সম্মোহনী সেই মেয়েটি পর্ব-৬+৭

0
522

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৬+৭
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

জুনইদ রুমের সামনে এসেই অনিলা কে নামিয়ে দিলো।অনিলা কে নামিয়ে দিতেই চোখাচোখি হলো জুনইদের সঙ্গে।সাথে সাথেই অত্যন্ত অপ্রতিভ হয়ে চোখদুটো সরিয়ে নিলো ও।কিছু সময়ের জন্য স্বস্থানে থমকে দাঁড়িয়ে থেকে গটগট করে ভেতরে ঢুকলো।কোনো দিকে তাকালো না কিচেনে গিয়ে বাজারের ব্যাগ টা রাখলো।এরপর নিজের রুমে ঢুকে সোজা বিছানার কাছে গেল।

এসব কিছু লক্ষ্য করলো জুনইদ।না চাইতেও হেসে ফেললো সে।অনিলা ভেতরে আসতে না বললেও সে নিজে থেকেই ভেতরে ঢুকলো।চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো আশপাশ টা।তারপর একটা সোফায় বসলো।

অনিলা এক মনে ভেতর থেকে এসে পেয়ারা আর আঙ্গুর বের করে হাতে নিয়ে বারান্দায় গেলো।

এসব কিছু দেখে জুনইদ ভ্র-কুটি সংকুচিত হয়ে গেলো।স্ট্রেঞ্জ গার্ল।বাড়িতে কোনো মেহমান আসলে কি মিস সুনামি তাদেরকে এইভাবেই ট্রিট করে নাকি।একবার ভেতরে তো আসতে বললোই না।ইভেন সে যে ভেতরে এসে বসেছে তার দিকে একবার তাকালো না পর্যন্ত।কি অদ্ভুত।তারপর ফল ও বের করে নিয়ে বারান্দায় গেলো।এতে অবশ্য কিছু মনে করলো না জুনইদ।ভাবলো হইতো খাবে নিযে।

এর মধ্যেই জুনইদের কানে এলো অনিলা কারোর সাথে কথা বলছে।কিন্তু কার সাথে।সে উঠে দাঁড়ালো।বারান্দায় গিয়ে কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে নাকি এই মেয়েটা।সে কি যাবে একবার, দেখবে উঁকি দিয়ে।নাহ আবার যদি ডিস্টার্বড ফীল করে।সে উঁকি দিতে চেয়েও দিলো না।সে চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই একটা মিষ্টি মিহি কন্ঠ তার কানে প্রতিধ্বনিত হলো।সে ফিরে গেলো, বারান্দায় উঁকি দিলো সে,

ও মাই গড এই মেয়েটা এতক্ষণ একটা টিয়া পাখির সাথে কথা বলছিলো।সে বাকা হেসে বললো,

তোমার বাড়িতে কেউ আসলে বুঝি এভাবেই ট্রিট করো তাকে।

আকম্মাৎ কন্ঠে অনিলা চট করে তাকালো, এবাবা সে তো ভুলেই গেছিলো তার সাথে জুনইদ এসেছে।একটু লজ্জায় পরে গেলো সে।আমতা আমতা করে বলে উঠে,

নাহ আসলে ওঁকে খাওয়াতে খাওয়াতে ভুলে গেছিলাম আপনি ভেতরে,আব,আপনি বসুন না।

জুনইদ ফিচেল হেসে বলে, নাহ বসবো না।আফসোস হচ্ছে খুব।আমি যদি পাখি হতাম তাইলে কতই না ভালো হতো।

হঠাৎ এমন কথার মানে ধরতে পারলো না অনিলা।

মানেহ।

মানেহ হলো আমি এসে বসলাম আর তুমি দেখলে না অব্দি।এসেই এই সামান্য পাখিটাকে নিয়ে খাওয়াচ্ছো।

ওঁকে পাখি বলবেন না।ওর নাম স্ট্রুয়ার্ট।স্ট্রুয়ার্ট আপনার কাছে সামান্য কিন্তু আমার কাছে অনেক কিছু।

