#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#পর্ব__২৩
দিশা মারা গেছে শুনে রিমি হতভম্ব হয়ে বললো,
‘এই তো কিছুদিন আগে ক্যান্সার ধরা পড়লো আর এখনি মারা গেছে! আন্টি আপনি মজা করছেন না তো আমার সাথে?’
‘দিশা ক্যান্সারের জন্য মারা যায় নি। আমার মনে হয়েছে ওকে কেউ মেরে ফেলেছে।’
‘মানে?’
‘আমি জানিনা কিন্তু আমার দিশা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার আগে খুব ছটফট করছিল আর গলার দিকে ইশারা করছিলো। কিন্তু…
‘কিন্তু কি?’
‘কিন্তু আমি দিশার বাবা আর ডাক্তার রাও ছিলাম কেউ কিছু দেখতে পাই নি রে! আমার মেয়ে টা আর নাই! ও চলে গেছে আমাদের ফেলে!’
রিমি সব শুনে মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নেয় লিমন এসে তাড়াতাড়ি ওকে ধরে ফেলে বললো,
‘রিমি আপনি ঠিক আছেন?’
ও কোনো কথা বলছে না। নিজেকে ওর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ফোন টা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয় সে। তারপর দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দেয়। অপরজন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। সে রিমির গালে হাত দিয়ে বললো,
‘আর ইউ ওকে মিস রিমি?’
‘ইয়েস স্যার!’
বলে সে এক দৌড়ে অফিস থেকে বেরিয়ে চলে যায়। বাহিরে এসে দেখে কোথাও কোনো রিকশা ও নেই। এখন সে কিভাবে যাবে বুঝতে পারছে না। এটা অপরজন ভালো ভাবে লক্ষ্য করে বললো,
‘এখন রিকশা কিংবা সিএনজি ও পাবেন না। আপনি চাইলে আমার সাথে আসতে পারেন!’
আর কোনো উপায় না দেখে রিমি বসের গাড়িতেই উঠলো। আর দিশাদের বাড়ির এড্রেস বললো। উনি তাকে সেখানেই নিয়ে যায় তবে এখনো পর্যন্ত কিছু বুঝতে পারলেন না যে, হয়েছে টা কি। বাড়ির সামনে আসতে সে দৌড়ে ভেতরে চলে যায়।
শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো বাড়ি টি তে। দিশার মা একবার বেহুঁশ হচ্ছে তো আবার হুঁশ ফিরে কান্না করছে। যে মাত্রই আসলো সেও মৃত নিস্তেজ হয়ে পড়া লাশ টি পাশে বসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। অন্যদিকে যেজন কিছুই বুঝতে পারছিলো এখন সব টা বুঝতে পেরেছে। এক জায়গায় নিজে ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে রিমির কান্না দেখছে।
রাত ৮ টা বেজে যায়। দিশা কে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। বাবা মা ও আত্মীয়ের আহাজারি যেনো ধরে না। মৃত্যু বরাবর ই কষ্টের। সেখানে প্রিয়জনের হলে তো কথাই নেই। রিমি লাগাতার অনেক্ষণ কান্না করার পর ঐ বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। লিমন ই তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য গাড়ি তে বসায়। রিমি চুপ করে আছে আর ভাবছে দিশার মায়ের বলা কথা টা। যে মানুষ টি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলো সে তো কিছুদিন পর এমনিতেই মারা যেতো তাকে কেন কেউ মারবে? নাকি এটা শুধু চোখের ভ্রম?
তবে যাই হোক এই মুহূর্তে কিছু ভাবতে পারছে না। চোখ মুখ ভার হয়ে আছে।
ওদিকে পাভেলের মা আর পাভেল রিমি এখনো আসে নি দেখে যা ভাবার ভেবে নিয়েছে। তবে পাভেলের মায়ের একটাই ভয় ছেলের এই অবস্থায় যদি রিমি পাভেল কে লাথি মেরে ফেলে রেখে তার বসের গলায় ঝুলে পড়ে তবে? পাভেল আজ বহুদিন পর মায়ের সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুত হয়। কেননা রিমি এখনো আসে নি!
‘রিমি কোথায় মা?’
