সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-০১

0
609

#সূচনা_পর্ব(১)
#সিনিয়র_লাভ_বার্ড
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

-হেই “সিনিয়র লাভ বার্ড” উইল ইউ ম্যারি মি?

পরিবেশ শান্ত হয়ে গেলো, চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। দশবছরের ছেলে কল্পের মুখে এমন প্রস্তাব শুনে সবাই বিস্মিত। কারো বিস্মিত মনোভাবকে পাত্তা দিলো না কল্প, ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো পূরবি’র দিকে। পূরবি’র হাত ধরে আবারো বললো- তুমি আমায় বিয়ে করবে ‘সিনিয়র’?

বিস্ময়ে হা হয়ে গেছে পূরবি’র মুখ, আজ সে তার মা বাবার সাথে সুইজারল্যান্ড পাড়ি জমাবে। ফাইয়াজ শেখ ও কল্পের বাবা বন্ধু, তাই কল্পের দশমতম বার্থডে হওয়ায় তারা পার্টিতে উপস্থিত হয়েছে, এখান থেকেই সে তার মা বাবার সাথে এয়ারপোর্টে যাবে, আর সেখান থেকে আকাশ পথে করে সুইজারল্যান্ড।

কল্পের হাত থেকে পূরবি’র হাত ছাড়িয়ে নিলেন ফাইয়াজ শেখ, হাসিমুখে বললেন- তোমরা আগে বড় হও, তখন যদি একে অপরকে পছন্দ করো, তখন নাহয় বিয়ে করো। এখন তোমাদের সেই সময় হয়নি। বলেই পূরবির মাকে ইশারা করলেন, তিনি এগিয়ে এসে পূরবিকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলেন, পিছে থেকে কল্প দৌড়ে পূরবির হাত টেনে ধরে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে বলে-, তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না সিনিয়র, আমি তো তোমাকে বিয়ে করতে চাইছি, যাতে তোমাকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে না পারে। তুমি প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেও না।

দশবছরের কল্পের কথা শুনলো না কেউ, কল্পের বাবা ছেলেকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলেন। পারু শেখ নিজের মেয়েকে টেনে গাড়িতে তুললেন। অশ্রুসিক্ত চোখে পূরবি গেইটের দিকে থাকালো। তার দিকেই তাকিয়ে আছে কল্প, মাথা নাড়িয়ে না করছে তাকে ছেড়ে না যেতে। কিন্তু পূরবি কে তো যেতেই হবে। সে নিজেই তো তেরো বছরের একটা মেয়ে। তার কথা কেউই শুনবেনা। কল্পের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে টা টা দিলো পূরবি। মনে মনে বললো- ভালো থেকো আমার জুনিয়র রাজকুমার, মিস করবো তোমায়।

পূরবি’দের গাড়ি অতিক্রম করলো কল্পদের বাসার গেইট। আস্তে আস্তে সেটা অদৃশ্য হয়ে গেলো, বাবার কোল থেকে নেমে কল্প সেদিকে ছোট লাগালো, কিন্তু হায় সে তার সিনিয়রকে খুজে পেলো না। তার সিনিয়র তাকে ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছে দূর দেশে।

সিনিয়ররররররর,, ঘুম থেকে লাফ দিয়ে উঠলো কল্প, বেড টেবিল থেকে পানি ভর্তি গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পান করলো। সে আজোও মাঝে মধ্যে সেই ছোটবেলার ঘটনাগুলো স্বপ্নে দেখে। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে কল্প, এ জনমে সিনিয়রের সাথে দেখা হবে কি না জানেনা সে। তবুও মনের মাঝে হাজারো স্বপ্নবোনে তার সিনিয়র কে নিয়ে। একদিন অবশ্যই তার সিনিয়র আসবে তাকে ভালোবাসার রঙে রাঙাতে।

দশবছরের কল্প আজ পঁচিশ বছরের যুবক, মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে এইবার। সকল ভাবনা থেকে বেরিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো কল্প, তাকে ভার্সিটি যেতে হবে, আজ তার মাস্টার্সের প্রথম ক্লাস।যদিও ভার্সিটির আনাচে কানাচে সব তার চেনা, কারণ সে অনার্স ও এটাতেই পড়েছে।

.
আজ ভার্সিটিতে একটু আগে এসে পড়েছে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী তিয়াশা।ক্লাস শুরু হতে এখনো আধাঘন্টা বাকি, সময় কাটানোর জন্য ভার্সিটির একটা বিল্ডিংয়ের পিছনের দিকে গেলে, যেখানে একটা পুকুর আছে, সাথে জঙ্গলের মতো কিছুটা।

.
.
লাশ! আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া- জ্ঞান হারালো তিয়াশা, এতো ভয়ংকর ক্ষত-বিক্ষত করা মুখশ্রী সে কোনোদিন দেখেনি।
.
.
বিশ মিনিটের ভিতরে ভার্সিটিতে এসে পৌঁছে যায় কল্প। তার বন্ধুকে না দেখতে পেয়ে কল দেয় সূর্যের নাম্বারে। সূর্য কল ধরে কল্প কে ভার্সিটির পিছন দিকে আসতে বলে, যেখানে বর্তমানে সবাই ভীড় জমিয়েছে।

বিল্ডিংয়ের পিছনের দিকে আসলো কল্প। এতো ভীড় কেনো সে বুঝতে পারছে না। সবাইকে ঠেলিয়ে একটু দেখার চেষ্টা করলো। সফলও হলো, কিন্তু বেশিক্ষণ একনজরে তাকিয়ে থাকতে পারলো না, কি ভয়ংকর দেখতে লাশটার মুখ।