স্ট্রুয়ার্ট নিজের নাম নিতে দেখে তাকালো জুনইদের দিকে।ডানা ঝাপটিয়ে সেও বলে উঠলো, “স্ট্রুয়ার্ট, স্ট্রুয়ার্ট।নাম স্ট্রুয়ার্ট”

জুনইদ অবাক হলো, বাব্বাহ কথাও বলা শিখিয়েছো ওঁকে।

অনিলার মুখে হাসি ফুটলো।জুনইদ সেটা খেয়াল করলো।পাখিটির কথা বলতেই অনিলার মুখ টা কেমন খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।অনিলা মুখে হাসি সমেত উত্তর দিলো,

হুম দের’বছর থেকে কথা বলা শিখাচ্ছিলাম।এখন বেশ অনেক কথায় বলতে পারে।

বাহ ভালো তো।তা আর কি কি জানে ও।

হ্যাঁ গান গাইতে পারে ও। আমি শিখিয়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু যাকে তাকে শুনাই না ও।

জুনইদ স্ট্রুয়ার্ট কে বলে, হাই স্ট্রুয়ার্ট।আমাকে একটা গান শুনাও তো দেখি তুমি কি গান পারো।

স্ট্রুয়ার্ট জুনইদকে পাত্তাও দিলো।অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে আঙ্গুর খাওয়াই মনোযোগ দিলো।ভাব এমন যে সে যে কিছু বলছে তা যেনো শুনতেই পাইনি।

স্ট্রুয়ার্ট এর কান্ড দেখে অনিলা ফিক করে হেসে দিলো।স্ট্রুয়ার্ট এর পাত্তা না পাওয়াই এতে জুনইদের মন ক্ষুন্ন হলো।এই মিস সুনামি নিজের পাখিকে একদম নিজের মতোই বানিয়েছে।ইগোস্টিক।তাকে পাত্তাও দিলো না।তাই সে মুখ বাকিয়ে বলে,

একদিন আমাকেও গান শুনাবে দেখে নিও তোমার এই স্ট্রুয়ার্ট।

অনিলা হাসি থামিয়ে বলে,ওকে দেখা যাবে।

জুনইদ মাথা নিচু করে বললো, ওকে মিস সুনামি আমি আসছি তাহলে।

অনিলা জুনইদের দিকে তাকালো।মুখের হাসি মিলিয়ে মলিন হলো মুখ।কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নেই তার।আজকে জুনইদ তাকে অনেক সাহায্য করেছে।আস্তে করে মোলায়েম গলায় বলে,

ওকে সাবধানে যাবেন।

জুনইদ ভাবলো অনিলা অন্তত তাকে এক কাপ কফি নিশ্চয়ই অফার করবে সে যাওয়ার কথা শুনলে।কিন্তু নাহ এই মেয়ে তো কিছুই বললো না।কৃতজ্ঞতা থেকেও কিছু বললো না মেয়েটা।সে মুচকি হেসে পিছনে ফিরে চলে আসছে।দরজার কাছে যেতেই স্ট্রুয়ার্ট এর এমন বিভৎস চেচামেচি আর ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ কানে এলো।হঠাৎ এতো চেচানো শুনে জুনইদের বুক টা ধক করে উঠলো।অনিলার কিছু হলো না তো।

সে প্রায় হন্তদন্ত করে আবার ঘরে ঢুকলো।বারান্দায় গিয়ে অনিলাকে অজ্ঞান অবস্থায় পরে থাকতে দেখে মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে এলো যেনো।বক্ষস্থলের কাছে ভারী ভারী মনে হলো। সে তারাতারি করে অনিলাকে কোলে নিতেই বুঝলো অনিলার শরীরে হাই টেম্পারেচার।কপালে হাত দিয়ে দেখলো হাই ফিভার।সে বেশ চিন্তিত হয়ে পরলো।এই অবস্থায় সে অনিলাকে ছেড়ে যাবে কি করে।কিন্তু সে তো থাকতেও পারবে না।একা একটা মেয়ের সঙ্গে একটা ছেলেকে দেখলে মানুষ খারাপ চোখে দেখবে সেটা।স্ট্রুয়ার্ট এর চেচামেচির কারণ তার মানে এটাই ছিলো।জুনইদ কে দেখে স্ট্রুয়ার্ট চেচানো বাদ দিয়েছে ঠিকই কিন্তু খাচার মধ্যে দাপাদাপি করছে সে।

