সম্পর্কের বাঁধন পর্ব-১০(শেষ পর্ব)

0
482

# সম্পর্কের বাঁধন
#_Writer_মারিয়া_
#_Part : 10 ( শেষ পার্ট )

চৌধুরী ম্যানশন আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। মিউজিক, মানুষের আনাগোনা, খাবারের সমাহার, মানুষের আনন্দ, বাচ্চাদের চেচামেচি, জায়গায় গোল হয়ে গল্প, কারো বাহ কাউকে ভালো লাগা, এক কথায় ভালোবাসা ভালোলাগাময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে চৌধুরী ম্যনশনে।
আবির কবিতাকে আর এই বিয়ে মেনে নিয়েছে, জানতে পেরে জিহাদ চৌধুরী ওদের বিয়ের জন্য আবার নতুন করে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। আবিরও চেয়েছিলো এরকম একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। তাই আজ চৌধুরী ম্যানশন এতো সজ্জিত, এতো বাহার!

★★★
কবিতাকে আবিরের রুমে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেইদিনের থেকে আজ বেশি সুন্দর লাগছে রুম টাহ। চারিদিকে ফুলে ছেয়ে গেছে। খুব সুন্দর দেখাচ্ছে রুম টাহ। হঠাৎ দরজায় কারো আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে আবির এসেছে। সেইদিনের আবির আর আজকের আবিরের মাঝে আকাশ আর পাতালের ব্যাবধান। সেইদিনের আবির এসেছিল মুখ ভার করে, আর আজকের আবিরের মুখে রয়েছে মুচকি হাসি। আবির এগিয়ে আসতেই কবিতা বিছানা থেকে নেমে এসে আবিরকে সালাম করতেই, আবির আটকিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” কি করছো?”

–” যাহ করা উচিত।”

–” আর কখনো এরকম করবা নাহ। মাথা শুধু মাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত করবা নাহ। বুঝলে?”

–” হুম!”
আবির এগিয়ে এসে কবিতার মুখ ধরে কবিতার কপালে একটা চুমু একে দেয়। এই প্রথম আবিরের কাছের থেকে ভালোবাসার স্পর্শ পেলো কবিতা, কবিতার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। আবির কবিতার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এইটা তোহ মানবো নাহ। তোমার চোখে পানি নাহ, মুখে হাসি দেখতে চাই।”

কবিতা আবিরকে জড়িয়ে ধরে। আবিরও কবিতাকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” কবিতা!”

–” হুম!”

–” আমি তোমাকে ভালোবাসতে চাই!”
আবিরের কথা শুনে কবিতা আরও টাইট করে জড়িয়ে ধরে আবিরকে। কিছু সময় পর আবির কবিতাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে, কবিতার উপর আধশোয়া হয়। কবিতা আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির কবিতার কপালে একটা চুমু একে দেয়। কবিতা আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললে আবির কবিতার বন্ধ চোখের উপর চুমু একে দেয়। কবিতা মুচকি হাসে। আবির কবিতার দুই মুখে চুমু দিয়ে ঠোঁটে হালকা করে চুমু দিতেই কবিতা কেঁপে উঠে। আবির একটা মুচকি হাসি দিয়ে কবিতার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। কবিতা এক হাত দিয়ে আবিরের চুল আকড়ে ধরে, আর এক হাত আবিরের হাতের মাঝে। কবিতার চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে।

৮ বছর পর……………

–” পাপা মাম্মাম ককোন আতবে?”

–” এইতো বাবা, চলে আসবে। আজ তোমার মাম্মামের স্টাডির আরও একটা ধাপ শেষ হলো।”

–” মাম্মাম ইত্তাডি কলে তালপল আতবে।”

–” নাহ বাবা, তোমার মাম্মাম সার্টিফিকেট আনতে গেছে।”

–” সেইতা আবাত কি?”

–” সেইটা হলো, তোমার মাম্মাম যে পড়া লেখা করছে তাই তোমার মাম্মাম কে একটা গিফট দিবে।”

–” আমাকে দিবে নাহ গিপ?”

–” তোমারও লাগবে?”

–” হুম! তাগবে তো!”

–” আচ্ছা! বাবা, তোমাকে আমি গিফট দিবো।”

–” তত্যি।”

–” একদম।”

–” প্রমিত?”

