সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-০৯

0
254

#সম্পর্কের বাঁধন
#_Writer_মারিয়া_
#_Part : 9

জারিফা নিজের রুমে বসে রয়েছে। মিসেস. জেসমিন ( জারিফার আম্মু ) জারিফার রুমে আসতেই জারিফা তার মায়ের দিকে তাকায়। মিসেস. জেসমিন এগিয়ে এসে জারিফার মাথায় হাত রাখতেই জারিফা বলে ওঠে,
–” জানো মাম্মাম, আজ আমার ভালোবাসাকে আমি নিজের হাতে অন্য একজনের কাছে তুলে দিয়ে এসেছি।”

–” জারিফা! তোর সাথে এমন কেন হলো মা?”

–” মাম্মাম তুমি কাঁদছো কেন? বিশ্বাস করো মাম্মাম, আমার যতটাহ নাহ কষ্ট হচ্ছে তার থেকেও বেশি আনন্দ হচ্ছে। কেন জানো? কারন, আবির ভালো থাকবে মাম্মাম। আমি যদি আবিরের উপর দাবি নাহ ছাড়তাম, তাহলে আবির কখনো আমাকে ছেড়ে যেতো নাহ। আবার আমাকে মেনেও নিতে পারতো নাহ। ও খুব যন্ত্রণাতে থাকতো। আমি আবিরের কষ্ট সহ্য করতে পারতাম নাহ। আবির তোহ কোনো অন্যায় করে নি। মাম্মাম, আবির আবিরের জায়গায় ঠিক আছে। কেন জানো মাম্মাম? কারন, আবির আমাকে যখন ভালোবেসেছে, তখন আবিরের কোনো দোষ ছিলো নাহ। কারন, আবির তোহ আমাকে বিয়ে করবে বলেই ভালোবেসেছিলো। কিন্তু পরে আংকেলের প্রেশারে ও বিয়ে করতে বাধ্য হয়। কিন্তু মাম্মাম ও যদি এই বিয়ে টাহ নাহ করে, আমার কাছে চলে আসতো, তাহলে ও আমার কাছে কোনো সম্মান পেতো নাহ। কারন যে মানুষ তার বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে নিজের কথা চিন্তা করে, কয়েকদিনের সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যায়। সে আর যাই হোক কাউকে ভালোবাসতে জানে নাহ। কারন, বাবা মা আমাদের এতদিন আগলে রাখার পরিনতি তাদের কষ্ট দেওয়া হতে পারে নাহ। তাই আবির আমার কাছে এতো সম্মানিত মাম্মাম। I am so happy mammam. I am so happy. কারন আমি এক মুহুর্তের জন্যে হলেও আবিরের মনে বাস করেছি। আর আমি এইটাও বিশ্বাস করি মাম্মাম, আবিরের কাছে আমার যে জায়গা টাহ সেইটা আমারই থাকবে, কবিতার জন্য নতুন জায়গার জন্ম হবে।”
মিসেস. জেসমিন জারিফার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমার মেয়েটাহ বড্ড বড় হয়ে গেছে। অনেক বুঝের হয়েছে। আচ্ছা, এইসব বাদ দেই আমরা। ওরা যেন সুখী হয় সেই দোয়া করি। সে যাই হোক, তুই লাগেজ গোছাচ্ছিস কেন? কই যাবি তুই?”

–” মাম্মাম আমি বিদেশে যাওয়ার জন্য সব কিছু রেডি করেছি। চাচ্চু তোহ আমাকে অনেক দিন ধরেই বলছে, কানাডা যাওয়ার জন্য। আমিই যাই নি। কিন্তু এখন যাবো।”

–” তুই আমাদের ছেড়ে চলে যাবি?”

–” মাম্মাম তোমাদের ছেড়ে কোথায় যাবো? আমি ওখানে যেয়ে সবকিছু রেডি করে তোমাদেরও নিয়ে যাবো। কানাডায় সেটেল হয়ে যাবো। বাংলাদেশে আর থাকার ইচ্ছে নাই। তাছাড়া আবির আর কবিতাকে সংসার করতে দেখে পরে যদি সহ্য করতে নাহ পেরে ওদের ক্ষতি করে ফেলি? তাহলে, কি হবে? তাই আমার বাংলাদেশে নাহ থাকাই ভালো মাম্মাম। ওদের চোখের থেকে দুরে চলে যাওয়াটাই বেটার।”

–” জারিফা! আমি গর্বীত যে তুই আমার সন্তান।”

–” মাম্মাম!”
জারিফা কথাটাহ বলেই মিসেস. জেসমিন কে জড়িয়ে ধরে। মিসেস. জেসমিনও নিজের মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।

★★★
আবির কবিতাকে নিয়ে সন্ধ্যায় চৌধুরী ম্যানশনে চলে আসে। জিহাদ চৌধুরী, মায়া চৌধুরী, তুলি সবাই অনেক খুশি হয় কবিতাকে পেয়ে। কবিতা নিজের রুমে সব গুছিয়ে নিচ্ছে। আবির রুমে এসে দেখে কবিতা সব কিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। আবির বলে ওঠে,
–” কবিতা!”