জুনইদ ওঁকে বিছানায় শুইয়ে দিলো।নিজের মাথার চুল গুলো হাত দিয়ে পিছনে ঠেলে দিলো।উম্মাদের মতো লাগছে তার নিজেকে।জুনইদ বিরবির করে বলে,

নাহ এখন যা করার আমাকেই করতে হবে।আমি না থাকলে তো জ্বর টার ও কোনো সুরাহা হবে না।কি করা যায় এখন।এখন তো বাইরে গিয়ে মেডিসিন আনাও সম্ভব নয়।রাত বেরেছে।যদি কেউ তাকে ফ্ল্যাট থেকে এইভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে ব্যাপার টা খুব বাজে হবে।আর অনিলার ঘরে কোনো মেডিসিন থাকলেও তা খুজে পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।এদিকে অনিলা জ্বরে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে।আর জ্বরের ঘোরে গোঙ্গাচ্ছে।

জুনইদ আর বেশি কিছু না ভেবে রুমাল বের করলো।কিচেন রুম খুজে নিয়ে একটা বাটিতে পানি নিয়ে এলো।অনিলার মাথার পাশে খাটের এক কোণায় বসে অনিলার মাথায় জলপট্টি দিতে গিয়ে দেখলো অনিলার এক গাছি চুল এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো মুখশ্রী জুড়ে।বাচ্চা বাচ্চা লাগছে পুরো।ওর মুখে চুল পড়াই ওঁকে আরও স্নিগ্ধ আরও মায়াময়ী লাগছিলো।সে তার স্মিত হেসে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।আকস্মিক হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিতে চেয়েও হাত সরিয়ে নিলো।এর নিজের মুখ টা অনিলার কপালের কাছে নিয়ে গিয়ে ফু দিয়ে সরিয়ে দিলো।তারপর মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলো।অনিলা বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে।কিন্তু এখন জুনইদ এখন কি করবে সেটাই ভেবে পাচ্ছে না।বিছানায় শুধু একটা পাতলা চাদর পরে আছে।কিন্তু এই চাদরে তো আর কাঁপুনি কমবে না।যায় হোক চাদর টা টেনে নিয়ে অনিলার গায়ে ভালো করে জড়িয়ে দিলো।তাতে যদি একটু কাঁপুনি কমে।কিন্তু এতেও ওর কাঁপুনি বন্ধ হচ্ছে না।

এদিকে জুনইদ ওর মাথার কাছে বসে সমানে জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছে।এরকম চঞ্চল মেয়েকে এইভাবে দেখে তার কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু তার এতো কষ্ট কেন হচ্ছে সেটা নিজেই বুঝতে পারছে না।কিন্তু কষ্ট হচ্ছে।সেই বা কি করবে।নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।আবার এটাও ভাবছে সে এটা ঠিক করছে তো।এইভাবে একা একটা মেয়ের বাড়িতে কাউকে না জানিয়ে কিছু ভুল করে বসছে না তো।কিন্তু অনিলাকে তো একা ফেলেও যেতে পারবে না।

ওষুধ না দেওয়াই শুধু জলপট্টি তে জ্বর কমছে না।অনিলাকে যে জিজ্ঞেস করবে ব্ল্যাংকেট কোথায় আছে সেটাও জিজ্ঞেস করতে পারছে না।তাও অনিলার এভাবে কাঁপতে দেখে ওঁকে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করবে বলে ঠিক করলো।তাছাড়া মিস সুনামির তো কিছু খাওয়াও হয়নি।

