সম্পর্কের অধিকার পর্ব-২৫+২৬

0
452

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৫

ইন্দু কিছু না বলে মাথা নিচু করে বসে আছে। তখন রিয়ন একটা আইসক্রিম ইন্দুর সামনে এনে ধরে। ইন্দু তো মহা খুশি। আনন্দে লাফিয়ে ওঠে আইসক্রিম দেখে। চিল্লিয়ে বলে ওঠে, আইসক্রিম! ইন্দুকে এতোটা খুশি হতে দেখে রিয়ন ও অনেক খুশি হয়ে যায়।

ইন্দুর খুশির জন্য রিয়ন নিজের অভ্যাসটাই পরিবর্তন করে ফেলেছে। এখন রিয়নের কাছে তার বিন্দুই তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ইন্দুকে নিয়ে শপিং করা, অফ ডে তে ঘুড়তে যাওয়া এগুলো সব অভ্যাস হয়ে গেছে রিয়নের।

রিয়ন প্রতিটাদিন কিছু না কিছু কিনে নিয়ে যায় ইন্দুর জন্য। ইন্দু সেটা পেয়ে খুব খুশি হয়। আর ইন্দুর এই হাসিমাখা মুখটাকে মন ভরে দেখে রিয়ন। রিয়ন বাজার থেকে ছোট ছোট খুশিগুলো কিনে আনে ইন্দুর জন্য, যেটা রিয়নকে রিয়নকে উপহার দেয় বিশাল এক খুশির মুহুর্ত।
রিয়ন নিজেও জানেনা, ইন্দুর এই ছোট ছোট চাওয়াগুলো, আবদারগুলো কেনো পূরণ করে সে। এটা কি শুধু ইন্দুর খুশির জন্য? নাকি নিজে ভালো থাকার জন্য, নিজেকে খুশি রাখার জন্য!

রিয়ন এখন অফিস গেলে নিয়ম করে প্রতিদিন ফোন করে ইন্দুর খোঁজ নেয়। যেমনটা ইন্দু চেয়েছিল। দুজনের ভালোবাসার খুনসুটিতে কেটে যায় বেশ কিছুদিন। ইন্দু রিয়নের দাম্পত্য জীবনের দশটা মাস কেটে গেছে। ইন্দু রিয়ন দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছে। রিয়ন তো সেটা বহু বার প্রকাশ ও করেছে কিন্তু আমাদের ইন্দু মহারাণী এখনো মুখে সেটা স্বীকার করেনি। তবে ইন্দুর কাজে কর্মে ইন্দু রিয়নকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে সেও রিয়নকে ভালোবাসে। শুধু মুখ ফুটে বলতে পারছেনা রিয়নকে।

সকালে
রিয়নের জন্য কফি এনেছে ইন্দু। কিন্তু এ কি! রিয়ন তো রুমে নেই? রিয়নের ফোনটা বেজেই চলেছে। ইন্দুু রিয়নের ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কলটা এসেছে। ইন্দু রিসিভ না করে বেলকনিতে গিয়ে দেখে সেখানেও রিয়ন নেই। তাহলে কি ওয়াশরুমে! ইন্দু ওয়াশরুমের সামনে গিয়ে দেখে রিয়ন ওয়াশরুমে। তাই রিয়নকে না ডেকে ফোনটা বেডে রেখে দেয়। ইচ্ছে করেই ফোনটা রিসিভ করলোনা ইন্দু। কে জানে হয়তো রিয়নের অফিস থেকে কেউ ফোনটা করেছে। ইন্দু বেডে ফোনটা রেখে ঘুরে দাঁড়াতেই ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসে। ইন্দু কেনো যেনো মেসেজ দেখার লোভটা সামলাতে পারলোনা। তাই রিয়নের ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা ওপেন করতেই ইন্দুর আর বুঝতে বাকি রইলোনা ফোনটা কে করেছিলো।
মেসেজটা ছিলো-
” হাই বেবি, ফোন তুলছোনা কেনো? খুব বিজি থাকো বুঝি! আমি ফিরে আসছি। আগামীকালের ফ্লাইটে দেশে ফিরবো। এসে কথা হবে। এসে তোমার সাথে মিট করবো বেবি। কতোদিন তোমায় দেখিনি বলোতো!”

