাল পড়াশোনা বাদ দিয়ে নাস্তা তৈরি করছে ইন্দু। রিয়নের তো রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু ইন্দু রিয়নকে ঠিক বুঝিয়ে শুনিয়ে ঠান্ডা করেছে। ভালো মা একা একা নাস্তা তৈরি করছে সাথে একটু সহযোগিতা করলে যে ইন্দুর পড়াশোনার কোনো প্রবলেম হবেনা সেটা রিয়নও খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে।

সকালের নাস্তা করে রিয়ন আর আশফাক খান অফিসে চলে যায়। রিয়ন অফিস যাওয়ার সময় ইন্দুকে বলেছে কোনো প্রয়োজন হলে যেনো তাকে ফোন করে জানায়। ইন্দু ঘার নেড়ে সায় দেয়।

রিয়ন অফিসে পৌছানোর কিছুক্ষণ পরেই তার ফোনটা বেজে ওঠে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখে বিন্দু ফোন করেছে। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে ঝুড়ি ঝুড়ি প্রশ্ন করতে শুরু করে ইন্দু। কখন পৌঁছেছে অফিসে? অফিসে পৌঁছে ফোন কেন দেয়নি? এখন কি করছে?
রিয়ন ইন্দুর সব প্রশ্নের জবাব দিতে হাঁপিয়ে উঠছে। ফোন রেখে মাথায় হাত দিয়ে বলে, ওহ গড! এতো প্রশ্ন কেউ কিভাবে করে।

দুই ঘন্টা পরে আবার ফোন করেছে ইন্দু। তবে তখন কোনো প্রশ্ন করেনি। রুপকের কাছে খাবার পাঠিয়েছে সেটা বলতেই ফোন করেছে।

লাঞ্চ টাইমে আবার ফোন করেছে। লাঞ্চ করেছে কিনা তা জানতে । এভাবে অনেকবার ফোন করে রিয়নকে বিরক্ত করেছে ইন্দু। সারাটা দিন ধরে প্রয়োজনেও ফোন করেছে অপ্রয়োজনে ও ফোন করেছে।

তবে এতোবার ফোন করেও ইন্দু বুঝতে পারলোনা রিয়ন ইন্দুর উপর বিরক্ত কিনা। ইন্দু তো চেয়েছিল রিয়ন তার উপর বিরক্ত হোক। কিন্তু রিয়নকে দেখে তো তা মনে হচ্ছে না! রিয়ন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিচ্ছে। ইন্দু রিয়নের জন্য কফি দিয়ে পড়তে বসেছে।

রাত প্রায় বারোটা, ইন্দু পড়া ছেড়ে উঠে গিয়ে রিয়নকে বলে আমার জন্য কি এনেছেন?
রিয়ন তো আকাশ থেকে পরেছে ইন্দুর কথা শুনে। এ মেয়ে বলে কি! সারাদিন এতোবার ফোন করেছে, কই একবারও তো বলেনি কিছু আনতে!

রিয়নঃ কি এনেছি মানে? তুমি তো কিছু আনতে বলোনি।
ইন্দুঃ আমি বলবো তবে আনবেন? তাছাড়া বুঝি আনা যায় না? রাত জেগে পড়লে আমার ক্ষুধা লাগে। হালকা কিছু না খেলে ঘুম হয়না। আমি এখন চকলেট খাবো এনে দেন।

ইন্দুর কথা শুনে রিয়ন লাফিয়ে উঠে বলে কি……! এতো রাতে চকলেট!

চলবে…..

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৪

ইন্দুর কথা শুনে রিয়ন লাফিয়ে উঠে বলে কিহ্ ! কি যা তা বলছো? এতো রাতে চকলেট! তোমার মাথা ঠিক আছে বিন্দু সোনা! এখন রাত বারোটা। আর তুমি বলছো এখন চকলেট নিয়ে আসতে!