মিস সুনামি,এই যে মিস চোখ খুলো।একটু আমার দিকে তাকাও প্লিজ।ব্ল্যাংকেট কোথায় আছে বলো তো।এই যে মিস সুনামি।

নাহ এইভাবে হবে না।অনিলার কোনো সারা না পেয়ে জুনইদ আরও হতভম্ব হয়ে পরলো। এবার যা করার তাকেই করতে হবে।এই ভেবেই জুনইদ কিছু টা দুটোনা নিয়েই অনিলার ওয়ারড্রব টা খুলে ফেললো।খুলে নিচের সেলফে একটা ব্ল্যাংকেট পেয়ে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।অনিলার গায়ে ব্ল্যাংকেট টা ভালো ভাবে চাপিয়ে দিলো।কিন্তু অনিলা এখনো কাঁপছে।জুনইদ বার বার জল টা পালটে ঠান্ডা জল দিয়ে জলপট্টি দিচ্ছে।

এবার হঠাৎ করেই জ্বরের ঘোরে অনিলা জুনইদের হাত টেনে ধরে নিজের দু হাতের মাঝে নিয়ে জুনইদের হাতের উপর মাথা রেখে
শুয়ে পরলো।অনিলার এরকম কান্ড দেখে জুনইদের একটু হাসি পেলো।

মিস সুনামি এটা কি করছো।হাত টা ছাড়ো না হলে এক হাত দিয়ে তোমার মাথায় জলপট্টি দেবো কি করে।

কিন্তু অনিলা শুনলে তো ছাড়বে।এবার জুনইদ কোনো উপায় না দেখে এক প্রকার জোর করেই হাত টা ছাড়িয়ে নিলো।জুনইদ বিরবির করে বললো,

আমি জানি মিস সুনামি তুমি সেন্সে থাকলে কিছু তেই আমার হাত এভাবে জাপ্টে ধরতে না।স্যরি এর থেকে আর বেশি কিছু করতে পারছি না আমি তোমার জন্য।এবার জুনইদ কে আরও অবাক করে দিয়ে অনিলা জুনইদের কমোড় জড়িয়ে ধরে ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরলো।জুনইদ চেয়েও অনিলাকে সরাতে পারলো না।ওর কাঁপুনি টা একটু কমেছে।সঙ্গে জ্বর টাও।জুনইদ একবার কপালে হাত দিয়ে চেইক করলো।জ্বর কমেছে দেখে স্বস্তি পেলো সে।ওভাবেই অনিলার মাথায় থেকে থেকে জলপট্টি দিতে লাগলো। এরপর মোবাইলের দিকে চোখ যেতেই জুনইদ দেখলো পনেরো টা মিসড কল।

কয়েকটি কল তার কাকার আর আর কিছু নিশার।সে বলে উঠলো,

ওহ শিট।আমাকে ফোনে না পেয়ে বাড়িতে নিশ্চয়ই এতক্ষণে চিন্তা শুরু করে দিয়েছে।আসলে অনিলাকে এই অবস্থায় দেখে আমার মাথাতেই আসে নি বাড়ির কথা।অনিলাকে আস্তে করে নিজের কোল থেকে নামিয়ে দিতে চাইলো কিন্তু পারলো না।অনিলা শক্ত করে ধরে আছে তার কোমড়।সে ওভাবেই বসে বাড়িতে কল করলো।

হ্যালো।

এই হতচ্ছাড়া।কোথায় আছিস।তোর জন্য আমরা সবাই চিন্তায় পরে গেছি।সে খেয়াল কি আছে তোর।ফোনের অপাশ থেকে নিশা বলে উঠলো।

জুনইদের স্পষ্ট জবাব।

আচ্ছা মাকে ফোন টা দে।

শান্তা বেগম কে ফোন টা দিতেই জুনইদ বলে,

স্যরি মা ফোন টা সাইলেন্ট ছিলো।আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি।

