সায়েবা আসক্তি পর্ব-১৮+১৯

0
537

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৮

আজ তিন দিন হলো শোয়েব বন্ধুদের সাথে ট্যুরে গিয়েছে।সায়েবার হঠাৎ করে বিয়ে হয়ে যাওয়া সে আসতে পারে নি।যদিও সায়েবার বিয়ে ঠিক হওয়ার খবর টা সে ই দিয়েছে ফারহান কে।তবে ফারহান এভাবে একেবারে বিয়ে ই করে ফেলবে এটা ভাবে নি।তাই সে ফারহানের উপরে ও ভয়ংকর ভাবে ক্ষেপে আছে।
সায়েবা অনেক কষ্টে শোয়েব কে শান্ত করলো। শোয়েব কে প্রমিস করলো শোয়েব আসলে সে যা চায় তাই দিবে তাকে।অনেক চেষ্টার পর শোয়েব শান্ত হলো। বোনের থেকে বিদায় নিয়ে কল কেটে দিতেই নিচ থেকে চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ পাওয়া গেলো। বিয়ে তে খুব একটা মানুষ না হলেও গুটি কয়েক আত্মীয় এসেছে।ফারহান খালা, নানা, মামারা সবাই ই এসেছে।তবে ফারহানের ফুপু আর লিজা আসে নি।সায়েবা নিচে যেতে সংকোচ বোধ করছে।যাবে কি যাবে না চিন্তা করতে করতেই তার ফোন আবার বেজে উঠল। স্ক্রিনে hubby নাম টি দেখে সায়েবা তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করলো।

— আসসালামু আলাইকুম।

— ওয়ালাইকুম আসসালাম।খেয়েছো সকালে?

ফারহানের গম্ভীর গলা শুনে সায়েবা তাকিতুকি করতে লাগলো। সে যদি এখন বলে সে খায় নি তাহলে নির্ঘাত ফারহান তাকে দানবীয় ধমক দিবে।আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফারহান কোমল গলায় বললো,

— খাও নি কেন সায়েবা?তুমি কি আমাকে অনুতাপের আগুনে মারতে চাও?

ফারহানের কথায় অবাক হয়ে গেলো সায়েবা।দ্বিধা গ্রস্থ গলায় বললো,

— মানে?

ফারহান আগের চেয়েও শীতল কণ্ঠে বললো,

— এখন বাংলাদেশ সময় বারোটা এগারো বাজে সায়েবা।তুমি এখনো কিছু খাও নি কাল বিয়ের ঝামেলায় ঠিক মতো খেতে পারো নি।এতক্ষণে তোমার ব্রেকফাস্ট করা উচিত ছিল। আমি থাকলে তোমাকে এভাবে না খেয়ে ঘুরতে দিতাম বলো?জানো ই তো আমাদের বাসার সবাই বিজি।হঠাৎ করে বিয়ে হওয়ায় কেউ ই নিজের কাজ সামলে উঠতে পারে নি। আম্মু সকাল সকাল হসপিটালে চলে গেছে।আব্বু আর ভাইয়া ও অফিসে চলে গেছে।আপু কাল রাতে লেট করে ঘুমানোর দরুন সকাল সকাল উঠতে পারে নি। আম্মু সুমি কে বলে দিয়েছিল তোমাকে ব্রেকফাস্ট দেয়ার জন্য। তুমি ঘুমাচ্ছিলে তাই তোমাকে ডাকতে নিষেধ করেছি আমি।শোন সায়েবা,আমাদের ফ্যামিলির বউ তুমি।তুমি আগে থেকেই আমাদের সম্পর্কে সব কিছু জানো।তোমাকে নতুন করে জানানোর কিছুই নেই।আমাদের পরিবারের সবাই তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসে। তবে শ-শরীরে হয়তো তোমার খেয়াল তারা রাখতে পারবে না। তাই তোমার উচিত তোমার নিজের সংসারে তুমি যতটা রাজত্ব করে চলবে ততটা রাজত্ব করা।আমার এই ছোট্ট রাজ্যের রানী তুমি।রানীর মতো থাকবে তুমি।পুরো টাই তোমার রাজত্ব। আর নিজের রাজত্বে কি কারোর দ্বিধা বা ভয় থাকে বলো?কোন কিছু নিয়ে হেজিটেট করবে না। তোমার কাছে না থাকা অবস্থায় নিজের অবহেলা করো না রানী সাহেবা। তাহলে আমার খুব অনুতাপ হবে এই দুরত্বে।আমি পাশে থাকা অবস্থায় যত পারো অবহেলা করো।আমি আমার ভালোবাসায় সমস্ত টা পূর্ণ করে দিবো। নিজের খেয়াল রাখবে।সুমি ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসছে।ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নিবে। ঠিক আছে?

