সিনিয়র লাভ বার্ড পর্ব-০২

0
343

#সিনিয়র_লাভ_বার্ড(২)
#মাহমুদা_আক্তার_তাহিনা

সেইদিনের পরে দুইদিন কেটে গেছে, এই দুইদিন কোনো লাশ পাওয়া যায় নি। তবে এসপি আনিসুর রহমান আবার এসেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন এখন পর্যন্ত যাদের লাশ পাওয়া গেছে তারা সবাই মাদকাসক্ত ছিলো। এদের দেহে প্রচুর পরিমাণে ড্রাগস পাওয়া গেছে, এরা ড্রাগস সেবন করতো।

আনিসুর রহমানের কথা শুনে সম্পূর্ণ ভার্সিটির ছাত্র ও শিক্ষকদের একটাই প্রশ্ন ছিলো- কে ওদের ড্রাগস দিতো?

বিনিময়ে আনিসুর রহমান বলেছিলেন- সেটা জানার জন্য তো আপনাদের আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। পি.সি খুব শীগ্রই আসছেন, তিনি আপনার আমার মাঝেই থাকবেন, সাধারণ মানুষের মতো। আপনারা তাকে চিন্তে পারবেন না। রহস্য উদঘাটনের পরে তিনি নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করবেন। বলেই আনিসুর রহমান চলে গিয়েছিলেন।

.
সকাল নয়টার কাছাকাছি সময়, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসলো কল্প, সে নাস্তা করে ভার্সিটিতে যাবে। কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে অবাক হলো কল্প, তার বাবাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে ভ্রু কুচকায়। আজমিন খান মূলত সবসময়ই কল্পের সাথে নাস্তা করেন, তারপর অফিসে যান। আনিকা খান হয়তো নিজের ছেলের মুখ দেখে বুঝতে পারলেন, এগিয়ে আসলেন কল্পের দিকে, বলেন- তুমি একটু অপেক্ষা করো কল্প, তোমার বাবা ভোর ৫টায় এয়ারপোর্টে গিয়েছিলেন তোমার শেখ আঙ্কেল ও আন্টিকে রিসিভ করতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন। আনিকা খানের কথার মধ্যেই বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। তিনি এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।

এদিকে, কল্প ভেবে চলেছে, শেখ আঙ্কেল ও আন্টি আসছেন, তার মানে তার সিনিয়র ও এসেছে। চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো কল্প, আগ্রহ নিয়ে দরজার বাইরে উকি দিতে লাগলো, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিটিকে দেখতে পেলো না।

দরজা দিয়ে ঢুকলেন পারু শেখ ও ফাইয়াজ শেখ, সাথে আজমিন খান, পিছনে ড্রাইভার ব্যাগ নিয়ে। কল্প আবারো উকি দিলো কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলো না। আনিকা খান হয়তো ছেলের উঁকি দেওয়ার কারণ বুঝলেন, তিনি কল্পের অনুভূতি সম্পর্কে অবগত, ঠান্ডা শরবত নিয়ে এলেন পারু শেখ ও ফাইয়াজ শেখ এর জন্য। উনারা একনিশ্বাসে পান করলেন সেটা, সোফায় মাথা এলিয়ে দিলেন। আনিকা খান সুযোগ পেয়ে বললেন- ভাবি পূরবি আসেনি?

দীর্ঘ শ্বাস ছাড়েন পারু শেখ,- সে আর বলতেন ভাবি, মেয়েটিকে কতো করে বললাম আমাদের সাথে আপনাদের বাসায় আসতে, কিন্তু তার নাকি কি কাজ, তাই কাজ শেষ হলে আপনাদের বাসায় আসবে।

এগিয়ে এলো কল্প উৎকন্ঠা হয়ে বললো- সিনিয়র বাংলাদেশে আছে?

পারু শেখ বলেন- হ্যা, পূরবি তো কয়েকমাস আগেই বাংলাদেশ ব্রেক করেছে, কি একটা কাজে। কি কাজ সেটা আমরাও জানিনা, সময় হলে জানাবে বলেছে।

চোখে জল জমলো কল্পের, অভিমানের জল। পূরবির প্রতি তার অভিমান আগে থেকেই ছিলো, আজ তা আকাশসম হলো। নাস্তা না করেই বাইক নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো কল্প।

পেছন থেকে আনিকা খান ডাকলেন, কিন্তু কল্প শুনলোনা। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়েন আনিকা খান, তার ছেলের কষ্টের কথা ভেবে হৃদয় ব্যথিত হয়।

.
ভার্সিটির মাঠ দিয়ে সূর্যের সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটছে কল্প, তখনই কারো সাথে ধাক্কা লাগে তার। ধাক্কা এমন ভাবেই লেগেছে যে বিপরীত পাশের ব্যক্তিটি মাটিতে পড়ে গেছে। নিচে তাকিয়ে কল্প দেখলো কালো ফতোয়া ও হোয়াইট জিন্স পড়া একটি মেয়ে যে বর্তমানে মাথা নিচু করে আছে। হাত বাড়িয়ে দিলো কল্প, কিন্তু মেয়েটি কল্পের হাত না ধরে নিজেই একা একা উঠে দাঁড়ালো। কল্প কিছু বলবে তার আগেই মেয়েটি কল্পের কলার ধরে বলে উঠে- ইউ ম্যান, চোখে দেখেন না? মেয়ে দেখলেই হুশ থাকে না নাকি? রিডিকিউলাস পার্সন!