ইন্দু মেসেজ টা পড়ে তার মনের মধ্যে একটা অজানা ভয় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। হঠাৎ চোখের কোনটা একটু চিকচিক করে ওঠে। ইন্দুর বুকে কেমন যেনো একটা চাপা কষ্ট অনুভূত হচ্ছে। রিয়ন ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ইন্দু ফোনটা রেখে দিয়ে স্বাভাবিক হয়।

রিয়নঃ কি হলো বিন্দু পাখি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে? কিছু বলবে?
ইন্দুঃ না, না আপনার কফি দিতে এসেছিলাম। আর আপনার জিনিসপত্র গুছিয়ে দিতে এসেছিলাম। ইন্দু রিয়নের অফিসের সকল প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে রেখে নিচে চলে যায়। সবার জন্য নাস্তা তৈরি করে টেবিলে দিয়ে দেয় ইন্দু। আশফাক খান আর রিয়ন নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। ইন্দু আজ সব কিছুতেই কেমন যেন অন্যমনষ্ক হয়ে আছে। অবশ্য দাদু অনেকবার তার কারণটা জানতে চেয়েছে কিন্তু ইন্দু বলেনি, এড়িয়ে গেছে।

রিয়ন রাতে বাসায় ফিরেছে ইন্দু এসে দেখে গেছে রিয়নের কি প্রয়োজন। তারপর রিডিংরুমে গিয়ে পড়তে বসেছে। তবে শুধু নামেই পড়তে বসেছে। পড়া তো কোনমতেই হচ্ছে না। মন ভালো না থাকলে শুধু পড়া নয় কোনোকিছুতেই মন বসেনা। রাতের খাবার খেয়ে ইন্দু আর রিডিং রুমে না গিয়ে সোজা রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। কোনো কিছু ভালো লাগছেনা তার। কোন এক অজানা ভয় জেঁকে বসেছে ইন্দুর মনে। বেডে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। রিয়নের মুখোমুখি হলে রিয়ন হাজারটা প্রশ্ন করবে। কারণ ইন্দুর মন খারাপটা সবার থেকে আড়াল করতে পারলেও রিয়নের থেকে আড়াল করাটা একদমই সম্ভব নয়।
তবুও রিয়ন ইন্দুকে প্রশ্ন করে বসে।

রিয়নঃ বিন্দু! তোমার কি শরীর খারাপ? নাকি মন খারাপ?
ইন্দুঃ কই না তো! এমন মনে হলো কেন আপনার?

রিয়নঃ নাহ্! এতো তারাতারি তো ঘুমাও না। তোমায় দেখে মনে হচ্ছে আমার থেকে কিছু লুকোচ্ছো। আমায় কি তুমি এভয়েড করছো?

ইন্দুঃ একটু স্বাভাবিক হয়ে বলে, এভয়েড কেনো করবো? আমার খুব ঘুম পাচ্ছে তাই আজ সকাল সকাল ঘুমিয়ে পরছি তা ছাড়া কিছু না।

ইন্দুর কথা শুনে রিয়ন একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় ইন্দুর দিকে। যেনো ইন্দুর বলা কথাগুলো তার বিশ্বাস হলোনা।
ইন্দু আর কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে।
ইন্দু হঠাৎ এমন কেনো করছে তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে রিয়ন মনে মনে।

