সম্মোহনী সেই মেয়েটি পর্ব-৮+৯

0
500

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৮
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

উফ বড্ড কথা বলেন আপনি।শার্ট গুলো দেখুন না মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট প্লিজ।

কথা কেন ঘুরাচ্ছো মিস সুনামি।বলো না জানতে চাও কি পাওনা আছে তোমার কাছে আমার।

জানি না আমি সরুন তো।অনিলা স্বগতোক্তি করলো।

তাহলে কি জানো তুমি।আরে শুনো তো আগে।

উফফ জ্বালাচ্ছেন কেন শুনি।অনিলা শার্ট দেখতে দেখতে বললো,

জুনইদ অনিলার কিছু টা কাছে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো, কাল রাতে যে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছো তাহলে সেটাও রিটার্ন করো এখনই।

লজ্জায় কান গরম হয়ে গেলো অনিলার জুনইদের এরকম বেফাঁস কথায়।আমতা আমতা করে বলে উঠলো, লজ্জাহীন হাতি একটা।

কিহ! কি বললে তুমি মিস সুনামি।

অনিলা চট করে কথা ঘুরানোর জন্য বলে,

উফফ কিছু না।আপনি জলদি শার্ট গুলো দেখুন তো।আমাকে আবার বাড়ি যেতে হবে।

কিন্তু আমি তো এগুলো পড়িই না।

মানেহ।

মানেহ আমি এই রঙ বেরঙের কার্টুন টাইপ শার্ট পড়ি না।অনলি ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট রঙের শার্ট পড়ি।আমি সিম্পল থাকতেই বেশি পছন্দ করি।

ওমা কেন।পরলে কি হয় শুনি।অনিলা কমোরে হাত রেখে সরু চোখে তাকিয়ে বললো।

সেইম টু ইউ।আমিও জানি না কি হয়।

আচ্ছা আচ্ছা আমার কথা আমার কাছেই ঘুরানো হচ্ছে।আপনাকে কালারফুল শার্টে ভালোই লাগবে বুঝলেন।

জানি না এটাও।জুনইদ বুকে হাত গুজে বলে।

তাহলে একবার ট্রাই করে দেখুন জেনে যাবেন।

নাহ ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট ই ঠিক আছে।ছাড়ো তো।

আচ্ছা একটা চয়েস করে দেখুন তো।না ভালো লাগলে পরতে হবে না।

জুনইদ আর কথা না বারিয়ে বলে, ওকে তুমি যখন বলছো তখন তুমিই চয়েস করে দেও।

অনিলা অবাক হয়ে বলে, আমার চয়েস পরবেন আপনি?

কেন না পরার কি আছে।তারপর আস্তে আস্তে বলে এই আপাদমস্তক মানুষ টাই তো আমার চয়েস তার চয়েস আমার পছন্দ হবে না কেন।

জুনইদের আস্তে বলা কথাটা অজানাই রয়ে গেলো অনিলার।অনিলা বলে,

ওকে আমি দেখছি তবে।

অনিলা একটা একটা করে বেশ কতকগুলো শার্ট দেখলো।তারপর একটা ক্রীম কালারের শার্ট তুলে নিয়ে জুনইদকে সেটা ট্রায়াল দিয়ে দেখতে বললো।

থাক না পরে পরবো।

নাহ এখনি পরে আমাকে দেখান।অনিলা আরও কয়েকটা শার্ট ধরিয়ে দিলো জুনইদের হাতে।

হোয়াট আমি এগুলো এখন এক সাথে পরবো।

সব গুলো না এখন একটা পরে আসুন যান।

অনিলা জোর করে জুনইদ কে ট্রায়াল রুমে পাঠালো।জুনইদ বাধ্য হয়েই শার্ট টা পড়ে পাঞ্জাবি টা হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো।একবার আয়না তে নিজেকে দেখলো না পর্যন্ত।

অনিলা জুনইদকে দেখে তো পুরাই থ।শ্যামলা গড়নের শ্যাম পুরুষ টির শরীরে ক্রীম কালারের শার্ট টা একদম পারফেক্ট ভাবে মানিয়েছে।অনিলা আনমনে বলে,

আপনি নিজেও ভাবতে পারবেন না মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট এই শার্ট টাই কতটা মানিয়েছে আপনাকে।