ইন্দুঃ হুম তো! রাত বারোটা বাজে তাতে কি?
রিয়নঃ কোথায় পাবো এখন বলো?
ইন্দুঃ সেটাতো আমি জানিনা! আর আমার জানার কথাও নয়। আমি এখন চকলেট খাবো মানে খাবোই। এনে দেন জলদি করে।
রিয়নঃ ওকে, জাস্ট অ্যা মিনিট, আমি অনলাইন অর্ডার করে দিচ্ছি। এক্ষুনি চলে আসবে।
ইন্দুঃ না সেটা তো হবে না। যেহেতু ভুল করেছেন তাই রুমে বসে থেকে নয়, নিজে গিয়ে আনবেন। দুই হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে ইন্দু রিয়নকে বলে, তা না হলে কিন্তু সারারাত বসে বসে কাটাতে হবে।

ইন্দুর কথা শুনে রিয়নের গতরাতের কথা মনে মনে পরে যায়। বাবাহ্ কি দস্যি মেয়ে! এটা তো রিতীমত হুমকি দিচ্ছে। রিয়ন বেড ছেড়ে উঠে যেতে যেতে বলে ঠিক আছে, ঠিক আছে আমি দেখছি কি করা যায়। তুমি যাও। গিয়ে পড়তে বসো।
রিয়ন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে তার বিন্দুর বায়না মেটাতে।

ইন্দু গিয়ে পড়তে বসে।
কিছুতেই পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছেনা ইন্দু। কারণ তার ভালোবাসা যে এতো রাতে এভাবে বাইরে গিয়েছে। যদিও ইন্দু নিজেই পাঠিয়েছে তবুও চিন্তাটা তো আর দুর হয়ে যায় না। ইন্দু রিয়নকে বাহিরে পাঠিয়েছে রিয়নের ভুলের জন্যই। খুব তো ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তাহলে ভালোবাসার মানুষটার প্রতি এতোটা কেয়ারলেস হলে চলবে কি করে? তার ভালোবাসার মানুষটার জন্য তো একটু ভালোবাসা, একটু কেয়ার, একটু খুশি, একটু ভালোলাগা হাতে করে বয়ে আনতেই পারে। তা না এনে শূন্য হাতে এলো কেনো সে!

একদিকে রিয়ন বাসার বাইরে বেরিয়েছে অন্য দিকে ইন্দু টেনশনে রুমে পাইচারি করছে। রিয়ন যতোক্ষণ বাসায় না ফিরছে ততক্ষণে তো ইন্দুর শান্তি নেই।
রিয়ন অবশ্য অনলাইন অর্ডার করতে চেয়েছিল কিন্তু ইন্দু সেটা করতে দেয়নি। বলেছিলো নিজে গিয়ে নিয়ে আসতে।
রিয়ন ও এখানে ওখানে ঘুরছে গাড়ি নিয়ে। কারণ এতো রাতে চকলেট পাওয়াটা এতোটা সহজ কাজও নয়।
কিছুক্ষণ পরে গাড়ির শব্দ শুনে ইন্দু একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে।

গাড়ি পার্ক করে রেখে রিয়ন নিজের রুমে চলে আসে। রিয়ন রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে সোজা রিডিং রুমে চলে যায়।

রিয়নের হাতে কিছু না দেখে ইন্দু এদিক ওদিক উঁকি ঝুঁকি দিতে থাকে। কিন্তু নাহ্ কোথাও তো কিছু দেখতে পাচ্ছে না সে। আর রিয়নের হাতটাও তো ফাঁকা। তাহলে কি রিয়ন চকলেট আনেনি?

রিয়নঃ ইন্দুকে উঁকি ঝুঁকি দিতে দেখে জিজ্ঞেস করলো কি হলো, চোরের মতো উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছো কেনো?

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু আর কিছুতেই চুপ থাকতে পারলোনা বলেই দিলো, আপনাকে আমি কিছু আনতে বলেছিলাম।

রিয়নঃ হুমম! বলেছিলে বাট এতো রাতে না পেলে আমি কি করতে পারি বলো! চলো ঘুমাবে চলো।
ইন্দুঃ হুম সেটা তো ঠিকই না পেলে আপনি কি করবেন! তবে আমার অনেক কিছু করার আছে। আপনি এখন যান এখান থেকে।

রিয়নঃ কি করবে তুমি এখন? আর অনেক কিছুই করার আছে মানেটা কি হুহ্। ঘুমাবেনা তুমি?
ইন্দুঃ চোখমুখে রাগী ভাব এনে বলে না ঘুমোবোনা। আপনাকে বলেছি না! চকলেট না খেলে এখন আমার ঘুম হবে না। আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পরেন। আমি জেগে জেগে কাটিয়ে দিবো রাত যান আপনি।