আজ শুক্রবার, সবাই বাসায় আছে। সকালে নাস্তা করে রিয়ন আবার ঘুমিয়ে পরেছে। আজ শপিংয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও রিয়ন এ ব্যাপারে আজ রাইকে আর ইন্দুকে কিছু বলেনি। তাই ইন্দু বুঝতে পেরেছে আজ হয়তো রিয়ন সৃজার সাথে মিট করবে তাই এ বেলা কোথাও বের হতে চাইছে না।

এদিকে রাই গিয়ে রিয়নকে শপিংয়ে যাওয়ার কথা বললে রিয়ন যাবেনা বলে দেয়। রিয়ন ভাবছে তার বিন্দুর মন ভালো নেই, এই মুহুর্তে কোথাও যাওয়াটা ঠিক হবেনা।

বিকেলে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে ইন্দু। রিয়ন ও গিয়ে পাশে দাঁড়ায়। রিয়ন ইন্দুকে কিছু বলবে তক্ষুনি সৃজা রিয়নকে ডাকতে ডাকতে রুমে চলে আসে। রুমে না পেয়ে বেলকনিতে চলে যায়।

এদিকে রিয়ন সৃজাকে আচমকা দেখে অবাক হয়ে যায়। রিয়ন ঘুরে দাঁড়াতেই সৃজা গিয়ে রিয়নকে জড়িয়ে ধরে। সৃজাকে এভাবে জড়িয়ে ধরতে দেখে রিয়ন কি করবে বুঝতে পারছেনা। রিয়ন ইন্দুর দিকে তাকায়। ইন্দু কিছু না বলে চোখ নামিয়ে নিয়ে বাইরে তাকায়।

রিয়ন সৃজাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে বলে কি করছিস সৃজা? পাগল হয়ে গেছিস নাকি?

সৃজাঃ হুম বেবি আমি পাগল হয়ে গেছি। তোকে কতদিন দেখিনি বলতো?এতোদিন তোকে খুব মিস করেছি রে! আমার মনে অনেক কথা জমা করে রেখেছি তোকে বলবো বলে। তুই তো জানিস তুই আমার সব। আমার সব কথা তোকে না বললে আমি থাকতে পারিনা।

রিয়নঃ হুম তোর সাথে আমার ও অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে।
ইন্দু জোর করে মুখে হাসি টেনে বলে আপনারা কথা বলুন
আমি আপনাদের জন্য চা নাস্তার ব্যাবস্থা করছি।

সৃজাঃ থাক তোমায় আর কষ্ট করতে হবেনা। আমরা বাইরে গিয়ে নাস্তা করে নেবো। কথাটা বলেই সৃজা রিয়নের হাতটা জড়িয়ে ধরে টানতে টানতে ইন্দুর সামনে দিয়ে নিয়ে যায়। রিয়ন কিছু বলবে তার কোনো সুযোগই দিলোনা সে।

ইন্দু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে বেলকনিতে। চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে জল গড়িয়ে পরছে। বুকের ভেতরটা যে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে ইন্দুর। নিজের ভালোবাসাটাকে কেউ এভাবে অন্যের সাথে কি করে মেনে নিতে পারে! কোনো নারীর পক্ষেই সম্ভব নয় তার স্বামীকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া। তবুও কিছু করার নেই মেনে তো নিতেই হবে। এটাই তো হওয়ার কথা ছিলো।
কিন্তু.. রিয়ন বাবু যে বলতো সে আমায় ভালোবাসে! তাহলে সেটা কি মিথ্যে ছিলো? সেটা কি শুধুই সৃজার শূন্যতা পূরণ করবে বলে বলেছিলো? আজ সৃজা ফিরে এসেছে বলে আমাকে আবার দুরে ঠেলে দেবে? তাহলে আমায় এতো স্বপ্ন কেনো দেখালো রিয়ন বাবু! আর তাকে ভালোবাসার লোভটাই বা জাগালো কেনো? যদি আমার থেকে দুরে যাওয়ার ই ছিলো, তাহলে এতোটা কাছে কেনো টেনে নিয়েছে! এসব ভাবছে আর চোখের জল ফেলছে ইন্দু।

এদিকে সৃজা রিয়নকে নিয়ে একটা পার্কের বেঞ্চে বসে আছে। রিয়ন সৃজাকে বললো তুই কখনো সুধরাবিনা তাইনা? এভাবে টানতে টানতে নিয়ে এলি কেনো? রেডি হয়ে ইন্দুকে সাথে করেই তো নিয়ে আসতে পারতাম। যাইহোক এখন বল কেনো এভাবে নিয়ে এলি এখানে?

