সায়েবা আসক্তি পর্ব-১৬+১৭

0
551

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৬

বারান্দায় দাঁড়িয়ে নিজের রুমের দিকে তাকিয়ে আছে সায়েবা। এখান থেকেই ফারহান তার দিকে তাকিয়ে থাকতো। হ্যা,সায়েবা এখন ফারহানের রুমে।এ বাড়িতে আসা হলেও ফারহানের রুমে কখনো আসা হয় নি সায়েবার। প্রথম থেকেই তাদের মধ্যে একটা দূরত্ব কাজ করত।ফারহান সব সময় তাকে এড়িয়ে চলতো।কখনো সামনা সামনি দাঁড়িয়ে দুই একটা কথা বকেছে কি না মনে পরছে না।রাগী গম্ভীর মুখে ঘুরে বেরানো ছেলেটার প্রেমে পড়ে যাবে ভাবতেই পারে নি সায়েবা।ফারহানদের পরিবারের সবাই হাসি খুশি হলে ও ফারহান সব সময় গম্ভীর। সবার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক হলেও ফারহানের সাথে কখনো স্বাভাবিক কথা ও বলা হয়ে উঠে নি।ফারহানের এই গম্ভীরতা আরো বেশি আকৃষ্ট করেছে সায়েবা কে।ফারহান গম্ভীর চোখে যখন সায়েবার দিকে তাকাতো তখন মনের মধ্যে হাজার প্রজাতির ডানা মেলে উড়তে শুরু করতো।তাই একদিন সাহস করে ফারহান কে মনের কথা বলে দিয়েছিল সেদিন। ফারহান যখন ঠান্ডা মাথায় তাকে রিজেক্ট করে দিলো তখন সায়েবার অনেক কষ্ট হয়েছিল।রাগে অপমানে কয়েকদিন ভার্সিটি তেই যায় নি। ফারহানের ক্লাসমেট মিজান যখন তাকে নানা ভাবে অপমান করে তখন আর সায়েবা সহ্য করতে পারে নি। ফারহানের উপর সমস্ত ক্ষোভ ঢেলে দিয়েছে।তারপর থেকেই ফারহানের আচরণ বদলে গেছে।সে ও বুঝিয়েছে সে সায়েবা কে কতটা ভালোবাসে। লিজার সাথে হওয়া ঝামেলার পরে দুজনের মধ্যে দূরত্ব আসলেও ভালোবাসার কমতি ছিল না। কিন্তু আজ ফারহানের ব্যবহারে অনেক বেশি অবাক হয়েছে সায়েবা।ভিডিও কলে খুব সাধারণ ভাবেই উপস্থিত হয়েছিল ফারহান।তাকে দেখে মনে হয় নি আজ তার বিয়ে।অথচ সায়েবা পটের বিবি সেজে বসেছিলো। সবাই যেখানে সায়েবার রুপের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সেখানে ফারহান তার দিকে একবার তাকিয়েও দেখেনি।কবুল বলার সময়ও সায়েবা ফারহানের দিকে তাকিয়ে ছিল।কিন্তু ফারহানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। সে মাথা নিচু করে বসে ছিল।ফারহানের ব্যবহারে সবাই অবাক হলেও কেউ কিছু বলে নি। সবাই ভেবেছে লজ্জায় হয়তো ফারহান এমন করছে। কিন্তু সায়েবা ঠিক ই।বুঝতে পেরেছে ফারহান তার উপর কোন কিছু নিয়ে রেগে আছে।বিয়ে শেষ হতে না হতেই ফারহান সবাই কে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে সায়েবা এখন থেকে তাদের বাসায় থাকবে।নিজেদের বাড়িতে সারাদিন আসা যাওয়া করলেও রাতে ও বাড়িতে ই থাকতে হবে। সাহেরা বেগম অসম্মতি জানালেও তাকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছেন ফারহানা বেগম।

এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই সায়েবা ফারহানের বেডের মাঝ বরাবর শুয়ে পরলো। এখানে আসার পরেও ফারহান সায়েবার সাথে কথা বলে নি।সবার কাছে কল করলে ও সায়েবার কাছে ফারহান এখনো একটা এস এম এস ও করে নি। এর জন্য সায়েবার মন টা ভার হয়ে আছে।সায়েবা মনে মনে ভেবে নিয়েছে ফারহান হয়তো রাতে তাকে কল করবে।কিন্তু মাঝ রাত হয়ে যাওয়ার পরেও যখন ফারহান কল করলো না তখন সায়েবার মন খারাপের মেঘলা আকাশ বৃষ্টি হয়ে ঝরতে শুরু করলো।

বিছানার উপর সায়েবার শরীরের হালকা কাপুনি দেখে ফারহান বুঝতে পারছে সায়েবা কাদছে।ল্যাপটপের স্ক্রিনে প্রেয়সীর কান্নারত আদুরে মুখের উপর হালকা স্পর্শ করলো ফারহান। সায়েবার মোহনীয় রুপে ফারহানের পাগল হওয়ার অবস্থা। বধুবেশে সায়েবা কে কল্পনার থেকে ও বেশি সুন্দর লাগছিলো।ফায়জার পাঠানো প্রত্যেকটা ছবি এ পর্যন্ত হাজার বার দেখে ফেলেছে ফারহান। সায়েবার উপর রাগ করে এখনো সায়েবার সাথে কথা বলে নি ফারহান।তাই বলে বউ কে তো আর না দেখে থাকা যায় না। তাই বেডরুমে আদিব কে দিয়ে আজকেই ক্যামেরা লাগিয়েছে ফারহান।সায়েবা যখন বেডরুমে প্রবেশ করে তখন ফারহানের হৃদয়ে যেন এক শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। মনের প্রশান্তি বলে দিচ্ছিলো এই রমনী আজ থেকে একান্ত তোমার ব্যক্তিগত মানুষ। যার উপর সব চেয়ে বেশি অধিকার একমাত্র তার নিজের।ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই ফোন হাতে নিলো ফারহান। শাস্তি পরেও দেয়া যাবে। তবে আজকের এই স্পেশাল রাতে শাস্তি একটু শিথিল করা হলো। স্ক্রিনে চোখ রেখেই মুচকি হেসে সায়েবার নাম্বারে কল দিল ফারহান।

ফোনের শব্দে ধ্যান ভাংলো সায়েবার।কান্না করতে করতে ফোন হাতে নিয়ে নাম্বার দেখেই হুড়মুড়িয়ে উঠে বসলো সায়েবা।হুট করেই কান্না থেকে গিয়ে হিচকি উঠে গেলো। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে hubby নামটা।ফায়জা ই যে এই নামে নাম্বার সেভ করে দিয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। এতক্ষণ পরে পিটে কান্না করলেও এখন মনের মধ্যে একরাশ লজ্জা এসে ভর করেছে সায়েবার।অজানা ভয়ে বুকের ভেতর ধুকপুক করছে।সায়েবার ভয় হচ্ছে, কল রিসিভ করলে ফারহান তার বুকের ধুকপুকানি শুনে না নেয়!

এদিকে সায়েবার লজ্জা রাঙা মুখ দেখে ফারহানের বুকের অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে। এমন একটা লাল টুকটুকে বউ রেখে এখানে আরো দেড় বছর কাটাতে হবে ভাবতেই তো দম বন্ধ হয়ে আসছে!চট করেই চোখ সরিয়ে নিলো ফারহান।ধুপধাপ পা ফেলে জানালার গ্লাস খুলে দিলো। বউ কে দেখেই অক্সিজেনের ঘাটতি তে মরে যাচ্ছে সে।সামনে পেলে না জানি কি হবে।