ছেলে কথা বলছে দেখে মা কিছু টা অবাক। অনেক খুশি হন তিনি। তারপর বললেন,
‘আমি তো জানিনা কল করেছিলাম কিন্তু ওর ফোন বন্ধ!’
পাভেল চুপ করে রইল। তার অবনতি তে নিজের ই কষ্ট লাগছে। তবে রিমি কেন তার মা কে মারতে চাইছে সেটা এখনো ওকে জিঙ্গেস করা বাকি!
গাড়ির হর্নের শব্দ পেলে পাভেলের মা বারান্দায় যান দেখতে যে কে এসেছে। রিমি গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়িতে ঢুকে পড়ে। লিমন ভীষণ অসন্তুষ্ট হয়। তার জন্য এতো কিছু করলো কিন্তু একটা ছোট করে থ্যাঙ্কস ও দিতে পারলো না?
বাড়িতে ঢুকতেই পাভেলের মায়ের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাকে,
‘কোথায় ছিলো এতোক্ষণ?’
‘বাহিরে!’
‘কোনো ভদ্র ঘরের বউ এতোক্ষণ বাহিরে থাকে?’
হঠাৎ করে ওর কি হলো কথা টা শুনে রাগে চেঁচিয়ে বললো,
‘হ্যাঁ থাকবো আপনাদের কি তাতে? আমার বান্ধবী দিশার মারা গেছে ওখানেই গিয়েছিলাম শুনেছেন আপনি? কারো সাথে রঙ ঢং করতে তো আর যাই নি!’
রিমি নিজের ঘরে গিয়ে কাঁদতে থাকলে পাভেল বললো,
‘এতোক্ষন কই ছিলে?’
ওকে কথা বলতে দেখে রিমি চট করে এসে ওর এক হাত চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে পুরো ঘটনা খুলে বলে। পাভেল সেরকম কিছুই বললো না। তবে রিমি এই কয়দিন পাভেল কে নিয়ে বিজি থাকায় দিশা কে জীবিত অবস্থায় একবার ও দেখতে পারে নি বলে খুব আফসোস করছে।
————————-
একটা ছোট্ট শিশু হাসছে খেলছে। এতো সুন্দর দেখতে লাগছে যে রিধি হা হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে আল্লাহর সৃষ্টি এতো সুন্দর? হঠাৎ কি হলো শিশু টি কাঁদতে শুরু করে। কান্না দেখে যেনো রিধির মন ভেঙ্গে গেলো। কান্না থামিয়ে চোখে মুখে প্রচন্ড রাগের আক্রোশ ধরে রেখে তৎক্ষণাৎ শিশুটি অবয়বে পরিণত হয়ে যায়। আর বলে,
‘মা আমাকে যারা মেরেছে তাদের আমি বাঁচতে দিবো না!’
এই কথাটা শুনে আচমকা রিধির ঘুম ভেঙ্গে যায়। আর খুব ভয় পায় সে। ঘেমে একাকার। বারান্দায় বসেই তো সে ছিলো কিন্তু কখন ঘুমিয়ে পড়লো টের ই পায় নি। মাথায় খুব ব্যথা অনুভব করলো। একটু আগে কি হয়েছে মনে করার চেষ্টা করে দেখলো এতে করে মাথায় আরো বেশি ব্যথা হয়। তার মা এটা লক্ষ্য করে বললো,
‘রিধি কি হয়েছে তোর কোনো সমস্যা?’
‘মা আসলে মাথা টা খুব ধরেছে!’
‘এই তো ভালো ছিলি ঘুমাচ্ছিস দেখলাম হঠাৎ কি হয়েছে? কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস?’
‘হ্যাঁ খারাপ নাকি ভালো জানিনা।’
‘কি স্বপ্ন?’
‘মনে করতে পারছি না মা!’
মাথায় প্রেশার দিলে আরো বেশি ব্যথা হয় দেখে মা বললো,
‘আচ্ছা স্বপ্ন মনে করতে হবে না। স্বপ্ন তো স্বপ্নই আমি রঙ চা বানিয়ে নিয়ে আসছি দেখবি খেলে ভালো লাগবে!’
‘ওকে!’
