সম্পর্কের অধিকার পর্ব-১৯+২০+২১

0
433

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব১৯

রিয়ন মুখটা গম্ভীর করে গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে। একটা কথাও বলছেনা ইন্দুর সাথে। শুধু যে ইন্দুর সঙ্গে কথা বলছেনা তা নয়। রিয়ন কারও সাথেই কথা বলছেনা।

রিয়া, তিশা, আর এশা তো একটু ভয়ে আছে। ভাইয়া কিছু জানতে চাইলে কি জবাব দেবে তারা?
ইন্দু বেশ বুঝতে পেরেছে, রিয়ন বাবু এখন শকের মধ্যে আছে তাই এই মুহুর্তে কিছু না বলাই বেটার হবে। ইন্দু ও চুপচাপ আছে কিছু বলছেনা। আজ সবার মুড অফ আছে তাই কোথাও না গিয়ে ভার্সিটি থেকে সোজা বাসায় চলে আসে ইন্দু।

গাড়ি ব্রেক করতেই রিয়ন নেমে সোজা রুমে চলে যায়। ওয়াশরুম গিয়ে অনেকটা সময় ধরে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসে।
রিয়ন ভাবছে এতোটা দিন একসাথে থাকার পরেও আমি জানতে পারিনি বিন্দুর সম্পর্কে! এশারাও কিছু বললোনা আমায়? কেন বলেনি? এটা জানাটা কি আমার অধিকার নয়? সবকিছু লুকিয়েছে আমার থেকে সবকিছু! এরা সবাই এক। যাদের এতোটা ভালোবাসি তারাই আমায় ধোঁকা দিলো!

ইন্দু বাড়ি আসার পর থেকে রিয়নের সামনে যায়নি। ইন্দু বুঝতে পেরেছে রিয়নের মন ভালো নেই ওর একটু একা থাকা প্রয়োজন।

সবাই ডাইনিংয়ে বসে আছে রিয়নের অপেক্ষায়। কিন্তু রিয়নের কোন পাত্তা নেই। অবশেষে এশাকে পাঠানো হলো রিয়নকে ডাকতে। এশা তো মনে মন দোয়া ইউনুস পাঠ করতে শুরু করে দিয়েছে। না জানি রিয়ন তাকে আজ কি বলবে।

এশাঃ ভাইয়া সবাই অপেক্ষা করছে ডাইনিংয়ে। খেতে ডাকছে আপনাকে।
রিয়নঃ তোমরা খেয়ে নাও আমার ক্ষুধা নেই।আমি খাবনা।

এশা রুম থেকে বের হতে যাবে তখন রিয়ন বলে এশা!
রিয়নের ডাক শুনে এশা ঘুরে তাকিয়ে বলে কিছু বলবেন ভাইয়া?

রিয়নঃ আমি কি বলবো বা কি বলতে চাইছি সেটা তুমি খুব ভালো করে জানো এশা। তবুও কি নতুন করে শুনতে চাও?
ঠিক আছে তাহলে বলো এসব কথা আমার কাছে কেন গোপন করেছো? কেন লুকিয়েছিলে কথাগুলো? আমাকে কথাগুলো কেন বলোনি বলো?

এশা মাথা নিচু করে বললো ভাইয়া আমরা কি করতাম বলেন? আপনার বাবা আমাদের নিষেধ করেছিল এসব কথা আপনাকে বলতে। তাই বলা হয়নি।

রিয়নঃ ভ্রু কুচকে এশার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে হোয়াট! কি বলছো এসব?

এশাঃ হুম ঠিকই বলছি। আঙ্কেল নিষেধ করেছিল যার জন্য আপনাকে কিছু বলিনি আমি আর তিশা।
রিয়নঃ ওকে, তুমি যাও।

রিয়ন খাবেনা শুনে সবার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কেউ খেতে বসছেনা।
ইন্দু সবার উদ্দেশ্যে বলে, আরে তোরা এতো ভাবিসনা আমি আছি না? আমি ওনার খাবার নিয়ে যাচ্ছি তোরা খেয়ে নে। ইন্দুর কথায় এশা একটু ভরসা পেলো।

ইন্দু খাবার নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখে রিয়ন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। খাবারের প্লেট রেখে দিয়ে রিয়নকে বলে খাবার এনেছি খেয়ে নিন।

রিয়ন ইন্দুর দিকে ঘুরে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে কেন খাবার এনেছো?

ইন্দুঃ কেন খাবার আনবোনা? আপনি না খেয়ে থাকবেন আর আমি খাবার আনবোনা সেটা কিকরে হয় বলুন তো! হাজার হোক আমি তো আপনার একমাত্র… সে যাই হোক এখন জলদি করে খেয়ে নিন তো।

রিয়নঃ এগিয়ে এসে ইন্দুর পাশে দাঁড়িয়ে বলে, আমি বলেছি না! আমার ক্ষুধা নেই।

ইন্দুঃ ইশশ! বললেই হলো ক্ষুধা নেই? শুনুন! যতো রাগ অভিমান আছে সব আমার উপর ঝাড়েন, নো প্রবলেম।কিন্তু খাবারের উপর রাগ দেখানো চলবে না। খাবার না খেয়ে থাকা যাবেনা।

রিয়নঃ ইন্দুর সামনে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে বলে শোনো, আমি যখন বলেছি খাবো না। তখন কিছুতেই খা….