যে মেয়েরা দেখতে এসেছিলো, তারা দেখে ভয় পেয়ে দূরে সরে গেছে, কয়েকজন মিলে তিয়াশাকে ধরে নিয়ে আসে, এক জায়গায় বসিয়ে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিয়াশার জ্ঞান ফিরে।

প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে পুলিশের আগমন ঘটে, যদিও তারা এই ভার্সিটির এই লাশের ব্যাপার নিয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেছে বললে চলে। কারণ এর আগে আরো তিন চার বার লাশ পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে, কিন্তু আশানুরূপ কোনো কিছু বের করতে পারেনি।

ভার্সিটির টিচাররা সহ স্টুডেন্ট’রা ও বিরক্ত পুলিশের উপর, এতোদিন ধরে কোনো কিছুই খুজে বের করতে পারলো না। এগিয়ে এলো কল্প পুলিশের এসপি’কে শাসিয়ে বললো- আপনারা পুলিশরা কি কাজ করেন? আপনাদের সরকার থেকে বেতন দেওয়া হয় কেনো?, জনগণকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। কিন্তু আপনারা কি সেটা পারছেন? পারছেন না, প্রায় এক মাস ধরে এরকম ঘটনা ঘটছে, এই পর্যন্ত চারটা লাশ পাওয়া গেলো, কে বা কারা এসব করেছে তা আপনারা খুজেই বের করতে পারলেন না, জনগণের নিরাপত্তা দিবেন কি করে?

এসপি আনিসুর রহমান মাথা নিচু করে নিলেন, তখনই তার ফোন বেজে উঠলো, সবার সামনেই কল রিসিভ করলেন, উপর মহল থেকে কল এসেছে, কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দিলেন। আনিসুর রহমানের ঠোঁটে সুক্ষ্ হাসির রেখা ফুটে উঠলো, যা চোখ এড়ালো না কল্পের। তাছিল্য করে বললো- বাহ, আপনারা তো হাসবেনই, এটা ছাড়া আর কিই বা করতে পারবেন?

লম্বা শ্বাস ছাড়েন আনিসুর রহমান। সবার দিকে তাকিয়ে জোর গলায় বলেন- আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন? গোয়েন্দা বিভাগে একজন নতুন ইনভেস্টিগেটর হিসেবে জয়েন করেছেন কয়েকমাস আগে, ইতোমধ্যে তিনি কয়েকটা কেস স্লভ্ করেছেন, তাকেই এই ভার্সিটির লাশের রহস্য উদঘাটনের কেসটার দায়িত্ব দেওয়া হবে।

সবাই একসাথে বলে উঠলো- কে সে?

এসিপি আনিসুর রহমান গর্বের সাথে বললেন- পি.সি

মুহুর্তের মধ্যেই সবার মধ্যে কানাঘুষা শুরু হলো, কে এই পি.সি?

কল্প সন্দিহান হয়ে প্রশ্ন করেই ফেললো-, কে এই পি.সি?

আনিসুর রহমান হাসলেন, ঠোঁটে হাসি রেখেই বললেন – সে নাহয় যখন কেস স্লভ্ হবে তখন জানবেন, আপাতত সেটা সিক্রেট থাকবে। পি.সি চান পরিচয় লুকিয়ে কেস স্লভ্ করার কাজে নামতে। যখন তিনি কেস স্লভ্ করতে পারবেন, তখনই তিনি সবার সামনে এসে দাড়াবেন। ততোদিন তিনি পি.সি., গোয়েন্দার ইনভেস্টিগেটর পি.সি।

আরো কিছুক্ষণ পরে লাশ নিয়ে চলে গেলেন পুলিশরা। আস্তে আস্তে ভীড় কমে গেলো। সবাই নিজ নিজ ক্লাসের দিকে চলে গেলো, সবার মনেই আতংক। কেউ কেউ ভেবে নিয়েছে এই রহস্যের উদঘাটন না হওয়া পর্যন্ত ভার্সিটিতেই আর আসবেনা।
.
.
এতোক্ষণ ভীড়ের মাঝে দাড়িয়ে সব দেখছিলো এক আগন্তক, যে এসব দেখে মনে মনে পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিলো। আড়ালে গিয়ে দাড়িয়ে কাউকে কল দিলো, ওপাশ থেকে ভেসে এলো- সব ঠিকঠাক? কেউ কিছু ধরতে পারে নি তো?

– জ্বি বস, সব ঠিকঠাক। কেউ কিছু আন্দাজ করতে পারেনি, আর পারবেও না। আমি আছিনা, আমি সব খেয়াল রাখবো। শুধুহহ একটু ওই আরকি,,

– পেয়ে যাবি, তোর একাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে, তুই শুধু কাজটা ঠিকঠাক মতো কর। কেউ যেনো কখনো কিছু জানতে না পারে। যদি কেউ জানতে পারে, তাহলে সেদিনই তোর শেষদিন হবে মনে রাখিস। ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো।

কান থেকে ফোন নামিয়ে ক্রুর হাসলো আগন্তুক। ঠোঁটে ক্রুর হাসি বজায় রেখেই বলে উঠে-, সে তো সময় মতো দেখবেন বস, এমনি এমনি কি আর আপনার কথায় এসব করছি? সিংহাসনের স্বপ্ন তো সবাই দেখে, আমার দেখতে দোষ কোথায়? আমিও কখনো সুযোগ পেলে আপনাকে সিংহাসন থেকে নামিয়ে নিজে সেই সিংহাসনের রাজা হবো। শিষ বাজাতে বাজাতে চলে গেলো আগন্তক।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,,