সম্মোহণী সেই মেয়েটি পর্ব-২+৩

0
695

#সম্মোহণী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ২+৩
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

জুনইদ সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে কালকের কথা ভাবলো।কাল অযথাই অন্য একটা মেয়ের রাগ নিজের মায়ের উপর দেখিয়ে ফেলেছে।রেগে গেলে তার মাথা একেবারেই ঠিক থাকে না।সে যতই রেগে থাক না কেন সে কখনোই নিজের মায়ের সাথে রুঢ় আচরণ করে নি এর আগে।তাই তো মাকে একটা বার ডাকার অজুহাতে ইচ্ছে করেই বললো,

মা আমার জন্য আজ নুডলস বানাও নি?

জুনইদের মা শান্তা বেগম বললেন,বানিয়েছি তো ওই তো সামনেই আছে।দেখতে পাচ্ছিস না।

নিশা বলে উঠলো, আহারে কি দুঃখ রে ভাইয়া তোর।

নিশার কথা শুনে শান্তা বেগম বললেন, তোর আবার কি হলো রে?

আমার কি কিছু হয়নি মা।কিন্তু তোমার ছেলের হয়েছে।তোমার এক মাত্র ছেলে আজকাল চোখে না কম দেখছে।এটাই আর কি।কথা গুলো বলেই নিশা হাসতে থাকলো।

জুনইদ ও কম নয়।সেও নিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, এই দেখ দেখ তোর প্লেটে টিকটিকি।

নিশা প্লেটের দিকে না তাকিয়েই ভীষণ ভাবে চিৎকার করে উঠলো।এক ঝটকায় প্লেট টা সামনে থেকে ঠেলে দিয়ে চেয়ার ঠেলে উঠে পরলো।ওর কান্ড দেখে জুনইদের বাবা রমিজ আহমেদ, জুনইদের কাকা আলতাফ আহমেদ সবাই হেসে উঠলেন।

জুনইদের বাবা বলে উঠলো, আচ্ছা এটা তোরা কি বাচ্চাদের মতো কান্ড শুরু করেছিস বল তো।

জুনইদ বলে, আমি আবার কি করলাম বাবা।তোমাদের আদরের মেয়ে নিশাপুর ই তো আগে আগে আমার পিছনে লাগছে।আমি কি করবো।

এই তোমার আশকারা পেয়েই দিন দিন ছেলেটা বাদর তৈরি হয়েছে।জুনইদের বাবা জুনইদের মাকে উদ্দেশ্য করে বললেন।

মিসেস শান্তা বেগম বললেন, হ্যাঁ আর তুমি আশকারা দাওনি বুঝি।

জুনইদের কাকাও তখন বলে, কি মুশকিল তোমরা থামবে এবার।স্বপরিবার মিলে ঝগড়া শুরু করছো।

জুনইদ আবার নিশাকে উদ্দেশ্য করে বললো, এই না হলে আমার বোন।দেখো কি রকম তুল কালাম বাধিয়ে দিলো।

শান্তা বেগম বললেন, থাক থাক আর তোকে কথা বাড়াতে হবে না।

নিশা তখন বললো,দাঁড়া একবার সুযোগ পাই তখন তোর মজা দেখাবো।

ঠিক তখনই কলিং বেল টা বেজে উঠলো।

এখন আবার কে এলো।এই বলে শান্তা এগিয়ে এলেন।

সকালে পড়ন্ত কয়েক প্রহর পরেই অনিল বেরিয়ে পরেছিলো নিশাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে।সারা রাত তার দু চোখে ঘুম ধরা দেইনি।কালকের ঘটনায় বেশ আহত সে।দরজার সামনে দাঁড়াতেই বক্ষস্থলে কেমন ঢিবঢিব করছে।এ যেনো অন্য এক অনুভূতি।এই অজানা অনুভূতি কিসের ইঙ্গিত বহন করছে তার জানা নেই।হার্ট টা এতো জোরে পাম্প করছে কেন তার।কিঞ্চিৎ ভয় ভয় ও করছে।দুই অনুভূতির সংমিশ্রণে অদ্ভুত এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো মনে।অনিলা কাঁপা কাঁপা হাতে আবার নিশার বাড়ির দরজার কলিং বেল চাপলো।

একজন ভদ্র মহিলা দরজা খুলে দিলেন।অনিলা কে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন তিনি।সাথে কিঞ্চিৎ অবাকও হলো বোধহয়।ভদ্রমহিলা ক্ষীণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

কে তুমি মা?ঠিক চিনলাম না তোমাকে?

