সাত পাকে বাঁধা পর্ব-০৯

0
1748

#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_০৯
#অধির_রায়

সকাল বেলা নির্বণ অফিসে যাওয়ার জন্য দ্বার খোলতেই নির্বণের পিসির ছেলে বাড়িতে এসে হাজির৷

— নির্জন কেমন আছিস? খুশি হয়ে নির্বণ নির্জনকে হ্যাক করে বলে

— কে এসেছে নির্বণ? সোফায় বসে থাকা নির্বণের মা বলে উঠে।

— ছাড় হা* মামীর কাছে যেতে দে।তোর সাথে আমার পরে কথা হবে৷ তুই এখন অফিসে যাবি৷ তোকে ডিস্টার্ব করব না৷

নির্বণ সরে দাঁড়াতেই নির্জন দৌড়ে তার মামীকে প্রণাম করে৷

— মামী I miss you.. খুব মিস করেছি এই দুই বছর তোমাদের। নির্বণের মাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে।

— তাহলে কবে ফিরে আসা হয়েছে আমেরিকা থেকে৷ আর হ্যাঁ তোমার সাথে আমাদের কোন কথা নেই৷ তুমি ফিরে এসেছে ভালো কথা কিন্তু আমাদের জানানো বোধটুকু কর নি৷ অভিমানী স্বরে নির্বণের মা বলে উঠে।

— মামী প্লিজ অভিমান কর না৷ আমি গতকাল রাতেই ফিরে এসেছি৷

— বউদি নির্জন একদম ঠিক কথা বলছে৷ আমি তোমাদের জানাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে মানা করেছে তোমাদের সারপ্রাইজ দিবে বলে।

পিসি মনি বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করলে।

— পিসি মনি তুমি কি দরজার বাহিরে দাড়িয়ে ছিলে। না মানে যেভাবে ইন্টি নিলে মনে হচ্ছে তুমি বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিলে৷ (নির্বণ)

— ঠিক বলেছ নির্বণ৷ শুধু আমি দাঁড়িয়ে থাকিনি৷ আমার সাথে আরও একজন দাঁড়িয়ে ছিল। (পিসি মনি)

— কে সে ভাগ্যভান লোক যে আমাদের সারপ্রাইজ দিতে দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। (নির্বণ)

নির্বণ এক পা দুই পা করে এগিয়ে যাচ্ছে লোকটাকে দেখার জন্য। কিন্তু পথিমধ্যে দাঁড়িয়ে পড়ে স্টেচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে৷

নিঝুম প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে।

— আশা করি সবাই ভালো আছেন৷

নির্বণ নিঝুমকে দেখে ঘাঁমতে শুরু করে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না নিঝুম তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে৷ নিঝুম নির্বণের কাঁধে হাত রাখাতে নিঝুম বিশ্বাস করতে পারে।

— কি রে নির্বণ এভাবে ঘামছো কেন? এখানে এয়ারকন্ডিশন চালু আছে তাহলে এভাবে ঘেঁমে যাচ্ছো কেন?

— তুমি এখানে কি করছ?

— আরে ঘাবড়ানোর কি আছে? দিদি তার বোনের বাসায় আসতে পারে না৷

না আমাকে শক্ত হতে হবে৷ কাউকে বুঝতে দেওয়া যাবে না নিঝুম কি চায়৷ তাকে কৌশলে এখান থেকে বের করে দিতে হবে। তার পদক্ষেপ আগে আমাকে জানতে হবে৷ মনে মনে নির্বণ বলে উঠে।

— কি রে নির্বণ নিঝুমকে চিন না৷ নিঝুম নিয়তির বড় বোন৷ (পিসি মনি)

— না মানে পিসি হঠাৎ করে আজ সবাইকে এভাবে দেখতে পাচ্ছি তাই সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কিছুই মাথায় ঢুকতে পারছে না৷ নির্বণ

— নির্জন নির্বণের পীঠে হাত রেখে বলে উঠে আরে হা* এভাবে দেখতে নেই৷ পরে তোর দিদির উপর আমার না নজর পড়ে যায়৷

নিঝুম নির্বণের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুচকি হসছে৷ এই দিকে নির্বণ চারিদিকে নিয়তিকে খোঁজে যাচ্ছে৷ তাকে কোথায় খোঁজে পাচ্ছে না। নিয়তির সাথে নিঝুম কিছু করে বসেনি আবার৷

নির্বণের ধারণা ভুে প্রমাণ করে নিয়তি সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নেমে এসে নিঝুমকে জড়িয়ে ধরে।

