সায়েবা আসক্তি পর্ব-১৪+১৫

0
549

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৪

ফারহানের আমেরিকা যাওয়ার চার মাসের মাথায় সাহেরা বেগমের মোবাইলে একটা কল এলো। ফোনের ওপাশের মানুষ টার কথা শুনে শীতের মধ্যে ও ঘামতে লাগলো সাহেরা বেগম। তার ঠান্ডা মাথায় কিরা প্ল্যান এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে ভাবতে ও পারেনি সে।

কিছুক্ষণ আগে,,,

— আসসালামু আলাইকুম আন্টি।

— ওয়ালাইকুম আসসালাম।

— চিনতে পেরেছেন আন্টি? আমি ফারহান বলছি।কেমন আছেন আপনি?

ফারহানের গলা শুনে কপালে ভাজ পরলো সাহেরা বেগমের।

— হ্যা হ্যা চিনতে পেরেছি। কেমন আছো বাবা?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আন্টি।

— তা এতো দিন পরে কি মনে করে কল দিলে?সব ঠিক আছে তো?

— আপনাকে একটা সু খবর দেয়ার জন্য কল করলাম হবু শাশুড়ী মা।আমার ক্যালিফোর্নিয়ায় চাকরি হয়ে গেছে। স্যালারি মাসে চার লাখ টাকা।আপনার কথা মতো নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছি আমি।এখন তো আর মেয়ে বিয়ে দিতে কোন সমস্যা নেই তাই না?(বাকা হেসে)

ফারহানের কথা শুনে ঘাবড়ে গেলো সাহেরা বেগম। আমতা আমতা করে বললো,

— কি বলছো এইসব। এত তারাতাড়ি বিয়ে! আর তুমি তো দেশে না।এভাবে কিভাবে..

সাহেরা বেগমের কথার মাঝেই ফারহান তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,

— যে ভাবে বিসিএস ক্যাডারের সাথে বিয়ে ঠিক করেছিলেন ঠিক সেভাবে।(দাতে দাত চেপে)

ফারহানের রাগী কন্ঠ শুনে সাহেরা বেগম থতমত খেয়ে গেলেন। এ কথা ফারহান কিভাবে জানলো ভাবতে ভাবতে তার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড়।

— এখন চুপ করে আছেন কেন শাশুড়ী মা। আপনি কি ভেবেছিলেন,আমি কিছু জানতে পারবো না? আপনি যাকে অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে যাচ্ছিলেন সে শুধু আপনার মেয়ে না আমার আত্মা।আমার আত্মার খবর আমি রাখবো না তা ভাবলেন কি করে?

— দেখো ফারহান,আমি সায়েবা কে তোমার কাছে বিয়ে দিবো না। সায়েবার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আশা করবো তুমি কোন ঝামেলা করবে না।

— আপনি আমাকে কথা দিয়েছিলেন সায়েবা কে আমার হাতে তুলে দিবেন।আপনার শর্ত মেনে আমি আমার বাবা মা পরিবার সবাইকে ছেরে এখানে এসেছি।আমার কি কিছুর অভাব ছিল? শুধু মাত্র আপনার কথা শুনে বাবার অঢেল টাকা থাকার পরেও আমার অন্যের অধিনে চাকরি করতে হচ্ছে। এখন আপনি এই কথা বললে তো আমি শুনছি না।আজ বিকেলে আমার পরিবার যাবে আপনার বাসায়।সায়েবা কে বউ সাজানোর দায়িত্ব আমি আপনাকে দিচ্ছি।এর হেরফের হলে খুব একটা ভালো হবে না শাশুড়ী মা।

রাগে ফারহানের মাথা ফেটে যাচ্ছে। শুধু মাত্র সায়েবার মা বলে পার পেয়ে গেলো। না হলে আজ সাহেরা বেগমের সাথে কি হতো তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।