অনিলা বেশ অস্বস্তিতে পরে গেলো।সে ভদ্রমহিলাকে সালাম দিলো।

আসসালামু আলাইকুম আন্টি।আমি নিশার ফ্রেন্ড অনিলা।ওঁকে একটু ডেকে দেবেন।

ভদ্রমহিলা সালাম নিয়ে মুখে হাসি টেনে বললেন,

ওহ তুমিই অনিলা।কি একটা অবস্থা দেখো তো।আসো আসো ভেতরে আসো।আমি আসলে চিনতে পারিনি তোমাকে মা।আমি নিশার মা।কি কান্ড বলো তো নিশা শুধু তোমার কথা গল্পই করেছে কখনো আমাদের বাড়িতে আনে নি তোমাকে।

অনিলা বুঝতে পারলো নিশার মা খুবই খোলা মনের মানুষ।অথচ উনাকে প্রথম দেখেই সে ধরে নিয়েছিলো খুব গম্ভীর ধাচের মানুষ উনি।

না আন্টি আমিই আসি নি।নিশা আনতে চেয়েছে বহু বার।

অনিলা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলো।সে স্বভাবতই মুচকি হাসি দিলো।বিনিময়ে নিশার মা ও হাসলো।

এই নিশা দেখ কে এসেছে আমাদের বাড়িতে।শান্তা বেগম মিষ্টি হেসে বললেন।

নিশা অনিলা কে দেখে তো বড়সড় ঝটকা খেলো।ঘুম থেকে উঠে স্বপ্ন টপ্ন দেখছে না তো।সকাল সকাল তাদের বাড়িতে অনিলা।চোখ কচলে নিলো কয়েক বার।নাহ সত্যিই তো অনিলা ই এটা।

কি রে নিশা দেখ তকে অনিলাকে আনতে হলো না।অনিলা নিজেই এসে পরেছে।তোকে বলতে বলতে তো মুখে পিত্তি পরে গেছিলো।

নিশা এগিয়ে এলো অনিলার কাছে আর মিসেস শান্তা চলে গেলেন রান্না ঘরে।

হোয়াট আ’ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ।তুই আমার বাড়িতে ভাবতেই পারছি না।তা কি মনে করে শুনি।আমি বললে তো আসতেই চাস না।আজ এসে একেবারে অবাক করে দিলি।

অনিলা অপ্রসন্ন ভাবে হাসলো।তারপর নিশার একটু কাছে ঘেঁষে বলে,

তোর ভাই কই রে।

নিশার সন্দিহান চোখ সেও অনিলার কাছে ঘেঁষে বলে,

কেন রে প্রথম দেখায় প্রেমে পরে গেলি না কি রে।যে সকাল সকাল আমার ভাইয়ের খোঁজ করছিস।

হ্যাঁ আমার বয়েই গেছে তোর ক্যাবলা ভাইয়ের প্রেমে পরতে।কাল ওতো হেয়ালি না করে সরাসরি যদি বলতো তাহলে কি আর সকাল সকাল আমাকে এখানে আসতে হয়।

নিশা কিছু বলবে তার আগেই মিসেস শান্তা বেগম ডেকে পাঠালেন।

নিশা অনিলাকে নিয়ে টেবিলে বসে পর।আমি ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি।

অনিলা একটু লজ্জা পেলো।এই ব্রেকফাস্ট টাইমে আসা টা উচিত হয়নি তার।একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলে,

না না আন্টি আমি তো ব্রেকফাস্ট করেই এসেছি।

তাতে কি হয়েছে মা চলো বসে পরো।

ততক্ষণে নিশার বাবা রমিজ আহমেদ, আলতাফ আহমেদ,সবার সঙ্গে অনিলা পরিচিত হলো।অনিলা বার বার আপত্তি করলেও সবার জোড়াজুড়িতে বসেই পরলো।জুনইদের অপজিট সাইডের চেয়ারে।