আর কিছু বলতে পারলোনা। তার আগেই ইন্দু রিয়নের মুখে খাবার তুলে দেয়। রিয়ন নিরুপায় হয়ে খাবার খেয়ে নেয়।
তবে নিজের হাতে নয় ইন্দু খাইয়ে দিয়েছে। ইন্দু রিয়নকে খাইয়ে দিতে দিতে বলে নিজের বাসায় গিয়ে না খেয়ে থাকলে আমি দেখতে যাবোনা। আমার সামনে না খেয়ে থাকা একদম চলবেনা। আজ খেয়ে নেন বাসায় গিয়ে আগামীকাল থেকে অনশন করবেন আমি দেখতে যাবোনা। এই ধোঁকাবাজ মেয়েটাকে আর সহ্য ও করতে হবেনা আপনাকে।

ইন্দুর কথার কোন প্রতিত্তোর করলোনা রিয়ন।

ইন্দু রিয়নকে খাইয়ে দিয়ে প্লেট নিয়ে বাইরে চলে যায়।
রিয়ন রুমে শুয়ে আছে। আর ভাবছে একটা অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে এতো স্মার্ট! সেটা কিকরে সম্ভব? অথচ তার চলাফেরা, আচরণ দেখে সেটা বেঝার উপায় নেই! আমি তো ভাবতেই পারিনি হঠাৎ করে এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হবে আমার। আর পাপা কেন নিষেধ করেছে। কেন বলেছে ইন্দুর ব্যাপারে যেন কেউ কিছু না বলে আমায়?
জানিনা এই মেয়ের আর কি কি রুপ আমায় দেখতে হবে?
এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়ন ঘুমিয়ে পরে।

রিয়া, ইন্দু, এশা, তিশা সবাই বসে আড্ডা দিয়ে সারা বিকেল পার করেছে। ছাঁদে বসে সবাই আড্ডা দিচ্ছে।

ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে কাউকে না দেখতে পেয়ে রিয়ন হাঁটতে হাঁটতে ইন্দুর মায়ের ঘড়ের দিকে যায়। কিন্তু রুমের সামনে গিয়েও রিয়ন কারও কোন সারা পেলোনা। রুমে ঢুকতেই দেখে ইন্দুর বাবা একপাশে হুইলচেয়ারে বসে আছে।

রিয়নকে দেখেই ইন্দুর বাবা বলে, আরে বাবাজী এসো এসো ভেতরে এসে বসো। তা বাবা, কিছু লাগবে নাকি তোমার? ইন্দু মা তো ছাঁদে আছে।

রিয়নঃ না বাবা কিছু লাগবেনা। আমরা তো আগামীকাল ফিরে যাবো তাই ভাবলাম আপনার সাথে একটু গল্প করি।

ইন্দুর বাবা তো জামাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে খুব খুশি হয়। আর খুশি হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। শ্বশুর জামাইতে মিলে গল্প শুরু করে দেয়। অনেকক্ষণ গল্প করার পর ইন্দুর মা এসে দুজনকে গল্প করতে দেখে কফি আর নাস্তা দিয়ে যায়।
গল্পের মাঝে রিয়ন ইন্দুর বাবাকে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা বাবা? আপনার মেয়ে ড্রাইভিং শিখেছে কোথায়?

ইন্দুর বাবাঃ একটু চিন্তিত হয়ে বলে, কেন বাবা? কোন সমস্যা হয়েছে কি? আমার ইন্দু মা কি কোন ভুল করে ফেলেছে?

রিয়নঃ একটু হেসে বলে, না বাবা সেটা নয়। একচুয়েলি আপনার মেয়ে অনেক ভালো গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে। তাই ভাবলাম গ্রামে থেকেও এতো ভালো ভাবে ওকে ড্রাইভিং টা শেখালো কে? তাই আরকি একটু জানতে চাইলাম।

ইন্দুর বাবাঃ হাসতে হাসতে বলে আর বলোনা বাবা সে অনেক কাহিনী। আমার ইন্দু ছোটবেলা থেকেই ছিল খুব চঞ্চল প্রকৃতির। কাউকে পরোয়া করতোনা। মেয়ে বলে ঘড়ের কোনে লুকিয়ে থাকতোনা। ও পড়াশোনায় অনেক ভালো ছিলো তাই ওর সকল আবদার আমি পুরণ করতাম। ওর কোন চাহিদা আমি অপূর্ণ রাখিনি। ও যখন প্রাথমিকে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল তখন আমায় বলেছিল বাবা আমায় একটা স্কুটি কিনে দাও। আমি তাই কিনে দিয়েছিলাম। এস,এস,সি তে জিপিএ 5 পয়েন্ট পেয়ে আমার কাছে বয়না ধরলো সে নাকি ড্রাইভিং শিখবে। তাই করলাম মেনে নিয়েছিলাম তার আবদার। ড্রাইভিং শিখে লাইসেন্স ও করা হয়। পড়াশোনায় এতো ভালো থাকার পরেও মেয়েকে পড়ানোটা সবাই ভালো চোখে দেখতোনা। তবুও সব পরিস্থিতির সাথে মোকাবেলা করে আমার মেয়েটাকে আমি পড়াই। কারণ আমার বাকি দুই মেয়ে এতোটা মেধাবী নয় যতোটা আমার ইন্দু ছিলো। এইস,এস,সি তে রেজাল্ট হওয়ার পরে যখন ভার্সিটিতে চান্স পেলো। তখন আমাদের জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। আমি এক্সিডেন্টে পা হারাই। তারপর থেকে আমার মেয়েটা হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়ে যায়। সংসারের দায়িত্ব নিতে শিখে যায়। এই একটা দুর্ঘটনা যেন আমার মেয়েটাকে ছোট্ট ইন্দু থেকে অনেক বড় করে দিলো।কেমন শান্ত শিষ্ট হয়ে গেল। চোখ দিয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে ইন্দুর বাবার চোখ থেকে।

