সম্পর্কের দেয়াল পর্ব-২৬ এবং শেষ পর্ব

0
1106

#সম্পর্কের__দেয়াল
#Writer_AnaHita_Ayat_SumaiYa
#অন্তিম__পর্ব
লিমন এই কাজ টা একা করে নি তাই ওর সাথে সবাই কে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এর মাঝে অন্য ছেলে গুলোর বছর পাঁচেক জেল হয়। আর লিমনের হয় যাবৎজীবন কারাদণ্ড। কারণ সে একটা মেয়ে উপর এসিড নিক্ষেপ করেছে। সব প্রমাণ এর সাপেক্ষেই এই রায়। রিমির হয়ে লিমা মামলা করেছিলো নারী নির্যাতন মামলা। ফলে লিমনের জেল হয়ে যাওয়ায় যত সম্পত্তি ছিলো সব কিছুর মালিক লিমা একাই হয়ে যায়। সে এটা চায় নি চাওয়ার আগেই পেয়ে গেছে। তার স্বামীর জন্য ই এমন হয়েছে তাই সে রিমি আর রিমির পরিবার আই মিন পাভেল আর তার মা সহ ৩ জন কেই তার বাড়িতে থাকতে দেয়। রিমির কোনো দোষ নেই সব কিছু পাভেল আর তার মা কে জানায়। কিন্তু তারা রিমির এই অবস্থা দেখতে পারছিলেন না। একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের ও রিমির চেহারা দেখে ভয় লাগছিলো।

এই এক কাজে রিমির পুরো জীবন বরবাদ হয়ে যায়। হাসপাতালে ডাক্তার রা অনেক চেষ্টার পর ও কিছু করতে সক্ষম হয় না। ফলে অনেক দিন সেখানে থাকার পর লিমা নিজের বাড়ি তে নিয়ে আসে তাকে। সব কিছু হারিয়ে শেষে লিমার মতো কাউকেই পেয়েছে যে তাদের সব দায়িত্ব নিয়েছে কিন্তু এই রিমি আর আগের জীবনে ফিরতে পারলো না।

সে মানসিক ভাবে প্রচুর ভেঙ্গে পড়ে পাগলামী শুরু করে। এই যেমন লিমা বললো,

‘ক্ষুধা পেয়েছে তোমার? আসো আমাদের সাথে খেতে আসো!’

‘না আমি খাবো না!’

‘দেখো এভাবে না খেলে তো অসুস্থ হয়ে যাবে! আমি এখানে খাবার নিয়ে আসি?’

‘হু!’

লিমা খাবার নিয়ে এসে রেখে দেয় আর তক্ষুণি ও বলে উঠে,

‘আপনি চলে যান। আমি এখানে একা থাকবো!’

‘আমি থাকলে কি হবে?’

‘না যান আপনি!’

লিমা বাধ্য হয়ে চলে যায় ঠিকই কিন্তু তার পর পর ই শুরু হয় রিমির চিৎকার চেঁচামেচি। বিকশ কন্ঠে বলে উঠে,

‘আমাকে মানুষ মনে হয় না হ্যাঁ? আমি কোনো পশু? আমাকে পোকা মাকড় কেন খেতে দেওয়া হয়!’

কিছুক্ষণ থেমে বলবে,

‘খাবারের সাথে পোকা মাকড় আসে কোথা থেকে!’

এভাবে আর চলে কতদিন? রিমি ঠিক মতো না খেয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে থাকে। আর ওর পাগলামি বেড়ে যায় যার ফলে ওরা বাধ্য হয়ে তাকে মেন্টাল হসপিটালে রেখে আসে। আর আজ তার ১৩তম দিন!

—————-

রাহুল হঠাৎ করেই আচমকা রিধির সামনে একের পর এক ফাইল ফিক্কা মারতে শুরু করে। সারাদিন মাথার পেইনে কাতর থাকার কারণে ফাইল গুলো তে গোলমাল করে ফেলেছে সে। শুধু এটুকুর জন্যই মিস্টারের রাগ হয়নি রাগ হয়েছে গত তিন মাসের মতো নিজেকে তার সামনে শক্ত করে রাখার জন্য। যা সে নিজের উপর জোড় খাটিয়েই করেছে কিন্তু আজ আর পারলো না।

‘মাসে মাসে সেলারি তো ঠিকি নেন কাজের সময় আসলে ফাঁকিবাজি তাই না?’

