সম্মোহনী সেই মেয়েটি পর্ব-১০+১১

0
490

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে নিশা তার মাকে বলে, “মা তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।”

শান্তা বেগম টেবিল সাজাতে সাজাতে উত্তর দেন,”কি বলবি বল?”

নিশা প্রত্যাশিত গলায় বললো,”একটা ব্যপারে তোমার পারমিশন চাই।”

এর মধ্যে জুনইদ ব্রেকফাস্ট টেবিলে এসে পরে।সে ব্যঙ্গাত্মক কন্ঠে বললো, “এই নিশাপুর তুই আবার এতো ফর্মালিটি কবে থেকে শিখলি রে”.

নিশা স্বপ্তপর্নে বলে উঠলো, “জানি না”।

আলতাফ আহমেদ খেতে খেতে জিজ্ঞেস করলো, তা নিশা তুই কি যেনো বলতে চাইছিলি?

নিশা উত্তর দিলো, কিছু না কাকু।এখন থাক না পরে বলবো আমি।

জুনইদ বলে উঠলো, বুঝেছি আমার পিছনে লাগার কোনো মতলব কশছিলি নিশ্চয়ই।

নিশা মিচকে হেসে বললো, “আমি পিছনে লাগি না লাগলে সামনেই লাগি”

রমিজ আহমেদ জুনইদকে বলেন, তা তোমার কলেজ কেমন চলছে জুনইদ?

জুনইদ খাবার মুখে নিয়েই বলে, ভালো বাবা।

খাবার মুখে দিয়ে কথা বলা এটা কোন ধরনের স্বভাব জুনইদ।

ওকে বাবা আর হবে না।জুনইদ উত্তর দিলো।

তা আমাদের বিজনেস নিয়ে কি ভাবলে।কতবার বলেছি ইঞ্জিনিয়ারিং করো না।আমাদের এতো বড় ব্যবসা তুমি ছাড়া কে সামলাবে বলো তো।

কেন বাবা কাকু আছেন তো তোমার সাথে।কাকু সামলে নেবেন।আর আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি বাবা আমার বিজনেসের ফিন্যান্স সম্পর্কে আগ্রহ নেই।সো না বললেই খুশি হবো।কথা গুলো বলেই জুনইদ টেবিল ছেড়ে উঠে গেলো।

আলতাফ আহমেদ তার ভাইকে বললেন, খাওয়ার সময় কেন যে বলেন এসব বড় ভাই।ছেলেটা খেতেও পারলো না ঠিক করে।ইঞ্জিনিয়ারিং টা শেষ হোক এমনি বসবে বিজনেস এ।

রমিজ আহমেদ কিছুই বললেন না।চুপচাপ খাওয়া শেষ করলেন।বরাবরই তার ইচ্ছে ছিলো জুনইদ কে তার বিজনেস এর সব দায়িত্ব দেবেন।কিন্তু ছেলেটা বিজনেসটা সহ্যই করতে পারে না।

এর মধ্যে শান্তা বেগম আর নিশা কিছুই বলতে পারলো না।কারণ এখন কথা বলা মানেই রমিজ আহমেদ রেগে যাবেন।তাই চুপচাপ সব টা শুনলো শুধু।জুনইদ এর বাবা কাকা অফিস বেরিয়ে গেলেন।জুনইদ নিজের রুমে চলে এলো।

তখনই নিশা জুনইদের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, “মে আই কাম ইন ভাইয়া?”

জুনইদ ঠাট্টার ছলে বলে উঠলো, তুই কি ম্যানার্স গুলে খেয়ে নিয়েছিস নাকি।

ওমা কেন।অবাক হওয়ার ভান ধরে বলে নিশা।

আজ কাল তোর মধ্যে এতো ম্যানার্স আসছে
ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছি।

না মানে আগে থেকেই অভ্যাস করছি আর কি।এবার থেকে তো আর উইদ আউট পারমিশন এন্ট্রি করা যাবে না, নাহ।

তুই কিন্তু খুব পেকেছিস নিশাপুর।

তাহলে অভ্যাস টা বদলাবো না বলছো।নিশা ঠোঁট চেপে হাসি আটকে বললো।

“কি ধান্দায় আসছিস সেটা বল কথা না ঘুরিয়ে?” মাথায় চড়ে বসিস না আবার। জুনইদ অলস ভঙ্গিতে বললো।

“ভাইয়া তোমার ফোন টা একটু দাও না।”

এইতো লাইনে আয়।ওতো ভালো মানুষি মানায় না রে তোকে।তা আমার ফোনে কি করবি তোর ফোন কই?