রিয়নঃ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে মন খারাপ করবেন না বাবা। আপনি আবার আপনার আগের ইন্দুকে ফিরে পাবেন কথা দিচ্ছি আমি।
বাবা, একটা কথা বলার ছিলো। ইন্দু এডুকেটেড সেটা আমায় বলেননি কেন?

ইন্দুর বাবাঃ কি বলছো বাবা! তুমি জানোনা? কিন্তু তোমার বাবা তো সবই জানে। তাহলে তুমি জানোনা মানে টা কি?

রিয়নঃ বুঝতে পেরেছে এটা নিয়ে বেশি কথা বলা ঠিক হবেনা তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো….

চলবে……..

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব২০

রিয়নঃ বুঝতে পেরেছে এটা নিয়ে বেশি কথা বলা ঠিক হবেনা তাই প্রসঙ্গ পাল্টাতে বললো বাবা, “মেয়েকে কোথায় বিয়ে দিলেন সেটা দেখবেন না? চলুন আপনাকে নিয়ে যাই আমাদের সাথে। ”

ইন্দুর বাবাঃ আমার কি আর এই অবস্থায় কোথাও যাওয়া চলে বাবা? তোমরা সবাই সবসময় ভালো থেকো এতেই আমি খুশি। বাবা তোমায় একটা কথা বলি, কখনো আমার মেয়েটার মনে কষ্ট দিওনা। আমার চঞ্চল মেয়েটা ইদানীং বড্ড চাপা স্বভাবের হয়ে গেছে। নিজের খারাপ লাগাটা নিজের মধ্যেই রেখে দিয়ে বাইরে হাসিখুশি থাকে। ওকে একটু বোঝার চেষ্টা করো বাবা।

রিয়ন উঠে ইন্দুর বাবার হাত ধরে বলে বাবা আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনার মেয়েকে কখনো কষ্ট পেতে দিবোনা।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দুর বাবা মুচকি হেসে রিয়নের মাথায় হাত রাখে। রিয়ন কথা বলা শেষ করে রুমে চলে আসে।

ইন্দু সবার সাথে গল্প শেষ করে রুমে এসে দেখে রিয়ন বেডে আধশোয়া হয়ে বসে ফোনে কিছু একটা করছে। ইন্দু উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু সম্ভব হলোনা। রিয়ন ইন্দুকে দেখে বললো ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও। আগামীকাল নাস্তা করে আমরা বেরিয়ে যাবো।

রিয়নের কথা শুনে ইন্দু মুখে ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলে আমাকেও যেতে হবে?

রিয়নঃ হুম! তেমনই তো কথা ছিলো। আর দেরি না করে সব কিছু গুছিয়ে নাও।

ইন্দু কিছু না বলে সবকিছু গোছানো শুরু করে দেয়। মনে মনে ভাবছে এমনিতেই চটে আছে আবার কিছু বলতে গেলে হিতের বিপরীত হবে।

রিয়ন এশাকে ফোন দিয়ে বলে রুমে এসো সবাই।

ইন্দু ব্যাগ প্যাক করছে আর রিয়ন বসে এশা, তিশা আর রিয়ার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
অবশ্য ইন্দু সেটা আরচোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আর ভাবছে, উঁমম.. যত্তসব ঢং! আমার সাথে কথা বলছেনা। অথচ সবার সাথে ঠিকই হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।

রিয়ন বেশ ভালোই বুঝতে পারছে ইন্দু জ্বলছে ওদের গল্প করতে দেখে। রিয়ন আরও বেশি করে ওদের সাথে হাসি ঠাট্টা শুরু করে।

ইন্দু প্যাকিং কমপ্লিট করে বাইরে চলে যায়। বাইরে বলতে তার মা বাবার রুমে যায়। আবার তাদের ছেড়ে চলে যেতে হবে মনটা বেশ খারাপ লাগছে ইন্দুর। বাবা মায়ের সাথে অনেক গল্প করলো। বাবা মা ও তাকে কিছুই শেখালো বুদ্ধি দিলো।একচুয়েলি মেয়ের বিয়ের পরে বাবা মা সচারাচর যা বলে আর কি। শ্বশুর বাড়ি এটা করবিনা ওটা করবিনা। এই করবি সেই করবি এসব আর কি।

