সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-০১

0
381

#সম্পর্কের বাঁধন
#Writer_মারিয়া
#Part : 1

আবির রুফটপে বসে আছে৷ কি হয়ে গেলো তার সাথে? এইটা তোহ হওয়ার কথা ছিলো নাহ। নিজের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে আর একজন কে বিয়ে করতে হলো। এইটা তোহ আবির কখনোই ভাবে নি। তাও কি নাহ, একটা পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করতে হলো। মেয়েটার বয়স নাকি মাত্র ১৬ বছর। সবথেকে বড় কথা সেইটা নাহ, আবিরের কাছে তার ভালোবাসার কথায় বড়। পাগলী টাহ যে তাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। আর আবির! সেও যে অতিরিক্ত ভালোবাসে তাকে। সেখানে আজ বাবার চাপে পড়ে আর একটা পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করতে হলো। আবির মেয়েটাকে এখনো দেখেও নি, দেখার ইচ্ছা টাহও আসে নি। জানেও নাহ মেয়েটাহ দেখতে কেমন? এইসব দেখার কোনো আগ্রহই নেই। আবির তোহ চিন্তায় আছে তার ভালোবাসার মানুষটাহ কে নিয়ে।
–” আবির তুমি এখনো রুমে যাও নি কেনো?”

–” হ্যা! বাবা, যাচ্ছি।”

–” হুম! কবিতা একা একা রুমে আছে যাও।”

–” হুম!”
আবির রুফটপ থেকে নিচে নেমে যায়।

(( আবির চৌধুরী! আমাদের গল্পের নায়ক। আবির স্টাডি কমপ্লিট করে নিজেদের বিজনেস সামলায়। আজ আবিরের বিয়ে হয়েছে, আবিরের থেকে ১০ বছরের ছোট একটা মেয়ের সাথে। কিন্তু আবির আর একজন কে ভালোবাসে। কিন্তু নিজের বাবার চাপে এই বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। এখন কি করবে আবির? কি হবে এই সম্পর্কের পরিনতি?
আর আবিরের বাবা হলেন জিহাদ চৌধুরী। অনেক রাগী এবং এক রোখা মানুষ জিহাদ চৌধুরী। ))

★★★
চারিপাশে ফুল, মোমবাতি দিয়ে সাজানো। আর সাজানো বিছানায় বসে আছে কবিতা। কবিতা চারিদিকে ঘুর ঘুর করে দেখছে। কবিতা নিজের স্বামীকে এখনো সরাসরি দেখে নি, ফটো তে দেখেছে। যদিও এতো কম বয়সে বিয়ে করার ইচ্ছে কবিতার ছিলো নাহ। কিন্তু কবিতার বাবার শরীর টাহ খুব একটা ভালো নাহ। তাই কবিতা আর এই বিয়েতে অমত করে নি। হঠাৎ দরজায় কারো আওয়াজে তাকিয়ে দেখে আবির, মানে তার স্বামী। কবিতা বিছানা থেকে নেমে আসে। আবির পিছন ফিরে দেখে একটা পুতুলের মতো মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে এই হলো কবিতা, তার পিচ্চি বউ। কবিতা এগিয়ে এসে আবির কে সালাম করতে যেতেই আবির পিছিয়ে দাড়ায়। কবিতা হালকা ভ্রু কুঁচকে আবিরের দিকে তাকায়। আবিরও কবিতার দিকে তাকিয়ে আছে। কবিতার কেমন যেনো রাগ উঠে। কবিতা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আপনি পিছে সরে গেলেন কেনো?”

–” তুমি আমার পায়ে হাত দিচ্ছিলে কেনো?”

–” আম্মু বলেছে, বাসর রাতে নাকি স্বামী কে সালাম করতে হয়। তাই, আপনাকে সালাম করতে গেছিলাম। নাহলে কারোর পায়ে হাত দেওয়ার মানুষ আমি নাহ।”

–” হুম! তোমার আম্মু ঠিকই বলেছে। কিন্তু তুমি ভুল কাজ করছো।”

–” মানে?”