স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই কল কেটে গেছে। সায়েবার এখন আফসোস হচ্ছে কেন তখন কল রিসিভ করলো না। লজ্জা তো পরে একা একাও পাওয়া যেত!ধ্যাৎ! প্রায় দশ মিনিট পরে আবার কল এলো সায়েবার মোবাইলে। এবার আর দেরি করলো না সায়েবা। ঝটপট কল রিসিভ করে ফেললো। কিন্তু মুখ দিয়ে তো কথাই বের হচ্ছে না। ওদিকে ফারহান ও চুপ করে আছে।ফারহানের ঘন নিশ্বাস সায়েবার কথা গলায় ই আটকে দিয়েছে।আনমনে এক হাত গালে চলে গেছে খেয়াল হতেই থতমত খেয়ে হাত নামিয়ে নিলো সায়েবা।সায়েবার অবস্থা দেখে মুচকি হাসলো ফারহান।বউ কি তাকে ভয় পাচ্ছে? তাহলে আরেকটু ভয় দেখানো যাক!

— সায়েবায়ায়ায়ায়া,,,,

ফারহানের গম্ভীর গলা শুনে কেপে উঠল সায়েবা।কম্পিত গলায় বললো,

— জ জ্বি।

— এখনো ফ্রেশ হও নি কেন?

সায়েবার মুখটা এবার কাদো কাদো হয়ে গেলো। সে তো ফারহানের জন্যই এতক্ষণ এভাবে বসে ছিলো। তার সমস্ত সাজ সজ্জা ফারহান না দেখলে সব বৃথা তার কাছে।কিন্তু মুখে বললো,

— এমনি।

সায়েবার অভিমানী মুখের দিকে ঘোর নয়নে তাকিয়ে রইলো ফারহান।সায়েবা কে এখন আদুরে বিড়াল ছানার মতো লাগছে।এই মেয়েটা কি জানে? তার এই এলোমেলো বধুবেশ কতটা মোহনীয় করে তুলেছে তাকে?

— আমার জন্য অপেক্ষা করছিলে সায়েবা?

সায়েবা অভিমানী গলায় বললো,

— নাহ।

— তাই বুঝি?তাহলে এতো অভিমান কেন?

সায়েবা কিছু না বলে ঝরঝর করে কেদে উঠল।এদিকে ফারহান প্রেয়সীর কান্না থামানোর বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখখালো না।উল্টো মনোযোগ দিয়ে সায়েবার কান্না মাখা গলার অভিযোগ শুনতে লাগলো।

🌸

ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে আদিব।বন্ধুদের মধ্যে সেই একমাত্র সিগারেট খায়।ফারহানের হাতে কয়েক দফা উত্তম মধ্যম খেয়ে ও সিগারেট ছারতে পারে নি সে।কারোর পায়ের শব্দ শুনে সিগারেট পা দিয়ে পিশে নিভিয়ে ফেললো সে।

— তুমি এখানে কি করছো আদিব?

ফায়জার গলা শুনে হাসি হাসি মুখ করে ঘুরে তাকালো ফায়জার দিকে।ফায়জার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিয়ে দুষ্টু হাসলো আদিব।ন্যাকামি গলায় বললো,

— তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম সোনা।আসো একসাথে চাঁদ দেখি। আহ দাঁড়িয়ে রইলে কেন?আসো আসো।

আদিবের কথা শুনে দাত কিড়মিড় করে তাকালো ফায়জা।মুখে বললো,

— অসভ্য।

— তুমি আমার ভালোবাসা বুঝলা না!(অসহায় গলায়)

— চুপ করো বেয়াদব ছেলে।আমি ফারহানের বড় বোন সে খায়াল আছে তোমার?আজ থেকে আমাকে আপু বলে ডাকবে। আর একবার যদি আমার সাথে এসব উল্টো পালটা কথা বলতে শুনেছি তাহলে থাপ্পড় দিয়ে দাত ফেলে দিবো।