‘স্ স্যার…

‘স্যাট আপ। কি করেছেন এগুলা হ্যাঁ? এই জন্য আপনাকে রেখেছি আমার কোম্পানি তে?’

‘স্যার আমার মাথায় ভীষণ পেইন করছিলো তাই গোলাম পাকিয়ে ফেলেছি!’

‘নো মোর এক্সকিউজ! এটা অফিস মামা বাড়ি নয় আপনার যে করতে মন চাইলো করলেন আর মন চাইলো না করলেন না। এতোই যদি বিরক্ত হয়ে যান জব ছেড়ে দিন! এমন অলস আর মাথামোটা টাইপের মানুষ আমার কোম্পানি তে না থাকলেও চলবে! আপনি এখন আসতে পারেন!’

রাহুল রাগের মাথায় কি বলতে কি বলে ফেলেছে তখন তার নিজের ও মাথায় আসে। রিধি এই অপমান ঠিক ভাবে নিতে পারে নি। চোখের পানি আপনাআপনি চলে আসে। কিছুক্ষণ থেমে সে বললো,

‘আর কখনো যেনো এমন না‌ হয় গট ইট। আপনি এখন আসতে পারেন!’

রিধি সম্মতি জনক মাথা নাড়ায়। আর নিচ‌ থেকে ফাইল গুলো তুলে নিজের কেবিনে চলে যায়। আর তার পরেরদিন রেজিগনেশন লেটার দিতে আসে। অনুমতি নিয়ে রাহুলের কেবিনে ঢুকে তার দিকে এগিয়ে দেয় সেটা। মিস্টার তখন নিচের দিকে তাকিয়ে কাজে ব্যস্ত!

‘কি এটা?’

‘রেজিগনেশন লেটার!’

‘হোয়াট?’ সে বেশ চমকে উঠে দাঁড়ায়!

‘স্যার আমি আর জব করবো না!’

রিধি নিজ থেকে যথেষ্ট শক্ত হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে এই কথা গুলো বলছিলো। রাহুল কাল যা করেছে সব রাগের বশে। যার জন্য সে খুব অনুতপ্ত কিন্তু এর জন্য যে এতো কিছু হয়ে যাবে ভাবনাতে নেই। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না সে। এতদিনের চেপে রাখা সব কিছু একসাথে জাপটে ধরলে সে রিধির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো,

‘বললেই হলো নাকি হ্যাঁ? আমি কাল যা করেছি স্রেফ রাগের বশে। তাই বলে পাল্টা রাগ?’

‘না স্যার। আমি রেগে নেই। আপনি তো বলেছিলেন এটা অফিস মামা বাড়ি না। ভালো না লাগলে জব না করতে তাই!’

রিধি কে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে চোখ মুখ লাল করে বললো,
‘বেশ তো দেখছি। তুমি এখানে কেন? এই কয়েক মাস নিজেকে কিভাবে কিসের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছি আমি জানি। বলো তুমি এখানে কেন?’

রিধি চুপ করে থাকে। নিজেকে শক্ত করে একি ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাহুল নিজেই দূরে সরে যায়। আর রেজিগনেশন লেটার টা ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলে। শেষে নিজেই অফিস থেকে বের হয়ে যায়।

রিধি অফিস টাইম শেষ করে যখন বাড়ি ফিরে আসে তখন রাহুল কে দেখে ছোট খাটো একটা ধাক্কা খায়। যাওয়ার আগে সে শুধু একটু মুচকি হেসে চলে যায়। আর তার পরের দিন বাবা মা নিয়ে হাজির হয়। রিধি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে টাষ্কিত হয়ে যায়। রাহুলের বাবা মার সামনে ঘুম থেকে উঠে ঠিক মতো চুল আঁচড়ে নেয় নি ঐ অবস্থায় মাথায় ওড়না দিয়ে নিচে আাসে। রিধির বাবা মা পরিচয় করিয়ে দিতেই সে সালাম দেয়। উনারা সালাম নিয়ে রিধি কে রাহুলের পাশেই বসান। আর কিসব যেনো কথা বলছিলেন রিধি বুঝে উঠতে পারছিল না ঠিক কি হচ্ছে। যখন ওদের দুজন কে রিধির মা বললো,

‘বাবা তুমি চাইলে রিধির সাথে একান্তে কথা বলতে পারো রিধি ওকে তোর রুমে নিয়ে যা!’