ইন্দুর মাঃ ছলছল চোখে ইন্দুর গালে হাত দিয়ে বলে, মা রে তুই আইসা এই কয়দিন ঘরটা আমার আলোয় ভরে দিয়েছিলি। ঘরটা সবসময় ভরা ভরা লাগতো। তুই চইলা গেলে আবার আমার ঘরটা আগের মতো খালি খালি লাগবো।

মায়ের কথা শুনে ইন্দুর বুকের ভেতরটা কেমন যেন হুহু করে ওঠে। কষ্ট লাগলেও ইন্দু বাবা মাকে সেটা বুঝতে না দিয়ে, হাসিমুখে বলে, কি বলছো মা! আমি তো একবারে চলে যাচ্ছি না। মাঝে মাঝেই আসবো তোমাদের দেখতে। তোমাদের জামাই তো বলেছে মাঝে মাঝে আমাকে নিয়ে আসবে। এবার তো চোখের জল মুছে ফেলে মুখে একটু হাসি ফোটাও। মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে ইন্দুর মা হেসে ফেলে, সাথে ইন্দুর বাবা বলে মা রে, যেখানেই থাকিস হাসিখুশি আর ভালো থাকিস সবসময়।

তিশা বলে হ্যা হ্যা বড় মেয়েই তো তোমাদের সব। এই জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে আদর করছো।

তিশার কথা শুনে সবাই হেসে ওঠে। ইন্দুর মা বলে অনেক রাইত হইছে এবার যা, জামাই বাবাকে ডেকে নিয়ে আয়। আমি টেবিলে খাওন দেই।

তিশা ইন্দুর রুমে গিয়ে বলে, সবাই জলদি করে এসো খাবার দেওয়া হয়েছে টেবিলে।
তিশার কথা শুনে এশা বলে, কি ভাইয়া? আমাদের সাথে বসে খাবেন? নাকি আপু খাবার নিয়ে আসবে!

এশার কথা শুনে রিয়ন বেড ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, না না তোমার আপুকে কষ্ট করে খাবার নিয়ে আসতে হবেনা আমি নিজেই যাচ্ছি।
রিয়ন আগে আগে যাচ্ছে রিয়া আর এশা পিছে পিছে। সবাই একসাথে বসে খাবার খেয়ে নেয়।

অনেক আড্ডা আর গল্প হয়েছে আজ। তাই রাতের খাবার খেয়ে সবাই যার যার রুমে ঘুমিয়ে পরে।
ইন্দু ও ফ্রেশ হয়ে পাশ ফিরে বেডের একপাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পরে। রিয়ন শুয়ে আছে তবে এখনো ঘুমায়নি। অনেক রাতে ঘুমানোর অভ্যাস তাই হয়তো ঘুম আসছেনা রিয়নের। ইন্দু ঘুমিয়ে পরেছে সেটা রিয়ন বুঝতে পারছে কিন্তু ইন্দুর মুখটা রিয়ন দেখতে পারছেনা কারণ রিয়নের উল্টো দিক হয়ে ঘুমিয়ে আছে তার বিন্দু। হয়তো একটু রেগে আছে নয়তো অভিমান করেছে রিয়নের উপর।
রিয়ন বেড থেকে উঠে ইন্দুর পাশে গিয়ে দুই বাহু বেডের উপর রেখে, দুই হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে পরে। রিয়ন তার বিন্দুর দিকে তাকিয়ে আছে। খুব কাছ থেকে দেখছে তার বিন্দুকে। ঘুমন্ত বিন্দুর প্রেমে পরেছে রিয়ন।
ঠোঁট বাকিয়ে হেসে রিয়ন বলে তোমার এই ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই তোমার মাঝে এতোকিছু লুকিয়ে আছে। উপপস! লুকিয়ে আছে হবেনা কথাটা হবে লুকিয়ে রেখেছো। তোমার এই ইনোসেন্ট মুখটা যে কাউকেই বোকা বানাতে পারে যেমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়েছে। আমিও তো বুঝতে পারিনি আমার বিন্দুর এতোটা ট্যালেন্টেড।
আমি এতোটাই বোকা যে, এতো কাছে থেকেও আসল হিরা চিনতে পারিনি। আমি হিরাকে কাঁচ ভেবে অবহেলা করেছি। তবে আমার এখন একটাই লক্ষ বিন্দুর চাঞ্চল্যতাটা আবার ফিরিয়ে আনা।

এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়ন ইন্দুর মাথায় হাত দিয়ে চুলে বিলি কেটে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।তারপর একটু হেঁসে উঠে নিজের জায়গায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরে।

সকালের নাস্তা করে রিয়ন আর ইন্দু রেডি হয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির দিকে যায়। গাড়িতে উঠতে গিয়ে তো ইন্দুর চোখ কপালে! এটা কি দেখছে সে? রিয়ন ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসে আছে! তারমানে, ইন্দুকে ড্রাইভ করতে হবে!
ইন্দু রিয়নের পাশের গ্লাসের কাছে দাঁড়াতেই রিয়ন বলে দেরি করোনা তারাতারি উঠে নিজের জায়গায় বসে পরো। রিয়নের কথায় ইন্দুর আর বুঝতে বাকি নেই আজ ইন্দুকে ড্রাইভ করতে হবে। ইন্দু খুব খুশি হলো আজ অনেক দিন পরে কেউ তার ইচ্ছের দাম দিচ্ছে। একসময় বাবার কাছে কিছু চাইলে বাবা তৎক্ষনাৎ তা পূরণ করতো। যবে থেকে বাবা অসুস্থ তবে থেকেই ইন্দুরও সকল ইচ্ছে চাপা পরে গিয়েছে। ইন্দু পেছনের দিকে তাকিয়ে বাবার চোখে চোখ পরতেই ইন্দুর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। ইন্দু দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেয়।