শান্তা বেগম বলে উঠলো, তুই করছিস টা কি বল তো।এতো রাত হয়ে গেছে বাড়ি ফিরছিস না কেন।

আসলে মা আমি আমার একটা বন্ধুর বাসায় আছি।আজ ফিরবো না।বন্ধুর মা যেতে দিচ্ছে না।তোমরা চিন্তা করো না।আমি ঠিক আছি।

এরপর আরও কিছুক্ষন কথা বলে বোঝালো নিজের মাকে।ফোন টা রেখে দিলো সে।সত্যিটা সে বলতে পারলো না।অন্য কিছু ভাবতে পারে সবাই।স্ট্রুয়ার্ট এর কথা মনে পরতেই সে বারান্দায় গেলো।সেখান থেকে খাচা সহ স্ট্রুয়ার্ট কে ভেতরে এনে রাখলো।স্ট্রুয়ার্ট কেমন নির্জিব হয়ে গেছে।অনিলার দিকে ওর সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চোখে তাকিয়ে রইলো।একদম আওয়াজ করলো না সে।

জুনইদ স্ট্রুয়ার্ট কে দেখে বুঝতে পারলো স্ট্রুয়ার্ট চিন্তা করছে।তাই সে স্ট্রুয়ার্ট কে উদ্দেশ্য করে বলে,

চিন্তা করিস না।আমি আছি ওর কাছে।

স্ট্রুয়ার্ট ওর কথায় কি বুঝলো কে জানে।চুপচাপ নিজের ডানা ঝাপটা দিয়ে বসে রইলো।এটা বোঝালো সেও আছে।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।

রি-চেইক হয়নি।

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৭
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

মা কি হয়েছে বলো তো অনির।ও ফোন কেন ধরছে না।কাল রাত থেকে কোনো খোজ নেই মেয়েটার।এরকম তো কখনোই করে না।তাহলে আজ কি হলো বলো তো।

মনিরা বেগম চিন্তায় পরে গেলেন।তিনি কেদে ফেললেন।কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললেন,

তুই আবার ট্রাই কর না।একা একটা মেয়ে ওতো বড় একটা ফ্ল্যাট এ আছে।কিছু হয়ে থাকলেও তো জানতে পারবো না।এই জন্যই তো তোর বাবা কে বলেছিলাম মেয়েকে দূরে পাঠিয়ে দিও না।এখানেই একটা কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দাও।

মা চিন্তা করো না তো।নিশ্চয়ই বোন এখনো ঘুমাচ্ছে।মায়াবী নিজের মা কে শান্ত করার জন্য বললো।

আলিফ হোসেন গম্ভীরমুখে বললেন,

আহা মনিরা এতো প্যানিক করো না তো।হইতো কাল রাতে ক্লান্ত ছিলো ফোন করতে ভুলে গেছে।আমি না হয় আজ একবার যাবো।গিয়ে দেখে আসবো।এতো দিন যেহেতু সমস্যা হয়নি আজ ও হবে না।

হ্যাঁ তুমি তো নিশ্চিন্ত থাকবেই।যতো চিন্তা তো সব আমার।আমি মেয়ের মা আমার চিন্তা হবে না তো কার হবে।আর বলছো চিন্তা করবো না।মনিরা বেগম মুখ চেপে কান্না করতে করতে বললেন।

মায়াবী এদিকে কল করেই যাচ্ছে।কিন্তু ফোন তুলছে না।এবার সেও অনেক চিন্তায় পরে গেলো।এরকম তো কক্ষনো হয়নি।তার বোন যত ক্লান্তই থাক না কেন অন্তত একটুর জন্য হলেও ফোন করবেই।রাতেও পাইনি ফোনে।এখনো ফোন তুলছে না।চিন্তাটা আরও জোড়ালো হয়ে মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো মায়াবীর।

কি রে মায়া পেলি ফোনে অনি কে।

নাহ বাবা ফোন তো তুলছেই না।

নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে।চিন্তা করিস না আমি এক্ষুনি বেরিয়ে পরছি।ফ্ল্যাট এ গিয়ে দেখে আসবো।