–” মানে? মানে টাহ হচ্ছে, আমি এই বিয়ে টাহ মানি নাহ। আর সেই কারনে নাহ তুমি আমার স্ত্রী আর নাহ আমিও তোমর স্বামী। আন্ডারস্ট্যান্ড!”
আবিরের কথা শুনে কবিতা ফিক করে হেসে দেয়। কবিতার হাসি দেখে আবিরের রাগ উঠে। আবির রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” এই মেয়ে হাসার কি আছে?”

–” এইটা কি সিনেমা? যে আপনি বললেন আমি এই বিয়ে মানি নাহ, আর হয়ে গেলো তাই নাহ?”

–” দেখো, তুমি আমার লাইফ টাহ হেল করে দিয়েছো। তাই বলছি, আমি তোমাকে মানতে পারবো নাহ। সম্ভব নাহ আমার দ্বারা।”

–” আচ্ছা, আপনি এই বিয়ে মানেন নাহ, তাই তোহ?”

–” হুম!”

–” ওকে! তাহলে আমি বাবাকে গিয়ে বলে আসি, যে আপনার ছেলে এই বিয়ে মানে নাহ। তাহলে আপনার ছেলে আমার কাছে একটা পরপুরুষ, আর পরপুরুষ ছেলের সাথে আমি এক রুমে থাকবো নাহ।”

–” What? এই মেয়ে আমার রাগ তুলো নাহ বলে দিলাম।”

–” আমি কই রাগ তুললাম। যাই হোক বাবাকে আগে ডাকি। বাবা!”
কবিতা চেচিয়ে উঠতেই আবির এগিয়ে এসে কবিতার মুখ চেপে ধরে। আবিরের এক হাত কবিতার মুখ চেপে ধরে রেখেছে আর এক হাত কবিতার কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে। কবিতা আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবিরের চোখ কবিতার চোখের দিকে যেতেই যেনো আর চোখ সরাতে পারে নাহ। পিচ্চি মেয়েটার চোখ দুইটা যেনো অতিরিক্ত সুন্দর। আবির একভাবে তাকিয়ে আছে কবিতার চোখের দিকে। কেমন যেনো মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে, এমন মনে হচ্ছে। কবিতা হালকা নড়ে উঠতেই আবিরের ধ্যান ভাঙে। কবিতার চোখের মায়ায় জড়িয়ে যাচ্ছে ভাবতেই আবির কবিতাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। কবিতা আবিরের কাজে অনেক অবাক হয়ে গেছে। কবিতা মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ওনি এই বিয়ে মানেন নাহ? মানে কি? তাহলে বিয়ে করলেন কেনো? মজা পাইছে, দাড়াও চান্দু বিয়ে মানো কি নাহ, সেইটা আমি ঠিকই দেখে নিবো। তোমার বাবা তোহ আমাকে বলেই দিছে, তোমাকে নাকি ঠিক করে নিতে হবে। কি একটা ঝামেলা আছে নাকি? সেইটাও আমাকে বের করে নিজের স্বামী কে নিজের করে নিতে হবে। আমি যদি কবিতা হয়ে থাকি, তাহলে তোমাকে আমার হতেই হবে। আমার #_সম্পর্কের_বাঁধন_ এতো হালকা নাহ যে, তুমি বিয়ে মানো নাহ বলবা, আর আমি সব মেনে নিবো। আমিও দেখি কি হয়? কেমনে আমার সাথে #_সম্পর্কের_বাঁধন_ ছাড়াতে পারো।”