সৃজাঃ বলবো বলবো, তার আগে তুই বল আমাকে তোর কি বলার আছে?

রিয়নঃ সৃজা, আমি তোর সাথে অনেক কথা বলেছি অনেকটা সময় পার করেছি। আমার সবটা তুই জানিস। আমি মনে করি আমার এ কথাটাও তোকে জানানো উচিৎ।
সৃজা আমি, আমি আমার বিন্দুকে ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি কিছু ভাবতে পারিনা। ওকে পেয়ে আমি বুঝতে পেরেছি ভালোবাসার মানে।ইন্দু আমার পুরো লাইফটাকে চেইঞ্জ করে দিয়েছে। আমি সবসময় ওকে আমার পাশে চাই। ওর মতো স্ত্রী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
তা তোর বিয়ের কি খবর বিয়ে করে ফেল। কি ডিসাইড করলি বিয়ের পর এখানেই থাকবি নাকি বিদেশে স্যাটেল হয়ে যাবি?

রিয়নের কথায়, মুহুর্তেই সৃজার সকল আনন্দ হাসি উবে গেলো।রিয়নের কথায় যেন সৃজার মাথায় আকাশ ভেঙে পরে। কি বলছে এটা, রিয়ন! সে ইন্দুকে ভলোবাসে? কিন্তু সৃজা তো এতো দুর থেকে ছুটে এসেছে শুধুমাত্র রিয়নের জন্য। রিয়নকে ভালোবাসে সে কথাটা জানাতেই রিয়নের কাছে এভাবে পাগলের মতো ছুটে এসেছে সৃজা। এখন সৃজা কিভাবে রিয়নকে বলবে যে, সে রিয়নকে ভালোবাসে! আর বলেও তো কোন লাভ নেই কারণ রিয়ন এখন ঐ গাঁইয়া মেয়েটার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এখন যা করতে হবে সব প্ল্যান করে করতে হবে। সৃজা কখনো হারতে পারেনা। আর ওই গেঁয়ো পেত্নীর কাছে তো নয়ই। শেষ হাসিটা আমিই হাসবো ইন্দু, জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।

রিয়নঃ কিরে, চুপ করে আছিস কেনো? কিছুতো বল!

সৃজাঃ একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে রিয়নকে বলে, আরে আমি তো বিয়ের কথাটাই তোকে বলতে এতোদুর থেকে ছুটে এসেছি।

চলবে….

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব২৬

সৃজাঃ একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে রিয়নকে বলে, আরে আমি তো বিয়ের কথাটাই তোকে বলতে এতোদুর থেকে ছুটে এসেছি।

রিয়নঃ কি বলছিস তুই? তুই বিয়ে করছিস নাকি?
সৃজাঃ হুম আমি বিয়ে করছি। তবে পাপা কিছুতেই রাজি হচ্ছেনা। মমকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি। কিন্তু পাপাকে রাজি করাতে পারিনি এখনো। বাদ দে, তোকে সবটা জানাবো পরে, এবার ইন্দুর কন্টাক্ট নম্বর টা দো তো।

রিয়নঃ অবাক হয়ে বলে তুই ইন্দুর কন্টাক্ট নম্বর দিয়ে কি করবি!