দিনে দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য এমন স্বপ্ন দেখেছে বলে নিজের মন কে বুঝ দিলো সে।
—————————-
জীবন থেকে দুটো মাস আরো কেটে যায়। এই দুই মাসে ও পাভেল একটু সুস্থ থাকা সত্ত্বেও স্বাভাবিক আচরণ করছে না দেখে রিমি আজ আবারো জিঙ্গেস করতে ওর পাশে গিয়ে বসে শান্ত কন্ঠে বললো,
‘পাভেল কি হয়েছে তোমার আমাকে বলবে প্লিজ? তুমি আগের থেকে অনেক সুস্থ তাও কথা বলো না কেন?’
‘কি বলবো?’
‘আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে তুমি আর আগের পাভেল নাই!’
‘হ্যাঁ তো?’
‘মানে কি? এমন আচরণ কেন করছো তুমি? আমি তো তোমার এই অবস্থায় ও পাশে আছি তাই না?’
‘আমার এ অবস্থার জন্য দায়ী তুমি! তো পাশে থাকবে না কেন?’
‘হোয়াট? এসব কি বলছো পাভেল?’
‘আমি ঠিক ই বলছি!’
‘দেখো আমার মাথা খারাপ করো না বলে দিলাম!’
‘ও এখন যখন আমি কথা বলা শুরু করেছি তা মাথা খারাপ হয়ে গেছে?’
‘চুপ একদম চুপ। বলো আমি কিভাবে দায়ী?’
‘তুমি আমার মা কে মারতে চাও নি?’
রিমি হঠাৎ পাভেলের এই কথাটা শুনে চমকে উঠে থমকে গেলো।
‘ম্ ম্ মা্ মানে?’
‘তুমি ভীষণ স্বার্থপর রিমি। আমি নিজের ভুল এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আর রিধির সাথে যেই অন্যায় করেছি তার ফলাফল আমার এই অবনতি!’
‘কি বলতে চাও তুমি?’
‘কেন বুঝতে পারছো না? ন্যাকা সাজছো? মা কে প্যারালাইসিস করে মারার জন্য ডাক্তার নোহানের কাছে যাও নি তুমি? অস্বীকার করতে পারবা যে কবির নামের লোক টার থেকে তুমি ঔষধ নিয়ে আসো নি? কোথাও রেখেছো সেই ঔষধ আমাকে খাইয়ে দিয়ে মেরে ফেলো! এই জীবন থাকার চেয়ে মরে যাওয়া স্রেফ ভালো!’
পাভেল সব স্পষ্ট ভাবে বলে পাভেলের মা তৎক্ষণাৎ রুমে ঢুকলো। মাথায় বাজ পড়ার মতো অবাক তিনি। একপাশে রিমি মাথায় হাত দিয়ে রোবটের মতো বসে আছে। পাভেলের মা অনেক বাজে কথা শোনানোর পর বললো,
‘আমি এখানে আর থাকবো না আর এক মুহূর্ত ও না। আমি আজ ই চলে যাবো নাহলে এই রাক্ষুসী মেয়ে আমাকেও মেরে ফেলবে। আমি তো আগেই বলেছিলাম তুই শুনিস নি আমার কথা!’
‘আমাকে ও নিয়ে চলো মা!’
রিমি রেগে মেগে বললো,
‘আপনি যাচ্ছেন যান পাবেল কে টাচ্ ও করবেন না!’