হ্যাঁ যাও তুমি।আর আমি আমার মেয়েকে ওখানে যেতে দেবো না।এবার আসুক শুধু।

পাগলামি করো না তো মা।বোনের এখনো পড়াশোনা শেষ হয়নি।আর এখানে থেকে তো ভার্সিটিতে ক্লাস করতে পারবে না।

রাখ তোর ক্লাস।ওঁকে এখানে নিয়ে আসবো না হলে আমিই গিয়ে ওর কাছে থাকবো।

ঠিক আছে সব দেখা যাবে মনিরা।এখন আমি যাচ্ছি ওঁকে দেখতে।গিয়ে ফোন করবো।বলেই আলিফ হোসেন বেরিয়ে পরলেন।

মায়াবী আর মনিরা বেগম উনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলেন।আর আল্লাহ কে ডাকতে লাগলেন।যাতে অনিলার কিছু না হয়।

আরে চলুন তো এতটা ভাবতে হবে না।যেহেতু আমার স্ট্রুয়ার্ট আপনার শার্ট খারাপ করে দিয়েছে সেহেতু আমিই আপনাকে শার্ট কিনে দেবো।

আমার না লাগবে না কোন শার্ট।আপনার স্ট্রুয়ার্ট আর জায়গা পেলো না পটি করার।শেষ মেশ আমার শার্টেই ওঁকে ইয়ে করতে হলো।ওর আমার উপর এতো রাগ কিসের শুনি।কাল আপনার এতো যত্ন আত্তি করলাম তার প্রতিদান আপনার স্ট্রুয়ার্ট এটাই দিলো।ইয়াক থু।কি বিচ্ছিরি গন্ধ ছিলো।

জুনইদ নাক মুখ কুচকে ফেললো ঘেন্নায়।

আসলে অনিলার যখন ঘুম ভাঙে তখন সে দেখলো সে জুনইদের কোলে শুয়ে আছে। তাও আবার জুনইদ কে জড়িয়ে ধরে।জুনইদকে শার্ট লেস দেখে অনিলা এক মুহুর্তের জন্য ভয় পেয়ে গেছিলো।জুনইদ এইভাবে খোলা শরীরে তার পাশে শুয়ে কেন।হড়বড় করে উঠে বসে অনিলা।আর মনে করার চেষ্টা করে আসলে কি হয়েছিল।সব টা মনে পরছে না তবে আংশিক মন পরলো।জুনইদ তো চলে যাচ্ছিলো আর সেতো বারান্দায় ছিলো।এর পর কি হয়েছিলো।আর জুনইদ এভাবে শার্টলেস কেন।ওর ঘুমের এডভান্টেজ নিয়ে এই লোকটা আবার কিছু করে নি তো।মনে হাজার ও প্রশ্ন জাগছে।সে ক্ষীপ্ত কন্ঠে ডাকলো জুনইদ কে।

এই যে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট।এই যে উঠুন।আমার সর্বনাশ করে এখন আবার আরামছে ঘুমাচ্ছেন।

কি হয়েছে সকাল সকাল এভাবে জ্বালাচ্ছিস কেন নিশাপুর।ঘুমাতে দে তো।রোজ রোজ এভাবে আমাকে না জ্বালালে তোর শান্তি হয় না তাই না।

অনিলা চোখ সরু করলো।মানে কি এই লোকটা কিসব বলছে।সে যে এখন তার বেড রুমে সেই খেয়াল কি নেই তার।অনিলা রাগে কটমট করে পাশের টি টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে ছুড়ে মারলো জুনইদের মুখে।

হকচকিয়ে গেলো জুনইদ।বোদ্ধ উম্মাদের মতো বলে,কে,কে,এরকম ঠান্ডা পানি কে দিলো রে।

অনিলা স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে বলে, এসব কি আপনি আমার রুমে কি করছেন হ্যাঁ। এই যে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট এদিকে তাকান।