আমি বলছি তোমার ফোন টা দিতে?আমার ফোনের কিছু হয়েছে এটা কি আমি বলছি।বেশি কথা না বলে তোমার ফোন টা দাও তো।নিশা হাত পাতলো জুনইদের সামনে।

জুনইদ ভাব নিয়ে বলে, “আর যদি না দেই তো”

পরে আফসোস করো না ভালোর জন্যই বলছি।

জুনইদ ভাবলো আজকাল বোন টা সাপোর্ট ও করছে।আবার বলছে আফসোস ও করবো। যাক গে ফোন টা দেওয়াই যাক।জুনইদ কথা না বাড়িয়ে ফোন টা আনলক করে এগিয়ে দিলো নিশার দিকে।নিশা ফোন পেতেই ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।ফোন নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।কাউকে একটা ফোন করে আবার জুনইদকে ফেরত ও দিয়ে গেলো ফোন টা।


সন্ধ্যা বেলা।নিশা চললো জুনইদের ঘরে।গিয়ে বললো,

ভাইয়া আজকে তো ট্রিট দেওয়ার কথা ছিলো।মনে আছে তো?

জুনইদ তেছড়া ভাবে উত্তর দিলো,”আর মনে না থাকলে?”

নিশা আঙ্গুলে উড়না পেচাতে পেচাতে বলে,
“তোমার ই লস ভাইয়া।আমার আর কি বলো।

এই ব্যাপার টা কি হ্যাঁ। কাল থেকে আমাকে জালাচ্ছিস।কাল থেকে দেখছি আমিই আফসোস করবো। আমার ই লস হবে।কি গন্ডগোল পাকাচ্ছিস রে তুই।

সেটা না হয় গেলেই জানতে পারবে ভাইয়া।

ওকে যাহ তো দশ মিনিটে রেডি হয়ে আসবি।আটা ময়দা মাখার জন্য কিন্তু এক্সট্রা টাইম দিতে পারবো না।

হুম দেখবো দেখবো আটা ময়দার জন্য টাইম দেও কি না।তখন হবে তোমার।

নিশার কথা শুনে জুনইদ মুচকি হাসলো।নিশা চলে গেলো রেডি হতে।জুনইদ একটা প্লেন টি-শার্ট আর নরমাল জিন্স পরে নিলো।ও-ই ই দায়সাড়া ভাব আর কি।রেডি হয়ে নিচে গিয়ে নিজর মাকে বললো,

মা তোমার ময়দা মামুনি কে বলো জলদি নিচে নামতে।আমি কিন্তু বেশিক্ষন ওয়েট করতে পারবো না।

শান্তা বেগম বললেন, হ্যাঁ হ্যাঁ ডাকছি।

শান্তা বেগম মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন ছেলেকে দেখে।জুনইদ ব্যাপার টা লক্ষ্য করলেও এরকম ভাবে হাসার কি কারণ হতে পারে সেটা ধরতে পারলো না।তাই আর কিছু বললো না।

নিশা নিচে এসে বলে উঠলো, ভাইয়া তুমি এটা কি হ্যাংলা মার্কা লুক দিয়েছো শুনি।একটুও স্টাইল করতে পারলে না এখন।অন্য সময় তো হিরো লুক দিতে পারো খুব।

জুনইদের মা নিশার কথা শুনে হেসে ফেললেন,”ওতেই হবে মা।তুই চিন্তা করিস না।এমনিতেও চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।আমার ছেলে সাজ গোজ না করলেও পছন্দ হয়ে যাবে।

জুনইদ এসব কথার মানে কিছুই বুঝতে পারছে না, এক মিনিট, এক মিনিট মা কিসের পছন্দের কথা হচ্ছে মা।আর এই নিশাপুর কে আমি নিয়ে যাচ্ছি এটাই অনেক।ওর সঙ্গে যেতে আবার আমাকে সাজু গুজু করতে হবে নাকি মেয়েদের মতো।

এমনি কিছু না বাবা।যাহ তোরা দেরি করিস না বাবা।

নিশা চোখ কোণা করে বললো, “ভাইয়া পরে আফসোস করো না তাহলেই হবে।আমার বলার কর্তব্য তাই আমি বললাম।