পাভেল কে আর নিয়ে যেতে পারেন নি তিনি একাই তার বোনের বাসায় চলে যান। মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া আদায় করেন যে তিনি এখনো ওবধি তাকে সুস্থ রেখেছেন। তবে সন্তানের জন্য মন কাঁদে কিন্তু কিছু করার থাকে না।
————————
পাভেল এখন মোটামুটি সুস্থ এটা লিমন নিজে এসে দেখে যায়। তবে নিজের সাথে পাভেল কে তুলনা করে দেখলো রিমির জন্য লিমন বেস্ট। কিন্তু পঙ্গু স্বামীর প্রতি স্ত্রীর ভালোবাসা দেখে ও রেগে যায়। বুঝতে পারে না এতো সুন্দরী একটা মেয়ে এই পঙ্গুর হয়ে থাকতে কেন চায়? কেন সে বুঝে না এই ব্যক্তি সে ডিজার্ব করে না। ডিজার্ব করে লিমনের মতো কাউকে।
অপরদিকে লিমন বিবাহিত। তার বউ পাঁচ মাসের প্রেগন্যান্ট। লিমনের স্ত্রীর নাম লিমা। লিমন আগে থেকেই পরনারী তে আসক্ত ছিলো। লিমা কম চেষ্টা করে নি এসব থেকে তাকে ফিরিয়ে আনতে তবে পারে নি। স্বামী এবং স্ত্রী দুজনের মধ্যে কারোই বাবা মা নেই। লিমা কে তার চাচা চাচী মানুষ করেছে। অবহেলা অনাটনে বড় হয় সে। লিমনের এই সব মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে তাকে কেননা চাচা চাচী কে গিয়ে কিছু বলার মুখ নেই। কারণ আগে থেকে চাচার সংসারে তাকে চাচী উটকো ঝামেলা মনে করতো। লিমনের সংসার ছেড়ে চাচার ঘরে আর ঠাই তার মিলবে না। তাছাড়া রাস্তায় না খেয়ে মরা ছাড়া কোনো উপায় নেই দেখে দিন রাত সব চেপে রেখে সহ্য করে যেতে বাধ্য লিমা। কিছু বলরে গেলেই লিমন গালাগালি শুরু করে দেয়। আরো নানান পাশবিক নির্যাতন তো আছেই তাই আর কিছু বলার সাহস হয় না তার। তবে দিনে দিনে সে এতোই হাঁপিয়ে উঠেছে যে লিমন কে গলা টিপে মেরে ফেলতেও আর দ্বিধাবোধ করবে না। কিন্তু এর মাঝে ও একটা সমস্যা তৈরি হয়। সে এই কাজ করার কথা ভাবে জানলে লিমা কেই মরতে হবে। তাই সে যথোপযুক্ত সুযোগের অপেক্ষায় আছে। যেহুতু তার প্রতি অন্য জনের কোনো মায়া দয়া হয় না তাই সেও আর মায়া না বাড়ানোর সিদ্ধান্তে অটল থাকলো। যে যার যার মতো আছে! লিমন ফিরেও তাকায় না স্ত্রীর দিকে!
লিমন আজ পাভেল কে দেখতে আসার নাম করে বাসায় আসলো। আগে থেকেই এই লোকটা কে দুই মা ছেলের মোটেও সুবিধার মনে হতো না। কিন্তু উনারা কিছু বলতেও পারেন নি। কারণ তার টাকার নিচে পড়ে আছে তারা।
‘মিস্টার পাভেল এখন কেমন আছেন?’
‘জ্বি ভালো আপনি?’
‘ভালো আর থাকতে দিলেন কই?’
‘মানে?’
‘না মানে আছি এক রকম। তা আপনাকে একটা কথা বলবো ভাবছি! যদি কিছু মনে না করেন তো!’
‘হ্যাঁ বলেন?’
‘আপনি না আপনার বউ কে ডিভোর্স দিয়ে দেন।’
‘হোয়াট ডু ইউ মিন?’
‘আহা আস্তে কথা বলুন। এর বিনিময়ে আপনি অনেক টাকা পাবেন। তাছাড়া আপনি তো এখন পঙ্গু ওর উপযুক্ত আপনি নন। ভালো হবে আমার হাতে ওকে সুন্দর করে তুলে দিন!’
পাভেলের সাথে অনেক রাগারাগি হয়। রিমি নিচে ছিলো বলে শুনতে পায় নি। লিমন কি যেনো বলে তাকে চুপ করিয়ে দেয়। তবে যাওয়ার আগে বলে যায়।
‘আমি যেই জিনিস চাই তা পেয়েই ছাড়ি। সেটা হোক যেকোনো ভাবেই!’
পাভেল রিমি কে এই কথা গুলো বলতে ও পারলো না। চুপচাপ হজম করতে থাকলো।
লিমন এতো দিন চুপ থাকার পর আজ ভাবলো রিমি কে তার অন্তত এক রাতের জন্য হলেও চাই। তাই ও আসার অপেক্ষায় থাকলো। অফিসে আসলেই তাকে নিজের কেবিনে ডাকে।
‘ভেতরে আসতে পারি স্যার?’