সৃজা আরে ভয় পাসনা। তেমন কিছু করবোনা। ওকে অনেক কথা শুনিয়েছিলাম তাই ওকে সরি বলতে চাই। দেখ, সামনে গিয়ে হয়তো ওকে সরি বলতে পারবোনা তাই ফোনেই না হয় সরি টা বলতাম।

রিয়নঃ ওকে নে 0131…….

রিয়ন বাসায় ফিরে এসে দেখে ইন্দু বেডে বসে আছে। তবে রিয়নকে দেখে কিছু জিজ্ঞেস করলোনা সে। রিয়ন বুঝতে পেরেছে ইন্দু মাইন্ড করেছে। এভাবে সৃজা নিয়ে গেছে বলে ইন্দুর কষ্টটা লেগেছে। রিয়ন একটু এগিয়ে ইন্দুর দিকে যেতেই ইন্দুর ফোন বেজে ওঠে।

ইন্দু ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে গতকালের সেই নম্বর থেকে কল এসেছে যেটা থেকে রিয়নের ফোনে মেসেজ এসেছিল। ইন্দু ফোনটা রিসিভ করে স্পিকারে দিলো।

ফোনের ওপাশ থেকে সৃজা বলে তুমি কি ইন্দু বলছো?
ইন্দুঃ জ্বি বলছি!
সৃজাঃ আমি সৃজা বলছি,

সৃজার নাম শুনে ইন্দু মনে মনে বলে, সে কি আমি জানি না! শাঁকচুন্নি কোথাকার! তুই আমার সংসারটাকে ভাঙতে এসেছিস আর আমি তোকে চিনবোনা? হাড়ে হাড়ে চিনি আমি তোকে।

সৃজাঃ হ্যালো শুনতে পাচ্ছো তুমি? চুপ করে আছো যে?
ইন্দুঃ জ্বি শুনতে পাচ্ছি বলুন আপনি। বলেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রিয়নের দিকে তাকায় ইন্দু।
সৃজাঃ একচুয়েলি আমি তোমাকে সরি বলতে ফোনটা করেছি ইন্দু! আ’ম সরি।

সৃজার কথা শুনে ইন্দু অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। এ মেয়ের কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি? সরি কেনো বলছে। রিয়ন ইন্দুকে অবাক হতে দেখে হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে যায়। বাহিরে গিয়েছিল ফ্রেশ হয়নি এখনো।
রিয়নকে হাসতে দেখে ইন্দু ভ্রু কুঁচকে তাকায় রিয়নের দিকে।
ফোনের ওপাশ থেকে সৃজা হ্যালো হ্যালো করাতে ইন্দুর ধ্যান ভাঙে।
ইন্দুঃ হুম বলুন।

সৃজাঃ একচুয়েলি আমি ভেবে দেখলাম রিয়নকে ছাড়া আমি থাকতে পারবোনা। ছোট থেকে একসাথে বড় হয়েছি দুজন দুজনকে খুব ভালোভাবে চিনি জানি। তাই দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারবোনা। রিয়নও আমায় ভালোবাসে আর আমিও রিয়নকে।
ইনফ্যাক্ট আমরা তো বিয়ে করতে যাচ্ছি। তোমার এক বছর পূর্ণ হলে স্ট্যাম্পের মেয়াদ পূর্ণ হবে। তখন আমরা দুজন বিয়ে করবো। সে বিষয়ে আমরা কথা বললাম। আমার পাপা মেনে নিতে চাইছেনা তবে আমি পাপাকে কোনো না কোনো ভাবে ঠিক ম্যানেজ করে নিবো।

আর রিয়ন তোমায় এ বিষয়ে কিছু বলেনি তইনা? আমি জানি রিয়ন বলবেওনা কারণ তুমি কষ্ট পাবে। শুধু শুধু আগে থেকেই তোমায় কষ্ট দিতে চায়না।
তবে আমার মনে হলো তোমায় জানানো উচিৎ। তাই বললাম, তুমি আবার রিয়নকে এটা বলতে যেওনা। আমায় ভুল বুঝবে কারণ রিয়ন আমায় বলতে বারণ করেছে।

