সাত পাকে বাঁধা পর্ব-১০

0
2162

#সাত_পাকে_বাঁধা
#পর্ব_১০
#অধির_রায়

নিঝুম দৌড়ে চলে যায়।পিছু পিছু নিয়তি দৌড় দেয়৷ কিন্তু বাহিরে বের হওয়ার আগেই নিঝুম গাড়ি স্টার দিয়ে চলে যায়। নিয়তি মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে আসছে৷

–মামী এই মেয়েটা কে? এভাবে দৌড়ে যাচ্ছে কেন? (নির্জন চৌধুরী স্বার্থ) নির্জন কে স্বার্থ বলেই চিনবেন৷

— খোকা প্রথম যে মেয়েটা দৌড়ে চলে গেল সে হলো নিঝুম একটু আগেই তুমি দেখতে পেয়েছো তাকে। (পিসি মনি)

— হুম দেখতে পেয়েছি৷ কিন্তু পিছনের মেয়েটা কে?ওইভাবে তাড়া করেছে কেন? (স্বার্থ)

— পিছনের মেয়েটা নির্বণের স্ত্রী। আর আমার বউমা৷ (নির্বণের মা)

নিঝুম কোন কিছু প্রশ্ন না করে বাহিরে দিকে পা বাড়ায়৷ দ্বার ভেদ করে বাহিরে দুই কদম ফেলতেই নিয়তির সাথে ধাক্কা খায়৷ নিয়তি মাটিতে পড়ে যেতে নিলে স্বার্থ নিয়তির কোমরে হাত দিয়ে তাকে নিজের সাথে আগলে রাখে৷

নিয়তি কোমরে কারো ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকায়৷ চোখ মেলে অন্য কাউকে দেখতে পায়৷ তার ধারণা ছিল নির্বণ৷

–প্লিজ ছাড়েন আমাকে? কে আপনি? এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? (নিয়তি)

স্বার্থ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিয়তির দিকে। নিয়তি কি বলছে স্বার্থের কর্ণধার হচ্ছে না কিছু? স্বার্থ নিয়তির সব কিছু অপলক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে৷ মনে হচ্ছে কোন বিজ্ঞানী তার আবিষ্কারে সফলতা অর্জন করেছে কিনা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে৷

নিয়তি স্বার্থের চাহনি দেখে নিজে দেহে শক্তি সঞ্চয় করে স্বার্থকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।

— কে আপনি? এখানে কি করছেন?

স্বার্থ নিয়তির ধাক্কা খেয়ে সে নিজ জ্ঞানে ফিরে আসে৷ স্বার্থ নিয়তির কন্ঠেরও প্রেমে পড়ে যায়। এত মধুর কন্ঠ স্বার্থ আগে কখন শুনেনি৷ শুনেছি ঠিক ভালো লাগেনি৷

— ও হ্যালো আমি আপনাকে বলছি। এখানে কি করছেন? কে আপনি?

— হায় আমি স্বার্থ। হাত বাড়িয়ে দেয় নিয়তির সাথে হাত মেলানোর জন্য৷

— নিয়তি নমস্কার জানিয়ে আমি নিয়তি। আমাদের বাড়িতে কেন এসেছেন?

নির্বণ দেখতে বের হয়েছে নিয়তি নিঝুমকে আটকাতে পেরেছে কিনা৷ নিঝুম নিয়তির সাথে খারাপ কিছু করে বসেনি তো? নির্বণ দেখার জন্য বাহিরে বের হয়৷

— আমি জানতাম এটা আমার বাড়ি। কিন্তু আপনার বাড়ি হলো কবে থেকে? আর আমি এই বাড়ির ছেলে।(স্বার্থ)

— আপনি এই বাড়ির ছেলে মানেটা কি? পাগল হয়েছেন নাকি? (নিয়তি)

— স্বার্থ ঠিকই বলছে? পিসি মনির ছেলে স্বার্থ। পিসি মনি আর স্বার্থ আমাদের বাড়িতেই থাকে। মাঝে মাঝে পিসুর বাড়িতে তারা ঘুরতে যায়৷ কিন্তু তারা কেউ সেখানে থাকে না তুমি সেটা নিশ্চয় জানো। (নির্বণ)

— আমার পরিচয় পেয়ে গেছ নিশ্চয়। আর তুমিই হলে নির্বণের,, (স্বার্থ)

— হুম। নিয়তি রুমে আসো তোমার সাথে কিছু কথা আছে৷

নির্বণ নিয়তিকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। স্বার্থ বাগানের পাশে ঝুলে থাকা দোলনায় বসে নিয়তির কথা ভাবছে৷ নিয়তির কথা বলার ধরণ৷ নিয়তির ভঙ্গিগুলো স্বার্থের সামনে ফুটে উঠছে৷ স্বার্থ আনমনে নিয়তির কথা ভেবে হেঁসে যাচ্ছে।