‘আসো!’
‘স্যার আমাকে ডেকেছেন?’
‘হ্যাঁ!’
‘জ্বি স্যার বলুন!’
‘আচ্ছা ধরো তোমাকে আমি তোমার দুই লক্ষ টাকা শোধ করার একটা খুব সহজ সুবর্ণ সুযোগ দিলাম তুমি কি করবে?’
‘মানে কি সুযোগ স্যার?’
‘আমি তোমাকে এক রাতের জন্য চাই রিমি! শুধু একটা রাত। তাহলে সব টাকা শোধ হয়ে যাবে!’
চলবে_________________
#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#এক্সট্রা_পার্ট
লিমনের মুখে এমন অপ্রত্যাশিত কথা টা শুনে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো সে। একে তো পাভেল কে নিয়ে সে টেনশনে ছিলো তার উপর এখন তাকে অসম্মান জনক এই কথা বলার সাহস কি করে ওর হলো ভেবে না পেয়ে চড় মেরে দিয়েছে। পুরো শরীর ঘৃণায় রি রি করছে। বিপরীত জন কে শক্ড হয়ে যায়। কয়েক সেকেন্ডের জন্য কি হলো বুঝতে পেরে চোখ মুখ লাল করে ফেললো,
‘তোমার এতো বড় স্পর্ধা? আমাকে থাপ্পড় মারলা তুমি?’
‘আপনার ভাগ্য ভালো যে হাতের ব্যবহার করেছি জুতার নয়!’
‘হোয়াট….
‘গলা উঁচু করে কথা বলবেন না। আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এতো বাজে একটা প্রস্তাব দেওয়ার হ্যাঁ? মতোই সস্তা হয়ে গেছি নাকি আমি?’
‘তুই আর ভালো ও কত? নিজের বোনের স্বামী কে জোড় করে কেড়ে নিয়েছিস এখন তো ‘ও’ তোর উপযুক্ত না বুঝিস না তুই গাঁধি মেয়েং পঙ্গুর সাথে ঝুলে আছিস!”
রিধি সম্পর্কে রিমি আর পাভেলের সকল কু কীর্তি জেনে নেয় লিমন। রিমি কিছু বলতে যাবে ওমনি কেবিনে আরো একটা ছেলে ঢুকে কেবিন লক করে দেয়। রিমি অবস্থা দেখে খারাপের আশঙ্কা পেয়ে বললো,
‘আমি বাহিরে যাবো!’
‘এতো সহজে তো তোকে আমি ছাড়বো না জানেমান!’
রিমি পালানোর জন্য ছুটাছুটি করতে থাকলে হঠাৎ অন্য ছেলেটা ওর মুখের সামনে স্প্রে জাতীয় কিছু ছুড়ে মারে। আর তার সাথে সাথেই রিমির মাথা ঘুরে উঠে। চোখ মুখে ঝাঁপসা দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পর ই সে জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়তে নিলে অপরজন একটা সয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
‘বলেছিলাম না, সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে হয়। আমি ও তাই করলাম!’
লিমনের সাথে ক্লোজ অবস্থার কয়েক টা ছবি তোলে অন্য ছেলেটা। যখন সে বেরিয়ে যায় লিমন রিমির সাথে খারাপ কিছু করার আগেই লিমা সেখানে চলে আসে। লিমন একদম ভড়কে যায়। ঘৃণিত চোখে তাকিয়ে একজন স্ত্রী তার স্বামী কে দেখছে। লিমন নিজের আসন ছেড়ে উঠে এসে হংকার দিয়ে বললো,
‘তুমি এখানে কেন?’
‘শেষ পর্যন্ত নিচে নামতে নামতে যে এই পর্যন্ত চলে যাবে ভাবতে ও পারিনি। ছিঃ!’
‘কি বললে তুমি?’
‘গলার আওয়াজ বড় করো না। নাহলে এখনি সব কয়জন স্টাপের সামনে তোমার ভালো মানুষি ছুটিয়ে দিবো!’