ইন্দুর ভালোলাগাটা হয়তো রিয়ন বুঝতে পেরেছে, তাই রিয়ন মুখ টিপে একটু হাঁসে। বাবার কাছে বিদায় নিয়ে ইন্দু গাড়িতে ওঠে। কিছুটা পথ যেতেই গাড়ির সামনে সোহাগ এসে দাঁড়ায়। ইন্দু সোহাগকে দেখে গাড়ি ব্রেক করে গাড়ি থেকে নেমে এসে সোহাগের সামনে দাঁড়ায়।
ইন্দুকে নামতে দেখে রিয়ন ও নেমে পকেটে হাত দিয়ে ইন্দুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

সোহাগঃ তাহলে আবারও ফিরে যাচ্ছো ইন্দু? তা এবার আবার কতোদিনের জন্য যাচ্ছো? এবার ফিরে এলে কিন্তু একেবারে আসবে।তোমায় আমি অন্য কারও সাথে একদম সহ্য করতে পারিনা।

ইন্দুঃ কেন? আমায় কি ভুতে কিলাচ্ছে যে আপনার কাছে আসতে হবে! আপনি কি সহ্য করতে পারেন, কি সহ্য করতে পারেন না তা আমার দেখার বিষয় নয়। ইন্দু রিয়নের দিকে এগিয়ে গিয়ে রিয়নের এক বাহু শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলে, “প্রতিটা নারীই চায় তার লাইফে একজন বিশ্বস্ত সঙ্গী, একটা ভরসার হাত।” আর সেটা যদি কেউ পায় তাহলে আপনার মতো অপদার্থ আমড়া কাঠের ঢেঁকির কাছে কেউ কেন ফিরে আসবে?
আপনি আর ফ্যামিলি নিজেকে ছাড়া অন্য কাউকে কি আদৌ সম্মান দিতে জানে? ভালোবাসার মানুষটাকে তার ফ্যামিলিটাকে যদি অপমানের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারেন, তার অসহায় মুহুর্তে যদি সহায় হতে না পারেন তাহলে কিসের ভালোবাসা? কেমন ভালোবাসেন তাকে যে তার সম্মানটাই রাখতে জানেন না?

আমি এমন একজন মানুষকে আমার পাশে পেয়েছি, যে শুধু একা নয় তার পুরোটা পরিবারই আমার পাশে আছে। এমন একটা পরিবার, এমন একটা মানুষকে ছেড়ে আমি আপনার কাছে কেন আসবো বলতে পারেন?

সো,, এ ধরনের অবান্তর কথা নিয়ে আমার সামনে কখনো দাঁড়াবেন না। মাইন্ড ইট।

কথাগুলো বলেই ইন্দু গাড়ির কাছে চলে আসে। গাড়িতে উঠতে যাবে তখন সোহাগের দিকে তাকিয়ে বলে, তবে যদি কখনো আমার মনে হয় আমার বিশ্বস্ত মানুষটা আসলে আমার নয় সেদিন ভেবে দেখবো। কথাটা বলে ইন্দু গাড়িতে উঠে বসে।

রিয়নও গাড়িতে বসে আছে। ইন্দুর বলা শেষ কথাটা রিয়নের বুঝতে একটুও অসুবিধা হয়নি। রিয়ন খুব ভালো করে জানে ইন্দু এ কথাটি কেন বলেছে তার বিন্দু। রিয়ন মনে মনে বলছে এমন মুহুর্ত আমি কখনোই আসতে দিবোনা তোমার লাইফে।

ইন্দু গাড়ি ড্রাইভ করছে রিয়ন জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। মাঝপথে থামিয়ে গাড়ি পার্ক করতে বলে রিয়ন। তারপর দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু খেয়ে আবার গাড়িতে ওঠে। তবে এবার রিয়ন নিজে ড্রাইভ করবে।
কারণ হলো রিয়ন খুব ভালো করে জানে তার বিন্দু কখনো এতো লং টাইম ড্রাইভ করেনি। তাই বাকিটা রাস্তা রিয়ন ড্রাইভ করে।

রিয়ন বাসার সামনে এসে গাড়ি ব্রেক করে। ইন্দু গাড়ি থেকে নেমে কলিং বেল চাপে। রিয়ন গাড়ি পার্ক করে এসে ইন্দুর পাশে দাঁড়ায়।
রাই দরজা খুলে দিতেই রিয়ন কারও সাথে কোন কথা না বলে সোজা নিজের রুমে চলে যায়।

রাই তো ইন্দুকে দেখেই জরিয়ে ধরে। বাসার সবাই ইন্দুকে পেয়ে মহা খুশি। দাদু জিজ্ঞেস করলো রিয়ন দাদুভাইয়ের কি হয়েছে, কিছু বললোনা কেন?