জুনইদ একবার নিজেকে দেখে বলে, রিয়েলি।বাব্বাহ এ যেনো বাঘের মুখে মধু ছন্দা। জুনইদ আর কিছু না ভেবে বলে,

ওকে এবার তাহলে আমি এটা চেঞ্জ করে আসি।

অনিলা ততক্ষণে নিজের সম্বিত ফিরে পেয়ে বলে, আরে কি করছেন টা কি।এটাই পরে থাকুন আপনি।

নো নেভার এটা আমি কখনোই পরে থাকতে পারবো না।আন-কম্ফোর্টেবল ফীল হচ্ছে তো।এগুলো মানুষ পরে নাকি।

এগুলো কি মানুষ পরে না নাকি।এগুলো এখানে কেন রাখা হয়েছে তাহলে।

মানুষ পরে কিন্তু আমি পরি না।

অনিলা ব্যাঙ্গাত্বক কন্ঠে বললো,

ওহ তার মানে আপনি মানুষ না।হ্যাঁ ঠিকই তো আপনি মানুষ কেন হবেন আপনি তো ল্যাম্পপোস্ট।

হইতো না।তুমি না হয় মানুষ করে দিও আমাকে মিস সুনামি।

জুনইদের কথার আগা মাথা না বুঝে কয়েকটি শার্ট প্যাক করতে দিলো অনিকা।আর জুনইদ আর শার্ট টা খুললো না।

অনিলা বিল পে করে দিলো।শার্ট গুলো নিয়ে বেরিয়ে এলো সে।জুনইদ ও পিছনে পিছনে বেরিয়ে এলো।এরপর দু’জনেই একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে সকালের খাবার খেয়ে নিলো।এরপর জুনইদ জোরাজুরি করে অনিলাকে ডক্টর দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে দিলো।অনিলার এখনো ভেতরে ভেতরে জ্বর আছে।রাতে আবার জ্বর আসার সম্ভাবনা আছে।তাছাড়া অনিলার খাওয়া দাওয়ার অনিয়ম হওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে।সব ওষুধ নিয়ে অনিলা ফ্ল্যাট এ ফিরে গেলো আর জুনইদ তার বন্ধুর বাড়িতে সবটা সামাল দতে হবে তো।যদি কোনো ভাবে তার বন্ধুর বাড়িতে ফোন করে জেনে যায় কেউ যে সে ছিলো কোনো বন্ধুর বাড়িতে।আর নিজের বাড়ি যাওয়ার আগে নিশার জন্য ফুচকাও নিয়ে যাবে ঠিক করলো।

এদিকে অনিলা বাড়ি পৌঁছে তো অবাক হয়ে যায়।তার বাবা তার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সে বাবা কে দেখে কি রকম রিয়েকশন দেবে ভেব পাচ্ছে না।তার বাবা এসেছে আর না জানি কতক্ষন থেকে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে।বাড়িতে কারোর কিছু হয়নি তো।না হলে সকাল সকাল এভাবে তার বাবা এখানে কেন।

বাবা তুমি কখন এসেছো।বাড়িতে সবাই ঠিক আছে তো।

আলিফ হোসেন নিজের মেয়ের গলা পেয়ে ছুটে এলেন।অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,

অনি মা তুমি ঠিক আছো তো।কাল রাত থেকে
তোমাকে আমরা ফোনে পায়নি।চিন্তায় চিন্তায় তোমার মা তো শেষ হয়ে যাচ্ছে।

অনিলা নিজের ফোন হাতরে বের করলো পার্স থেকে।দেখলো নিজের ফোন টা এখন বন্ধ। ইশরে কাল কে রাতে তো বাড়িতে ফোন ও করা হয়নি।এরকম ভুল সে কি করে করলো।অনুতপ্ত হয়ে সে তার বাবাকে বলে,

বাবা চিন্তা করো না আমি ঠিক আছি।কাল রাতে ফোন করতে ভুলে গেছিলাম।তুমি ভেতরে আসো আমি বলছি।

দরজা আনলক করলো অনিলা।আলিফ হোসেন ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন,

তুমি তো কখনো এমন করো না অনি।কাল কি এমন হলো যে ফোন করতে ভুলে গেলে।আরও আমি এসে দেখি তুমি নেই ফ্ল্যাট এ।
আমার চিন্তা বেরে গেছিলো।তারপর দারোয়ান এর থেকে জানতে পারলাম তুমি বাইরে গেছো।

