সাত পাকে বাঁধা পর্ব-০৮

0
2274

#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_০৮
#অধির_রায়

নির্বণ বেল্ট খোলে ধীরে ধীরে নিয়তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নিয়তি ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে। এক সময় নিয়তি আলমারির সাথে লেগে যায়। আলমারি ভেদ করে আর যাওয়া সম্ভব না৷ নির্বণ নিয়তির অনেক কাছে চলে এসেছে৷ হাতে বেল্ট চোখে হিংসাত্মক আগুন৷ নির্বণ বেল্ট উপরের দিকে তুলতেই নিয়তি চোখ হাত দিয়ে ঢেকে ফেলে এটা ভেবে আজ তার কপালে নিশ্চিত বেল্টের ঘাঁ পড়তে চলছে৷

নিয়তি চোখ বন্ধ করে রয়েছে প্রায় ২ মিনিট হলো কোন শপাং শপাং বেল্টের শব্দ নেই৷ নিয়তি চোখের উপর থেকে হাত সরিয়ে দেখে নির্বণ তার দুই পাশে দুই হাত দিয়ে নিয়তির অনেক কাছে এসেছে৷ নির্বণের গরম নিঃশ্বাস নিয়তির মুখে পড়ছে৷

— আমি জানি আমি অনেক অন্যায় করেছি তার শাস্তি আমাকেই পেতে হবে৷ (নির্বণ)

— আপনি কি বলতে চান৷ আমতা আমতা করে নিয়তি বলে উঠে।

— তোমাকে যতগুলো আঘাত করেছি তুমি তার থেকে দ্বিগুণ আঘাত আমাকে কর৷ তাও আমাকে ক্ষমা করে দাও৷

— আমি পারব না আপনাকে আঘাত করতে৷

নির্বণ জোর করে নিয়তির হাতে বেল্ট ধরিয়ে দেয়৷ কিন্তু নিয়তি সাথে সাথে বেল্ট মাটিতে ফেলে দেয়৷

— ওঁকে আমার শাস্তি আমি নিজেই নিচ্ছি।

নির্বণ বেল্ট ফ্লোর থেকে তুলে নিজের গায়ে একের পর এক আঘাত করতে শুরু করল। প্রতিটি আঘাত সাদা শার্ট সাক্ষী দিচ্ছি। আঘাতের সাথে সাথে সাদা শার্ট লাল বর্ণ ধারণ করছে৷ আঘাতে আছে শুধু রাগ আর প্রতিহিংসা। সেখানে মিশ্রিত আছে ভালোবাসার অসীমতা।

নিয়তি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না৷ নিয়তি নির্বণের হাত ধরে নির্বণের গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল।

নির্বণের হাত থেকে বেল্ট ফ্লোরে পড়ে যায়।নির্বণ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে৷ নির্বণও নিয়তিকে ভালোবাসার পরশ এঁকে দুই বাহুর মাঝখানে আগলে রাখে। সকল মান অভিমান শেষ হয়ে যায় তাদের।

ঝড় চলে যাওয়ার পর পরিবেশ যেমন শান্ত হয়ে যায়৷ ঠিক তেমনি তাদের মাঝে শান্ত বিরাজ করছে৷ প্রকৃতি তাদের মাঝে শান্তি বিরাজ করেছে৷ নির্বণ শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে বলে উঠে

— প্লিজ নিয়তি আমাকে একটা সুযোগ দাও৷ আমি কথা দিচ্ছি তোমায় তোমার হাত কোনদিন ছেড়ে যাব না৷

— আরে নড়াচড়া বন্ধ করেন তো আপনার বুকে মাথা রেখে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে। ডিস্টার্ব করবেন না৷

— এভাবে সারা জীবন তোমাকে আগলে রাখতে চায়।

— আমিও সারা জীবন আপনার বুকে নাথা রেখে পার করে দিতে চায়। কিন্তু একটা শর্তে?

— কি শর্ত? আমি তোমার সব শর্ত মেনে নিব৷ কাউকে হুট করে বিশ্বাস করব না৷ সব কিছু যাছাই বাছাই করে বিশ্বাস করব।

— আমি সেটা বলতে চায় নি৷

— তাহলে?

— আপনার সামনে যতই বিপদ আসুক না কেন আমাকে মিথ্যা কথা বলতে পারবেন না৷

— আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি। তেমার সামনে কোন মিথ্যা কথা বলবো না৷ তবে একটা কথা?

— কি কথা?