জুনইদ মনে মনে ভাবলো, আরে এইতো সেই নাখরিবাজ মেয়েটা না।তার মানে তোমার এটাই উদ্দেশ্য আমাকে স্যরি বলতে এসেছো।যাই হোক ও মুখ টা নিচু করেই রইলো।

রমিজ আহমেদ অনিলা কে জিজ্ঞেস করলেন, তা মা অনিলা তোমার বাড়িতে কে কে আছেন।

অনিলা ভদ্র ভাবে বলে, মা, বাবা, বড় আপু আর আমি।আমি এই কাছেই একটা ফ্ল্যাট এ থাকি।আমার ভার্সিটি এখান থেকে একটু কাছে হয় তো তাই।

ওহ আচ্ছা।তোমার বাড়ির সবাই ভালো আছে তো মা।রমিজ আহমেদ আবার জিজ্ঞেস করলেন।

হ্যাঁ আংকেল সবাই ভালো আছে।আপনারা ভালো আছেন তো।

তখনই নিশা বলে উঠলো, আমরা সবাই ভালো আছি কিন্তু এই প্রানীটার কথা বলতে পারবো না।কাল থেকে মেজাজ টা তুঙ্গে চড়ে আছে।জানি না আমার ভাইয়ার পাকা ধানে ময় টা কে দিয়েছে।

এবার জুনইদ রেগে গিয়ে টেবিলে একটা হাতের বারি মেরে উঠে চলে যেতে নিলে ওর মা ওর হাত টা টেনে ধরে আবার বসিয়ে দিলেন।

রমিজ আহমেদ বলে উঠলেন,বাড়িতে একজন অতিথি এসেছে আর তোমার ছেলের মেজাজ টা দেখো।

আচ্ছা তোর কি কোনো বুদ্ধি হবে না রে জুনইদ।কোথায় কি বলতে হয় আজও শিখলি না।কাল থেকে এতো রেগে যাচ্ছিস কেন।নিশা তো তোর সাথে রোজ ই এমন করে।শান্তা বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন।

এদিকে অনিলা মনে মনে ভাবছে কারণ টা তো আসলে ও নিজেই।কালকের থাপ্পড় টা তো উনি এখনো ভুলতে পারেন নি।

জুনইদ থেকে থেকে আড় চোখে দেখছে অনিলাকে।সবার ব্রেকফাস্ট শেষে যে যার যার মতো কাজে বেরিয়ে গেলেন।আর জুনইদ উঠে নিজের রুমের দিকে গেলো।নিশা আর অনিলা গেলো নিশার রুমে।

অনিলা নিশাকে বলে কয়ে ম্যানেজ করে জুনইদের রুমের দিকে গেলো।এই একটা ভুলের জন্য না জানি তাকে কত কিছু সহ্য করতে হবে কে জানে।এখন আবার উনার রুমেও যেতে হবে।না জানি তাকে একা পেয়ে কি অপমান টাই না করবে।কিন্তু ঘরে না গেলে সে তো স্যরি টাও বলতে পারবে না।অনিলা ঘরের কাছে এসে দেখলো দরজা টা খোলায় আছে।কি করবে ভেবে না পেয়ে দরজায় নক করলো।

জুনইদ যেনো এতক্ষন এটার ই অপেক্ষা করছিলো।

চোখে দেখতে পাও না।দরজা টা খোলায় আছে।নক করার কি আছে।

অনিলা আমতা আমতা করে বললো,

না আ-আসলে আ-আমি আপনার জ্যাকেট টা ফেরত দিতে এসেছিলাম।আর কালকের জন্য,

জুনইদ অনিলা কে আটকে দিয়ে বলে, বেশ, তো জ্যাকেট টা রেখে দিয়ে চলে যান।বলেই অনিলাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওয়াশরুমে চলে গেলো।