রিয়নঃ বিন্দু! এভাবে জিদ করোনা। তুমি খুব ভালো করে জানো, তোমায় ছাড়া আমি ঘুমোবোনা। আর তোমাকে ছাড়া আমার ঘুম হবেওনা। তাই অযথা জিদ করোনা। চলো ঘুমোবে চলো। আর যদি না যাও তাহলে কিভাবে রুমে নিয়ে যেতে হয় সেটা কিন্তু আমি খুব ভালো করে জানি।

ইন্দুঃ দুই হাত বুকে গুঁজে ভ্রুজোড়া কুঁচকে বলে Oh!really!
তাহলে নিয়ে দেখা….

বাকিটা আর বলতে পারলো না ইন্দু। বাকিটুকু বলার আগেই হাওয়ায় ভাসতে থাকে সে। রিয়ন কোলে তুলে নিয়েছে ইন্দুকে।

ইন্দু রিয়নের কোলে হাতপা ছোড়াছুড়ি করছে আর বলছে কি করছেন? নামিয়ে দিন বলছি। কেউ দেখলে কিন্তু খুব লজ্জাজনক ব্যপার হবে! নামিয়ে দিন আমায়।

রিয়নঃ কেন? এখন নামাবো কেন? এতোক্ষণ তো ভালোয় ভালোয় বলেছি কাজ হয়নি। তবে এখন যখন জোর করেই তোমায় নিয়ে যেতে হচ্ছে তখন তোমার কথা আমি কেন শুনবো বলোতো?
রিয়ন ইন্দুকে নিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে বলে, একদম চোখ খুলবেনা যতোক্ষণ না আমি বলবো।

ইন্দু ও আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে থাকে। ইন্দু চোখ বন্ধ করেই বুঝতে পারছে চকলেটের বর্ষণ হচ্ছে তার উপর কিন্তু সে চোখ মেলে তাকালোনা। ঐ যে রিয়নের বারণ আছে। তাই আর চোখ খুলেনি ইন্দু।

চকলেটে পুরো ঢেকে গেছে ইন্দু। আর বেডের পাশে দাঁড়িয়ে হাতের বাক্সটা নিচে রেখে মিটিমিটি হাসছে রিয়ন।

ইন্দু উঠে বসতেই চকলেট গুলো পুরো বিছানায় ছড়িয়ে পরে।আবার কিছু কিছু ফ্লোরে পরে যায়।

ইন্দুঃ অবাক হয়ে বলে আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন! আমি চকলেটের বিজনেস করতে চাইনি খেতে চেয়েছি। এতো চকলেট কেনো এনেছেন?

রিয়নঃ আমার বিন্দু চকলেট খেতে চেয়েছে আর আমি চকলেট আনবোনা সেটা তুমি ভাবলে কি করে বলোতো সোনা? আর এগুলো তোমার খাওয়ার জন্যই এনেছি। যখন খুশি খাবে যাকে খুশি দেবে।
আমার চকলেট পাগলীটার কখন চকলেট খেতে ইচ্ছে করবে তা তো জানি না। তাই বেশি করে এনেছি যখন খুশি তখনই খেতে পারবে। সবসময় তো আর আমি বাসায় থাকিনা।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে কিন্তু আমি তো প্রতিদিন এক জিনিস খাইনা। আজ চকলেট খেতে চেয়েছি বলে যে কাল ও চকলেট ই চাইবো এমনটা তো নাও হতে পারে।

রিয়নঃ একটু হেঁসে বলে কালকেরটা কাল ভাবা যাবে আজ তো এটা খাও। নাও নাও খাওয়া শুরু করো। সেটা দেখে নিজের দুচোখ স্বার্থক হোক আমার।

ইন্দুঃ রিয়নের দিকে তাকিয়ে বলে ম্যাজিক দেখবেন?
রিয়নঃ ভ্রু কুঁচকে বলে এতো রাতে ম্যাজিক?
ইন্দুঃ হুম। একটু ওয়েট করেন বলেই বিছানা থেকে অনেকগুলো চকলেট নিয়ে নেয়। তারপর চুপি চুপি গিয়ে রাইয়ের রুমে রেখে আসে। আর কিছু চকলেট রুপকের বালিশের পাশে রেখে চুপিচুপি রুম থেকে বেরিয়ে আসে।

রুমে আসতেই রিয়ন ইন্দুকে বলে এটা কি ম্যাজিক হলো?