জুনইদ ভালো করে চারিদিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো। তারপর পরক্ষণেই খেয়াল হলো কালকের কথা।সে অস্থির চিত্তে জিজ্ঞেস করলো,

মিস সুনামি তোমার জ্বর কমেছে।এখন কেমন আছো।

অনিলা নিজের দিকে একবার তাকালো।না সব তো ঠিকই আছে।তার কি জ্বর এসেছিলো কাল কে।তারপর আবার মুখ কঠিন হয়ে গেলো ওর।

তার আগে বলুন আপনার শার্ট কই।এরকম শার্টলেস কেন আপনি। কি করেছেন আপনি আমার সাথে কাল রাতে।

জুনইদ যেনো আকাশ থেকে পরলো।বলে কি এই মেয়ে।যাকে সারারাত জেগে সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুললো সে কিনা বলছে কি করেছে সে তার সাথে।অদ্ভুত মেয়ে তো।

কি হলো বলুন।কি করেছেন আপনি আমার সাথে।

কিছুই করিনি আমি।আমি যদি কিছু করতাম না তাহলে এতো সুন্দর ভাবে কথা বলতে পারতে না তুমি।সো ব্ল্যাম দিও না।

জুনইদ নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিলো।

তাহলে আপনি এভাবে কেন।আপনার শার্ট কই।

এই যে দেখো তোমার ষ্টুপিড স্ট্রুয়ার্ট পটি করে দিয়েছে আমার শার্ট এ। তাই বাধ্য হয়ে খুলে রেখে দিয়েছি।

জুনইদ কাল রাতের কথা ভাবছে।যখন বারান্দা থেকে স্ট্রুয়ার্ট কে আনে তখনই কখন জানি স্ট্রুয়ার্ট ওর শার্টে পটি করে দিয়েছিলো।আর সে গন্ধ সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়েই শার্ট খুলে রাখতে হয় তাকে।

এই কথা শুনে অনিলা কিরকম অভিব্যক্তি দেখাবে বুঝতে পারছে না।অনিলা নির্লিপ্তভাবে জিজ্ঞেস করলো,

স্ট্রুয়ার্ট আপনার শার্টে কখন ইয়ে করলো।

যখন আপনি জ্বরে বেঘোরে কাপছিলেন তখন।জুনইদ কোমড়ে হাত রেখে মুখ বেকিয়ে বলে উঠলো।

ওর ওরকম ভঙ্গিমা দেখে অনিলা আর হাসি চেপে রাখতে পারলো না।

ঠিক হয়েছে।আপনি আমাকে জ্বালিয়েছেন না তাই স্ট্রুয়ার্ট ও আমার হয়ে আপনাকে জ্বালিয়েছে।

জুনইদ তাকিয়ে থাকে অনিলার দিকে মুগ্ধ হয়ে।কি সুন্দর সেই হাসি।প্রান বন্ত।এক মুহুর্তের জন্য ঘোর লেগে যায়।

অনিলা হাসতে হাসতে তাকালো বেড সাইডে একটা বাটিতে পানি আর রুমাল।কপালে হাত দিয়ে দেখলো না জ্বর টা আর নেই।তার মানে জুনইদ সারা রাত তাকে জল পট্টি দিয়েছে।ইশ আর ও কিনা সকাল সকাল কি সব ভেবে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিলো মানুষ টার মুখে।খারাপ লাগলো তার খুব এটা ভেবে।

তারপর ওরা দুজনেই ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরে।উদ্যেশ্য শপিং মল।সেখানে জুনইদ কে শার্ট কিনে দেবে।কোনো রকমে অনিলা একটা ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি দেই যেটা ওর বাবার ছিলো।ওইটাই পরতে দিয়েছে জুনইদকে।সেই পাঞ্জাবি কত রকম ভাবে যে জুনইদ টেনে টেনে দেখছে।এসব দেখে অনিলার হাসি পেয়ে যায়।