সাহেরা বেগমও রেগে গেছেন। ফারহান কে তার অপছন্দ তা নয়।কিন্তু ওইদিন লিজার করা অপমান সাহেরা বেগম কে অনেক বেশি আঘাত করেছে।তাই সে ফারহান কে শর্তে বেধে দিয়ে কোন রকম ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছে।নাহলে ফারহানের সাথে সায়েবার বিয়েটা হয়েই যেতো। এতো অপমানের পর মেয়ে বিয়ে দেয়ার প্রশ্নই আসে না। সায়েবা কে সাত পাচ বুঝিয়ে সামলে রেখেছে।ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হয়ে গেলেই ঝামেলা চুকে যেতো। কিন্তু এখন ফারহান সব জেনে গিয়েছে।সাহের বেগমের মাথা কাজ করছে না। সব কিছু এভাবে এলোমেলো হয়ে যাবে সে কল্পনা ও করে নি।সায়েবা এখনো এসবের কিছুই জানে না। সব কিছু জানলে সায়েবা কে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।চিন্তায় সাহেরা বেগমের মাথা ভো ভো করছে।

ফারহান ফোন কেটে দিয়েছে অনেকক্ষণ। সাহেরা বেগম এখনো একই জায়গায় থম মেরে বসে আছে। কলিং বেলের আওয়াজে ধ্যান ভাংলো তার।আশেপাশে তাকিয়ে শোয়েব কে খোজার চেষ্টা করলো। কাওকে চোখে না পরায় নিজেই গেলো দরজা খুলতে।দরজা খুলে সাহেরা বেগমের চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। দরজার বাইরে ফায়জা আর ফরহাদ দাঁড়িয়ে আছে হাসি মুখে।

— আরে আন্টি ভিতরে তো আসতে দিন।হাত ব্যাথা হয়ে গেলো।

বড় বড় শপিং ব্যাগ হাতে সাহেরা বেগমের পাশ কাটিয়ে ভিতরে চলে গেলো ফায়জা।ফায়জার পিছু পিছু ফরহাদ ও চলে এলো ভিতরে। সাহেরা বেগম এখনো থম মেরে দরজার পাসেই দাঁড়িয়ে আছে। আজ শুধু তার অবাক হওয়ার দিন।
একে একে ডালা এসে ড্রয়িং রুম ভরে গেলো মুহুর্তের মধ্যেই।

— এখানে কি হচ্ছে এসব?

সায়েবা বেগম অবাক হয়ে জানতে চাইলো। ফায়জা ততক্ষণে সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে।সাহেরা বেগমের কথার জবাব না দিয়ে ফায়জা সায়েবা কে ডাকতে লাগলো।

— আরে আরে ওকে ডাকছো কেন?

— না মানে আন্ট সায়েবা কে দেখছিনা তো তাই ডাকছিলাম।এতো কিছুর আয়োজন তো ওর জন্যই।
তা আন্টি সায়েবা কি জানে আজ তার আকদ হচ্ছে? (শয়তানি হেসে)

ফায়জার কথা শুনে ফরহাদ মিটমিট করে হাসতে লাগলো। সাহেরা বেগমের নাজেহাল অবস্থা দেখে ওর খুব হাসি পাচ্ছে। বেচারি! ফরহাদ ফায়জা কে থামিয়ে দিয়ে সিরিয়াস ভাঙিতে বললো,

— আহ ফায়জু থাম তো তুই।আন্টির সাথে আগে আমাদের জরুরি কথা গুলো তো সেরে নেই।তো আন্টি,আসলে আজ সায়েবার আকদ হচ্ছে ফারহান সাদিকের সাথে।আপনি হয়তো জানেন না।তাই আপনাকে জানানোর জন্য আমাদের এখানে আসা। এখানে বিয়ের শাড়ি থেকে শুরু করে সব কিছু আছে।গয়না আম্মু রাতে নিয়ে আসবে সাথে করে।ওগুলো এখনো রেডি হয়নি।আর বাজার সব কিছু রান্না ঘরে রাখা আছে। কিছুক্ষণ পরে বাবুর্চি এসে রান্না করে দিয়ে যাবে।আমরা ও আছি সাহায্য করার জন্য। যদিও মানুষ বেশি হবে না। তবে এলাকার কিছু বিশিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আসবে।আপনি টেনশন করবেন না। আমরা এখানেই আছি আপনাকে সাহায্য করার জন্য। (মুচকি হেসে)