ফায়জার রাগী গলা শুনে ও কোন ভাবাবেগ হলো না আদিবের। চেহারার দুঃখী দুঃখী ভাব এনে বললো,

— দাত ফেল বা হাত পা ভাঙো আমি তোমার পিছু ছাড়ছি না। বিয়ে তো আমি তোমাকেই করবো। সবার কপালে তো আর শান্ত ভদ্র বউ থাকে না!আমার কপালে না হয় জামাই পেটানো বউ থাকলো। বিয়ের পর তার হাতে মার খেয়ে তার হাসপাতালেই ভর্তি হবো।তার সেবা যত্নে সুস্থ হয়ে আবার মার খাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে বাসায় যাবো। সবার কপালে তো আর বউয়ের আদর জোট না বলো?

আদিবের দুঃখ দুঃখ গলায় বলা কথা শুনে চোয়াল ঝুলে গেলো ফায়জার।মনে মনে সেও দুঃখ করে বললো,

— আহা আদিবের বউটা আসলেই ভভয়ংকর!

চলবে।

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৭

ফারহানের সাথে কথা বলতে বলতে সায়েবা কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেই টের পায়নি। শাড়ি গয়না পরে এতো আরাম করে ঘুমানো যায় সায়েবা কে না দেখলে বুঝতেই পারতো না ফারহান। সায়েবা অবশ্য জানে না তার প্রতিটা মুভমেন্টে কেউ গভীর ভাবে অবলোকন করেছে।জানলে হয়তো বেচারি লজ্জায় কুকড়ে যেত।ফারহানের চোখ আজ নির্লজ্জের মতো একমনে সায়েবা কে দেখে যাচ্ছে।সায়েবার আদুরে মুখটার উপর হালকা বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখা যাচ্ছে। এই ভারি শাড়ি গয়না পরে মেয়েটার হয়তো গরম লাগছে।ফারহান অনলাইনে ঢুকে দেখলো ফায়জা লাইনে আছে কিনা।ফায়জা কে অনলাইনে দেখেই তাকে মেসেজ করলো,
‘আমার রুমের এসি টা একটু ছেরে দিয়ে আসো আপু।প্লিজ ❤️❤️❤️’

ফোন টা আবার কানে ধরে সায়েবার দিকে ধ্যান দিলো ফারহান। মিনিট পাচেক পরেই ফায়জা এলো ফারহানের রুমে। সায়েবা কে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে কপাল চাপড়ালো নিজের।তার ই ভুল!একবার এসে সায়েবা কে ফ্রেশ হতে হেল্প করা উচিত ছিল।ফায়জা সায়েবার কাছে এসে কয়েকবার ডাকলো।সায়েবা এখন গভীর ঘুমে বিভোর। ফারহান কপাল কুচকে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ফায়জা সায়েবা কে ডাকছে কেন বুঝতে পারছে না সে।বউয়ের ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে বোন!এটা একটা কথা!

ফায়জা ডাকতে ডাকতে হাপিয়ে উঠলেও সায়েবার ঘুম ভাঙলো না।ক্লান্ত চোখে সায়েবার দিকে তাকিয়ে নিজেই সায়েবার গয়না খুলতে লাগলো সে।এক এক করে সমস্ত গয়না খুলে রেখে আচল সরাতেই ফারহান ধপ করে ল্যাপটপ বন্ধ করে দিলো।কি ভয়াবহ অবস্থা! তার বোন এতো ভয়ংকর হলো কবে থেকে? কপালের ঘাম মুছে কল ডিসকানেকট করে ফোন রেখে দিলো ফারহান। আজ আর কল করবে না সে।এখন মনে হচ্ছে ক্যামেরা লাগিয়ে মারাত্মক ভুল করে ফেলেছে সে।আর কি কি ভয়ংকর পরিস্থিতি তে পরতে হবে কে জানে!