–” প্রমিস!”
এইযে যারা কথা বলতেছে তারা হলো আবির আর আবির এবং কবিতার ভালোবাসার অংশ, নয়নের মনি, তাদের একমাত্র ছেলে আব্রাহাম। আব্রাহামের বয়স তিন বছর পূর্ন হয়েছে। আধো ভাষায় তোতলিয়ে কথা বলে সারা চৌধুরী ম্যানশন মাতিয়ে রাখে। চৌধুরী বাড়ির প্রত্যেকের কলিজার টুকরা আব্রাহাম। আব্রাহাম আর আবির এতো সময় ধরে কবিতার জন্য অপেক্ষা করছে। কবিতা এইবার অনার্স কমপ্লিট করলো। তার সার্টিফিকেট নেওয়ার জন্য ভার্সিটিতে আসছে আজ কবিতা। আবির আর আব্রাহাম কবিতার জন্য অপেক্ষা করছে। কিছু সময় পর কবিতা ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে এসে দেখে আবির আর আব্রাহাম গল্প করছে। কবিতা সব সময় লক্ষ্য করে আবির আব্রাহামের সাথে কথা বলতে একটু বেশিই ভালোবাসে। কবিতা একটু এগিয়ে আসতেই আব্রাহাম বলে ওঠে,
–” ঐতোহ মাম্মাম চলে এসেতে।”

আবির পিছন ফিরে দেখে কবিতা মুচকি হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে। কবিতা বলে ওঠে,
–” বাহ! ভালোই তোহ গল্প হচ্ছে।”

–” দানো মাম্মাম, পাপা বলেতে আমাতে গিপ তিনে দেবে।”

–” তাই?”

–” হুম!”

–” ওরে আমার বাবা টাহ রে।”
কথাটাহ বলে কবিতা আব্রাহামকে কোলে তুলে নেয়।

★★★
চারিপাশে বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে। কবিতা রুমে একটা বই নিয়ে পড়ছে। হঠাৎ ফোনে কল আসায় ফোন হাতে নিয়ে দেখে জারিফা ভিডিও কল দিছে। জারিফা আর কবিতা যেন বেস্ট ফ্রেন্ডের থেকেও বেশি হয়ে গেছে। কবিতার কাছে তার বড় বোন জারিফা, আর জারিফার কাছে ছোট বোন কবিতা। জারিফা কানাডায় একটা ছেলেকে বিয়ে করেছে। জারিফার একটা মেয়ে আছে ৪ বছরের, নাম জাফসিয়া। কবিতা ফোন টাহ রিসিভ করতেই জারিফার হাসি মাখা মুখ টাহ ভেসে উঠে। কবিতা মুচকি হেসে বলে ওঠে,
–” কেমন আছো?”

–” হুম! ভালো। আগে বলতো, আব্রাহাম মাই চ্যাম্প কেমন আছে? কোথায় সে?”

–” ভালো আছে! মামনির কাছে। জাফসিয়া কেমন আছে?”

–” ভালো! এতো দুষ্টু হয়েছে৷ যে কি বলবো।”

–” আব্রাহামও অনেক দুষ্টু হয়ে গেছে।”
এইভবে কিছু সময় কথা বলার পর ফোন কেটে দেয় কবিতা। আরও কিছু সময় মায়া চৌধুরী আব্রাহাম কে কোলে করে দিয়ে যায়। ঘুমিয়ে গেছে আব্রাহাম। তার কিছু সময় পরে আবির চলে আসে। আবির এসে ঘুমন্ত আব্রাহামের কপালে একটা চুমু একে দেয়। কবিতা এগিয়ে এসে আবিরের পাশে দাড়িয়ে বলে ওঠে,
–” তাকিয়ে দেখো আব্রাহামের দিকে, কেমন যেনো শান্তি লাগে!”

–” হুম! আব্রাহাম আমাদের লাইফে কি জানো?”

–” আমাদের সন্তান!”

–” আরও একটা জিনিস আছে।”

–” কি?”

–” আমাদের লাইফের সবচেয়ে বড় #_সম্পর্কের_বাঁধন_ ”
কবিতা আবিরের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে জড়িয়ে ধরে। আবিরও কবিতাকে নিজের সাথে টাইট করে জড়িয়ে ধরে।

🌹★ সমাপ্ত ★🌹