স্বার্থ ভেবে নেয় যে করেই হোক নিয়তিকে চায়৷ নিয়তির জন্য সব কিছু করতে পারি। আমি কিছুতেই নিয়তিকে নির্বণের সাথে থাকতে দিব না৷ কাল থেকে আমি বিজনেসে যোগ দিব৷ আমি কিছুতেই বিজনেসে নির্বণকে এগিয়ে যেতে দিব না৷ নির্বণকে পথের ভিক্ষারী বানিয়ে আমি নিয়তিকে নিজের করে নিব৷

স্বার্থ নিজ মনে কথা গুলো বলছে৷ দোলনায় বসে মুচকি মুচকি হেঁসে যাচ্ছে।



–কি হয়েছে? কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে? (নিয়তি)

— তোমার মা ফোন করেছে৷ আর কোন সমস্যা হয়নি জানা মতে।(নির্বণ)

— কিসের জন্য? আপনি মার সাথে কথা বলেননি।

— না আমি কথা বলি নি৷ আর আমি কিভাবে জানব? তোমার মা তোমার কাছে ফোন দিয়েছে সেটা আমার থেকে তুমি ভালো করে জান?ফোন ব্রেক কর? কিছু তোমাকে বলতে চায়?

নিয়তি ফোন ব্রেক করে। কিন্তু নিয়তির ফোন কেটে দেয়।নিয়তির ধারণা নিশ্চয় দিদি কিছু করে বসেছে৷ নিয়তির ধারণা ভুল প্রমাণ করে নিয়তির মা নিজে থেকে ভিত্তিও ফোন দেয় হোয়াটস অ্যাপে।

— মা তোমরা ঠিক আছো? তোমাদের কোন ক্ষতি হয়নি? তোমরা কোথায় আমাকে বল আমি এখনি আসছি৷

নিয়তি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফেলে। নিয়তি তার মা বাবার চিন্তায় ঘেঁমে একাকার হয়ে যাচ্ছে। নিজের মনে অস্থিরতা কাজ করছে৷ কিছুতেই নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না৷

— কি হয়েছে নিয়তি? এমন ভাব করছো কেন? কোন সমস্যা হয়েছে? (নিয়তির মা)

— দিদি তোমার সাথে,,

নিয়তি কিছু বলতে নিবে তখনই নিঝুম বলে উঠে চলে যাচ্ছি। তাই ভাবলাম তোর সাথে একটু কথা বলে চলে যায়। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস৷

নিয়তি ফোনের স্কিনে তার মা বাবাকে দেখে শান্ত হয়৷ সে জানতে পারে সত্যি সত্যি তার দিদি চলে যাচ্ছে।

— সাবধানে যাবে দিদি৷ নিজের খেয়াল রাখবে। আর মা তুমি ফোন কাটবে না। দিদি যখন ভিতরে চলে যাবে তখন ফোন কাটবে৷ আমি দূর থেকে দিদিকে দেখে যাব৷

নিয়তির মা ফোন মিউট করে রেখে দেয়। নিয়তি খুব মনোযোগ সহকারে দেখে যাচ্ছে তার বোনের কার্যক্রম। নিয়তি বিশ্বাস করতে বাদ্য হয় নিঝুম একেবারে পাল্টে গেছে৷



দেখতে দেখতে কেটে যায় এক মাস৷ নিঝুম প্রতিদিন ফোন দেয় নিয়তিকে৷ কিন্তু কখন নির্বণকে ফোন দেয়নি৷ নির্বণকে ফোন দিলে নির্বণ ভিতর থেকে ভেঙে পড়বে এজন্য কোন ফোন দেয়নি৷ নিঝুম এখন নিয়তিকে নিজের বোন মনে করে।তার মা বাবার সাথে প্রতিদিন ফোনে কথা বলে।

স্বার্থ এখন অফিসে জয়েন্ট করেছে৷ নির্বণের পাশাপাশি স্বার্থ কাজ করে যাচ্ছে সমান তালে তাল মিলিয়ে । এভার স্বার্থ আর নির্বণ কাজ ভাগ করতে নিয়েছে৷ স্বার্থ নির্বণের কাছ থেকে সব কিছু কেড়ে নিবে এটাই তার মূল উদ্দেশ্য।

স্বার্থ আজ নিজের ব্যাগ গুছিনে নিয়ে ডাইনিং রুমে নির্বনের মা, বাবার সাথে কথা বলছে৷

— মামু আমি চায় না “মা আর আমি” তোমাদের বাসায় থেকে তোমাদের মাথা নিচু করতে। সমাজের লোক অনেকে অনেক কথা বলে। (স্বার্থ)

— নিচু করার তুমি কে? এই বাড়ি তোমারও তো? সমাজের লোক কি বলে না বলে সেটা দেখার আমার কোন ইচ্ছা নেই। (নির্বণের বাবা)

— না মামু সমাজ ছাড়া চলা যায় না৷ আমার বাবা আমাদের জন্য অনেক কিছু রেখে গেছেন৷ আমরা সেটা দিয়েই সারাজীবন বসে কাটিয়ে দিতে পারব।

–তোর কোথাও যাওয়া হবে না৷ সিঁড়ি দিয়ে নির্বণ নামতে নামতে বলে উঠে।

— স্বার্থ মুচকি হেঁসে নির্বণের দিকে তাকিয়ে আমি যাব না যাবি তুই

— আমি যাব মানে কি?