অনিলা জ্যাকেট টা রেখে বিরবির করে আওড়ালো, আসলে উনি আমাকে স্যরি বলার সুযোগ টাই দিতে চাইছেন না।আমার এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা বোধহয় ঠিক হবে না।অনিলা আনমনে ঘর থেকে বেরিয়ে চলে এলো।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

অনিলা জুনইদের মা কে বলে বেরোতে যাবে তখনই তিনি আটকে দেন।তিনি অনিলা কে সোফা বসিয়ে দিলেন জোর করেই।

এই প্রথম তুমি আমাদের বাড়ি এসেছো।এক্ষুনি চলে যাবে।

অনিলা আর নিশা বসে বসে গল্প করছে।এটা সেটা বলে হাসাহাসি করছে।

একটু পর জুনইদ ড্রয়িং রুমে এসে মা কে ডাকা ডাকি করতে লাগলো।আসলে তার মা কে ডাকা টা একটা অজুহাত মাত্র।তার মাকে এখন তার প্রয়োজন নেই। আসলে তার উদ্দেশ্য ছিলো অনিলা চলে গেছে নাকি আছে সেটা দেখতে আসা।

শান্তা বেগম জবাব দিলেন,কি হলো রে তোর ডাকছিস কেন এভাবে।

না কিছু না মা।এমনি এমনি।

আচ্ছা বোস এখানে।অনিলা মেয়েটা বসে আছে তুই ও যা না। গিয়ে ওদের সাথে গল্প কর।

জুনইদ মায়ের কথায় ভাব নিয়ে বলে,আমার ওতো সময় নেই কারোর সাথে বাজে বক বক করার।আমি একটু বের হবো।

এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। জুনইদের মা দরজা টা খুলে দিলেন।

জুনইদের ফ্রেন্ড তানিয়া এসেছে।জুনইদ এবার ইঞ্জিনিয়ারিং ফাইনাল সেমিস্টারে।জুনইদ ওঁকে দেখে বলে,

ওহ তুমি।কি খবর তোমার।

তানিয়া এগিয়ে আসলো,আমার না কয়েকদিন কলেজ যাওয়া হয়নি।তাই তোমার থেকে নোটস গুলো নিতে এলাম।

শান্তা বেগম বললেন, আচ্ছা তোমরা বসে গল্প করো আমি যায়। আমার একটু কাজ আছে।

জুনইদ আড় চোখে অনিলা কে দেখে একটু জোরেই বলে, ওয়াও তানিয়া ডার্লিং ইউ আর লুকিং অস্যাম।

তানিয়াও গায়ে পরে গদগদ হয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,তুমি সত্যিই বলছো জুনইদ।থ্যাংক ইউ।তোমার মুড টা আজ খুব ভালো বলে মনে হচ্ছে।

জুনইদ মুখে তো বললো, হ্যাঁ কিন্তু মনে মনে বললো মুড না ছাই।

এদিকে অনিলা আর নিশা তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। নিশা ভাবছে অন্য সময় যখন তানিয়া আসে তখন তো তার ভাইয়া এই ন্যাকা মেয়ের কাছে থেকে কিভাবে পালিয়ে বাঁচবে সেটা খুজে।সে অনিলার একটু কাছে চেপে বলে,

কেস টা কি হলো। কি জানিস অনিলা অন্য সময় ভাইয়া এই ন্যাকার ডিব্বা মেয়েকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে উধাও হয়ে যায়।আর আজ এতো পিরিত কিসের।

অনিলা চোখ ছোট করে বললো, মানেহ?

আসলে বড্ড গায়ে পরা মেয়ে এই তানিয়া।শুধু ভাইয়ার গায়ে ঢুলে ঢুলে পরে।

অনিলা ঠোঁট গোল করে বললো, ওহ আচ্ছা।

নিশা মুখে হাত রেখে বলে,হুম। কিন্তু আজ এই মেয়ে কি জাদু করেছে কে জানে।ভাইয়া কি এই ন্যাকা স্বষ্ঠির প্রেমে পরে গেছে নাকি।