ইন্দু দুই হাত দুই গালে দিয়ে গাল ফুলিয়ে দেখায় তার অর্থ হলো বাবু রাগ করে গাল ফুলিয়েছে।
ইন্দু এভাবে সবাইকে দেখানোতে সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।
রূপকঃ তা আমার ভাইয়ার গাল ফোলানোর কারণটা কি আমরা জানতে পারি?

ইন্দুঃ হুম অবশ্যই, এটা জানাতেই তো আমি এতোটা পথ ছুটে এসেছি।
রাইঃ মিষ্টি ভাবি তুমি পারোও।
ইন্দুঃ তা আর পারলাম কই ননদিনী, আজ পর্যন্ত তোমার ভাইটাকেই তো পথে আনতে পারলাম না।

চলবে….

#সম্পর্কের_অধিকার
#Hridita_Hridi
#পর্ব২১

রাইঃ কি বলছো মিষ্টি ভাবি! আমার ভাইয়া তো পুরো ফিদা হয়ে গেছে।

রিয়নের মম এসে বলে কিরে তোরা এখনো মেয়েটাকে আটকে রেখেছিস? ওকে যেতে দে, ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে তারপর যতখুশি আড্ডা দিস।

দাদুঃ হ্যা দাদুভাই যা, এতোটা পথ জার্নি করে এসেছিস ফ্রেশ হয়ে, খাবার খেয়ে, রেস্ট নে। বিকেলে বসে আমরা সবাই আড্ডা দিবো।

দাদুর কথা শুনে ইন্দু ঘার নেড়ে হ্যা জবাব দিয়ে উপরে চলে যায়। রুমে গিয়ে রিয়নকে দেখতে পেলোনা ইন্দু। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দে ইন্দু বুঝতে পেরেছে রিয়ন ওয়াশরুমে।

সার্ভেন্ট লাগেজ এনে রুমে রেখে গিয়েছে। ইন্দু লাগেজ থেকে জামাকাপড় বের করে ওয়ার্ডরোবে রেখে দেয়। রিয়ন শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ায়।

ইন্দু ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে আছে আর ভাবছে রিয়ন বাবুকে কিভাবে জ্বালানো যায়। না জ্বালালে তো বাবু মুখ খুলবেনা। এসব ভাবতে ভাবতেই একটা দুষ্টু হাসি দেয় ইন্দু, আর বলে আমার নাম ও ইশিকা বিন্তী ইন্দু। কিভাবে মুখ খুলাতে হয় তা আমি খুব ভালো করে জানি হুহ্। কিছুদিন বাদরামি করা ছেড়ে দিয়েছি বলে যে ভালো হয়ে গিয়েছি তা তো নয় মিস্টার! প্রথমে স্টেপ ওয়ান, তাতে কাজ না হলে স্টেপ টু, তাতেও কাজ না হলে স্টেপ থ্রি তাতেও না হলে আজীবন স্টেপ চলতেই থাকবে একের পর এক। হাল ছেড়ে দেবার পাত্রী আমি নই। এবার থেকে বুঝবেন এই ইন্দু থুরি আপনার বিন্দু কি জিনিস হু হা হা..। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একা একাই বকবক করে আর ভিলেনী হাসি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে।

ইন্দু ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে রিয়ন বেডে বসে আছে। ইন্দু সোজা ছাঁদে চলে যায়। জামাকাপড় মেলে দিয়ে রুমে এসে দেখে রিয়ন ফোনে কথা বলছে। কথা শুনে ইন্দুর আর বুঝতে বাকি রইলো না যে রিয়ন ঐ সৃজা শাঁকচুন্নিটার সাথে কথা বলছে। ইন্দু ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছে আর ভাবছে এই শাঁকচুন্নি টা বড্ড বিরক্তিকর। একে সরাতে হবে আগে।
তারপর ইন্দু শুনতে পায়, রিয়ন বলছে ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই তুই ভালো থাকিস ওখানে। আর তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে যখন তুই বিডিতে ফিরে আসবি তিন চার মাস পরে তখন সামনাসামনি বলবো কথাটা।

ফোনের ওপাশ থেকে সৃজা বলে বেবি, এই তিন চারমাসে তো তোদের শর্তও পূরণ হয়ে যাবে। তখন ফিরে এসে আমি তোর সাথে কথা বলবো।
সৃজার কথা শুনে রিয়ন বলে আমিও সে বিষয়েই কথা বলতে চাই তোর সাথে।

ইন্দু রিয়নের কথা শুনতে পাচ্ছে কিন্তু ফোনের ওপাশের কথ তো শুনতে পাচ্ছে না।
তবে রিয়নের কথা শুনে ইন্দু মুচকি মুচকি হাসছে। ভাবছে যাক এই তিন চারমাস তো শাঁকচুন্নি টা জ্বালাতে আসবেনা।

রিয়ন ফোন রেখে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে তাকাতেই দেখে ইন্দু একা একা হাসছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। রিয়ন ভ্রু কুঁচকে ইন্দুর দিকে তাকিয়ে ভাবছে এই মেয়েটা আবার পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি? একা একা হাসছে কেন?
এর মাথায় আবার কি বুদ্ধি ঢুকেছে তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানে।