এভাবে পাঞ্জাবি টা টানছেন কেন শুনি।ওটা ছিড়ে গেলে কিন্তু আপনিই লজ্জা পাবেন।সবার সামনে ছেড়া পাঞ্জাবী তে কি খুব ভালো দেখাবে বুঝি।অনিলা ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসলো।

জুনইদ একটু লজ্জা পেলো।

মিস সুনামি আমি না হয় এভাবেই বাড়ি চলে যায়।শপিং করা লাগবে না।

মানে কি হ্যাঁ আপনি একাই মহান।আর কারোর মধ্যে মনুষ্যত্ব নেই বুঝি।আমি জানি কাল রাতে আপনি যা করেছেন তার ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবো না।কিন্তু যেহেতু শার্ট টা আমার জন্যই নষ্ট হয়েছে সেহেতু আমার উচিত আপনাকে সেটা কিনে দেওয়া।আমি কি একটা শার্ট ও কিনে দিতে পারি না আপনাকে।

ব্যাস জুনইদ আর কিছুই বলতে পারলো না।চুপ করে বসে রইলো।তাছাড়া এই পাঞ্জাবি পরে সে যদি বাড়ি যায় বাড়ির সবাই কি ভাববে।আর তার ওয়ালেট টাও নেই।নিশ্চয়ই কোথাও হারিয়ে গেছে।বাইক ব্রাস্টের পর থেকে সেটা আর পাইনি সে।পকেটে একশো টাকা পরে ছিলো যেটা দিয়ে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে ছিলো কাল।প্রথম কোনো মেয়ের সঙ্গে এইভাবে মিশছে জুনইদ।তার কলেজ লাইফেও কোনো মেয়ে কেলেংকারি ছিলো না।আর একটা মেয়ের সঙ্গে সে কাল সারা রাত কাটিয়েছে।তার এমন কোনো বাজে চিন্তা একটি বারের জন্য ও আসেনি অনিলাকে দেখে।এই মেয়েটির সম্মোহনী মুখের দিকে তাকালে এরকম কোনো কথা মাথাতে আসবেই না।বড্ড নিষ্পাপ সেই মুখশ্রী।যাতে কোনো পাপের ছোয়া দেখতে পাইনি সে।

দেখতে দেখতে ওরা শপিং মলে চলে এলো।অনিলা প্রায়ই এখানে শপিং করার ফলে এখানকার স্টাফ রা তাকে খুব ভালো করেই চেনে।অনিলা কে দেখে তারা খুবই সম্মানের সঙ্গে ভেতরে নিয়ে গেলো।জুনইদ একটু অবাক হলো।

বাবাহ এখানে দেখছি সবাই তোমাকে চেনে।

অনিলা একটু ভাব নিয়ে বলে, অফকোর্স আমি মানুষ টাই এমন যেই দেখে সেই মনে রাখে।

হ্যাঁ মিস সুনামি তো।সুনামি কে না মনে রাখে।জুনইদ বিরবির করে বলে।

কিছু বললেন মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট।

না না একদম ই না কিছুই বলিনি আমি।

নিন দেখুন একটা শার্ট চুস করুন এখান থেকে।

শোধ দিতে চাইছো নাকি।

তাই ধরে নিন না হয়।আমি কারোর জিনিস পাওনা রাখি না।

ওহ রিয়েলি।

ইয়াহ।

দ্যান কোনো কিছুই তবে পাওনা রাখা উচিত নয়।সব কিছুর ই হিসেব চাই।দুষ্টুমি হাসি দিয়ে জুনইদ ঠোঁটে ঠোঁট চাপলো।

আর কি পাওনা আছে আমি জানি না।অনিলা মাথা নত করে উত্তর দিলো।

ওহ তাই নাকি।অনেক কিছু পাওনা আছে জানো না।

উম হুম জানি না।

জানতে চাও তুমি।

উফ বড্ড কথা বলেন আপনি।শার্ট গুলো দেখুন না মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট প্লিজ।

#চলবে।