ইন্দু রিয়নকে বলে আরে এতো অধৈর্য্য হলে ম্যাজিক দেখবেন কিভাবে? ম্যাজিক দেখতে হলে তো সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এখন বেশি কথা না বলে চুপচাপ ঘুমিয়ে পরুনতো!

ইন্দু বিছানা থেকে চকলেটগুলো তুলে কিছু রেখে বাকি সবগুলো বক্সে রেখে দেয়। বিছানা ঠিক করে দিতেই রিয়ন বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। ইন্দু বিছানার একপাশে বসে কোলের উপর চকলেট গুলো রেখে একটা একটা করে খাচ্ছে। ইন্দু চকলেট খাচ্ছে নাকি বাচ্চাদের মতো মুখে মাখছে সেটা বোঝা দায়। রিয়ন চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভাব ধরে সেটা দেখছে। অবশ্য রিয়নের খুব হাসি পাচ্ছে তবুও হাসছে না কারণ ইন্দু যদি বুঝতে পারে রিয়ন জেগে আছে তাহলে হয়তো এমন করে চকলেট খাবেনা।

কয়েকটা চকলেট খাওয়ার পরে ইন্দুর মনে হলো রিয়নকে তো চকলেট দেওয়া হলোনা। কথাটা ভাবতেই রিয়নের দিকে তাকিয়ে দেখে রিয়ন ঘুমিয়ে পরেছে। তাই ইন্দু রিয়নকে ডেকে তোলে। রিয়ন ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে উঠে বসে বলে কি হলো বিন্দু সোনা! আবার ডাকছো কেনো? এখন কি খেতে ইচ্ছে করছে আমায় বলো এনে দিচ্ছি

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু গাল ফুলিয়ে বলে, কিছু খেতে ইচ্ছে করলেই বুঝি আমি শুধু আপনাকে ডাকি! তা ছাড়া ডাকিনা?

ইন্দুর বাচ্চাদের মতো এমন অভিযোগের সুরে কথা বলতে দেখে রিয়ন ইন্দুর দুই বাহু ধরে কাছে টেনে বলে, আরে বিন্দু সোনা মন খারাপ করেনা। আমি তো এমনিতেই ফান করেছি তোমার সাথে। রিয়নের কথা শুনে ইন্দু দাঁত বের করে হেসে বলে সত্যি বলছেন?
রিয়নঃ হুম তিন সত্যি। আমি কি আমার বিন্দু সোনাকে খাওয়া নিয়ে কিছু বলতে পারি?

ইন্দু দুই হাতে দুইটা চকলেট নিয়ে রিয়নকে বলে, তাহলে আপনিও খান।
রিয়নঃ তুমি খাও আমি এখন খাবোনা পরে খাবো।

ইন্দু চকলেট নিয়ে রিয়নের দিকে এগিয়ে যেতেই রিয়ন পিছনের দিকে হেলে যায়। ইন্দুও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রি নয় ইন্দু ও রিয়নের দিকে ঝুঁকে যায়। ইন্দু যতো রিয়নের দিকে ঝুঁকছে রিয়ন ততোই পেছনের দিকে হেলতে থাকে।
রিয়ন চকলেট খাবেনা আর ইন্দু রিয়নকে খাইয়ে তবেই ছাড়বে। ইন্দু জোর করে রিয়নকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে বলে রিয়ন ইন্দুর দুই হাত ধরে রেখেছে। ইন্দু ও এতো সহজে হাল ছেড়ে দেবার পাত্রী নয়। ইন্দু তো রিনকে চকলেট খাইয়েই ছাড়বে।

রিয়ন হেলতে হেলতে বিছানায় পরে যায়। রিয়ন ইন্দুর দুই হাত ধরে রেখেছে বলে ইন্দু ও রিয়নের উপরে পরে যায়। কিন্তু ইন্দুর সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। রিয়ন বুঝতে পেরে ইন্দুর হাত ছেড়ে দেয়। ইন্দু একটা চকলেট রিয়নের মুখে দিয়ে বলে, আমি যখন বলেছি চকলেট খেতে, তখন খেতেই হবে।