রাই এসে ইন্দু আর রিয়নকে ডেকে বলে তোমাদের নিচে ডাকছে খেতে এসো।
ইন্দু রাইয়ের সাথে নিচে চলে যায়। আর রিয়ন ওদের পিছে পিছে আসে। খাওয়া শেষ করে রিয়ন নিজের রুমে চলে যায়।

ইন্দু সোফায় বসে সবার সাথে গল্প করছে। রাই, দাদু,রুপক আর রিয়নের মম বসে আছে। তারা জানতে চায় রিয়নের কি এমন হলো যে হঠাৎ এমন চুপ হয়ে গেলো? এমনন কি কারও সাথে কোন কথা পর্যন্ত বলছেনা!
সবাই কারণটা জানতে উদগ্রীব হয়ে আছে।

ইন্দুঃ ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে রিয়নের কথাগুলো বলতে শুরু করে। রিয়ন যে ইন্দুকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটাও বলেছে সে।

দাদুঃ রিয়ন দাদুভাই যে তোকে ভালোবাসে সেটা আমরা জানি। আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। কিন্তু হঠাৎ মুড অফ হলো কিকরে?

ইন্দুঃ উনার কথা শুনে আমি ভাবলাম, আমার সম্পর্কে সবটা তার জানা প্রয়োজন তাই ভার্সিটিতে নিয়ে গিয়েছিলাম।
(তারপর ভার্সিটির সকল কথা বলে)

রাইঃ তো! এতে তো ভাইয়ার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু এমন গম্ভীর হলো কেন ভাইয়া?

ইন্দুঃ তোমার ভাইয়ার হয়তো মনে হয়েছে আমি এডুকেটেড বাট বিয়ের সময় এটা সে কেন জানতে পারলোনা। এতোদিন পর্যন্ত ও তাকে বলা হলোনা কেন। এটা তার কাছে মনে হয়েছে আমরা তাকে ঠকিয়েছি।

দাদুঃ আরে ইন্দু দাদুভাই তুই চিন্তা করিসনা। দাদুভাই যেহেতু তোর প্রেমে একবার পরে গেছে তখন আর টেনশন নেই। তার অভিমানটাও ভেঙে যাবে। তা কি প্ল্যান করেছিস?

ইন্দুঃ করেছি করেছি তোমরা ভাবতেও পারবেনা আমি কি কি প্ল্যান করেছি বলেই একটা দুষ্টু হাসি দেয়।

সবাই অনেক গল্প করছে। রিয়নের মা ইন্দুর মুখে সব কিছু শুনে, উঠে গিয়ে ইন্দুর মাথায় হাত রেখে বলে, তোর মতো এমন লক্ষি একটা মেয়ে পেয়ে সত্যি আমি অনেক খুশি। তোর জন্য আমার ছেলেটার এতো পরিবর্তন হলো। আমি সবসময় দোয়া করি তুই এমন হাসিখুশি থাক আর আমার পুরো পরিবারটাকে এমন হাসিখুশিতে ভরিয়ে রাখ সবসময়। কারও খারাপ নজর যেন না লাগে তোদের জীবনে।

ইন্দুঃ ভালো মা, তোমরা সবাই আমার পাশে এভাবে থাকলে আমি আমার পরিবারের জন্য সব কিছু করতে পারি। তোমাদের ভালোবাসা আমাকে এক নতুন আমিতে পরিণত করেছে। আমার আমিটাকে তো একটা সময় হারিয়েই ফেলেছিলাম। আজ আবার তোমাদের ভালোবাসা, আদর স্নেহে যখন সেটা ফিরে পেয়েছি তখন আর হারাতে চাইনা। রিয়নের মা ইন্দুকে জরিয়ে ধরে। ইন্দুও তার ভালো মা কে জরিয়ে ধরে।

রিয়ন ঘুম থেকে উঠে ইন্দুকে রুমে না দেখে বেলকনিতে যায়। কিন্তু সেখানেও দেখতে পেলোনা ইন্দুকে। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নামতে নামতে ভাবছে নিশ্চয়ই এ মেয়েটা রেস্ট নেয়নি। সবার সাথে আড্ডায় মেতে আছে।
এসব ভাবতে ভাবতে সামনে তাকাতেই রিয়ন থমকে যায়।এটা কি দেখছে বিন্দু আর তার মম দুজন দুজনকে জরিয়ে ধরে আছে! এটাও কি সম্ভব? আজকাল তো বউ আর শ্বাশুড়ির মধ্যে তেমন করে কথাও হয়না আর এরা কিনা একজন আরেকজনকে জরিয়ে আছে?
একটু বাঁকা হাসি দিয়ে রিয়ন মনে মনে বলে, সত্যি আপনার মাঝে এক্সেপশনাল কিছু আছে যেটা সবাইকে খুব করে কাছে টানে।

রিয়ন নিচে নেমে আসতেই ইন্দু আর রিয়নের মম কিচেনে চলে যায়। সবার জন্য চা/কফি আর নাস্তা তৈরি করছে। সবাইকে নাস্তা দিয়ে ইন্দু ছাঁদে যায়। জামাকাপড় তুলে নিয়ে রুমে আসে।

রিয়ন এখনো রুমে আসেনি দেখে ইন্দু আবার নিচে যায়। নিচে গিয়ে দেখে রিয়ন সবার সাথে বসে গল্প করছে।এটাকে ঠিক গল্প বলা চলেনা করণ রাই যা জিজ্ঞেস করছে রিয়ন তার জবাব দিচ্ছে মাত্র। রিয়নের এমন আচরণ দেখে সবাই হতাশ!