লিমন রেগে মেগে কি করবে ভেবে না পেয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। লিমা সেই অপরিচিত মেয়েটির সামনে দাঁড়িয়ে ভালো করে অবলোকন করে দেখলো মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে গেছে। সে দ্রুত গ্লাস থেকে পানি নিয়ে মেয়েটির চোখে মুখে ছিটিয়ে দিতেই সে মিটমিট করে চোখ খুলে তাকায়। সামনে অচেনা অপরিচিত মুখ কে দেখে তাড়াহুড়ো করে উঠে বসে। অন্যজন বললো,
‘ঠিক আছেন আপনি?’
‘আ্ আ্প আপনি..!’
আর কিছু বলতে পারে না গলা ধরে আসে।
‘কাঁদবেন না শান্ত হোন!’
‘আমার কি হয়েছিলো! আমার মুখে উনারা পা্ পানি জাতীয় কিছু মেরেছিলো!’
‘আপনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন!’
‘কিহ…
রিমির হঠাৎ কি হলো সব কিছু মনে পড়ায় সে একপাশে জড়সড় হয়ে বসে কাঁদতে শুরু করে। আর তার কয়েক মিনিট পর ছুটতে সোজা অফিস থেকেই বেরিয়ে যায়। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন তাকে হতে হবে ভাবতেও পারে নি। তবে ঐ মেয়েটি গভীর ভাবে শুধু তাকে দেখছিলো আর কিছুই বলে নি।
রিমি বাড়ি তে চলে আসে। পাভেল কে কান্না দেখালো না আর না তো বললো বসের সেই কু রুচি পূর্ণ কথা গুলো সম্পর্কে কিছু। ফলে সে জানলো ও না কিছু। যে যার মতোই রয়ে গেলো। অনুভূতিহীন দুটি মানুষ। কি ভেবেছিলো আর তাদের জীবনে হঠাৎ কি নেমে এলো! জীবন কাকে কখন কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় কেউ ই ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারে না। এদের অবস্থা ও অনেক টা তেমন ই!
এদিকে লিমন লিমার আগেই বাড়িতে গিয়ে ওর আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ও যখন বাড়িতে আসলো তখন প্রচন্ড খারাপ ভাবে গালিগালাজ শুরু করে। আর লিমা কে মারে পর্যন্ত এতে যদি তার রাগ কমে আর কি! সে মার খেয়ে নিজের মধ্যে হজম করতে থাকে। চারটি মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
পাভেল নিজের ভুলে নিজের মধ্যে নিজেই প্রচন্ড অনুতপ্ত যা থেকে সে বের হওয়ার চেষ্টা করেও পারছে না। রিমি আজকের ঘটা অঘটনের পর কাল কিভাবে অফিসে যাবে ভাবছে। সঙ্গে টাকার চিন্তা তো ফ্রি তেই থাকছে। লিমা ভাবছে সে কিভাবে এই মানুষ রূপে জানোয়ার টার হাত থেকে মুক্তি পাবে, এবং কবে? আর লিমন ভাবছে সে কিভাবে তার চাওয়া পূরণ করবে। আজ ই সুবর্ণ সুযোগ ছিলো কিন্তু মাঝপথে লিমা চলে আসায় যা ব্যঘাত ঘটে। তাছাড়া ও রিমি তাকে থাপ্পড় মারার মতো যে দুঃসাহস দেখিয়েছে সেই উসুল টাও সে করবে এবং অবশ্যই করবে!
এসব ভাবতে ভাবতে তার মাথায় হঠাৎ একটা সয়তানি বুদ্ধি করলে গেলো। তখন গভীর রাত। নিজের উৎকন্ঠা ধরে রাখতে পারলো না সে। ঐ ছেলে টার তুলে দেওয়া রিমির সাথে তার আপত্তিকর ছবি গুলো আস্তে করে পাভেল কে সেন্ট করে দিলো। আর মনে মনে সয়তানি হাসি হেসে যা হবে কাল দেখা যাবে ভেবে নিদ্রায় ডুব দিলো।
ওদিকে যাকে সে ছবি পাঠিয়েছে সে বা তার স্ত্রী দুজনে গভীর ঘুমে মগ্ন। সকাল হতেই রিমি গতকালের ঘটনা বেমালুম ভুলে গেলো।
————————–
ভালোয় ভালোয় নাস্তা করার পর্ব টাও শেষ হলো দুজনার। পাভেল হঠাৎ তার ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো স্ক্রীনের উপর কিছু লেখা ভাসছে। দেখার জন্য আগ্রহ জাগতেই সে ফোনের লক খুলে সেখানে গিয়ে আননোন নাম্বার থেকে পাঠানো ঐ সব আপত্তিকর ছবি দেখে রেগে আগুন হয়ে গেলো।
‘রিমি এই রিমি কোথায় তুমি?’