ঠিক আছে ফিরে আসি তারপর না তোর পালা।তুই কত আফসোস করতে পারিস আমি দেখবো।আমার মাথা টা এবার না খেয়ে চল।

দুজনেই ওদের শান্তা বেগম কে টাটা জানিয়ে চলে গেলো।গাড়িতে যেতে যেতে নিশা বলে,ভাইয়া রেস্টুরেন্ট কিন্তু আমি ঠিক করে রেখেছি।

উত্তরে জুনইদ ব’লে, আচ্ছা তা পার্টনার টাও নিজে ঠিক করে রাখলেই পারতিস।শুধু শুধু আমাকে না টানলেও তো হতো।

হুম পার্টনার তো ঠিক করেই রেখেছি রে ভাইয়া।

মানেহ কিসের পার্টনার?

থাক ভাইয়া।আর গভীরে না যাওয়ায় ভালো।সময় এলেই বুঝবে সব।

তুই তো দেখছি আমার মাথাটা খারাপ করেই দিবি আজ।সেই বাড়ি থেকেই নোটিস করছি মা আর তোর সাস্পেন্সিভ কথাবার্তা।ব্যাপার টা কি রে? জুনইদ ড্রাইভিং এ মনোযোগ রেখেই বললো।

নিশার বলা রেস্টুরেন্টে পৌঁছে নিশাকে জুনইদ গাড়ি পার্ক করে চলে এলো নিশার কাছে।তারপর নিশা বললো, ভাইয়া তুমি ভেতরে গিয়ে বসো আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।জুনইদ ও কিছু না বলে ভেতরে গেলো।ভেতরে ঢুকেই একটা বড়সড়ো ঝটকা খেলো।এটা সে কি দেখছে।সামনেই একটা টেবিলে একজন মানুষ কে বসে থাকতে দেখে জুনইদ তো রীতিমতো শকড।সে আর কেউ নয় অনিলা বসে আছে।জুনইদ অনিলার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

“হ্যালো মিস সুনামি।তুমি এখানে?”

অনিলা যেনো আকাশ থেকে পরলো।সেও অবাক হয়েই বলে, “হাই আপনি এখানে?”একি প্রশ্ন তো আমার ও।

কেন আসতে পারি না বুঝি?

আমি সেটা মীন করিনি।

ওকে বসুন আপনি।

না না এখানে হইতো তুমি কারোর জন্য ওয়েট করছো সে চলে এলে অসুবিধা হবে তোমার।

আসলে অনিলা এখানে কার সাথে দেখা করতে এসেছে সেটা খুব জানতে ইচ্ছে করছে জুনইদের।কিন্তু কিভাবে জিজ্ঞেস করবে সেটাই ভেবে পেলো না।

আসলেও কোনো সমস্যা হবে না মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট।ওই তো চলে এসেছে ও।

জুনইদ সেদিকে না তাকিয়েই বলে উঠলো, ঠিক আছে চলে এসেছে যখন তখন কথা বলো আমি আসছি।কথা শেষ করেই চলে যাচ্ছিলো জুনইদ।

নিশা পেছন থেকে বলে উঠলো, ঠিক আছে ভাইয়া তাহলে আমরা বসে গল্প করছি তুমি যাও”!

জুনইদ ফট করে পেছন ঘুরে তাকালো,”মানেহ টা কি?”

মানেহ তুমি না চাইলে এখানে বসতে জোর করবো না।তুমি যেতে পারো।

আসলে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট নিশা আমাকে এখানে ডেকেছে।কিন্তু কেন ডেকেছে সেটা জানি না।আপনি আসবেন সেটাও আমি জানতাম না।

জুনইদ ওর কাছে এখন পুরো টা ক্লিয়ার হয়ে যায়।এটা আসলে নিশার ই প্ল্যান।তার জন্যই বার বার আফসোস আফসোস এই কথাটা ব্যবহার করছিলো।এভাবে নিশা ওঁকে এখানে না বলে নিয়ে আসার জন্য রাগ করবে নাকি অনিলাকে এনেছে বলে খুশি হবে সেটা বুঝে উঠতে পারছে না জুনইদ।

নিশা গলা পরিষ্কার করে বলে, কি গো ভাইয়া। তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে পুরো চারশো চল্লিশ ভোল্টের শকড খেয়েছো।