সাহেরা বেগমের বিস্ময় এবার আকাশ ছুলো। তার মেয়ের বিয়ে তার বাইরের মানুষ থেকে জানতে হচ্ছে!এক হিসেবে ওরা ঠান্ডা মাথায় হুমকি দিচ্ছে তাকে। সাহেরা বেগম রেগে মুখ খুলবে তার আগেই ফায়জা তার মুখ বন্ধ করে দিল।

— সায়েবা কোথায় আন্টি? ওকে একটু ডেকে দিন প্লিজ। ওকে ও তো রেডি করতে হবে। ফারহান এখানে নেই তো কি হয়েছে।ভিডিও কলে নিজের বউ কে বউ রুপে না দেখলে আমার ভাইটার আবার মন খারাপ হয়ে যাবে।

শেষের কথা টা ফায়জা মন খারাপের ভান করে বললো। সাহেরা বেগমের এসব আর সহ্য হচ্ছে না। সে এবার চিৎকার করে বললো,

— তোমাদের এসব নাটক বন্ধ করো।আমার মেয়েকে আমি কখনোই বিয়ে দিবো না ফারহানের কাছে।সায়েবার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আর দশ দিন পরেই ওর বিয়ে।তোমরা আসতে পারো এখন।

— মা!!!

বাসার পরিবেশ মুহুর্তেই ঠান্ডা হয়ে গেলো। সাহেরা বেগমের চেহারায় ভয়ের ছাপ দেখে বাকা হাসলো ফায়জা।সাহেরা বেগমের চিৎকার শুনেই রুম থেকে বেরিয়েছিল সায়েবা।কিন্তু বেরিয়ে এমন কিছু শুনতে হবে স্বপ্নে ও ভাবে নি সে।হতভম্ব হয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে সায়েবা।

— আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে?(কাপা কাপা গলায়)

সাহেরা বেগম শক্ত গলায় বললো,

— ভিতিরে যাও সায়েবা।

সায়েবা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাহেরা বেগম ধমকে উঠে বললো,

— কি হলো? কথা কানে যায় নি?ভিতরে যাও।

— সায়েবা কোথাও যাবে না আন্টি।সায়েবা এখন আমার সাথে পার্লারে যাবে।আপনি বরং অতিথি আপ্যায়নের ব্যবস্থা করুন।

ফায়জার কথা শুনে ফুসে উঠল সাহেরা বেগম। ক্রুদ্ধ গলায় বললো,

— তোমরা আমার মেয়েকে জোর করতে পারো না। দেশে আইন কানুন বলেও একটা কথা আছে।আমার অনুমতি ব্যতীত আমার মেয়েকে কিভাবে এখান থেকে নিয়ে যাও তা আমিও দেখবো 😠

সাহেরা বেগমের কথা শুনে ফরহাদ হাই তুলতে তুলতে বললো,

— দেশে অবশ্যই আইন কানুন আছে। আপনি বরং এক কাজ করুন আন্টি।আপনার হতে হতে না হওয়ার বিসিএস ক্যাডার জামাই কে কল করুন।আমি আপনার পাশে আছি।প্রয়োজনে আব্বু ও আপনাকে সাহায্য করবে।আমি থানায় কল করে আপনাকে ফোন ধরিয়ে দিচ্ছি। আপনি আপনার অভিযোগ নির্দিধায় জানান।এটা তো আর মগের মুল্লুক না।ফায়জু,তুই বরং সায়েবা কে নিয়ে যা।আন্টিকে সাহায্য করার জন্য আমি আছি এখানে।টেনশন নট।