অনিলা আলিফ হোসেন কে জড়িয়ে ধরলো
তারপর আফসোস এর স্বরে ব’লে,

স্যরি বাবা আর কক্ষনো হবে না এমন। আসলে আমি কাল কে ফোন করতে ভুলে গেছিলাম। ক্লান্ত ছিলাম তাই ঘুমিয়ে গেছিলাম।তুমি চিন্তা করো না।মাকে ফোন করে বলে দাও আমি একদম ঠিক আছি।কাল রাতের জ্বর এর কথা কিছুই বললো না অনিলা তার বাবাকে চিন্তা করবেন ভেবে।

আলিফ হোসেন নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।এতক্ষণে যেনো তার জানে পানি এলো।

তুমি কি করে বুঝবে গো মা।আমরা তোমার বাবা মা তোমার বোন তোমার জন্য কতটা চিন্তা করি।

অনিলা আদুরে কন্ঠে বললো, আমি জানি তো বাবা।তোমরাই তো আমার সব।মা বুবু কেমন আছে।আর দেখো তোমার মেয়ে কত্তো বড় হয়ে গেছে।এখন সে আর ছোট্ট নেই বুঝেছো।তুমি যাও আমার রুমে গিয়ে স্ট্রুয়ার্ট এর সাথে একটু কথা বলো আমি তোমার জন্য কফি করে আনছি।

সবাই ঠিক আছে মা।আর আমার এক্ষুনি কফি লাগছে না।তুমি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও।তোমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো আমি আজ।

অনিলা দাঁড়িয়ে পরলো বাবার কথায়।তাকে নিয়ে যেতে চাইছে তার বাবা।কিন্তু তার তো ছুটি নেওয়া হয়নি এখনো ভার্সিটি থেকে।

বাবা আমি দু দিন পরে যায় না।আমার ভার্সিটি থেকে ছুটি চেয়ে দরখাস্ত লিখতে হবে।তারপর ছুটি মঞ্জুর হলে যাবো।

আলিফ হোসেন মেয়ের কথায় কিছু বললেন না।তিনি পড়াশোনার ব্যাপারে খুব স্ট্রিক্ট। তবে তিনি কখনোই নিজের মেয়েদের উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন নি।আজও দেবেন না।তিনি তার মেয়েদের কে খুব ভালো ভাবে শিক্ষা দিয়েছেন।তিনি যেমন নিজের মেয়েদের উপর নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন না।তেমনি তিনি এটাও জানেন তার মেয়েরাও তার কোনো সিদ্ধান্তের ওপর কথা বলবে না।

অনিলা কফি করতে কিচেনে গেলো।আর আলিফ হোসেন অনিলার রুমে এসে স্ট্রুয়ার্ট এর কাছে যেতে উদ্যত হলেন।তিনি মেয়ের রুমে ঢুকতেই লক্ষ্য করলেন বেড সাইডের পাশেই একটা বাটিতে পানি আর রুমাল রাখা।আলিফ হোসেন কিঞ্চিৎ অবাক হলেন।তারপর হঠাৎ তার চোখ পরলো একটা শার্ট এর দিকে।সাদা শার্ট।এটা দেখে তার অভিব্যক্তি একদম বদলে গেলো।এটাতো ছেলেদের শার্ট।এটা তার মেয়ের ঘরে কি করে।তাহলে কি,,নাহ নাহ, না জেনে তিনি এরকম অন্যায় পাপের কথা ভাবতেই পারেন না।কিন্তু কাল রাতে অনি ফোন করে নি। সকালেও ফোন করে নি।এসব কিছু তাকে ভাবাচ্ছে খুব।

অনিলা কফি করে এনে বলে,

বাবা তোমার কফ,,,পুরো কথা শেষ করার আগেই সে তার বাবাকে ভালো করে দেখলো।তার বাবাকে কেমন যেনো লাগছে।কেমন অন্য রকম।এই মুহুর্তে সে তার বাবার এই মুখের ঠিক প্রশংসা করতে পারলো না।কেমন ভয় হচ্ছে তার এই রুপ দেখে যা সে এর আগে কখনোই দেখে নি।

আলিফ হোসেন স্পষ্ট ভাবে গম্ভীর গলায় বললেন,

অনি তোমার ঘরে পুরুষ মানুষ এর শার্ট এলো কিভাবে?