অনিলাও মুখ টিপে হাসছে।জুনইদ কে এভাবে বোকা বানিয়েছে ভেবে।

জুনইদ বলে, তা এই প্ল্যানিং টা কখন করলি এই কেনই বা করলি।

ওকে তাহলে খুলে বলি পুরো টা।সকালে ব্রেকফাস্ট টেবিলে মাকে তো এই কথাটাই বলতে চেয়েছিলাম মাঝ খানে তো তুমি চলে এলে।পরে আমি মাকে সব টা বলি।আর মাকে তোমাকে কিছু জানাতে বারন করি।তাই মাও কিছু জানাইনি।

জুনইদ হালকা রেগে বলে উঠলো, তা আমার সামনে বললে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো শুনি।

তাহলে কি আর এটা সারপ্রাইজ থাকতো রে ভাইয়া।আর অনিলাকে তোমার ফোন থেকেই কল করেছিলাম।আমার ফোনে ব্যালান্সও ছিলো না জন্য।

ওরেহ শাকচুন্নী তোর এভাবে ডাকাতে আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম সেটা কি তোর বোধগম্য হয়নি।আমি আরও ভাবলাম সিরিয়াস কিছু হয়েছে নাকি।তোকে তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি।অনিলা নিশার দিকে তাকিয়ে খানিকটা তেজি কন্ঠে বললো।

নিশা বললো, ওকে ওকে দেখে নিস।আপাতত আমাকে না দেখে আশেপাশের মানুষ জনকে দেখ।

অনিলা বিক্ষুব্ধ নয়নে তাকালো নিশার দিকে।অনিলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশা বলে উঠলো,

আচ্ছা তোরা তাহলে একটু বোস আমি একটু আসছি।

কেন তোর আবার কি হলো রে নিশা।অনিলা চোখ সরু করে বললো।

আরে তোরা বোস আমি এখানে আমার একজন বন্ধুকে ডেকেছি কিছু নোটস নিতে হবে ওর থেকে।তুই ও তো ভার্সিটিতে যাস নি আমিও যায় নি।তাই ওর থেকে নিবো।

অনিলা বললো ওকে তাহলে যাহ।

নিশা যেতেই জুনইদ একটা চেয়ার টেনে অনিলার সামনে বসলো।সে ভাবছে নিশার কথা না শুনে সত্যিই আফসোস করতে হচ্ছে।এখন কি একটা ক্যাবলা মার্কা লুক নিয়ে চলে এসেছে।

অনিলা একটা লং ব্ল্যাক কুর্তির সঙ্গে হালকা স্টিল কালারের পালাজো পরেছে।কানে দুটো বড় বড় দুল।চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। এমনি তে লিপস্টিক সে পরে না।কিন্তু নিশাই বলেছে সে যেন আজ একটু লিপস্টিক পরে।মোটামুটি সাধারণ সাজেই এসেছে কিন্তু তাতেও জুনইদ অনিলার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে একটু লজ্জা পেলো সে।

জুনইদ এক ভাবে তাকিয়ে আছে অনিলার দিকে।আসলে প্রেমিক হৃদয়ের চোখে তার হৃদয়মোহিনী সর্বদাই অনন্য।সে হোক না রাজকুমারীর বেশে বা ফুল ছাড়া খোলা কেশে।

#চলবে

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃ রাদিয়াহ রাফা রুহি

“তো আপনি কি ভেবেছিলেন আমি কার সাথে দেখা করতে এসেছি?”

জুনইদ অস্বস্তিতে চোখের পলক ঝাপটালো।নিজেকে সামলে ফিচেল হেসে বললো,”কই আমি এরম কিছু ভাবি নি তো”

“ওহ রিয়েলি কিছুই ভাবেন নি আপনি।ঠোঁট কামড়ে হাসলো অনিলা।”

অনিলাকে হাসতে দেখে জুনইদ ও নৈঃশ্যব্দে হাসলো।আড়ষ্ট ভাব এনে বলে উঠলো,”ইয়াহ আমি কিছুই ভাবি নি।এভাবে হাসার কি হলো বুঝলাম না?”

নাহ মানে আমার তো মনে হয়েছিলো আপনি অন্য কিছু ভাবছিলেন মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট।

জুনইদ কপট রেগে গেলো।আক্ষেপের সহিতে বলে, “এই তুমি আমাকে মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট একদম বলবে না।আমার কত্তো সুন্দর একটা নাম আছে বুঝেছো!এই আইমান জুনইদ কে কেউ এভাবে ট্রীট করে নি জানো তুমি।”

অনিলা গলায় তিরস্কার স্বর এনে টেনে টেনে ঠোঁট গোল করে বলে, “ওওওও হো হো আপনি যখন আমাকে মিস সুনামি বলেন তার বেলা,তখন কিছু হয় না তাই না।আমি বললেই দোষ তাই না।”আমার ও একটা সুন্দর নাম আছে ইশতেহার অনিলা!”