(🥱🥱🥱🥱🥱🥱🥱🥱🥱সবাই কিছু বলে যান সায়েবার মা কে)

চলবে,,,,

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৫

বাহারি খাবারের গন্ধে চারিদিক মো মো করছে।রান্না প্রায় শেষের দিকে।সব কিছুর তদারকি করছে ফরহাদ নিজে।সায়েবার মা সোফার এক কোনায় মাথা চেপে ধরে বসে আছে। কিছুক্ষণ আগেই সানোয়ার সাহেব এসেছিল এলাকার কিছু গণ্যমান্য লোকজনদের নিয়ে।এসেই খুব বিনয়ের সঙ্গে সাহেরা বেগমের সাথে কথা বলেছেন তিনি। নিজের কথার জালে এভাবে ফেসে যাবেন তা কল্পনা ও করেন নি সাহেরা বেগম। সানোয়ার সাহেব এসেই তার সাথে কুশল বিনিময় করে বললেন,

— ওইদিনের কথা মনে রাখবেন না আপা।পুরো ঘটনা টাই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল।আমরা কেউ ভাবি নি লিজা এমন কিছু করবে। আমার স্ত্রী ছেলে কিন্তু আপনাদের হয়ে প্রতিবাদ করেছে। তার পরেও আমি ক্ষমা চাইছি। আমার ছেলেটা অনেক দূরে আছে।খুব আদরে তাদের বড় করেছি আমি।আপনি নিজের চোখেই দেখেছেন কতটা বিলাসিতায় বড় হয়েছে ওরা।আমার সেই ছেলে এখন অন্যের অধিনে চাকরি করছে।যেখানে আমার নিজের কোম্পানি তে সারে চার হাজার এমপ্লয়ি কাজ করে। বাবা হিসেবে নিজেকে ব্যার্থ মনে হয়। আমার একটা ছোট ভুলের জন্য এতো কিছু হচ্ছে। আপনি আর অমত করবেন না। ছেলেটা আমার পাগল হয়ে গেছে। খাওয়া ঘুম সব ছেড়ে দিয়েছে।আপনি কিন্তু কথা দিয়েছিলেন। এবার আপনার মেয়েটাকে আমাকে দিয়ে দিন।আমি তাকে আমার মেয়ের মতো করে রাখবো। তার কোন অসম্মান আমার বাড়ি তে হবে না আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি।

সানোয়ার সাহেবের কথা শুনার পর আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না সাহেরা বেগম। আসলে এই কথার পৃষ্ঠে কি বলা যায় তিনি ভেবে পেলেন না।তার নিরবতা কেই সম্মতি মনে করে সানোয়ার সাহেব সবাই কে তাড়া দিলেন সব কাজ তারাতাড়ি শেষ করার জন্য। সায়েবা কে নিয়ে অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে ফায়জা।সায়েবা যদিও যেতে চায় নি।ফায়জা ওকে জোর করে টেনে হিচরে নিয়ে গেছে।সব কিছু আমেরিকা বসে শুনছিলো ফারহান। তাকে ফোনে কানেক্টেড রেখেছে ফরহাদ।সাহেরা বেগমের কথা শুনে আগে থেকেই মিজাজ চড়ে ছিল ফারহানের।তার মধ্যে সায়েবার পার্লারে যাওয়ায় অসম্মতি জানানো আগুনে ঘি ঢালার কাজ করেছে।সামনে পেলে চড়িয়ে লাল করে দিত তাতে কোন সন্দেহ নেই। দাত কিড়মিড় করে বললো,