সৃজার কথা শুনে কিছু না বলে ফোনের লাইনটা কেটে দেয় ইন্দু। সৃজার কথা শুনে পাথর হয়ে গেছে ইন্দু।কাকে বিশ্বাস করবে ইন্দু কিছু বুঝতে পারছে না। রিয়নের হাবভাব ও ভালো লাগছেনা ইদানীং। তবে কি সৃজা যেটা বলছে সেটাই ঠিক?
দুই হাতে মাথা চেপে বসে আছে ইন্দু। সে আর কিছু ভাবতে পারছে না।

রিয়ন ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ইন্দুকে এভাবে বসে থাকতে দেখে দৌড়ে এসে ইন্দুকে ধরে। চিন্তিত হয়ে বলে বিন্দু! কি হয়েছে তোমার! তুমি ঠিক আছো!

রিয়নের এতো কেয়ারিং ভাব দেখে ইন্দু একটু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে নাহ্। কিছু হয়নি আমার। আমি ঠিক আছি।
ইন্দু রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রিয়ন কিছু বুঝতে না পেরে ইন্দুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাতে বিছানায় শুয়ে আছে রিয়ন ইন্দু। দুজন দুজনের এতোটা কাছে তবু যেন অনেকটা দূরত্ব আজ দুজনের মধ্যে।

রাত প্রায় একটা বাজতে চললো তবু ইন্দুর চোখে ঘুম নেই। মাথায় শুধু সৃজার বলা কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে ইন্দু যে জেগে আছে সেটা বোঝা দায়। কারণ রিয়ন যদি জানে ইন্দু এখনো ঘুমায়নি তাহলে হাজারটা প্রশ্ন করে মাথা খারাপ করে দেবে। তাই ইন্দু ঘুমের ভাব ধরে আছে।
রিয়নের ফোন বেজে উঠতে ফোন রিসিভ করে –
রিয়নঃ হ্যা সৃজা বল।
– হ্যা বিন্দু ঘুমিয়েছে।
– না আমি ঘুমাইনি। ঘুম আসছে না।
-কি বলছিস আঙ্কেল রাজি হয়েছে বিয়ের ব্যাপারে? কিভাবে ম্যানেজ করলি? যা রাগী মানুষ!
– ঠিক আছে আমি পরে একসময় পাপাকে কথাটা বলবো।
– ওকে ঠিক আছে আমি যা হোক করে ম্যানেজ করবো পাপাকে। তুই টেনশন করিস না।

ইন্দু কথাগুলো শুনে কান্না আর চেপে রাখতে পারে না। তাই উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ইচ্ছে মতো কান্না করে।অনেকটা সময় কান্না করে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে আসে। আসলে ইন্দু সৃজার বলা কথাগুলো শুনতে পায়নি তাই বুঝতে ও ভুল করেছে।
কথা গুলো ছিলো এমন –
-ইন্দু কি ঘুমিয়েছে?
-তুই এখনো ঘুমাসনি?এতো রাতও ঘুমাসনি কেনো?
-আমার বাবা বিয়েতে রাজি হয়েছে। ম্যানেজ করে নিয়েছি।
-আঙ্কেলকে বলিস তোদের সবাইকে আমার বিয়েতে থাকতে হবে। শুধু বললেই হবেনা ম্যানেজ করতে হবে কিন্তু।

রিয়ন সৃজার কথাগুলোর জবাব দিয়েছে মাত্র। কিন্তু ইন্দু সেটার উল্টো টা বুঝেছে।
ইন্দু ওয়াশরুম থেকে এসে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পরে। রিয়ন কয়েকবার ডাকলেও কোনো সাড়া দেয়নি ইন্দু।