মায়ের চোখের ইশারায় নিয়ে যেতে বাধ্য হলো। রিধি বারান্দায় নিয়ে গিয়ে মুখ খুললো,

‘স্যার আপনি আমার বাড়িতে? তাও আপনার বাবা মা সহ কিন্তু কেন?’

‘আমি শুধু মাত্র অফিসেই তোমার স্যার এখানে একেবারেই নই!’

‘মানে এসব কি হচ্ছে সকাল সকাল?’

‘বুঝতে পারো নি এখনো?’

‘কি বুঝবো?’

রাহুল উঠে তার পাশে দাঁড়িয়ে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘সেটাই যেটা হচ্ছে!’

হুট করে সে হাটু গেড়ে নিচে বসে বললো,
‘বিয়ে করবে আমাকে রিধি?’

সে এই কথা টা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। কাল যখন সে তার বাবা মা কে জিঙ্গেস করেছিলো উনি কেন আসছে তখন উনারা কিছুই বললেন না কিন্তু আজ এসব?

‘উত্তর দিবে না?’

উত্তর সরূপ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
‘আমার কপালে স্বামী সন্তান সংসার এসব লিখা নেই! তা ছাড়া আমার অতীত..

‘হুস ভুলে যাও সব।’

‘হাহাহা বললেই ভুলে থাকা যায়। আপনি কি জানেন আমার সম্পর্কে? আমি একটা ডিভোর্স নারী। আপনার বাবা মা এটা জেনেই এসেছে নাকি না জেনে? সমস্যা নেই আমি গিয়ে বলে দিচ্ছি!’

‘আমি এবং আমরা সব জেনে বুঝে তবেই এসেছি। সাড়ে তিন টা বছর আমি কম কষ্ট পাই নি তাও তোমাকে ভুলতে পারিনি। যদি আমি অন্য একটা মেয়ে কে বিয়ে করতাম তার আর আমার দুটো জীবন ই নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে আজো বিয়ে করিনি। কারণ আমি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তোমাকেই চেয়েছি। আর আজ যখন সৃষ্টিকর্তা আবার সুযোগ করে দিলো তো আমি তা হাত ফেলতে পারি না কিছুতে! আর তোমার সাথে যাই হয়েছে সেটা ঐ খারাপ লোকদের কাজ। তোমার দোষ দেখছি না। আমি এখনো তোমাকে চাই প্লিজ উইল ইউ মেরি মি রিধি!’

‘আপনি আমার বাবা মা আর আমাকে করুণা করছেন?’

সেদিন রিধির কথার জোড়ে রাহুল কিছু করতে না পেরে চলে গিয়েছিলো মন ছোট করে। কেননা তার শেষ একটা আশা ছিলো এবার রিধি তার হবে কিন্তু না ভুল। এই তিন মাসে সে কিভাবে রিধির সামনে স্ট্রং থেকেছে নিজের ও জানা নেই। তবে আজ রিধি যা করলো তাতে তার সামনে রাহুল ঠিক থাকতে পারবে কিনা তার অজানা!
.
১৩ দিন পর রিমি একটু স্বাভাবিক হলে বাড়ি নিয়ে আসে। ডাক্তার দেখালে বলে এভাবেই চলতে থাকবে। সত্যি ই এভাবেই চলছে কিছুদিনের জন্য রিমি ভালো থাকে আবার পাগলামি শুরু করে। পাভেল ও তার এই জীবনের উপর খুব অসন্তুষ্ট। এর চেয়ে তার মতে মরে যাওয়াই শ্রেয়! তারা দুজন ই ভীষণ অসুখী। এভাবে আর কত দিন কত বছর কত যুগ চলবে তাদের অজানা! তবে নিজেদের কৃতকর্মের সাজা এভাবে পাবে জানলে কখনো একটা মেয়ের সাথে এমন করতো না! ঐ যে কথায় আছে না কাউকে কষ্ট দিয়ে সুখী হওয়া যায় না সত্যি ই তাই! এমন জীবন কারো না হোক! ওরা চায় ওদের মতো ভুল কেউ না করুক নয়তো ভুক্তভোগীর হাত থেকে বাঁচতে পারলেন আল্লাহর হাত থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না। কেননা আল্লাহ ছাড় দেন ছেড়ে দেন না!
‌.