— এর জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে ধুলোর রানী।তোমার এই সামান্য অসম্মতি আমাকে সব চেয়ে বেশি রক্তাক্ত করেছে।আমি পাগলের মতো সবার সাথে তোমার জন্য লড়াই করছি!আর তুমি সামান্য নিজের মতামত টুকুও আমার পক্ষে দিলে না! অন্তত পক্ষে আমার পাশে তো থাকতে পারতে।তার মানে তোমার আমাকে ছাড়া ও চলবে।তবুও তোমার আমার হতে হবে। কারণ আমার তোমাকে ছাড়া চলবে না। শাস্তি টা না হয় আমার হয়েই ভোগ করলে।বিরহের আগুনে এবার আমার হয়ে তুমিই পুড়ো।আমি নাহয় তুমি আমার বলে নিজেকে শান্তনা দিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাবো।

🌸

পার্লারে বসে উসখুস করছে সায়েবা।পার্লারের মেয়ে গুলো বিরক্ত হয়ে গেছে সায়েবার নড়াচড়ায়।মেয়েটা এবার বিরক্ত হয়ে বলেই ফেললো,

— একটু শান্ত হয়ে বসুন ম্যাম।এতো নড়াচড়া করলে সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।

— আমার কিছু ভালো লাগছে না। যেকোনো এক ভাবে সাজিয়ে দিন তো। এতো ভালো করে সাজাতে হবে না।

পার্লারের মেয়াটা অসহায় চোখে তাকালো ফায়জার দিকে।

সায়েবার কথা শুনে বিরক্তিতে নাক মুখ কুচকে তাকালো ফায়জা।মুখ দিয়ে বিরক্ত সূচক শব্দ করে সায়েবার উদ্দেশ্যে বললো,

— তুমি কি বিয়েটা করতে চাইছো না সায়েবা?

সায়েবা অসহায় চোখে ফায়জার দিকে তাকালো। অস্থির গলায় বললো,

— আমি তো চাই বিয়ে টা হয়ে যাক আপুনি। কিন্তু মা তো রাজি নন।মায়ের অমতে,,

মাঝ পথেই থেমে গেলো সায়েবা।চোখ ছলছল করছে ওর।বাকি কথা গলায় আটকে গেলো। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।

— তোমার মা কে রাজি করানোর দায়িত্ব আমাদের সায়েবা। তুমি আপাতত রেডি হওয়ায় মন দাও।

ফায়জা শান্তনা দিলেও টেনশন কমছে না সায়েবার।এক প্রকার যুদ্ধ করেই সাজানো শেষ করলো। পার্লারের মেয়েগুলো যেন হাফ ছেরে বাচলো।

🌸

ফারহান চোখ বন্ধ করে ডিভানে বসে আছে। যথা সম্ভব নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে। পরিবার ছেড়ে থাকা পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে বিয়ে করার সময় সেখানে থাকতে পারছে না এই কষ্ট বুকের ভেতর হাহাকার করে তুলছে।আজ থেকে সায়েবা তার হয়ে যাবে।যার উপর একমাত্র তার অধিকার থাকবে।কিন্তু ইচ্ছে করলেই তাকে বুকে জরিয়ে নিতে পারবে না, তাকে সামনে বসিয়ে রেখে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে চোখ ভরে দেখতে পারবে না এটা কতটা কষ্টের তা একমাত্র সেই বুঝতে পারছে।এখন শুধু বধু বেসে তার প্রেয়সীকে দেখার অপেক্ষা।

— কি ভাবছো?

ইউসুফের কথায় চোখ খুলে তাকালো ফারহান। মলিন হেসে নিজের পাসে বসতে ইশারা করলো। ইউসুফ মুচকি হেসে ফারহানের পাশে বসলো।

— খুব চিন্তা হচ্ছে?

— নাহ।আব্বু সব ঠিক করে ফেলবে।

— তাহলে মন খারাপ করে আছো কেন?