জুনইদ গা ছাড়া ভাব নিয়ে তেছড়া ভাবে বলে উঠলো,”আমি বলবো কিন্তু আপনি বলবেন না।”

অনিলা চোখ সরু করে জুনইদের দিকে হালকা একটু ঝুকে ব’লে,”উহু মগের মুল্লুক নাকি,সখ কত।আপনি ডাকলে আমিও ডাকবো।তার আগে সত্যি করে বলুন তো আপনি কি ভাবছিলেন আমি কার সাথে দেখা করতে এসেছি?”

জুনইদ বলে উঠলো,”কিছুই ভাবিনি আমি ওকে।আমার বয়েই গেছে তোমাকে নিয়ে ভাবতে।”বাই দ্যা ওয়ে এটা রেস্টুরেন্ট এখানে সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে তাই দুরো সরো?

অনিলা একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অনেকেই ওদের এভাবে দেখে হাসছে মিটমিটিয়ে,অনিলা সরে এসে দমে যাওয়া গলায় বললো, “আপনি যত যায় বলুন আমি জানি আপনি অন্য কিছু ভেবেছিলেন হুহ্।”

জুনইদ ও একরোখা ভাবে বলে উঠলো, “তাহলে ধরে নেও ভাবছিলাম মিস সু….।”

অনিলা কথা শেষ করতে না দিয়ে বলে, “ভাবছিলেন ই যখন তাহলে মিথ্যা কথা বললেন কেন?”

জুনইদ স্বগতোক্তি করলো,”জানি না”

জুনইদ কে কথার প্যাঁচে ফেলতে পেরে বেশ আনন্দ হচ্ছে অনিলার সে বলে উঠলো,
“তাহলে সত্যিটা শিকার করতে শিখুন।”

জুনইদ খানিকটা বিরক্ত বোধ করে বললো,
“এই এমন জেরা করছো কেন তুমি উকিলের মতো হ্যাঁহ?”

অনিলাও গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে উঠলো, ”
প্রথমেই শিকার করলে তো আর এত্তো জিজ্ঞেস করতাম না তাই না।”

জুনইদ বিরবির করে বললো,”মনে হচ্ছে যেনো ঝগড়ার উপর পিএইচডি করেছে মেয়েটা।কথায় পারা যায় না।”

কিছু বললেন মিস্টার ল্যাম্প,

“না না কিছু বলিনি তো।জুনইদ হরবর করে উত্তর দিলো অনিলার কথা শেষ না হতেই।”এবার এই কথা শুনে আবার আরেকদফা ঝগড়া বাধিয়ে ছাড়বে এই মেয়ে।

অনিলা খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত গলায় বললো,
‘আমি আসাতে কি আপনি বিরক্ত বোধ করছেন নাকি মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট?

জুনইদ ভ্রু কুচকে অনিলার পানে তাকিয়ে বলে, “আরে এটা আবার কখন বললাম আমি।আজিব মেয়েরে বাবা।”

অনিলা মিইয়ে গিয়ে অনুদ্ধত কন্ঠে বলে,”তাহলে বিরবির করছেন কেন?”

না মানে একেবারে খালি হাতে না এসে এক গুচ্ছ ফুল আনতাম আর কি তাই।জুনইদ কথা ঘুরানোর জন্য বলে উঠলো।

ওহ আচ্ছা।মুখে এই কথা বলে মনে মনে ভাবলো, এক গুচ্ছ ফুলের থেকে আপনাকে দেখে আমি এতো খুশি হয়েছি সেটা আমি আপনাকে কি করে বুঝায় বলুন তো।

হ্যাঁ যায় হোক এখন তো কিছু করার নেই কি খাবে বলো?

এখনি অর্ডার করতে হবে না নিশা আসুক না তারপর না হয় দিয়েন অর্ডার।

নিশা এখন আসবে না আমার হয় না আসবে বলে এখন।তাছাড়া ও এলে পছন্দ মতো অর্ডার করে দেবে।কি আছে তাতে।তোমার জন্য কি অর্ডার করবো সেটা বলো।

আপনার যা ইচ্ছে।

শুধু আমার ইচ্ছে হবে কেন।তুমি বলো?