কল্প ভেবেছিলো মেয়েটিকে স্যরি বলবে, কিন্তু মেয়েটির কথা শুনে রেগে গেলো, কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বললো- সেট আপ মেয়ে, আপনি না জেনে কারো সম্পর্কে বাজে কথা বলতে পারেন না, আমি আপনাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দেইনি,

রিয়েলি? আপনাদের মতো ছেলেদের চেনা আছে, মেয়ে দেখলেই হুশ থাকে না।

আমি ‘আরাবিয়ান খান কল্প’ এক নারীতেই আসক্ত! তাই আমাকে অন্য কারো সাথে তুলনা করবেন না। আপনি আমাকে স্যরি বলুন,

স্যরি! তাও আপনাকে? আমি ‘পূরবি শেখ’ আপনার মতো ছেলেকে কখনোই স্যরি বলবো না, বাজে ছেলে কোথাকার।

‘পূরবি শেখ’ নামটা প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো কল্পের কানে। কিন্তু মেয়েটির শেষের কথা শুনে আবার ও রেগে গেলো। এগিয়ে এলো একটু, তারপর বললো- আপনার বাবার নাম কি?

কেনো? বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন নাকি?

বাবার নাম জানার সাথে বিয়ের প্রস্তাবের কি সম্পর্ক?

আপনাদের ছেলেদের চেনা আছে, এখন বাবার নাম জিজ্ঞেস করছেন, পরে বাসার ঠিকানা জিজ্ঞেস করবেন। তারপর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবেন।

ওহ রিয়েলি? আপনার তাই মনে হয়?

মনে না হওয়ার কি আছে?

আমারি ভুল আমি আপনাকে আমার খুবই পরিচিত একজন ভেবেছিলাম, কিন্তু আপনার মতো ঝগড়ুটে মহিলা কখনো আমার ‘সে’ হতেই পারে না। আচ্ছা আপনি কিসে পড়েন?

আমি অনার্স ফাইনাল ইয়ারে ভর্তি হয়েছি এই ভার্সিটিতে, টান্সফার হয়ে এসেছি আরকি।

ওহ আচ্ছা, স্যরি। আমি আপনাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দেইনি, তবুও আপনি আমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছেন। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো সেও আপনার সাথে বাজে বিহেভ করতো। কিন্তু আমি মেয়েদের সম্মান করি, তাই আপনার সাথে বাজে আচরণ করতে পারলাম না।

আমিও স্যরি, আপনার সাথে বাজে আচরণ করার জন্য।

আমাকে সম্মান করে চলবেন সবসময়, সিনিয়র হই আপনার।

কে সিনিয়র কে জুনিয়র সেটা তো সময় বলে দিবে!

মানে?

মানে কিছু না, আমার ক্লাসের সময় হয়ে গেছে, আমি যাই- মেয়েটি চলে গেলো।

কল্প মনে মনে ভাবতে লাগলো- সে শুধু শুধু মেয়েটিকে তার সিনিয়র ভাবছিলো, যদিও মেয়েটির চেহারা কিছুটা তার সিনিয়রের মতো মনে হচ্ছে। কিন্তু সে তো তার সিনিয়রের বর্তমান ছবি দেখেনি, সামনাসামনি দেখবে বলে। তার মনে হচ্ছে এবার সিনিয়রের ছবি খুজে বের করতে হবে।

কল্পকে ভাবনায় মশগুল দেখে পেটে গুঁতো দিলো সূর্য, ভাবনা থেকে বের হয় কল্প রাগী দৃষ্টিতে সূর্যের দিকে তাকালো।

সূর্য দাঁত কেলিয়ে বললো- কিরে শালা এক ধাক্কায় প্রেমে পড়ে গেলি নাকি, কি এতো ভাবছিস?

সেট-আপ সূর্য, তুই তো জানিস আমি সিনিয়র কে কতোটা ভালোবাসি। এই মেয়েটার নাম আর সিনিয়রের নাম একই, তাই ভাবছি শিওর হওয়ার জন্য ছবি কালেক্ট করতে হবে।

মানে বুঝলাম না!

কল্প সব কিছু বুঝিয়ে বললো সূর্যকে, সব শুনে সূর্য বললো- এই মেয়েটি সিনিয়র ভাবি কি না, সেটা শিওর হওয়ার জন্যে হলেও ছবি কালেক্ট কর। মনের ভিতর কোনো সন্দেহ রাখতে নেই। সিনিয়র ভাবির ছবি যতো তারাতাড়ি সম্ভব খুজে বের কর, তাহলেই বুঝা যাবে এই মেয়েটিই সিনিয়র ভাবি কি না।

হুম সেটাই করতে হবে, মায়ের কাছে সিনিয়রের ছবি থাকতে পারে, মাকে বলতে হবে না থাকলেও শেখ আন্টির থেকে কালেক্ট করতে। শিওর না হওয়া পর্যন্ত আমি শান্তি পাবো না। কখনো মনে হচ্ছে এটাই সিনিয়র, আবার কখনো মনে হচ্ছে এক নামে তো কতো মানুষই হয়।

চিন্তা করিস না, দেখিস আন্টি ছবি খুজে দিবে তোকে। এখন চল ক্লাসে যাই। লেট হয়ে যাচ্ছে।

হুম চল,

ক্লাসের দিকে এগিয়ে চললো দুজন। কিন্তু কল্প মনে মনে ভাবছে- যদি এটা তার সিনিয়র হয়, তাহলে সে কি করবে নিজেও জানেনা। তার সিনিয়র কি না তার দেশে থেকেও তার সাথে যোগাযোগ করছে না। আচ্ছা তার সিনিয়র কি তাকে ভুলে গেছে? আর ভাবতে পারলো না কল্প, দমবন্ধ হয়ে আসছে তার। মাথা ঝাড়া দিয়ে ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেলো।

চলবে, ইনশাআল্লাহ,