–” হুম!”

–” আজ থেকে আমরা একসাথে এক বিছানায় ঘুমাবো কিন্তু।”
আবিরের কথা শুনে কবিতা হালকা ভ্রু কুঁচকে আবিরের দিকে তাকাতেই আবির বলে ওঠে,
–” কি হলো এরকম ভাবে তাকাচ্ছো কেন?”

–” কিছু নাহ।”
কথাটাহ বলেই কবিতা আবার কাজ করতে থাকে। আবির পুরো রুম নিয়ে পায়চারি করছে আর কবিতার দিকে তাকাচ্ছে। কবিতাও আড় চোখে তাকিয়ে আবিরের কর্মকান্ড দেখছে। কিছুসময় পর কবিতার কাজ শেষ হয়ে গেলে কবিতা লাইট অফ করে দিয়ে, ব্লু সেডের ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। হঠাৎ এমন হওয়ায় আবির একটু অবাক হয়ে গেলেও তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে। এই প্রথম আবির আর কবিতা এক বিছানায় শুয়েছে। দুইজনের ভেতরই এক অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে। দুইজন দুইপাশ ফিরে থাকতে থাকতে একটা সময় ঘুমিয়ে যায়।

★★★
কেটে গেছে অন্ধকার, শুরু হলো নতুন এক দিনের, নতুন সময় নিয়ে। দৈনন্দিন জীবন কাজের নতুন সূচনা৷ প্রতেকটাহ প্রানীর নিত্য কাজকর্মের পাশাপাশি নতুন একটা দিনের পদার্পন।
রুম সূর্যের আলোয় আলোকিত হতেই কবিতার ঘুম ভেঙে উঠতে গেলেই বাঁধা অনুভুতো হয়। কবিতা ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে আবিরের এক হাত তার শাড়ির নিচ দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে রেখেছে, আর এক হাত মাথার নিচ দিয়ে রেখেছে। কবিতা কিছু সময় আবিরের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে, আবিরের হাত টাহ আস্তে করে সরিয়ে উঠে যায়।
কিছুসময় পর আবিরও ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য বের হতেই আবিরের ফোন বেজে উঠে। আবির ফোন হাতে নিয়ে দেখে জারিফা কল দিছে। আবির কল রিসিভ করে কানে নিয়ে বলে ওঠে,
–” Hello! Jarifa!”

–” হুম! কেমন আছো?”

–” ভালো! তুমি?”

–” আমিও ভালো! আচ্ছা শুনো, এখন একটু দেখা করতে পারবা?”

–” কোথায় আসবো বলো?”

–” ঐ লেকের পাড়ে।”

–” ওকে আসছি।”
কথাটাহ বলেই আবির লেকের দিকে যেতে শুরু করে। এই লেকে আবির আর জারিফা অনেক সময় কাটাতো। কিছু সময় পর আবির লেকে চলে আসে। কিছু দুর এগোতেই জারিফাকে দেখতে পায় আবির। জারিফা আবিরকে দেখে একটা মুচকি হাসি দেয়। আবির এগিয়ে এসপ জারিফার পাশে বসে পড়ে। আবির জারিফার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এখন এইসময় এখানে ডাকলে যে?”

–” তোমাকে কিছু কথা বলার আছে।”

–” হুম! বলো।”

–” আবির, আজ রাত ১১ টায় আমার ফ্লাইট।”
জারিফার কথা শুনতেই আবির চমকে উঠে জারিফার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মানে? কোথায় যাচ্ছো তুমি?”

–” কানাডা!”

–” কিন্তু জারিফা, হঠাৎ এভাবে চলে যাচ্ছো কেন?”

–” তুমি তোহ জানো, কানাডা চাচ্চু থাকে। আমাকে অনেকবার নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি যায় নি। এখন আমি ওখানে যেতে চাই।”

–” কিন্তু জারিফা হঠাৎ করে, মানে, আসলে বলতে চাইছি যে।”

–” কিছু বোলো নাহ আবির। আমাকে এই বাংলাদেশে থাকার জন্য কিছু বলার দরকার নাই। কারন আমাকে কানাডা যেতে হবে।”

–” আমি খুব খারাপ তাই নাহ জারিফা?”

–” নাহ! তবে তুমি খারাপ হতে, যদি তোমার বাবা মাকে কষ্ট দিয়ে আমার কাছে আসতে তাহলে তুমি আমার চোখে খারাপ হিসাবে প্রমানিত হতে। তখন তোমার ঐ ভালোবাসার দাম আমার কাছে থাকতো নাহ। আর এখন আমি নিজেকে লাকি মনে করি, কারন আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ভলোবাসা পেয়েছি আমি। আবির আমি জানি তুমি এখনো আমাকে ভালোবাসো। আর আমি এইটাও জানি, তুমি কবিতার জন্য নিজের মনে নতুন জায়গার সৃষ্টি করতেছো। আমি এই কারনেই লাকি আবির।”

–” তুমি এত ভালো কেন জারিফা?”