শেষে অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা পেরিয়ে স্পেশালি আজ রিধির সাথে রাহুলের বিয়ে হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি আজ তারা দুজন। রাহুল তার ভালোবাসা কে সারাজীবনের জন্য পেয়ে খুব খুশি আর রিধি এতো দুঃখ কষ্টের পরে এই একটা ভরসা আর ভালোবাসার মানুষ কে পেয়ে খুশি। যে কিনা এখনো ওবধি তাকে চায় তাকেই ভালোবাসো। যখন থেকে রিধি না করে দিয়েছিলো নাওয়া খাওয়া ছেড়ে পড়ে থাকতো রাহুল। এমতা অবস্থায় রাহুলের বাবা মা রিধি কে নিয়ে যায় ওদের বাড়ি তে। ছেলে টা জ্বরের ঘোরে ও রিধি রিধি করতো! শেষে অনেক কিছুর পর সে রাজি হয়!

রিধির ভাগ্য কে খারাপ বা ভালো কোনটা বলা ঠিক হবে কিনা সে জানে না। কারণ পাভেল আর রিমি তার সাথে বেঈমানি করে সব কেড়ে নিয়েছিলো। আর সেই খারাপের মধ্যে ও পাভেলের মা ছিলো একজন যে রিধি কে ভালোবাসতো মেয়ের মতো দেখেছে। আর ঠিক তেমনি দুজন মানুষ রাহুলের বাবা মা। এমন শাশুড়ি দুই দুইবার ই পাবে রিধির জানা ছিলো না। এতো মিশুক আর ভালো কোনো মানুষ আছে বলেই এখনো পৃথিবী আছে। নাহলে কবেই খারাপি তে শেষ হয়ে যেতো কে জানে। রিধির সম্পর্কে সব টা জেনেই তারা নির্দ্বিধায় রাজি হয়েছেন। বিয়ের দুদিনের মাথায় যখন পাড়া-প্রতিবেশী রা এটা জেনে যায়। আর বলতে আসেন। রিধি তখন উপরে দাঁড়িয়ে ছিলো। ঐ মহিলা দুটি বললো,

‘শেষে রাজপুত্রের মতো ছেলে কে এটা কি মেয়ে বিয়ে করালে? মেয়ে খারাপ নাহলে ডিভোর্স হল কিভাবে?’

‘হ্যাঁ বুবু একটা ডিভোর্সী কে বিয়ে…

রাহুলের মা গর্জে উত্তর দিলেন,
‘মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলো। আমার ছেলে আমার ঘরের বউ মা আমরা বুঝবো ও কেমন। আমার ছেলে আমাদের যা খুশি তাকে বিয়ে করাবো তা বিচার করার তোমরা কে? আজ রিধির জায়গায় নিজের মেয়ে থাকলে এটা বলতে পারতে?’

চুপসে যান যেনো দুজন। রিধির কান্না ও করে দেয়। রাহুল ও সব টা খেয়াল করে এগিয়ে এসে চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

‘উনারা যাই বলুক বউ তো আমার। আমি বুঝবো সব উনারা কি? অতীত কে ভুলে যাও। বর্তমান নিয়ে বাঁচতে হবে বুঝেছো? আর এই চোখ থেকে যেনো এক ফোঁটা পানি ও আমি পড়তে না দেখি।’

রিধির দু চোখে চুমু এঁকে দেয়। কেটে যায় অনেক গুলো দিন। রিধি রাহুলের মাঝেই যেনো সব সুখ খুঁজে পেলো। জীবনে যতটা না দুঃখ সে সয়েছে তার থেকে অধিক সুখে হাসছে সে। এতো সুখ তার কপালে সইবে কিনা মাঝে মাঝে চিন্তা হয়!