অনিলা মনে মনে ভাবলো, প্রেম না ছাই।আমাকে দেখানোর জন্য এসব করছে তোর জুনইদ ভাই।ভেবেছে এসব দেখিয়ে আমাকে যদি জেলাস ফীল করাবে হুহ্। সব ই বুঝি আমি মিষ্টার।কিন্তু তাতে আমার কি।

জুনইদ তানিয়া কে ছাড়িয়ে দিয়ে বলে, আচ্ছা তুমি বসো আমি নোটস গুলো আনছি।

তানিয়া বলে উঠলো, কেন জুনইদ চলো না তোমার ঘরে যায়।

জুনইদ জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে বললো,না না তুমি এখানেই বসো আমি আসছি।সে বিরবির করে আওড়াচ্ছে এখানেই তুমি আমার সঙ্গে যা করছো ঘরে গেলে মনে হয় তুমি আমাকে খেয়েই ফেলবে।তাছাড়া যার জন্য তোমাকে টলারেট করছি ঘরে গেলে তো তাকে দেখানোই যাবে না আমিও ফেলনা নয় আমারও একটা কোয়ালিটি আছে।

কিছু বললে জুনইদ।

না না তানিয়া কিছু না তুমি বসো।

জুনইদ ঘরে চলে গেলো।এতক্ষণ জুনইদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তানিয়া খেয়াল ই করে নি যে নিশার সঙ্গে আরও একজন বসে আছে।ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে তানিয়া নিশাকে জিজ্ঞেস করলো,

নিশা কেরে এটা? ঠিক চিনলাম না তো।

ও আমার বেস্টফ্রেন্ড অনিলা।আমরা একি ভার্সিটিতে পড়ি।

তানিয়া মুখ বেকিয়ে বলে, তা এখানে কি করছে।

আসলে অনিলা এতটা সুন্দর আর সম্মোহনী যে ওঁকে দেখেই তানিয়ার কেমন যেনো হিংসা হচ্ছিলো।

অনিলা তখন বলে, হ্যালো আ’ম ইশতেহার অনিলা।এন্ড আই ক্যাম হেয়ার ফ্রম ইম্পর্টেন্ট রিজন।

অনিলা আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু সেই সময় জুনইদ কিছু নোটস এনে তানিয়া কে ডাকলো।জুনইদ এতক্ষণ তানিয়া এবং অনিলার মধ্যে হওয়া সব কথায় শুনেছে।জুনইদ অনিলার উপর রেগে থাকলেও তানিয়ার অনিলাকে ওইভাবে প্রশ্ন করাটা মোটেও পছন্দ করে নি।না চাইতেও তানিয়াকে নিজের ঘরের দিকে নিয়ে গেলো জুনইদ।কারণ এখানে থাকলে হইতো তানিয়া আরও কথা শুনাবে।তবে জুনইদ খুশিই হয়েছে অনিলার এভাবে উত্তর দেওয়াতে।

এটাই হইতো প্রথম প্রেমের অনুভূতি।কারণ মানুষ যেটা চাই সেটা হয় না।আর যেটা হয় সেটা কেউই ভাবতে পারে না।তাই ওরাও জানে না যে ওরা একে অপরের প্রতি দুর্বল হয়ে পরছে।

নিশা রেগে বলে উঠলো, তোর ওই ন্যাকা মেয়ের কাছে নিজের ক্ল্যারিফিকেশন দেওয়ার কোনো দরকার ছিলো না।তুই আমার বাড়ি এসেছিস ওর বাড়িতে না।তুই কি জন্য এসেছিস তার কৈফিয়ত ওই মেয়েটাকে দিতে হবে নাকি।তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। তাই কাজ না থাকলেও যখন তখন তুই আমার বাড়িতে আসতে পারিস।ওই মেয়েটা শুধু আমার ভাইয়ের বান্ধবী।বাড়ির কোনো মেম্বার নয় যে ওঁর কাছে তোর কৈফিয়ত দিতে হবে।

অনিলা একটু হেসে বললো, হুম বুঝেছি। আসলে আমি তো আজ কোনো দরকারী কাজে আসিনি তোর কাছে।কিন্তু ও যখন আমাকে ওইভাবে ট্রিট করলো তাই আমি বলে ফেলেছি।

