সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-০৭

0
240

#সম্পর্কের বাঁধন
#_Writer_মারিয়া_
#_Part : 7

কবিতা নিজের রুমে বসে কান্না করে যাচ্ছে। কি করে সবার সামনে মুখ দেখাবে কবিতা, যেখানে এতো বড় একটা মিথ্যা অপবাদ তার গায়ে লেগেছে। হঠাৎ দরজায় কারো আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে জিহাদ চৌধুরী। কবিতা তাড়াতাড়ি মাথা নিচু করে ফেলে। কি করে, কি করে এই মানুষটার দিকে তাকাবে কবিতা? ভেবেই পাচ্ছে নাহ কবিতা। জিহাদ চৌধুরী কবিতার দিকে এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” আমার দিকে তাকাও কবিতা।”

–” আমি পারবো নাহ বাবা।”

–” আমি তোমাকে বিশ্বাস করি।”
জিহাদ চৌধুরীর কথাটাহ শুনতেই কবিতা অবাক হয়ে জিহাদ চৌধুরীর দিকে তাকায়। জিহাদ চৌধুরী আবার বলে ওঠে,
–” আমি জানি তুমি কি করতে পারো। আমি তোমাকে আমার ছেলের বউ বানিয়েছি ঠিকই কিন্তু মেয়ে হিসাবে মেনেছি তোমাকে। আর আমি জানি আমার মেয়ে কি কি করতে পারে, আর কি কি করা তার দ্বারা অসম্ভব। তুৃমি তোহ কোনো অন্যায় করো নি। তাহলে অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়াও কিন্তু তোমার সাজে নাহ। কারন অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, দুইজনেই সমান অপরাধী। তাই নিজের অবস্থান নিজেকেই বুঝে নিতে হবে।”

কথা গুলো বলেই জিহাদ চৌধুরী কবিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে যায়। কবিতা একভাবে তাকিয়ে আছে জিহাদ চৌধুরীর চলে যাওয়ার দিকে।
রাত প্রায় ১২ঃ৩০ টাহ। কবিতা বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। আবির এখনো বাসায় আসে নি। কবিতার আবিরের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে। হঠাৎ দরজায় কারো আওয়াজ পেয়ে কবিতা রুমের দিকে উকি দিতেই দেখে আবির এসেছে৷ কবিতা আর রুমে যায় নাহ। আবির ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় তাকাতেই দেখে কবিতা দাড়িয়ে আছে। আজ আর আবির কবিতাকে ডাকতে যায় নাহ, নিজের মতো রুমের লাইট অফ করে সোফায় শুয়ে পড়ে। কবিতা আকাশের দিকে তাকিয়ে জল ভরা চোখে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এতোটাহ ঘৃনা জন্মে গেছে আমার উপর তোমার। আজ একবারও উকিও দিলে নাহ আমি কোথায়? বাবার অসুস্থতার জন্য, বাবার খুশির জন্য বিয়েটাহ করলাম। আমাকে তোহ স্ত্রী হিসাবে মানলা নাহ। আর এখন তোহ, কেন আমার সাথে এমন টাহ হয়? কেনো?”

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে কবিতা বারান্দায় ডিভানের উপর শুয়ে পড়ে আর একটা সময় ওখানেই ঘুমিয়ে যায়।

★★★
চারিদিকে আলোয় আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে। সকালের সূর্য চারিদিকে তার গর্বীত কিরন ছড়িয়ে দিচ্ছে। যান্ত্রিক মানুষ গুলো তাদের ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে। নতুন আরও একটা দিন শুরু হয়ে গেলো।
কবিতা মাত্র ঘুম থেকে উঠলো, আর ঘুম থেকে উঠেই কবিতা নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো। কিন্তু সে তোহ বারান্দায় ডিভানে শুয়েছিল। তাহলে রুমে বিছানায় কিভাবে আসলো? তাহলে কি, আবির তাকে এনেছে? কবিতা সোফার দিকে তাকাতেই দেখে আবির নাই। তার মানে আবির বেরিয়ে গেছে। কবিতা আর কিছু নাহ ভেবে ওয়াশরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই কেউ একজন বলে ওঠে,
–” Wow! Morning freshness!”

কারো আওয়াজে চমকে সামনে তাকাতেই দেখে আসিফ বাঁকা হাসি দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আসিফ কে দেখে কবিতার মাথা গরম হয়ে যায়। কবিতা আসিফের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আপনি এখানে কেন?”

–” আবির বাসায় নেই, তুলি বাসায় নেই, মামা বাসায় নেই, মামানি কে কিছু সময়ের জন্য একটু বাহিরে পাঠালাম। বাসায় শুধু তুমি আর আমি।”
আসিফের কথা শুনে কবিতা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। কবিতা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে ওঠে,
–” মানে?”