(( কবিতা! আবিরের পিচ্চি বউ। কবিতার বয়স মাত্র ১৬ বছর। এইবার ক্লাস নাইনে পড়ে। আবিরের থেকে ১০ বছরের ছোট। বাবার অসুস্থতার জন্য, বাবার কথা রাখতেই এই বিয়ে করেছে কবিতা। কবিতা মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দরী। দেখতে ঠিক একটা ছোট্ট পুতুলের মতো দেখায়। কিন্তু মারাত্মক দুষ্টু কবিতা। অনেক বুঝে, কিন্তু দুষ্টুমির জন্য অতিরিক্ত বাচ্চা বাচ্চা লাগে। আবিরের বাবা বিয়ের আগেই কবিতাকে বলছিলো, আবির এই বিয়েতে রাজি নাহ, আবির কে কবিতারই নিজের করে মানিয়ে নিতে হবে। কবিতা সবকিছু জেনেই রাজি হয়েছে বিয়েতে, কারন তার বাবা। কবিতা আবিরের বাবা জিহাদ চৌধুরী কে বারন করেছে, যেনো তার বাবাকে কিছু নাহ জানানো হয়। নাহ জানি কবিতার ভাগ্যে কি আছে? ))

আবির ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে পিচ্চিটাহ মুচকি হাসি দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আবিরের কেমন যেনে রাগ উঠতেছে। আবির এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” এভাবে দাড়িয়ে আছো কেনো? যাও গিয়ে ঘুমাও।”

–” আচ্ছা, আপনার কি মাথা খারাপ?”

–” মানে?”

–” মানে বাসর রাতে কেউ ঘুমাই নাকি?”

–” দেখো! আমার মাথা খারাপ করিও নাহ৷ চুপচাপ বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
কথাটাহ বলেই আবির বিছানা থেকে বালিশ নিয়ে সোফার উপর রেখে, রুমের লাইট অফ করে দিয়ে, ব্লু সেডের ড্রিম লাইট টাহ জ্বালিয়ে দেয়। কবিতা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বুঝছি, আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাবেন নাহ, তাই তোহ? ঠিক আছে, ঘুমাতে হবে নাহ। আপনি গিয়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমান। আমি সোফায় ঘুমাচ্ছি।”

–” তোমাকে এতো দরদ দেখাতে হবে নাহ। চুপচাপ ঘুমাও যাও।”
কথাটাহ বলেই আবির উল্টো দিকে ঘুরে ঘুমিয়ে পড়ে। আবিরের দিকে তাকিয়ে কবিতা মনে মনে বলতে থাকে,
–” ইসসসস! ভাব দেখো। তোমার এই ভাব যদি আমি গুড়িয়ে নাহ দিছি, তাহলে আমার নামও কবিতা নাহ। Just wait and watch.”

কবিতা আর কোনো কথা নাহ বাড়িয়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

★★★
–” নাহ! আবির শুধু আমার। আবির কে আমি অন্য কারো সাথে #_সম্পর্কের_বাঁধন_ এ জড়াতে দিবো নাহ। আবির তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো নাহ। তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো। তুমি কি করে বিয়ে করে নিলে আজ। নাহ, আমি পারবো নাহ তোমাকে ছাড়া বাঁচতে।”
জারিফা আবিরের একটা বড় ফটোর সামনে দাড়িয়ে বলতে থাকে কথা গুলো।

(( জারিফা! আবিরের ভালোবাসার মানুষ হলো এই জারিফা। জারিফাও আবিরকে অনেক ভালোবাসে। জারিফা তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। অনেক আদরের, অনেক যেদি। জারিফা আবিরের এই বিয়ে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে নাহ। কারন জারিফা আবিরকে মারাত্মক ভালোবাসে। ))

কেউ একজন জারিফার রুমের দরজা ধাক্কাচ্ছে। কিন্তু জারিফার সেইদিকে কোনো খেয়াল নেই। জারিফা হাতে একটা ব্লেড নিয়ে নিজের হাতে আবিরের নাম লিখতে শুরু করে।

চলবে……………🌹