— দূরত্ব খুব পোড়াচ্ছে।তাকে দেখার তৃষ্ণা ভিতরে ভিতরে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। যাকে এক মুহুর্ত না দেখে থাকতে পারতাম না তাকে আজ চারমাস হচ্ছে দেখি না। তোমাকে বোঝাতে পারবো না আমি আমার ঠিক কতটা কষ্ট হচ্ছে।

— তুমি কিন্তু বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসতে পারতে ফারহান।সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তুমি গেলে না।গেলে তো এখন আর এই কষ্ট সহ্য করতে হতো না।

ইউসুফের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ফারহান।মলিন হেসে বললো,

— না ইউসুফ।আমি সায়েবার আম্মু কে কথা দিয়েছি। আমি আমার কথা রাখবো।নিজের যোগ্যতায় আমি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবো। ততদিন আমি বাংলাদেশে ফিরে যাবো না।

ইউসুফ তপ্ত শ্বাস ফেলে ফারহানের দিকে তাকালো। ছেলেটার মুখটা শুকিয়ে গেছে। ইউসুফ জানে ফারহান ভিতরে ভিতরে ভেঙে পরেছে।তবে গম্ভীর ফারহান তা কাওকে বুঝতে দিচ্ছে না। ইউসুফ ফারহান থকে তিন বছরের বড়।ফারহান কে ছোট ভাই হিসেবেই দেখে ও।তাই উইসুফের ও আজ ফারহান কে দেখে খারাপ লাগছে।

🌸

বিকেল চার টার দিকে সায়েবাদের বাসায় সব মেহমান চলে এলো। সায়েবা কে আনা হয়েছে আধঘন্টা আগে। সাহেরা বেগম নিরব সম্মতি দিলেও গুম হয়ে আছে। সব কাজ ফারহান আর সানোয়ার সাহেব সামলাচ্ছে। ফারহানা বেগম সমস্ত জুয়েলারি এনে সায়েবা কে পরিয়ে দিয়েছে।সায়েবার সৌন্দর্য যেন প্রতিটি মানুষের চোখ ঝলসে দিচ্ছে। ফায়জা বার বার আফসোস করে বলছে,

— ইসস,আমার ভাইটা না আবার তোমার এই রুপ দেখে হার্ট অ্যাটাক করে বসে।অপুর্ব লাগছে।ছেলে হলে আজ ফারহানের সাথে একটা কম্পিটিশন দেয়া যেত।

ফায়জার কথা শুনে সবাই হাসিতে ফেটে পরলো।সায়েবার বান্ধুরা ও সবাই এসেছে।এই অল্প সময়ের মধ্যে কেউই পরিপাটি হয়ে আসতে পারেনি।তাই নীতি আর সাবা এখানে এসেই নিজেদের সাজ কমপ্লিট করছে।নীল কোন রকম একটা পাঞ্জাবি পরে এসেছে।তিন বন্ধুর কটমট দৃষ্টিতে সায়েবা শুকনো ঢোক গিলছে বারবার।

ওদের হাসাহাসির মধ্যেই আদিব তার দলবল নিয়ে হাজির।সকাল থেকে ফরহাদের সাথে বাজার করে সব কিছু পৌঁছে দিয়ে গেছে।তারপর ওই বিসিএস ক্যাডারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে বেচারার অবস্থা নাজেহাল।এসেই ফায়জার পাশে টান টান হয়ে শুয়ে পরলো।

— হাত পা গুলো একটু টিপে দাও তো।আজ অনেক কাজ করেছি।এখন আমি ক্লান্ত।

ফায়জার দিকে উচু করে পা এগিয়ে দিয়ে বললো আদিব।ফায়জা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে। এই ছেলেটা অতিরিক্ত পাকা।যাকে বলে ইঁচড়েপাকা। বেয়াদব টার সাহস কতো। ওকে বলে পা টিপে দিতে।আদিবের কথা শুনে সাবা গদগদ হয়ে বললো,

— আমি টিপে দেই আদিব ভাইয়া?

কথাটা বলেই যেন লজ্জায় মরে যাচ্ছে সাবা।ফায়জা দাত কিড়মিড় করে বললো,

— হ্যা হ্যা টিপে দাও।হাত পায়ের সাথে গলা টাও টিপে দিতে ভুলো না।

চলবে,,,,