সায়েবার চোখে অশ্রুরা ভীড় করেছে।এতো ভালোবাসা ও বুঝি নসিবে ছিল। মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজার বার শুকরিয়া আদায় করে নিলো। মিনমিনে গলায় বললো,

— আমি খেয়ে নিবো আর নিজের খেয়াল ও রাখবো। আপনি চিন্তা করবেন না। (একটু থেমে)
আপনি খেয়েছেন?

সায়েবার কথা শুনে মুচকি হাসলো ফারহান।সায়েবার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে নেশালো গলায় বললো,

— সুন্দর লাগছে বউ।ঠিক আমার স্বপ্নের মতো।

সায়েবা থতমত খেয়ে গেলো। বোকা গলায় বললো,

— এ্যা???আপনি,,,,

সায়েবা কথা শেষ করার আগেই হুড়মুড় করে সায়েবার রুমে ঢুকে পরলো লিজার মা মিসেস শাহানা।তার পিছনে লিজা আর ফায়জা ও এসেছে।ফায়জা বিরক্তি তে মুখ কুচকে রেখেছে।আর লিজা ন্যাকা কান্না করে যাচ্ছে।

সায়েবা এতো গুলো মানুষ কে এক সাথে দেখে হচকচিয়ে গেলো। ফারহান লাইনে আছে বেমালুম ভুলে গিয়ে মিসেস শাহারার সামনে গিয়ে তাকে সালাম দিলো। এদিকে ফারহান নিজের ফুপি কে দেখে চোয়াল শক্ত করে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। শাহারা বেগম সালামের জবাব দিয়ে সায়েবা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘুড়িয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।তার এমন দৃষ্টি দেখে অস্বস্তি তে সায়েবা নিজেকে গুটিয়ে নিলো। শাহারা বেগম তা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,

— কাক ময়ূরের পেখম লাগিয়েছে।এতো ভালো সাজার নাটক করছো কেন মেয়ে?কতটা নির্লজ্জ হলে একটা মেয়ের বাগদত্তা কে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে বিয়ে করা যায় তা তোমাকে না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি তোমাদের মা মেয়ের চাটুকারিতা দেখে।ভোলা ভালা সেজে কি ভাবে বড় লোকের ছেলে ফাসাতে হয় তা তোমাদের থেকে শেখা উচিত। দুশ্চরিত্রা মেয়েছেলে। আর কয়জন কে ফাসিয়েছো এভাবে?টাকার এতো লোভ থাকলে আমাকে বলতে। টাকা দিয়ে ভরিয়ে দিতাম।আমার মেয়ে থেকে তার ভালোবাসা কেড়ে নিলে কেন?কি দিয়ে ভুলিয়েছো ফারহান কে? এই রুপ দিয়ে?রুপ দিয়ে ফাসানো কি তোমাদের পেশা নাকি?

সায়েবা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শাহারা বেগমের দিকে দৃষ্টি তার।আজ আর কাদছে না সে।সে ও দেখতে চায় এই মহিলা আর কি কি বলতে পারে।কিন্তু ফায়জা চুপ করে থাকতে পারলো না। শাহারা বেগমের কাছে গিয়ে দাতে দাত চেপে বললো,

— নিজের জবানে লাগাম দাও ফুপ্পি।কোথায় দাঁড়িয়ে কাকে কি বলছো ভেবে দেখেছো।একটা মেয়ে মানুষ হয়ে আরেকটা মেয়ে কে এতো নিচু মানের কথা বলতে লজ্জা করলো না তোমার। ছিঃ।

— তুই চুপ কর।আমি জানি আমি কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছি।এটা আমার ও বাড়ি।তাই আমার বাড়ি য়ে এই থার্ড ক্লাস মেয়েকে আমি এলাও করবো না। আর আজ ভাইয়ার সাথে আমার বোঝা পরা আছে।

— তুমি ভুল বললে ফুপ্পি।এটা তোমার বাড়ি নয়।এটা আমার বাবার বাড়ি।আমার আব্বু নিজের ইনকামে এই বাড়ি করেছে।আর তোমার নিজের ভাগের সম্পত্তি তুমি অনেক আগেই দাদুভাইয়ের থেকে লিখে নিয়েছো।আমার বাবার সম্পত্তিতে তোমার কোন অধিকার নেই।ভাইয়ের বাড়িতে এসেছো, বেরাবে।এটা তোমার হক।তাই বলে আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের বাড়ির বউকে অপমান করবে তা আমরা মেনে নিবো না।

ফায়জার দিকে দাত কটমট করে তাকালো শাহারা বেগম। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে এক থাপ্পড়ে সব কয়টি দাত ফেলে দিতে।

— বেয়াদব মেয়ে।বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?