— মানে তুই আমাদের ছেড়ে আসবি। এটা আমরা তোর কাছে ডিজার্ভ করতে পারি।

— হুম পারিস৷ কিন্তু তুই যে বললি আমি যাব। মুচকি হেঁসে চোখে রাগি ভাব নিয়ে কি বলতে চেয়েছিলে।

খেলা শরু হওয়ার আগেই শেষ করে দিতে চাস নাকি৷ কার সামনে কি বলতে হয় মনে থাকে না স্বার্থ। মন বলছে তোকে পঁচা ডোবায় চুবিয়ে মারি। স্বার্থ মনে মনে নিজেই নিজেকে গালি দিয়ে যাচ্ছে।

পিসি মনি বুঝতে পারে নিজের ছেলে ফেঁসে যাচ্ছে। স্বার্থকে বাঁচানোর জন্য আগ বাড়িয়ে বলে উঠে নির্বণ তুমি স্বার্থকে বোকা বনে পাঠিয়ে দিলে৷ তুমি নিশ্চয়ই জানো স্বার্থ কথা বলার সময় কিছু না কিছু বলে ফেলে৷ কিন্তু কি বলে ফেলে সে নিজেই জানে না? তুমি কি ভাবছো সে বুঝতে পারেনি৷

— নির্বণ মুচকি হেঁসে আরে পিসি আমি স্বার্থকে বোকা বানানোর জন্যই বললাম৷ সে একটু আগেই বলল তোমাদের পৌঁছে দিতে৷ কিন্তু এখনই তার মনে নেই৷

— আরে আরে থাম৷ আমাকে বোকা ভেবে ভুল করিস না৷ আমি ভাবছিলাম এই বাড়িতে কাটানো দিনগুলোর কথা ভাবছিলাম৷ তোর কথা আমি ঠিকভাবে শুনতেই পাইনি৷ ঠিকভাবে শুনতে পাওয়ার পর তো রিপ্লাই দিব। (স্বার্থ)

— এখন আর ভনিতা না করে আমাদের পৌঁছে দিয়ে আসো নির্বণ. (পিসি মনি) আর হ্যাঁ যাওয়ার সময় নিয়তিকে এক নজর দেখে যেতে পারব না।

— নিয়তি সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে উঠে কে বলেছে আমাকে না দেখেই চলে যেতে আপনাদের। আপনাদের জন্যই নিচে নেমে আসলাম তারাতাড়ি করে৷

স্বার্থ দু চোখ ভরে নিয়তিকে হাঁ করে দেখে যাচ্ছে। সে দিকে কারো খেয়াল নেই৷ হাঠাৎ করেই পিসি মনির চোখ যায় স্বার্থের দিকে৷ পিসি মনি স্বার্থের কাঁধে হাত রেখে এভাবে দেখার কিছু নেই৷ লক্ষ্য আমাদের অনেক বড়৷ এখানে থেমে থাকলে চলবে কি? ফিস ফিস করে বলে।

— মুচকি হেঁসে পিসি মনি আবার বলে উঠে কি হলো স্বার্থ চল তারাতাড়ি। অনেক কাজ বাকি আছে৷

— হ্যাঁ মা চলে যাচ্ছি। মামু মামী তোমরা ভালো থাকবে৷ নিয়তি তোমাকে একটা কথা বলতে পারি৷ চলেই তো যাচ্ছি৷ নিয়তির কাছে গিয়ে৷

এই বাজে লোকটা আবার কি বলতে চায়৷ কোন না কোন বাহনা বের করে আমাকে টার্চ করা এই লোকটার কাজ৷ এখন কি বলতে চায়৷ পরিবারের সবার সামনে খারাপ কিছু বলতে পারবে না এটা ঠিক।মনে মনে ভেবে নেয় নিয়তি৷

— কি হলো নিয়তি কোন কথা বলছো না কেন? (স্বার্থ)

— হুম বলেন কি বলতে চান?

— আমার মামু আর মামীর খেয়াল রাখবে। তাদের কষ্ট পেতে দিও না৷ নিজেরও খেয়াল রাখবে এই কথা বলে এক আঁখি বন্ধ করে ডেবিল হাসি দিয়ে সেখান থেকে ফিরে আসে৷

নিয়তি সোফায় বসে মনে মনে ভাবতে থাকে এই লোকটা এত ইডিয়েট কেন? সব সময় খারাপ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়৷ নির্বণকে সব বলে দেওয়া দরকার৷ না থাক বলার কোন দরকার নেই৷ এখন তারা এই বাড়ি থেকে চলে গেছে৷ নির্বণকে বলা মানে কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়া।

পরের দিন নির্বণ অফিসে ঢুকে কোন কিছু ঠিক দেখতে পায় না৷ সব কিছু আলাদা।অফিসের এক স্টাফকে ঢেকে অফিসের এই পরিবর্তনের কারণ জানতে চাইলে যা বলে তা শুনে নির্বণের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।

চলবে