ইন্দু কথা বলছে রিয়নের চোখে মুখে ইন্দুর গরম নিশ্বাস পরছে। ইন্দু রিয়নের খুব কাছে। আর শুধু কাছেই নয়, একদম রিয়নের বুকের উপরে।
রিয়নের মুখে চকলেট দিতেই রিয়ন বলে ওঠে চকলেট খাওয়ানোর জন্য এতোটা কষ্ট করতে হয় নাকি! মুখটা আর একটু এগিয়ে দিলেই তো হতো। রিয়নের কথা শুনে ইন্দু ভ্রু কুঁচকে রিয়নের দিকে তাকায়। আর রিয়ন ইন্দুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়।

চলবে…

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#বোনাসপার্ট

রিয়নের মুখে চকলেট দিতেই রিয়ন বলে ওঠে চকলেট খাওয়ানোর জন্য এতোটা কষ্ট করতে হয় নাকি! মুখটা আর একটু এগিয়ে দিলেই তো হতো। রিয়নের কথা শুনে ইন্দু ভ্রু কুঁচকে রিয়নের দিকে তাকায়। আর রিয়ন ইন্দুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচায়।

রিয়নের এমন কান্ড দেখে ইন্দুর হুঁশ ফেরে। ইন্দু ঝটপট করে উঠে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই ইন্দুর চোখ পরে নিজের চকলেট মাখা মুখের দিকে। ইন্দু খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে রিয়ন কেনো তখন ঐ কথাটা বলেছে। ইন্দু লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। ভাবছে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি। এতোটা বাড়াবাড়ি করা ঠিক হয়নি। রিয়ন বাবু কি ভাবছে আল্লাহ জানে, আমিও না ধুর! কথাটা বলেই দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলে ইন্দু। কিছুক্ষণ এভাবে চোখমুখ ঢেকে রেখে একটু স্বাভাবিক হয়ে তারপর ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে আসে।

মাথা নিচু করে বেডের পাশে এসে দাঁড়ায় ইন্দু। রিয়ন তখনও বসে আছে চকলেট হাতে নিয়ে। রিয়নের দিকে চোখ পরতেই ইন্দু মুখ চেপে ধরে ফিক করে হেসে ওঠে।

ইন্দুকে হাসতে দেখে রিয়ন ভ্রু কুঁচকে ইন্দুর দিকে তাকায় তারপর মাথা নেড়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে, ইন্দু কেনো হাঁসছে?

রিয়নের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ইন্দু এদিকে ওদিকে তাকিয়ে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে। তারপর বেডের দিকে চোখ পরতেই একটু মুচকি হেসে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা বের করে ক্যামেরা অন করে রিয়নের সামনে ধরে। রিয়ন তো ক্যামেরায় চোখ পরতেই অবাক হয়ে যায় । হা করে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই মেয়েটা এই কাজ করেছে৷ তখন জোর করে চকলেট খাওয়াতে গিয়ে মুখে লাগিয়ে দিয়েছে।

এদিকে রিয়নের মুখে চকলেট দেখে ইন্দু বেডে বসে বালিশ পেটে চেপে শুধু হেঁসেই চলেছে।

ইন্দুকে ওভাবে হাসতে দেখে রিয়ন ফোনটা হাত থেকে নামিয়ে রেখে বলে তবে রে! ফাজিল মেয়ে! আমার মুখে চকলেট মেখে এখন হাঁসা হচ্ছে? দাঁড়াও দেখাচ্ছি তোমায় মজা। এ কথা বলে ইন্দুর দিকে যেতেই ইন্দু হাতের বালিশটা রিয়নের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে উঠে দৌড়াতে থাকে। রিয়ন ও বালিশটাকে হাতে ধরে বেডে রেখে ইন্দুর পিছে পিছে দৌড়। ইন্দু বেডের চারপাশে ঘুরছে আর আঙুল উঁচিয়ে বলছে,, না! না রিয়ন বাবু! একদম আমাকে ধরার চেষ্টা করবেন না।

রিয়ন ইন্দুর পিছে পিছে ছুটছে আর বলছে কেনো ধরবোনা! তোমাকে তো আজ আমি ধরবোই। আমার সাথে ফাজলামি করা তাইনা? দাঁড়াও বলছি বিন্দু! ওখানেই দাঁড়াও। আমাকে দৌড় করালে কিন্তু ফল ভালো হবেনা।