— সেটা নির্ভর করে সে বড় মানুষ টা কে?

লিজা তার মায়ের হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে যেতে যেতে সায়বার দিকে তাকিয়ে বললো,

— এই অপমানের বদলা আমি নেব।আমি ও দেখে নিবো তুমি কিভাবে এ বাড়িতে থাকো।

— সেটা নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আমার বাবার অনেক বাড়ি আছে।যেটা তে ইচ্ছা থাকবে।

সায়েবা এখনো নির্বাক।বিয়ের পরের দিনই এমন পরিস্থিতিতে পরতে হবে ভাবতে পারে নি সে।ফারহান কল কেটে আবার কল করলো সায়েবা কে। সায়েবা নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কল রিসিভ করলো,

— মন খারাপ হয়েছে?

ফারহানের শান্ত গলা শুনে মুচকি হাসলো সায়েবা।দৃঢ় গলায় বললো,

— এইসব ছোট খাটো বিষয় নিয়ে মন খারাপ করলে রানী তার রাজ্য চালাবে কিভাবে?

ফারহান শব্দ করে হেসে ফেললো।

— এই অবস্থায় আর পরতে হবে না। আজ এর স্থায়ী সমাধান হয়ে যাবে।আমার উপর বিশ্বাস আছে তো?

— নিজের থেকে ও বেশি।

— খেয়ে নাও।একটু পরে মা আর শোয়েব আসবে।তাদের সাথে ও বাড়িতে চলে যেও।রাত দশটার দিকে আপু গিয়ে নিয়ে আসবে তোমাকে।আমার এখানে এখন রাত।আমি ঘুম থেকে উঠেই তোমাকে কল করবো।আল্লাহ হাফেজ।

— আল্লাহ হাফেজ।

ফায়জা দুষ্টু হেসে বললো,

— বা বা, এতো প্রেম?

— হুম।অনেক।(মুচকি হেসে)

— ফুপ্পির কথায় কিছু মনে করো না সায়েবা।আর লিজা থেকে একটু দূরে দূরে থেকো।

— আমি কিন্তু এতোটা ও ভালো নই আপু।(শয়তানি হেসে)

চলবে,,,

#সায়েবা_আসক্তি
#লেখিকা_সানজিদা_বিনতে_সফি
#পর্ব_১৯

সানোয়ার সাহেব মুখ কুচকে বসে আছেন ড্রয়িং রুমে। তার সামনের সোফায় বসে শাহানা বেগম ন্যাকা কান্না করে যাচ্ছে। ফারহানা বেগম চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ননদ আর ননদের মেয়ের দিকে।দুটো ই পাক্কা অভিনেত্রী।

— তোমার মেয়ে আর ছেলের বউ আমাকে অপমান করেছে ভাই।তোমার মেয়ে বলেছে এটা আমার বাড়ি না।আমার এই বাড়িতে কোন অধিকার নেই।আরো কত কি বলে অপমান করেছে।বাবা মা বেচে থাকলে আজ আমাকে এই দিন দেখতে হতো না। তুমি বদলে গেছো ভাই।অবশ্য তোমার কোন দোষ নেই। মানুষের প্ররোচনায় পরে এমন হয়েছো তা আমি জানি।

শেষের কথাটা ফারহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো শাহানা বেগম।

ফারহানা বেগম আগের মতোই তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সে দিকে চোখ পরতেই থতমত খেয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো শাহানা বেগম।শুস্ক চোখ আচল দিয়ে মোছার ভঙ্গি করতেই পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো ফরহাদ।শাহারা বেগম কৃতজ্ঞতার চোখে তাকিয়ে পানি খেতে নিতেই ফরহাদ বললো,

— খেতে দেই নি ফুপ্পি।আসলে তোমার চোখে তো পানি ছিল না তাই মনে হলো তোমার চোখ ভিজিয়ে নেয়া উচিত। বার বার এভাবে শুকনো চোখ মুছতে থাকলে চামরা উঠে যেতে পারে।