অনিলা থতমত খেয়ে গেলো বাবার এরকম প্রশ্নে।তার বাবা খুবই বিচক্ষন মানুষ।তিনি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতেই পছন্দ করে।কিন্তু আজ যেনো মনে হচ্ছে তিনি খুব রেগে গেছেন।এখন কিভাবে সামাল দেবে সে।এই শার্ট টা সরাতে কি করে ভুলে গেলো সে।

আ-আ-আসলে বাবা ওটা আ-আমার ই।আমি
কিনেছিলাম।আমি-অনিলা আর কিছু বলার আগেই স্ট্রুয়ার্ট বলে উঠলো,

শার্ট, শার্ট, ছেলেটার!ছেলেটার!

আলিফ হোসেন বিক্ষিপ্ত হয়ে তাকালো স্ট্রুয়ার্ট এর দিকে।কি বলছে এসব স্ট্রুয়ার্ট।তিনি ক্রুদ্ধ ভাবে প্রশ্ন ছুড়লেন,

কোন ছেলে অনিলা।স্ট্রুয়ার্ট কার কথা বলছে।

এখন অনিলা কি বলবে।চোখের কোণে জল চিকচিক করছে।তার বাবা যদি তাকে ভুল বুঝে তাহলে কি করবে সে।আর স্ট্রুয়ার্ট এর উপর খুব রাগ হচ্ছে।কথা বলা শিখিয়ে এখন তার ই বিপদ হলো।যদি এখন তার বাবা তাকে না বুঝে অন্য কিছু ভেবে বসে।কিভাবে মুখ দেখাবে নিজের বাবাকে।অনিলা মাথা নিচু করে ফেললো।তার বাবা তাকে কখনোই অনিলা বলে না।আজকে প্রথম বার অনি থেকে অনিলা বললো।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।

আলিফ হোসেন গলার স্বর উদ্ধৃত করলেন,

কি হলো অনিলা।বলো কোন ছেলে।এসব তোমার কাছ থেকে আসা করিনি আমি।আমি তো তোমাকে মাথা নিচু করতে শেখায় নি।তাহলে আজ মাথা নিচু কেন তোমার।তার মানে কি নিশ্চয়ই তুমি কোনো অন্যায় করেছো।

অনিলা বাবার কথায় মাথা উচু করলো।সে তো কোনো অন্যায় করেনি।তবে সে কেন মাথা নিচু করে রেখেছে।সে সত্যিটা বলার জন্য সাহস করলো।এবং সাহসের সহিতে বলে,

না বাবা আমি তোমার মেয়ে।আমি অন্যায় করতেই পারি না।ওই শার্ট আমার বন্ধু নিশার ভাই জুনইদের।

তারপর অনিলা কাল রাতের সব ঘটনা বললো তার বাবাকে।

এতো কিছু হয়ে গেছে আর তুমি আমাকে এখন বলছো।আর হ্যাঁ এখন আমি তোমাকে বিশ্বাস করলাম।তবে ভবিষ্যতে এরকম বোকার মতো কাজ আর করবে না।আশা রাখছি তুমি আমাকে পুরো সত্যিই বলেছো।কাল ই তুমি বাড়ি ফিরবে এটাই আমার শেষ কথা।আমি তোমার ভার্সিটির প্রিন্সিপাল এর সাথে কথা বলবো আজ ই।ফ্রেশ হয়ে আসো।

অনিলা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বোঝালো।তার বাবা যে তাকে বিশ্বাস করেছে এটাই অনেক।ফ্রেশ হয়ে নিলো সে।তারপর ভার্সিটিতে গেলো বাবার সঙ্গে।আলিফ হোসেন কথা বললেন প্রিন্সিপালের সাথে।তার অনিলাকে রেখে চলে এলেন নিজের বাড়িতে।অনিলা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো সবকিছুর জন্য।

#চলবে

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ৯
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