🌸

কাল রাতে দেরি করে ঘুমানোর দরুন আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে সায়েবার।দশটায় ঘুম ভাঙতেই তড়িঘড়ি করে ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজ পড়ে নিচে গেলো সায়েবা। কাল সবাই ই ঘুমাতে গিয়েছে দেরি করে। তাই সবাই ই লেট করে উঠেছে।সোফায় বসে আদিব বড় বড় হাই তুলছে।সায়েবা কে দেখতেই মিষ্টি হাসলো আদিব।হাসতে হাসতেই আবার হাই তুললো সে।ঘুম জরানো কন্ঠে বললো,

— ঘুম কেমন হলো ভাবি সাহেবান?

আদিবের অবস্থা দেখে সায়েবা উদ্বিগ্ন হয়ে বললো,

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া।আপনি এভাবে বসে আছেন কেন?রাতে ঘুম হয় নি?

সায়েবার কথা শুনে আদিব মুখটা কাদো কাদো করে ফেললো, আফসোসের স্বরে বললো,

— কি আর বলবো ভাবি সাহেবান।রাতে সব কিছু গুছিয়ে ঘুমাতে অনেক দেড়ি হয়েছে।ভাবলাম সকালে দেড়ি করে উঠলেও কোন সমস্যা নেই।কিন্তু ঘুমাতে পারলে তো!তোমার ননদের নাক ডাকার শব্দে আমার রুম ভুমিকম্পের মতো কেপে উঠে একটু পর পর। ভয়ের চোটে সারা রাত টেবিলের নিচে ঢুকে ছিলাম।একরাত না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেয়া যাবে।কিন্তু জীবন তো একটাই বলো?ওই টা চলে গেলে তো আর পাওয়া যাবে না! কোন রকম প্রান বাচিয়ে রাত টা পার করেছি।তাই সকাল সকাল এসে এই সোফায় আশ্রয় নিয়েছি।কি আর বলবো,রাক্ষুসি দের মতো করে নাক ডাকে।তুমি শুনতে পাও নি?

আদিবের কথা শুনে চোয়াল ঝুলে গেলো সায়েবার।চোখ তুল সামনে তাকাতেই শুকনো ঢোক গিলে জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো,

— কি সব বলছেন ভাইয়া!ফায়জা আপু নাক ডাকেন না।আপনি হয়তো ভুল শুনেছেন।

সায়েবার কথায় ঘোর আপত্তি জানিয়ে আদিব বললো,

— আমি একটু ও ভুল শুনি নি সাহেবান। কি ভয়ংকর শব্দ!আমার ভুল হতেই পারে না।

সায়েবা অসহায় গলায় বললো,

— তাহলে আমি শুনলাম না কেন?

— আল্লাহ বাচাইছে তুমি শুনো নি।না হলে আজ পত্রিকার হেডলাইন বের হতো, ননদের নাক ডাকার শব্দে প্রাণ হারালো এক অবলা বধু।তখন আমাদের ফারহানের কি হতো বলো?তবে আমার চিন্তা অন্য জায়গায়। ধরো তোমার ননদ কে বিয়ে দিলে,কিন্তু পরের দিন খবর এলো তোমার নন্দাই বউয়ের নাক ডাকার শব্দে পটল তুলেছে।সবাই আমার মতো সাহসি না ও হতে পারে। তোমার শশুড় তো আবার ডাক্তার ছাড়া মেয়ে বিয়ে দিবে না। এখন তোমার ননদের জন্য একজন তরতাজা ডাক্তার মরে যাবে এটা মেনে নেয়া যাচ্ছে না। ডাক্তার আমাদের দেশের সম্পদ।তোমার ননদ আমাদের দেশের এতো মুল্যবান সম্পদ নষ্ট করবে তা আমি কোন দিন মেনে নিবো না। তাই দেশের সম্পদ বাচাতে আমি নিজেকে কোরবানি করে তোমার ননদ কে বিয়ে করার ভার নিজের কাধে নিয়েছি।বুঝেছো?