চিৎকারে চেঁচিয়ে শুরু করে। হুংকার দিতে থাকে বাঘের মতো। রিমি রান্না ঘর থেকে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে এসে বললো,
‘চিল্লিয়ে সাড়া বাড়ি মাথায় তোলার কি আছে বুঝলাম না!’
সামনে ভয়ানক রেগে ক্ষিপ্ত হয়ে থাকা মানুষ টাকে দেখে খানেক টা ভয় পেয়ে যায় সে। কিন্তু বুঝলো না এমন এংরি ফেইস কেন?
‘কি হয়েছে পাভেল?’
‘তুমি এতো টা নিচে নেমে গেছো? এতোটা অবনতি হয়েছে তোমার যে নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না!’
‘মানে?’
পাভেল রিমির দিকে ফোন টা এগিয়ে দেয়। ফোনে থাকা ছবি গুলো দেখে যেনো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো তার।
‘পা্ পাভ্ পাভেল আমার কথা টা শুনো!’
‘তুমি সত্যি ই মায়রে কথা টার প্রমাণ দিয়েছো। তুমি আসলেই একটা চরিত্রহীন!’
পাভেলের মুখে এই কথা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সে। ফলে আচমকা দ্বিতীয় নাম্বার চড় টা পাভেলের গালেই পড়লো। মানুষ টা ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘হাহ এটাই আমার জন্য অপেক্ষায় ছিলো!’
কি করেছে বুঝতে পেরে রিমি নিচে বসে পড়ে বললো,
‘প্লিজ পাভেল আমাকে বিশ্বাস করো আমি এসবের কিছুই জানিনা। ঐ লোকটা আমাকে বেহুঁশ করে এসব করেছে। প্লিজ ট্রাস্ট মি!’
‘তোমার মতো মেয়েকে বিশ্বাস করবো আমি? লাইক সিরিয়াসলি? মনে আছে তুমি তোমার মা বাবা বোন সবার বিশ্বাস ভেঙ্গেছো এট লাস্ট আজ আমারো!’
পাভেল মুখে যা আসে তাই বলতে থাকে যা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেলো তার।
‘ব্যাস অনেক বেশি বলে ফেলেছো তুমি। সব দোষ এখন খুব সুন্দর করে আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছো তাই না? আমার মা বাবা আর বোনের বিশ্বাস আমি তোমার জন্যই ভেঙ্গেছিলাম। এখন সেই তুমি ই আমাকে কথা শোনাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে? তুমি আমার কথা বিশ্বাস করছো না ঠিক আছে করো না দরকার নেই। আমার লাইফ আমি ই দেখছি!’
রিমি অফিসের যাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে বাসা থেকে বের হয়। অন্যদিকে লিমনের আজ দেরি করেই ঘুম ভাঙ্গলো।
ঘুম টা ভেঙ্গেছে রিমির নাম্বার থেকে কল আসায়। লিমন রাতের কথা মনে করে হাসলো। আর দেরি না করে কল টা রিসিভ ও করলো। তারপর ওপাশ থেকে যা শুনলো তার যেনো বিশ্বাস ই হতে চাইলো না। এ যেনো মেঘ না চাইতেই জল। কারণ রিমি বললো,
‘লিমন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। তুমি ই আমার উপযুক্ত। তোমার চাওয়া আমি পূরণ করতে রাজি আছি। তুমি আমাকে এক রাতের জন্য পাবে! বেড পার্টনার হিসেবে হাহা..! অফিসে আসো বাকি কথা ওখানেই হবে!’
চলবে___________________