তখন দ্বিপ্রহর।স্বচ্ছ কাঁচের ন্যায় রোদ গড়িয়ে পড়ছে অন্দরে। নীরদবরণে চোখ ঝলসানো রোদ্দুর খেলা করছে আপন মনে।চড়ুইপাখির কলরব, শালিকের জুটি গুঞ্জন তুলছে এদিক-সেদিক।হালকা গরমেও অতিষ্ঠ লাগছে জুনইদের।ঘার্মাক্ত অবস্থায়ও কি যে সুদর্শন লাগছে তাকে।এই সুদর্শন যুবককে এই মুহুর্তে যেকোনো নারীর নজর কাড়য়ে বাধ্য।যেকোনো নারী তার সান্নিধ্য একবার লাভ করতে চাইবে।শুরু করতে চাইবে নতুন প্রনয়নের।বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল চাপলো জুনইদ।মিনিট দুই পরে নিশা এসে দরজা খুলে দিলো।নিশা জুনইদকে দেখে তো অবাক।এটা কি তারই ভাই সে হাক ছেড়ে ডাকলো তার মাকে,

“ও মা দেখে যাও তো একে দেখতে ভাইয়ার মতো লাগছে না।দেখে যাও তো প্রানী টাকে ভালো করে।আমার ভাইয়া জুনইদ ই তো”

শান্তা বেগম এসে বললেন,”দেখে তো সেরকম ই মনে হচ্ছে ”

জুনইদ শাহাদাত আঙুল দিয়ে চোখ সরু করে কপাল চুলকে বলে,” উফ মা তোমরা এসব কি শুরু করেছো বলো তো”এই নিশাপুরের সঙ্গে থেকে থেকে মনে হচ্ছে তোমার মাথাটাও গেছে।

আসলে জুনইদ কে কালারিং শার্টে দেখে নিশা আর শান্তা বেগম একদম অবাক হয়ে গেছে।যে ছেলেকে ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট শার্ট ছাড়া অন্য কালারের শার্ট পরতে এই পর্যন্ত দেখে নি তার কি না এক রাতের মধ্যে এতো বদল।

জুনইদ ভেতরে আসতে আসতে বলে,”তোমরা এভাবে ভুত দেখার মতো করে তাকিয়ে আছো কেন”

শান্তা বেগম রোষানল গলায় বললেন, তা এতো পরিবর্তন এক রাতের মধ্যে কিভাবে সহ্য করি বলো তো বাছা।

নিশা এগিয়ে এসে বলে, সূর্য যদি পশ্চিম দিকে উঠে অবাক না হয়ে কি করবো ভাইয়া।

ধুর কি বলছিস ক্লিয়ারলি বল তো।জুনইদ কিছুটা রেগে বলে উঠলো।

শান্তা বেগম বললেন, না বাবা কিছু বলছি না।যাহ ফ্রেশ হয়ে আয় আমি লাঞ্চ রেডি করছি।

হুম বলে জুনইদ ফুচকার প্যাকেট টা নিশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে উপরে চলে গেলো। মেজাজ টা বেশ ফুরফুরে লাগছে জুনইদের।ঘরে গিয়ে আনমনা হয়ে শার্ট টা খুলে বেডে রাখতেই বুঝে যায় ওর মা আর নিশার বলা কথার মানে।

হঠাৎ নিশা এসে গলা টা একটু ঝেড়ে উঠলো,

জুনইদ একবার তাকিয়ে নিজের জুতো খোলায় মনোযোগ দিলো, “কি খবর আমার রুমে তুই”

নিশা দুই হাত পেছনে মুড়ে রেখে বলে “কিছু একটা ভাবছি”

কি এমন ভাবছিস যেটা তোর আমার রুমে এসে ভাবতে হচ্ছে।

“হুম গভীর চিন্তার বিষয়।এতো করে শকড দিলে হার্ট এটাক তো করেই ফেলবো আমরা।দেখে তো মনে হচ্ছে তুমি প্রেমে পরেছো।তা এতো তারাতাড়ি তোমার কপালের খাড়া নামক ফাড়া টাকে কিভাবে কাটালে শুনি।নিশার কন্ঠঃ ব্যাঙ্গাত্মক শোনালো”

ওওওও এই কথা।জুনইদ ঠোঁট গোল করে বললো।

হ্যাঁ এই কথাই এবার বলো কার কপাল টা পুরলো শুনি।

যাহ তো জ্বালাবি না একদম।বেশি পেকেছিস একেবারে।বড় ভাইকে এসব জিজ্ঞেস করছিস দাড়া তোর হচ্ছে।

আরে যাচ্ছি যাচ্ছি।বাট ওয়ান মোর কুয়েশ্চন?