আচ্ছা ছাড়।কোনো ব্যাপার না।

রুমে গিয়ে জুনইদ তানিয়া কে কিছুটা বিক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো, তুমি ওইভাবে আমার বাড়ির গেস্টের সঙ্গে কথা বললে কেন।খুব কি দরকার ছিলো যেচে কথা বলার।

না না আমি তো এমনিই। তানিয়া আমতা আমতা করলো।

থাক বাদ দাও।আর এই নাও নোটস গুলো।

তানিয়া বলে, তুমি রাগ করছো কেন ডার্লিং।

জুনইদের মাথা টা মনে হয় এই মেয়েটা খারাপ করেই দেবে।এই মেয়ে এখনি আমার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে এখন যদি একে এর বাড়ি পাঠানো না যায় এক্কেবারে ফ্যাসাদে পরে যাবে সে।

না না রাগ করিনি তো।তুমি কেন যেচে কথা বলতে গেলে।আচ্ছা তুমি এখন বাড়ি যাবে তো।

নাহ এইতো এলাম।তোমার সঙ্গে একটু গল্প করি তারপর না হয় যাবো।

জুনইদ এর থেকে বাচার জন্য বলে, কিন্তু আমি তো এক্ষুনি বেরিয়ে যাবো।তুমি এখানে থেকে কি করবে একা একা।

তাহলে আর কি করার আমিও চলে যাচ্ছি।

জুনইদ মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিলো।

আচ্ছা ঠিক আছে চলো।

ওকে চলো।

এরপর তানিয়া বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলে জুনইদ আবারও গিয়ে সোফায় বসে পরলো।হাতে একটা পেপার নিলো এবারে।নিউস পেপার পড়া টড়া এসব কিছুই নয়।নিউস পেপার দিয়ে ও শুধু নিজের চোখ টা আড়ালে রাখতে চাইছে।আসলে অনিলাকে ও আড়াল থেকে লক্ষ্য করছে।ওর সব এক্টিভিটিস গুলো মেপে মেপে দেখছে।কিন্তু সেটা অনিলাকে একদমই বুঝতে না দিয়ে।

আসলে ওরা কি জানে হৃদয়ের ইশারাতে চোখ কাজ করে।এরপর অনিলা আর একবার ও জুনইদ কে স্যরি বলার চেষ্টা ও করলো না।নিশা আর শান্তা বেগম কে বলে কিছুক্ষন পর ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।

জুনইদ এবার ভাবলো আর একবার ও স্যরি বলার চেষ্টা ও করলো না।বাহ! ওকে কোনো ব্যাপার না।আমি এতো ভাবছি কেন।কিন্তু এর পরে তো তোমার জন্য ছোট্ট একটা পানিশমেন্ট তৈরিই রেখেছি মিস সুনামি।এই নাম টা বেশ লাগলো মিস সুনামি।হঠাৎ করেই যেনো তার মাথায় এই নাম টা চলে এলো।হঠাৎ করেই যখন চলে এসেছে তখন সে এই মিস সুনামি নাম টাই ধার্য্য করলো তার জন্য।


অনিলা বাড়ি এসে ক্লান্ত শরীর টা বিছানায় এলিয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর ওর ফোন টা বেজে উঠলো।অনিলা ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলো ওর বুবু মায়াবী ফোন করেছে।মুহুর্তেই খুশিতে মন টা ভরে উঠলো।সে ফোন টা রিসিভ করে বললো,

তোমার যে একটা ছোট্ট বোন আছে তাকে কি তোমাদের মনে আছে বুবু।বাড়ির সবাই তো আমাকে একেবারেই এক ঘরে করে দিয়েছো।
গাল ফুলালো অনিলা।

আরে থাম থাম অনি।এমন ভাবে বলছো যেনো তুমি তোমার বুবু কে মনে করে উলটে দাও।ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে বললো মায়াবী।