–” মানে, এখন কিছু সময়ের জন্য তুমি আমার বেড পার্টনার।”
কথাটাহ বলেই আসিফ কবিতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, আর কবিতা পেছনে যেতে যেতে কান্নারত অবস্থায় বলে ওঠে,
–” দেখুন, আমার কাছে আসবেন নাহ বলে দিলাম। ভালো হবে নাহ কিন্তু।”

একটা সময় কবিতা দেওয়ালের সাথে আটকে যায়। কবিতা তাড়াতাড়ি দরজার দিকে যেতে থাকলে আসিফ কবিতাকে টান দিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কবিতার দিকে মুখ এগিয়ে নিতেই বাধাপ্রাপ্ত হয়। আসিফ তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে দেখে আবির মুচকি হাসি দিয়ে তার শার্টের কলার্ট ধরে রেখেছে। আবিরকে দেখে আসিফ চমকে উঠে, আর কবিতা আসিফ কে তাড়াতাড়ি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে আবিরকে জড়িয়ে ধরে জোরে কান্না করতে থাকে। আবির কবিতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে পাশে দাড় করিয়ে দিয়ে আসিফের দিকে তাকায়। আসিফ এখনো ভয় মেশানো চোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই আবির আসিফের মুখে একটা ঘুসি দিতেই, আসিফ ছিটকে পড়ে। আবির আসিফ কে মারতে মারতে নিচে নিয়ে আসে। কবিতা আবির কে থামানোর চেষ্টা করতে করতে নিচে এসে দেখে মায়া চৌধুরী, জিহাদ চৌধুরী, তুলি, মিসেস. আসমা ( আসিফের আম্মু ), মি. আশরাফ ( আসিফের আব্বু ) সবাই রয়েছে। আবির আসিফ কে ধাক্কা দিয়ে সোফার উপর ফেলে দিয়ে বলে ওঠে,
–” কি রে! অবাক হচ্ছিস নাকি? তুই কি ভেবেছিলি বলতো, আমি কিছুই লক্ষ্য করি নি এতোদিন? সব দেখেছি আমি। প্রথম দিন কবিতাকে দেখে নোংরা চোখে তাকিয়ে ছিলি তুই তাও খেয়াল করেছি আমি। যেহেতু তুই আমার ফুপ্পির ছেলে তাই তোকে তোহ আর সহজে কিছু করতে পারবো নাহ। তুই যে কফি নেওয়ার সময় কবিতার হাতে স্পর্শ করেছিলি তাও দেখেছি আমি। আর গতকাল, তুই যাহ যাহ বলেছিস তার কিছুই আমি বা আমার পরিবার কেউই বিশ্বাস করে নি। কিন্তু এরকম তোহ আর চলতে দেওয়া যায় নাহ। এতে কবিতার অনেক ক্ষতি হবে। তাই একটা প্রমান দরকার তোর জন্য। তাই আজ আমি এই বাসা কে খালি করতে বলেছিলাম, যাতে তুই আমার ফাঁদে পা দিস। এই কারনেই ফুপা, ফুপ্পি কে আসতে বলেছি। তাদের ছেলের চরিত্র দেখানোর জন্য। অবশেষে আমার প্লান সাকসেসফুল!”

আসিফ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। মি. আশরাফ এগিয়ে এসে আসিফকে একটা থাপ্পড় মেরে বলে ওঠে,
–” লজ্জা লাগছে, তোকে নিজের ছেলে হিসাবে পরিচয় দিতে। ছিহ!”

কথাটাহ বলেই মি. আশরাফ চৌধুরী ম্যানশন থেকে বের হয়ে যায়। কবিতা আবিরের দিকে তাকাতেই আবিরও কবিতার দিকে তাকায়। কবিতা তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিয়ে উপরে নিজের রুমে চলে যায়।

★★★
রাত প্রায় ১১ টাহ। আবির জারিফার সাথে একবার দেখা করে চৌধুরী ম্যানশনে চলে আসে। আবির রুমে এসে দেখে কবিতা নেই। আবির ফ্রেশ হয়ে নিচেও গিয়ে দেখে কবিতা নেই। এইবার আবিরের কেমন জানি লাগে, আবির পুরা বাসায় কবিতাকে খুজে নাহ পেয়ে কিচেন রুমে মায়া চৌধুরীর কাছে গিয়ে বলে ওঠে,
–” আম্মু কবিতা কোথায়?”

–” ওর বাবার বাসায় গেছে।”

–” মানে?”

–” মেয়েটার উপর দিয়ে যাহ গেলো। কি করবে ও? তুই কি এই বিয়েটাহ এখনো ভালোভাবে মেনে নিয়েছিস, আবির? ওর সাথে ৫মিনিট সুন্দর করে কথা বলেছিস কখনো? ও তোহ একটা বাচ্চা মেয়ে। ও এখানে কেন থাকবে বলতো? স্বামীর কাছে কোনো অধিকার বাহ ভালো কথা পায় ও? তার উপর যাহ ঘটে গেলো ওর সাথে। কেন থাকবে ও?”

–” কিন্তু আম্মু ওর বাবা তোহ অসুস্থ। তাহলে?”

–” সেইটা ও বুঝে নিবে।”
কথা গুলো বলেই মায়া চৌধুরী কিচেন রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আবির কিছু সময় চুপ করে দাড়িয়ে থেকে, নিজের রুমে চলে যায়।
আবিরের রুমের চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেই। রুম টাহ যেনো আজ বড্ড বেশি ফাঁকা ফাঁকা লাগতেছে। আবিরের রুমে কেমন যেনো দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এমন মনে হচ্ছে। আবির তাড়াতাড়ি বারান্দায় চলে যায়। আবির আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” এমন লাগছে কেন আমার? কেমন যেনো একা একা লাগছে নিজেকে। নাহ চাইতেও মেয়েটাকে অনেক বেশিই মনে পড়ছে। কিন্তু কেন?”

আবির বারান্দায় ডিভানে শুয়ে পড়ে। কারন আজ রুমে থাকা তার পক্ষে সম্ভব নাহ। ডিভানে শুয়ে রাতের আকাশ দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যায় আবির।

চলবে…………….🌹