–” তোমার ভালোবাসা আমাকে ভালো করেছে। তোমার ভালোবাসা আমাকে ভালোবাসা মানে বুঝিয়েছে। তাই তোমার ভালোবাসা আমার কাছে অনেক মূল্যবান। আবির আমি তোহ আজ চলে যাবো। কিন্তু যাওয়ার আগে আমি তোমার কাছে একটা জিনিস চাই, দেবে?”

–” বলো!”

–” আমি তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে চাই।”
জারিফা কথাটা বলতেই আবির জারিফাকে জড়িয়ে ধরে। জারিফাও আবিরকে জড়িয়ে ধরে, জারিফার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পানি পড়তে থাকে।

★★★
আবির নিজের রুমে সোফায় মুখে হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছে। কবিতা এসে দেখে আবির আনমনা হয়ে আছে। কবিতা আবিরের সামনে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে, আপনার?”

কবিতার কথা শুনে আবির দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” আজ জারিফা কানাডা চলে যাচ্ছে। আমি জানি ও কেন যাচ্ছে। কারন, ও আমাকে ভালোবাসে, আর তোমার সাথে আমাকে সহ্য করতে পারবে নাহ তাই ও চলে যাচ্ছে।”

–” কবে যাবে?”

–” আজ রাত ১১ টায় ফ্লাইট।”

–” হুম!”
কথাটাহ বলে কবিতা ওয়াশরুমে চলে যায়। আবির বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। বেশ কিছু সময় পর কবিতা আবিরকে ডাকতেই আবির রুমে আসলে কবিতা বলে ওঠে,
–” চলুন।”

আবির দেখে কবিতা বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছে। আবির অবাক হয়ে কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কোথায়?”

–” এয়ারপোর্টে, জারিফা আপুকে সি অফ করতে।”
কবিতার কথা শুনে আবির কবিতার দিকে মুচকি হাসি দিলে, কবিতা আবিরকে একটা চোখ টিপ্পি দেয়। আবির কবিতার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” সত্যি, আমি খুব লাকি! যে জারিফার মতো আর তোমার মতো দুইজন মানুষকে আমি আমার লাইফে পেয়েছি।”

★★★
জারিফা এয়ারপোর্টে বসে আছে। সব ফর্মালিটিস কমপ্লিট। জারিফা ভেতরে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কেউ “জারিফা আপু” বলে ডেকে উঠতেই, জারিফা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। খুব মিষ্টি দেখতে মেয়েটাহ কে। জারিফা মেয়েটির দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কে তুমি?”

–” কবিতা!”
কথাটাহ শুনতেই জারিফা অবাক হয়ে যায়। তখনই আবির এসে কবিতার পাশে দাড়াতেই জারিফা আবির দিকে তাকালে আবির বলে ওঠে,
–” কবিতা তোমাকে সি অফ করতে এসেছে।”

–” হুম! তাহলে, এই হলো সেই মিষ্টি বাচ্চা মেয়েটা।”
কবিতা জারিফার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আপু! তোমার জায়গা আমি নিবো নাহ। আমি আমার জন্য নতুন জায়গার সৃষ্টি করবো। তোমার জায়গা তোমারই থাকবে। প্রমিস!”

–” Thanks দিবো নাহ তোমাকে। আমার জায়গা টাহ আমার ছোট্ট বোন টাহ কে উপহার দিয়ে গেলাম। কিন্তু, আবির তোমাকে অনেক গুলো Thanks. কারন, আমার এই মিষ্টি বোন টাহ কে আমার কাছে নিয়ে এসেছো। আমি সবসময় দোয়া করবো, আমার ছোট্ট বোন আর আমার ভালোবাসার মানুষ দুইজন যেনো খুব সুখী হয়। তোমাদের #_সম্পর্কের_বাঁধন_ যেনো খুব মজবুত হয়।”
কবিতা জারিফাকে জড়িয়ে ধরতেই জারিফাও কবিতাকে জড়িয়ে ধরে। আবির মুচকি হেসে তাকিয়ে থাকে। এয়ারপোর্টে এনাউন্সমেন্ট হতেই জারিফা কবিতার থেকে সরে এসে কবিতার কপালে একটা চুমু দিয়ে ভেতরের দিকে যেতে থাকে। আর আবির আর কবিতা জারিফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আবিরের মনে এক অন্যরকম ভালোলাগা বিরাজ করতে থাকে। অনেকটাহ হালকা লাগছে আবিরের নিজের কাছে।
জারিফা প্লেনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” খুব ভালো লাগছে আবির। বড্ড হালকা লাগছে। আর কোনো অভিযোগ নাই তোমার প্রতি। তুমি সূখী হও আবির। তাহলে আমি সূখী হতে পারবো। I love You Abir!”

চলবে……………..🌹