আচ্ছা আচ্ছা বাদ দাও।আব্বু আম্মু তুমি, তোমরা সবাই কেমন আছো।

হ্যাঁ সবাই ভালো আছি আমরা।তোর পড়াশোনা ঠিক ঠাক মতো হচ্ছে তো।

হ্যাঁ বুবু চিন্তা করো না সব ঠিকঠাক আছে।

একটা খুশির খবর আছে রে।

কি খবর বুবু।বাব্বাহ লজ্জা পাচ্ছো মনে হয়।কি ব্যাপার হুম।

ধ্যাত অনি।তুই ও না। নে মায়ের সঙ্গে কথা বল।

ওকে দাও বুবু।

মিসেস মনিরা মানে অনিলার মা ফোন টা নিলেন।

হ্যাঁ অনি মা।কেমন আছিস তুই।একা একটা ফ্ল্যাটে থাকিস কোনো সমস্যা হয় না তো।রেধে খেতে পারিস তুই।দেখিস রান্না করতে গিয়ে হাত টাত পুরিয়ে ফেলিস না।বাড়িতে তো একটুও রান্না করতিস না।এখন নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে সব কিছু একা করতে।

মায়ের গলাটা ভার শোনালো অনিলার কাছে।মায়েরা বোধহয় এমন ই হয়।কতটা চিন্তা করে তার মা তার জন্য।এক সাথে এত্তো গুলা প্রশ্ন শুনে বলে,

অফহো মা আমি ভালো আছি।চিন্তা করো না তো।আমি রান্না টা একটু শিখে নিয়েছি।তোমার মেয়ে ওতোটাও ছোট নেই বুঝলে।

হ্যাঁ তোকে নিয়েই তো আমার সকল চিন্তা রে মা।

হ্যাঁ জানি মা।তাছাড়া আমার মন খারাপ হলেও স্ট্রুয়ার্ট আমার মন খারাপ থাকতেই দেই না।কথা বলতে শিখে তো একেবারে লাটে উঠেছে।আমার কথা বলার জন্য এখন স্ট্রুয়ার্ট আছে তো।

হুম কথা বলা তো শিখবেই।ছোট্ট থেকেই তো ওঁকে আগলে রেখেছিস তুই।আচ্ছা শোন না।তোকে বাড়ি আসতে হবে রে।

কেন মা কিছু হয়েছে কি।বুবুও বললো সুখবর।

হ্যাঁ তোর বুবুর বিয়ে ঠিক হয়েছে।সামনের মাসেই।

অনিলা খুশিতে বিছানা থেকে লাফ মেরে উঠে উৎফুল্ল কন্ঠে বললো,

সত্যিই মা।ওমা জিজুর ছবি পাঠাতে বলো বুবু কে।

হ্যারে বলবো খন।তুই কিছুদিন ছুটি নিয়ে চলে আসিস।

অনিলা ওর বাবার সঙ্গেও কথা বলে ফোন টা রেখে দিলো।

তারপর স্ট্রুয়ার্ট এর কাছে গিয়ে বলে, কিরে স্ট্রুয়ার্ট আজ এমন চুপচাপ কেন।আসার পর একটা ও আওয়াজ করিস নি।

স্ট্রুয়ার্ট মুখ ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।কি জানি কি বুঝলো।

অনিলা স্ট্রুয়ার্ট কে খাচা থেকে বের করে নিজের হাতে নিলো।

ওহ বুঝেছি।স্ট্রুয়ার্ট সোনার অভিমান হয়েছে। এসে থেকে খোজ নেই নি বলে।ঠিক আছে বাবা আর রাগ করে না।আমি এরপর থেকে এসেই তোমার ই খোঁজ নেবো প্রথমে।

স্ট্রুয়ার্ট এর মন গললো না।ওই ভাবেই ঘাড় বেকিয়ে রইলো।

তা দেখে অনিলার মন টা একটু ব্যথিত হলো।

বাপ রে এতো রাগ। ঠিক আছে থাক আর রাগ করতে হবে না।নাও তোমার খাওয়ার সময় হয়েছে।

স্ট্রুয়ার্ট এর এবার একটু মন টা গললো।অভিমানী স্বরে এত্তো গুলা নালিশ করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।

অনিলাও খুশি মনে ওর নরম পালকে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদর মেখে দিলো।

#চলবে