ফরহাদের দিকে কটমট করে তাকালো শাহানা বেগম।সব কয়টা আস্তো বদমাইশ হয়েছে। ফরহাদের কথা শুনে সবাই ঠোঁট চেপে হাসছে। লিজা আর তার মায়ের মুখ অপমানে থমথমে হয়ে আছে।

সানোয়ার সাহেব গম্ভীর গলায় ধমক দিলেন সবাইকে।শাহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,

— দেখ শাহানা,তুই আমার ছোট বোন।আমি খুব ভালোবাসি তোকে।লিজা কে ও নিজের মেয়ের মতোই মনে করি।তুই আমার কাছে যে আবদার করেছিলি আমি চেষ্টা করেছি তা রাখার।কিন্তু যেখানে আমার ছেলে আর পরিবারের কেউই রাজি না সেখানে আমি তো আর তাদের জোর করতে পারি না।

সানোয়ার সাহেবের কথা শুনে তেতে উঠলেন শাহানা বেগম। রুক্ষ গলায় বললেন,

— তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলে ভাই।লিজার বাবা যদি জানে ফারহান বিয়ে করে ফেলছে তাহলে কি হবে ভাবতে পারছো?সোসাইটি তে সবাই জানে ফারহানের সাথে লিজার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।এখন এসব জানা জানি হলে আমাদের মান সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে ভাই?আমার মেয়ে টা কাল থেকে কেদে যাচ্ছে। নাওয়া খাওয়া সব বাদ দিয়ে দিয়েছে।ও যদি ভুল ভাল কিছু করে ফেলে তখন এর দায় কে নিবে।আমি কিন্তু কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না বলে দিলাম।

শাহানা বেগমের কথার মাঝেই ঢুলতে ঢুলতে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হয়েছে আদিব।ঘুম ঘুম চোখে ফারহানা বেগমের গা ঘেঁষে বসে পরলো সে।কিন্তু শাহানা বেগনের শেষের কথা শুনে চট করেই চোখ খুলে ফেললো। সামনে লিজা কে দেখে গদগদ গলায় বললো,

— আরে লিজা যে।এতো সকাল সকাল এখানে কিভাবে? না মানে আমি তো ভাবলাম আজ সারা দিন তোমার চোখ ই খুলবে না।কাল যে পরিমান এনজয় করেছো!এতো ড্রিংক করো না বুঝলে?যতই বয়ফ্রেন্ডের জন্মদিন হোক না কেন। লিমিট বুঝে করবে।তা ছেলেটা কে দেখলাম তোমাকে রুমে নিয়ে যেতে।এমন হুট হাট কারোর সাথে রুমে চলে যাওয়া ঠিক না।মানুষ খারাপ ভাববে।বাই দ্যা ওয়ে,এটা তোমার কতো নাম্বার বি এফ ছিলো?

সবাই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আদিবের দিকে। লিজা তো পারলে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। শাহানা বেগম আড় চোখে মেয়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। সবার এমন দৃষ্টি দেখে লিজা আমতা আমতা করে বললো,

— ক কি স সব বলছেন আ আপনি? আ আমি তো এ এস,,,

লিজার পুরো কথা শেষ হওয়ার আগে আদিব নিজের ফোনে একটা ভিডিও প্লে করে দিলো।ভিডিও দেখে লিজার কথা গলায় ই আটকে গেছে।কপালে সুক্ষ্ম ঘামের রেখা দেখা দিয়েছে।কাপা কাপা চোখে সবার দিকে নজর ঘুরাতেই সবার হিংস্র বাঘের মতো দৃষ্টিতে কাপতে লাগলো সে। শাহানা বেগম স্তব্ধ হয়ে গেছে মেয়ের কার্যক্রম দেখে।লিজা উৎশৃংখল এটা সে জানে কিন্তু সে যে এভাবে ছেলেদের সাথে নোংরামো করে বেরায় এটা সে জানতো না।সানোয়ার সাহেব নিঃশব্দে উঠে রুমের দিকে চলে গেলেন। ফায়জার ফোনের রিংটোন শুনে সবাই দৃষ্টি ঘুরিয়ে তার দিকে তাকালো। ফারহান ভিডিও কল করেছে।ফায়জা রিসিভ করতেই ফারহান তার ফুপির উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলো,