ওকে।কোল্ড কফি অর্ডার করুন।আসলে গরম লাগছে তো তাই।

শুধু কফি আর কিছু না।

না আমার আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।

ওকে,বলেই জুনইদ ওয়েটারকে ডেকে অনিলার জন্য কোল্ড কফি আর ওর জন্য কোকাকোলা অর্ডার দিতে গেলে অনিলা বাধা দিয়ে বলে,

আপনি খাবেন না কোকা-কোলা।

কেন?

আমি বলছি তাই।

ওকে খাবো না।আপনি দুটো কোল্ড কফিই নিয়ে আসুন।এয়েটার কে উদ্দেশ্য করে বললো জুনইদ।

তা না ওটা খেতে দেওয়ার কারন টা কি শুনি?

হুম অবশ্যই।ওটাতে ক্যালরি বেশি।ফিটনেস মেইনটেইন করতে হলে ওটা না খাওয়াই ভালো।তাছাড়া ওটা আমাদের ইসলাম শরিয়তেও নিষিদ্ধ আছে।

ওহ থ্যাংকস।তারপর মনে মনে ভাবলো, আমার জন্য এখনি এতো চিন্তা যাক ভালো লাগলো।

এভাবেই কথা বলতে বলতে কফি চলে এলো। কফিতে চুমুক দিতে দিতে অনিলা বলে,

“তা নিশা এখনো আসছে না কেন বলুন তো?”

“কোনো কিছু নিয়ে ডিসকাস করছে হইতো বান্ধুবীর সঙ্গে।এসে যাবে।জুনইদ কফি খেতে খেতে বলে উঠলো।”

মুখে বললেও জুনইদ ভালোই জানে যে ওর বোন এখন আসবে না।পাকা মেয়েটা চাইছে ওদের কে একটু প্রাইভেসি দিতে।কফি খেতে খেতে জুনইদ অনিলার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে বার বার।চোখে চোখ পরতেই চোখ সরিয়ে নিচ্ছে অনিলা।জুনইদের দিকে সরাসরি ভুলেও তাকাচ্ছে না।জুনইদ চেয়েছিলো এরপর যখন অনিলার সামনে যাবে তখন এক গুচ্ছ লাল গোলাপ দিয়ে অনিলার কাছে নিজের আবেগ গুলো উজাড় করে দেবে।তার মনের কথা জানাতে।একটু আগেও মেয়েটার সঙ্গে ঝগড়া করছিলো আর এখনি যেনো অস্বস্তিতে মুড়িয়ে নিচ্ছে নিজেকে।আচ্ছা অনিলার মনেও কি তার জন্য কোনো অনুভূতি তৈরি হয়েছে তার যেমন টা হয়েছে নাকি শুধুই বান্ধুবীর ভাই হিসেবেই ভাবে এর বাইরে অন্য কোনো অনুভূতি তৈরি হয়নি।জুনইদ এক মনে অনিলার দিকে তাকিয়ে আছে।ওর কফিতে চুমুক দেওয়া দেখছে।এসব ভাবতে ভাবতেই নিশা চলে আসলো।মিথ্যা গলা খাকারি দিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো নিশা।

“টাইম আপ, টাইম আপ।আমি এসে গেছি।বাকি যা আলাপ চারিতা আছে সেগুলো আপাতত তুলে রাখো।”

কথা টা শেষ করতে না করতে নিশা খেয়াল করলো জুনইদ তার দিকে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে।ব্যস নিশা চুপ।কারণ ভালোই জানে জুনইদ এমনিতে খুব ভালো হলেও রেগে গেলে ব্যাপার টা খুব খারাপ হয়ে যাবে।

অনিলা সন্দিহান চোখে জুনইদ আর নিশার দিকে তাকালো।অপ্রসন্ন গলায় বললো,”কিসের টাইম আপ? বাই দ্যা ওয়ে তোর নোটস কালেক্ট করা হয়েছে?”