ইন্দুঃ পাগল! নাকি মাথা খারাপ! আমি এখন এখানে দাঁড়াবো সেটা ভাবলেন কি করে। আমি দাঁড়ালেই তো আপনি আমায় ধরে ফেলবেন। আপনি গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে আসুন। তারপর আমি দাঁড়াবো আপনার সামনে।

রিয়নঃ তুমি দাঁড়াবে কিনা বলো? তা না হলে তোমায় কি করে ধরতে হবে তা আমি খুব ভালো করে জানি, বলেই রিয়ন বেডে উঠে দাঁড়ায়। আর বলে এখন কি করবে? কোথায় পালাবে?

রিয়নকে বেডে উঠতে দেখে ইন্দু সোজা বেলকনিতে চলে যায়। রিয়ন ও বেলকনিতে যায়।
রিয়নকে বেলকনিতে দেখে ইন্দু পেছোতে থাকে। রিয়ন সামনের দিকে যতো এগিয়ে যাচ্ছে ইন্দু ততোই পেছনের দিকে যাচ্ছে আর বলছে না রিয়ন বাবু! আমায় ধরবেন না।

রিয়ন তো এক কান দিয়ে শুনছে তো অন্য কান দিয়ে বের করে দিচ্ছে ইন্দুর বলা কথাগুলো। আর ধির পায়ে ইন্দুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইন্দু পেছোতে পেছোতে দেওয়ালে গিয়ে আটকে যায় আর পেছোতে পারেনা। রিয়ন তখনও ইন্দুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
রিয়ন ইন্দুর সামনে, খুব কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তাদের মাঝের দূরত্বটা খুবই কম। ইন্দু, রিয়ন দুজনের হার্টবিট ই ফার্স্ট চলছে।

ইন্দু রিয়নের বুকে হাত দিয়ে বাঁধা দিতে যাবে তখনই রিয়ন ইন্দুর দুই হাত দেওয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে।
আচমকা রিয়নের এহেন কান্ডে ইন্দু চমকে যায়। দেওয়ালের সাথে আটকে যাওয়ায় নড়াচড়া করতে পারছেনা ইন্দু। তবুও দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রিয়নের হাত থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। কিন্তু রিয়নের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। উপায় না পেয়ে ইন্দু একপাশ করে মাথাটা দেওয়ালের সাথে রেখে চোখজোড়া বন্ধ করে ফেলে।

রিয়ন ইন্দুকে চোখ বন্ধ করতে দেখে একদৃষ্টিতে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে ধিরে ধিরে মুখটা ইন্দুর দিকে এগিয়ে নেয়।

ইন্দু চোখ বন্ধ অবস্থায় বুঝতে পারছে রিয়ন তার খুব কাছে। কারণ রিয়নের গরম নিশ্বাস ইন্দুর কাঁধে পরছে। ইন্দু চোখ মুখ কুঁচকে বন্ধ করে আরও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

রিয়ন মুখ নিয়ে ইন্দুর কাঁধে ছোঁয়ায়। রিয়নের ছোঁয়া পেয়ে ইন্দু একটু কেঁপে ওঠে। রিয়ন ইন্দুর চুলে মুখ ডুবিয়ে চুলের ঘ্রাণ নেয়। কিছুক্ষণ পরে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে দেখে ইন্দু কেমন লজ্জায় গুটিয়ে আছে। আর নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করছে শুধু। হঠাৎ ইন্দুকে ছেড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় রিয়ন।

রিয়ন চলে যেতেই ইন্দু পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলো। সবকিছু যেনো ইন্দুর মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিছুসময় দাঁড়িয়ে থেকে ধির পায়ে রুমে এসে বেডে বসে।
রিয়ন ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখে ইন্দু বেডে বসে আছে অন্যমনস্ক হয়ে। রিয়ন টিস্যু এনে ইন্দুর কাঁধের উপর থেকে চকলেট মুছে দেয়।

