সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-০৮

0
261

#সম্পর্কের বাঁধন
#_Writer_মারিয়া_
#_Part : 8

কেটে গেছে রাত! দেখা দিয়েছে নতুন একটা দিনের। সূর্য ছড়িয়ে দিয়েছে তার নিজের আলো। শুরু হলো নতুন দিন এক এক জনের কাছে এক এক রকম ভাবে। কারো কাছে দীর্ঘশ্বাস, কারো কাছে হাসি মুখ, কারো কাছে কাউকে মিস করা, কারো কাছে কাউকে নাহ পাওয়ার যন্ত্রণা, কারো কাছে কাউকে পেয়েও হারিয়ে ফেলার যন্ত্রণা, কারো কাছে নিজের প্রতি ধিক্কার। এক কথায়, কারো হাসি মুখ, কারো কান্না, কারো দীর্ঘশ্বাস, কারো স্বাভাবিক নিয়ম দিয়েই আরও একটা দিনের সুচনা!
রোদ এসে আবিরের মুখে পড়তেই চোখ মুখ কুচকে নেয় আবির। হাত দিয়ে চোখ টাহ ঢেকে নেয়। আস্তে আস্তে চোখ খুলে নিজেকে বারান্দায় ডিভানের উপর দেখে একটু ভাবতেই মনে পড়ে যায়, গতকাল বারান্দায় ছিলো। সাথে সাথে মনে পড়ে যায় কবিতা নেই। কবিতা চলে গেছে। সাথে সাথে আবিরের বুকের ভেতর টাহ কেমন যেনো মোচড় দিয়ে উঠে।

★★★
কেটে যায় ৫ দিন। এর মাঝে আবিরের সাথে কবিতার কোন রকম যোগাযোগ হয় নি। এই কয়েকদিন আবির জারিফার সাথে হাতে গোনা কয়েক বার দেখা করেছে। অফিসের কাজ করেছে, আর সবসময় চুপচাপ থেকেছে। আবিরের কেমন জানি মনে হচ্ছে সব থমকে গেছে। নাহ চাইতেও কবিতাকে খুব মনে পড়ছে আবিরের।
আজ দুইদিন পর আবির আর জারিফা দেখা করছে। একটা নদীর কূলে বসে আছে দুইজন। জারিফা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কেমন আছো?”

–” ভালো!”

–” নাহ! মিথ্যা বলছো তুমি। তুমি ভালো নেই।”
জারিফার কথা শুনে আবির জারিফার দিকে তাকাতেই জারিফা আবার বলে ওঠে,
–” কি, ভুল বললাম কিছু? আবির নিজের মন কে প্রশ্ন করো তুমি কি চাও? তুমি যদি আমাকে নিয়ে ভাবো আবার কবিতা কে নিজের মনে বসিয়ে রাখো, তাহলে সারাজীবন তোমাকে কষ্ট পেতে হবে। সুখী হতে পারবে নাহ তুমি। ভালো থাকবে নাহ তুমি। আবার ঐ মেয়েটাহ হয়তো তোমার আশায় বসে আছে। যে তুমি যাবে ওকে আনতে। আবির! এইভাবে জীবন চলবে নাহ। Please Abir! Try to understand.”

–” কিন্তু জারিফা!”