সায়েবার চেহারা আরো করুন হয়ে গেলো। আদিবের দিকে দুঃখ দুঃখ চোখে তাকিয়ে বললো,

— আমি আপনাকে খুব মিস করবো ভাইয়া।আপনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন।এখন কি আর করার!মানুষের হায়াত যতদিন ততদিন ই তো বাচবে।সব আল্লাহর ইচ্ছা। আপনার এই করুন পরিনতি আমি নিজ চোখে দেখতে পারবো না ভাইয়া।আমি বরং রুমে চলে যাই।ওপারে ভালো থাকবেন।

সায়েবার দিকে বোকা চোখে তাকিয়ে আছে আদিব।সায়েবা কথা পুরো তার মাথার উপর দিয়ে গেছে।

— কি বলছো সাহেবান?আমি কিছু ই বুঝতে পারছি না।

সায়েবা মলিন চোখে ইশারায় পেছনে তাকাতে বললো আদিব কে। সায়েবার ইশারায় আদিব পেছনে তাকাতেই ধপ করে সোফা থেকে নিচে পরে গেলো। সায়েবার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আবার ফায়জার দিকে তাকালো। ফায়েজা রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আদিব কাদো কাদো গলায় বললো,

— গুড মর্নিং সোনা।

ফায়জা রাগে নিজের হাতের জুস পুরো টা আদিবের মাথায় ঢেলে দিলো।দাত কিড়মিড় করে বললো,

— বেয়াদব ছেলে।বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না।তোমাকে বলেছি না আমাকে আপু বলে ডাকবে।আমি তোমার চার বছরের বড় সেটা মাথায় আছে?অসভ্যের মতো আচরণ করলে দাত ফেলে দিবো। আজ থেকে যদি আমাকে আপু বলে না ডাকো তাহলে তোমার চেহারার নকশা বদলে দিবো নির্লজ্জ ছেলে।

— দেখো, তুমি মারলে আমি কিছু মনে করবো না। কিন্তু তবুও আমি তোমাকে আপু বলে ডাকবো না।না মানে না।এখন তুমি আমার চেহারার নকশা বদলাও বা মানচিত্র আই ডোন্ট কেয়ার।

কথাটা বলেই আদিব অভিমানী বাচ্চাদের মত মুখ ঘুরিয়ে নিলো।ফায়জা নিজের কপাল চাপড়ালো।এই ছেলেটা ফারহানের ছোট বেলার ফ্রেন্ড। একদিন দুষ্টুমি করে ফারহান বলেছিলো আদিবের কাছে ফায়জা কে বিয়ে দিয়ে তাকে দুলাভাই করে রেখে দিবে।তখন থেকে এই ছেলে হাত ধুয়ে তার পেছনে পরে আছে। তখন ছোট ছিল তাই অবুঝের মতো করলেও মেনে নেয়া যেতো। কিন্তু এখন তো বড় হয়েছে।এখন এমন করার মানে কি। ফায়জা মনে মনে আদিব কে কয়েক দফা পাগল বলে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো।

🌸

রুমে আসতেই সায়েবার ফোন বেজে উঠল। ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো সায়েবা।রিসিভ করতেই শোয়েবের অস্থির গলা হাজার খানেক প্রশ্ন হাজির।

— কেমন আছো আপু?নাস্তা করেছো?কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?

— আরে থাম থাম।এক সাথে এতো গুলো উত্তর দিবো কিভাবে?তুই এই বাসায় চলে আয়।

— আমাকে ছাড়া ই বিয়ে করে নিলে!আমি তোমাদের কারোর সাথে কথা বলবো না।

শোয়েবের অভিমানী গলা শুনে সায়েবার চোখে ও পানি চলে এলো। তার বিয়ে তে তার একমাত্র ছোট ভাই ছিল না তাতে কি তার কষ্ট হয় নি?

চলবে,,,