নিশা চুপসে যাওয়া গলায় বললো,”হ্যাঁ হয়ে গেছে।তুই ও নিয়ে নিস।”

জুনইদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নিশাকে বলে উঠলো, “ওকে নিশা তুই তোর পছন্দ মতো অর্ডার করে ফেল এবার”

নিশা বলে উঠলো, আমি কফি খেয়েছি।বাট তুমি যখন ট্রিট দিচ্ছো তখন আমি তো খাবোই।এনি-ওয়ে ভাইয়া তোমার কাছ থেকে আমার একটা থ্যাংকস কিন্তু প্রাপ্য।

জুনইদ নিশার ইঙ্গিত বুঝেও কথা ঘুরিয়ে বলে,

জুনইদ সোজা হয়ে বসে বলে উঠলো,”আমিই ট্রিট দেবো আবার থ্যাংকস ও আমিই দেবো।এটা কোন দেশের নিয়ম রে।”

“থাক ভাইয়া আর তোকে থ্যাংকস জানাতে হবে না।নিশা অপ্রাকৃতস্থ ভাবে বলে উঠলো”

এভাবেই সবাই মজা করতে করতে খাওয়া দাওয়া শেষ করলো।যদিও অনিলা আর কিছু খেতে চাইছিলো না তাও নিশা জোর করেই খাওয়ালো।তারপর গাড়িতে যেতে যেতে নিশা আর অনিলা অনেক গল্প করলো।জুনইদ বেচারা নিরব দর্শকের মতো আড় চোখে বার বার অনিলাকে দেখে যাচ্ছিলো।আর কোনো কথায় বলতে পারলো না।এরপর অনিলা কে ওর ফ্ল্যাট নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো নিজের বাড়িতে।


অনিলা রুম আনলক করে সাইড ব্যাগ টা বেড এ রেখে স্ট্রুয়ার্ট এর কাছে গেলো।যদিও ক্লান্ত লাগছে তার।তাও রান্না ঘর থেকে ফল নিয়ে এসে স্ট্রুয়ার্ট কে খাওয়াতে লাগলো।স্ট্রুয়ার্ট ও আপন মনে খেতে লাগলো।অনিলা মাঝে মাঝে কথা বলছিলো।কাল কে বাসায় যেতে হবে।বাবার আদেশ কিভাবে অমান্য করবে সে।তাই প্যাকিং ও বাকি অনেক।অনিল স্ট্রুয়ার্ট কে খাইয়ে প্যাকিং করে নিলো।তারপর ফ্রেশ হয়ে আসলো।ঘড়িতে তখন নয় টা বাজে।সবে নয় টা বাজে?ব্যাগ থেকে ফোন বের করে বাড়িতে ফোন দেওয়ার কথা ভাবতেই ওর ফোন বেজে উঠলো।দেখলো ওর বুবু মায়াবী ফোন করেছে।অনিলা মিষ্টি হেসে ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে মায়াবী এমন কিছু বললো যা শুনে অনিলা নিস্তব্ধ হয়ে গেলো।বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠলো।চোখে মুখে নেমে এলো অন্ধকার।চোখ ধোঁয়াসা হয়ে এলো সাথে সাথেই।চোখ দিয়ে অনর্গল জল গড়িয়ে পরলো।গলা দিয়ে শব্দ বেরোয় না যেনো,

আমি এক্ষুনি আসছি বুবু।বলেই ফোন টা কেটে দিলো।

ঠোঁট কামড়ে নিজেকে সামলানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু না সময় নেই হাতে তাকে এক্ষুনি বেরোতে হবে।অনিলা তারাতাড়ি স্ট্রুয়ার্ট কে নিয়ে ব্যাগ হাতে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে পরল।স্ট্রুয়ার্ট অনিলাকে কাদতে দেখে ছটফট করতে লাগলো।সে যেনো বুঝতে পারছিলো কোনো অজানা ঝড় এসেছে যার কারণে তার মালিক এমন করছে।ফোন থেকে ক্যাব বুক করে নিলো তারাতাড়ি।এক হাতে ব্যাগ আর এক হাতে স্ট্রুয়ার্টের খাচা।ক্যাব আসতেই সে উঠে বসে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে অনিলা।সারা টা রাস্তায় কাদতে কাদতে তার নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এলো।কন্ঠ নালী আটকে আসছে।কোনো কথায় যেনো বের হতে চাচ্ছে না।তবুও কষ্ট করে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো,

“ভাইয়া তারাতাড়ি চলুন প্লিজ আমার একটু তাড়া আছে.”একটা হসপিটালের নাম বলে সেখানে নিয়ে যেতে বললো প্রথমেই!”

#চলবে।

আসসালামু আলাইকুম।নামাজ কায়েম করুন