— আমাকে আমার অতীত নিয়ে কোন প্রশ্ন করবে না৷

— আমি আপনার অতীত সব জানি৷ নতুন করে জানার কোন দরকার নেই৷ কেউ আপনাকে আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না৷

— তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দাওনি কেন এতদিন? তোমার পিছনে ক্ষমা ক্ষমা বলে কত দৌড় পাড়িয়েছো৷

— বেশ করেছি৷ কোনদিনও ক্ষমা করতাম না৷ আপনি আমার বাসর ঘরের স্বপ্ন ভেঙে ফেলেছেন৷ আমি বাসর রাত নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখেছিলাম।

— কি কি স্বপ্ন? যদি কোনদিন সময় পায় তা পূরণ করার চেষ্টা করবো।

— আমি ভাবেছিলাম এই বেলকনিতে বসে আপনাট সাথে সারারাত এক টুকরো চাঁদ দেখে যাব৷ কত ভালোবাসার গল্প করব৷ আমাদের বাসর রাত সব থেকে স্মরনীয় করে রাখবো৷ কিন্তু আপনি সেই বাসর রাত স্মরণীয় করলেন আমাকে বেঁধে বেল্ট দিয়ে আঘাত করে৷ আপনি আমার একটা কথাও বিশ্বাস করছেন না৷ করবেন কিভাবে? আমার মুখ বেঁধে রেখেছিলেন সাদা রুমাল দিয়ে৷ উম উম করেছি চোখের জল ফেলেছি৷ কিছুতেই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারি নি৷

নিয়তি এসব কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেলে। নিয়তির চোখের জল আর নির্বণের রক্ত দিয়ে নির্বণের সাদা শার্ট লালচে বর্ণ ধারণ করেছে৷ এটা শুধু নির্বণের সাদা শার্ট দেখে বুঝা যাচ্ছে। উশখো খুশকাে নির্বণের চোখে পাখির বাসা বেঁধে রখেছে৷

— আমি তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করব৷ আগামী পূর্নিমা চাঁদে তোমার সাথে রাত জাগা পাখিদের মতো সময় কাটাবো৷ তোমার কোলে মাথা রেখে সৃষ্টিকর্তার অসীম সৃষ্টি সেই বৃত্তাকার চাঁদ দেখে যাব৷ সারা রাত ভর ভালোবাসা গল্প করে যাব৷ সাক্ষী হয়ে থাকবক রাতের তারারা৷ থাকবে জোনাকি পোকা। জ্বলে জ্বলে জোনাকি দিয়ে যাবে আলো। সেই আলোতে তোমাকে নিয়ে অচেনা দেশে হারিয়ে যাব৷

নিয়তি অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে নির্বণের দিকে। নির্বণের প্রতিটি কথা বুঝার চেষ্টা করছে নিয়তি৷ নির্বণ কথা বন্ধ করতেই নিয়তি নির্বণকে জড়িয়ে ধরে।

নির্বণকে জড়িয়ে ধরতেই নির্বন আঘাতকৃত স্থানে ব্যথা পায়৷ তবুও সেই ব্যথা সহ্য করে নিয়ে৷ নিয়তি নির্বণের পীঠে হাত বুলাতে থাকে। হঠাৎ করে নির্বণ ব্যথা সহ্য করতে না পেরে।

— “আউচ”

নিয়তি নির্বণকে ছোড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়৷

— সরি৷ আপনার শার্ট খোলে ফেলেন?

— কি আমার শার্ট খোলবো কোন?

— যা বলছি তাই।

— আমি পারব না। আমার সিক্স প্যাক বডি দেখে যদি তুমি আমার উপর ঝাপিয়ে পড়।

— ওকে আপনার খোলতে হবে না৷ আমিই খোলে ফেলছি।

নিয়তি নিজ হাতে নির্বণের শার্টের বাটন খোলে যাচ্ছে। শেষের বাটনটা খোলতে নিবে ঠিক তখনই নির্বণ নিয়তির কোমরের হাত দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ নিয়তি কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে।

— কি করছেন ছাড়েন? আপনার আঘাতের স্থানে এন্টিসেপ্টি মলম লাগাতে হবে৷ এখন না লাগালে এসব দাগ সারতে সময় বেশি লাগবে৷

— যদি

— কোন কথা নয়৷ আমি যা বলছি তাই করেন। এখনই বিছানায় শুয়ে পড়েন৷ আমি আপনার আঘাতের সাথে এন্টিসেপ্টি লাগিয়ে দিব৷

নির্বণ নিয়তির কথা মতো কাঁধ হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে৷ নিয়তি পরম যত্নে নির্বণকে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে। মলম লাগাতেই নিয়তির চোখে জল ছল ছল করছে।

মেয়ে মানুষ মানে এমনই৷ যে তাকে এত শাস্তি দিল তাকেই নিজ থেকে সেবা করছে। আসলে মেয়েদের মন কোমল প্রকৃতির হয়৷ তারা কখনো কারো কষ্ট সহ্য করতে পারে না৷ সে যদি হয় নিজের স্বামী তাহলে কোন কথা নেই৷ মেয়েরা নিজের সম্মান তুচ্ছ করতে পারে কিন্তু স্বামীর মাথা কখনো নিচু হতে দিবে না৷

নিয়তি মলম লাগিয়ে চলে যেতে নিলেই নির্বণ নিয়তির হাত ধরে ফেলে।

— ছাড়েন আমাকে?

— কোথায় যাচ্ছো?