হুম বলে ফেল কি কুয়েশ্চন।জুনইদ প্রশ্নাত্মক চোখে তাকিয়ে রইলো।

নিশা জুনইদের দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

তুমি গেলে হোয়াইট শার্ট পরে আর এলে কালারফুল শার্টে ব্যাপার টা কি বলো তো।শুধু জামা কাপড়ে নয় মনেও রঙ ধরেছে মনে হচ্ছে হ্যাঁ?

এবার নিশার কান টা ধরে জুনইদ বললো,”আরও দেখবি রঙ”

উফফ ভাইয়া ছাড়ো লাগছে তো।

জুনইদ অবসন্ন কন্ঠে বললো, “ওকে ওকে নে ছেড়ে দিলাম”

বাহ আজ বলতে না বলতেই আমার ভাইয়া ছেড়ে দিলো।কিছু তো ব্যাপার আছে।কি ব্যাপার বলো তো এই শার্ট টা কে গিফট করলো তোমাকে?

মিস সুনামি গিফট করেছে শার্ট টা।এবার শান্তি যাহ তো এবার যাহ।জুনইদ নৈঃশব্দে হাসলো অনিলার কথা ভেবে।

নিশা সুযোগ পেয়ে বলে, “বাব্বাহ ভাইয়া তলে তলে তাহলে এতো।তুমি তো পুরো খিলারি হ’য়ে গেছো।আমি তো তোমার ওই মিস সুনামিকে পরে দেখে নেবো।আগে ট্রিট দিবা তারপর বাকি কথা”

জুনইদ গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,

ওকে ওকে যাহ কাল ই তোকে ট্রিট দেবো যাহ।

নিশার চোখ যেনো কোনো ট্রিকস খেলছে।খুশিতে গদগদ হয়ে গেলো সে,

আরেব্বাস একে যা বলছি তাই মেনে নিচ্ছে।আজ তো আমার লটারি লেগে গেলো।আহারে আমার বান্ধবী রে তুই একটু আগে আসতে পারলি না এই গাম্বাট টার কপালে।

ওকে ওকে এবার যাহ।কাল সন্ধ্যায় রেডি থাকিস।তকে ট্রিট দিচ্ছি।

হুম তাই তো বলি কার এতো ক্ষমতা আমার ভাইয়া কে কালার ফুল শার্ট পরাবে।তোমাকে দেখছি আমার বেস্টুই সোজা করতে পারবে।কথা শেষ করেই নিশা মুখ ভেংচিয়ে চলে গেলো।

সাঁঝ নেমেছে পশ্চিমাকাশে। কমলাটে নীরদদেশে ছেঁয়ে পড়েছে কালচে আঁধার। বাতাবরণ নিরুত্তাপ, নিরুপম। রাতে ডিনার শেষ করে জুনইদ রুমে শুয়ে আছে।আর আজকের সুন্দর দিন টার কথা ভাবছে।কাল রাত আর সারাদিন এর সব টা ভেবেই ভালো লাগছে তার।সেকি ভেবেছিলো এতো তারাতাড়ি এতো কিছু হয়ে যাবে।এভাবে বদলে যাবে সব কিছু।ভাবতেই অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। আচ্ছা এই অনুভূতির কি নাম দেবে সে।সে নিজেও জানে না এতো কেন মনে পরছে মেয়েটার কথা।জুনইদ শুয়ে শুয়ে অনিলার কথা ভাবছে।চোখে ঘুম নেই।জুনইদ অনিলা কে ফোন টা করতে গিয়েও পারছে না।অনিলা কি না কি ভাববে সেটা ভেবেই।ভাবতে ভাবতে নিজের মনের সঙ্গে একপ্রকার যুদ্ধ করে কল টা করেই ফেললো।