————–

হঠাৎ করে একদিন নাদিম সামনে পড়ে যায় রিধি আর রাহুলের। একজন ব্যতিত দুজন মানুষ ঠিকই দুজন কে চিনতে পেরে যায়। একসঙ্গে একটা রেস্টুরেন্টে বসে। পাভেল আর রিমির দুঃখ ভরা গল্প টা রিধি আর রাহুল কে বললো সে। কিছু দিন আগেই সে জেনেছে। অথচ রিধি কে সেদিন কক্সবাজারের খবর দেওয়া শেষে কি হয়ে গেছে কল্পনা ও করে নি। নাদিম যাওয়ার আগে রাহুল কে বলে গেলো,

‘আপু কে সব সময় হাসি খুশিতে মাতিয়ে রাখবেন ভাই। জীবনে খুব কষ্ট পেয়েছে উনি আর নতুন করে কষ্ট পেতে দিবেন না। যোগ্যতার থেকে অধিক কিছু পেলে মানুষ মূল্য বোঝেনা তাই তো আমার বন্ধু উনাকে হারিয়েছে। উনার সাথে যা অন্যায় করেছে আমার মনে হয় তাদের কৃতকর্মের শাস্তি টাই তারা পেয়েছে ইভেন এখনো পাচ্ছে। আপনি ই উনার যথাযোগ্য। আপনাদের এই সম্পর্কে কখনো সম্পর্কের দেয়াল উঠতে দিবেন না। ভালো থাকবেন ভাই আসি আবার কখনো হুটহাট দেখা হয়ে যাবে!’

রাহুল প্রতি উত্তরে মুচকি হাসে। নাদিম বিদায় নিয়ে চলে যায়। রিধি সব শোনার পর রোবটের মতো হয়ে আছে। রাহুল তাকে শান্তনা দেওয়ার পর রিধি আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। হয়তো একেই বলে ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ’ কিন্তু একটা জিনিস খুব খারাপ লাগছে রিধি এমন টা চায় নি। হয়তো বা ও কখনো চেয়েছিলো ওরা ভালো থাকুক। কখনো অভিশাপ তো দেয় নি তাহলে এতো নিষ্ঠুর তম শাস্তি কিভাবে পেলো যা তাদের জীবন কে জাহান্নাম বানিয়ে দিয়েছে। নাদিমের একটা কথা কানে বাজছে,

‘ওরা আপনাকে মেরেছে একবার আর নিজেরা মরছে বার বার। কেউ সুখে নেই। প্রতিমুহূর্তে কামনা করে এমন জীবন যেনো আল্লাহ আর কাউকে না দেয়!’

রাহুলের মতো জীবন সঙ্গী পেয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে রিধি। পাভেলের মা কে দেখতে ইচ্ছে হয় আর মন বলে এই চলমান সময়ের কোনো না কোনো এক পথে হয়তো বা কখনো দেখা মিলে যাবে উনাদের তিন জন এর ই। অতীতে কি হারিয়েছে তা নিয়ে এখন আর আফসোস হয় না। শুধু মনে হয় আল্লাহ যা কেড়ে নিয়েছেন তার থেকে হাজার গুন কিছু রিধির জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সুখের পর ই দুঃখের স্থান। আর রিধির জীবনে দুঃখের পর সুখ এসেছে। আর খারাপদের জীবনে এসেছে ধ্বংস! যার শেষ বলে কোনো কথা এখনো ওবধি নেই! রিধি রাহুল কে জাপটে ধরে বুকে মাথা রাখে। এই স্থান টা বিস্তর প্রশান্তি আর ভালোবাসা! যাতে মাথা রেখে বাকি টা পথ সে চোখ বন্ধ করেই এগিয়ে যেতে পারবে!

|সমাপ্তি|