— আশা করি এবার আর তোমার কোন অভিযোগ থাকবে না ফুপ্পি।আমার বউ কে চরিত্রহীন বলার আগে নিজের মেয়ের চরিত্র খতিয়ে দেখা উচিত ছিল তোমার। আর যায় হোক,ফারহান সাদিক এমন চরিত্রহীন মেয়েকে নিজের জীবনে কোন দিন জায়গা দিবে না। আমার বউয়ের নখের যোগ্য ও না তোমার মেয়ে।ওর সামনে যদি কোটিপতি রাজপুত্র ও এনে দাও তাহলেও সে তাদের ছেড়ে আমাকে বেছে নিবে।তাই ফার্দার আমার বউকে বাজে কথা বলার আগে ভেবে নিও।আমি এই কথা গুলো সায়েবার সামনেই বলতে পারতাম।কিন্তু আমি সায়েবার সামনে তোমাদের ছোট করতে চাইনি।আমি আমার বউকে যেমন ভালোবাসি ঠিক তেমনই আমার ফুপ্পিমনি কেও ভালোবাসি। নিজেকে আর আমাদের কে ওর সামনে ছোট করো না প্লিজ। আমি আশা করবো আমার ফুপ্পি আমাকে নতুন জীবনের জন্য দোয়া করে যাবে।আর লিজা,আমার বউ থেকে দূরে থাকবি।আমার বউয়ের আসেপাশে ও যেন তোকে না দেখি।বউ নিয়ে আমি আবার একটু বেশিই পজেসিভ।আমার বউ যদি চুল পরিমাণ ও কষ্ট তোর জন্য পায় তাহলে আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না। কথাটা মাথায় রাখিস।

শাহানা বেগম আর লিজার সাথে কথা শেষ করে ফারহান তার মা কে উদ্দেশ্য করে বললো,

— সায়েবা কে রাতে নিয়ে আসবে আম্মু।আর আজকের ঘটনা যেন আর রিপিট না হয় একটু খেয়াল রাখবে।

— চিন্তা করো না আব্বু।আমি খেয়াল রাখবো।

ফারহানের সাথে আরো কিছু কথা বলে ফায়জা কে ফোন দিয়ে দিলো ফারহানা বেগম। ফায়জা ভাইয়ের দিকে হাসি হাসি মুখে তাকাতেই ফারহান গম্ভীর গলায় বললো,

— আমার বিয়ের গিফট কোথায় আপু?

ফায়জা অবাক গলায় বললো,

— এখন আবার কি গিফট চাই তোর?বড় ভাই আর বড় বোন রেখে ছোট ভাই হয়ে বিয়ে করে ফেলেছিস।আবার গিফট চাইতে লজ্জা করে না তোর?

ফারহান স্বাভাবিক গলায় বললো,

— না।তুমি চাইলে আমাদের হানিমুনের টিকিট গিফট করতে পারো।সে ক্ষেত্রে তোমার একটা টিকিটের টাকা বেচে যাবে।

ফায়জা আহত গলায় বললো,

— দেখলে ভাইয়া?কি নির্লজ্জ!

ফরহাদ মুচকি হেসে চোখ বন্ধ করে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বললো,

– – আইডিয়া মন্দ না।

আদিব চারিদিকে তাকিয়ে খোজার ভঙ্গিতে বললো,

— আরে ওরা কোথায় গেলো।

— অনেকক্ষন আগেই চলে গেছে।

ফারহান আদিবের দিকে তাকিয়ে বললো,

— এই তুই আমার বোনের পাশে কি করিস?তোকে বলেছি না আপুর থেকে দূরে থাকবি।

আদিব আর্তনাদ করে ফায়জার সাথে আরেকটু চেপে বসে বললো,

— এখনো এক আঙুল দূরে আছি।তাতেই আমার কলিজায় কালসিটে দাগ পরে গেছে।এর চেয়ে বেশি দূরত্ব হলে কলিজা কয়লা হয়ে যাবে।তাই না সোনা??

শেষের কথা টা ফায়জার দিকে তাকিয়ে বলতেই ফায়জা চিৎকার করে ওর মা কে ডেকে বললো,

— তোমার ভাইয়ের ছেলেকে কিছু বলো আম্মু।না হলে আমার হাতে মার খাবে।

ফরহাদ খিটখিট করে হেসে উঠলো। আদিবের সাথে হাই ফাইভ করে বললো,

— রহিম রুব্বান মেক্স প্রো ভার্সন তোরা।আমি রাজি।বল কবুল।

আদিব তরিঘরি করে বললো,

— আলহামদুলিল্লাহ কবুল।তুমি ও বলো সোনা।আর কত কাল সিঙ্গেল থাকবো?

ফারহান হেসে কল কেটে দিলো।লাইনে থাকলে তাকে ও আজ বকা শুনতে হবে।ফায়জা ভয়ংকর ভাবে রেগে গেছে। আদিবের কি হাল হবে আল্লহ জানে?

চলবে,