–” আবির! তুমি যদি এইটা ভেবে থাকো, তুমি এখন কবিতার কাছে গেলে, তুমি আমাকে ধোকা দিচ্ছো বাহ আমি তোমাকে দোষারোপ করবো, তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। তুমি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছো নাহ আবির। কারন আমরা দুইজন দুইজনের ভাগ্যে ছিলাম নাহ। কবিতা তোমার লাইফে কতদিন এসেছে বলো, আর আমি কতদিন এসেছি? আর তুমি এমুহূর্তে কাকে বেশি মিস করো? ভাবো একবার। আবির, কবিতার সাথে তোমার সম্পর্ক আল্লাহ কতৃক এসেছে। তাই কবিতার সম্পর্কের জোর বেশি। তাই এই সামান্য কয়েকদিনের ব্যাবধানে ওর প্রতি কত মায়া সৃষ্টি হয়ে গেছে তোমার। আবির আমি তোমাকে একটুও দোষ দেয় নাহ। কারন কেন জানো? দেখো আবির, আমরা যখন বাসায় একটা বিড়াল পালি, ২দিন বাদে বিড়াল টাহ যদি চলে যায়, তাহলেও তার জন্য আমাদের মন খারাপ হয়। সেখানে তোহ কবিতা একজন মানুষ। তোমার স্ত্রী!”
আবির একভাবে জারিফার দিকে তাকিয়ে আছে। জারিফা আবিরের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,
–” আবির কবিতা চলে যাওয়ার পর, তুমি কি একটা মিনিটের জন্যও কি ওকে ভুলতে পেরেছো? পারো নি। পারবে কিভাবে, তুমি কবিতা কে নও তোমার স্ত্রী কে ভালোবাসাে। কিন্তু সেইটা তুমি নিজেও জানো নাহ। ইনফ্যাক্ট এখনো উপলব্ধি করতে পারছো নাহ যে তুমি তোমার স্ত্রী কে ভালোবাসো। আবির প্লিজ, নিজের ভলো থাকার মানুষ টাহ কে হারিয়ে ফেলো নাহ৷ তাহলে সারাজীবন তোমাকে আফসোস করতে হবে।”

–” আমি এখন কি করবো জারিফা?”

–” তুমি এখনি এই জায়গা থেকে সোজা কবিতার বাসায় যাবে। দেখবে ওকে দেখলেই তোমার শান্তি অনুভব হবে। ওকে নিয়ে আসো আবির, তোমার কাছে নিয়ে আসো। নাহলে তুমি ভালো থাকবে নাহ আবির। থাকতে পারবেও নাহ। প্লিজ আবির!”
আবির দাড়িয়ে পড়লে জারিফা ও দাড়িয়ে যায়। জারিফা দাড়াতেই আবির জারিফাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” Thanks Jarifa! You are really my best person in my life!…..জারিফা তুমি এতো ভালো কেন? আমি কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম নাহ। তুমি আমার জীবন টাহ কেই আবার সাজিয়ে দিলে। Thank you very much.”

জারিফা আবিরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” অনেক হয়েছে, এইবার যাও।”

–” হুম! চলো তোমাকে আগে ড্রপ করে দেই। তারপর আমি যাবো।”

–” নাহ! আমি আর একটু সময় এখানে থাকবো। পরিবেশ টাহ ভালো লাগছে। আমি চলে যাবো, প্রব্লেম নাই। সে যাই হোক, যাও তুমি।”

–” কিন্তু?”

–” কোনো কিন্তু নাহ যাও। কবিতাকে নিয়ে এসো।”

–” Ok! Bye.”

–” হুম!”
আবির পেছন ঘুরে চলে যেতে থাকে। আর জারিফা আবিরের যাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। আবির দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলে, জারিফা শব্দ করে কান্না করতে করতে ওখানে বসে পড়ে।

★★★
আবির এখন কবিতার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে। শুধু বিয়ের পর নাহ, এই প্রথম কবিতার বাবার বাড়ি আসলো আবির। কেমন যেনো লাগছে আবিরের। তাও নিজেকে মানিয়ে নিয়ে কলিংবেল বাজালো আবির। কুহু ( কবিতার ছোট বোন ) এসে দরজা খুলে দিয়ে আবিরকে দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আবির ভাইয়া তুমি?”

–” হ্যা! মানে, আসলে।”

–” আম্মু! আম্মু! আম্মু দেখো কে আসছে?”

–” কে আসছে? এইভাবে চেচাচ্ছিস কেন?”
মিসেস. আহিয়া ( কবিতার আম্মু ) এসে আবিরকে দেখে অনেক খুশি হন। আবির মিসেস. আহিয়া কে সালাম দিতেই মি. আজিজ ( কবিতার বাবা ) আস্তে আস্তে এগিয়ে আসেন। মি. আজিজ কে দেখে অনেক অসুস্থ বোঝাই যাচ্ছে। আবির মি. আজিজকে সালাম দেয়। কবিতার পরিবারের কথাবার্তা ব্যাবহারে আবির খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে, কবিতা এই বাড়ির কাউকেই কিছু জানাই নি। আবির ওনাদের সাথে কিছু সময় কথা বলার পর মিসেস. আহিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” বলছিলাম যে, কবিতা কোথায়?”