— দিদি তোমাকে খুব মিস করব? তুমি আমাদের ছেড়ে দূরে চলে যাবে আমি ভাবতেও পারিনি৷ (নিয়তি)

— আরে পাগলী মন খারাপ করিস না। আমি আবার তোদের মাঝে ফিরে আসব৷ মাত্র চার বছর৷ আমি রোজ তোদের একবার করে খবর নিব৷

নির্বণ হা করে নিয়তি আর নিঝুনের কথা শুনছে৷ নিয়তি কি বলছে নিঝুম কিছুই বুঝতে পারছে না৷

— আরে জিজু মুখ বন্ধ করেন মুখে মশা ঢুকবে৷ পরে বলবেন আদি ঘরওয়ালী এসব করেছে৷

— তুমি কোথায় চলে যাচ্ছো?

— আমি লন্ডন চলে যাচ্ছি চার বছরের জন্য৷ আমি এখানে এসেছি তোমাদের কাছে ক্ষমা চায়তে। আমার জন্য তোমাদের মাঝে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে৷ বিশ্বাস কর আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি৷ চোখের জল ফেলে কথা গুলো আস্তে আস্তে বলে যেন অন্যরা শুনতে না পারে৷

অন্যদিকে নির্জন পিসি মনি৷ নির্বণের মা কথা বলছে।

— দিদি তুমি কি অন্যায় করেছে যার জন্য আমাদের কাছে ক্ষমা চায়ছো৷ (নিয়তি)

— আস্তে কথা বল। কেউ শুনে ফেলবে। চল আমরা অন্য রুমে গিয়ে কথা বলি।

তারা তিনজন অন্য একটা রুমে চলে যায়।রুমে যাওয়ার পর নিঝুম দরজা বন্ধ করে ফেলে। নির্বণ মনে মনে ভাবছে নিঝুমের এটা নতুন কোন চাল না তো। নিঝুম নির্বণের নুখ দেখে বুঝতে পারে৷

— নিঝুম আমি জানি তুমি কি ভাবছো৷ আসলে আমি তেমন নিচু মানসিকতা নিয়ে আসি নি৷ জোর করে কখনও কোন কিছু পাওয়া যায়না৷

— দিদি তোমার মাথা ঠিক আছে তুমি এসব কি বলছো?

— হ্যাঁ আমার মাথা ঠিক আছে৷ আমি এখন যা বলবো তোরা সব শুনে যাবি৷ কোন কথা বলবি না৷

— ওঁকে আমরা কোন কথা বলবো না৷ কিন্তু কিভাবে বিশ্বাস করব এটা তোমার নতুন কোন ডামা নয়৷ (নির্বণ)

–আজ যা বলতে এসেছি তার মাঝে কোন অভিনয় নয়৷

— ওকে দিদি তুমি বল।

— নিঝুম নিয়তির গালে হাত দিয়ে টুপ করে দুই ফোঁটা চোখের জল ফেলে আমি এক সময় নির্বণকে খুব ভালোবাসতাম।

— কি হচ্ছে এসব? ক্ষেপে বলে নির্বণ

— আমি বলেছে আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোব কথা বলবে না৷ আমি চায়না আমার বোন অন্য কারো মুখে এসব কথা শুনে তোমাকে ভুল বুঝুক। একদিন না একদিন সত্য বেরিয়ে আসবে। তখন তোমাদের সম্পর্ক ঠুংকো হয়ে যেতে পারে৷ আমি চায় না আমার জন্য তোমার মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হক।

— দিদি যা বলতে চাও বল। আর হ্যাঁ আপনি কোন কথা বলবেন না৷ আমি সত্যের মুখোমুখি দাড়াতে ভয় পায় না৷

— সব সময় এই সাহসটা বজায় রাখবি? নিঝুম

নিয়তি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়৷

নিঝুম বলতে শুরু করে,, আমি তখন প্রেম ভালোবাসা নিয়ে তেমন কিছু বুঝতাম না৷ আমি নির্বণের উপর ক্রাশ খায় ভার্সিটির প্রথম দিনই৷ যখন নিঝুম বাইক দিয়ে ভার্সিটিতে আসে৷ কিন্তু অন্য ছেলেদের মতো বাইক জোরে ছেড়ে অভদ্র লোকের মতো আসে না৷ খুব ভদ্রভাবে ভার্সিটিতে প্রবেশ করে। তার এই এডিটিউট দেখে আমি তার প্রেমে পড়ে যায়। এক সময় সেও আমার প্রেমে পড়ে যায়।আমাকে যে যাই বলতো তাই করতাম৷ আমি সব সময় নিঝুমকে খুশি দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু একদিন ধরা দিল কালো দিন৷ সেদিন ভার্সিটি থেকে বের হয়ে ফোসকা খাচ্ছিলাম৷ হঠাৎ করে একটা চিরকুট এসে পড়ল আমার উপর৷ তাতে লেখা ছিল আমও যদি তার সাথে আজ রাতে কফি খেতে না যায় তাহলে সে নিঝুমকে মেরে ফেলবে। আমিও কিছু না বুঝে চলে যায় কফি খেতে। আর এক কাপ কফি খেলে তো আর কিছু হবে না৷