— রাতের শেষ প্রহর শেষ হতে বেশি সময় নেই৷ তার পরই ভোরের আলো ফুটে উঠবে৷ যা ১ ঘন্টা সময় আছে ঘুমিয়ে নেন। আমি কোন ডিস্টার্ব করব না৷

কে শুনে কার কথা। নির্বণ এক টানে নিয়তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে৷ নিয়তিকে দুই বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরে নিয়তির গলায় মুখ লুকিয়ে শুয়ে থাকে৷

নিয়তি এমন লাভ টর্চার সহ্য করতে পারছে না৷ নির্বণের গরম নিঃশ্বাস যতবাই নিয়তির গলায় পড়ে নিয়তি ততবারই কেঁপে উঠে৷ যা নির্বণ খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে৷ নিয়তি নির্বণকে সরানো চেষ্টা করছে কিন্তু নির্বণ এক চুলও নড়ছে না৷

হুট করেই নির্বণ নিয়তির গলায় ছোট করে একটা কামড় বসিয়ে দেয়। নিয়তি আর সহ্য করতে না পেরে নির্বণকে জড়িয়ে ধরে৷ ধীরে ধীরে নিয়তিও নির্বণের নেশায় আসক্তি হয়ে পড়ে।নির্বণ নিয়তির গলায় একের পর এক কিস করে যাচ্ছে। যা নিয়তিকে আরও পাগল করে তুলছে। নির্বণ নিয়তির গলা ছেড়ে দিয়ে নিয়তির ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিল।

নিয়তিও নির্বণের সাথে তালে তাল নেলাতে লাগল। ধীরে ধীরে তারা হারিয়ে যায় ভালোবাসার অসীম সাগরে। যেখানে ভালোবাসার কোন কমতি নেই। মাঝে মাঝে নিয়তি লাভ টর্চার সহ্য করতে না পেরে নির্বণের কাটা যুক্ত স্থানে চেপে ধরে৷ যা নির্বণকে আরও কাছে টেনে আনে। [ আমার লজ্জা করে না এসব কি বলছি৷ আপনারা বিয়ে করে নেন তাহলে আপনারাও বুঝতে পারবেন এসব কি?]



সকাল বেলা নিয়তি শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে৷ অন্য দিকে নির্বণ ব্যথার কারণে ঘুমাতে পারছে না৷ একটু নড়লে ব্যথা পাচ্ছে। নির্বণ এখন বুঝতে পারছে সে নিয়তির সাথে কত বড় অন্যায় করেছে৷ সে সামান্য আঘাত সহ্য করতে পারছে না৷ আর নিয়তি আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল৷ কিভাবে সে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের ব্যথা নিজে সহ্য করেছে৷

মহান সৃষ্টি কর্তা নারীদের ছেলেদের তুলনায় ধৈর্য শক্তি বেশি দিয়েছে। কেননা নারীরাই পারে সকল বাঁধা পেরিয়ে নিজেকে গুছিয়ে রাখতে৷ এজন্য সৃষ্টি কর্তা মেয়েদের মা হবার ক্ষমতা দান করেছে৷

নির্বণ ভাবনার মাঝে তার চোখে জল এসে পড়ে। যা নির্বণ নিজেও জানে না৷ টুপ করে নিয়তির কপোলে নির্বণের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে নির্বণ নিজের জিহ্বা দিয়ে সেই অশ্রু তুলে নেয়৷



নির্বণ অনেক কষ্ট করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে স্নান করে নিয়তিকে ডিস্টার্ব না করে ছাঁদে হাটতে যায়৷ নিয়তিকে ডাকতে অরিন এসেছিল কিন্তু নির্বণ নারা করে দিয়েছে৷ কাল রাতে অনেক লেট করে ঘুমিয়েছে। যেন নিয়তিকে ডিস্টার্ব না করে৷

নির্বণ হাঁটা করে রুমে এসে দেখে নিয়তি লাল রঙের শাড়ি পড়ে গ্লাসের সামনে নিজেকে তুলে ধরেছে৷ লাল সিল্কের শাড়িতে শাড়িতে নিয়তিকে অপূর্ব লাগছে৷

ভালোবাসার মানুষটি যতই অসুন্দর হক না কেন হাজার সুন্দরীর মাঝেও ভালোবাসার মানুষটি শ্রেষ্ঠ। [নিয়তি বাস্তবেই অনেক সুন্দরী। কিন্তু রাগী ]

নির্বণ পিছন থেকে নিয়তিকে জড়িয়ে ধরে৷ ঘুমড়া মুখ করে বলে তুমি শাড়ি পড়তে পারা শিখেছো কেন?

— কারণ আমার মা আমাকে রান্না করতে দেয়নি কিন্তু বিয়ের আগে আমি অনলাইনের মাধ্যমে শাড়ি পড়া শিখে নিয়েছি৷

— যাও তোমার সাথে আমার তেমন কথা নেই৷

হাসি খুশিতে তাদের দিব কাটতে থাকে। কথায় আছে না সুখ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না৷ তাদের সাথেও তেমনই হলো৷ শত্রু তাদের বাড়িতে উঠে এসেছে৷

চলবে.

ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।