–” ওহহো! কবিতাকে তোহ জানানোই হয় নি। ও ওর রুমে আছে। তুমি এক কাজ করো। ওর রুমে চলে যাও। একটু রেস্ট ও নিয়ে নাও।”

–” ওকে! কিন্তু ওর রুম টাহ কোন দিকে?”

–” কুহু! আবিরকে কবিতার রুমে নিয়ে যা।”
কুহু মাথা ঝাকিয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আসুন ভাইয়া।”

আবির কুহুর পিছে পিছে যায়৷ কুহু আবিরকে একটা রুমের সামনে এনে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া! এইটায় আপুর রুম।”

–” Thanks!”

–” Welcome!”
কথাটাহ বলেই কুহু চলে যায়। আবির দেখে দরজা হালকা খোলা আছে। আবির কোনো শব্দ নাহ করে রুমে গিয়ে দেখে কবিতা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে। আবির দরজা বন্ধ করতেই কবিতা আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকাতেই আবিরকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কবিতা আবিরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। আবির কবিতার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আমাকে কি ভুলে গেছো?”

–” আপনি? এখানে। আবির প্লিজ কাউকে কিছু বলিয়েন নাহ। আমি এখনো কিছু জানাই নি। বাবা খুব অসুস্থ। বাবা জানলে বাবার শরীর আরও খারাপ করবে। প্লিজ আবির।”

–” তুমি আমাকে কি ভাবো বলো তোহ?”
কবিতা আবিরের দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। আবির হুট করেই কবিতাকে জড়িয়ে ধরে। কবিতা পুরাই অবাক হয়ে যায় আবিরের কাজে। আবির কবিতাকে জড়িয়েই বলে ওঠে,
–” আমাকে নাহ জানিয়ে হুট করে চলে আসলে। হ্যা! আমি বলেছিলাম যে, আমি এই বিয়ে মানি নাহ। তার মানে কি আমাকে ছেড়ে চলে আসবে। আমাকে বোঝাতে তোহ পারতে যে, আল্লাহ আমাদের দুইজন কে একসাথে #_সম্পর্কের_বাঁধন_ এ আবদ্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু তাহ নাহ করে হুট করে চলে এলে। আমি কি করে থাকবো একবারও ভাবলে নাহ।”

আবির কবিতার থেকে সরে এসে কবিতার মুখ ধরে বলে ওঠে,
–” আমার কথা কি এই কয়েকদিনে কি তোমার একটুও মনে পড়ে নি? কেমনে পারো তুমি? কিভাবে? আর আমি তোহ আমার নিজের রুমেই একটাহ রাতও ঘুমাতে পারি নি। তোমার স্মৃতি আমার দম বন্ধ করে দিচ্ছিল।”

–” কিন্তু আপনি তোহ জারিফা নামের ঐ মেয়ে টাহ কে ভালোবাসেন।”

–” হ্যা! ভালোবাসি! হয়তো এখনো বাসি। আর ওর জায়গা আমি আর কাউকে দিতে পারবো নাহ। ওকে আমি ভালোবাসি কেন জানো? ও আমকে সব সঠিক পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করে। আরে, আমি তোহ এইটাও বুঝতে পারছিলাম নাহ যে, আমি এখন কি করবো? আমার কি করা উচিত? আজও জারিফা আমাকে বললো, কবিতার কাছে ফিরে যাও। কবিতাকে নিয়ে আসো। কারন কবিতাই একমাত্র তোমার ভালো থাকার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
কবিতা অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির কবিতার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কবিতা!”

–” হুম!”

–” আমাকে একবার সুযোগ দিবে? তোমাকে নিজের করে নেওয়ার জন্য। আমার মনে জারিফা যেখানে আছে, সেখানেই থাক। তোমার জন্য একটা নতুন জায়গা বানাতে চাই। দিবে সেই সুযোগ?”
কবিতা আর কিছু নাহ বলেই আবির কে জড়িয়ে ধরে। আবিরও মুচকি হাসি দিয়ে কবিতাকে জড়িয়ে ধরে।

চলবে…………….🌹