এদিকে অনিলা স্ট্রুয়ার্ট কে ইচ্ছে মতো বকেছে দুপুরে।বাবার সামনে ছেলেটা বলার কি খুব দরকার ছিলো।তাকে এভাবে ফাসিয়ে দিলো তার বাবার কাছে।এখন সেই জের ধরে এখনো অব্দি একটা দানাও মুখে তোলে নি স্ট্রুয়ার্ট।অনিলা ব্যস্ত স্ট্রুয়ার্ট এর মান ভাঙ্গাতে।এক সময় স্ট্রুয়ার্ট এর রাগ পরলে তাকে সূর্যমুখী ফুলের বীজ খাওয়াচ্ছিলো।আঙ্গুর নিয়ে মুখে দেবে ঠিক সেই সময় ওর ফোন টা বেজে উঠলো।ফোনের কৃত্রিম স্ক্রিনে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট নাম টা জ্বলজ্বল করছে।অজান্তেই এক চিলতে হাসি এসে ভড় করলো তার অধর যুগলে।সে সঙ্গে সঙ্গে ই ফোন টা রিসিভ না করে কয়েকবার বাজতে দিলো।যাতে জুনইদ বুঝতে না পারে অনিলা তার ফোনের জন্য একটু হলেও অপেক্ষা করছিলো।লাস্ট তিন বারের বার ফোন টা তুললো অনিলা,

“হ্যালো”

কিয়ৎক্ষন চুপ করে রইলো জুনইদ।তার নিঃশ্বাস প্রঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে অনিলা।জুনইদ কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলে , “ডিনার করেছো”?

অনিলা নিশব্দে হাসলো।”হুম আপনার হয়েছে ডিনার করা”

হ্যাঁ আমিও করেছি।জুনইদ বলে উঠলো।

তারপর আবারও দুজনেই নিশ্চুপ।

জুনইদ ভাবছে অনিলা হইতো বিরক্ত বোধ করছে তাই এভাবে চুপ করে আছে।তাই সে নিরবতা ভঙ্গ করে জিজ্ঞেস করলো, “মেডিসিন নিয়েছো”

অনিলা অনুদ্ধত কন্ঠে বললো,”হুম নিয়েছি”

জ্বর কমেছে?

“হুম কমেছে”

এখন কেমন লাগছে?

এখন ঠিক আছি।

হুম ঠিক তো হতেই হবে।

মানেহ

কুছ নেহি।স্পষ্ট জবাব জুনইদের।

কুছ নেহি মানে টা কি।কিছু তো বললেন?

কুছ নেহি কা মাতলাব কিতনা কুছ হে আব তুমহে কেসে সামঝায়ু মিস সুনামি।জুনইদের মনের ভাবনার স্মারক যদি অনিলা ধরতে পেতো তাহলে এই কথাটা আর জিজ্ঞেস কর‍তো না সে।জুনইদ একটা শ্বাস ছেড়ে বলে,

মানেহ হলো সুস্থ তো হতেই হবে।তাই না।না হলে কি আর চলবে।

দুজনের ই মনে এখন কিছু চলছে।হইতো দুজন দুজন কে অনেক কিছু বলতে চাই কিন্তু কেউই কাউকে কিছু বলতে পারছে না।অনিলা আর কিছু বলছে না দেখে জুনইদ বলে উঠলো,

ওকে গুড নাইট এন্ড সুইট ড্রিমস।ঘুমিয়ে পরো।

হুম।আপনি কি কিছু ভুলে গেছেন? অনিলা প্রশ্ন করলো।

জুনইদ ফোন কাটতে গিয়ে থামলো।এক প্রত্যাশা ময় কন্ঠে বললো,

কি ভুলে গেছি মিস সুনামি।

মিস সুনামি শুনেই অনিলা হাসলো।এই কথাটাই সে শুনতে চাচ্ছিলো।জুনইদ কি তার মনের কথা বুঝে ফেলেছে নাকি।অনিলা হালকা ঠোঁট বেকিয়ে হাসলো।আপ্লুত হলো মন।হৃদয়ে সঞ্চার হলো কিছু সুন্দর মুহুর্ত।এই অদ্ভুত মুহুর্তটা না ভালো লাগছে না খারাপ।আর সে এই অনুভুতি কাটাতে চাইছে না মনের সর্বনাশ হবে ভেবেও সে পুষে রাখতে চাইলো কেন যেনো।

কিছু না।আচ্ছা আপনিও ঘুমান।অনিলা আর কথা বারাতে চাইলো না।কারণ সে যেটা শুনতে চেয়েছিলো তা শোনা হয়ে গেছে।

জুনইদ শব্দহীন হেসে ফোন টা রেখে দিলো।যদিও তার মন চাইছিলো না কল টা ডিসকানেকট করতে।কিন্তু তাও ফোন টা রেখে দিলো।

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।