নিঝুম এত টুকু বলে চোখের জল মুছে ফেলে। বুকের ভিতর জামানো কথাগুলো আজ কারো সাথে শেয়ার করতে পেরে কিছুটা হালকা লাগছে৷

— তার পর কি হলো দিদি? (নিয়তি)

— সেখানে পুরো হোটেল ভোগ করা ছিল৷ হোটেলটা খুব সুন্দর করে সাজানো ছিল আমি একটা টেবিলে চেয়ার টেনে বসি৷ একজন ওয়েটার এসে আমাকে এক কাপ কফি দিয়ে যায়। বলে ম্যাম সেই চিঠির কফি৷ আপনার উপর নজর রাখা আছে আপনি কফি খেয়ে নেন৷ না হলে নিঝুম নামে কাউকে মেরে ফেলবে। আমি ভয়ে কফি খেতে শুরু করলাম৷ কিন্তু জানতাম না কফিতে ঘুমের ওষুধ মেশানে ছিল। কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানা নেই৷ যখন আমার ঘুম ভাঙল তখন নিজের হাত পা বাঁধা। দেহে এক টুকরোও কাপড় নেই৷ তাদের কথা মতে আমি যখনই জ্ঞান ফিরে পেতে চেয়েছি তখন আমাকে অজ্ঞান করে ফেলা হয়েছে৷

এই টুকু বলে নিঝুম কেঁদে কেঁদে নিচে বসে পড়ে৷ নিঝুমের সাথে নিয়তিও কেঁদে যাচ্ছে। অন্যদিকে নির্বণও কেঁদে যাচ্ছে। নিয়তি নিঝুমকে নিচ থেকে তুলে তাড় পর কি হয়েছে দিদি।

— সকাল ১০ টার দিকে আমার আবার জ্ঞান ফিরে আসে৷ ব্যথার জন্য একটু নড়তেও পারছি না মুখ বাঁধা। আমার সমস্ত দেহ ছিঁড়ে খেয়েছে নর পশু দলেরা৷ অনেক কষ্ট উঠে বসলাম৷ সারা বিছানায় রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। তখন শুরু হয়ে গেছে আমার পিরিয়ড। এসব রক্ত দেখে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলি৷ যখন আবার নিজেকে ফিরে পায় তখন পতিতালয়ে। তারা আমাকে বিক্রি করে দিয়েছে। একদিন সুযোগ বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে আসি৷ কিছুতেই নির্বণকে মুখ দেখাতে পারি না৷ হোস্টেলে ছিলাম সেজন্য কেউ তেমন কিছু জানতে পারেনি৷ পতিতালয়ে একজন মেয়ের খোন নিয়ে বান্ধবীকে ফোন করে বলে দেয় বাড়িতে এসে পড়েছি৷ বাড়িতে ফোন করে বলে দেয় এখ বান্ধবীর বাড়িতে ঘুরতে এসেছি৷ কিছু দিন লেট হবে ফিরতে।
তার পরের টা জানিস৷

তোদের বাসর রাতে আমি নির্বণের কাছে বাজে ভিডিও পাঠায় যেন নির্বণ কাউকে নিজের করে না নেয়।

নিয়তি আর কিছু না বলে নির্বণের পা ধরে ফেলে

— আমাকে ক্ষমা করে দাও নির্বণ। আমি অনেক অন্যায় করেছি তোমার সাথে৷

— নির্বণ নিঝুমকে তুলে নিয়ে কিসের ক্ষমা তুমি আমাকে ভালোবাসতে সেজন্য এমন করেছ। কিন্তু আমি,,

— কোন কিন্তু নয়৷ তুমি আমার বোনটাকে কখন কষ্ট দিবে না৷ আমি আমেরিকায় চলে যাচ্ছি। যদি পারি সেখানেই থেকে যাব৷

নিঝুম আর কিছু না বলে কান্না করতে করতে চলে যায়। নির্বণ নিজের সমস্ত শক্তি হারিয়ে বসে পড়ে।নিয়তি পিছু পিছু দৌড়ে যায়।

কিন্তু নিঝুম নিয়তির কথা উপেক্ষা করে চলে যায়।

চলবে…