কলিং বেল বেজে উঠতে ইন্দু গিয়ে মেইনডোর টা খুলে দেয়। আশফাক খান ইন্দুকে দেখেই খুশিতে ইন্দুকে বুকে নিয়ে বলে আমার মা টা কখন এসেছে? তা এতোদিন পরে মনে পরলো বাবাইকে তাইনা?
ইন্দুকে সবাই এতো ভালোবাসছে সেটা দেখে রাই তার পাপার কাছে গিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে, সবাই শুধু মিষ্টি ভাবিকে ভালোবাসে। আমায় কেউ ভালোবাসেনা।

রাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে আশফাক খান হাসতে হাসতে অন্য বাহুতে রাইকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলে কে বলেছে তোকে ভালোবাসিনা। তোরা দুজন তো আমার দুইটা নয়নের মণি।

রিয়নঃ তার পাপার এমন রুপ দেখে তো হতভম্ব হয়ে গেছে। এতোটা ভালোবাসা প্রকাশ করতে, এতোটা হাসিখুশি থাকতে কখনো দেখেনি তাকে।
রিয়ন এসব দেখে মাথা নিচু করে মনে মনে ভাবছে পুরো পরিবারকেই তুমি বদলে ফেলেছো বিন্দু। তুমি তো শুধু তুমিই, তোমার কোন তুলনা নেই বিন্দু। তোমাকে যতো দেখছি ততোই অবাক হচ্ছি। আর তোমার প্রেমে পরে যাচ্ছি।
সারাটা বিকেল সবাই গল্প, আড্ডায় সুন্দরভাবে কাটিয়েছে। শুধু তাই নয় কখন এখন রাত আটটা বজতে চললো তবুও গল্প চলছেই। মাঝে মাঝে একটু বিরতি দিয়েছিলো শুধু নামাজ পড়ার জন্য তবুও গল্প চলেছে। কারণ একজন নামাজে গিয়েছে তো বাকিরা গল্প করেছে। সে নামাজ পড়ে এসে আড্ডায় যোগ দিয়েছে তো অন্যজন নামাজ পড়তে গিয়েছে। আশফাক খানের বাসায় আজ যেন আনন্দের মেলা বসেছে।

বাসায় পৌঁছে শুধু ফোন করে ইন্দু তার মাকে জানিয়েছে তারা ভালোভাবে পৌঁছে গিয়েছে।এর বেশি কিছু বলা হয়নি। কয়েকটা দিন তাদের সাথে কাটানো হয়েছে। এখন চলে আসাতে বাড়ির সবার মন হয়তো খারাপ। একটু কথা বললে হয়তো তাদের ভালো লাগবে। তাই ইন্দু আর দেরি না করে বাড়িতে ফোন দিলো এশার কাছে।

এশাঃ হ্যা আপু বল। কেমন আছিস? কি করছিস? আঙ্কেল আন্টি কেমন আছে। আর ঐ বাসার বাঁকি সবাই কেমন আছে?

ইন্দুঃ হুম সবাই ভালো। আসার পর থেকে সবার সাথে গল্প করে কাটালাম সারাটা সময়। কয়েকটা দিন ছিলাম না তো তাই আরকি। আচ্ছা বাদ দে ওসব। তুই বল বাবা মা কি করছে। তোরা রাতের খাবার খেয়েছিস?

এশাঃ হুম খেয়েছি বাবা মা রুমেই আছে। বিকেলে তো রিয়ন ভাইয়া কথা বলেছে সবার সাথে। এই নে আপু মায়ের সাথে কথা বল।

ইন্দুঃ একটু কপাল কুঁচকে ভাবছে রিয়ন বাবু ফোন করে কথা বলেছে? কই আমি তো কিছু জানিনা! তারপর বাবা মায়ের সাথে কথা বলে ইন্দু। জার্নি করে এসে রেস্ট না নিয়ে শুধু গল্প করে কাটিয়েছে সারাক্ষণ। তাই এখন খুব ক্লান্ত লাগছে।

সবাই রাতের খাবার খেয়ে যার যার রুমে চলে যায়। আশফাক খান ইন্দুকে বলে সারাদিন নিশ্চয়ই রেস্ট নেওয়া হয়নি? এখন গিয়ে ঘুমা। কাল সারাদিন সময় পাবি গল্প করার। সবাই বাসায় থাকবে। এখন আর জেগে থাকিসনা মা।

ইন্দুও খাবার খেয়ে নিজের রুমে চলে যায়। রিয়নের বিছানা ঠিক করে দিয়ে। ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ফ্লোরে বিছানা করে ঘুমিয়ে পরে।

রুমে এসে ইন্দুকে ফ্লোরে দেখে….

চলবে….

হ্যাপি রিডিং 🥰