ভোরে উঠে নামাজ পড়ে রিয়নের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গুছিয়ে রেখে বাইরে চলে যায় ইন্দু। রিয়নের মায়ের সাথে নাস্তা তৈরি করছে রান্না করছে। সবকিছুতে নিজেকে ব্যাস্ত রেখেছে সে। ইন্দু রিয়নের থেকে দুরে থাকতে চায়। আজ রিয়নের কফিটাও দেয়নি। রাইকে দিয়ে পাঠিয়েছে। রিয়ন নাস্তার টেবিলে বসে এদিক ওদিক তাকিয়ে ইন্দুকে খুঁজছে।কারণ নাস্তার টেবিলে আজ ইন্দু নেই। আজ রিয়নের মম নাস্তা দিচ্ছে সবাইকে।

রিয়ন অফিসে গিয়ে অনেকবার ইন্দুকে ফোন করেছে কিন্তু ইন্দু ফোন তুলেনি। রিয়ন বুঝতে পারছেনা ইন্দুর হঠাৎ কি হলো। এভাবে দুরে দুরে রয়েছে কেনো?
এটা কিছুতেই রিয়ন মেনে নিতে পারছেনা। তার বিন্দু একটু দুরে থাকলে যে ভীষণ কষ্ট হয় সেটা কি সে জানেনা? কিছু ভালো লাগছেনা রিয়নের অফিসে ও মন বসছেনা। তাই রিয়ন লাঞ্চের আগেই বাসায় চলে আসে।
অফিস থেকে ফিরে আগে ইন্দুকে খুঁজতে থাকে। রুমে গিয়ে পায়নি। বেলকনিতে ও নেই। ওয়াশরুমও ফাঁকা। তারপর একে একে রাইয়ের রুম, রিডিং রুম, দাদুর রুম, কিচেন সবজায়গায় খুঁজেছে কিন্তু পায়নি। হঠাৎ রিয়নের কিছু একটা মনে হতেই দৌড়ে উপরে চলে যায়। রিডিং রুমের বেলকনিতে যেতেই দেখে ইন্দু বেলকনির এক কোনে জড়সড় হয়ে মাথা হাঁটুতে গুঁজে বসে আছে। রিয়ন ধির পায়ে গিয়ে ইন্দুর পাশে বসে। কোর্ট টা খুলে ফ্লোরে রেখে ইন্দুর মাথায় হাত দিতেই ইন্দু মাথা তুলে তাকায়।

ইন্দুর চোখের দিকে তাকিয়ে রিয়ন হতভম্ব হয়ে গেছে। এ কি অবস্থা করেছে ইন্দু! চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চোখের পাতা ফুলে গেছে। রিয়ন অস্পষ্ট স্বরে বলে, বিন্দু! এ তুমি কি করেছো! একবারও কি নিজেকে দেখেছো আয়নাতে!
ইন্দুর দুই বাহু শক্ত করে ধরে ঝাকিয়ে বলে কি হয়েছে তোমার? কেনো এমন করছো? আমার থেকে দুরে যেতে চাইছো! চুপ করে থেকোনা বিন্দু জবাব দাও প্লিজ!

ইন্দুঃ কিছু না বলে শক্ত করে রিয়নকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। এতোটা শক্ত করে রিয়নকে জড়িয়ে ধরেছে, মনে হচ্ছে কেউ জোর করে রিয়নকে ইন্দুর কাছ থেকে দুরে সরিয়ে দিতে চাইছে।
রিয়ন বুঝতে পেরেছে ইন্দু কোনো কারণে হয়তো ভয় পেয়ে আছে। তাই রিয়নও ইন্দুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে কি হয়েছে সোনা পাখি বলো আমায়? কেউ কিছু বলেছে তোমায়? বলো? তোমার কিছু হবেনা আমি আছিতো? সবসময় তোমার পাশেই আছি। কিছু হবেনা তোমার বিন্দু পাখি।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু আরও কান্নায় ভেঙে পরে। রিয়নও ইন্দুকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়।

চলবে……