রিয়ন ইন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে ইন্দুও রিয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু সময় পর ইন্দু গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতে দিতে বলে অনেক রাত হলো ঘুমিয়ে পরুন। আবার সকাল সকাল উঠতে হবে। অফিস যেতে হবে তো।
ইন্দু পাশ ফিরে শুয়ে আছে।
রিয়নও দেরি না করে শুয়ে পরে। শুয়ে আছে দুজনেই, রাতটাও গভীর তবুও দুজনের চোখে ঘুম নেই। ঘুম তো উবে গেছে দুজনেরই। কতোটা সময় এভাবে চোখে ঘুম আসেনি সেটা তাদের জানা নেই। কারণ জেগে থাকতে থাকতেই চোখের পাতা লেগে আসে ইন্দুর। কখন ঘুমিয়ে পরেছে সেটা তার অজানা।

সকালে অফিস যাবে বলে তারাহুরো করে রেডি হয়ে নাস্তার টেবিলে এসেছে রিয়ন। সকালে রুম থেকে বেরুনোর সময় ইন্দু রিয়নের সবকিছু গুছিয়ে রেখে এসেছে। রিয়ন নিচে এসে দেখে রাই আর রুপক চকলেট নিয়ে পরেছে। ইন্দুর প্রশংসা করছে শুধু তারা। কারণ ইন্দু তাদের রুমে চকলেট গুলো রেখে এসেছে বলে। কিন্তু রিয়ন যে এতো রাতে গিয়ে চকলেটগুলো নিয়ে এসেছে এতে তার কোন ক্রেডিট ই রইলোনা? আজব ব্যাপার তো!

রিয়ন ইন্দুর দিকে তাকিয়ে দেখে ইন্দু নাস্তা তৈরির কাজে ব্যাস্ত। টেবিলে নাস্তা দিতে আসলে রিয়ন ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো চকলেট নিয়ে এলাম আমি এতো রাতে এতোটা কষ্ট করে অথচ পুরো ক্রেডিট ই তোমার?

ইন্দু ও ফিসফিস করে জবাব দিলো আপনাকে তো রাতেই বলেছিলাম এটাই ম্যাজিক। রিয়নকে এক চোখ মেরে একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে কিচেনে চলে যায় ইন্দু।
রিয়ন তো বোকা বনে যায়। হা করে ইন্দুর কথাগুলো ভাবছে ইন্দুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে।
দাদু রিয়নকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে, আহা! দাদু ভাই খাবারটা চটজলদি খেয়ে নাও। তা না হলে তো হওয়াতেই পেট ভরে যাবে।

দাদুর কথা শুনে রিয়ন হা বন্ধ করে নাস্তায় মনোযোগী হয়। নাস্তা শেষ করে, অফিসে চলে যায় আশফাক খান আর রিয়ন।
আজও অনেকবার রিয়নকে ফোন করেছে ইন্দু। কারণে অকারণে ফোন করে জ্বালিয়েছে। রিয়ন একটুও রাগ করেনি একটু বিরক্ত ও হয়নি ইন্দু এতোবার ফোন করাতে। বরং রিয়নের ভালোই লেগেছে।

সারাদিন অফিসের কাজ করে রাতে বাসায় ফিরেছে রিয়ন। ফ্রেশ হয়ে রেস্ট করে রাতের খাবার খেয়ে রিডিং রুমে যায় রিয়ন। ইন্দু পড়ছে দেখে রিয়ন চলে আসে। কপালে হাত দিয়ে শুয়ে আছে রিয়ন। ইন্দু পড়া শেষ করে রিডিং রুম থেকে বেড রুমে চলে আসে।

ইন্দু রুমে এসে রিয়নকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে, দ্রুত পায়ে গিয়ে রিয়নের কপালে হাত দেয়। শান্ত গলায় বলে শরীর খারাপ লাগছে কি আপনার?

রিয়ন কপাল থেকে নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলে কই না তো। এমনি শুয়ে আছি। তা আজ যে কিছু চাইলেনা আমার কাছে! আজ বুঝি কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না?

ইন্দু কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে আছে। তখন রিয়ন একটা আইসক্রিম ইন্দুর সামনে এনে ধরে। ইন্দু তো মহা খুশি। আনন্দে লাফিয়ে ওঠে আইসক্রিম দেখে।

চলবে…..

(দিলাম বোনাস পার্ট। তবে রি চেইক হয়নি)

হ্যাপি রিডিং 🥰